তোমার নেশায় আসক্ত ২ পর্ব-৩১

0
1600

#তোমার_নেশায়_আসক্ত
#সিজন:2
#পর্ব:31
#Suraiya_Aayat

হঠাৎ আরিশের ফোনে ফোন আসতেই আরিশ ওর ফোনটা ধরল ৷ এতক্ষণ ধরে ও ঘুমাইনি , আরূ ঘুমিয়ে পড়েছে তবে ও ক্রমাগত আরুশির মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে আর আরুর দিকে এক নজরে তাকিয়ে আছে , হঠাৎ করে ফোনের রিং টা বেজে ওঠতেই মনোযোগে কিছুটা হলেও ব্যাঘাত ঘটলো ৷

ফোনটা হাতে নিতেই দেখল প্রিন্সিপালের নামটা ভেসে উঠছে ৷ উনার থেকে হঠাৎ কলটা আসছে দেখেই আরিশের ভ্রু জোড়া কুঁচকে এল……
কোনরকম আর কোন দ্বিধা না রেখে নরম সুরে হ্যালো বলতেই ওপাশ থেকে প্রিন্সিপাল খানিকটা দৃঢ় কণ্ঠে বলে উঠলেন

__” তোমার নামে একটা ভার্সিটিতে নোটিশ এসেছে ৷”

আরিশ খানিকটা থতমত খেয়ে বললো
__” কোথা থেকে ?”

__”নিউইয়র্কে র কলম্বিয়া ইউনিভার্সিটি থেকে ৷ ওখানে তোমার চান্স হয়েছে রিসার্চ এ জন্য , যা তুমি এতদিন ধরে চেয়ে এসেছো ৷”

কথাটা শুনে আরিস এর খুশি হওয়া উচিত নাকি চুপ করে থাকা উচিত সেটা ও বুঝতে পারছে না ৷ ছোটবেলা থেকেই ওর ইচ্ছা কলম্বিয়া ইউনিভার্সিটি তে পড়াশোনা করার , সেইজন্যই এতোদিন ধরে এতো খাটাখাটনি করে পড়াশুনা করে এসেছে কিন্তু এই মুহূর্তে সবথেকে অবাক হল প্রিন্সিপালের বলা কথা শুনে , উনার কথা অনুযায়ী নোটিশটা ইউনিভার্সিটি থেকে মেইল করে এসেছে সেখানে এডমিশন নেওয়ার জন্য কিন্তু এডমিশন এর কোন ফর্মই আরিশ ফিল আপ করেনি , তাহলে সেখান থেকে কিভাবে কোন নোটিশ আসতে পারে আর প্রিন্সিপালের এমন কথা বলার কারণটা আরিশ বুঝতে পারছে না ৷

আরিশ একটু কিন্তু কিন্তু নিয়ে বলল
__” কিন্তু স্যার আমি যে সেখানে অ্যাপ্লিকেশন করিনি যে আমি সেখানে পড়ার জন্য সিলেক্টেড হবো ৷”

উনি খানিকটা মুচকি হাসলেন , আরিসের কথাটা বিশ্বাস করতে উনার কষ্ট হচ্ছে যেনো,আর এটাই স্বাভাবিক আরিশের এর মত একটা স্টুডেন্টের সেখানে এপ্লাই করা উচিত কিন্তু আরিস এর কথাগুলো উনার কাছে এখন মিথ্যা বলে মনে হচ্ছে ৷

উনি খানিকটা তাচ্ছিল্যের স্বরে হেসে বলল
__” তোমার তো এটাই ইচ্ছা ছির আরিশ যে তুমি ওখানেই পড়বে ৷ আর তাছাড়া তুমি কোথায় পড়বে না পড়বে সেটা তোমার একান্তই ব্যক্তিগত ব্যাপার আমরা তাতে কখনো হস্তক্ষেপ করতে পারি না তবে এভাবে প্রিন্সিপালের সাথে মিথ্যা কথা বলাটা ব্যাপারটা একটু কেমন না আরিশ !”

