#তোমার_নেশায়_আসক্ত
#সিজন:2
#পর্ব:22(ধামাকা প্রথম খন্ড)
#Suraiya_Aayat
বেশ অনেকখন ধরে আরূ জানলার দিকে একমনে তাকিয়ে আছে ৷ আজ ওর নতুন জীবনের প্রথম দিন , একটা নতুন মানুষের সাথে নতুন ভাবে নিজেকে মানিয়ে গুছিয়ে নেওয়ার যাত্রা শুরু, পরবর্তীতে জীবনের বাদ বাকি সময়টা কিভাবে কাটবে সেটা ও জানে না ৷ যার সঙ্গে নিজের জীবনটাকে বাঁধতে চলেছে আদেও তার সঙ্গে মিলেমিশে একটা ছোট্ট সুখী পরিবার গড়ে তুলতে পারবে কি তার ধারণাটুকু ওর ছোট্ট মস্তিষ্কে নেই ৷ ও নিজের জীবনটাকে যেভাবে পরিচালিত করতে চেয়েছিল জীবনটা সম্পূর্ণ তার বিপরীত দিকেই পরিচালিত হচ্ছে সেদিন থেকে যেদিন আরিশ সরাসরি ওর সঙ্গে বিয়েতে অমত করেছিল ৷
ঘড়িতে সময় এখন 11:05, বাড়িতে আত্মীয় স্বজনরা আসতে শুরু করেছে তার সঙ্গে শুরু হয়েছে জোর কদমে তোড়জোড় ৷ আরু এখন নিজের মনে মনে ভাবছে
__” এটা কি আমার করা উচিত হচ্ছে? এভাবে একটা মানুষকে ভালো না বেসে তোর সঙ্গে সারাটা জীবন কাটানোর নামে মিথ্যা পতিশ্রুতি দেওয়াটক কি অন্যায় অন্যায়ের নয়? তার সঙ্গে মিথ্যাচারিতা নয় ?”
একটা দীর্ঘশ্বাস নিয়ে ব্যালকনির দিকে গেল গিয়ে সরাসরি হাত দিলো ক্যাকটাসের সেই গাছটাতে যেটা ও ওর 1 বছর বয়স থেকে দেখে আসছে ৷
ক্যাকটাস বরাবরই খুব প্রিয় আরূর ৷ ক্যাকটাস গাছটার বয়স আজ কুড়ি বছর প্রায় ৷
আরূর এখন বয়স 21 , ছোটবেলা থেকেই যখন অল্প অল্প কথা বলতে পারতো তখন ক্যাকটাসের এই গাছটা ও ওর বাড়িতে এনেছিলো ৷ সেদিন আরূর মা আর অনিকা খানরা family মিলে সেদিন পিকনিকে গিয়েছিলেন ৷
সেখানে আরূ আর আরিশ দুজনেরই গাছটাকে খুব পছন্দ হয়, তবে সেদিন আরিশের মনে ছিল একরাশ জেদ গাছটাকে পাওয়ার জন্য ৷ আর এদিকে ছোট্ট আরূও সমানভাবে ক্যাকটাস গাছটাকে নিজের কাছে রখার জন্য হাত-পা নাড়িয়ে নানান ভাবে তা বোঝানোর চেষ্টা করছিল , আরু তখন 1 বছর বয়সী, আর আরিশের তখন 4 ৷
হঠাৎ আরু যখন কেঁদে ফেলেছিল ছোট্ট আরিশ তখন একবার আরূর দিকে তাকিয়ে গাছটাকে আরূ কে দিয়ে দেওয়ার জন্য ঈশারা করেছিল ৷ সেদিন অনিকা খান অনেক বেশি অবাক হয়েছিলেন আরিশের কাজে কারণ আরিস বরাবরই খুব জেদি, যেটা চাই সে ,সেটাকেই নিজের করে ছাড়ে কিন্তু সেই দিনের ঘটনাটা ছিল ব্যতিক্রমী একটা ঘটনা ৷ আরূ বেশ কয়েকবার ওর আম্মুর কাছ থেকে শুনেছি এই ঘটনা তারপর থেকেই আরিশের উপর ক্রাশ খেয়েছে ৷ যে ওর ইচ্ছা-অনিচ্ছাটাকে এতটা বোঝে এতটা গুরুত্ব দেয় তাকে দেখার বরাবর ইচ্ছা ছিল আরুর, তবে এত বছরেও আরিশকে দেখা হয়ে ওঠেনি ওর……তার পর থেকে অদ্ভুদ একটানে প্রতিবছর একটা করে ক্যাকটাস কিনতো আরিশ, আর কথা দিয়েছিল ঘরের একটা দেওয়ালে যেদিন 20 টা ক্যাকটাসের রাশি পূরন হবে সেদিন হবে ওর অপেক্ষার অবসান,,,,আর আজ ওর অপেক্ষার দিন শেষ ৷
সেখানে বেশ কিছুখন সময় কাটানোর পর হঠাৎ দরজায় নক করতেই ধীর পায়ে গিয়ে আরু দরজাটা খুলতেই দেখল ওর বাবা আরমান সাহেব এসেছেন আর সাথে ওর মা ৷
__” বাপি তুমি এই সময় , কিছু বলবে?”
আরমান সাহেব আরুর মাথায় হাত রেখে কাঁদো কাঁদো হয়ে বললেন,,,,
__” কেন এতটা কষ্ট একা নিজে সহ্য করলি মা একবারও কি আমাদেরকে বলতে পারতি না তাহলে আমরা তো চেষ্টা করে দেখতাম নাকি ৷ এতটা স্বার্থপর হয়ে গেলি যে নিজের কষ্টের কথাটা নিজের বাপির সাথে শেয়ার করিসনি , এতোটাই পর হয়ে গেলাম আমি? আজ তোর মা আমাকে না বললে আমি তো জানতেই পারতাম না ব্যাপারটা ৷ কেন এরকম করছিস তুই ? তুই যদি চাস আমি আবার আরিশের কাছে গিয়ে ওকে অনুরোধ করবো, দরকার হলে ওর পায়ে পড়বো কিন্তু আমার মেয়েকে সারা জীবনের জন্য এভাবে কষ্টে দেখতে পারবোনা আমি ৷”
আরু মুখে এক চিলতে হাসি রেখে বলল,,,,
__” তার কোনো প্রয়োজন হবে না , আমি আমার জীবনের সিদ্ধান্তটা নিয়ে ফেলেছি, আর তাছাড়া জীবনের এমন একটা মুহূর্তে এসে আমি নতুনভাবে কোন ভাবেই আমার পতিশ্রুতি ভাঙতে পারি না , তাহলে তো আমার কথার কোন দামই থাকে না, আর তাছাড়া আমি এরকম করলে আসফিকে ঠকানো হয়, উনি নিজেই বিয়ের প্রস্তাবটা দিয়েছেন, আমি কি করে উনার মনটাকে নিয়ে এভাবে ছিনিমিনি খেলি বলো!”
