#তোমার নেশায় আসক্ত
#সিজন:2
#পর্ব:36
#Suraiya Aayat
আমি আপনাকে অনেক ভালোবাসি নিজের থেকে অনেকটা বেশি হয়তো আমি বুঝাতে ব্যর্থ তবুও কখনো আমার ব্যর্থতার খাতিরে নিজেকে আমার থেকে দূরে সরিয়ে নেবেন না ৷
আরিস একই অবস্থা থেকে বললো
একবার যখন নিজের জীবনের সাথে তোমাকে বেঁধেছি তখন ছাড়ার কোন প্রশ্নই আসে না আরুপাখি৷ ভালোবাসাটা একজন্মের নয় বরং 7 জন্মের , তাই তুমি এই সমস্ত কথা আর কখনো মুখে আনবে না আরুপাখি ৷
আরু ছলোছলো চোখে আরিশের দিকে তাকাল, ছেলেটার মুখে একরাশ উৎফুল্লতার ছাপ , কতই না ভালবাসে আরুকে ৷
আরূ আরিশের এর হাত থেকে ফুলগুলো নিয়ে আরিশকে হাত ধরে দাড় করালো ৷
আরু আরিশের চোখের দিকে তাকিয়ে আছে , আরূর প্রতি আরিশের এক. অন্যরকম নেশা কাজ করছে, আর আরুর ও , তবুও নেশার থেকে এখন লজ্জাটা বেশি প্রকাশ পাচ্ছে সামনে থাকা লোকটার জন্য ৷ ওদের এই সমস্ত মুহূর্তগুলো লোকটা হয়তো সরাসরি না দেখলেও আড়চোখে তাকিয়ে দেখেছে সেটা আরূ বেশ ভালোই লক্ষ্য করেছে ৷ আরূ একটু গলা পরিষ্কার বলল,,,,,
এহেম এহেম, এত রাত্রে আঙকেলটা এখানে কি করছে?
আরিশ মুচকি হেসে ওর হাত ধরে লোকটার কাছে যেতে লাগল ৷ আরু দেখছে লোকটার হাতে একটা ট্রে জাতীয় কোনো বস্তু আর তাতে খাবার আছে ৷ সমস্ত কিছুটা যে আরিশ নিজে হাতেই ভালোভাবেই ব্যবস্থা করেছে সেটা আর বলতে কোন বাধা রাখেনা ৷
আরিশের কিছু কাজকর্ম দেখে আরূ মাঝে মাঝে খুব অবাক হয় তবে তা ওর বেশ ভালই লাগে , মাঝে মাঝে হঠাৎ করে এমন কয়েকটা সারপ্রাইজ হলে বেশ মন্দ হয় না , নিমিষেই মনটা ভালো হয়ে যায় ৷
আরিশ ধীরপায়ে হেটে ওনার কাছে গিয়ে বলল,,,,
__” আসসালামু ওয়ালাইকুম আঙ্কেল ৷”
লোকটি মুচকি হেসে আরিশের সালামের উত্তর দিয়ে বলল
__” ওয়ালাইকুম আসসালাম বাবা ৷”
আরিশ লোকটির দিকে মায়া ভরা দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল
__” আঙ্কেল এটা আপনার বৌমা, চিনেছেন নিশ্চয়ই!”
লোকটা আরুর দিকে মুচকি হেসে বলল
__” ওকে আমি কি করে ভুলি বলো, ওকে তো সেই ছোটবেলা থেকে আমি চিনি ৷”
আরূ এসব কথা শুনে মুচকি হেসে আরিশের দিকে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে ৷ আরিশের চোখে ওর প্রশ্নের উত্তরটা দৃশ্যমান তবুও ব্যাপারটাতে এখন অবাক না হয়ে সমস্তটা আরিশের কাছ থেকে শুনতে চাই আর তাই জন্য মুচকি হেসে বলল
__” কেমন আছেন আঙ্কেল?”
__” আলহামদুলিল্লাহ ভালো মা, তোমার হাজব্যান্ড তোমাকে খুব ভালোবাসে, আলহামদুলিল্লাহ ভবিষ্যতে সুখী হও ৷ তোমাদের জন্য দোয়া রইল অনেক ৷”
আরু মুচকি হেসে বলল
ধন্যবাদ আঙ্কেল ৷
লোকটা এবার ওনার হাতে থাকা খাবারের ট্রে টা আরুর হাতে ধরিয়ে দিয়ে বলল
__” তোমাদের কি আর বেশীক্ষন ডিস্টার্ব করবো না, আমি এখন আসি কেমন ! ভালো থেকো ৷”
কথাটা বলে লোকটা চলে গেল ৷
লোকটা চলে যেতেই আরু ওর হাতে টাকা ট্রে টা ধরে আরিসের দিকে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল ___”কাইন্ডলি যদি এই এতোবড়ো সারপ্রাইজ এর কার্যকলাপ টাকে এক্সপ্লেইন করেন তাহলে আপনার সানসাইনের কাছে সবকিছুই জলের মত পরিষ্কার হয়ে যায় আরকি ৷”
আরিশ মুচকি হেসে ওর ভিজে ঠাণ্ডা হাতটা আরুর নাকে আলতো করে স্পর্শ করে বলল
__” তুমি তো চটপটি খেতে খুব ভালোবাসে তাইনা?”
আরূ একটু থেমে বলল
__” হ্যাঁ ভালোবাসি তারপর !”
আরিশ এবার আরূর হাতটা ধরে হাঁটতে হাঁটতে বিচের ধারে থাকা গাছের গুড়ির কাছে নিয়ে গিয়ে সেখানে আরুকে নিয়ে বসে বলল__”
মনে আছে 5 বছর আগে যখন তুমি স্কুল থেকে বাসায় আসতে তখন এই আঙ্কেল স্কুলের সামনে চটপটি বিক্রি করতো আর তুমি সেখান থেকে চটপটি খেতে রোজ ৷ তারপর হঠাৎ মামাটা আসা বন্ধ করে দেয় , আর তুমি রোজ অপেক্ষা করতে কখন আসবে আর তুমি তার থেকে চটপটি কিনবে ৷ যখন কলেজে গিয়েছো তখনো আশা নিয়ে যেতে যে আর একবার দেখা পাবে ওই মামার কিন্তু আফসোস তুমি কখনো দেখনি আর ! দেখা পেয়েছিলে কি?”
আরু এবার অবাক হয়ে আরিশের দিকে তাকিয়ে মাথা নাড়িয়ে না সূচক জানালো যার অর্থ সত্যিই আর তারপরে আঙ্কেলটাকে ও দেখেনি ৷
জানতাম তুমি দেখনি, বাট আমি তারপর দিন থেকে আমিও মামার অনেক খোজ নিই, কিন্ত পাইনি ৷ সেদিনের পর উনি খুব অসুস্থ হয়ে পড়েন বলে চটপটি বিক্রি করা ছেড়ে দিয়েছিলেন তাই তার দেখা তুমি পাওনি ৷ আর আজকে এত বছর পর সারাটা দিন তন্ন তন্ন করে খুঁজে তাকে পেলাম , আর এসমস্ত ফানুস এর ডেকোরেশন টা সাহেল করেছে ৷
আরু আরিশের কথা শুনে অবাক , লোকটা নিজের কোন চেষ্টার ত্রুটি রাখেনা দেখে ওর চোখে জল চলে এলো ৷ ছোটছোট সব ইচ্ছা পূরন করে ৷ আরু ছলছল চোখে আরিশের দিকে তাকিয়ে আরিশের কাঁধে মাথা রাখলো ৷ ভালবাসাটা যেন সারা জীবন এমন ভাবেই থাকে ৷
গাড়িতে আসতে আসতেই আরু ঘুমিয়ে পড়েছে,,,,,
আরুর বাড়ির সামনে আরিশ গাড়িটা থামালো ৷
ওর নিজের শরীর ভিজে একাকার ,জামাকাপড়ের ভিজে ভাবটা শরীরের সাথে মিশে যাচ্ছে যাতে করে মাথাটা বেশ ধরে আসছে ৷ঠান্ডায় চোখটা জালা করছে প্রচন্ড ৷
আরুর দিকে তাকিয়ে দেখলো মেয়েটা সিটের সাথে মাথা ঠেকিয়ে শুয়ে আছে ৷আরিশ আরুকে ডাকবে বলে হাতটা আরুর দিকে বাড়িয়েও হাতটা সরিয়ে আনলো ৷
__”নাহ , এখন ডাকাটা ঠিক হবে না ৷”
আরিশ গাড়ি থেকে নেমে আরুকে কোলে তুলে নিল, আরিশ বাড়ি ফিরে যাবে,
বাড়িতে না ফিরলেই নয় সেই কারণে না হলে মেয়েটাকে ছাড়া ওর দিনরাত কেমন অসম্পূর্ণ লাগে ৷
আরিশ আরুকে কোলে নিয়ে সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠে গেল ৷আরুর জামাকাপড় খুব একটা ভেজেনি কিন্ত আরিশ সম্পূর্ণ ভিজে একাকার ৷
আরূকে বিছানায় শুইয়ে দিয়ে আরুর দিকে বেশ অনেকখন তাকিয়ে রইলো আরিশ ৷ মেয়েটাকে ছেড়ে যেতে ইচ্ছা করছে না ওর ৷ মেয়েটার ঘুমের ঘোরের কোন সুযোগ নিতে চায় না আরিশ, নিজেকে সংযত করে নিয়ে আরুর কপালে ভালবাসার পরশ এসে রুম থেকে বেরিয়ে গেল আরিশ ৷ মেয়েটার আসক্তি থেকে নিজেকে দূরে সরানোটা ওর পক্ষে খুব কষ্টকর ৷
সকালবেলা আরো হয়তো ফোন করে অনেক রাগারাগি করবে যে ওথ রাতে আরিশ কেন চলে গেল৷
আরিশের গলাটা ঠান্ডায় বসে গেছে , জ্বর যে আসবে সে সম্পর্কে ও অবগত ৷ তবে অসুস্থতার খাতিরে বউটাকে সবসময় নিজের কাছে পাবে তা নিয়ে আরিশ উত্তেজিত ৷
সকালবেলা,,,,,,
ফুপি কেমন আছো তুমি?
এইতো আলহামদুলিল্লাহ ভালো তুই কেমন আছিস?
আমিও খুব ভালো আছি ৷
তোর পড়াশোনার কেমন চলছে?
ভালোই চলছে কোনরকম ৷ শুনলাম আরিস বিয়ে করে বাড়িতে নতুন বউ এনেছে ৷
আরিশের মা হেসে বলল
বিয়েটা খুব একটা ধুমধাম করে হয়নি তো তাই তোদের জানাতে পারিনি ৷ কিন্ত তুই তো জানিস আরিশ আরূকে ঠিক কতটা ভালোবাসে , তাই বিয়েটা তাড়াতাড়ি করে ফেললো,ইর আরূ মাও জেদের বশে অনেক পাগলামো করেছে ৷
আমার কথাটা একবার ভাবতে তাহলে কি খুব ক্ষতি হতো? যদি একটু ভাবতে তাহলে ওই আরূর জায়গায় আজ আমি থাকতাম ৷
আরিসের মা একটা দীর্ঘশ্বাস নিয়ে বলল
জেরিন মা, সবসময় আমরা যা চাই তাই পাইনা ৷ আল্লাহ ওদের দুজনকে দুজনের জন্য সৃষ্টি করেছেন তাই ওরা দুজন দুজনেরই , চাইলেও জোর করে ভালোবাসা পাওয়া যায় না , তাই না সেটা নিয়ে না ভাবাই ভালো ৷
জেরিন. একটা দীর্ঘশ্বাস নিয়ে বললো
আমি আজকে বিকাল বেলা যাচ্ছি তোমাদের বাসায় , বেশ কয়েক দিন তোমাদের বাসায় থাকার ইচ্ছা আছে….
আরিশের মা একটা দীর্ঘশ্বাস নিয়ে বলল
আচ্ছা সাবধানে আসিস ৷
কথাটা বলে কলটা কেটে দিলো উনি ৷ উনি ভাবনায় মগ্ন হয়ে গেলেন যে মেয়েটা এসে আরুর সাথে আবার কোন গন্ডগোল না করে ৷ জেরিন আরুকে একদম সহ্য করতে পারে না তা উনি জানেন ৷
চলবে,,,,,,
প্রশ্ন:১.জেরিন কিভাবে আরিশের কাজিন হলো?
উঃ আমি এখানে জেরিনকে কাজিন হিসাবে এনেছি টুইস্ট হিসাবে ৷
প্রশ্ন:2.আরিশ জেরিনকে দেখে ওমন ব্যাবহার করে কেন যে চেনে না ?
উঃ আরিশ জেরিনকে পছন্দ করে না তাই ৷
প্রশ্ন:3.আরিশ আরূকে জেরিনের পরিচয় দেইনি কেনো যে ওর কাজিন ?
উঃকালকের পর্বে বলবো ৷
প্রশ্ন:4.আপনি এতো লেটে গল্প দেন কেনো?
উঃ এই কদিন খুব বিজি ছিলাম ৷