তোমার নেশায় আসক্ত ২ পর্ব-৩৪ | বাংলা রোমান্টিক ধারাবাহিক গল্প

0
1690

#তোমার_নেশায়_আসক্ত
#সিজন:2
#পর্ব:34
#Suraiya_Aayat

আরু আরিশের ওপর রাগ করে গটগট করে হাটতে শুরু করলো, ও জানে যে আরিশ যা বলছে তা ঠিক, মেয়েটা যে আরিশের ওপর চরমভাবে ক্রাশিত তা ও বেশ ভালোই জানে, আর মেয়েটা যেচে ওর কাছে এসে জানতে চেয়েছে এর পরিবর্তে মেয়েটা যে কোন একশন নেবেনা আরিশকে পাওয়ার পরিবর্তে তার আন্দাজ কিছুটা হলেও ও করতে পেরেছে ৷

আরিশ মুচকী হেসে বলল,,,,,

__” রাতে আবার তাড়াতাড়ি ঘুমিও না, আমি আসা অবধি একটু অপেক্ষা কোরো আরুপাখি ৷”

আরু আরিশের দিকে একবার ঘুরে জিভ ভাঙচি দিয়ে বলল,,,,,

__” Am I dumb to u মি অভদ্র ?”

__” Absolutely not sunshine. তুমি তো পুরো গোলুগোলু ৷”

আরু রাগে গটগট করে হাটতে শুরু করলো ৷ ও জানে যে আরিশ যখন বলেছে যে রাতে আসবে তখন ও আসবেই , যে কোনভাবেই যে আরুকে রাতে ওর বাহুঢোরে চাই ৷ এক মুহূর্তও একা থাকার কথা ভাবেনা আরিশ, ইভেন অফিসে গেলেও প্রত্যেক 30 মিনিট অন্তর অন্তর ফোন করে ওর খোজ নেই ৷ আরু আরিশের অজান্তেই মুখে এক চিলতে হাসি ফোটালো ৷ আর যাই হোক আরিশ কখনো ওকে কষ্ট পেতে দেবেনা ৷

আরুশি বাড়ির ভিতর ঢুকে যেতেই আরিশ গাড়িতে start দিলো ৷ আরিশ গাড়ির start দেওয়া মাত্রই আরুর বুকের ভিতর ধক করে উঠলো, মানুষটা ওকে ছেড়ে কিছুক্ষনের জন্য দূরে যাচ্ছে তাতেই ওর মনে হচ্ছে যে এই বুঝি মানুষটা ওর থেকে অনেকটাদূরে চলে গেল ৷ আরুর মনে অজানা কেমন একটু অসস্তি হচ্ছে , মানুষটা রাতে আসবে তা জানা সত্ত্বেও ৷
আরিশ গাড়িটা ব্যাক করার আগে একবার হর্ন দিলো , আরূ তৎক্ষনাত আরিশের দিকে ঘুরে তাকালো ৷ এক অদ্ভুদ মায়া নিয়ে তাকিয়ে আছে আরূ, আরিশ আরুর দৄষ্টি লক্ষ করে ফিচেল হেসে বলল,,,,,

__” রাতে আবার ঘুমিয়ে পড়ো না, আমার আসার আগে ঘুমালে খবর আছে, সারপ্রাইজ আছে একটা ৷”

কথাটা বলে আরিশ গাড়ি নিয়ে সেখান থেকে চলে এল ৷
আরিশ চলে যাওয়ার পর বেশ কিছুক্ষন আরু সেখানে দাড়িয়ে রইল ৷ আরিশ যদি আজকে না আসে তাহলে রাতটা আরুর জন্য আরো কঠিন হয়ে যাবে ৷ আগে কখনো এমন হয়নি ওর ,হয়তো কখনো এমন প্রেমবন্ধনে জড়াইনি সেই কারনে ৷

আরিশের বলা ছোট্ট “সারপ্রাইজ” শব্দটা মাথায় নিয়ে বাড়ির ভিতরে পা বাড়ালো আরূ ৷

সারাদিন আরিশ ঠিক কতটা গুরুত্বপূর্ণ কাজ করেছে তা আরিশ ছাড়া আর কেউ হয়তো জানে না ৷