__” তুই যে আশফিকে ভালো না বেসে বিয়ে করছিস সেটা কি অন্যায় নয় ওর প্রতি? ”
__” পরেরটা পরে ভাবা যাবে আপাতত জীবনটা যেভাবে চলতে চাইছে সেভাবেই এগিয়ে যাই ৷ আর তুমি চিন্তা করো না একটা সময় আমি নিজেও ঠিক মানিয়ে নেব ৷ নিজেকে অনেক গুছিয়ে নিয়েছি আর সময়ের সঙ্গে সঙ্গে স্মৃতিগুলোও মুছে যাবে হয়তো কোন না কোন একদিন ৷”
আরমান সাহেব আরুকে বুকে জড়িয়ে নিলেন , ওনার চোখে জল আর আরুর মাও নীরবে চোখের জল ফেলছেন মেয়েকে কষ্ট পেতে দেখে ৷
আরুর মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বললেন,,,,,
__” স্মৃতি ভালো হোক বা খারাপ হোক তা কখনো আমাদের জীবন থেকে মুছে যায় না, কোনো না কোনোভাবে পরে আঘাত দেয় , তেমনি তোর জীবনের এত বড় একটা খারাপ স্মৃতি তা কখনোই ভুলতে পারবি না তুই ৷ এখনো সময় আছে ভেবে দেখ আরু মা ৷ আমি বাবা হয়ে নিজের মেয়ের কষ্টটাকে কোনভাবেই দেখতে পারবোনা ৷”
আরু ওর বাবার থেকে সরে এসে বললো,,,,
__” দেখো আমি কত খুশি আছি , তোমরা কাদছো কেনো তার কারণ আমি বুঝতে পারছি না ৷ তোমারাও আমার খুশিতে খুশি হও , আর তোমরা যদি এভাবে কাদো তাহলে আমি কি করে হ্যাপি থাকি বল ! আর আশফি অনেক ভালো মানুষ, আমার যথেষ্ট কেয়ার করে আর খুব ভালোও বাসে তাই আমার আগামী জীবন অত্যন্ত সুখের হবে এটা ধরে নিও ৷ আর তোমরা কষ্ট পেয়ো না , তোমরা কষ্ট পেলে তোমাদের থেকে আমি বেশি কষ্ট পাবো ৷ প্লিজ এবার একটু হাসো ৷”
ইচ্ছা না থাকা সত্ত্বেও আরূ নিজের মুখে মিথ্যাটা হাসিটা ফুটিয়ে তুলল তার সাথে আরমান সাহেব আর ওর মাকেও বাধ্য করলো ওর সঙ্গে ওর মিথ্যা হাসিতে শামিল হওয়ার জন্য ৷
জীবনটা হয়তো এরকমই, কিছু কিছু সময় মুখের মিথ্যা হাসিটাকেকে ফুটিয়ে তুলতে হয় কোনক্রমে ঘটনাটাকে বার হওয়ার জন্য তভে ভিতর থেকে তা গভীর ক্ষত রেখেই দেই , সেটা অনিচ্ছা থাকা সত্ত্বেও ৷
❤
দুপুর গড়িয়ে বিকেল হয়ে গেল, বাসা মানুষজনে পুরোপুরি পূর্ণ , সকলেই মোটামুটি চলে এসেছেন আল পার্লারের লোকও চলে এসেছে সাজাতে ৷ তারা আরুকে সাজচ্ছে আর সানা ওর পাশে বসে আছে আর বারবার মিচকি মিচকি হাসছে একবার ফোনের দিকে তকিয়ে আর একবার আরুর দিকে তাকিয়ে ৷ হাজারো দুঃখের মাঝেও যেনো এটা আরুর কাছে অত্যন্ত বিরক্তিকর লাগছে, কোন কারন ছাড়াই এভাবে হাসার মানে খুঁজে পায়না আরু ৷ না পেরে বলে উঠলো,,,,,,
__” কিরে তুই এভাবে হাসছিস কেন?”
সানা এবার জোরে হো হো করে হেসে ফোনটা আরুর দিকে ধরে বললল,,,,,
__” এই দেখ এই জন্য হাসছি ৷”
আরূ ফোনের দিকে তাকিয়ে দেখল আরিশ এর ছবি, সম্ভবত সেটা কক্সবাজারেরই হবে ৷ বিচের ধারে দাঁড়িয়ে রয়েছে একটা শর্টস পরে আর গায়ে সাদা রঙের টি শার্ট আর হাতে চিকেন বারবিকিউ ৷ ছবিটা ফানি মুডেই তুলেছে ৷ দেখতে খুবই কিউট লাগছে পিকটাতে ৷
সানা এবার ছবিটা সরিয়ে ভিডিওটা অন করলো, তা অন করতেই ভিডিওটা চালু হলো,,,,, আরিশ গান করছে, আরি এমনিতেই আরিশের গাওয়া গানে আরু আসক্ত ৷
__”সুন্দরা সুন্দরা
ও হাসিনা বাড়ি সুন্দরা সুন্দরা
ম্যানে দেখা উসে হুয়া যো পাগল বাস পাল ভার মে ৷
আকে বাসি ও মেরে মান মে উসকি কামি হে আব জীবন মে
ও দূর কাহি মেরি নাজরো মে
ক্যায়া ওসে বাতা দু ৷
সাছ কেহ রাহা হে দিবানা
দিল ,দিল না কিসি সে লাগানা,,,,,,
গানটা শেষ করে আরিশ বললো,,,,,
__” ডেডিকেটিং ইট টু মাই সানশাইন , আই লাভ ইউ ৷ আর বেশি অপেক্ষা করাবো না তোমাকে ৷ লাভ ইউ, এন্ড আই এম কামিং ৷”
গানটা শুনেই আরূর চোখ দিয়ে টপটপ করে জল গড়িয়ে পড়ল ৷
__” সত্তিই উনি কতোটা ভালোবাসতে,পারেন, যদি এটা আমি পেতাম ৷ বাট সব ভালো তো সবার কপালে থাকে না তাই আমার ও নেই ৷ উনি যাকে ভালোবসেন সে সত্তিই অনেক লাকি ৷ “( মনে মনে )
__” কি হলো আপু আপনি কাদছেন কেন?আপনার মেকআপ তো সব নষ্ট হয়ে যাচ্ছে ৷”
__” ওপস সরি,,,, আসলে চোখটা একটু জ্বালা দিয়ে উঠলো তাই ৷”
__” এখন কাদবি কেদে নে পরে তোর জামাই এলে সে সুযোগ আর পাবি না ৷”(কথাটা বলে সানা মুচকি মুচকি হাসতে লাগলো ৷)
আরু ঘরের মধ্যে বসে আছে আর সানা একটু বাইরে গেছে কিছুক্ষণ আগে , আরূর মা ওকে ডেকেছেন সেই কারণে ৷
ইনূকেও আজকে কেমন মনমরা লাগছে , সেই কখন থেকে ঝিমিয়ে বসে আছে, ইনুকে এভাবে দেখে আরূর ও ভালো লাগছে না , ওর নিজরই মন খারাপ….
একটা দীর্ঘশ্বাস নিয়ে নিত্যদিনের মতো প্রায়ই চোখের কোনে জমে থাকা জলটা আঙ্গুল দিয়ে আলতো করে মুছে নিয়ে একটা দীর্ঘশ্বাস নিতেই আরুর ফোনটা বেজে উঠলো,,,,
ভাবলো যে আশফি ফোন করেছে তাই বিরক্তি নিয়ে ফোনটা হাতে নিতেই দেখলো রহযে আরিশের কল,,,,মুহূর্তের মধ্যে মনের মাঝে অজানা এক ঝড় বয়ে গেল,,,,
কাঁপা কাঁপা গলায় বলতে লাগল,,,,,
__” উনি হঠাৎ কি জন্য ফোন করেছেন? আমাকে সম্পূর্ণরূপে শেষ না করে দিয়ে কি উনি শান্তি পান না,,,,!”
কথা গুলো ভাবতে ভাবতেই ফোনটা কেটে গেল ৷
__” যাহ ফোনটা কেটে গেল, এবার আমি কি করবো? ওনাকে কি আমি ফোন করবো নাকি অপেক্ষা করবো ওনার কলের ! কিন্ত উনি যদি রাগ করে আর ফোন না করেন তখন আমি কি করবো?”
এই সব কথা গুলো আরূ নিজের মনে বলতে লাগলো,,,
তবে আর বেশি কিছু ভাবতে পারলো না তার আগেই আবার ফোনটা বেজে উঠলো,,,,এবার আর ফোন ধরতে দেরি করলো না আরূ, তাড়াতাড়ি ফোনটা ধরে বলল,,,,
__” হ্যালো ৷”
__” তোমাকে খুব সুন্দর লাগছে আজকে , একদম মায়াবতী ৷”
কথাটা শুনে আরূর মনের মাঝে উথাল পাথাল হতে লাগলো,,,
__” আপনি কি এগুলো বলার জন্যই ফোন করেছেন?”
আরিশ হেসে বলল,,,,,
__”নাহ প্রেমালাপ করতে ৷ বাই দা ওয়া কাজের কথাই আসি ৷”
__” কি কাজ? আমার সাথে আপনার কোন দরকারি কাজের কথা থাকতে পারে তা আমার মনে হয় না, তাই আপনি এখন রাখতে পারেন, আমার তাড়া আছে, সবাই ডাকছে হলুদের জন্য ৷”
আরিশ এবার উচ্চস্বরে হেসে বলল,,,,,
__” হলুদের জন্য বেশ তাড়া দেখছি আপনার তা কখনো কি শুনেছ যে বর ছাড়া হলুদ হয়?”
__” মাআনে কি বলললছেন এসব আপনি !”( ভয়ে তুতলিয়ে বললল,,,,)
__” আপনার এখনো একটা কাজ ডিউ আছে আমার কাছে ৷”
__” কি কাজ?”(অবাক হয়ে )
__” ওই যে জোরো র কাছ থেকে আপনাকে সেভ করলাম তাই আপনি বলেছিলেন যে আমি যা বলবো আপনি তাই করবেন ৷”
__” তো ! কি হয়েছে?”(ভয় পেয়ে)
__” এত তাড়াতাড়ি সব ভুলে গেলেন!”
__” না কীছ্ছু ভুলিনি ,তবে আপনি যা চান তা এখন সম্ভব নয় ৷”
__” কেন সম্ভব নয়!”
__” আপনি কি পাগল হয়ে গেছেন , আমি এখন আপনার ঘর পরিষ্কার করতে যাবো? লাইক সিরিয়ায়লি !”
__” ওয়াও আমার ডাইলগ আমার কাছে, আই লাইক ইট ৷ বাট আমি যখন চেয়েছি যে আপনি এখন আমার ঘর পরিষ্কার করবেন তো এখনই করবেন ৷”
__” নেশা করেছেন যে এসব ফালতু কথা বলছেন!”
__” তোমার নেশায়ই যে আসক্ত !”
__” মানে?”
__”নাথিং, বাট আপনাকে আমি আর 30 মিনিট সময় দিচ্ছি তার মধ্যে আপনি গিয়ে আমার রূমটা পরিষ্কার করে দিয়ে আসবেন ৷”
__” আপনি পৄথিবীর সবথেকে অভদ্র মানুষ তা কি জানেন?”
__” সবই তো আপনারই , সে যাই হোক, অভদ্রতামির এখনো কিছুই দেখেননি যখন শুরূ করবো এনজয় দ্যাট মোমেন্ট ৷ ”
__” আমি রাখছি ৷”
__” আচ্ছা তাড়াতাড়ি আসুন ৷”
__” আমি যাবো না আমার হলুদ আজ তা কি অজানা আপনার?”
__” চোখে চোখে কথা হবে ঠোঁটে ঠোঁট নাড়া দেবে আর ভালোবাসা ছাড়া কিছুই হবে না তাই তাড়াতাড়ি আসুন আর না আসলে কালকে নিউজে বড়োবড়ো লাইনের খবরে আসবে,,,,,
__” হলূদের অনুষ্ঠানে যেতে গিয়ে বর উধাও আর অনেক খোজাখুজির পর দেহ মিলল পদ্মা পারে ৷”
__” কি বলছেন এসব !” (ভয় পেয়ে)
__” যা বলছি ঠিক বলছি,,, আমার জেদ বজায় করতে আমি যেকোনো পর্যায়ে যেতে পারি ৷”
__” বাট আপনার বাসায় কেউ নেই আমি গিয়ে কি করবো ! আমার দিনটা এভাবে নষ্ট করবেন না প্লিজ আপনার দোহায় লাগে , আর আশফিকেও কিছু করবেনা, উনি খুব ভালো মানুষ ৷”
__” আমার থেকে ভালো মানুষ হতেই পারেন না , সে যাই হোক অলরেডি 2 মিনিট আপনি সময় নষ্ট করে ফেলেছেন ! আর আসবেন ঘরটা একটু পরিষ্কার করেই চলে যাবেন ৷”
__” আচ্ছা আমি আসছি ৷বাট আশফির কোন ক্ষতি করবেন না ৷ বাট বাসায় কেউ নেই আমার ভয় লাগছে ৷ আর তাছাড়া এখানে সবাই আমাকে খোজাখুজি শুরু করে দেব ৷ প্লিজ ৷”
__” তোমার আম্মুও জানে যে মেয়ে হলুদ মাখতেই গেছে তাই এসব ভাবনা বাদ দিন আর তাড়াতাড়ি আসুন ৷ আমার আবার ধৈর্য জিনিসটা কম, বেশিখন অপেক্ষা করালে পানিশমেন্ট টাফ হয়ে যাবে, তখন কিন্ত আপনি সহ্য করে পারবেন না ৷”
__” আমি আসছি ৷”
কথাটা বলে আরু তাড়াতাড়ি রুম থেকে বেরিয়ৈ গেলো ৷
আরিশ ফাঁকা ফটৗফ্রেমটার দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে গাইতে লাগল,,,,,,
__” আমার এই বাজে স্বভাব কোনদিন যাবে না ৷”
#চলবে,,,,,,
#তোমার_নেশায়_আসক্ত
#সিজন:2
#পর্ব: 22(ধামাকা 2য় পর্ব)
#Suraiya_Aayat❤
.তাড়াহুড়ো করে বাড়ি থেকে বেরিয়ে গেল আরূ, বাড়ির গাড়ি নিয়ে আসেনি , আসলে যদি আবার কোন রকম সমস্যা হয় সেই কারণে ৷ গায়ে হলুদের পোশাক আর আরিশ ওকে সময় দিয়েছে মাত্র 30 মিনিট ৷ ফোন কেটে দেওয়ার সাথে সাথেই ছুটেছে আরূ, অলরেডি 5 মিনিট সময় নষ্ট করে ফেলেছে ও , আর মাত্র 25 মিনিট আছে ওর কাছে, আরিশের ধানমন্ডির বাসায় আরূ আগে কখনো যাইনি তাই জানেও না কোথায় যেতে হবে, কোনোক্রমে একটা সিএনজি নিয়ে তাতে উঠে পড়ল আরূ ৷
গাড়িতে উঠতেই দেখল ফোনে আরিশ লোকেশন পাঠিয়েছে তাই ওর আর অসুবিধা হলো না আরিশের বাড়ি খুজতে ৷ এই মুহূর্তে সানার কাছে ফোন করে জানতে চাইলে সানা হাজারটা প্রশ্ন করবে যে ও কোথাই , কেন হঠাৎ চলে গেলো, ব্লা ব্লা ,,,,, আর এত কিছুর উত্তর দেওয়া এখন আরূর পক্ষে সম্ভব নয় বলে আরিসের দেওয়া লোকেশনটা অনুযায়ী ড্রাইভারকে গাড়ি চালাতে বলল ৷
__” মামা এই লোকেশন টা যেতে কতক্ষণ লাগবে?”
উনি ফোনের দিকে এক পলক তাকিয়ে বললেন,,,,
__” 35 মিনিট মত লাগবে ৷”
আরূ হকচকিয়ে বলল,,,,
__” মামা প্লিজ একটু তাড়াতাড়ি পৌছাবেন, আমাকে তাড়াতাড়ি ওখানে পৌঁছাতে হবে ৷ এমারজেনসি ৷”
গাড়ির ড্রাইভার আরূর দিকে একটু বাকা চোখে তাকিয়ে বললেন,,,,,
__” দেখে তো মনে হচ্ছে তোমার আজকে হলুদ , তা বিয়ে বাড়ি থেকে পালাচ্ছো মেয়ে ?”
আরুর বলার মত আর কিছু নেই , চাইলেই তো আর এখন সবটা ড্রাইভার মামাকে বলা যায় না তার জন্য কোনোক্রমে বলল,,,,
__” মামা আমার একটা ইমার্জেন্সি কাজ পড়ে গেছে তাই যেতে হচ্ছে তা ছাড়া অন্য কিছু নয় ৷ সেখান থেকে ফিরে গিয়ে হলুদ হবে ৷”
__” ওহ আচ্ছা !”
ড্রাইভার ও যেন আরূর কথা বিশ্বাস করলেন না সেটা আরূ বেশ ভালই বুঝতে পারল ওনার হাবভাব দেখে ৷ তবুও এখন কে কী ভাবল না ভাবল তা নিয়ে এই মুহূর্তে ওর কোনো মাথাব্যথা নেই ৷
মনে মনে চিন্তা হচ্ছে এই ভেবে যে যদি 30 মিনিটের বেশি লেগে যায় আরিশের বাড়িতে পৌঁছাতে তাহলে দেরি হয়ে যাবে আর তাহলে আরিশ বলেছে টাফ পানিশমেন্ট দিবে , এটাসেটা ভেবে আরো মাথা খারাপ হয়ে যাচ্ছে আরূর ৷ তাহলে কি পুরো বাসা পরিষ্কার করাবেন আমাকে দিয়ে ?”
কথাগুলো ভাবলেই আরূর গলা শুকিয়ে আসছে ৷
প্রায় তিরিশ মিনিট পর আরু আরিশের ধানমন্ডির বাসায় পৌঁছালো, অলরেডি পাঁচ মিনিট ও লেট, না জানি এই 5 মিনিটের সময় দেরির মাশুল ওকে কি করে দিতে হয় ৷
বাসার গেট খুলে ঢুকতেই দেখল বাসায় কোন আলো জ্বলছে না, বাইরে থেকে দেখে মনে হবে যে দীর্ঘদিন ধরে মানুষের বসবাস নেই সেখানে ৷ আরু এসব দেখে চমকে উঠলো, বাসাটা খুব বড় একদম ওর মনের মত কিন্তু আপাতত এই ভাবনাগুলোকে ফেলে রেখে ফোনের ফ্ল্যাশ টা জালিয়ে বাড়ির দিকে পা বাড়ালো আরু ৷
বাড়ির ঢোকার মেইন দরজাটা খুলতেই হঠাৎ ওর ফোনে ফোন আসতেই আরূ কেঁপে উঠলো,,,,, ফোনের দিকে তাকিয়ে দেখল মি অভদ্র লেখাটা ভেসে আসছে৷
তাড়াতাড়ি করে ফোনটা ধরতেই আরিশ বলে উঠলো,,,,
___” ইউ আর 5 মিনিট লেট,,,,,,”
__” আপনি কি করে জানলেন?”
__” আপনার কি মনে হয় এটা আমার জন্য কি খুব টাফ আপনার প্রত্যেকটা পদক্ষেপের খবর নেওয়া ৷
সে যাই হোক পানিশমেন্ট কি হবে সেটা আমি পরে দেখে নেব আপাতত সিঁড়ি দিয়ে উঠে প্রথমে যে ঘরটা দেখতে পাবেন সেই ঘরটাতে যাবেন ৷”
আরূ কাঁপা কাঁপা গলায় বললো,,,,
__” বাসায় কেউ নেই , কোন আলো জ্বলছে না আমার খুব ভয় লাগছে ৷”
আরিশ হো হো করে হেসে উঠলো ,,,,,,
__” আপনিও ভয় পান মিস আরুশি ?”
অন্ধকারের মাঝখানে আরিসের হাসির শব্দ শুনে আরুর সর্বাঙ্গ কেঁপে উঠলো, কাঁপা কাঁপা গলায় বললো,,,,
__” আমিও মানুষ তাই ভয় না পাওয়ার কি আছে !”
__” হোয়াটএভার ! তাড়াতাড়ি এসে রুমটা পরিষ্কার করে দিয়ে তারপর যেখানে খুশি যান, আপনার তো আজকে আবার হলুদ !”
__” আমি আসছি ৷”
বলে ফোনটা কেটে দিল আরূ , ফোনের ফ্ল্যাশ জালিয়ে সিঁড়ি বেয়ে উঠছে আর সরা শরীর ছমছম করছে, বাড়িতে একটা জনমানুষও নেই , সিঁড়ি বেয়ে উঠতেই দেখল প্রথমে একটা রুম , বুঝতে অসুবিধা হলো না যে আরিশ এটার কথাই বলেছে ৷
ধীর পায়ে রুমের দরজাটা খুলতেই নিস্তব্ধতার মাঝে প্যাচ প্যাচ করে দরজার আওয়াজ শুনে আরূ একটা শুকনো ঢোক গিলল….
রুমের ভিতরে ঢুকে দরজাটা হাত দিয়ে আলতো করে ঠেলে দিতেই দরজাটা ধাম করে বন্ধ হয়ে গেল , তাতে আরেকদফা চমকে উঠলো আরূ ৷ এখন সামনের দিকে তাকিয়ে দেখে চারিদিকে মোমবাতি জ্বলছে ছোট ছোট , পায়ের কাছে লাল রংয়ের গোলাপ ফুলের পাপড়িতে ভরা তা যেন যাওয়ার জন্য একটা সামনের দিকে রাস্তা তৈরি করে দিয়েছে ৷ মোমবাতির আলোতে ঘরের ফটো ফ্রেমের বর্ডারগুলো জ্বলজ্বল করছে,আর নাকে হালকা মিষ্টি সুগন্ধ ভেসে আসছে চারি পাশ থেকে…..
হঠাৎ ওর কাধের থেকে চুল সরিয়ে সারা পিঠে আর গলায় গরম নিশ্বাস পড়তেই চোখজোড়া বন্ধ করে নিল আরূ , ঠান্ডা শীতল হাত দুটো ওর হাতজোড়াকে শক্ত করে আবদ্ধ করে নিয়েছে ৷ আস্তে আস্তে ওর শরীরের সাথে লেপটে থাকা মানুষটার উষ্ণ ঠোটের স্পর্শগুলোও বেড়ে চলেছে, সারা শরীর থরথর করে কাপছে , পা দুটো যেনো ক্রমশ অবশ হয়ে আসছে ৷
গলায় আর সারা পিঠ জুড়ে উষ্ন ছোয়াগুলো যতই বেড়ে চলেছে আরূর শরীরের কম্পন এর মাত্রা ততই বেড়ে চলেছে ৷ হঠাৎ ওকে জড়িয়ে ধরে থাকা মানুষটি তার নেশা ভরা কন্ঠে বলে উঠলো,,,,,
আজ জিদ কার রাহা হে দিল,,,,,
আজ জিদ কার রাহা হে দিল,,,,,
ও মুঝমে তু হো ভি যা সামিল,,,,,
আজ জিদ কার রাহা হে দিল,,,,,
গলাটা শুনতেই আরূ আরূ চোখ দুটো খুলে ফেলল, এটা যে ওর প্রিয় মানুষটার কন্ঠ, যাকে ও নিজের থেকেও বেশি চায় , এটা তারই ছোয়া , কিন্তু আরিশ এখন সেখানে কি করে এলো এটা ভেবে আরু অবাক হয়ে যাচ্ছে ৷ আর পারছে না কোনভাবেই নিজেকে আটকে রাখতে না পেরে তাড়াতাড়ি করে আরিশের দিকে ঘুরতেই আরিশ আরূর কোমরটা ধরে আরূকে আরো নিজের কাছে নিয়ে আসলো ৷
__” আপনি এখানে কিভাবে ?”(কাঁপা কাঁপা গলায় ) আপনিতো কক্সবাজার ছিলেন আর এখানে কি করে এলেন ? আর আপনি তো ,,,,,,”
আরিশ আরুর ঠোটে আঙ্গুল দিয়ে চুপ করিয়ে দিয়ে বলল ,,,, ,
__” আজ আমি বলবো শুধু আর তুমি শুনবে আরু পাখি , শুধু শুনবে আর অনুভব করবে আমার ভালোবাসা…..”
__” আপনি এসব কি বলছেন? আর এসবের মানে কি ? আপনি আবার আমর সাথে মজা করছেন তাইনা ?”
আরূ নিজেকে আরিশের থেকে ছাড়াতে গেলে আরিশ আরূর চুলের মুঠি ধরে আরূকে ওর মুখের সামনে এনে বলল,,,,
__” ভালোবাসি আরুপাখি , অনেক বেশি ভালবাসি তোমাকে ৷ তোমার নেশায় যে আমি আসক্ত সেটা কি তুমি বোঝনা নাকি কখনো বুঝতে চাওনি , আমি এতবার বুঝেনা সত্ত্বেও তুমি কখনও বোঝনি তার পানিশমেন্ট হিসেবে তোমার কি কোনো শাস্তি প্রাপ্য নয়?”
আরিশের কথা শুনে আরূ যেন আকাশ থেকে পড়লো, কখনো আশা করিনি যে আরিশ এমনটা ওকে বলবে ৷ এতদিন শুধু ওই আরিশকে পাওয়ার আশায় ছিল , আজ আরিশ ও ওকে পেতে চাই সেটা ওর কাছে কল্পনার মত লাগছে সম্পূন্ন ৷
আজ আরুর চোখে জল তবে আজ তা দুঃখের নয় আনন্দের ৷ এই মূহূর্তটাকে কিভাবে ভাষায় প্রকাশ করবে তার বর্ণমালা হয়তো ওর শব্দ ভান্ডারে নেই….
আরূর চোখ থেকে কয়েক ফোটা নোনা জল গড়িয়ে পড়ল ৷
__” আপনি এসব কি বলছেন?”
আরিশ আরূর অশ্রূসিক্ত চোখের পাতায় ভালোবাসার পরশ একে বলল,,,,
__” নিজের জীবনের থেকেও তোমাকে বেশি ভালোবাসি আরুপাখি , নিজের জীবনের প্রতিটা মুহুর্তে তোমাকে চাই, তোমাকে নিজের করে পেতে চাই , ভালোবাসতে চাই , পৃথিবীর সমস্ত সুখ তোমার কাছে এনে দিতে চাই , নিজেকে তোমার কাছে সঁপে দিতে চাই , তোমার আসক্তিতে কেবল আমি থাকতে চাই , তা তুমি চাও বা না চাও ৷ তুমি শুধু আমার , শুধু আমার ৷ আমার সানশাইন শুধু আমার , আবরার আরিসের ৷”
আরু এবার আরিশকে জড়িয়ে ধরে হাউমাউ করে কেঁদে দিল অঝোরে , আরিসের বুকে কাঁদছে আর চোখ দিয়ে টপটপ করে অঝোর ধরায় জল গড়িয়ে পড়ছে, এমন অনুভূতি কখনো হয়নি , এতটা কষ্ট পাওয়ার পর যখন এতটা সুখ অনুভব করছে তখন আজও চোখের জলের ধারাটা বাধ মানতে চাইছে না কোনভাবেই ৷ এ আনন্দের সময়টাকে যে কিভাবে ভাষার প্রকাশ করবে তাও জানা নেই ওর ৷
আরিশ আরূকে নিজের বুকের সাথে আরো শক্ত করে চেপে ধরল ৷
__” ভালোবাসো না আমায়?”
__” না ভালোবাসি না আপনাকে, আপনি খুব পচা, খুব খারাপ , পৃথিবীর সব থেকে নিকৃষ্ট আর খারাপ মানুষ আপনি ৷ আপনি শুধু বারবার আমাকে কষ্ট দেন ৷ আপনার জন্য আমি কতটা কষ্ট পেয়েছি তা কি আপনি জানেন ? আপনি হলেন মিস্টার অভদ্র ৷”
আরিশ এবার মুচকি হেসে বলল,,,,,
__” এই মিস্টার অভদ্রটা যে কতটা দূর অবধি অভদ্র হতে পারে তার আজকে তোমাকে দেখাবো আমি ৷”
আরূ লজ্জা পেয়ে আরিসকে আরো শক্ত করে জাপ্টে জড়িয়ে ধরল,,,,
__” কি হলো আরুপাখি তাকাও আমার দিকে ৷”
আরূ লজ্জায় আরিশের দিকে তাকাচ্ছে না , লজ্জায় আরিশের বুকে মুখ গুঁজে রেখেছে ও ৷
__” কি হলো তাকাও, তুমি না তাকালে যে এই মিস্টার অভদ্রতা তার অফুরন্ত অভদ্রতমি গুলো শুরু করতে পারছে না ৷”
আরু আরিশের সাথে নিজেকে আরো মিশিয়ে নিলো ৷
__” বুঝেছি এভাবে হবেনা আরূপাখি, আমাকেই ব্যবস্থা করতে হবে ৷”
বলে আরূক কোলে তুলে নিলো ৷
আরূ ভয়ে চোখ বন্ধ করে আরিশের জামার কলার ধরে শক্ত করে জাপটে ধরেছে যদিও মানুষটার উপর বিশ্বাস আছে সম্পূর্ণ ৷
আরিশ আরূকে নিয়ে গিয়ে বিছানার মাঝে শুইয়ে দিল ৷ সম্পূর্ণ ফুলের পাপড়ি দিয়ে সাজানো বিছানা, এ এক অদ্ভুত রোমাঞ্চকর অনুভূতি যা ঘটছে ৷
__” কি হলো আরূপাখি তাকাও ৷”
আরূ চোখ বন্ধ করে মাথা নাড়ালো যার অর্থ ও চোখ খুলবে না ৷
__” যা করার আমাকেই যখন করতে হবে তখন দেরি কিসের ৷ আর আমার আবার ধৈর্য জিনিসটা কম কোনকিছুতেই বেশিক্ষণ অপেক্ষা করতে পারিনা তাই নিজের অধিকারটা নিজেই খাটাতে হবে বুঝতে পারছি ৷
বলে আরিশ আরূর কম্পমান ঠোঁট জোড়া দখল করে নিল ৷
আরিশ এমনটা করাই আরূ শক্ত করে আরিসের শার্টটা খামচে ধরে নিজের সাথে মিশিয়ে দিল আরিশকে সম্পূর্ণভাবে ৷ এ এক অদ্ভুত অনুভূতি যার সঙ্গে আরূ এর আগে পরিচিত হলেও তখন আরু সজ্ঞানে ছিল না তাই অনুভূতির স্বাদ টা এমনভাবে গ্রহণ করতে পারেনি তবে আজকে নিজেকে আরিশের ভালোবাসায় রাঙাতে চায়…….
বেশ কিছুক্ষণ পর আরিশ আরুকে ছেড়ে দিল , আর একই অবস্থানে থেকে আরূর ঠোঁটটা আলতো করে মুছে দিয়ে বলল,,,,,
__” ভালোবাসি ৷”
আরূ আরিশকে জাপটে জরিয়ে ধরে বলল..
__” এবার প্লিজ আলোটা জালান, আমার ভয় লাগছে ৷”
আরিশ কিঞ্চিৎ ভ্রু কুঁচকে বললো,,,,,
__”লাইক সিরিয়াসলি আরূপাখি তোমার অন্ধকারে ভয় লাগছে?”
__” ভয় লাগছে তাই প্লিজ ৷”
আরিশ এবার আরূর হাত ধরে বিছানা থেকে নামিয়ে দাঁড় করালো সেই দেওয়ালের সামনে যেখানে রয়েছে ওর কুড়ি বছর ধরে সাজানো ক্যাকটাসের রাশি, আর এই দিনটার অপেক্ষায় ছিল এতদিন ৷
রুমের আলোটা জ্বালাতেই আরুর চোখের ওপরে একগুচ্ছ আলোর রশ্মি এসে পড়তেই চোখটা বন্ধ করে নিল আরূ ৷ বেশ কিছুক্ষন পর নিজেকে স্থির করে নিয়ে সামনের দিকে তাকাতেই অবাক হয়ে গেল,
কাঁদো কাঁদো চোখে আরিশের দিকে তাকিয়ে বলল,,, __” এইগুলো তো !”
আরিশ আরূকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে বলল,,,, __” আপনার প্রিয় ক্যাকটাস ম্যাডাম , যেগুলো আমি দীর্ঘ কুড়ি বছর ধরে আপনাকে উপহার দেবো বলে সাজিয়ে রেখেছি ৷”
আরূ এবার কেঁদে ফেলল,,,,
__” এমন পাগলামো কেন করেন যাতে আমিও পাগল হয়ে যাই ৷”
আরিশ মুচকি হেসে বলল,,,,,
__” পাগলামো দেখতে চাও? ওয়েট !”
বলে আরুকে সামনের দিকে তাকাতে বলল,,,, আরু তাকিয়ে তো অবাক, ওখানে আরূর সব ছবি ফ্রেমভন্দি করা , যেখানে ওর সবস্মৃতি ক্যাপচার করা আছে ওর ছোট থেকে বড় বেলার সমস্ত ছবি সেখানে আছে ৷
__” কেমন লাগলো আমার পাগলামো আরূপাখি?”
আরূ চোখের জলটা মুছে বলল,,,,,
__” কেন এতটা ভালবাসেন আমায়? বলুন কেন? আমি তার উত্তর চাই ৷”
__” ভালোবাসার মানুষকে ভালোবাসবো এটাই তো স্বাভাবিক তাই না !”
__” তবে ওই ফটো ফ্রেম টা ফাঁকা রেখেছেন কেন? ”
__” ওই ফটো ফ্রেমটাতে যে ছবিটা দরকার ছিল সেটা আমি পেয়ে গেছি তাই এই মুহূর্তেই ছবিটা লাগানো সম্ভব নয় কালকের মধ্যে ছবিটা ঠিক জায়গায় পৌঁছে যাবে ৷ তবে আগে আমাদের হলুদটা সেরে নিই, তোমার তো আবার বিয়েযকরার অনেক শখ ….”
আরূ কাঁদো কাঁদো হয়ে বলল,,,,
__” আপনি আমাকে বিয়ে করবেন!”
আরিশ মুচকি হেসে বলল,,,,,
__” সেটা পরে দেখা যাবে ৷”
আরু ভ্রু কুঁচকে বললো,,,,
__” এটা আপনার কেমন উত্তর ৷”
আরিশ মুচকি হেসে টেবিলের উপরে থাকা হলুদের বাটিটা এনে আরুর দিকে ইশারা করে ওকে হলুদ মাখাতে বলল ৷
আরূ একটু অবাক হয়েই আরিশের মুখে হলুদটা মাখিয়ে দিল ৷
__” কি হলো আপনি কিছু বলছেন না যে, আপনি আমাকে বিয়ে করবেন না?”( দৃঢ় সুরে)
আরিশ আরুর পেটে হালকা করে স্লাইড করে কোমরটা জড়িয়ে ধরে নিজের কাছে এনে নিজের গালে থাকা হলুদটা আরুর মুখে মাখিয়ে দিল , আর বলল,,,,,
__” নাহ! ভালোবাসলেই যে কাউকে বিয়ে করতে হবে এটা আরিশ খানের ডিকসনারিতে লেখা নেই ৷”
আরিশের বলা না শব্দটা শুনে আরুর সমগ্র দুনিয়াটা পালটে গেল ,,,,,,,তাহলে আরিশ এতখন ওর অনুভূতিগুলো নিয়ে বরাবরের মতোই আজো মজা করলো?
আরিশ কে ধাক্কা মেরে দূরে সরিয়ে আরিশের গালে ঠাস করে একটা চড় মারলো আরু ৷
__” মানুষের অনুভূতির কি আপনার কাছে কোন দাম নেই ? সমস্তটাই কি ছেলে খেলা মনে করেছেন? এভাবে একটা মেয়ের অনভুতি নিয়ে খেলার অধিকার আপনাকে কে দেয় ? কোথায় পান সেই অধিকার?”
আরিশ মুচকি একটা হাসি দিয়ে আরুশির কাছে গিয়ে আচমকাই আরুকে কোলে তুলে নিল তারপরে নিয়ে বিছানায় শুইয়ে দিয়ে নিজের সমস্ত ভার আরুর ওপর ছেড়ে দিয়ে আরুল গালে আলতো করে হাত দিয়ে বলল ,,,,,,,
__” অধিকার কাউকে দিতে হয় না , অধিকারটা নিজে তৈরি করে নিতে হয় আর সেটুকু সাহস আরিশ খানের আছে ৷”
আরু আরিশকে ধাক্কা দিয়ে সরাতে চাইলেও আরিশকে সরাতে পারল না তবুও চেষ্টা করল,,,,,
__” আপনি মানুষ নন , আপনার মন বলে কিছু নেই , মানুষের ভালবাসার কোন দাম নেই আপনার কাছে ৷ আপনি কারোর ভালোবাসা পাওয়ার যোগ্য নন ৷’
বলে ধাক্কা মেরে আরাশকে সরিয়ে দিতেই বিছানা থেকে নিচে নামতে গেল ৷ আরিশ আরুর কোমরে থাকা কোমর বন্ধনীটা শক্ত করে জড়িয়ে ধরে টান দিয়ে আটকাতে গেলেই পুঁথিগুলো সব ছিড়ে নীচে পড়ে গেল , আর আরুর পেটে আছড়ে গেছে অনেকটাই ৷
আছড়ে যাওয়ার জায়গা গুলো থেকে ছিটেফোটা রক্ত বের হচ্ছে আর জালা করছে প্রচন্ড…
আরু আরিশের চোখে চোখ রেখে কাদোকাদো হয়ৈ বলল,,,,
__” শুধু এটুকুই বলবো অন্যকে বারবার আহত করে নিজে সুখী হওয়া যায় না, আল্লাহ আপনাকে ভাল রাখুক এই কামনা করি ৷” বলে রুম থেকে বেরিয়ে যেতে গিয়ে দরজাটা খুলতে গেলেই দরজাটা আর খুললো না, অনেকবার চেষ্টা করছে দরজাটা খোলার তবুও পারছে না…..
আরিশ ধীর পায়ে আরুর কাছে গিয়ে আরুর চুলে মুখ ডুবিয়ে দিয়ে বলতে লাগলো,,,,,
__” এসেছো আমার ইচ্ছায় আর যাবেও আমার ইচ্ছায় তাই অযথা বেশি জেদ করে আমার থেকে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করো না পরিণতিতে আমি ভয়ঙ্কর কিছু করে ফেললে তখন তার দায় আমাকে দিতে পারবে না তুমি ৷”
কথাটা শুনেই আরুর বুকের ভেতর ধক করে উঠলো,,,,
কি করবে এখন কিছুই বুঝতে পারছে না, না পারছে চলে যেতে আর না পারছে আরিশকে সহ্য করতে ৷
আরুকে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে আরিশ আবার কোলে তুলে নিয়ে বিছানায় নিয়ে শুইয়ে দিলো আরুকে তারপর আরুর পেট থেকে শাড়িটা অল্প সরিয়ে কাটা জায়গায় মলম লাগায়ে দিলো ৷
কাছুখন পর আরুকে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরে আরুর গলায় মুখ ডুবিয়ে বলতে লাগলো,,,,
__” কখনো আমার থেকে পালিয়ে যাওয়ার সাহস দেখিওনা তাহলে তার পরিনতি হবে ভয়ংকর ৷এবার ঘুমিয়ে পড়ো আরুপাখি নাহলে কালকে বাসরের সময়ে আর ঘুমাতে পারবে না ৷”
আরু কি করবে কিছুই বুঝতে পারছে না, মানুষটা কে ও কখনই বুঝে উঠতে পারিনি আর এখন আরো বড্ড বেশি রহস্যময় লাগছে আরিশকে ৷ কখনো ভালোবাসছে আবার কখনো সাইকো টাইপের ব্যাবহার করছে ৷
যদিও বা ওর চোখে আজ আর ঘুম আসবে না, আরিশ এমনভাবে ওকে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরে আছে মনে হয় না যতক্ষণ না আরূ ঘুমাবে ততক্ষণ আরিস ওকে ছাড়বে, তবুও নির্ঘুম চোখে যে কতটা সময় পার করেছে তা ওর ধারনাতে নেই……
❤
রাত12.30,,,,,
__” আন্টি কোনো চিন্তা করবেন না আমাদের কে নিয়ে ৷ও ঘুমাচ্ছে , আর কালকে সঠিক সময়ের মধ্যেই ও বাড়ি পৌঁছে যাবে, শুধু কালকের দিনের জন্য ওকে একটু সামলে রাখবেন তারপর ওর সব দায়িত্ব আমার……(আরূর দিকে তাকিয়ে)
__” আমার মেয়েটা তোমাকে অনেক ভালোবাসে বাবা, আর এই কদিনে ও অনেক কষ্ট পেয়েছে , তুমি একটু ওর খেয়াল রেখো ৷”(আরুর মা কাদতে কাদতে)
__” দোয়া করবেন যেন ভালো থাকি৷”
__” আমিন, দোয়া রইলো ৷”
আরিশ ফোনটা কেটে আরুর পাশে গিয়ে বসলো আরু আরুর মাথায় হাত বুলাতে লাগলো,,,,আজ আরিশের চোখের কোনেও জল,,,ভালোবাসার মানুষটাকে পাওয়ার অনন্দে ,দীর্ঘ প্রতিক্ষার অবসানে আজ আরুকে ও নিজের কাছে পেয়েছে ,,,,,,,
আরূকে জড়িয়ে ধরে ফুপিয়ে কেঁদে উঠলো আরিশ,,,,
__” বড্ড বেশি ভালোবাসি আমার এই ছোট্ট আরূপাখিটাকে, তুমিই যে আমার অদ্ভুদ নেশা -আসক্তি ৷”
#চলবে,,,,,,