#তোমার_নেশায়_আসক্ত
#সিজন:2
#পর্ব:10
#Suraiya_Aayat
শেষের ক্লাসকাই আরূ যেন আর বসে থাকতে পারছে না ৷ওর মনটা আনছান করছে বাড়ি যাওয়ার জন্য , গিয়ে ওর আম্মুকে কখন ছবিটা দেখাবে আর আরিশের নামে গোটা কতক বাণী শুনিয়ে দেবে ওর মাকে ৷ আর এটাও ঠিক করে রেখেছে যে কথা বলা শেষে একটা ডায়লগ দেবে যাতে নিজেকে একটু সেরা প্রমাণিত করা যায়,,,,,,,
__” তোমরা সবসময় আমাকে নিয়েই বলো , দেখো এখন উনিও ধোয়া তুলসী পাতা নয় , ওনার থেকে তোমার মেয়ে আরুশি অনেক ভালো ৷ আল্লাহ এসি লারকি সাব কো দে …”
কথাগুলো মনে মনে আরূ যতবার ভাবছে ততবার ভেবেই যেন তিড়িং বিড়িং করে লাফাতে ইচ্ছা করছে ওর, আর বারবার ওর মায়ের মুখে রিয়েকশন টা ভাবার চেষ্টা করছে যে ছবিটা দেখে ওর মায়ের রিয়াকশন টা ঠিক কেমন হবে ৷
বাম হতটা Bench এর ওপর রেখে ডান হাত দিয়ে অস্থিরতায় bench এর ওপর ডান হাতের আঙ্গুল গুলো বারবার তিড়িংবিড়িং করে লাফাচ্ছে যেযনটা তবলা বাজানোর সময় হয় ৷ ওর অস্থিরতা দেখে তিথি না পেরে বলেই ফেলল ,,,,,,,
__” কিরে তুই এমন করছিস কেন ? কোন কিছু নিয়ে চিন্তিত ? ক্লাসে তো তোর একদম মনোযোগ নেই ৷”
আরু বিরক্তি নিয়ে বললো,,,,,,
__” এই টাকলু টার ক্লাস টা যে কখন শেষ হবে বুঝতেই পারছি না ৷”
__” এভাবে কেউ বলে! নাউজুবিল্লাহ ৷”
আরূ মুখ টিপে হেসে বলল,,,,,
__” পরে এই নাউজুবিল্লাহ যদি আমি আলহামদুলিল্লাহতে চেঞ্জ না করেছি তো আমার নামও আরূ নয় ৷ আমার সাথে আর দুদিন থাক সব ঠিক হয়ে যাবে…”
তিথি অবাক চোখে ওর দিকে তাকাল কিন্তু ততক্ষণে অলরেডি ক্লাস শেষ, টিচার রুম থেকে বেরিয়ে যাচ্ছেন ৷
আরু ব্যাগটা কাঁধে নিতে নিতে বলল ,,,
__”কত পার্সেন্ট মার্কস পেয়েছিস ফাইনাল এক্সামে?”
তিথি মাথানিচু করে বলল,,,,,,
__” সেভেন্টি পারসেন্ট ৷”
আরু একটু ভাব নিয়ে বলল,,,,,,
__” সারাবছর আমি ফাজলামো করে ফাইনালে গিয়ে 78 পার্সেন্ট মার্কস নিয়ে আসি , নট সো গুড নাম্বার বাট আমি এতেই খুশি ৷ বলছিতো দুদিন আমার সাথে থাক সব কিছুর সাথে মানিয়ে শিখে যাবি…”
তিথি হঠাৎ অন্যমনস্ক হয়েই বললো,,,,,,
__” আল্লাহ সবকিছুরই একটা ব্যবস্থা করে রাখে,তাই একদিন এমন একজন আসবে যে তার জন্য তুই নিজেই নিজেকে চেঞ্জ করে ফেলবি ৷”
আরু লাফাতে লাফাতে বললল,, ,,
__” কাশ এমন দিন আসতো তাহলে আমার নিজেকে আর নিজেই পাল্টাতে হতো না সে চেনজ করে নিত, বাট আমিতো জানি এমন কেউই আসবে না যে তার জন্য নিজেকে আর পাল্টাতে হবে, বাট আমি নিজেকে change করতে চাই ,তারই হতে চাই, বাট সেটা কবে? ওনলি আল্লাহ নোস ৷”
এই বলে আরু মুচকি হেসে রুম থেকে বেরিয়ে……..
❤
তিথির হাত ধরে ভার্সিটির গেটটা পার করতে না করতেই ততক্ষণে তিথির বাড়ির এড্রেসটাও আরুর জানা হয়ে গেছে, তিথির বাসা আর ওর বাসার 15 মিনিট আগে ৷
তাই দুজনে ঠিক করল এবার থেকে একসঙ্গে বাড়ি যাবে….
গেট পার করে বাইরে গিয়ে দাঁড়াতেই দেখল আরুর বাসা থেকে গাড়ি পাঠিয়েছে….
__” চল আমার সাথে, আমার গাড়িতে করে তোর বাসায় লিফ্ট দিয়ে দিচ্ছি ৷”
__”ওকে চল ৷”
গাড়িতে উঠে আরু ড্রাইভার কে বলল,,,,,
__” পলাশ তোকে এর পরদিন থেকে আর আসতে হবে না ৷”
__” কেন আরু আপি আমি কি কোন ভুল করে ফেললাম?”
__” আমি আমার এই ফ্রেন্ড এর সাথে বাসায় যাব রোজ তাই ৷” (সনার বাড়ি অপোজিটে )
__” কিন্তু ৷”
__” কোন কিন্তু নয় , আমি যা বলছি সেটাই ফাইনাল ৷ এটা আবার বাসার কাউকে বলার দরকার নাই…”
__” আপি তবুও কেমনে কি?”
__” তোর জিএফটা কিন্ত সেই, ইচ্ছা করে না ওর সাথে ঘুরতে যেতে?”
পলাশ লজ্জা পেয়ে গেল,,,,,,
__” থাক থাক আর লজ্জা পেতে হবে না, আমি সব জানি,,,,, রোজ বিকালে এই গাড়ি করে ওকে নিয়ে ঘুরতে যাবি ,ঠিকাছে?”
__” আচ্ছা আপি ৷”
__” বাট হ্যাঁ বাড়িতে কিন্ত কেউ না জানে, জানলে তোর খবর আছে ৷”
❤
বাড়ি ফিরে আরু গাড়ি থেকে নেমেই ছুটল বাসার ভিতরে , ও খুব এক্সাইটেড এই ছবিগুলো নিয়ে, তা তার যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ওর আম্মুকে দেখানোর জন্য ভিষন উত্তেজিত ৷
বাড়িতে ঢুকেই চেঁচাতে লাগলো,,,
__” আম্মু , আম্মু কোথায় তুমি ? তোমার কে আমি আজ এমন কিছু দেখাবো যা দেখলে তুমি পাগল হয়ে যাইবা ৷”
__” ——-”
__” আম্মু ! কোথায় তুমি ?”
আরমান সাহেব নিজের রুম থেকে বেরিয়ে এসে বললেন,,,,,,
__” তোর আম্মু তো একটু তোর অনিকা আন্টির বাসায় গেছে , এখনো ফেরেনি মানে আসতে হয়তো লেট হবে ৷”
__” কি বলবো নি ? বাড়িতে নেই মানে ? আম্মু এখন বাড়িতে না থাকলে কি করে হবে !”
__” জানিস তো আসলে আর ফিরতে চায় না ৷”
আরু চিন্তায় পড়ে গেল কথাটা শুনে তারপর মাথায় অনেক আইডিয়া চলে এলো ৷
আরু প্রথমে কথাটা শুনে অবাক হলেও হঠাৎ মাথায় একসাথে অনেক কিছু ভাবনাচিন্তা ঘুরতেই জোরে বলে উঠলো,,,,,,
__” আচ্ছা আমিও আসছি ৷”বলে তারাহুরো করে বেরিয়ে গেল ৷
__” কিরে তুই আবার কোথায় যাচ্ছিস?”
__” ওই যে অনিকা আন্টির বাড়ি…”
__” মেয়েটাও হয়েছে মায়ের মত ৷” বলে উনি খবরের কাগজটা নিয়ে পড়তে বসে গেলেন ৷
আরু যাচ্ছে আর ভাবছে যে,,,,,,
__” যাক ভালোই হলো, একসাথে দুজনকেই বলা হয়ে যাবে, একসাথে দুজনে মুখের রিয়াকশন টা দেখতে পারবো ওয়াও এর থেকে সুন্দর মোমেন্ট আর কি হতে পারে ৷ আল্লাহ তুমি গ্রেট, আমাকে কত্তো ভালোবাসো আর হেল্প করো …..”
❤
__” আন্টি ছবিগুলো আমি আজকেই কলেজে তুলেছি আর সানা গেলে ওউ দেখতে পেত ৷ আর আমি আজ না গেলে তো জানতেই পারতাম না যে আরিশ ভাইয়ার মতো মানুষও প্রেম করে ৷ বাবা উনারও গার্লফ্রেন্ড আছে ৷ ভাবা যাই ৷”
আরিসের গার্লফ্রেন্ড আছে কথাটা শোনার থেকেও উনি আরো বেশি অবাক হলেন যখন আরু আরিশকে ভাইয়া বলে ডাকলো ৷
__” কি বললি মামনি তুই! ভাইয়া ! কে তোর ভাইয়া?”
__”আমিতো আরিশ ভাইয়ের কথা বলছি ৷”
__” ওকে ভাইয়া বলবি না একদম ৷”
_,” কেন ভাইয়া বললে সমস্যা কি ?আর ভাইয়াকে ভাইয়া বলবো না তো কি বলবো ?” (বাঁকা চোখে তাকিয়ে)
_,” আরে তুই ছাড় না ,আরূ তুলে এনেছে ছবি গুলো ভালো করে দেখ , ওখানে তো পরিষ্কার দেখা যাচ্ছে যে আরিশ মেয়েটার চোখের জল মুছে দিচ্ছে , তাহলে সত্যিই কি আরিশের সাথে মেয়েটার কোন সম্পর্ক আছে ? ”
কথাটা বলে দুজন দুজনের দিকে মুখ করে তাকালো ৷
অনিকা খান এবার রেগে গেলেন , তাড়াতাড়ি করে আরিশ এর কাছে ফোন দিল….
_____________________
ভার্সিটি থেকে কিছুক্ষণ আগেই বেরিয়েছে আরিশ, তূর্য ড্রাইভ করছে আর ওরা তিনজন বসে আছে গাড়িতে৷
হঠাৎ ফোন আসছে ফোনটা ধরতেই দেখলে ওর মায়ের ফোন , তা দেই মুখে হাসি ফুটে উঠল….
অনিকা খান বেশ রেগে বললেন…..
__” তোর সাথে যে মেয়েটা এখন বসে আছে সেই মেয়েটার কাছে ফোনটা দে ৷”
হঠাৎ ওর মায়ের এমন কথায় আরিশ প্রথমত খেয়ে গেল , কিছুই বুঝে উঠতে পারল না , অবাক হয়ে বললো ,,,,,
__” এসব কি বলছ তুমি আর এখানে মেয়ে আসবে কোথা থেকে ?”
__” আমি জানি তোর সাথে এখন একটা মেয়ে আছে যাকে ভার্সিটিতে গিয়ে চোখেতে জল মুছে দিয়েছিলি ৷ তার কাছেই দে….”
আরিশ এবার বুঝতে পারল যে ওর আম্মু কি বোঝাতে চাইছে, বেশি কিছু আর না বলে হাতটা সাহেলের দিকে বাড়িয়ে দিয়ে ওর হাতে ফোনটা দিয়ে দিল ৷
সাহেল ইশারা করে আরিশকে জিজ্ঞাসা করল,,,,,,
__” আমাকে দিচ্ছিস কেন আন্টির ফোন?”
আরিশ জোরেই বলল,,,,,
__” আম্মুর কথা বলতে চাই তাই৷”
__” আমার সাথে ?”(অবাক হয়ে)
__” হমমম ৷”
সাহেল ফোনটা কানে ধরতেই অপর দিক অনিকা খান বেশ ঝাঁজালো কণ্ঠে বলে উঠলেন,,, ,,,,
__” কি বলে তুমি আমার ছেলেকে বশ করেছো হমমম, আমার এত শান্ত শিষ্ট ছেলেটা তোমার মত একটা মেয়ের পাল্লায় পড়লো কি করে? জানি আমার ছেলেটা কেমন বিগড়ে গেছে এখন, সব তোমার জন্য ৷ বলে আরো অনেক কিছুই সাহেলকে শোনাতে লাগলেন ৷
আরিশ আবার জোরে বলে উঠলো,,,,,,
__” তোহার কথা বলছে আম্মু , তাই সব সত্তিটা বল ৷”
সাহেলের আরিশ কথাটা শুনেই হয়ে গেল, তারপরে আরিশের আম্মুকে সবটা জানালো ৷
আরিশের মা এখন আরিশের সাথে বেশ শান্ত ভাবে কথা বলে কলটা কেটে দিলেন ৷
ফোনটা হাতে নিয়ে আরিশ মনে মনে ভাবছে,,,,,,
__” ব্রিলিয়ান্ট এন্ড এক্সপেক্টেড ,এই জন্যই তো এতো ভালোবাসি বউ ৷”
_______________
ফোনটা রেখে অনিকা খান স্বস্তির নিঃশ্বাস নিয়ে বললেন,,,,,
__” আমি জানতাম আমার ছেলে এমনটা কিছুতেই করতে পারে না ৷”
আরু অবাক হয়ে বললো,,,,
__” মানেটা কি?”
__” আরে ওটা ওর ফ্রেন্ড সাহেল এর গার্লফ্রেন্ড৷”
কথাটা শুনে আরু ও যেন আকাশ থেকে পড়ল,
আর যেন কথাটা বিশ্বাস হলো না ও তাই বলল আনটি মিথ্যা কথা বলছেন উনি , হয়তো শিখিয়ে দিয়েছেন না হলে লোকের গার্লফ্রেন্ডের চোখে জল কেন মুছতে যাবে উনি?
আরুর মা ধমক দিয়ে বললেন,,,,,
__” আরিশ যখন বলেছে যে ওটা সাহেলের প্রেমিকা তখন তাই৷ তুই বেশি কথা বলিস না আর ৷”
দুইজনের এমন কর্মকাণ্ডে আরু যেন বোকা বনে গেলো , মনে মনে আরিশ কে এখন হাজারো গালাগালি দিচ্ছে, কত আশা নিয়ে ছবিগুলো তুলেছিল সবকিছু মাঠে মারা গেল……
❤
রাত দুটো,,,,,
পড়াশোনা শেষ করে আরিস মন দিয়ে ফটো ফ্রেম টাতে ছবিটা ঠিকঠাক করে গুছিয়ে রেখে দেওয়ালের সঠিক সেই নিরধরিত জায়গায় ফটো ফ্রেমটা আটকালো ৷
আরিশ মুচকি হেসে বলল,,,,
__” আর একটা ফ্রেম ফাঁকা আছে তবে তা আমাদের দুজনের একসঙ্গে ছবি ছাড়া অসম্পূর্ণ আর তার জন্য তোমাকে আমার কাছে আসতে হবে , এতটাই কাছে আসতে হবে যে যাতে আমার শরীরের সাথে তোমার শরীর মিশে যাই, এতটাই ভালোবেসে মুহূর্তটা তৌরি করতে হবে যাতে চাইলেও তুমি তা ভুলতে না পারো…
যেদিন তোমার ভালোবাসা তুমি আমার কাছে প্রকাশ করবে সেদিন ভালোবেসে তোমাকে কাছে টেনে তোমার ঠোঁটদুটোকে আলতো করে আমার ঠোটদুটো দিয়ে স্পর্শ করবো সেই ছবিটাই ফুটে উঠবে ৷ হাজারো ভালোবাসার স্মৃতি হয়ে থাকবে , যতোই হোক আমার একটাই মাত্র বউ ৷
আর আজ সবকিছুর পানিশমেন্ট বিয়ের পরে সুদে আসলে উসুল করে নেব ৷ বি রেডি ফর দ্যাট ৷
#চলবে,,,,,,