সারাদিনের ক্লান্তির পর আরিশ বাসায় ফিরে শাওয়ার নিয়েছে ৷ আজকে ধানমন্ডির বাসাতে আছে, এখনো ও বাড়িতে ঠিকঠাকভাবে কবে থাকবে সে কথা এখনো ভাবেনি ৷
ঘুমঘুম চোখটা ধরে এল আর তখনই ফোনে কল আসতেই খানিকটা চোখের জড়তা কাটিয়ে ফোনটা কানে নিতেই ওপাশ থেকে একটা পুরূষালী কন্ঠস্বর ভেসে আসলো ৷

__” দোস্ত আমি আর মিথিলা কালকে ফিরবো, আম্মু কালকে আমাকে ওই বাসায় যেতে বলেছে, তাই আমার ধানমন্ডি ফিরতে 3 দিন লেট হবে ৷”

আরিশ মুচকি হেসে বলল,,,,
__” আচ্ছা সমস্যা নাই, আন্টির সাথে ভালো সময় কাটিয়ে আই ৷”

__” আচ্ছা তোরা নিজেদের খেয়াল রাখিস , আমি রাখছি ৷”

__” হমম ৷”

ফোনটা রেখৈ আরিশ যখন আবার ঘুমঘুম চোখজোড়া বন্ধ করতে যাচ্ছিল তখনঈ আরূকে দেওয়া সারপ্রাইজের কথা মনে পড়তেই কোনরকম ঘুমের রেশটা কাটিয়ে আবার ফোনটা নিয়ে কল দিলো সাহেলের কাছে ৷ যেহেতু সারপ্রাইজ দেবে তাই কিছুটা হলেও রোমান্টিকতার ব্যাপার থাকে তাই আরিশ এ ব্যাপারে সাহেলকে চোখ বন্ধ করে বিশ্বাস করে পারে , তূর্যকে বিশ্বাস করে পারে না তেমনটা নই, আসলে তূর্যর এ ব্যাপারে এক্সপিরিয়েন্স কম ৷

বেশ কিছুখন রিঙ হওয়ার পর সাহেল ফোনটা ধরলো,,,,

__” তুই কাজটা ঠিক ঠাক করেছিস?”

__” ঠিক কোন কাজটা ?”(খানিকটা অন্যমনস্ক হয়ে)

আরিশ একটা দীর্ঘশ্বাস নিয়ে বলল,,,,

__” কি হয়েছে আগে সেটা শুনি ! আমার সেই ছোট্ট বোনটার সাথে তোর ঝামেলা হয়েছে আবার তাইতো,নাকি সরাসরি ব্রেকআপ কেস কোনটা !”

__” ও ব্রেকআপ করেছে আমার সাথে !”(কাদোকাদো হয়ে)

__” আবার ওকে সন্দেহ করে বকাঝকা করেছিস নিশ্চই ?”

সাহেল নিসতব্দ হয়ে থাকলো, ও জানে যে আরিশ বরাবরের মতো সবকিছু যেনে যাবে, ওর না বলতেই তাই আর অবাক হলো না, একটা দীর্ঘশ্বাস নিয়ে বলল

__” আমি কিছু বুঝতে পারছি না যে এখন কি করবো আমি, আমি ওকে খুব ভালোবাসি, খুব খুব ৷”

__” বিয়ে করে ফেল !”

__” এসব কি বলছিস তুই, আর ইউ সিরিয়াস?”

__” ইয়াহ আমি সিরিয়াস , আর শালা প্রেম করেছো বিয়া করবা না এটা বললে কানের নীচে এক থাবড় দিবো ৷”

সাহেল খানিকটা তুতলিয়ে বললো,,,,,

__” কিন্ত আমি তো কোন জব বা কিছুইকরি নি, ইভেন রেজাল্ট ও আহামরি কিছু ভালো হয়নি যে কোন কোম্পানি আমাকে জব দেওয়ার জন্য উঠে পড়ে লাগবে ৷”

__” আমিও তো কিছু করি না, তাই বলে কি আরূপাখিকে বিয়ে করিনি !”

সাহেল অবাক হয়ে বলল,,,,
__” আরিশ আর ইউ সিরিয়াস তুই তোর সাথে আমার তুলনা করিস !”

__” না করার কি আছে, উই আর সেম ব্রো 😉৷”

কথাটা শুনে সাহেল আর আরিশ দুজনেই হেসে ফেলল ৷

__” U have to learn some lesson….সেটা আমি না হয় তোকে পরে বোঝাবো, তার আগে আমার বোনটার কাছে গিয়ে ক্ষমা চা , যেন কোনভাবেই আর রাগ না করে থাকে , রাগ করে আবার ক্যাচাল হইলে তোর খবর আছে ৷”

সাহেল মুচকি হেসে বলল,,,,,

__” আচ্ছা !”

__” আর আমার কাজটা ?”

__” হয়ে যাবে ঠিক😅 ৷”

__” ওকে ব্রো ৷”

আরিশ কলটা কেটে দিল,,,, সাহেল ওর হাতে থাকা ব্লেডটা ফেলে দিল, ব্লেডটা দিয়ে ও নিজের হাতটা ক্ষত বিক্ষত করতে চাইছিলো, এই হাতেই ও চড় মেরেছে , না জানি মেয়েটা কতটা কষ্ট পেয়েছে,বাট আরিশের কথা শুনে নতুন করে ভালোবাসা ফিরে পাওয়ার এক আশা পেয়েছে ও ৷ বরাবরের মতোই আরিশ ওর কষ্টটাকে নিজের সাথে ভাগ করে নিয়েছে ৷

সাহেলের থেকে কলটা কেটে দিয়ে আরিশ বালিশে মাথা রেখে চোখ জোড়া বন্ধ করে রেখে বলল,,,,
__” তুমি আজ তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে পড়লো তোমার খবর আছে বউ!”

আরূর মা আরূকে বরাবরের মতো ওর প্রিয় চৌকো পরোটা টা বানিয়ে দিয়েছে , অন্যদিন হলে হয়তো আনন্দে লাফালাফি করতো কিন্ত আজ ওর মাঝে সেই উত্তেজনাটা আর আনন্দটা নেই, বারবার খালি ভয় পাচ্ছে যে জেরিন কিছু করে বসে যদি তাহলে কি হবে ৷ এতটুকু বোঝার ক্ষমতা ওর আছে যে কে কি করতে পারে আর না পারে, জেরিনের কথার ভাবভঙগিটা সহজ সরল হলেও তার মাঝে বড়োসড়ো কোন ঝড়ের আভাস পেয়েছে ও , সে হাওয়াই আরুশি না নিজেকে ভাষিয়ে দিয়ে আরিশের থেকে দূরে সরে যাই ৷

আরুকে অন্যমনস্ক দেখে ওর আম্মু বলে উঠলো,,,,

__” আরূ মা পরোটাটা ভালো হয়নি তাইনা ?”

আরূ হঠাৎ চমকে গিয়ে বলল,,,,

__” না না আম্মু ভালো হয়েছে ,খুব মজা , তোমার হাতের রান্না বলে কথা !’

__” তাহলে খাচ্ছিস না কেন আম্মু ?”

আরূ ওর মায়ের কথাটা শুনে যেন খাবারটা না খাওয়ার একটা বাহানা পেয়ে গেল, যেকোনো একটা অযুহাত দিয়ে খাবার ছেড়ে ও উঠতে চাই, এমনিতেও সন্ধ্যা 7 টা বাজে, আর এতো তাড়াতাড়ি খাওয়ার অভ্যাস ওর নেই আর কেমন একটা গা গোলাচ্ছে ,মনে হচ্ছে যেন এক্ষুনি বমি হয়ে যাবে ৷ তাই এবার বলেই ফেলল,,,,,

__” আসলে আম্মু আমার আর খেতে ইচ্ছা করছে না, এমনিতেও দুপুরে ভার্সিটির ক্যান্টিনে অনেক খাবার খেয়েছি তাই আর বাকি খাবার গুলো পেটে যাচ্ছে না ৷”
এই মুহূর্তে আরূর খুব বমি বমি পাচ্ছে ,পারলে এক্ষুনি বমি করে দেই, অনেক কষ্টে নিজেকে আটকে রেখেছে, ওর আম্মুর সামনে কোনরকম কোন অসস্তি প্রকাশ করলে এক্ষুনি উনি ডাক্তার ডেকে আনবেন ,আর ডাক্তার বেচার আরুর হাতে একগাদা ছুঁচ ফুটিয়ে একাকার করবে সেই ভয়ে আরু কিছু বলতেও পারছে না ওনাকে ৷
__” আম্মু আমি রূমে যাচ্ছি, খুব ঘুম পাচ্ছে আমাকে ডাকিওনা ৷”

কথাটা বলে আরূ ব্যাতিব্যাস্ত হয়ে রূমে চলে গেল ৷

__” মেয়েটার যে মাঝেমাঝে কি হয়না কিছুই বুঝিনা, না জানি আরিশ আমার এই পাগল মেয়েটাকে কি করে মানিয়ে নেই !”

আরূ রূমে ছুটে গিয়ে ওয়াশরূমে ঢুকে বমি করে দিলো ৷এতক্ষন ধরে ওর আম্মু ওকে যা যা খাইয়েছে তার সবটাই বমি হয়ে উঠেগেছে ৷

আরূ কোনরকমে নিজেকে সামলে রূমে এলো , বিছানার ওপর বসে আছে মাথায় হাত দিয়ে, মাথাটা ঝিমঝিম করছে খুব ৷

এভাবে আর বেশিক্ষন বসে থাকা যাবেনা, তাই তাড়াতাড়ি বিছানায় গা এলিয়ে দিল ৷ চোখজোড়া বন্ধ করতেই আরিশের বলা কিছু কথা ওর মনে পড়ে গেল

আরিশকের বলা একটা কথা ওর যনে পড়তেই আরূ এই চরম তিক্ততাময় সময়ের মাঝেও ফিক করে হেসে ফেলল,ওর বিয়ের দিন আরিশ যখন বলেছিলো যে,,,,
__” congrats আরুপাখি আমার বেবির আম্মু হওয়ার জন্য, !”
যদিওবা তখন কথাটা অবাঞছনীয় হলেও এখন তার তাৎপর্যতা অনেক, তবুও আরুর ভাবছে যে আসলে থেযনটা হয়নি হয়তো যে ও মা হতে চলেছে ৷

কথাটা ভাবতেই একজোড়া প্রাশান্তির ছাপ নিয়ে চোখ জোড়া বন্ধ করলো আরূ ৷
আরিশের বলা সাযপ্রাইজ কথাটা মাথায় ঘূরছে আর বারবার বলেছিল যে যেনো ভাবে হোক আরিশ আসা অবধি অপেক্ষা করতে,না হলে পরিবর্তে আরিশ পানিশমেন্ট হিসাবে আরিশ লাভ টরচার করবে তবুও আরু তা সহ্য করে নেবে ৷ কথাটা ভেবে চোখজোড়া বন্ধ করলো ৷

রাত 11,,,,,

কুয়াশা ঢাকা ঘন বাতাসে একরাশ জোছনার আলো আরূর ঘরটাতে কাচের দেওয়ালটা ভেদ করে প্রবেশ করছে, তাতে ওর মুখটা সম্পূর্ণভাবে দৃশ্যমান না হলেও আরিশের বুঝে নিতে অসুবিধা হচ্ছে না ৷
দুহাত জোড়া গালে রেখে ঘোর দৃষ্টিতে আরুর দিকে তাকিয়ে আছে আরিশ ৷ প্রায় 10 মিনিট এভাবেই আরূকে দেখে চলেছে আরিশ ৷ মুখে কোনো বিরক্তির ছাপ নেই,প্রকাঝ পাচ্ছে একরাশ ভালোবাসা ৷আরিশ এবার আরূকে খানিকটা বিরক্ত করার জন্য আরুর মুখে আলতো করে ফু দিতেই আরু কম্বলটা দিয়ে মুখটা ঢেকে নিলো ৷ আরিশ এবার খানিকটা শব্দ করে হেসে ঘুমন্ত আরূকে কোলে তুলে নিতেই আরূর ঘুম ভেঙে গেল , আরু ধড়ফড় করে তাকিয়ে দেখল আরিশ ৷ আবছা আলোতে আরিশের মুখটা ওর কাছে দৃশ্যমান ৷ আরিশকে দেখে খানিকটা আস্বস্ত হয়ে আরিশের বুকে মাথা ঠেকালো ৷রুমের বাইরে বেরোতেই ঠান্ডাটা ক্রমশ গাঢ়ো হয়ে আসছে আর আরুর শরীরের কম্পনের মাত্রাটাও তত বেড়ে চলেছে, আরিশের শার্টটা এবার আরো শক্ত করে খামচে ধরতেই আরিশ মুচকি হেসে বলল,,,,
__” একটু হলেও কি আমার শরীরের উত্তাপ চাই আরূপাখি !”

আরূকে গাড়ির সিটে বসিয়ে ৷

আরু আরিশের কথার মনে বুঝতে পেরে লজ্জায় আরিশের দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়ে ঠোঁটে ঠোঁট চেপে হাসতে লাগলো ৷

আরিশ আরুর দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে গাড়ি start দিলো ৷

চলবে,,,,,,,

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে