#তোমার_নেশায়_আসক্ত
#সিজন:2
#পর্ব:20
#Suraiya_Aayat
❤
সন্ধের মধ্যে বিয়ে বাড়ি এসে পৌছালো আরূ আর সানা ৷
আরিশদের ধানমন্ডিরর বাসায় বিয়েটা হচ্ছে না, বিয়েটা একটা কমিউনিটি সেন্টার এই হচ্ছে ৷ ডেকোরেশন সম্পূর্ণ কমপ্লিট , চারিদিকে হলুদ, সাদা নীল , সবুজ নানান ধরনের মরিচ বাতি দিয়ে পরিপূর্ণ আর সম্পূর্ণটা ফুল দিয়ে ডেকোরেট করা , খুব সুন্দর ভাবেই সাজানো হয়েছে গোটা কমিউনিটি সেন্টারটা ৷ প্রান্তর এভাবে সাজানোর সামর্থ্য টুকু না থাকলেও আরিসের আছে সেইজন্য সমস্তটা নিজেই ব্যাবস্থা করেছে ৷ প্রান্তর বিয়ের সমস্ত খরচ আরিশের ৷ প্রান্তর মা কে আরিশ কথা দিয়েছিল যে সযত্নে নিজেই ওর দায়িত্বে প্রান্তের বিয়ে দেবে , ও ওর কর্তব্যপালনে একনিষ্ঠ…..
বিয়ে বাড়িতে এসে আরুর নিজেকে কেমন কেমন একটা লাগছে, আনকম্ফোর্টেবল ফিল করছে খুব কারণ এতদিন যাদের সঙ্গে চরম কথা কাটাকাটির মুখোমুখি হয়েছে আজ তাদেরই বিয়েতে অতিথি হিসেবে আমন্ত্রিত ও , যদিও প্রান্ত কখনো ওর সঙ্গে কোনো খারাপ ব্যবহার করেনি আর তা ছাড়া প্রান্ত যখন আরু কে নিজের বোন হিসেবে বিয়ের প্রথম কার্ডটা দিয়েছে তাই আর না করতে পারল না আরূ৷ ও আসতে না করলেও সানা জোর করে ওকে নিয়ে এসেছে ৷ সানার একটাই কথা যে ও না গেলে সানা নিজেও যাবে না ৷
শাড়ি পড়তে খুব একটা অভ্যস্ত নয় আরূ তবে পরতে ভালোবাসে না তেমনটা নয়, শাড়ি পড়তে খুব ও ভালোবাসে কিন্তু নিজে পরতে পারে না তাই পরার ইচ্ছাটুকু জাগলেও সেটাকে মাঝেমাঝে ধামাচাপা দিতে হয় ৷ কোন অকেশন হলে ওর আম্মুকে শাড়ি পরিয়ে দেয় অথবা নিজে পার্লার থেকে সেজে আসে , আজকের শাড়ি পরার কোন ইচ্ছা ছিল না আরুর, ওর আম্মুর একদফা জোর করে শাড়িটা পরিয়ে দিয়েছেন ৷ আজকে উনি বিয়ের শপিং করতে গিয়ে আরুর জন্য হলুদের দুটো শাড়ি কিনে এনেছিলেন তাই একটা শাড়ি আজকে আরূকে পরিয়ে দিয়েছেন প্রান্তর হলুদে আসার জন্য ৷ সম্পূর্ণ মায়াবতী লাগছে দেখতে ওকে ৷
চোখে মোটা করে দেওয়া কাজল, ঠোটে হালকা লাল রঙের লিপস্টিক, চুলগুলো সিঁথি করে তার খোঁপায় বেলি ফুলের মালা পরেছে , হাতে চুড়ি আর মুখে হালকা মেকআপ ৷
সানা ও শাড়ি পড়ে এসেছে, ওকেও দেখতে খুব সুন্দর লাগছে ৷
__” আরু চল প্রান্ত ভাইয়া আর মিথিলা আপুর সাথে দেখা করে আসি ৷ কে জানে হলুদ এখনো শুরু হয়েছে কি, ভাইয়া তো বললো এখনো শুরু হয়নি ৷ ”
আরু মাথা নেড়ে সম্মতি জানালো ৷ ওরা দুজন প্রান্ত আর মিথিলার কাছে গেল , ওদের দুজনকে স্টেজে বসিয়ে রাখা হয়েছে ৷ পাশে একজন বয়স্ক ভদ্রমহিলা বসে আছেন উনি প্রান্তর মা সেটা আরূ বুঝতে পারলো ৷
আরূ আর সানা যেতেই প্রান্ত বলল,,,,,
__” কেমন আছো তোমরা?”
__” আলহামদুলিল্লাহ ভালো , আপনি কেমন আছেন ভাইয়া ! আর আপনাদের হলুদের প্রীতি ও শুভেচ্ছা ৷”(আরূ )
__” ভালো ভাইয়া বাট আপু কে তো আজকে সেই লাগছে ৷”(সানা)
প্রান্ত মুচকি হাসলো ৷
__” তুমি এসেছ তার জন্য ধন্যবাদ দিয়ে তোমাকে ছোট করবো না , তুমি আমার ছোট বোনের মতো , তাই খুব খুশি হয়েছি তুমি এসেছো ৷ মীট মাই উডবি ওয়াইফ মিথিলা জাহান ৷”
আরূ মুচকি হেসে বলল,,,,,
__” আসসালামুয়ালাইকুম আপু ৷”
__” ওয়ালাইকুম সালাম , তোমাকে এখানে দেখতে পেয়ে খুশি হলাম খুব ৷”
আরূ মুচকি হাসলো….
