#তোমার_নেশায়_আসক্ত
#সিজন:2
#পর্ব:35
#Suraiya_Aayat
শীতের ঠান্ডা রাতের ঘন কুয়াশা কাটিয়ে গাড়িটা ধীরগতিতে সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে , আর আরু ওর মাথাটা গাড়ির সিটে আলতো করে এলিয়ে দিয়েছে,ঘুমঘুম ভাবটা আর নেই , তা আরিশের উষ্ন ছোঁয়াই কেটে গিয়েছে, এখন খানিকটা চোখ বন্ধ করে ভাবছে যে এরপর ঠিক কি হতে চলেছে, আরিশের প্রতিটা কাজ সবসময় খুব নিঁখুত হয় , আরিশের ভাষায় ইউনিক যাকে বলে ৷
জানালার কাচটা বন্ধ রেখেছে আর বাইরের একরাশ কুয়াশা এসে ভিড় করছে গাড়ির জানালার কাচে, বাইরের দৃশ্য দেখার জো নেই, খানিকটা বাধ্য মেয়ের মতোই হয়ে রয়েছে আরু ৷
আরিশ ও আরুর মতো নিসতব্ধ , ও নিজের মুখের বুলিটা আপাতত থামিয়ে রেখেছে হয়তো আরু কি বলবে তার অপেক্ষাতে আছে ৷
আরু মুখে এক চিলতে হাসি ফুটিয়ে বলল,,,,,,
__” তা মি: অভদ্র আমরা কোথায় যাচ্ছি সেটা কি আমি জানতে পারি ?”
আরিশও আরুর বিপরীতে একরোখা হেসে বলল,,,,
__” কখনো কি খালি পায়ে ঘন কুয়াশায় বিচের ধারে হেটেছো আরুপাখি ?”
__” আপনার হাতে হাত রেখে হাটবো বলেই হয়তো ওভাবে কখনো হাটা হয়নি,আর আমার ক্ষুদ্র মস্তিষ্কের মাঝেও হয়তো ধারনাটা জন্ম নেয়নি !”
আরুর কথার পরিবর্তে আরিশ মুচকি হাসলো,,,,,,
মেয়েটা আজকাল বড্ড আবেগ নিয়ে কথা বলে, ও নিজেও খানিকটা আবেগী হয়ে যায় , অবশ্য বেশ ভালোই লাগে, অনুভূতিটা মন্দ নয় ৷
আরু আরিশের দিকে খানিকটা ধীমে চোখে তাকালো ৷ আরিশ আগের মতোই নিসতব্দ হয়ে একমনে গাড়ি চালাচ্ছে, আরিশকে একনজর দেখে চোখটা আরিশের থেকে সরিয়ে নিল ৷
কিছুক্ষন পর আরু চোখটা একটু বন্ধ করতেই আরিশ বলে উঠলো,,,,
__” বাইরে বড্ড ঠান্ডা তাইনা !”
আরু আগের মতোই চোখজোড়া বন্ধ রেখৈ বলল,,,
__” হুমম ৷”
আবার খানিকটা নিসতব্দ হতেই হঠাৎ কানে কিছুর ফিকে আওয়াজ ভেসে আসতেই আরু চোখজোড়া মেলে আরিশকে বলল,,,,
__” এটা ঠিক কিসের আওয়াজ ?”
__” জানালা টা খোলো ৷”
আরিশের কথাটা শুনে আরুর কৌতুহলের মাত্রাটা যেন দ্বিগুণ হলো, জানার জন্য আর কোন রকম অপেক্ষা নামক বাঁধাতে ও সীমাবদ্ধ থাকতে চাইনা , তাড়াতাড়ি করে হালকা করে জানালাটা খুলতেই একরাশ ঠান্ডা হাওয়া ওর চোখেমুখে এসে আছড়ে পড়তেই আরু চোখজোড়া খিচে বন্ধ করে ফেলল ৷
আরিশ তা দেখে ঠোঁট চেপে হাসছে, ব্যাপারটাই একপ্রকার মুগ্ধতা কাজ করছে আরুর মাঝে ৷
আরু এবার চোখটা খুলতেই দেখলো সামনে স্রোতের ধারা বইছে আর সমুদ্র থেকে খোলা বাতাস বয়ে চলেছে তাতে যেন ও ভেসে যেতে চাই ৷
__” কেমন লাগছে পরিবেশটা ?”
আরু খুশিতে ডগমগ হয়ে বলল,,,,
__” এককথায় তুলনাহীন ৷”
আরু সমুদ্রের দিকে মনোনিবেশ করতেই গাড়ির গতির ধারাটা কমে আসতে আসতে একটা সময় তা বালির মাঝে থেমে গেল ৷
আরিশ গাড়ি থেকে নেমেছে তবে আরু এখনো গাড়ি থেকে নামেনি, নামলে আরিশ যদিওবা আরিশ কিছু বলবে না সেটা ও জানে তবুও গাড়িতেই অপেক্ষা করছে যাতে আরিশের হাতে হাত রেখে সমুদ্রের নোনা জলে একসাথে পা ভেজাতে পারে ৷
কিছুখন আগে যখন আরিশকে বলছিলো যে এই ভাবে কখনো কিছু ভাবা হয়নি তখন মনে মনে একদফা ভেবেছে যে আরিশের জন্যই হয়তো এতদিন ওরজীবন তরীটা গতিশীল হয়নি, কারন তার মাঝিটা যে এতদিন তরীটা তীর থেকে সমুদ্রে ভাসাই নি ৷
আরিশ গাড়ি থেকে নেমে ধীরপায়ে আরুর কাছে গেলো, গিয়ে আরুর হাত ধরে গাড়ি থেকে নামালো ৷
আরুও শীতে কাপাকাপা হাতটা আরিশের হাতের ওপর ভর করে গাড়ি থেকে নামলো ৷
দুজন হাতে হাত রেখে পাশাপাশি দাড়িয়ে রয়েছে, সমুদ্রের উত্তাল হাওয়া ওদেরকে সম্পূর্ণ রুপে এলোমেলো করে দিচ্ছে ,আরিশের পাতলা সাদা শার্টটা ভেদকরে ঠান্ডা হাওয়া বয়ে যাচ্ছে আর সেগুলো যেনো সমগ্র শরীর জুড়ে কাঁপুনি সৃষ্টি করছে, আরু তো রীতিমতো জড়ো হয়ে যাচ্ছে তবুও শীতের জড়তার থেকে সময়টাকে বেশি উপভোগ করতে ব্যাস্ত আজ কারন প্রিয় মানুষের সাথে এভাবে মাঝরাতে একান্তে সমুদ্রের তীরে হাতে হাত রেখে সময় কাটানোর সৌভাগ্য কখনো হয়নি ওর ৷
আরিশ উত্তাল সমুদ্রের দিকে তাকিয়ে বলল,,,,
__” কখনো ইচ্ছে হয় না যে এই একরাশ সমুদ্রের সফেন জলের মতো নিজের ভালোবাসাটাকে নিজের প্রিয় মানুষটার প্রতি উজাড় করে দিই ৷
কথাটা শোনা মাত্রই আরু আরিশের দিকে অবাক চাহনিতে তাকালো, আরিশের কথার ভাবার্থ কিছুটা হলেও ও বুঝতে পারছে, তাহলে ওর তরফ থেকে কি আরিশের প্রতি ভালোবাসার কোন ত্রুটি থেকে গেছে যেটা আরিশ কখনো দেখাতে চাইনা এমনকি দেখাই না !
খানিকটা কম্পিত কন্ঠে আরূ বলে উঠলো,,,,
__” আপনি কি আমার সেই ভালোবাসার অনুভূতিতে নিজেকে খুজে পাননা?”
আরিশ আরুর কথার পরিবর্তে মুচকি হেসে আরুর হাতটা শক্তকরে জড়িয়ে ধরে বলল,,,,
__” চলো হাটি !”
কথাটা বলে সামনের দিকে এগোতে গেলেই আরু একইভাবে দাড়িয়ে রইলো, ওর পা জোড়া যেনো সেখান থেকে নড়তে চাইছে না হয়তো আরিশের কথার উত্তর না পেলে ওর সবকিছুর আজ ব্যার্থ হয়ে যাবে ৷
আরু থেমে গিয়ে বলল,,,,.
__” আমি কি ব্যার্থ?”
আরিশ বেশ নরম সুরেই বললো,,,,
__” সবকিছুই কি আর ব্যর্থতার নিখিরে যথার্থ ! একটা ধারা নিয়ে জীবনটা বহমান, আমি যে ধারাতে চলছি তোমাকে নিয়ে আমি তাতেই খুশি, বাহি্যক কোন চাওয়া পাওয়া আমাকে ছূয়ে যেতে পারে না ৷ কথাটা যেদিন সম্পূর্ন রুপে বুঝবে সেদিন আমার কথার বিপরীতের উত্তরটা নিজেই বুঝতে পারবে, আমার উত্তরের অপেক্ষায় থাকবে না, বুঝলে সানশাইন !”
আরু আরিশের কথার মাঝেও যেন আসশ্ত হলো না তাই একইরকম ভাবলেশহীন ভাবে দাড়িয়ে রইলো,,,,
ওকে ওভাবে থাকতে দেখে আরিশ আরুর মুড ঠিক করার জন্য বলল,,,,
__” আমি যতদুর জানি আরুশি মানের সূর্যের আভা তারমানে = সানশাইন ৷ তাই তুমি আমার সানশাইন, তুমি কোথায় এই অন্ধকারে একটু আলো দেবে তা না, কেমন জোনাকি পোকার মতো মিটমিট করছো, যদিওবা তার সৌন্দর্যটা অধিক তবুও আমার এখন যে সানশাইনটাই চাই ৷
আরুর তাও কিছু বলছে না, আরিশের কথায় ওর হাসি পেলো না বরং ওর কথার ঘোরে পুরোনো কথাগুলো যেনো আরো বেশি বেশি করে মনে পড়ছে ৷
আরিশ এবার আরুর কাছে গিয়ে আচমকাই ওর ঠান্ডা হাতটা আরুর কোমর বরাবর স্পর্শ করতেই আরু কেঁপে উঠে আরিশের থেকে নিজেকে ছাড়াতে গেলেই আরিশ বলে উঠলো,,,
__” আশিকী2 র সিনেমার মতো দৃশ্য দেখতে চাও?”
আরু আরিশের দিকে অবাক চোখে তাকালো ৷
আরিশ এবার আরুকে কাছে টেনে ওর ঠোঁজোড়াতে আলতো করে নিজের ঠোঁট ছুইয়ে দিয়ে বললো,,,,
__” ব্যাপারটা ঠিক জমলো না, তবে আরিশ খান এতো সহজে ছেড়ে দেওয়ার পাত্র নয়, বাসাই গায়ে সবটা ফিরিয়ে দেবো ৷”
কথাটা বলৈ আরুর দিকে চোখ মারতেই আরু লজ্জায় মুখ নীচূ করে ফেললল,,,,,
আরিশকে জড়িয়ে ধরে ওর বুকে মাথা রেখে বললো,,,,
__” ভালোবাসি আপনাকে , অনেক অনেক , কখনো ছেড়ে যাবেন না প্লিজ ,তাহলে আমি বাঁচতে পারবোনা ৷”
আরিশ আরুকে নিজের সাথে মিশিয়ে নিয়ে বলল,,,
__” ছেড়ে যাওয়ার জন্য আমি ভালোবাসিনি আরুপাখি ,আর যদিতুমি ছেড়ে যেতে চাও তো এটা ভেবে রেখো যে তোমার এই মিঃঅভদ্র নামক মানুষটা তোমাকে যেতে দেবে না ৷”
____”
বেশ অনেকখন ধরে বিচের ধারে হাটতে হাটতে বেশ অনেকটা এগিয়ে গেছে ওরা ৷
আরিশ যতোই সামনে এগোচ্ছে ততই ওর মুখের হাসির রেখাটা চওঢ়1 হচ্ছে ৷কিছুটা এগিয়ে যেতেই আরু সামনে একটা মানুষকে দাড়িয়ে থাকতে দেখে আরিশকে জিজ্ঞাসা করলো,,,,
__” এতো রাতে বিচের ধারে মানুষ কেনো ?”
আরুর কথার পরিবর্তে আরিশ মুচকি হাসলো ৷
ভয়ে আরুর গলা শুকিয়ে আসছে, শক্ত করে আরিশের হাতটা জাপটে ধরে আছে ,ওর মনে এখন একটাই ভয় যে ওটা আদতেও কোন মানুষ তো! যদি অন্যকিছু হয়? এসব ব্যাপারগুলো আরু খুব ভয় পাই,যদিওবা কখনো এমন পরিস্থিতির স্বীকার হতে হয়নি ওকে তবুও ৷
__” আমি আর যাবো না, চলুন আমরা ফিরে যাই !”
__” ঊহু, এতদূর যখন এসেছি তখন এতো সহজে ফিরে যাচ্ছিনা আরু পাখি, চলো !”
বলে আরুর হাত ধরে এগিয়ে নিয়ে যেতেই আরু খেয়াল করলো, হঠাৎ একরাশ ফানুস আকাশে উড়ে যাচ্ছে, প্রায় 500 টা মতো তো হবেই এমনটা ৷ আরূর হাতটা খানিকটা আলগা হয়ে এলো ,চোখ ধাধানো এক অপরুপ দৃশ্য ৷ আগে ফানুষ দেখেছে তবে এমনভাবে নয় ৷
আরুর পা জোড়া থেমে গেল, ও ফানুষগুলো দেখতেই ব্যাস্ত, আরিশের হাতটা ছেড়ে দিয়েছে অনেক আগেই ৷
__”তোমারেই যেন ভালোবাসিয়াছি
শত রুপে শত বার
জনমে জনমে অনিবার !”
হঠাৎ ঠিছন থেকে আরিশের গলার আওয়াজ পেতেই আরু পিছন ঘুরে তাকিয়ে দেখলো আরিশ রিতীমতো একরাশ গোলাপের থোকা নিয়ে হাটুগেড়ে ওর সামনে বসে আছে, সমুদ্রের জলে সারাশরীর ভিজে একাকার হয়ে যাচ্ছে ৷
আরু অবাক হয়ে আরিশের দিকে তাকিয়ে বলল,,,,
__” অনেক ভালোবাসি ! তুমি কি বাসো?”
আরু ছলছল হয়ে তাকিয়ে আছে আরিশের দিকে ৷
#চলবে,,,,,