#তোমার নেশায় আসক্ত
#সিজন:2
#পর্ব:37
#Suraiya Aayat
কালকে আরিশ আরুর বাসা থেকে ফিরে আরিস নিজের রুমে গিয়ে ড্রেসটা চেঞ্জ করেই শুয়ে পড়েছে, শরীরটা কেমন ম্যাজম্যাজ করছিল আর হাল্কা জ্বর জ্বর লাগছিল বলে তাড়াতাড়ি কখন ঘুমিয়ে পরেছে ৷ কখন যে ঘুমিয়ে পড়েছে ওর নিজের মনে নেই ৷
সকাল প্রায় দশটা , ঘড়িতে কটা বাজে তার খেয়াল আরিশের নেই , জ্বরের ঘোরটা যেন ক্রমশ বেড়েই চলেছে , ঔষধ খেলে হয়তো কোমতো বাট দরজাটা ভেতর থেকে লক করা সেই কারণে বাইরে থেকে দরজা খুলে কেউ রুমের ভিতরে প্রবেশ করতে পারবে না,আর চাইলেও আরিশের জ্বরের খবর জানতে পারবে না ৷
চিরচেনা ফোনের রিংটোনটা হালকা হালকা আরিশের কানে ভেসে আসছে, জ্বরের ঘোরে সবকিছুই যেন কেমন অগোছালো লাগছে আরিশের কাছে, কোন রকমে পাশ ফিরে হাতরে হাতরে ফোনটা খোজার চেষ্টা করতে করতে কলটা কেটে গেল , উঠে বসবে সে ক্ষমতাটুকু পাচ্ছে না ৷ শরীরের তাপমাত্রা অনেক৷
ফোনটা কেটে যেতেই আরিস আবার পুনরায় বিরক্ত হয়ে বালিশে মাথাটা রাখতে গেলেই
আবার ফোনটা বেজে উঠলো ৷ এবার যেন ফোনের আওয়াজ টা আগের তুলনায় আরো বেশি কানে এসে পৌঁচ্ছাছে ৷ ছোট ছোট চোখ করে চারিদিকে খুঁজে খুঁজতে দেখলো, ফোনটা ব্ল্যাংকেটের এক কোনাতে খানিকটা চাপা পড়ে গেছে ৷ আরিশ ঢুলুঢুলু চোখে ফোনটা হাতে নিতেই দেখল তাতে সানশাইন বলে নামটা ভেসে উঠছে ৷ আরু কল দিয়েছে দেখে আরিশের মুখে হাসি ফুটে উঠল ৷ ক্লান্তি মাখা কন্ঠে বলল,,,,,
__” ঘুম হয়েছে আরুপাখি?”
অপর পাশ থেকে আরু দৃঢ় কণ্ঠে বলে উঠলো
__” আপনি এখন কোথায়?”
আরিশ আরুর এরকম কণ্ঠস্বর শুনে খানিকটা ভ্রু কুঁচকে বললো
__” কেন আরুপাখির কিছু হয়েছে?”
আরুশি আগের তুলনায় আরো রেগে গিয়ে বলল
__” যা বলেছি তার সোজাসুজি উত্তর দিন ৷ ধানমন্ডির বাসায় নাকি উত্তরার বাসায় , কোনটা?”
আরিশ খানিকটা থতমত হয়ে বলল
__” কি হয়েছে তোমার সেটা তো বলবে !”
আরু এবার গলা ছেড়ে জোরে চেচিয়ে বলল
__” যেটা বলি সেটা শুনতে পান না ? জিজ্ঞাসা করেছি যে আপনি কোন বাসায়?”
আরিশ বুঝতে পারল যে কোনো কারণে আরুর মেজাজটা বিগড়ে গেছে আর সকাল সকাল আর মেজাজটা বিগড়ে দিতে চায় না তাই এক নিমেষেই বলে ফেলল
__” আমি ধানমন্ডির বাসায় নেই কালকে রাতে উত্তরার বাসায় এসেছি ৷”
কথাটা আরুর কান অবধি পৌছাতেই আরু ঠাস করে ফোনটা কেটে দিলো ৷ অনেকক্ষণ ধরে উপাস থেকে কোনো কথা শোনা যাচ্ছে না দেখে আরিশ বলে উঠল __” ও আরুপাখি কি হয়েছে সেটা তো বল ৷
অপর পাশ থেকে কেউ কোন উত্তর দিল না দেখে আরিশ আবার বলল
__” আরু পাখি শুনতে পাচ্ছো কিছু?”
এরপরও কোন রেসপন্স না আসায় আরিশ ফোনটাকে কান থেকে সরিয়ে সামনে এনে দেখল যে আরু ফোনটা কেটে দিয়েছে ৷ হঠাৎ সকাল সকাল আরুর এমন মুড খারাপের কারন সেটা আরিশ বেশ ভালোই বুঝতে পারছে ৷ কালকে রাতে আরিশ চলে এসেছে তাই আরু রাগ করেছে ৷ মেয়েটার মন যেন ওর কাছে জলের মতো পরিষ্কার, মনের সমস্ত বর্ণমালা গুলো যেন ও পড়তে পারে ৷ঝড় আসার পূর্বাভাস পাচ্ছে আরিশ তাই আপাতত পরবর্তী প্রস্তুতির একটু না অনেকটা এনার্জির প্রয়োজন তাই ব্ল্যাংকেট টা ভালো ভাবে টেনে নিয়ে চোখ বন্ধ করতেই কিছুক্ষণের মধ্যে ওর ঘুম চলে এলো….
হঠাৎ মাথায় ঠান্ডা ঠান্ডা ভাব অনুভব করায় আরিশ চোখ দুটো খুলে সামনের দিকে তাকিয়ে আবছা একটা মানুষের ছায়ামূর্তি দেখতে পেল , বুঝতে অসুবিধা হলো না যে আরু এসেছে আর বর্তমানে ওর মাথায় জলপট্টি দিয়ে দিচ্ছে ৷
আরুশি আরীশের কপালে পুনরায় জলপট্টি দিতে গেলেই আরিশ ওর হাতটা ধরে ফেলল ৷ আরুর হাতটা ধরে হাতের তালুতে গভীরভাবে ঠোঁট ছোয়ালো ৷ আরিশ এমনটা করতেই আরু তাড়াতাড়ি করে আরিশের হাত থেকে নিজের হাতটা ছাড়িয়ে নিয়ে রাগী কন্ঠে বলল
__” এসবের কোন দরকার নেই ৷”
আরিশ আরুর হাতটা ধরে নিজের কাছে টেনে নিয়ে নিজের বুকের সাথে আরুকে মিশিয়ে নিয়ে বলল
__” সবকিছু যেমন দরকার তেমনি সকাল সকাল তোমাকে একমুঠো ভালোবাসা এনে দেবার দায়িত্বটাও আমার তাই তুমি না চাইলেও আমার কর্তব্য টা যে আমাকে পালন করতেই হবে ৷
আরু এবার রেগে গিয়ে আরিসের থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে উঠে যেতে নিলেই আরিশ পুনরায় ওর হাত ধরে ফেলল ৷
__” এভাবে পালিয়ে যাওয়া টা কি খুব দরকার আরূ পাখি?”
আরূ এবার আরিশের দিকে ছলছল চোখে তাকিয়ে বলল
__” কাল রাতেও কি ওভাবে আমাকে ফাঁকি দিয়ে চলে আসাটা আপনার কি খুব দরকার ছিল?”
আরিশ আরুর আর একটা হাত মুঠিবদ্ধ করে বিছানা থেকে নেমে দাঁড়াল তারপর আরূর সামনে দাড়িয়ে ওর অপর হাতটা মুঠিবদ্ধ করে বলল
__” আম্মুকে রাত্রেবেলা বলে আসা হয়নি যে তোমাদের বাসায় যাচ্ছি , তাছাড়া রাতবিরেতে জামাই না বলে কয়ে শ্বশুরবাড়ি চলে গেল ব্যাপারটা কেমন দেখায় না তাই কাউকে না জানিয়েই চলে এলাম ৷”
আরু ছলছল চোখে তাকিয়ে বলল,,,
__” হাতটা ছাড়ুন আমি নীচে যাবো ৷”
__” আর যদি না ছেড়ে নিজের সাথেই আটকে রাখি তখন !”
আরু ঝটকা দিয়ে আরিশের হাতটা ছাড়িয়ে চলে যেতে নিলেই আরিশ বলে উঠলো,,,,
__” তোমার কি মনে হয় না, তুমি তোমার ভালোবাসার প্রকাশ আমার কাছে সঠিক ভাবে করোনা তাই আমার কাছে ভালোবাসাটা পৌছায় না !”
কথাটা শুনতেই আরু থেমে গেল,,,বারবার আরিশের বলা এই কথাটাই ও আটকে যাই, এটাকে আরিশের ইমোশনাল ব্ল্যাকমেইল হিসেবে নেবে নাকি অভিমান হিসাবে নেবে তা আরু বূঝতে পারছে না ৷
আরূকে চুপ করে থাকতে দেখৈ আরিশ দুষ্টুমি করে বলল,,,,
__” এভাবে ইগনোর করলেম কোনদিন দেখবা তোমার জামাই আর তোমার কাছে নেই , অন্য জন তাকে নিয়ে যাবে,,,,,,চিচিং ফুফু করে নিয়ে যাবে ৷”
কথাটা শোনা মাত্রই আরুর বুকের ভিতর ধক করে উঠলো, আর যাই হোক আরিশকে কোন ক্রমেই হারাতে পারবে না ও ৷
কথাটা শুনে আরিশে কাছে ধীরপায়ে গিয়ে ফুপিয়ে কেঁদে উঠলো ও , আরিশকে শক্তকরে জড়িয়ে ধরে রেখেছে, যেনো ও আরিশকে ছাড়লেই আরিশ পালাবে ৷
__” যানেন আমি ঠিক কতটা কষ্ট পেয়েছি যখন সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখলাম আপনি নেই, আর আমি জানতাম আপনি অত ঠান্ডায় কাকভেজা হয়ে গিয়েছিলেন, আপনার নিশ্চয়ই জ্বর আসবে , আর সেই অবস্থায় আপনি বাড়ি এসেছেন হ্যাঁ ৷ আর আমিও একটা স্টুপিড, কি করে যে আমি ঘুমিয়ে পড়লাম , আমি না ঘুমালে হয়তো ঠিক সময়ে আপনার যত্ন নিতে পারতাম ৷”
কতটা বলে আরু কাঁদতে লাগলো ৷
আরিশ আরুর মুখের কাছে মুখ নিয়ে গিয়ে বলল,,,
__” কিন্ত আমি যে অন্য মুডে থাকতাম তখন…..বাট আই মিসড দা চান্স, বাট নাও ইট ইজ মাই টাইম টু সাইন, ৷”
কথাটা বলে আরুর দিকে চোখ মারলো ৷
আরু নাক টেনে বলল,,,
__” আপনি অনেক অসুস্থ, চলুন এখন ঘুমাবেন ৷”
__” বলললাম না ইট ইজ মাই টাইম টু সাইন, সো ডোন্ট ডিসটার্ব মি সানসাইন ৷”.
আরু লজ্জা পেয়ে মাথা নীচু করে নিলো ৷
______
আরিশের খাবারটা আরু রুমে এনেছে, যদিওবা আরিশ নীচে যেতে চেয়েছিলো তবে আরু যেতে দেয়নি ও অসুস্থ তাই ৷
আরু প্লেটটা হাতে নিয়ে যত্ন সহকারে আরিশকে খাইয়ে দিচ্ছে, আরিশ মাঝেমাঝে আরুর হাতে কামড়ে নিচ্ছে তবে আরু একটা টু শব্দও করছে না দেখে আরিশ বলল,,,,
__” কি এনার্জি শেষ বউ?”
আরু আরিশের দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে বলল,,,
__” মুখে কি কিছু আটকাই না, যখন তখন যা খুশি বলেন ৷”
আরিশ ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বলল,,,
__” বয়েই গেছে এসব বাধা নিষেধ মানতে, বাস্তবে তোমার আর আমার মাঝে যা হয় তা নিয়েই তো বলবো তাইনা!”
আরু শেষের খাবার টুকু আরিশের মুখে দিয়ে বলল,,,,
__” অনেক হয়েছে এবার থামুন,,,,,তাড়াতাড়ি মেডিসিনটা খান আর শুয়ে পড়ুন ৷”
আরিশ গ্লাস থেকে জল নিয়ে মেডিসিন টা খেয়ে বলল,,,,
__” গান শুনবে ?”
আরু আরিশের কন্ঠের গান শোনার কোন সুযোগই কখনো ছাড়তে চাই না তবুও আরিশ এখন অসুস্থ তাই ওর এই আবদার টূকু না হয় তোলাই থাকুক , কথাটা ভেবে আরু বললল,,,,
__” নাহ থাক অন্য কোন দিন ৷”
কথাটা বলে আরু প্লেটটা নীচে রাখতে গেলো ৷
আরিশ মুচকি হেসে বিছানা থেকে নেমে ওয়াড্রবের ওপরে থাকা গিটারটা নিল,নিয়ে ব্যালকনির ঠান্ডা মেঝেতে বসে পড়লো,,,,,আজ অনুভুতিটা একটু অন্যরকম, উষ্নতামাখা শরীর, ঠান্ডা মেঝে, শীতের দুপুরের কূয়াশা ভাঙা মৃদুমন্দ রোদ, সবটা জুড়ে বেশ একটা আবেগ কাজ করছে,,,,
গিটারের টুংটাং আওয়াজ হতেই আরু পা চালিয়ে রুমে চলে এলো, মানুষটা যখন বারন করা সত্বেও গান করছে তখন শুনতে দ্বিধা কিসের !
আরিশ গানের সুর ধরতেই আরুও আরিশের পাশে বসে গেল,,,,,
খোলা চুলগুলো মাঝেমাঝে হাওয়াতে উড়ছে, ওড়নাটা মেঝেতে লুটোপুটি খাচ্ছে,আর আরু হাটুতে মুখ গুজে অন্যদিকে তাকিয়ে আছে, হোকনা আজ ওর অনুভূতিটাও অন্যরকম !
__” আমি একলা হলেই বুঝতে পারি ভালোবাসি কতো,
একটা তুমি আছো বলেই
ভালো আছি এতো ৷
এই জীবনের কেউ তো আর হয়না তোমার মতো
একটা তুমি আছো বলে ভালো আছি এতো ৷”
গানের প্রতিটা লাইনের সাথে আরিশ সুর বাধছে আর আরুর দিকে তাকিয়ে আছে , মেয়েটা যে ওর অনন্যময়ী , ওর আসক্তি ,ওর নেশাতেই আসক্ত ৷
#চলবে,,,,,,