প্রান্ত ওর মাকে বলল,,,,
__” মা ও হচ্ছে আরূ ৷”
উনি তাড়াহুড়ো করে উঠে আরূর কাছে গেলেন, গিয়ে আরুর গালে হাত রেখে বললেন,,,,,
__” মাশাআল্লাহ , আমার ছেলে পছন্দ আছে ভালো ৷ সঠিক রত্ন কে বেছে নিয়েছে আমার ছেলেটা ৷খুব সুখী হও মা ৷”
আরূ কিছু বুঝতে পারল না উনি ঠিক কি বুঝাতে চাইছেন ৷ আরু একবার প্রান্তর দিকে তাকিয়ে প্রান্তর মায়ের দিকে মিথ্যা হাসি দিয়ে বললেন,,,,,,
__” আন্টি আপনি কি বললেন আমি ঠিক বুঝলাম না ৷”
প্রান্তর মা আর কিছু বলতে যাবে তখনই পিছন থেকে আরিস বলে উঠলো,,,,,,
__” আন্টি যে বোঝেনা তাকে কখনো বোঝানো সম্ভব না ৷ এমন অনেক কথা আছে যেগুলো মানুষের কানে পৌঁছালেও তারা হয়তো কথার গুরুত্ব দিতে জানে না তাই কি বোঝাতে চাইছে সেটাও তারা বুঝে উঠতে পারে না , এটা তাদের ব্যর্থতা আপনার নয় ৷”
কথাটা শুনতেই আরূ পিছন ঘুরে তাকিয়ে দেখল আরিস দাঁড়িয়ে রয়েছে ৷ বরাবরের মতোই আজকেও তার প্রিয় রঙে মানে সাদা রঙের পাঞ্জাবি , একটা ডেনিম প্যান্ট, চুলগুলো অগোছালো হয়ে রয়েছে বরাবরের মতোই , হাতে একটা ঘড়ি , মুখের দাড়ি গুলো সেভ করেনি , আর এভাবেই আরূ আরিশকে দেখতে পছন্দ করে , আরিশকে দেখে ওর চোখটা জুড়িয়ে গেল ৷ কোনরকম আরিশের থেকে চোখ সরিয়ে সামনের দিকে তাকিয়ে বলল,,,,
__” আন্টি আপনারা কথা বলুন আমি আসছি ৷”
আরূ চলে যেতেই আরিশ মুচকি হেসে প্রান্তর মা কে বলল,,,,,,
__” না জানি আমাকে কতো কিছু শিখিয়ে পড়িয়ে নিতে হবে আল্লাহ মালুম ৷”
__” ওরকম আগোছালো মেয়েরা একটু হয়, স্বামীর ভালোবাসা পেয়ে ঠিক হয়ে যাই ৷”
__” আমি যা ভালোবাসা দেবো তা নেওয়ার ক্ষমতা ম্যাডামের নেই, আমিও দেখবো আন্টি ওনার দৌড় কতদূর৷”
সানা প্রান্ত আর মিথিলার সাথে ছবি তুলছে আর আরু ওদের থেকে কিছুটা দূরে সরে গিয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে…..
হঠাৎ ফোনের রিংটোনটা কানে ভেসে আসতেই ফোনের দিকে তাকিয়ে দেখল আসফি ফোন করেছে ৷ বরাবরের মতোই আজো বিরক্তি সহকারে ফোনটা কানে দিতেই ওপাশ থেকে আসফি বলে উঠলো,,,,,,
__” আই এম সরি , আমি তোমার সাথে যেতে পারলাম না ৷ আসলে কি বলতো দুদিন পরেই তো আমাদের বিয়ে আর যেহেতু আব্বু-আম্মু চিটাগং থাকেন তাই আমাকেই সামলাতে হচ্ছে সব ৷ আজকে একটু কাজে ব্যস্ত ছিলাম , প্লিজ কিছু মনে করো না কালকে যাবো আমি…”
আসফি বিয়েতে আসবে কি না আসবে তাতে আরূর কিছুই যায় আসে না ৷ বিরক্তি নিয়ে কিছু বলতে যাবে তখনি কানে ছেলেমেয়েদের চেঁচামিচির আওয়াজ ভেসে আসলো, বুঝতে পারলো হলুদ শুরু হয়ে গেছে আর তা নিয়ে সকলের মাঝে আনন্দ ৷ দূর থেকে সানা কেও দেখতে পাচ্ছে আরু , ওদের মাঝে গালভর্তি হলুদ মেখে সেলফি তুলছে ৷
__” কোন সমস্যা নেই ৷ আচ্ছা আমি এখন রাখছি , এখানে চেচামেচি হচ্ছে খুব, আমি কিছু শুনতে পাচ্ছি না ৷”
বলে আসফি কে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে আরূ ফোনটা কেটে দিলো…..
অনেকক্ষণ ধরে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে পা টা ধরে আসছে আর তাছাড়া ক’দিন ধরে শরীরটাও খুব একটা ভালো নেই , খুব দুর্বল লাগছে বলে আরূ গিয়ে সোফাতে বসল ৷ মাঝে মাঝে এদিক ওদিক তাকাচ্ছে আর মাঝে মাঝে ফেসবুকে আরিশের আইডিটা দেখছে বারবার ৷ কিছুক্ষণ আগেই একটা পোষ্ট করেছে যেখানে ক্যাপশন দিয়েছে,,,,,
__” বিয়েবাড়ির হাজারো কাপলদের মধ্যে আমি একা দেবদাস 🙆🏻 ৷”
গাল ভর্তি হলুদ মেখে ছবিটা তোলা, তারমানে কিছুখন আগেই ছবিটা তুলেছে ৷
ছবিটা মারাত্মক লেভেলের সুন্দর তা নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই , তবে ক্যাপশনটা নিয়ে আরুর মাঝে বিরক্তি কাজ করছে ৷
__” আজকাল মানুষ মিথ্যা বলেই সবাইকে জ্বালাতে চাই, যেমনটা আমি জ্বলছি ৷”
কথাটা বলে রাগ করে ফোনটা অফ করে দিতেই হঠাৎ শাড়ির উপর কিছু ভেজা ভেজা অনুভব করতেই মুখ উঁচু করে দেখল যে ওইটার কাচুমাচূ ফেস করে দাঁড়িয়ে আছে, আর ওনার হাতে থাকা ট্রের গ্লাসগুলো ট্রেতে গড়াগড়ি খাচ্ছে আর সমস্ত জুস আরুর শাড়িতে পরেছে ৷ নানান ধরনের আর নানান কালারের জুস ওর শাড়িতে পড়ে শাড়িটাকে একটা বিচিত্র রং এনে দিয়েছে ৷
ও ওয়েটারর দিকে রাগী চোখে তাকিয়ে বলল,,,
__” এটা কী করলেন ভাইয়া ৷ দেখে কাজ করতে পারেন না ৷”
__” সরি আপু ভুল হয়ে গেছে….”
__” এখন আর সরি বলে কি হবে , যা হওয়ার তা তো হয়েই গেছে ৷ আচ্ছা ওয়াশরুম টা কোথায় বলতে পারবেন ?”
__” উপরে তিনটে রুম আছে, তারমধ্যে দুটো রুমের পাইপলাইনে সমস্যা , তাই 3 নং রুমটা মানে 126 নম্বর রুমে যান ওই রুমটাতে পানি আসছে ঠিকঠাক ৷”
__” আচ্ছা…. তবে নেক্সট বার আর এইভাবে যেন কারোর গায়ে ফেলবেন না….”
__” আচ্ছা আপু ৷”
126 নম্বর রুমটা তিনতলায়, প্রান্তর বিয়ে টা হচ্ছে 2nd ফ্লোরে , তাই সিঁড়ি বেয়ে উঠে প্রথম ঘরটাই দেখল লেখা আছে 126 নম্বর ,তা দেখে আরু রূমটাই ঢুকল ৷
রূমটা সম্পূর্ণ অন্ধকার কিছু দেখা যাচ্ছে না তাই ফোনের ফ্ল্যাশ টা জালিয়ে সুইচ খোঁজার চেষ্টা করলো , অবশেষে হাতের কাছেই সুইচটা জ্বালিয়ে দেখল রুমটা ৷ ঘরে সোফার পাশে একটা ট্রলি পড়ে রয়েছে আর একটা সাদা রঙের শার্ট রাখা আছে সোফাতে ৷ কেউ যে রূমটাই থাকে তা আরু বুঝতে পারছে আর এভাবে না বলে একজনের রূমে এসে কিনচিত দ্বিধা কাজ করছে আরুর মাঝে , তবুও কোন উপায় নেই , তাই তাড়াতাড়ি করে ওয়াশরুমে গেল ৷
ওয়াশরুমে গিয়ে শাড়িটা ভালো হবে পানি দিয়ে ধুচ্ছে কিন্তু কিছুতেই জুসের কালারটা ওঠাতে পারছে না ৷ সব কালার একসাথে মিশে বাদামী রঙের একটা মিকসচার তৌরি হয়েছে ৷ বারবার দাগটা ওঠানোর চেষ্টা করেও উঠছেনা দেখে রিতিমতো বিরক্ত আরু ৷ এভাবে এই শাড়ি পরে তো আর বেশিখন থাকা যাই না তাই ভাবলো ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে সানার কাছে যাবে যদি সানা কোন ব্যবস্থা করে দিতে পারে ৷
আরু মাথা নিচু করে রুম থেকে বের হতেই একটা মিষ্টি পারফিউমের গন্ধ পেলো ,যেটা ও আগেও পেয়েছে ৷ তাহলে কি সাময়িকের জন্য ঘরের মালিক তার রুমে চলে এসেছেন, এখন যদি ঢুকেই উনি আরুকে দেখেন তাহলে না জিনি আরুকে কি ভাববেন এগুলোই ভাবছে আরূ ৷ আরূ আস্তে আস্তে সামনের দিকে তাকালো, তাকাতেই ওর বুকের ভিতর ধক করে উঠলো , সামনে আরিশ দাড়িয়ে রয়েছে হাতের উপর হাত রেখে , আর হলুদের বর্তমান সাজাটা রয়েছে, ৷ গালে মাখানো হলুদটা চেহারায় আরো দ্বিগুণ জেল্লা দিচ্ছে ৷ একটা ছেলে এতকা সুন্দর হতে পারে সেটা ও আরিশকে না দেখলে হয়তো কখনো জানত না….
দুজন দুজনের দিকে তাকিয়ে রয়েছে কেউ কিছু বলছে না ৷ আরিশ যে এবার ব্যাপারটার মজা নেবে সেটা আরূ বেশ ভালই বুঝতে পারছে , কিন্তু আরিশের কথার পরিপেক্ষিতে আরূ কি জবাব দেবে সেটা ওর জানা নেই কারণ এখন আরূর মুখে আগের মতো বুলি ফুটে না যে তৎক্ষণাৎ জবাব দিয়ে দেবে ৷ আর আরিশকে দেখলেমৗ কথাগুলো যেন ডানা মেলে উড়ে যায় কিছু বলতে পারেনা নির্বাক হয়ে যায় ৷
আরিশ ভ্রু নাচিয়ে বলল,,,,,
__” এই যে মিস আপনি এখানে কি করছেন?”
আরু একটা শুকনো ঢোক গিলে বলল,,,
__” আমি দরকারে এসেছিলাম ওয়াশরুমে , আমার শাড়িতে জুস পড়েছিল তাই পরিষ্কার করার জন্য এসেছিলাম তাছাড়া আমার আর কোন উদ্দেশ্য নেই..”
আরিশ আরুর কাছে গিয়ে দাঁড়ালো, আরুর দিকে তাকিয়ে দেখল যে ওর সমস্ত শাড়িটা ভিজে একাকার , মাঝে মাঝে শাড়ি দিয়ে টপটপ করে জল গড়িয়ে পড়ছে ৷ তা দেখে আরিশ বলে উঠলো,,,,
__” কি করে হলো এমন?”
__” ওয়েটার ভুল করে ফেলেছে ৷”
__” ওপস, তা আপনি এখন কি করবেন ?”
__” সানাকে বলছি যদি কোনভাবে ম্যানেজ করতে পারে…”
__” আমার কাছে শাড়ি আছে আপনি চাইলে আমার কাছ থেকে নিতে পারেন তবে হ্যাঁ আমার কিন্তু আবার ফেরত চাই ৷ আমি ওগুলো আমার বউয়ের জন্য কিনেছি , আপনাকে কিভাবে দিয়ে দিয়ে বলুন ৷”
কথাটা শুনে আরুর রাগ উঠে গেল , রেগে গিয়ে বলল ,,,,,
__” লাগবেনা আপনার শাড়ি, আর না লাগলে আপনার কোন হেল্প….”
বলে আরু চলে যেতে নিলেই আরিশ আরূর হাত ধরে এক ঝটকায় ওর সামনে এনে দাড় করালো ৷
__” এই মুহূর্তের জন্য নিজের জেদটাকে সংযত রাখুন, নাহলে আমার জেদটা যদি এখন চেপে বসে তাহলে জেদের বশে আমি যা করব আপনি কিন্তু সামলাতে পারবেন না নিজেকে…”
আরু কাঁপা কাঁপা গলায় ভয়ে ভয়ে বলল,,,,
__” মানেটা কি , আপনি কি আমাকে ভয় দেখাচ্ছেন?”
আরুর হাতটা ছেড়ে দিয়ে আরিশ হো হো করে হাসতে লাগলো,,,,
__” আপনি ভয় পান!”
আরিশ হেসেই চলেছে দেখে আরূর ভয়টা ক্রমশ বেড়েই চলেছে , চোখে জল চলে এসেছে , ভয়ে কয়েক ফোটা জল টপটপ করে চোখ থেকে গড়িয়ে পড়তেই হাত দিয়ে মূছে নিলো ৷
__” ভয় নেই , আই জাস্ট ওয়ান্ট টু হেল্প ইউ নাথিং এলস ৷ আর এই মুহূর্তে কারোর কাছ থেকে শাড়ি পাওয়া সম্ভব নয় ৷ তাই আর বেশি কথা না বাড়িয়ে সামনের ওয়াড্রবে শাড়ি রাখা আছে পরে নিন ৷ নাহলে এভাবে থাকলে শরীর খারপ করবে আর সামনেই আপনার বিয়ে ৷ আমি চাই না আপনি বিয়ের সময় অসুস্থ হয়ে পড়ুন ৷
আরু আরিশের মতিগতি কিছুই বুঝতে পারছেনা, এরকম ভাবে আগে কখনো দেখেনি আরিশকে, অদ্ভুত লাগছে আজকে ওর ৷ তাই আর কোন কথা না বাড়িয়ে কিছু না ভেবে সামনের ওয়ারড্রব এর দিকে এগিয়ে তা খুলতেই দেখল সম্পূর্ণতা তাকটা শাড়ি দিয়ে সাজানো ৷ প্রায় 10 থেকে 12 টা শাড়ি সেখানে রয়েছে ৷
আরু অবাক হয়ে আরিশের দিকে তাকিয়ে বলল,,,, __” এতগুলো শাড়ি আপনার কাছে?”
__” ওই যে বললাম না বউয়ের জন্য রেখেছি তবে আপনার এখন দুঃসময় বলে আপনাকে একটা পরতে দিচ্ছি , মনে করে কিন্তু ফিরিয়ে দিয়ে যাবেন আবার না হলে আমার বউ রাগ করবে….”
আরু আর কিছু বলল না, রাগের থেকে আজ অভিমানটাই যেন বেশি প্রকাশ পাচ্ছে ৷ বেছে বেছে
একটা কালো রঙের নিল ৷ শাড়িটা নিয়ে গুটিগুটি পায়ে আরিশের সামনে এসে দাড়িয়ে বলল,,,,,
__” আপনি একটু রুম থেকে যাবেন, আমি শাড়িটা চেঞ্জ করবো ৷”
আরিশ ভ্রু কুচকে বলল,,,,,
__” আমার রুম আমি এখান থেকে কেনো যাবো?”
বলে দেওয়ালের সাথে হেলান দিয়ে দাড়ালো ৷
__” দেখুন আপনি আমার সমস্যাটা বুঝুন, আপনি রুম থেকে না বের হলে আমি শাড়িটা পরবোব কিভাবে?”
__” ওয়াশরুমে যান ৷”
__” গোটা ওয়াশরুম ভিজে একাকার,তাই সেখানে নিয়ে গেলে এই শাড়িটাও ভিজে যাবে ৷”
__” আচ্ছা তাহলে আমার সামনেই পরূন ৷”
আরিশের কথা শুনে আরূর রাগটা রাগ উঠে গেল,,,আরিশের মতিগতি ওর কাছে ভালো ঠেকছে না তাই রেগে গিয়ে হাতে থাকা শাড়িটা আরিশের দিকে ছুড়ে মারলো ৷
__” লাগবেনা আপনার শাড়ি আর আপনার হেল্প ৷ আমি এক্ষুনি বাসায় চলে যাব ৷”
বলে রুম থেকে বেরোতে যাবে তখনই আরিশ আরুর হাত ধরে সামনে এনে আরুর কোমরটা জড়িয়ে ধরে হ্যাঁচকা টান দিয়ে নিজের সাথে মিশিয়ে নিল ৷
__” শাড়ি না হয় নাই বা পরলেন তবে হলুদ টা তো মেখে যাবেন ৷ কেউ হলুদে আসবে আর হলুদ না মেখে ফিরে যাবে সেটা তো হতে পারে না, আর বিয়ের দায়িত্বটক যেহেতু আমার তাই এটুকু খেয়াল তো রাখতেই পারি ৷”
কথাটা বলে আরিশ আরুর চুলের খোপা থেকে বেলি ফুলের মালাটা টেনে খুলে দিল , দিয়ে খোপাটা খুলে দিন একটানে ৷ চুলগুলো ছেড়ে দিতেইতা সমগ্র পিঠে ছড়িয়ে পড়লো ৷ আরিশ চুলগুলো একত্রিত করে মুঠিবদ্ধ করে নিজের মুখের কাছে আরুর মুখটা এনে নিজের গালের হলুদটা আরুর গালে লাগিয়ে দিল ৷ আরু তো হতবাক আরিশৈর কাজে ৷ কি বলবে কিছুই বুঝতে পারছে না , এদিকে আরিসের স্পর্শ পেয়ে সারা শরীর জুড়ে শিহরণ বয়ে যাচ্ছে ওর তার উপর এখন নিজে আরিশের সাথে মিশে আছে , কি করবে কিছুই বুঝতে পারছেনা ৷
আরিশ আরুকে নেশাগ্রস্থ কন্ঠে বলল,,,,
__” এখনো কি আমার প্রতি সেই একই অনুভূতি হয় নাকি অনুভূতি গুলোও আপনার মতো নিসতব্দ হয়ে গেছে ?”
আরুর চোখ দিয়ে টপটপ করে জল গড়িয়ে পরলো, কিছু বলার ভাষা নেই ওর ৷ যদি নিজের আবেগগুলোকে প্রকাশ করতে পারতা তাহলে হয়তো এতটা কষ্ট ওকে পেতে হতো না ৷ এক ধাক্কায় আরু আরিশকে নিজের কাছ থেকে সরিয়ে বলল,,,,,
__” এখন বুঝি সকল অনুভূতি সকলের জন্য নয়, অনেকে আছে যারা এগুলোর যোগ্যই না, যেমন আপনি ৷ ভুল মানুষকে নির্বাচন করার মত কষ্ট টুকু যদি আপনি বুঝতেন তাহলে হয়তো কখনও আমার অনুভূতিগুলো নিয়ে এমন বিদ্রুপ করতেন না ৷ তবে এটা আমার ব্যর্থতা যে আমি অনুভূতি প্রকাশে ব্যার্থ ৷
আরিশ এবার মুচকি হাসল আরূর কথা শুনে ৷
আরূর আর এক মূহুর্তও ইচ্ছা নেই আরিশের সামনে দাড়ানোর ৷ একবার আরিশের দিকে তাকিয়ে চলে যেতে নিলেই আরিশ বলে উঠলো…..
__” জীবনের রাস্তায় কেউবা সকল আবার কেউবা বিফল ৷ আজকে ভালোবাসা থেকে বঞ্চিত অনুভব করছেন ঠিকই কিন্ত সবটা যখন একসাথে এনে ফিরিয়ে দেবো তখন সবটা গ্রহন করতে না পেরে আফশোষ করার জায়গা খুজে পাবেন না ৷
বরাবরের মতোই আরিশের কথার গুরুত্ব বুঝতে পারল না আরু তাই আর কোন কিছু না বলে চলে গেল ৷
চলবে,,,,,,,,
#তোমার_নেশায়_আসক্ত
#সিজন:2
#পর্ব:21
#Suraiya_Aayat
❤
কালকে প্রান্তর হলুদের পর থেকে আরিশের প্রতি আরূর রাগটা বেড়ে চলেছে ৷ আরিশ সবসময় ওর অনুভূতি নিয়ে মজা করে তার ওপর কালকে ও যা করেছে একদম ঠিক করেনি বলে আরূ মনে করছে তাই আজকে বিয়ে বাড়ি যাবে না বলে ঠিক করেছে ৷ দ্বিতীয়বার আবার আরিশের সাথে দেখা হবে ওর বিয়ে বাড়ি গেলেই আর আরু আর কোনভাবে আরিশের মুখোমুখি হতে চায় না ৷
রাত সাতটা থেকে বিয়ের অনুষ্ঠান শুরু এখন বাজে 6:15, ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে নিল আরূ , তারপরে ঘুমানোর জন্য চোখটা বন্ধ করতেই ওর আম্মু এসে ওকে ডাকলো,,,,,
__” কিরে তুই এখনো ঘুমিয়ে আছিস? তুই আজকে বিয়ে বাড়ি যাবি না?”
আরূ বিরক্তি নিয়ে বললো,,,,
__” ওই বিয়ে বাড়ি আমার যাওয়ার কোন ইচ্ছা নেই যেখানে তোমাদের আরিশ আছে ৷ বিরক্তিকর মানুষ একটা ৷”
__” তা বললে তো শুনবো না যে আরিশের জন্য তুই বিয়ে বাড়ি যাবি না ৷ প্রান্ত এত আশা করে তোকে বলেছে যাওয়ার জন্য আর তুই না গেলে কেমন একটা দেখায় , আর তাছাড়া সানা একটু আগে ফোন করেছিল আমাকে ও বলেই দিয়েছে যে তোকে নিয়েই তারপর যাবে ৷ ও তো রেডি হয়ে গেছে অলরেডি , বাড়ি থেকেও বেরিয়েছে৷ ”
আরূ এবার উঠে বসে বলল,,,,
__” আম্মু আমি বললাম তো যাব না ৷”
__” সেই আমি অতশত কিছু জানিনা সানা যদি আসে তো তোকে নিয়েই যাবে সিওর থাক, এটুকুই জানি আমি ৷ ”
এই বলে উনি রূম থেকে বেরিয়ে গেলেন ৷
আরূ মুখে যতই বলুক যে ও আরিশকে দেখতে চাইনা বা ওর মুখোমুখি হতে চাই না কিন্ত ওর মন কখনো ওর মুখের কথার সাথে সায় দেইনি,,,,, ওর সামনে যদি আরিশকে অনন্ত কালের জন্য বসিয়ে রাখা হয় তাহলেও হয়তো ও দ্ধিধা বোধ করবে না ৷
কাল ওর হলুদ তাই আজ অনন্ত প্রিয় মানুষটাকে মন ভরে দেখার কোন সুযোগ ও ছাড়তে চাই না , তাই ও আজ যাবে বলে মনে মনে ঠিক করলো ৷
বিছানা থেকে তাড়াতাড়ি নেমে শাড়িটা নিয়ে ওর আম্মুর কাছে গেলো ৷
ওর আম্মু ওকে একটা টকটকে লাল শাড়ি পরিয়ে দিয়েছেন, তার সাথে আরু ম্্যচিং করে সব অরনামেন্টস পরেছে ৷ আরু হাতে চুড়ি গুলো পরতে পরতে ওর আম্মু বলে উঠল,,,,,
__” আই বেলি ফুলের মালাটা পরিয়ে দিই ৷”
কথাটা শুনতেই আরুর কালকের কথা মনে পড়ে গেল, শুকনো একটা ঢোক গিলে বলললো,,,
__” আমার বেলি ফুলের গন্ধ একদম সহ্্য হয় না, তাই আজকে আর পরবো না,,,,”
__” কালকেই তো বললি যে আজকেও বেলি ফুলের মালা দিবি খোপায় তাহলে ৷”
__” আম্মু রোজ রোজ তো সবার পছন্দটা একই থাকবে সেটা তো হতে পারে না তাই না ! আমার আজকে মন চাইছে না তাই পরবো না ব্যাস ৷”
__” কি জানি কি মতি গতি হয় তোর ৷”
কথাটা বলতে বলতেই নিচে গাড়ির হর্নের আওয়াজ পেয়ে আরুর মা বলে উঠলো,,,,
__” ওই দেখ সানা চলে এসেছে , তাড়াতাড়ি যা নাহলে আজকে কিন্তু তোকে বকা দেবে ও ৷”
আরূ আর কিছু না বলে সব জিনিসপত্র নিয়ে বেরিয়ে গেল ৷ বিয়ের কার্ড নিয়েছে 4 টে ৷ একটা প্রান্ত , একটা তুর্য ,একটা সাহেল আরেকটা আরিশকে দেবে ৷”
আরিসের কার্ড টা তে আরিসের নামটা আরূ নিজের হাতে লিখেছে, থাক না একটা নাম না জানা উদ্দেশ্যেহীন বিয়ের কার্ডে ওর হাতের স্পর্শ ৷
কার্ডগুলো নিয়ে তাড়াতাড়ি করে রুম থেকে বেরিয়ে গেল আরু ৷ দেরি হলে সানা আবার কথা শোনাতে ছারবে না , তাছাড়া শীতের রাত তাই তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরতে হবে বলেই বেরিয়ে গেল ও ৷ কালকে থেকে আবার নতুন একটা জীবন ৷
ওদের আসার আগেই বিয়ে হয়ে গেছে তাই বিয়ের পর্ব টা ওদের দেখার সুযোগ হয়নি ৷
__” ধূর আর একটু তাড়াতাড়ি আসলে বিয়েটা দেখতে পারতাম ৷”
আরূ সানার দিকে অবাক চোখে তাকিয়ে বলল,,,,
__” দোষটা কি আমার?”
__” হ্যাঁ ম্যাডাম অবশ্যই আপনারই, আপনি যদি আর পাঁচ মিনিট আগে থেকে রেডি হওয়া শুরু করতেন তাহলে হয়তো আমরা বিয়েটা একটুর জন্য মিস করার হাত থেকে বাচতাম ৷”
আরূ সানার দিক থেকে চোখ সরিয়ে নিয়ে সামনের দিকে তাকাল, ও জানে সানার সাথে এ ব্যাপারে কথা বলে ওর কোন লাভ হবে না তাই ওর সাথে তর্ক করা মানে বৃথা….
__” তুই কি এখানেই দাড়িয়ে থেকে শোক পালন করবি নাকি প্রান্ত ভাইয়া আর মিথিলা আপুর সাথে দেখাও করবি কোনটা ?”
__” হমম চল,,,বাই দা ওয়ে আশফি ভাইয়া কোথায়? ওনাকে তো দেখছিনা ৷”
আরু একটা দীর্ঘশ্বাস নিয়ে কিঞ্চিৎ জোরে বলে উঠলো,,,,,
__” আমি জানিনা উনি কোথায়…”
__” একটা ফোন করে দেখ ৷”
__” তার কোন প্রয়োজন নেই, ইচ্ছা হলে আসবে নাহলে আসবে না ৷”
সানা আরুর কথা শুনে মুচকি হসলো ৷
__” তুই কি এখনো দাঁড়িয়েই থাকবি নাকি ওদের কাছে যাবিও ৷”
__” হ্যাঁ চল…..”
ওখানে গিয়ে আরু দেখল ওদের দুজনকে, দেখে মনে হচ্ছে যেন মেড ফর ইচ আদার , দৃশ্যটা দেখে ওর চোখ জুড়িয়ে গেল…. আজ ওর জীবনটাও এমন হতে পারতো যদি আরিশ রাজি থাকতো ৷
আরু গিয়ে প্রান্তর হাতে গিফট টা ধরিয়ে দিল….
তার সাথে প্রান্তর হাতে ওর বিয়ের কার্ডটাও দিল ৷
__” ভাইয়া আমার বিয়েতে আসবেন কিন্তু , দাওয়াত রইলো , না আসলে রাগ করবো ৷”
প্রান্ত আরূর কাছ থেকে কার্ডটা নিয়ে বলল,,,,
__” কার্ডটা পেয়ে খুশি হলাম তবে বিয়েতে যেতে পারবো কি সেটা বলতে পারছি না ৷”
__” কেন ভাইয়া আপনি কি আমাকে নিজের ছোট বোনের মত মনে করেন না যে এমন কথা বলছেন ৷”
প্রান্ত মুচকি হেসে বলল,,,,,
__” আমি আর মিথিলা হানিমুনে সেন্ট মার্টিন যাচ্ছি কালকে তাই যেতে পারবো না ৷ আর আরিশ , তূর্য আর সাহেল ওরা তিনজনই আজকে কক্সবাজার যাচ্ছে, বিয়ের অনুষ্ঠান শেষে ৷ তাই ওরাও হয়তো যেতে পারবে না ৷”
কথাটা শুনে আরূর বুকের ভেতর মোচড় দিয়ে উঠলো, হাতে থাকা ফোনটাকে শক্ত করে চেপে ধরল , হাতটা দরদর করে ঘামছে, শরীরের মধ্যে অস্থিরতা কাজ করছে ৷ আরিশের প্রতি যতই রাগ করুক না কেন তবুও সবসময় ভেবেছে আরিশ নিশ্চই কিছু একটা করবে আর অবশেষে ও আরিশকে পাবে তবে আরিশের কক্সবাজারে যাওয়ার কথা শুনে আর কোন আশা ভরসা আরুর মাঝে নেই ৷
ওর সবসময় মনে হয় যে আরিশ ভালোবাসে কিন্তু ওর সঙ্গে মজা করে সবসময় , আর দেখতে চাই যে ও আরিশকে কতটা ভালোবাসে ৷ এই কথাগুলো সবসময় ওর মাথায় ঘোরে তবে বাস্তবে তার সত্যতা ওর জানা নেই ৷
আরূ মিথ্যা একটা হাসি দিয়ে বলল,,,,,
__” খুব খুশি হতাম যদি আপনারা সবাই আসতেন, তবে আপনাদের হানিমুনটাও অনেক বেশি ইম্পর্টেন্ট, আপনারা নিউলি মেরিড তাই একসাথে সময় কাটালে নিজেদেরকে আরো ভালোভাবে জানতে পারবেন , আর বুঝবেন নিজেকে ৷ আল্লাহ আপনাদের বিবাহিত জীবন সুখী করুক ৷ ”
__” তুমিও সুখী হয়ো তবে বিয়ের পর তোমার জামাইয়ের থেকে সাবধানে থেকে ও কিন্ত তোমাকে খুব ভালোবাসে মানে পাগলের মতো , তাই ওর ভালোবাসা কখনো ফিরিয়ে দিও না ,…..”
আরু অবাক হয়ে বলল,,,,,
__” আপনাকে এগুলো কে বলেছে ?”
__” মানুষের হাবভাব দেখলেই বোঝা যায় যে কে কেমন ৷ তাই বেশি ভালোবাসা দিলেও হয়তো তুমি কখনো ফেরাতে পারবেনা ৷”
বারাবরের মতই আরু কিছু বুঝলো না ৷
__” এতো রহস্য করে বলার কী আছে, সহজ ভাবে বললেই হয় ৷ যেমন উনি তেমনই উনার ফ্রেন্ড গুলো ৷ ওনাদের কথার মারপ্যাঁচ আমি কিছুই বুঝিনা ৷ অবশ্য আমার বুঝেও কিছু লাভ হবে বলে মনে হয় না ৷(মনে মনে)
মিথিলার সাথে কিছুখন কথা বলে আরু ওখান থেকে চলে এল….
__” কিরে তুই কোথায় যাচ্ছিস?”
__” তূর্য আর সাহেল ভাইয়াকে বিয়ের কার্ড দিতে যাচ্ছি ৷ যতই হোক তাদের সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক না হলেও একপ্রকার দ্বন্দ্বমূলক সম্পর্কে তাদের সাথে জড়িত ছিলাম তাই এটুকু তো করতে পারি…”
__” চল আমিও যাচ্ছি তোর সাথে?”
__” না তার দরকার হবে না , আমি একাই যাচ্ছি তুই এখানে থাক আমি একটু পরেই ফিরে আসছি…..”
আরু বেশ কিছুক্ষন এদিক ওদিক তাকিয়ে সাহেল আর তুর্যকে খুঁজতে লাগলো, অবশেষে দেখতে পেল ওদেরকে ৷ সাহেল ক্যামেরা হাতে তূর্যর কয়েকটা ছবি তুলে দিচ্ছে , তাই ওর আর অসুবিধা হলো না ওদের দুজনকে একসাথৈ খুঁজে নিতে ৷
সামনে এগিয়ে যেতে সাহেলের কাছে গিয়ে বলল,,,,,, __” ভাইয়া আপনার সাথে কি দুই মিনিট কথা বলতে পারি যদি আপনার কোন সমস্যা না থাকে!”
সাহেল আরূর দিকে তাকিয়ে আরূকে দেখে মুচকি হাসি দিয়ে বলল,,,,,
__” সিওর ৷বাট এনি প্রবলেম?”
তূর্য ও ওদের দিকে এগিয়ে গেল ৷ ওরা দুজনেই আরুর দিকে তাকিয়ে আছে যে আরূ কি বলবে ওদেরকে তা শোনার জন্য……
আরু ওদের দুজনের দিকে দুটো বিয়ের কার্ড এগিয়ে দিল ৷
__” ভাইয়া কাল আমার গায়ে হলুদ , আর পরশু বিয়ে, আপনাদের দুজনের দাওয়াত রইলো, আসবেন কিন্তু ছোট বোনের বিয়ে করে মনে করে ৷”
__” ধন্যবাদ বিয়েতে দাওয়াত দেওয়ার জন্য , যেতে পারবো কি সেটা বলতে পারছিনা, আজকে আমরা কক্সবাজার যাচ্ছি ৷”
আরু এক চিলতে হাসি নিয়ে বললো ,,,,,
__” মনে হলো দাওয়াত দেওয়া উচিত তাই দিলাম বাকিটুকু আপনাদের উপরে ৷”
কথাটা বলে আরূ ওখান থেকে চলে এলো…..
এবার আরিশকে বিয়েতে দাওয়াত দিলেই ওর কার্য সম্পন্ন হবে তবে প্রায় একঘন্টা হলো বিয়ে বাড়িতে এসেছে এখনো কোথাও আরিশকে দেখেনি ৷ ভাবলো কার্ডটা আরিশের রূমে দিয়ে আসবে ৷ সেই জন্য আরিসের রুমের দিকে গেল ৷
আরিশের রূমের দরজাটা হাট করে খুলে রাখা আছে তাই আরূ ভাবলো আরিশ হয়তো রুমেই আছে, বলে রুমের দরজাটা খুলে দেখল রুমে কোনো মানুষ নেই, আর আরিশের কোন চিন্হ নেই , বিছানার পাশে ট্রলিটা দেখে যেন আরেক দফা কেপে দিয়ে উঠলো আরু ৷ সত্যিই হয়তো আর কোনো আশা নেই ওর ৷ আরূর চোখের কোনে জল চলে এলো ,এখন চোখের কোনে জল জমে আশা ওর কাছে নিত্ত দিনের ঘটনা , আর তা মুহূর্তের মধ্যে টপটপ করে গড়িয়ে পড়ে টা তেও যেন অভ্যস্ত হয়ে পড়েছে ও ৷
অন্ধকার রুম, আলো জ্বালালোনা আর ৷ প্রথম দিনে ঘরটাকে এতো পর্যবেক্ষণ করেছিল যে ঘরের প্রত্যেকটা কোনা কোনা ওর মনে আছে ৷ আরিসের বিছানার উপরে বিয়ের কার্ডটা রেখে চলে আসতেই কানে দরজা খোলার শব্দ ওর কানে ভেসে আসতেই আরূ সারা শরীর কেঁপে উঠলো ৷ এক সুগন্ধ ভেসে আসছে ওর নাঁকে, পারফিউমটা আরিসের, আরিশ সবসময় এই পারফিউম ব্যবহার করে সেটা আরূ জানে আর তাছাড়া আরিশের উপস্থিতি কখনো ওর বুঝে নিতে অসুবিধা হয় না ৷ তবে এখন মানুষটার মুখোমুখি হবে কি করে সেটাই ভাবছে আরু , তবুও এটা ভেবে খুশি হল যে বাড়িতে ফেরার আগে অন্তত মানুষটাকে একবার দেখতে পাবে ৷
আরূ স্থির দাঁড়িয়ে রয়েছে, আরিশের এর দিকে এখনো ঘুরে তাকায় নি ৷
ধীর পায়ে আরিস আরূর কাছে গেল , আরুর চুলে মুখ ঢুবিয়ে দিল আরিশ আর ওর চুলের ঘ্রাণ নিতে লাগলো ৷
হঠাৎ আরিশের এমন কাজে আরূর সমগ্র শরীর থরথর করে কাঁপছে, বুঝতে পারছে না যে আরিশ কি করতে চাইছে , আরিশকে বোঝা ওর পক্ষে কখনোই সম্ভব হয়নি আর আজো হচ্ছে না ৷
আরু কাঁপা কাঁপা গলায় বললো,,,,,
__” আপনি কি করছেন এটা ! প্লিজ সরে যান ৷”
আরিশ এবার ওর ঠাণ্ডা হাত জোড়া আরূর গলায় স্পর্শ করতেই আরূ আরিশের হাতটা শক্ত করে চেপে ধরল ৷
__” প্লিজ সরে যান, এতটা কাছে আসবেন না ৷”
এবার আরিশ ওর আরেক হাতটা আরুর কোমরে শক্ত চেপে ধরে আরূকে ওর নিজের বুকের সাথে মিশিয়ে নিল ৷ আরূর পিঠটা আরিশের বুকে ঠেটে রয়েছে ৷ আরূ আরিশের এক হাত দিয়ে শক্ত করে চেপে ধরে আছে…..
