#তোমার_সন্ধানে
#ফারজানা_আফরোজ
৭
এইভাবে চলতে চলতে পাঁচদিন কেটে যায়। নিয়তি এখন আগের থেকে কম্ফোর্টেবল ফিল করছে শুদ্ধের সাথে। একদিন সন্ধায় শুদ্ধের ফ্রেন্ডরা মিলে নিয়তিকে দেখতে চাইছে। যেহেতু নিয়তি মহিলা হোস্টেলে থাকে তাই শুদ্ধই দারোয়ান চাচাকে টাকা খাইয়ে সব ঠিকঠাক করে আসে। সন্ধায় নিয়তি ব্ল্যাক শাড়ি, ম্যাচিং গয়না, চুল ছেড়ে দেওয়া, ঠোঁটে লিপস্টিক এক কথায় তাকে অসাধারণ লাগছে। মিশু নীল রঙের লং জামা পরেছে তাকেও বেশ লাগছে। সন্ধার সময় দুজন হোস্টেল থেকে বের হলো। রাস্তায় দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করতে লাগলো রিক্সার জন্য। এরে মাঝে আগমন ঘটে নিলয়ের। নিলয় হাত মুচড়াতে মুচড়াতে মিশু এবং নিয়তির সামনে গিয়ে রাগী গলায় বলল,
–” নিয়তির বাচ্চা, এই ছিল তোর মনে। না জানিয়ে বিয়ে করে ফেললি। আসলেই তোরা দুইটা মীরজাফর। তোদের এক্ষুনি গুলি করা উচিৎ।”
নিলয়কে শান্ত করার জন্য মিশু চট করে বলে ফেলল,
–” আরেহ বিয়ে তো হয়নি। যখন বিয়ে হবে তখন তো তুই স্পেশাল পারসন। এখন চল ফ্রীতে ট্রিট খেয়ে আসি। আমাদের দুলাভাই দিচ্ছে।”
–” না তোগো কোনো কথা আমি কানে নিমু না। তোরা দুইটা হইলি মীরজাফরের বংশধর। শালী তোদের দশটা না পাঁচটা না একটা মাত্র ছেলে বন্ধু আমারে কিনা দাওয়াত থেকে বিনা নিমন্ত্রণে বাতিল করছিস। কথা নাই তোগো লগে।”
নিয়তি মাঝ রাস্তায় কানে ধরে উঠবস করতে লাগলো। এই ছাড়া বেস্ট ফ্রেন্ডের রাগ কমানো যাবে না। নিলয়ের রাগ পানি হয়ে গেলো। একটা রিক্সা ডেকে ও হুডের উপরে বসে মিশু এবং নিয়তিকে বসতে বলল।
রিক্সা এসে থামলো রেস্টুরেন্টে। অভ্র এবং শুদ্ধ দাঁড়িয়েছিল বাহিরে। রিক্সা থেকে তিনজনকে নামতে দেখে এগিয়ে গেল দুজন। নিলয় তো সামনে এত বর খেলোয়াড়কে দেখে ঝাপটে ধরে কতকগুলো সেলফি তোলে নিলো।
শুদ্ধর চোখজোড়া তাকিয়ে আছে নিয়তির দিকে। সে যেন চোখ কিছুতেই ফেরাতে পারছে না। কই মিলির দিকে তো আগে এইভাবে তাকিয়ে থাকতো না। মিলি নিজেই এসে বলতো তাকে কেমন দেখাচ্ছে তবুও তো শুদ্ধ ভালো করে দেখতো না তাহলে আজ নিয়তির দিকে তাকাতে এত ভালো লাগছে কেন তার। শুদ্ধ বুঝতে পারল সে এখন নিয়তিকে পছন্দ করতে শুরু করেছে। পবিত্র সম্পর্ককের জোর এইটা।
বন্ধু সমাজে কথা উঠলো। সবার এক কথাই মিলির থেকে হাজারগুণ ভালো নিয়তি। নিয়তি বুঝতে পেরেছে পিহুর নতুন মা এক সময় তার বরের গার্লফ্রেন্ড ছিল। ভাবতেই পুরো শরীর রাগে ফেটে যাচ্ছে তার। বহু কষ্টে রাগ কমিয়ে সবার সাথে কথা বলল তারা। রাস্তার এক কোনে নিলয় এবং নিয়তিকে একসাথে দেখে মাথা খারাপ হয়ে গেলো শুদ্ধর। নিজের ভালোবাসার মানুষ শুধু নিজের কাছেই থাকবে হোক সে বন্ধু তবুও। গাড়ি নিয়ে অভ্রের কাছে গিয়ে বলল,
–” তুই আজ মিশুকে পৌঁছে দে আমি নিয়তিকে নিয়ে লং ড্রাইভে যাবো।”
–” ওকে।”
শুদ্ধ নিয়তিকে নিজে যাবে শোনে নিলয় মিশুকে বলল যাবার জন্য। হঠাৎ নিলয়ের ফোন আসলো তাকে এক্ষুনি নিজের বাসায় যেতে হবে। মিশুকে অভ্রের কাছে রেখে ছুটলো নিলয়।
রাত বারোটা বাজতে এখনো গুনে গুনে দশমিনিট বাকি। আজকে মিশুর জন্মদিন। নিয়তির কাছ থেকে জেনেছিল অভ্র। মিশুর সাথে ঝগড়া করতে করতে এক প্রকার ভালোবেসে ফেলে মিশুকে অভ্র। আজকে সে মনের কথাগুলো বলবে।
–” কিভাবে কি বলতে হয় আমার জানা নেই। কি দিয়ে কথা বলা স্টার্ট করব তাও জানি না। শুধু জানি আজকের দিনটা আমার জন্য ভীষণ স্পেশাল, আজকে একটি উপযুক্ত দিন তোমায় বলার জন্য যে তুমি আমার জীবনে একজন অসাধারণ নারী। যে আমার জীবনকে ভালোবাসা দিয়ে পরিপূর্ণ করেছে। আমি তোমাকে কথা দিচ্ছি তোমার খুশির জন্য আমি সবকিছু করব। শুভ জন্মদিন আমার ভালোবাসা। ঝগড়া থেকেও যে ভালোবাসার উৎপন্ন হয় তুমি পাশে না থাকলে জানতাম না। প্লিজ ফিরিয়ে দিও না। হবে কি আমার সন্তানের আম্মু?”
মিশু প্রথম পর্যায়ে ব্যাপক হবাক হলেও অভ্রের ঠোঁটের হাসিতে মাতাল হবার উপক্রম। মিশুর রুম জুড়ে অভ্রের হাসি মাখা ছবি সাজিয়ে রাখতো। এই মানুষটার হাসির মাঝে কিছু একটা আছে যা তাকে বারবার কাছে টানতে সাহায্য করতো। প্রথম দিন থেকেই সে অভ্রের হাসিতে মত্ত ছিল কিন্তু ভয়ে কিছু বলতো না। কারণ সে একজন মধ্যবিত্ত পরিবারের মেয়ে। তার স্বপ্ন আকাশ ছোঁয়ার মত হতে নেই। আজ যেহেতু অভ্র নিজেই প্রপোজ করেছে তাহলে সে বারণ করবে না। তার মনের ভিতরে লুকিয়ে থাকা অনুভূতি বলে দিবে।
–” আমিও আপনাকে খুব ভালোবাসি অভ্র। আমার ভালোবাসাটা আজকের নয়। ক্লাস নাইনে যখন আমি আপনাকে টিভিতে দেখেছিলাম সেদিনই আপনার মারাত্মক হাসি আমার মন কেড়ে নিয়েছিল। আপনার জাদুকরী হাসির প্রেমে পড়েছিলাম। ভাবতাম ছেলেদের হাসিও এত সুন্দর হয়। আমি হতে চাই আপনার সন্তানের জননী।”
অভ্র এক হাতে আলতো জড়িয়ে ধরলো মিশুকে। এত সহজে যে মিশু ভালোবাসি বলবে ধারণা ছিল না তার। আজকের দিনটা তাদের দুজনের জন্য অবশ্যই লাকী।
আনমনে চুল ছেড়ে দিয়ে অন্ধকার মুখ করে বসে আছে নিয়তি। এইভাবে নিয়ে আসাতে ভীষণ রেগে সে। শুদ্ধ মুখে বিরক্তি নিয়ে বলল,
–” ওই নিলয়ের সাথে কিসের এত কথা। আমার সাথে তো ঐভাবে কথা বলো না। আমি কিন্তু তোমার অর্ধেক বর বলে দিলাম।”
–” কেন জেলাস ফিল হচ্ছিলেন বুঝি?”
গাড়ি থামিয়ে দিয়ে নিয়তির হাত চেপে ধরে একদম কাছে মিশিয়ে মুখ সামনে এনে বলল,
–” হ্যাঁ হচ্ছি। জানি না কেন জেলাস ফিল হচ্ছে আমার। তোমাকে তো আমি দেখতেই পারতাম না তাহলে হঠাৎ কিভাবে কি হলো বুঝলাম না। তোমার সন্ধান খুঁজতে খুঁজতে মরীচিকার পিছনে পরে ছিলাম। এখন তোমার ভালোবাসার সন্ধানে মরীচিকাকে ভুলে তোমার হতে চাচ্ছি। কিন্তু বারবার মন বলে তুমিও চলে যাবে। প্লিজ ছেড়ে যেও না।”
–” ছেড়ে কে যেতে চাইছে। ছোট্ট বেলার ক্রাশ আপনি। জানেন স্কুলে ফ্রেন্ডের কাছ থেকে চাঁদা তুলে আপনার জন্মদিন পালন করতাম। সবাইকে কত টাকা ট্রিট পর্যন্ত দিয়েছি। আর সেই আপনি আমাকে দূর দুর করতেন। ভুলি নাই কিছু আমি।”
শুদ্ধ হাসলো। আচমকা নিয়তির কপালে চুমু দিয়ে বলল,
–” কত কষ্ট করেছ আমার জন্য তাই না। আমি তো ভাবতেই পারছি না আমার জন্মদিনও তুমি পালন করতে। বিয়ের আগেই আমার প্রতি এত দরদ তোমার।”
–” দরদ থাকলে কি? আপনি তো সেই মিলি চিলির পিছনে পরে ছিলেন। আমার তো কান্না পাচ্ছে এখন। ইচ্ছা করতেছে খুন করে ফেলতে। আচ্ছা মিলি যদি আপনার জীবনে আবার ফিরে আসতে চায় তাহলে কি আমায় ছেড়ে দিবেন?”
–” কখনই না। মিলি আমার অতীত ছিল তার থেকে বড় কথা সে ছিল মৌহ। আমি তোমাকে ভালোবাসি। আমাদের পবিত্র সম্পর্ক আমাদের খুব তাড়াতাড়ি একত্রে করে ফেলেছে। তাছাড়া মিলি কখনোই আসবে না আমার জীবনে। সে আমাকে কষ্ট দিতে গিয়ে নিজেই এখন জ্বলছে। সামান্য টাকা পয়সা যার আনন্দ তার ঠাঁই আমার জীবনে না।”
শুদ্ধর কথা শোনে হাত মুষ্টি বদ্দ করে জড়িয়ে ধরলো নিয়তি। আজ তারা পরিপুর্ণ। নতুন জীবনে নিজেদের নতুনভাবে গড়তে তারা প্রস্তুত। মনের ভিতর লুকিয়ে ছোট্ট বেলার অনুভূতি আজ সে তার মনের মানুষকে বলতে পেরেছে। আনন্দে তার ইচ্ছা করছে উড়ে বেড়াতে। শুদ্ধ যে তাকে এত তাড়াতাড়ি আপন করে নিবে ভাবেনি। যার সন্ধানে এতগুলো দিন সে ছিল আজ তাকেই সে পেয়েছে।
–” জানো নিয়তি, আমি কখনোই মিলির সাথে হ্যাপি ছিলাম না। ওকে ভালো লাগতো, যেহেতু রিলেশনে ছিলাম হাজার কষ্ট হলেও আমি ওর পাশে থাকতাম কিন্তু মিলি কি করলো আমার চাচ্চুর সাথে বিয়ে করে আমায় কষ্ট দিলো। তখন কষ্ট কেন হয়েছিল জানো? ওর বিয়েতে নয় নিজেকে অসহায় ভেবেছিলাম। ভাবতাম এমন একটা মেয়ের সাথে কি করে আমি এতগুলো বছর সম্পর্কে ছিলাম। এখন বুঝলাম ,মাইলের পর মাইল এক সাথে হাঁটতে যাওয়া নয়।
ভালবাসা হল, হৃদয়ের সাথে মিশে থাকা,
কারু অস্তিত্তের উপস্থিতি নিজের মাঝে ধারন করা।
নিঃশ্বাসে নিঃশ্বাসে শুধু তাকেই অনুভব করা,
তার ছোট থেকে ছোট চাওয়া গুলো,
পুরন করার আস্থিরতা,
তার ভালমন্দ সবখানেই নিজেকে খুজে পাওয়া ।
ভালোবাসা মানে পরস্পরকে বুঝতে পারা।
আমি যে মানুষটিকে ভালোবাসব তাকে যদি না বুঝতে পারি তাহলে
এই প্রেমের কোনো অর্থ আছে বলে মনে হয় না। আমি তোমাকে খুব ভালোবেসে ফেলেছি।
চুপ থেকে শুদ্ধের কথাগুলো শুনছে নিয়তি। শুদ্ধের একটু বাহু জড়িয়ে ধরে চোখ বন্ধ করে রাখলো। নিজের ভালোবাসার মানুষটির পাশে থাকার আনন্দই আলাদা।
শিশির বিন্দুর মত সোনালী আলোয়
যাও যদি শুকিয়ে ।
কুয়াশা হয়ে খুঁজবো তোমায়
গ্রামান্তর পেরিয়ে ।
মেঘ হয়ে নীলাম্বরে
যাও যদি ভেসে ভেসে ।
শঙ্খচিল হয়ে ছুটবো আমি
তোমার পিছে পিছে ।
নদীর মত
যাও যদি বয়ে ।
সাথে যাবো তোমার
পাল তোলা নৌকা হয়ে ।
জোঁনাকি মত যদি লোকচুরি খেল
অন্ধকারে
খুঁজবো তোমায়
কোণায় কোণায়
এ পৃথিবীটা জুড়ে ।
তোমার সন্ধানে…..
সমাপ্ত……..
(বানান ভুল ক্রুটি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। প্রথমত মিলি শাস্তি পাচ্ছে, নিজের বয়সের দুইগুন লোককে বিয়ে করে সে নিজেই অসুখী তার উপর শুদ্ধও এখন বিবাহিত।
দ্বিতীয়ত গল্পটা আমি আগে থেকেই ছোট করে লিখবো ভেবেছিলাম। তবুও মানুষ মাত্রই ভুল। পরের গল্প খুব তাড়াতাড়ি আসবে। ধন্যবাদ।)
(কবিতাটি কালেক্টেড)