প্রিন্সিপালের কথাটা শুনে আরিশ একদফা শিঁউরে উঠলো ৷ প্রিন্সিপালের সাথে এতদিনে আরিশের যা সম্পর্ক তাতে উনি কখনো আরিশের সঙ্গে এই ধরনের ভঙ্গিতে কথা বলেননি , ওর কথাটা যে প্রফেসর বিশ্বাস করছেন না এটা আরীশ ভালোই বুঝতে পারছে, হয়তো আজ এই প্রথমবারের মথো উনি আরিশকে অবিশ্বাস করলেন ৷ আর সেই কারনেই আরিশের বেশি বেশি খারাপ লাগা কাজ করছে ৷

ইরিশ এবার একটু থতমত খেয়ে বললো
__” স্যার বিলিভ মি আমি এপলাই করিনি যে আমি সেখানকার জন্য সিলেক্টেড ৷ আর আমি তো দেশের বাইরে কোথাও যাব না সেটা এক বছর আগেই ঠিক করে নিয়েছিলাম হয়তো সেটা আপনাদের জানাইনি ৷”

প্রিন্সিপাল এবার একটু বেশ নরম সুরেই বললো ,,” তাহলে তুমি কি চাও আরিশ !”

__” স্যার আপনি তো আমার পার্সোনাল ব্যাপার নিয়ে সবই জানেন , আপনি তো এটাও জানতেন যে আমার ওয়াইফ আরুশিকে আমি কতটা ভালোবাসি , সবকিছুই আপনাকে শেয়ার করেছি নিজের কাছের মানুষ ভেবে, তাছাড়া আমি নিজের বাড়ি থেকে ধানমন্ডিতে আলাদা থাকি প্রায় 5 থেকে 6 বছর হতে চলল, এতদিন পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন তা নিয়ে আম্মু অনেক মন খারাপ করে আর এখন আমার নিজের ওয়াইফ আছে একটা ফ্যামিলি গড়ে উঠেছে সেই কারণেই আমি ভেবেছিলাম ধানমন্ডি থেকে শিফট হয়ে উত্তরার বাসাতে সবার সাথে থাকবো ৷ আর একথাটা তো আপনার কাছে অজানা নয় আর আপনি তো এটাও জানেন যে আমি NSU তে প্রফেসরি করার সিদ্ধান্তটা আপনাকে অনেক আগেই জানিয়েছিলাম , তবে আজকে আপনি অবিশ্বাসের কন্ঠ নিয়ে আমার দিকে প্রশ্নটা ছুড়ে দিলেন তা নিয়ে খানিকটা হলেও আফসোস হচ্ছে যে এতদিনেও আপনাদের বিশ্বাস গড়ে তুলতে পারলাম না ৷”

প্রফেসর খানিকটা আবেগী হয়ে বললেন
__” তেমনটা নয় আরিশ ৷ তুমি তো জানো আমি তোমাকে কতটা ভালোবাসি , নিজের ছেলের মতোই স্নেহ করি , তোমার থেকে অবশ্যই নিজের মনের মত কিছুই আশা করি আমি ৷ তুমি কলম্বিয়া ইউনিভার্সিটি তে রিসার্চ করো তা নিয়ে আমার কোন সমস্যা নেই তবে খারাপ লাগলো এটাতেই যে তুমি আমাকে জানাও নি , এটা ভেবে খানিকটা হলে আমি কষ্ট পেয়েছি ৷ আমি নিজেও চাই যে তুমি দেশে থেকে আমাদের ইউনিভার্সিটিতে প্রফেসরি করো ৷ আর NSU তে যদি তোমার ভালো না লাগে তাহলে না হয় পরে ফরেন কান্ট্রি তে চলে যেও আমি আটকাবো না , আর তোমার iq যা তাতে কোন সমস্যাও হওয়ার কথা না কোথাও এডমিশন নিতে ৷ আর যা করবে তা একান্তই তোমার নিজের চয়েজ, যদিও বা একজন প্লফেসর হয়ে তোমাকে এটা বলা আমার সাজে না যে ভালো কিছু ছেড়ে তুমি এটাকে বেছে নাও, তবুও আমাকে এটুকু স্বার্থপর হতে হচ্ছে কারন আমি যে তোমাকে এদেশে থেকে দেশের ভালো কিছু করার জন্য দেখতে চাই ৷”