আরূ যেন এক ঘোরের মধ্যে চলে যাচ্ছে ক্রমশ, নিজেকে আর আরিশের থেকে সরাতে ইচ্ছা করছে না ৷ হঠাৎ আরিশ ওর কানের কাছে ফিস ফিস করে বলে উঠলো,,,,,
__” বিয়ের কার্ডটা এখনো পেলাম না ৷”
কথাটা শুনতেই আরূ একদফা চমকে গেল , এই মুহূর্তে ওর ইচ্ছা করছে আরিশের গালে ঠাস ঠাস করে কয়েকটা চড় মারতে তবে চাইলেও মানুষ টাকে মারতে পারবেনা ৷ আরূ আরিশের যে হাতটা শক্ত করে চেপে ধরেছিল সেই হাতটা এক ঝটকায় ফেলে দিল ৷ আরিশের কাছ থেকে সরে এল আরু ৷
__” বিয়ের কার্ড চাইতে গেলে তার এতটা কাছে আসতে হয় জানতাম না মিস্টার আরিশ ৷”
আরিশ ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে আরূর দিকে এগিয়ে গিয়ে বললো,,,,
__” সবটাই যে আপনার নলেজে থাকা ডিকসানারির মতো হবে তার কোনো মানে হয় না মিস আরূ ৷ i’m ইউনিক ইউ নো ৷ ”
আরূ তাচ্ছিল্যের স্বরে একটা হাসি দিয়ে বলল,,,
__” কোন মানুষ যে এতটা যঘন্্য হতে পারে তা জানতম না ৷ বাই দা ওয়ে কাল আমার হলুদ আর পরশুদিন বিয়ে আসবেন কিন্তু, তাহলে খুশি হব ৷”
__” আমি না গেলে কি কোন কাজই পূরন হবে মিস আরুশি ? আমার কিন্ত মনে হয় না তা ৷”
__” নিজেকে অন্যের জীবনে এতটা গুরুত্বপূর্ণ কেন ভাবেন?”
__” না ভাবলে যে আপনি আজীবন নিরামিষ ই থেকে যাবেন থেকে যাবেন আর আপনাকে আমিষ বানানোর দায়িত্বটা যে,,,,!”
কথাটা আর পুরো বললো না আরিশ ৷
__” মজা করছেন তো, বেশ ! সে যাই হোক, আমি নিরামিষ নাকি বা আমিষ তা আপনার না ভাবলেও চলবে বাট বিয়েটা নিয়ে একটু ভেবে দেখবেন যে আসতে পারবেন কি ৷”
__” আলবাদ ভাববো , আপনি না বললেও যে দায়িত্বটা আমারই ৷”
আরিসের বলা কথাগুলো আরূ কিছুই বুঝতে পারছে না তাই কথাগুলো যেন ওর কাছে মজা বলে মনে হচ্ছে ৷আরূ বিরক্ত হয়ে চলে যেতে গেলেই আরিশ ওর হাতটা ধরলো,,,,
__” বিয়ের দাওয়াত দিলেন অথচ গিফটটা নেবেন না?”
আরূ শান্ত কন্ঠে বলল,,,,,
__” আপনার থেকে যা পেয়েছি সেটুকু মনে রাখতেই যেনো কষ্ট টা বেশি হচ্ছে তাই নতুন করে আপনার দেওয়া কিছু স্মৃতি করে রাখার মত ক্ষমতা আমার নেই ৷”
__” কিন্তু আমি যখন চেয়েছি গিফটটা আপনাকে দেবো তো আপনাকে নিতেই হবে ৷”
বলে আরূর কাছে গিয়ে আরুকে কোলে তুলে নিল,,, __” আরূ শক্ত করে আরিসের পাঞ্জাবির কলারটা চেপে ধরল ৷”
__”নামান আমাকে, কি করছেন আপনি ?”
আরুর কোন কথা না শুনে আরিশ আরূকে বিছানায় বসিয়ে দিল,,,,
ও নিজৈ মেঝেতে বসে আরূর পা থেকে জুতা জোড়া খুলে দিয়ে পকেট থেকে একজোড়া নুপুর বার করে আরূর পায়ে আলতো করে পরিয়ে দিলো ৷
আরূ ভাবেনি যে আরিশ এভাবে ওকে উপহার টা দেবে ৷
নুপুর পরানো শেষে আরিশ আরুর পায়ে আলতো করে ঠোট ছোয়ালো , আর আরু তাতে কেপে উঠলো ৷
__” এখন নুপুরেই সন্তুষ্ট হন, পরে ভালোবাসা গুলো যত্ন সহকারে নিলেই খুশি ৷”
__”মানে?”(কাদোকাদো হয়ে)
আরিশ আরূর কথা পাত্তা না দিয়ে বললল,,,,,
___” কক্সবাজার যাচ্ছি, ফিরে এসে হানিমুনে যাবো ইনশাআল্লাহ ৷ আমীন !”
বলে আরুর দিকে চোখ মেরে ট্রলিটা হাতে করে বেরিয়ে গেলো ৷
__” উনি এমন কেনো?কেনো আমার অনূভূতি গুলো বোঝেন না !কেনো?”
আরুর চোখ থেকে টপটপ করে জল গড়িয়ে পড়ছে অনবরত ৷
চলবে,,,,,