তোমার নেশায় আসক্ত ২ পর্ব-৩৮

0
1510

#তোমার নেশায় আসক্ত
#সিজন:2
#পর্ব:38
#Suraiya Aayat

বিছানার সঙ্গে শরীরটাকে এলিয়ে দিয়ে একমনে সামনে থাকা প্রেয়শীর দিকে গভীর দৃষ্টি দিয়ে তাকিয়ে আছে আরিস, একবার দেখলেমনে হয় যেনো দেখতেই থাকুক , সারাক্ষণ ওর দিকে তাকিয়ে থাকলেও যেনো ওর চোখের পিপাশা মিটবে না ৷ আরুশিও আড় চোখে আরিশের দিকে মাঝে মাঝে তাকাচ্ছে, এভাবে আরিশ ওর দিকে তাকিয়ে থাকলে ওর খুব লজ্জা লজ্জা পাই তবুও একপ্রকার রোমান্টিক তা কাজ করে তখন ৷ আরিশকে আজকে হলুদ পাজ্ঞাবীতে বেশ মানিয়েছে, কিন্ত আরুশি একবারো যেচে আরিশের প্রশংসা করেনি, প্রশংসা করলেই আরিশ আবার দুষ্টুমি আরম্ভ করে দেবে,আপাতত আরু রোমান্স এর মুডে নেই ,এখনো অনেক কাজ বাকি, আরিশের সাথে তাল মেলালে ওর সব কাজ জলে ভেসে যাবে ৷

আরুশি এবার কফির মগটা হাতে নিয়ে উঠতে গেলেই আরিশ ওর হাতটা ধরে ফেলল ৷হঠাৎ হাত টান পেয়ে আরু আরিশের দিকে তাকিয়ে চোখের ইশারায় জিজ্ঞাসা করলো যে কি হয়েছে!

আরিশ ও আরুকে চোখের ইশারায় বসতে বললেই আরু আরিশের কাছে বসলো….

এখন আবার আপনার কি হল জানাব ?

আরিশ মুচকি হেসে হলুদ রঙের পাঞ্জাবির উপরের বোতাম টা আলতো করে খুলে দিয়ে আরুশির বাঁ হাতটা শক্ত করে মুঠি বদ্ধ করে নিয়ে খাটের সাথে মাথাটা এলিয়ে দিয়ে চোখ বন্ধ করে রইলো ৷

আরিশ বেস নিস্তব্ধ, ঠিক একইভাবে আগের মতই চোখ বন্ধ করে নিজের নিস্তব্ধতাকে বজায় রাখতে দেখে আরু বলে উঠলো
আপনার কি কোন জরুরী তলব আছে যার জন্য এভাবে আটকে রেখেছেন ?

আরিশ চোখ বন্ধ রেখেই মাথা নাড়িয়ে না জানালো, আর মুখে খানিকটা শব্ধ করে বলল,,,,
উহুহু !

আচ্ছা তাহলে আমি এখন আসি, আমার অনেক কাজ বাকি আছে ৷

সবসময় এভাবে পালিয়ে পালিয়ে যাও কেনো, ভালো লাগে না বুঝি কাছে আসতে ?

আরিশের হঠাৎ এমন অসংগতিপূর্ণ কথা শুনলে আরু নিজেই কনভিউড হয়ে যাই নিজেকে নিয়ে, তখন মনে নিজের প্রকাশিত ভালোবাসা নিয়ে হাজারো প্রশ্ন টেনে আনে যদিও যানে যে তা অবাছ্ঞিত তবুও কোথাও একটা প্রশ্ন এসেই যাই ৷

আরুশি বোঝে যে মাঝেমাঝে যখন আরিশের মাঝে নিস্তব্ধতা কাজ করে তখন হয়তো অভিমানের কালো পাহাড়টা আরিশের বুকে এসে জমা হয় ৷
আরুশি মুচকি হাসতেই আরিশ চোখ খুলে তাকালো ৷

হাসি পাই তাইনা খুব এগুলো শুনলে ?

আরুশি আস্তে আস্তে আরিশের দিকে এগিয়ে গিয়ে আরিশের নাকে একটা চুমু দিয়ে বলল

অন্যরা রেগে গেলে সবার নাক কান রাগে লাল হয়ে যাই, তবে আপনি অভিযান করলে যে আপনার নাকটা রক্তবর্ণ হয়ে যাই তা কি জানেন ?

আরিশ আরূর কথা শুনে হো হো করে হসে দিতেই আরু যেনো বেকুব হয়ে গেল, নিজের অজান্তেই মাথায় একটা চাটি দিয়ে চোখজোড়া খিঁচে বন্ধ করে নিল যেনো চোখ খুললেই আরিশ লজ্জা দেবে ৷

কিছুখন পর যখন আরিশের হাসির আওয়াজটা ক্রমশ কমতে লাগলো তখন একটু সাহস নিয়ে চোখ জোড়া খুলতে গেলেই কপালে আরিশের ঠোঁটের ছোঁয়া পেতেই পুনরায় চোখটা বন্ধ করে নিল, সময়টাকে উপভোগ করাই এখন বেশি জরুরী কাজ ৷

আজ আরিশের মতো আরু ও চাইছে যেনো সময়টা এখানেই থেমে থাকুক আর ভালোবাসা গুলো মিলে মিশে একাকার হয়ে যাক ৷এতেই হয়তো পূর্ণতা ৷

দুজনের এই পিনপতন নিস্তব্ধতার মাঝে হঠাৎ তীব্র বেগে দরজাটার ধাক্কা লাগার আওয়াজ পেতেই আরু চমকে উঠলো, আর হাত থেকে কফির মগটা পড়ে গেল মেঝেতে ৷

আরু আরিশকে কোনরকম ভাবে ছাড়িয়ে পিছন ঘুরে দাড়াতেই আরু আহহ করে শব্দ করে উঠলো, কাচের কফির গ্লাসটার বেশ কয়েকটা অংশ পায়ে বেশ ভালো রকম ভাবেই গেঁথে গেছে, পায়ের অবস্থা গুরুতর,,,,,

আরিশ অগ্নিচক্ষু নিয়ে জেরিনের দিকে তাকিয়ে আরুশিকে কোলে নিয়ে সোফাতে বসালো ৷

জেরিন শুধুমাত্র আরিশ আর আরুশিকে দেখেছে, নিজেও এই পরিস্থিতিতে পড়ে চরম বিরক্তি শিকার হচ্ছে একরকম ৷ যা ভেবেছিল তা হয়নি, ৷ ভেবেছিলো আরিশের জ্বরের সুযোগ নিয়ে আরিশের প্রতি কেয়ার দেখাবে আর এসেই আরিশের উপর হামলে পড়বে তাতে যদি আরিশের মনে একটু অনুভুতি আসে, তবে এখানে ঘটনাটা সম্পূর্ণ অন্যরকম ভাবে ঘটে গেল ৷ এই মুহূর্তে অন্তত আরুকে আরিশের সাথে আশা করে নি ৷

আরিশের রক্তচক্ষু নিয়ে দৃষ্টিটা জেরিনের চোখে এড়াইনি ৷ জেরিন যতই আরিশ এর সামনে সাহস দেখাক না কেন আরিশকে ও ভীষণ রকম ভয় পাই

আকৃতিতে সবথেকে বড় কাচটা বার করতেই আরুশি শক্ত করে আরিসের পাঞ্জাবীটা খামচে ধরল,
আরুর চোখ দিয়ে টপটপ করে জল গড়িয়ে পড়ছে, তবে আরিশের মুখ দেখে মনে হচ্ছে কষ্টটা যেন আরিশ আরুর থেকে বেশি পাচ্ছে ৷ নিমেষের মধ্যেই আরিশের কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম দেখা দিচ্ছে তা আরুর চোখে দৃশ্যমান ৷

আরিশের কষ্ট কমাতে নিজের কষ্টটা চেপে রাখতে গেলেও আর রাখতে পারছেনা আরু নিজেকে সামলাতে,বেশ অনেক জায়গায় কাচ ঢুকেছে ৷

শেষের কাচটা বের করতেই আরু এবার ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠলো…..

আরূর চোখের জল দেখে আরিসের রাগ সপ্তম আসমান ছাড়িয়ে গেল , এখন ইচ্ছা করছে এই মুহূর্তে জেরিনকে ঠাসিয়ে দুটো চড় মারতে ৷( বাস্তবে যত জেরিন আপু আছো তাদেরকে সরি , )

কাচটা বার হতেই আরিশ ছুটে গিয়ে তুলো আর
ব্যান্ডেজটা নিতে এসে ভালোমতো ব্যানডেজ করে দিলো,আপাতত জেরিনের প্রতি ওর কোন খেয়াল নেই, ওর প্রতি একশানটা পরে দেখাবে ৷

জেরি হাতের ওপর হাত রেখে দরজার কাছে ঠাই আগের মতো দাড়িয়ে আছে, মনেমনে ভয় ও খানিকটা আছে বাট রাগ ও হচ্ছে অনেক আরিশ আর আরুকে এতোটা কাছাকাছি দেখে ৷

ব্যানডেজ শেষে আরিশ আরূকে কোলে নিয়ে বিছানায় শোয়লো ৷ আরুশির কান্নার গতিটা কিছুটা কমলেও থামতে পারেনি সম্পূর্ণ ৷

আরুকে কাদতে দেখে জেরিন বলে উঠলো,,,,
ব্যানডেজ হয়েছে আর প্রবলেম হবে না, ঠিকহয়ে যাবে ৷
কথাটা শোনমাত্রই আরিশ হাত. জোড়া মুঠিবদ্ধ করে নিল, রাগে শরীরটা থরথর করে কাপছে, আরু ও আরিশের চোখমুখ দেখে বুঝতে পারছে যে আরিশ ভীষন রকম রেগে আছে, তাই আরিশকে থামানোর জন্য আরিশৈর হাতটা শক্ত করে ধরে চোখের ঈশারায় কিছু বলতে না করলো, আরিশ কোন. পতিক্রিয়া দিলেই ও হেরে যাবে জেরিনের কাছে, আর তা আরু কোনভাবেই চাই না ৷

তবুও আরিশ যেনো আর আটকাতে পারছে না, আরুর থেকে হাতটা ছাড়িয়ে জেরিনের কাছে গিয়ে খানিকটা নরম সুরেই বলল,,,,
কারোর রুমে ঢুকতে পারমিশন নেওয়া লাগে সেটা কি জানো?

আমি তো তোমার জ্বরের খবর শুনেই তাড়াতাড়ি ছুটে এলাম ৷

আরিশ আবার বললো,,,,,,

কখনো কারোর বেডরুমে পারমিশন ছাড়া কি ঢোকা যাই ?

আমি তোমার কথাটা শুনে আর ঠিক থাকতে পারিনি তাই !

জেরিনকে থামিয়ে দিয়ে আরিশ দাঁতে দাঁত চেপে বলল,,,,

I want my answer ,yess or no…

জেরিন এবার বিরক্ত হয়ে হয়ে বলল,,,,
অভিয়েসলি নো ৷

তাহলে নক না করে এসেছিলে কেনো?

তোমার রুমে আসতে গেলে আবার আমার পারমিশন লাগবে ?

এটা আমার থেকেও আমার বউ এর রূম বেশি,তাই নেক্সট টাইম আমাকে নিয়ে কিছু ভাবার আগে ওর কথা মনে করবে ৷নাও গেট লসট ,,,,ইউ নো আমি আমার রুমে কাউকে এলাও করি না, বাট নেক্সট টাইম একই কাজ করলে কাজটা ভালো হবে না ৷

হঠাৎ জেরিনের চোখ গেল দেওয়ালে রাখা ছবিটায় যেখানে আরিশ আরু আরুর বিয়ের দিন ক্যাপচার করা হয়েতিল অত্যন্ত ঘনিষ্ট ভাবে ৷ তা দেখে জেরিনের আর ইচ্ছা হলো না সেখানে দাড়াতে, রেগে চলে গেল ওখান থেকে ৷

জেরিন চলে যেতেই আরু ঢুলুঢুলু চোখে আরিশের দিকে তাকালো, মেয়েটার এমন অবস্থা দেখে আরিশের বুকের ভিতর মোচড় দিয়ে উঠলো, মেয়েটার কষ্ট ওর সহ্য হয় না ৷
আরুশির কাছে গিয়ে আরিশ ওকে বুকে জড়িয়ে নিয়ে বলল,,,
__” ব্যাথা পেয়েছো, খুব,কষ্ট হচ্ছে তাইনা?”

আরু এবার কাঁদোকাদো কন্ঠে বলল,,,,
মেয়েটা আপনার বাসা অবধি চলে এসেছে দেখেছেন!

তো আমার মামুর মেয়ে আরুপাখি !

কথাটা শুনে আরু আর কিছু বলল না চুপ হয়ে গেল, তা দেখে আরিশ বলল,,,,

কি হলো কিছু বললে না যে , নাকি হার মেনেছো ওর কাছে ?

আরু এবার আচমকাই আরিশের দিকে টেডি smile দিল , তারপর কম্বলটাকে টেনে নিয়ে শুয়ে পড়লো, আর আরিশকে বলল,,,,

জানি আপনি এখন সম্পূর্ণ সুস্থ, শরীরে এনার্জি ও আছে ভালোই, তাই মি অভদ্র আমি যেহেতু এখন অসুস্থ তাই আপনি যদি আমার একটু সেবা করতেন খুশি হতাম ৷

আরিশ মনে মনে ভাবছে,,,,
যাহ তেরি, ভাবলাম কোথার অসুস্থতার কাহিনী করে বউটাকে কাছে কাছে রাখবো, তা আর হলো কই, ইনি তো এখন পাল্টি খেলেন, কি আর করার সেই তো একই ব্যাপার ৷ লে আরিশ মাঠে নেমে পড়ো ৷

আরিশকে চুপ থাকতে দেখে আরিশ মুচকি হেসে বলল,,,,
বাই দা ওয়ে সকালের রোমান্সটা ভালোই ছিলো, বাট আমি যতদিন সুস্থ না হয় ততদিন কোনকিছুর আশাও করবেন না, মাইন্ড ইট ৷

কথাটা বলে কম্বল মুডি দিয়ে শুয়ে পড়লো,,,,,

আরিশ কোমরে হাত দিয়ে দাড়িয়ে আছে আর সব কিছু ভাবছে ৷

আরিশ কিছু একটা ভেবে রূমের বাইরে যেতে নিলেই আরু কম্বলের ভিতর থেকে মুখ বার করে বললো,,,,
.শুনুন ৷

আরিশ আরুর দিকে ঘুরে তাকাতেই আরু বললো
smile😊 ৷

কথাটা বলে আরূ আবার ঘুমিয়ে পড়লো ৷

আরিশ জানে যে এই হাসির অর্থ ভয়ংকর, তবুও যা হবে তার জন্য ও excited ৷

চলবে,,,,,,

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে