#তোমার স্মৃতি
#পর্বঃ০৩
#লেখিকাঃশুভ্রতা_শুভ্রা
নিবিড় গালে হাত দিয়ে বিরবির করে বলতে লাগলো “আচ্ছা মেয়েটা এমন অদ্ভুত কেন! মানুষ তো নিজের জীবন বাঁচাতে উঠে পড়ে লাগে। আচ্ছা মেয়েটা এতো উদাসীন কেন? মেয়েটার কি হয়েছে এমন! কেমন যেন একরকম রহস্যের গন্ধ লাগছে! কেন যেন খুব জানতে ইচ্ছে করছে তার এই উদাসীন হওয়ার কারণ। তবে মেয়েটাকে দেখলেই কেন যেন বুকের হৃদস্পন্দন বেড়ে যায় বুঝি। আজ মাত্র দুইদিন হলো মেয়েটাকে দেখছি তাতেই এতো কেন মায়া কাজ করছে আমার।” নিবিড় নিজেই নিজের ভাবনায় মুচকি হেসে চেয়ার থেকে উঠে বাসায় চলে যাওয়ার জন্য রওনা হলো। গাড়িতে চালিয়ে সে তার বাসায় চলে গেল।
সানজিদা বাসায় এসে কিছু খাবার রান্না করে নিলো। জান্নাতি বেগম ওনার মায়ের বাড়িতে গিয়েছে। ওনার মা নাকি খুব অসুস্থ। সানজিদা ভাত তরকারি রান্না করে সেগুলো সেট করে রেখে ওয়াশরুম থেকে ফ্রেশ হয়ে নিলো। মাথাটা কেমন যেন আবার ব্যথা করছে। কোনোমতে একটু খেয়ে নিলো। হঠাৎ তার ফোনটা বেজে উঠলো সে বিরক্ত হলো। কারণ তার ফোনে কথা বলতে কেন যেন ভালো লাগে না। আর শশী ছাড়া তাকে কেউ ফোন করে না। সে না দেখেই ফোন রিসিভ করে বলে উঠলো
“শশী তোর সঙ্গে কাল ভার্সিটি গিয়ে কথা বলবো নি। মাথাব্যথাটা আবার বেড়েছে এখন কথা বলতে মন চাচ্ছেনা।” বলেই কল কাটাতে যাবে তখনই একটা ভরাট কন্ঠ ভেসে আসে তার কানে। কেউ অপরপাশ থেকে বলে উঠলো “না না কল রেখে দিয়েন না আগে আমার কথাটা শুনুন।”
সানজিদা অবাক হয়ে ফোনটা কানে রেখে বলল “কে আপনি!”
অপরপাশ থেকে নিবিড় সস্থির শ্বাস ফেলে বলল “আপনি এতো উদাসীন কেন বলুন তো। আপনি ঔষধ খান নি তাই না।”
সানজিদা নিবিড়ের কথার উত্তর না দিয়ে বলল “কি সমস্যা কল দিয়েছেন কেন! আর নাম্বার কোথায় পেলেন আমার।”
নিবিড় আমতা আমতা করে বলল “না মানে আমি তো আপনার ট্রিটমেন্টের দায়িত্ব পেয়েছি। আর এই দায়িত্বটা আমার স্যার দিয়েছে তাই এটা নিয়ে আমি অনেক সচেতন। আর আপনার ফোন নাম্বার পাওয়া আমার পক্ষে তেমন কিছু না।”
সানজিদা আর কিছু বলল না। নিবিড় বলল “ঔষধ খেয়ে ঘুমিয়ে যান” বলেই কল কেটে দিলো নিবিড়। সে বুক হাত দিয়ে ওফ করে একটা শ্বাস ফেলে বলল “ইশ মেয়েটা স্বাভাবিক কথায় আমার এমন অবস্থা হলো কেন। স্বাভাবিক কন্ঠেই তো আমার জান যায় যায়। আচ্ছা আমি কি প্রেমে পরে গিয়েছি। কিন্তু কিভাবে এতো অল্প সময়ে কি প্রেমে পড়া যায়। ধুর ছাই আর ভালো লাগে না।” বলেই নিবিড় ওর ফোনটা নিয়ে চুমু দিলো। নিজের কাজে নিজেই অবাক হলো নিবিড়। ধপ করে বেডে শুয়ে পরলো নিবিড়। সানজিদার মাথা ব্যথা বেড়েছিল বলে সেইও ঔষধ খেয়ে নিলো যদি একটু ভালো লাগে।
কেটে গেল সাত দিন…..
আজ আবার হাসপাতালে নিবিড়ের সামনে বিরক্তিকর ভাব নিয়ে বসে আছে সানজিদা। এই সাতদিনের প্রতিদিনই নিবিড় ওকে কল করে ঔষধ খাওয়ার কথা মনে করিয়ে দিয়েছে। এখন আবার দাঁত কেলিয়ে হাসছে। সানজিদা বিরক্ত নিবিড়ের কাজে। ওর মনে চাচ্ছে নিবিড়ের মাথা ফাটাতে।
ভালো লাগছে না তার সে নাক মুখ কুচকে নিবিড়কে বলে উঠলো “আপনি কি আমাকে এখানে আপনার দাঁত দেখাতে নিয়ে এসেছেন।”
সানজিদার কথায় নিবিড়ের হাসি অফ হয়ে গেল। নিবিড় নিজের কাজে মন দিলো। নিবিড়ের চেকআপ শেষে সানজিদা নিবিড়ের কেবিন থেকে বের হয়ে আসতেই ওর পা যেন থমকে গেল। সেই পরিচিত মুখ দেখে ও যেন পাথর হয়ে গেল। চোখটা ছলছল করে উঠলো তার। কেবিনের দরজার হাতল ধরে দাড়িয়ে পরলো সে। তার পুরো শরীরটা যেন কেমন করতে লাগলো। অসার হয়ে আছে ওর পুরো শরীর। মাথাটা ধরে এসেছে ওর। চোখের কোণে পানি এসে টলমল করছে। মাথাটা ভনভন করে ঘুরছে। সে অস্পষ্ট কন্ঠে বলে উঠলো “রেহান”…..বলেই সে পরে যেতে লাগল। তখনই একটা শক্ত হাত এসে ওকে আকরে ধরে। সানজিদা পানি ভরা চোখে তাকাতেই দেখলো ডা.নিবিড় ওকে ধরেছে। সানজিদা একটা রহস্যময় হাসি দিয়ে বলল “এখন আমি মরেও শান্তি পাবো। আমার শেষ ইচ্ছাও পূরণ হয়ে গেল। ভালো থাকুক এই স্বার্থপর দুনিয়ার মানুষ ভালো থাকুক।” আর কিছু বলতে পারলো না অজ্ঞান হয়ে গেল সে। নিবিড় হতভম্ব হয়ে গেল। কারণ একটু আগেই তো মেয়েটা সুস্থ ছিল। কিন্তু কি হলো তার। নিবিড় অস্থির হয়ে সানজিদা গালে কাঁপাকাঁপা হাতে থাপ্পড় দিতে থাকে। আর ডাকতে থাকে সানজিদা সানজিদা বলে। নিবিড় সানজিদাকে কোলে নিয়ে একটা নার্সকে ডেকে কিছু বলল। সানজিদাকে নিয়ে ও চলে গেল। অন্যদিকে সানজিদা আর নিবিড়কে একসঙ্গে একজন দেখে সে ছলছল নয়নে ওদের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রইলো।
নিবিড় পুরো হাসপাতাল মাথা তুলে রেখেছে। তাড়াতাড়ি করে সানজিদার ট্রিটমেন্ট শুরু করলো নিবিড়। নিবিড় খুঁজে পাচ্ছেনা কিজন্য হঠাৎ করে সানজিদার এমন অবস্থা হলো।
কেটে গেছে সাতঘন্টা নিবিড় মাথার চুলগুলো আকরে পিছনে ঠেলে বসে রয়েছে। সানজিদাকে এখন কেবিনে সিফট করা হয়েছে। হঠাৎ ফোন বাজার আওয়াজে নিবিড় এপাশ ওপাশ খুঁজে দেখলো দরজার পিছনে একটা ফোন বাজছে। সে বুঝতে পারলো এটা সানজিদার ফোন। নিবিড় ফোনটা রিসিভ করে কানে ধরতেই ওপাশ থেকে একটা উত্তেজিত কন্ঠে বলে উঠলো
“সানজু তুই কোথায়! বাসায় ফিরিসনি কেন! কোথায় তুই দেখ এমন করছিস কেন! আমার কিন্তু খুব টেনশন হচ্ছে তোকে নিয়ে।”
নিবিড় শান্ত গলায় চোখ বন্ধ করে বলল “সানজিদা হাসপাতালে ভর্তি আছে। ওর অবস্থা খুব একটা ভালো না। তা আপনি ওনার কে হন।”
শশী অবাক কন্ঠে বলে উঠলো “কিহ কি বলছে কোন হাসপাতাল ঠিকানা দিন দয়া করে আমি যাবো ওর কাছে।”
নিবিড় শশীকে হাসপাতালে ঠিকানা দিয়ে দিলো। তার কিছুক্ষণ পরেই শশী এসে হুড়মুড়িয়ে নিবিড়ের কেবিনে ঢুকে পরলো। নিবিড় একটা মেয়েকে হুড়মুড়িয়ে ঢুকতে দেখে ও চোখের চশমাটা ঠিক করে তাকালো। শশী অস্থির কন্ঠে বলল
“ডাক্তার সাহেব সানজিদা কোথায়! ও ঠিক আছে তো। ওর কিছু হয়নি তো। বলুন ও ঠিক আছে তো।”
নিবিড় এক গ্লাস পানি এগিয়ে দিয়ে শশীকে বসতে পরলো। শশী ধুপ করে চেয়ারে বসে ঢকঢক করে পানি খেয়ে নিলো। তারপর আবার প্রশ্নবোধক দৃষ্টিতে তাকালো নিবিড়ের দিকে।
নিবিড় এবার ওর গলাটা পরিষ্কার করে বলল “সানজিদা হঠাৎ করে অজ্ঞান হয়ে গিয়েছিল। হয় তো কোনো শক খেয়েছে। আর ওর পজিশন বেশি একটা ভালো না। ওর অপারেশন খুব দ্রুত করতে হবে। ওর পরিবারের লোককে জানাতে হবে।”
হঠাৎই শশী হুহু করে কেঁদে উঠলো। নিবিড় অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো শশীর দিকে। সে অবাক কন্ঠেই শশীকে জিঙ্গাসা করলো
“কি হলো আপনার! কান্না করছেন কেন!”
শশী বলে উঠলো “ওর পরিবার বলতে শুধু আমি।”
নিবিড় বলে উঠলো মানে “কি বলছ তুমি!”
শশী একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল “ওর বাবা মা অনেক আগেই মারা গিয়েছে। আর ওর হাসবেন্ট..”
শশীর কথায় বাধা প্রদান করে নিবিড় বলল “সানজিদা বিবাহিত”
শশী তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বলল “ডিভোর্স হয়ে গিয়েছে। অন্যজনকে পেয়ে ঠকিয়ে চলে গেল।”
নিবিড় যেন হতভম্ব হয়ে গেল। সানজিদার বিয়েও হয়েছিল আবার ডিভোর্সও।
শশী বলল “সে যাইহোক সানজিদা কোথায় ওর সঙ্গে কি একটু দেখা করা যাবে।”
নিবিড়ের ভাবনায় ছেদ পরলো শশীর কথায়। ও মাথা নাড়ালো। নিবিড় উঠে দাড়িয়ে সামনে এগোতে লাগলো। শশীও নিবিড়ের পিছু পিছু যেতে লাগলো।
#চলবে