তোমার নেশায় আসক্ত ২ পর্ব-৩৩ | বাংলা ভালোবাসার গল্প

0
1596

#তোমার নেশায় আসক্ত
#সিজন:2
#part33
#Suraiya Aayat

ঘড়িতে এখন সময় দশটা আর ভার্সিটিতে যাওয়ার সময় হয়ে এসেছে ৷ হাতের ঘড়িটার দিকে একবার তাকিয়ে পুনরায় সামনের দিকের গাছগুলোর দিকে তাকালো ৷ হালকা হওয়ায় বারবার দুলছে গাছগুলো আর পাখিগুলোও বেশ আয়েশ করে বসে আছে সেখানে ৷
দশটা বাজে , মেয়েটা ভার্সিটিতে যাবে তবুও মেয়েটার দেখা নেই দেখে আরিশ এবার গলা ছেড়ে জোরে ডাক দিল
,_” আরূপাখি ৷”

_____

__” আরু পাখি কোথায় তুমি?

তৎক্ষণাৎ না হলেও কথাটা শুনে কিছুক্ষণের মধ্যেই আরূ খানিকটা ছুটে রুমের ভিতরে প্রবেশ করল ৷

. আপনি আমাকে ডেকেছেন?

আরিশ ওর দিকে তাকিয়ে খানিকটা ভ্রু কুঁচকে বললো আচ্ছা তুমি ভার্সিটিতে যাবে না?

আরোশী কিঞ্চিৎ মুখ গোমড়া করে বললো
নাহ যাব না আজকে ভালো লাগছে না ৷

আরূর কথাটা শুনে আরিশের কপালটা খানিকটা কুচকে এলো, মেয়েটা বড্ড অগোছালো আর ভার্সিটিতে বড্ড অনিয়মিত যায় তা নিয়ে আরিশের চিন্তার শেষ নেই ৷ ভার্সিটি তে কতগুলো লোক ছাড়া আর কেউ জানে না যে আরু ওর ওয়াইফ পরবর্তীতে যখন সবাই জানবে তখনও এমনটা হলে সমালোচনার আর শেষ থাকবে না ৷

আজকে আপনার ভার্সিটিতে না যাওয়ার কারনটা কি জানতে পারি?

আরু মুখ গোমড়া করে বিছানায় বসে বললো
সব দিন কি আর ভার্সিটিতে যাওয়ার মুড থাকে আপনিই বলুন!

আরিশ ওর কাছে গিয়ে ওর পাশে বসলো তারপরে ওর গলায় আলতো করে স্পর্শ করতেই আরু চমকে উঠলো ৷
আরিশ আরূকে ক্রমশ নিজের কাছে টেনে নিতেই আরূ চট করে দূরে সরে গেল ৷

আরে আমি তো ভার্সিটিতে যাবো , আমিতো মজা করছিলাম আপনার সাথে ৷ দেখুন আমি তো রেডি ও হয়েজি শুধু আপনি এখন আমাকে ড্রপ করে দিয়ে আসবেন সেই অপেক্ষাতেই তো আছি ৷
বলে দাঁত বার করে হাসতে লাগলো ৷

আরিশ আরূর নাকটাকে আলতো করে ছুয়ে দিয়ে বলল
দ্যাটস লাইক এ গুড গার্ল ৷

আরূ চলে যেতে গিয়ে আরিসের দিকে আলতো করে ঘুরে বললো
আজকাল আমাকে আপনার থেকে দূরে সরানোর জন্য বেশ ভালই পদ্ধতি অবলম্বন করছেন , তা কি ঠিক করছেন ?

আরিশ মুচকি হেসে বলল
তারমানে আমার বউটা ভালোবাসা চাই তাইতো !বলে আরূ দিকে চোখ মারল ৷

আরু আরিশের দিকে তাকিয়ে মুখ ভাঙচিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে গেল ৷

আরিশ মুচকি হেসে টেবিলের উপর থেকে গাড়ির চাবিটা রেখে ড্রয়ারের মধ্যে থেকে চাবিটা নিতেই ড্রয়ারের মধ্যে থাকা ভাঙ্গা কাচের চুড়ি গুলো চোখে পড়তেই মুখে এক চিলতে হাসি ফুটে উঠল ৷ চুড়িগুলো কে দেখে ওর সেই দিনের কথা মনে পড়ে গেল যে দিন প্রথম চুড়িগুলো কিনে আরূ সারা রা বাড়িময় আনন্দে ছুটছিলো, তখন পড়ে গিয়ে চুড়িগুলো ভেঙে গিয়েছিল আর খানিকটা ওর হাতে গেথে গিয়েছিলো তার জন্য বেশ গলগল করে রক্ত বেরিয়েছিল অনেকক্ষণ ৷ আরিস লুকিয়ে দেখেছিল সবটা তবে ভেঙে যাওয়া চুড়িগুলোর প্রতি আরূর ভালোবাসা থাকলেও তা দেখানোর সুযোগ তখন পায়নি তার আগেই ওর আম্মু ওকে হাত ব্যান্ডেজ করে দেওয়ার জন্য সেখান থেকে নিয়ে গিয়েছিল ৷ আরিশ একবার চুড়ি গুলোর দিকে তাকিয়ে দেখলো ৷

আরিশ চুড়িলোকে কুড়িয়ে নিয়ে নিজের কাছে রেখে দিয়েছিল ৷ আজো সেই চুড়ি ওর কাছে একইভাবে রয়েছে যত্ন সহকারে ৷ প্রিয় মানুষের শখের জিনিস টাকে যত্ন করে তুলে রেখেছে যাতে পরে কখনো একসময় সেগুলো দেখিয়ে পুরনো স্মৃতিগুলো সমস্ত টা মনে করাতে পারে ৷

মুচকি হেসে গাড়ির চাবিটা নিয়ে আরিশ বেরিয়ে গেল ৷ আজকে অফিসে যাবে ৷ ভার্সিটি তে জয়েন হওয়ার কথাটা এখনো জানায়নি আরুকে, ওটা বলে আরুকে সারপ্রাইজ দিতে চাই ও ৷

💔

ভার্সিটির সামনে আরিশ গাড়িটা থামালো ৷

আরিশ লক্ষ্য করছে আরূ গাড়ী থেকে নামছে না অথচ বেশ কিছুক্ষণ ধরে ওর দিকে কাচুমাচু করে তাকিয়ে আছে , আর ওর মুখের এমন করুণ অবস্থা দেখে আরিশ বলে উঠল
কাহিনী কি?

আরু একবার ধীমে কন্ঠে বলল
আমার একটা কথা বলবো কিছু মনে করবেন না তো?

আমি আবার কী মনে করবো আরূপাখি , তোমার যা মন চায় তাই বলো ৷

আসলে আমি আমার বাড়িতে যাব আজ ৷

আরিশ এবার খানিকটা মজা করেই বললো
ও শ্বশুর বাড়িতে যাবে সে তো খুব ভালো কথা আমিও তো চাই যে তুমি ভার্সিটি শেষ করে আমার সাথে আবার আমার বাসায় চলো ৷

ওহ সবসময় এভাবে মজা করেন কেন বলুন তো আমি আমার নিজের বাসায় যেতে চাই ৷

আমিতো তোমাকে সেই কথাই বলছি ৷

আরু এবার খানিকটা কাঁদো কাঁদো হয়ে বলল
আপনি আমাকে যেতে দেবেন না তাইতো?

আরিশ এবার আরূকে জড়িয়ে ধরে বলল
আমি কি সে কথা একবারও বলেছি আরূপাখি , যে তুমি সেখানে যেওনা ৷

উঁহু সেটা হচ্ছে না আপনিও আমার সাথে যাবেন দ্যাটস ফাইনাল ৷

আমি তো আজকে যেতে পারব না আরুপাখি ৷

কেন যেতে পারবেন না?

আমার একটু কাজ আছে সেই কারণে ৷

আরুশি রেগে গিয়ে গাড়ি থেকে নেমে আরিসের দিকে তাকিয়ে মুখ ভাঙচিয়ে বলল
হ্যাঁ হ্যাঁ জানি আপনার তো আবার অনেক কাজ কি না সবই জানা আছে আমার ৷ যাবেন হয়তো আপনার প্রেমিকার সাথে দেখা করতে, আমি বাড়ি নেই তাই না সেই সুযোগে ভালোই চলবে সব ৷

আরিশ আরূর দিকে চোখ মেরে বললো
এত কড়া কড়া সত্যি কথাগুলো তুমি এত সহজে কিভাবে বুঝে যাও বলোতো?

আরূ এবার রেগে ভার্সিটির ভিতর ঢুকে গেল ৷

ওদের দুজনের কান্ড দূর থেকে দেখতে জেরিন,মনে রয়েছে একরাশ বিরক্তি আর প্রবল হিংস্রতা আরিশকে পাওয়ার ৷

আরু ক্লাসরুমে বসে আছে ওর পাশে জেরিন গিয়ে বসতেই আরু বলে উঠলো
তোমাকে তো ঠিক চিনলাম না!

আমাকে না চেনারই কথা কারণ আমি তোমার সিনিয়ার আমি আরিশদের ব্যাচের ৷

একটা অচেনা মেয়ের মুখ থেকে আরিসের নামটা শুনে আরু রেগে গেল ৷ আর যতই হোক অন্য কোন মেয়ের মুখ থেকে নিজের জামাইয়ের নামটাও কখনো শুনতে চায় না ও , এতে ওর বড্ড হিংসা হয় ৷

আরু এবার খানিকটা চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে বলল
ওহ, তা বেশ , আপনি কি আমাকে কিছু বললেন?

জেরিন মুচকি হেসে বললো
সেরকম কিছুই না তোমার সাথে একটু পরিচিত হতে এলাম আর কি !

হঠাৎ করে অচেনা একটা মেয়ে ওর সাথে পরিচিত হতে চাইছে ব্যাপারটা যেন আর ঠিক হজম হচ্ছে না , মেয়েটার যে নিশ্চয়ই কোনো মতলব আছে সেটাও বেশ ভালই বুঝতে পারছে তাই না পেরে আরু বললো

ভার্সিটিতে এত মেয়ে থাকতে আমার সাথে পরিচয় হতে এসেছেন কাহিনী কি বলেন তো !

আরূর কথা শুনে জেরিন ঘোবড়ালো না বেশ কনফিডেন্সের সাথে উত্তর দিলো
আমি জানি তুমি আরিশের ওয়াইফ সেই জন্যই তোমার সাথে পরিচিত হতে আসছি, পুরো ভার্সিটির ক্রাশবয় যে তার ওয়াইফ তুমি তাই তোমার ব্যাপারে জানার কৌতূহল টা বড়োই ৷

আরু এবার চোখ দুটো ছোট ছোট করে বলল
ওহ

আরু এর পরে বলল যে ওর বাসা কোথায় ওর নাম কি এসব কথা ৷ কথায় কথায় জেরিন বলে উঠলো

আরিশ তোমাকে এত ভালো কেন বাসে তার কারণটা কি জানো ?

আরু ভ্রু কুঁচকে বললো
ভালোবাসার জন্য কোন কারণ হয় নাকি আগে তো জানতাম না !

জেরিন এবার একটা রহস্যময় হাসি দিয়ে বলল
কোন কিছু কোন কারণ ছাড়া ঘটে না আরু আর সেটা যদি তুমি বুঝতে ! সো স্যাড ৷
বলে চলে গেল ৷

জেরিনের কথার আগামাথা কিছুই বুঝলা না ও তবে একটা জিনিস ভেবেই ওর রাগ হচ্ছে যে মেয়েটা আরিশের ব্যাপারে অনেক কিছুই জানে ৷ আর ওর জামাইয়ের ব্যাপরে একটা অন্য মেয়ে কেন এত কিছু জানবে সেই বিষয় নিয়ে ওর মনে একরাশ রাগ এর সৃষ্টি হয়েছে ৷

গাড়িটা আপন গতিতে চলছে আর গাড়িতে বসে আছি আরিসা আর আরূ ৷আরিশ গাড়ি চালাচ্ছে তবে মাঝে মাঝে আরুর দিকে তাকাচ্ছে আর দেখছে যে আরু বেশ চুপচাপ আর একটু অন্যমনস্ক হয়ে আছে৷ ব্যাপারটা আরিশের কাছে বড্ড সংকোচজনক পধ

এনি প্রবলেম আরুপাখি ?

আরিসের কথা শুনে আরূ এবার নিজের রাগটাকে প্রকাশ করার জন্য বলে উঠলো
জেরিন কে?

আরিশের থেকে জেরিন নামটা শুনে মুচকি একটা হাসি দিলো আর সেই হাসি দেখে আরুর গা পিত্তি জ্বলে যাচ্ছে ৷

আরু রেগে বলল
একটা মেয়ের নাম নিয়েছি তাই এত খুশি খুশি হয়ে হাসার কারণটা ঠিক বুঝলাম না যদি একটু বুঝিয়ে বলেন ৷

আরিশ নিজের হাসিটাকে ক্রমশ কন্ট্রোল করে আনার চেষ্টা করে বলল
বিগত পাঁচ বছর ধরে জেরিন আমার উপর ক্রাশ খায় তারপর,,,

আরু আর কিছু শোনার প্রয়োজন বোধ করলো না, আরিশকে থামিয়ে দিয়ে বলল
এর বেশি আর কিছু শুনতে চাই না এখানেই আপনি কথাটাকে থামালে ভালো হয় ৷
বলে আরিশের থেকে মুখ ফিরিয়ে জানলা দিয়ে বাইরের দিকে তাকালো ৷

চলবে

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে