#তোমার_নেশায়_আসক্ত
#সিজন:2
#পর্ব:6
Suraiya_Aayat
ক্যান্টিনে ওরা তিনজন বসে আছে সামনে রয়েছে ধোঁয়া ওঠা কফি আর কিছু কুকিজ ৷ আজকে অনেক রাত জাগার কারণে মাথাটা প্রচন্ড ব্যথা তাই এই মুহূর্তে কফিটায় ওদের জন্য সবথেকে বেস্ট একটা জিনিস ৷
আরিশ গরম কফির মগটা হাতে তুলে নিয়ে কফিতে চুমুক দিতেই নিজৈকৈ সম্পুর্ন ফুরফুরে ফিল করলো ৷ এরপর আবার প্রান্তর মাকে হসপিটালে দেখতে যেতে হবে তাই প্রিন্সিপালের কাছ থেকে আগে থেকেই পারমিশন নিয়ে এসেছে আরিশ…..
সাহেল আর তূর্য দুজন দুজনের সাথে কথা বলছে আর আরিশ তখন ওদের কথার মাঝে বললল,,,,,
__” তূর্য যা মেয়েটাকে সরি বলে আয় ৷”
আরিশের কথা শুনে তূর্য 440 ভোল্ট এর শক খেলো যেন ,অবাক লাগছে প্রচন্ড রকম , আরিশ ওকে ওই মেয়েটার কাছে সরি বলতে বলছে এটা শুনে ওর অবস্থা দফারফা ৷
সাহেল আরিশের কথা শুনে তূর্যর দিকে তাকিয়ে মুচকি মুচকি হাসছে ৷
তূর্য ধিমে কন্ঠে বলল,,,,,
__” দোস্ত আর ইউ সিরিয়াস! মানে তুই আমাকে সরি বলতে বলছিস তাও ওই মেয়েটার কাছে ?”
আরিশ কফিতে এক সিপ নিয়ে বলল,,,,,
__” না বলার কী আছে…আর নিজের দোষটা তো স্বীকার করবি যে সেদিন ভুলটা ওর না তোর ছিল ৷
__”তাই বলে আমাকে সরি বলতে হবে ? আমি পারবো না ৷”
আরিশ হাতের ঘড়ির দিকে তাকিয়ে বলল,,,,,
__” আর তিন মিনিট আছে , তিন মিনিট পর আমার কফিটা পুরো ফিনিস হয়ে যাবে , 5 মিনিটের মাথায় তুই তোর নিজের কফিটা শেষ করে ক্যান্টিন থেকে বার হয়ে ওই যে দূরে দেখতে পাচ্ছিস শিউলি ফুল গাছের পাশে মেয়েটা দাড়িয়ে রয়েছে সানার সাথে ওকে সরি বলে চলে আসবি ৷ উইথআউট এনি আরগিউ ৷
ইউর টাইম স্টার্ট নাও ৷”
তূর্য বুঝতে পেরেছে যে আরিশ ওকে সময় দিয়ে দিয়েছে তখন সেই সময়ের মধ্যে ওকে কাজ করতে হবে না হলে ওর রেহাই নেই ৷ আরিশ সব সহ্য করতে পারে কিন্তু কোন অপরাধ সহ্য করতে পারে না এটা ওরা সবাই জানে ৷ প্রথম যখন ঘটনাটা ঘটেছিল আরিশ তূর্যকে কিছু বলেনি দেখে তুর্য অনেক অবাক হয়েছিল কারণ আরিশ সচরাচর এরকমটা করেনা তবে এমন কোন দিন আসবে যেদিন ওকে আরুর কাছে সরি বলতে বলবে সেটা তূর্য জানত বেশ ভালোভাবে…
তুর্য মাথাটা নিচু করে বললো,,,,
__” ওকে….”
বাইকের চাবিটা হাতে নিয়ে বাইকের সাথে কিঞ্চিৎ হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে আরিস , সামনে কি ঘটছে তাই দেখছে ও ৷ এক মিনিট হলো তুর্য আরুশির কাছে গেছে গিয়ে আরিশের কথামতো সরি বলছে…
হঠাৎ তূর্যকে দেখে আরুশির মেজাজটাই বিগড়ে গেল , বেশি মেজাজ নিয়ে বলল ,,,,,
__”আপনি আবার এখানে চলে এসেছেন? আজকে কি গোটা ভার্সিটির সামনে ঝগড়া করার ধান্দায় আছেন নাকি!”
__” এই মেয়ে শোনো তোমার সাথে ঝগড়া করার কোন ইচ্ছা বা মুড আমার কোনটাই নেই শুধুমাত্র আরিশ তোমাকে সরি বলতে বলেছে বলে আমি সরি বলতে এসেছি না হলে তোমার কাছে কখনো সরি বলতে আসতাম না ৷”
আরু একটু ভাব নিয়ে বলল,,,,,
__” তা যিনি আপনাকে সরি বলতে পাঠিয়েছেন উনি নিজেই তো এখনও সরি বলে নাই , ভীতুর ডিম একটা ৷ তবে আপনার সরিটা এক্সেপ্টেবল নয় কারন উনি কিন্তু এখনো যেহেতু আমাকে সরি বলেননি আর আপনাকেও তো উনিই পাঠিয়েছেন ৷ তাই দুজনেরটাই পেন্ডিং আছে ৷”
তূর্য এবার রেগে বলল,,,,,
__” এই মেয়ে শোনো না মানলে আমার বয়েই গেল ৷ আর তোমাকে আরিশ আবার সরি বলতে যাবে কেন?”(তাতে আমার বয়েই গেলো এটা লেখিকা আর লেখিকার ফ্রেন্ডদের কমন ডাইলগ 🙉)
__”উনি আমার সাথে মিস বিহেভ করেছেন তাই , আর একটা মেয়ের সাথে মিস বিহেভ করলে তাকে সরি বলতে হয় সেটুকু মেনারস বুঝি ওনার মধ্যে নেই ?”
সানা আরুর হাতটা চেপে ধরে বলল,,,,
__” তুই এ সব কি বলছিস ! আর ভাইয়া কখনই বা তোর সাথে মিস বিহেভ করলো?”
__” সানা তুই থাম , যেটা জানিস না সেটা নিয়ে কথা বলিস না ৷ উনি আমার সাথে মিস বিহেভ করেছেন তাই সরি বলবেন দ্যাটস ইট ৷”
তূর্য হো হো করে হাসতে হাসতে বলল,,,,,,
__” তুমি সারাজীবন স্বপ্নই দেখে যাও আরিসে কাছ সরি শোনার জন্য , আমি চললাম ৷”
বলে ওদের ওখান থেকে চলে গেলে ৷
আরু ওর ডানদিকে ঘাড়টা ফিরিয়ে দূরে আরিশের দিকে তাকিয়ে দেখলো আরিশ গাড়ির সাথে হেলান দিয়ে ফোন নিয়ে ব্যস্ত ৷ দৃশ্যটা দেখে ওর রাগে গা পিত্তি জ্বলে যাচ্ছে ৷
__” উনি যতক্ষণ না আমাকে সরি বলবেন আমি ততক্ষণ কোথাও যাবো না ৷”
__” তুই যদি ভাইয়ার কাছ থেকে সরি শুনতে চাস তাহলে আজীবন এখানেই দাঁড়িয়ে থাক তারপরে একটা সময় আসবে যখন তুই না খেতে পেয়ে এখানে কংকাল হয়ে ধুলিস্যাৎ হয়ে যাবি , তাও ভাইয়া তোকে কখনো সরি বলবে না ৷ আর ও সরি বলার মতো কখনো কোনো কাজও করে না যে সরি বলবে তাই এগুলো তোর মাথা থেকে ঝেড়ে বার করে দে ৷”
__” এত দেমাগ কিসের উনার? অন্যায় করেছে সরি উনাকে বলতেই হবে সে যে করেই হোক ৷”
__” কি এমন করেছে ভাইয়া বল আমাকে ৷”
এরপরে আরু আরিশের বেডরুমে ঢুকে যা যা হয়েছে সমস্তটাই বলল,,,,,
সানা ওর কথা শুনে রেগে বললল,,,,
__” তোকে আমি বলেছিলাম না ভাইয়ার বেডরুমে ঢুকেতে না , তার সত্বেও তুই কেন ঢুকেতে গেলি আমি বারবার বারণ করা সত্ত্বেও ৷ তুই আমার কথার অমান্য করেছিস আর তাছাড়া ভাইয়া যা করেছে ওর কোনো ভুল নেই এতে ৷ ও তোকে ভালোই ভালোই রুম থেকে বেরিয়ে যেতে বলেছে তুই তাও ওর কথা শুনিস নি ৷আর ও তোকে কিছু বলেনি , শান্ত মাথায় বলেছে এটাই অনেক , ও ওর ঘরে কাউকে এলাও করে না দরকার ছাড়া, ইভেন ওর ফ্রেন্ডকেও না ৷ ”
আরু বুঝতে পারল ওদের দুই ভাইবোনের সাথে পারা যাবে না তাই রাগে গজগজ করে সামনের দিকে হাঁটতে হাঁটতে বলল,,,,,
__” হ্যাঁ এখন তো সব আমারই দোষ , ভালো ভালো , একদিন উনি যদি আমার কাছে সরি না বলে তাহলে আমার নাম ও আরু নই হ্যাঁ……”
|
|
|
|
কিছুক্ষণ আগে প্রান্তর মা র জ্ঞান ফিরে এসেছে, ডাক্তাররা ওনার সঙ্গে দেখা করার জন্য সবাইকে এলাও করছেন ৷ প্রান্ত এতক্ষণ ওখানেই ছিল তবে এখন আরিশ দেখা করার জন্য রুমে ঢুকেছে….
রুমে ঢুকে দেখল প্রান্তর মা চোখ বন্ধ করে শুয়ে আছে, আরিশ ওনার বেডের পাশে থাকা টুলটা নিয়ে বসল তারপর প্রান্তর মায়ের হাতে হাত রাখতেই উনি চোখ খুললেন ৷
__” আপনি জেগে আছেন আন্টি ! আমি ভাবলাম আপনি হয়তো ঘুমিয়ে আছেন তাই এলাম, আপনার ঘুমের বিঘ্ন ঘটেছে চাইনি আমি…”
উনি আধো আধো কণ্ঠে বললেন,,,,
__” আল্লাহর রহমতে এখন ভালো আছি বাবা ৷ তুমি যদি সময়মতো আমাদের সাহায্য না করতে তাহলে কিভাবে যে কি হত আল্লাহ মালুম”…
আরিশ মুচকি হেসে বললেন,,,
__” সবকিছু আল্লাহর ইচ্ছা আমি শুধু উনার উছিলা মাত্র…”
উনি আরিসের গালে আলতো করে হাত বুলিয়ে বললেন,,
__” আল্লাহ তোমাকে অনেক ভাল রাখুক, সুখে রাখুক, তোমার সকল ইচ্ছা পূর্ণ হোক বাবা ৷”
আরিশ মুচকি হেসে বলল ,,,
__”দোয়া করবেন আমি যেন আমার জীবনের সবথেকে প্রিয় মানুষটা কে নিজের করে পায় ৷”
কিছুখন পরে উনি একটা দীর্ঘশ্বাস নিয়ে বললেন,,,,
__” আমার বড় চিন্তা হয় বাবা তোমাদের সবাইকে নিয়ে , তোমাদের এখন বয়স হয়েছে নিজের জীবনটাকে গুছিয়ে নেওয়ার , তাই তাড়াতাড়ি করে একটা বিয়ে করো বাবা , তারপরে নিজের প্রিয় মানুষটার সঙ্গে সুখে থাকো ৷ আমি যতদিন বেঁচে আছি তার আগেই প্রান্তর বিয়েটা দেখে যেতে চাই ৷এটাই আমার শেষ ইচ্ছা বাবা ৷”
__” ইনশাল্লাহ সব হবে শুধু আপনি সুস্থ হয়ে উঠুন, তারপর আমি নিজে দায়িত্ব নিয়ে ধুমধাম করে প্রান্তের বিয়ে দেবো ৷”
আরিশের কথা শুনে ওনার চোখ থেকে কয়েক ফোটা নোনা জল গড়িয়ে পড়ল ৷ আরিশের মত একটা ছেলেকে পেয়ে বড্ড আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েছেন উনি, আর ভাবছেন যে এখনকার দিনেও এমন কোন মানুষ আছেন ৷রাত তিনটে,,,,,, গভীররাত যাকে বলে ৷
সকলের চোখে ঘুম থাকলেও আজ আরিশের চোখে যেন ঘুম নেই , ঘুম কেড়ে নিয়েছে তার মনের সেই রাতজাগা উড়ন্ত পাখিটা সেটা হয়তো ওকে দেখলেই বোঝা যাবে এই মুহূর্তের অবস্থায়….
এত রাতে হয়তো তুর্য আর সাহেল নাক ডেকে ঘুমচ্ছে , কি হচ্ছে তার কোনো কিছুরই ওদের খেয়াল নেই….
দক্ষিন দিকের দেওয়ালে জ্বলতে থাকা ডিম লাইটটা বিছানা থেকে নেমে অফ করে দিয়ে একহাতে গিটারটা ধরে সামনের দিকে এগিয়ে গিয়ে সাদা ধবধবে পর্দাগুলো একটানে সরিয়ে দিল আর মুহুর্তের মধ্যে জোছনা রাতের চাঁদের আলো চোখে পড়েতেই ওর চেহারাকে উজ্জ্বল করে তুলছে আরো ৷ এক অপূর্ব সৌন্দর্য কাজ করছে ওর মধ্যে , কোন কবি বা সাহিত্যেক এই দৄশ্যটা দেখলে হয়তো তাদের লিখিত চন্দ্রিমা বিলসীর রাতের কবিতায় আরিশের স্থান দিতেন ৷
মাঝে মাঝে হালকা হাওয়া এসে ওর সাদা ধবধবে শার্ট টা ভেদ করে সম্পূর্ণ শরীর ছুঁয়ে যাচ্ছে, চুলগুলো বাতাসের হাওয়ায় নিজেরা নিজেদের মাঝে খেলা করায় ব্যস্ত , তাদেরকে আঙ্গুলের স্পর্শ দিয়ে আরিশ দমিয়ে রাখতে চায় না তাই হয়তো স্বাধীনভাবেই বিচরণ করতে মত্ত তারা, মুখের খোচা খোচা দাড়ি গুলোও আজ মানিয়েছে বেশ…..
বেলকনির রেলিং এ হেলান দিয়ে গিটারের তারটাতে প্রথমবার স্পর্শ করতেই অদ্ভুত এক নেশাগ্রস্থ ছন্দের সৄষ্টি হলো যেমনটা আরুশি হয়েছিল আরিশের গান শুনে , একুরিয়ামে মাছ গুলোও যেন ওর গান শোনার জন্য তাদের লাফালাফিটাকে দমিয়ে রাখতে পারছে না , তারাও আরিশের মতো তাদের রাত্রিবেলায় চোখের ঘুমটা হারিয়েছে অনেক আগেই…..
গানের তালে তালে মিউজিক টা বাজিয়েই চলেছে আরিশ ৷
” বলতে যেয়ে মনে হয়
বলতে তবু দেয়না হৃদয়
কতটা তোমায় ভালোবাসি ৷
চলতে গিয়ে মনে হয়
দূরত্ব কিছু নয়
তোমারই কাছেই ফিরে আসি,
তুমি , তুমি, তুমি শুধু
এই মনের আনাচে কানাচে,
সত্যি বলোনা
কেউ কি প্রেমহীনা কখনো বাঁচে ৷
তুমি তুমি তুমি শুধু এই মনের আনাচে কানাচে
সত্যি বল কি না কেউ কি প্রেমহীনা কখনো বাঁচে
বলতে যেয়ে মনে হয়,
বলতে তবু দেয় না হৄদয়
কতোটা তোমায় ভালোবাসি
মেঘের খামে আজ তোমার নামে
উড়ো চিঠি পাঠিয়ে দিলাম ,
পড়ে নিও তুমি মিলিয়ে নিও
খুব যতনে তা লিখেছিলাম (2)
ও চাই পেতে আরো মন
পেয়েও এত কাছে ৷
বলতে যেয়ে মনে হয়
বলতে তবু দেয় না হৃদয়
কতটা তোমায় ভালোবাসি……”(গল্পের থিম song🤗)
জোছনা রাতটাও হয়তো আরিশের এই গানটা মনোযোগী হয়ে শুনেছে ৷ গানটা শেষ হওয়ার সাথে সাথেই পরিবেশটা কেমন থমথমে হয়ে গেল, ভোরের আগমনেরই আভাস ৷ আকাশের উজ্জ্বল চাঁদটাকেও এখন বিদায় নিতে হবে তা নিয়ে হয়তো তার আক্ষেপ , সে নিজেও যদি আরেকটু সময় পেত তাহলে হয়তো আরিশের সাথে রাত্রি বিলাস করতো ৷
গানটা শেষ হতেই আরিশ ওর ওপরের দাঁত দিয়ে নিচের ঠোঁটটাকে আঁকড়ে ধরে মুচকি একটা হাঁসি হেঁসে পকেট থেকে ফোনটা বার করে স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে মাতালকরা একটা হাসি দিল ,,,,,
ফোনের দিকে তাকিয়ে বলতে লাগলো,,,,
__”আমিও যেমন তোমাতে আসক্ত তেমনি তুমিও হবে আমাতে আসক্ত, সেই দিনেরই অপেক্ষায় আমি ৷”
চলবে,,,,