আরিশ মুচকি হেসে বলল
__” আমার দেশকে আমি ভালোবাসি তাই আমি চাইব নিজের দেশে থেকে নিজের দেশকে প্রতিষ্ঠিত হিসেবে রিপ্রেজেন্ট করার , তাই আমি কোথাও যাবো না sir যদিও এটা আমার কাছে একটা বিগ অপরচুনিটি টু মেক মাইসেল্ফ as a সাকসেস পারসন ৷তবুও আমি NSU তেই থাকবো ৷”

প্রিন্সিপাল একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে বললেন __” নোটিশটা আজকের মধ্যেই তোমাকে ক্যানসেল করতে হবে আরিশ নাহলে তুমি NSU তে কোয়ারিফায়েড করতে পারবে না ৷ এটা ইউনিভার্সিটির রুলস ৷”

আরিশ জানে যে এটা কোন রুলস না, প্রিন্সিপাল আরিশ কে NSU থেকে হারাতে ভয় পাচ্ছেন আর তাছাড়া ও নিজেও যখন যেতে চাইনা তাই অযথা প্রিন্সিপালকে দুশ্চিন্তার মাঝে রাখতে চাইনা তাই ও বলল
__” আমি কক্সবাজারে আছি, বাট ওকে স্যার আমি আসছি ৷”

__” এমন দিনেই এই নোটিশটা আসলো দেখা তুমি ঘুরতে গিয়ে আনন্দ করতে পারলে না ৷ তা আজকে কতদিন গেছো?”

__” একদিন sir ৷”

__” আই এম রিয়েলি সরি আরিশ ,এভাবে তোমাদের ভালো সময়টা নষ্ট করলাম ৷ একদিন ঘুরেই ফিরে আসতে হচ্ছে তোমাদের ৷”

আরিশ মুচকি হেসে বলল
__” ঘোরাঘুরি সারা জীবন থাকবে তবে জীবনের এমন কিছু গুরুত্বপূর্ণ সময় সব সময় পাওয়া যাবে না , আমি আসছি sir ৷”

কথাটা শেষে ফোনটা কেটে দিলো আরিস ৷ একটা দীর্ঘশ্বাস নিয়ে আরূর দিকে তাকালো ৷ মেয়েটার মুখের উপর চুলগুলো আছড়ে এসে পড়েছে , আরিশের মায়াবতী ৷
এই মুহূর্তে মেয়েটাকে ঘুম থেকে জায়গাতেও ইচ্ছা করছে না ওর তবুও এখন না চাইলেও যে একে জাগাতে হবে ৷
এখন যে ওদেরকে ধানমন্ডিতে ফিরতে হবে, কাজটা অত্যন্ত এমার্জেন্সি ৷

আরুর মুখের উপর পড়ে থাকা চুলগুলো খানিকটা সরিয়ে দিতেই আরু কেঁপে উঠলো খানিকটা ৷ আরিশ আরুর কানের কাছে মুখ নিয়ে গিয়ে ফিসফিস করে বলতে লাগল
__”এই যে সানশাইন আমাদের যে এখন ফিরতে হবে ৷”

আরূ আধো আধো গলায় বলল
__” সবই তো বুঝলাম ,তা এখনই কেন ফিরে যাব আমরা ! যদিও বা সূর্যমামাটা যে আজকে কেন এমন করছে জানিনা, আমি কিন্তু তাকে খুব বকা দিয়েছি আজকে এমন করার জন্য ৷ প্লিজ আপনি সূর্যিমামার উপর রাগ করবেন না ৷”
কথাটা বলে আরু আবার চোখ দুটা বন্ধ করতেই আরিশ আরূকে কোলে তুলে নিল ৷ ঘুমের মধ্যেও আরূ বুঝতে পারছে যে আরিস ওকে কোলে তুলে নিয়েছে ৷ বেশ শক্ত করে আরিশের গলাটা জড়িয়ে ধরেছে আরু ৷

আরিশ ওকে কোলে তুলে নিয়ে ব্যালকনির দিকে গেল ৷ বাইরে প্রচন্ড বৃষ্টি হচ্ছে, সমুদ্রটা যেন উত্তাল হয়ে গিয়ে প্রবল গর্জনে ফেটে পড়ে তার নিজের ক্ষোভটাকে প্রকাশ করছে এই অনাগত বৃষ্টিকে যে সে কেন এসেছে তাকৈ এভাবে উত্তাল করতে ৷ সে নিজেও হয়তো চাই না ৷”

হালকা ছিটে ফোঁটা বৃষ্টির ছাঁট আরিশ আর আরুকে আলতো করে ভিজিয়ে দিচ্ছে অল্প অল্প করে ৷ এখনো দুজনে একসঙ্গে কক্সবাজারের সী বিচে গোসল করতে পারেনি, পড়ন্ত বিকালে হালকা তপ্ত বালিতে নিজেদের পা টাকে ভেজাতে পারেনি ,এটাই হয়তো সবথেকে বড়ো আফশোষের তাই এখন না হয় এই বৃষ্টির ফোটার মাঝেই তার অপূর্ণতাটাকে পূরণ করুক ৷

আরু চোখ খুলে খানিকা মিনতির চোখে আরিশের দিকে বলল
__” আপনি আমাকে এভাবে ভিজিয়ে দিচ্ছেন!”

আরিশ আরূকে কোল থেকে নামিয়ে দিয়ে নেশাগ্রস্ত চাহনিতে আরূর গলায় নিজের হাত দিয়ে
আলতো করে আরূকে নিজের কাছে টেনে এনে নিজের ঠোঁটদুটো দিয়ে আরুশির ঠোঁট দুটোকে আলতো করে স্পর্শ করে আরিশ সরে এলো , মুখটা খানিকটা কাচুমাচু করে বলল
__” আগের মতো স্বাদটা পেলাম না আরুপাখি ৷”

আরুশি আরিশের এমন কান্ডে যেনো ও নিজেও হতবাক ৷ আরিশের দিকে খানিকটা অবাক চোখে তাকিয়ে আছে আরু ৷

আরিশ পুনরায় আরূর ঠোঁট জোড়া দখল করে নিল আর বেশ কিছুক্ষণ পর ছেড়ে দিয়ে ওর বৃদ্ধাঙ্গুল দিয়ে আরূর ঠোঁটটাকে আলতো করে মুছে দিয়ে বলল
__” এবার স্বাদটা পেলাম আরূপাখি ৷”

কথাটা বলে আরূকে বুকে জড়িয়ে নিল আরিশ ৷

আরু ছলছল চোখে আরিশের দিকে তাকিয়ে বলল
__” আমরা সত্তিই অমরা এখন ফিরে যাবো !”

__” হমমম আরুপাখি, দরকারি কাজে এখনই ফিরতে হবে বাট আমরা আবার আসবো ৷”

__” হুমমম ৷”
কথাটা বলে আরিশের বুকে মুখ মাথা রাখলো ৷

💓

ওরা ফিরে যাচ্ছে ৷ আরু হোটেল থেকে বেরিয়ে সিএনজি তে বসে আছে, বৃষ্টির মাত্রাটা কমলেও পুরোপুরি থামেনি ৷
আরুশি হোটেল থেকে বেরোবার সময় হোটেলের ফরমালিটি অনুযায়ী আগের সেই মেয়েটা যখন আরুকে আসতে বলল আরু তখন শুধু মেয়েটার দিকে একপলক তাকিয়ে সামনে হেঁটে গেল , কিছু বলল না ,মনটা ওর ভালো নেই, মন ভালো থাকলে হয়তো মেয়েটাকে কয়েকটা কথা শুনিয়ে দিতো ৷
মেয়েটাও অবাক হয়নি তা নয় , সেও বেশ ভালোই অবাক হয়েছে আরুর কাজে ৷

রুমের চাবিটা বেডের টেবিলের ওপরে রাখতেই আয়নার দিকে আরিশের চোখ পড়লো, তাতে গলায় আচড়ের দাগটা স্পষ্ট ৷ কালকে রাতে আরুশিই ভালোবেসে দিয়েছে, কথাটা ভাবতেই আরিশ মুচকি হাসলো ৷
রূম থেকে বেরোনোর আগে একটু থেমে গিয়ে রূমটাই আর এক পলক তাকিয়ে একটা ডেভিল smile দিয়ে নিজের মনে বলতে লাগল
__” Welcome to Arish khan’s battel ground 😈”

চলবে,,,,

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে