#তোমার_নেশায়_আসক্ত
#সিজন:2
#পর্ব:28
#Suraiya_Aayat
আরিশ আর আরূ কক্সবাজারে ফ্লাইট থেকে নেমে এয়ারপোর্টের বাইরে লাগেজ নিয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে ৷ যে হোটেলে আরিশ বুক করেছে সেই রিসোর্ট থেকেই গাড়ি এসে ওদের কে নিয়ে যাবে ৷ আরূ ইতিমধ্যে অনেকটাই ক্লান্ত, শরীরটা কেমন ম্যাজম্যাজ করছে তার ওপরে ঘুম ঘুমও পাচ্ছে খুব ৷ সারাটা ফ্লাইট ঘুমিয়ে কাটিয়েছি আরূ আরিশের কাঁধে মাথা রেখে ৷
প্রায় 10 মিনিট হয়ে গেল কিন্তু রিসোর্ট থেকে কোন গাড়ি পাঠালোনা আর আরূ তাতে রীতিমতো বিরক্ত ৷
আরিশ আরুর মুখের দিকে তাকালো, তাতে বিরক্তিতার ছাপ স্পষ্ট ৷ আরিশ আরুকে উদ্দেশ্য করে বলল,,,,,
__” বিরক্ত হচ্ছ তাই না? আমি যতদূর জানি আমার বউটার টাইম জ্ঞান সম্বন্ধে সঠিক ধারণা আছে তাই এটুকু বিরক্ত হওয়া তার ক্ষেত্রে জায়েজ ৷”
আরু মুখে এক চিলতে হাসি নিয়ে আরিশের ধরে হাতটা আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বলল,,,,
__” কিছুটা বিরক্ত হচ্ছি তবে আপনার উপস্থিতিতে তা জানান দিচ্ছে না , বেশ ভালই লাগছে ৷”
আরিশ আরূর কথার বিপরীতে পাল্টা মুচকি হাসি দিলো ৷ আর বেশিক্ষণ ওদেরকে দাঁড়াতে হলো না, কিছুক্ষণের মধ্যেই রিসোর্ট থেকে একটা সিএনজি পাঠিয়ে দিয়েছে ৷
ওরা যাবে ” মারমেইড ইকো রিসোর্ট ” ৷আরিশ আগে থেকেই রিসোর্টের একটা স্পেশাল রুম বুক করে রেখেছে ওদের জন্য ৷
ওখানে আশফি আর ওর বউ ও আছে ওই রিসোর্টে, অবশ্য আরিশ ই ওদের জন্য রিসোর্ট এর ব্যবস্থা করে দিয়েছে ৷ সেখানে গিয়ে আশফি আর আশফির বউকে দেখে আরুর মুখের রিয়াকশন টা কেমন হবে সেটা ভাবলেই পেট ফেটে হাসি বের হয়ে আসছে আরিশের তবুও এই মুহূর্তে নিজেকে কন্ট্রোল করে রেখেছে, পরে মজা নেবে ব্যাপারটা নিয়ে ৷
তবে আরূ এখনো জানে না যে আসফি আরিশের কথা মত সমস্ত কাজ করেছে, যখন সেটা জানবে তখন যে আরিশ এর অবস্থা বেহাল হবে সেটা আরিশ জানে আর তার জন্য ও সম্পূর্ণ প্রস্তুত ৷না হয় খেলো বউ এর কাছে খানিকটা বকা ৷
এয়ারপোর্ট থেকে প্রায় 45 মিনিটে সিএনজি করে আসার পর ওরা রিসোর্টে পৌঁছে গেল ৷
আরূ রিসোর্টের চারিপাশটা ভালোভাবে তাকিয়ে দেখতেই খুব অবাক হয়ে গেল , রিসোর্টটা একদম প্রকৃতির মাঝখানে, চারিদিকে গাছপালায় পরিপূর্ণ আর সমুদ্রের ঢেউ এর আওয়াজ কানে ভেসে আসছে , পাখিদের কিচিরমিচির আওয়াজ শোনা যাচ্ছে আর সবথেকে আকর্ষনীয় জিনিস হল রিসোর্টের রুম গুলো যা সম্পন্ন বাঁশের তৈরি আর বাইরে থেকে দেখতে অনেকটা আকর্ষণীয় লাগছে আরূর কাছে ৷ ভেতর থেকে সেটা ঠিক দেখতে কেমন হবে সেটা আরূর ক্ষুদ্র মস্তিষ্কের ধারণাতে চলে এসেছে , তবে এটুকু ভেবে ভাল লাগছে যে আরিশ সব সময় ওর জন্য বেস্ট জিনিসটাই করে এবং করে এসেছে এবং ভবিষ্যতেও করবে তা নিয়ে কোনো প্রশ্ন রাখে না ৷
রিসোর্টে ঢুকতেই রিসোর্টের গেটে দাঁড়িয়ে থাকা মেয়েটি ওদের অভ্যর্থনা জানানোর জন্য ফুল নিয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে , আর তাতে আরূর ভ্রু জোড়া কিঞ্চিৎ কুচকে এলো ৷ ও নিজে মেয়েটার কাছ থেকে ফুল নেবে এটা স্বাভাবিক কিন্তু মেয়েটা আরিশকে ফুল দেবে ব্যাপারটা যেন কোনোভাবেই ওর কাছে গ্রহণযোগ্য বলে মনে হচ্ছে না , আর যাই হোক মেয়েটার কাছ থেকে আরিশকে ফুল নিতে দেবে না বলেই মনে মনে ভেবে রেখেছে ৷ আরু আরিশের হাতটা ধরে সামনের দিকে এগিয়ে যেতেই মেয়েটা আরূর হাতে ফুল দিল ৷ আরূ ফুলটা নিল তবে ও
লক্ষ্য করল যে মেয়েটা ওকে ফুল দিতে গিয়ে আরিশের দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসছে ৷ আরূ আরিশের মুখের রিয়েকশান দেখার জন্য আরিশের দিকে তাকালো,মেয়েটা আরিশের দিকে তাকিয়ে আছে কি না সেদিকে অবশ্য আরিশের কোন ধ্যান জ্ঞান নেই ৷
মেয়েটা এবার আরিশকে ফুল দিতে গেলেই আরু খপ করে মেয়েটা হাত থেকে ফুল টা টেনে নিয়ে মেয়েটার দিকে তাকিয়ে বলল,,,,,
__” অন্যের জামাইয়ের হাতে ফুল দিতে খুব ভালো লাগে তাইনা ! যেই উনি একটা সুন্দর ছেলে দেখেছে সেই হাতে ফুল দিতে ইচ্ছা করছে ওনার ৷”
মেয়েটাও আরূর কথা শুনে খানিকটা থতমত খেয়ে গেল কারণ এর আগে এত জনকে ফুল দিয়েছে তবে কখনো এমন কথা শুনতে হয়নি তাকে তবে আরু যা বলেছে সেই কথাগুলো খানিকটা মেয়েটার গায়ে লেগেছে তার কারণ মেয়েটা হ্যাংলার মতো করে আরিশের দিকে তাকিয়ে ছিল ৷ সাময়িকের জন্য হলেও আরিশের উপর ক্রাশ খেয়ে ছিল মেয়েটা তবে আরুর জন্য তা নিমেষেই হজম হয়ে গেল….
আরু তৎক্ষণাৎ আরিশের হাত ধরে সামনের দিকে হাঁটা দিল, কিছুটা দূরে যেতেই আরিসে ফিক করে হেসে ফেললো, এতখন হাসিটা চেপে রেখেছিল, কারন একেই আরু মেয়েটাকে যা ডোজ দিয়েছে তার ওপর ও হাসলে মেয়েটা হয়তো লজ্জায় জবটাই ছেড়ে দিত….
আরিসকে হাসতে দেখে আরূ বলে উঠলো,,,,,
__” খুব মজা পেয়েছেন তাই না ! খুব হাসি পাচ্ছে আপনার, তাতো হবেই , একটা মেয়ে ফুল দিচ্ছে কিনা! আমার থেকে যদি অন্য কারো দিকে তাকিয়েছেন তাহলে আপনার চোখ দুটো তুলে নিয়ে আমি ফুটবল খেলবো বলে দিলাম ৷”
আরিশ অবাক হয়ে আরুর দিকে তাকিয়ে বলল,,,
__” সেই ভুলটা করি মহারানী ! আমার চোখ দুটো যে আমার কাছে বড্ড প্রিয় , এই চোখ দুটো না থাকলে তোমাকে দেখবো কি করে বলোতো !’
__” কথাটা যেন মনে থাকে ৷”
ওরা ওদের রিসোর্টের রুমের দিকে যেতে গেলেই পিছন থেকে একটা পুরুষালী কণ্ঠ পেতেই ওরা দুজন তাকিয়ে দেখল আসফি আর ওর বউ দাঁড়িয়ে রয়েছে ৷
আশফি ওদের দিকে এগিয়ে এসে আরিসের হাতে আরিশের রুমের চাবিটা দিয়ে বলল,,,
__” ভাইয়া তোমার জন্যই এতক্ষণ ওয়েট করছিলাম ৷”
আরিশ আশফীর কাঁধে হাত রেখে বলল,,,
__” তো কেমন লাগছে আসফি ! ভালো করে ঘুরছো তো?”
আসফি লাজুক চোখে তাকালো ওর বৌয়ের দিকে, তাকিয়ে বলল ,,,,,
__” হ্যাঁ ইনশাল্লাহ ভালোই ঘুরছি ভাইয়া তবে আমরা কালকেই ব্যাক করবো ৷”
__” এত তাড়াতাড়ি…”
__” হ্যাঁ ভাইয়া অফিসে চার দিনের ছুটি নিয়েছিলাম অলরেডি দুইটা দিন তো কাটিয়েই ফেললাম ৷”
__” আচ্ছা ঠিক আছে যেটা ভালো মনে করো , বাই দ্যা ওয়ে রাতে ডিনারটা একসাথে করবো ৷”
__” আচ্ছা ভাইয়া ৷”
আসফি আরুর দিকে তাকিয়ে আরূ কে উদ্দেশ্য করে বলল,,,,
__” হ্যাপি ম্যারেজ লাইফ ভাবি ৷”
আরু ভ্রূ জোড়া কুঁচকে খানিকটা বাঁকা চোখে আশফির দিকে তাকালো , তাকিয়ে বলল,,,,
__” সেম টু ইউ ৷ ”
এই প্রথম হয়ত এমন হচ্ছে যেখানে কোন মেয়ের সঙ্গে যার বিয়ে হওয়ার কথা ছিল সে তাকেই বিয়ের শুভকামনা জানাচ্ছে ৷ দেখতে হবে তো ও কার বউ , আবরার আরিশ খানের বউ , তাই নাথিং ইজ ইম্পসিবল ৷ যেকোনো সময় যেকোনো কিছু হতে পারে যেমনভাবে ওদের বিয়েটা হল , তাই এ সমস্ত ছোটখাটো চমক পাওয়ার জন্য আরূ এখন অলয়েজ রেডি ৷ অবশ্য ব্যাপারগুলোতে এখন বেশি মজা পায় কারণ এগুলো এক একটা সারপ্রাইজ এর মত লাগে ওর কাছে ৷
আরিশ আশফিকে উদ্দেশ্য করে বলল,,,,
__” অনেকক্ষণ ধরে জার্নি করে এসেছি এখন আমি রুমে যাচ্ছি ৷”
__” আচ্ছা ভাইয়া ৷”
রুমে গিয়েই আরূ ধপ করে বিছানার উপর শুয়ে পড়ল ,চোখ বন্ধ করে দিয়ে হয়তো সারা দিনের ক্লান্তি দূর করার চেষ্টা করছে ৷
আরিশ কোমরে হাত রেখে ওর দিকে তাকিয়ে বলল,,,,
__” এই যে সানশাইন তুমি এসেই এভাবে শুয়ে পড়লে যে ?”
__” আমার খুব টায়ার্ড লাগছে , প্লিজ আমি এখন একটু ঘুমাই ৷”
__” লাঞ্চ করবে না ? লাঞ্চ টাইম তো হয়েই গেল ,
আর ড্রেসটাও তো চেঞ্জ করোনি তুমি এখনো ৷”
__” প্লিজ একটু ঘুমাই ৷”
কথাটা বলে আরূ ঘুমিয়ে পড়লো ৷
আরিশ কি বলবে নিজেই কিছু বুঝতে পারছে না, মেয়েটার কথার উপরে কিছু বলতেও পারেনা ও , সব সময় আরুশি কিসে ভালো থাকে সেটাই ভাবতে চাই ও ৷ এখন যদি ক্ষনিক সময়ের জন্য ঘুমিয়ে কিছুটা ক্লান্তি দূর করতে পারে তো থাক না……
তবে খুব বেশিক্ষন আরূর ঘুম হলো না , সারাদিনের এত ক্লান্তি তারপরে এসে নাওয়া-খাওয়া কিছুই না করে ঘুমিয়ে পড়েছে তাতে কি আর লম্বা ঘুম হয় !….
পিট পিট করে চোখ দুটো খুলল আরু, খুব একটা খারাপ ঘুম হয়নি ওর ,এখন বেশ খানিকটা রিলিফ ফিল হচ্ছে ঘুম থেকে উঠে ৷ চারিপাশে তাকিয়ে দেখল সম্পূর্ণটা ঘরটা ফাঁকা পড়ে আছে তবে আরিশকে কোথাও দেখতে পাচ্ছে না আরু ৷
তাড়াতাড়ি বিছানা ছেড়ে উঠে সারা রুমটা ঘুরে ঘুরে দেখতে লাগলো আরু ৷ হঠাৎ করে চোখটা আটকে গেল ব্যালকনির দিকে , সেখান থেকে সমুদ্র দেখা যাচ্ছে তবে তাকে আড়াল করে রেখেছে বেশ কয়েকটা গুল্ম জাতীয় গাছ, তবুও তার মাঝ থেকে সমুদ্রের অনুভূতি নেওয়াটা আটকে থাকছে না কোনোভাবেই ৷
পিছন থেকে আরিশ এর কন্ঠে পেতৈই আরু ঘুরে দেখল আরিশ টাওয়ালটা দিয়ে ওর মাথায় ভিজৈ চুল গুলোকে ভাল করে মুছছে ৷
__” কি করছো আরুপাখি তুমি এখানে?”
__” আপনাকেই খুঁজছিলাম ,খুঁজতে খুঁজতে এখানে চলে আসলাম ৷ কি সুন্দর দৃশ্য তাইনা !”
__” সত্যি খুব সুন্দর তবে তুমি এখন সাওয়ার নিয়ে নাও ফ্রেশ লাগবে তারপরে আমরা লাঞ্চ করতে যাবো ৷ যদিওবা লাঞ্চ টাইম ওভার হয়ে গেছে এখন তিনটা বাজে তবুও রিসোর্টের ক্যান্টিনে কিছু না কিছু তো পেয়েই যাবো ৷”
__” আচ্ছা যাচ্ছি , বলে আরূ যেতে গেলেই আরিশ ওর হাতটা ধরে ফেলল,,,,
__” আমি নিরামিষ আরুপাখি?”
কথাটা শুনতেই আরুর চোখ গুলো বড় বড় হয়ে গেল, তাহলে আরিশ ওর কথাটা শুনতে পেয়েছে ৷ আর এই নিরামিষ শব্দের তাৎপর্য কতটা সেটা হয়তো আরিশ খুভ ভালভাবেই জানে ৷নিজের ওপর নিরামিষের এত বড় একটা তকমা আরিশ কখনোই মেনে নেবে না. ৷”
আরু খানিকটা শুকনো ঢোক গিলে আরিশের দিকে ফিরে বললো,,,,
__” এসব আবার কি কথা ! মানুষের আবার আমিষ নিরামিষ বলে আবার কিছু হয় নাকি?”
আরিশ এবার আরূর হাতটা টেনে এনে আরূর মুখের উপর পড়ে থাকা চুলগুলোকে কাধের এক সাইডে এনে ফেলে দিল , তারপরে মুখে হাত দিয়ে হাল্কা স্লাইড করতে করতে বলল,,,,
__” একোরর্ডিং টু মাই বউ আইএম নিরামিষ, অবশ্য তার এত চিন্তার কোন কারণ নেই ৷ কেমিস্ট্রির কনভারশানের মতো তার বরটাও যেকোনো সময় নিরামিষ থেকে আমিষে কনভার্ট হয়ে যেতে পারে , তবে সেই পরিস্থিতিটাকে সহ্য করার জন্য আমার বউটা তৈরি তো !”
আরুশি বোকাবোকা ফেস করে বলল,,,,
__” এসব কি কথা , আর আমি এসব মোটেও বলিনি ৷”
__” বাট আমি তো কানে শুনেছি সে তুমি যাই বলো না কেনো , তোমার এটুকু ইচ্ছা তো পূরণ করতেই পারি তাইনা !”
আরূ বুঝতে পারলো যে আরিশ এখন রোমান্সের মুডে তবে ও নিজে এখন নেই তাই আরিশ ওর কোমরটা জড়িয়ে ধরে কাছে টানতে গেলেই আরূ বলে উঠল,,, __” ওই দেখুন আশফি ৷”
আরিশ সেদিকে তাকাতেই আরু সুযোগ পেয়ে দৌড়ে ওয়াশ রুমে ঢুকে গেল ৷
আরিশ জোরে হো হো করে হাসতে হাসতে বলল,,,,
__” কতক্ষণের জন্য পালিয়ে থাকবৈ সানশাইন সেই তো আমার কাছেই ফিরে আসতে হবে ৷”
আরু ওয়াশ রুমের ভিতরে ঢুকেছে , বুকের ভিতরে ধুক ধুক করছে ৷ আরিস এখন যে এখন যেকোনো লেভেলের রোমান্টিক মুডে চলে যেতে পারে সেই ধারণাটুকু আরুর আছে ৷ এখন মনে মনে নিজেকেই বকা দিচ্ছে এই বলে যে কি দরকার ছিল আরিশকে নিরামিষ বলে মিথ্যা কথা বলার ৷ এমনিতেই আরিশ যা পাগলামো করে তাতে আরূ নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারে না আর না পারে আরিশকে বাধা দিতে তার ওপরে ও আবার আরিশকে নিরামিষ বলেছে ৷
আরিস টাওয়েলটা ঘরে রেখে একটা নেবি ব্লু কালারের শার্ট পরে নিল, সাদা রঙের ড্রেস ছাড়া অন্য রঙের ড্রেস খুব একটা পরে না তবে আরুর জোরাজুরিতে বেশ কয়েকটা কালারফুল শার্ট এনেছে….
বেশ অনেকক্ষন ধরে শাওয়ার নেয়ার পর আরূ রুমে এসে দেখল আরিস রুমে নেই , বিছানার উপর ফোনটাও রেখে গেছে , তারমানে আরিশ নিশ্চয়ই খাবার অর্ডার দিতে গেছে বা কোন দরকারে বাইরে গেছে ৷ টাওয়েলটা বিছানার উপর রেখে ফোনটা হাতে নিয়ে ব্যালকনিতে চলে গেল ৷ শাড়ি পরেছে নীল রঙের , আরিশের সাথে ম্যাচ করেই পরেছে ৷ আরু নিজে আগে শাড়ি পরতে পারতো না তবুও বিয়ের আগে নিজে শাড়ি পড়াটা শিখে নিয়েছে তার কারণ নাহলে বিয়ের পর ওকে আশফির থেকে শাড়ি পড়তে হতো ৷ এই ভাবনাটা ভেবেই তাড়াতাড়ি শিখে ফেলেছে যাতে আশফিকে শাড়ি না পরাতে হয় ৷
এখন ওর আম্মুর কাছে কল দেবে, কালকের পর থেকে একবারও কল করার সুযোগ পায়নি ও ৷ তৎক্ষণাৎ ওর আম্মুকে ফোনটা করতেই উনিও সঙগে সৄঙগে কলটা ধরলেন ৷
__” কেমন আছো আম্মু?”
আরুর মা আরুর কণ্ঠস্বর শুনেই আরো জোরে জোরে কেঁদে ফেললেন , এর আগে কখনো মেয়েটাকে এত দূরে রেখে উনি একটা দিনও পার করেন নি , সেখানে আজকে একটা দিন উনি মেয়েটাকে ছেড়ে আছেন , সারা হৃদয় জুড়ে হাহাকারের বন্যা বইছে ৷
ওর মায়ের কান্নার আওয়াজ শুনে আরূর নিজেও চোখের কোনেও জল জমে এলো ৷
__” তোকে ছাড়া কি করে ভাল থাকি বল , এর আগে কি কখনো তোকে ছাড়া থেকেছি আমি !”
আরো বেশি ইমোশনাল হওয়ার আগে আরু নিজের চোখের কোন থেকে জলটা মুছে নিয়ে খানিকটা দৄঢ কন্ঠে বলল ,,,,,,
__”একটা দিন পার হয়ে গেল নিজের মেয়েকে একটা ফোন করার প্রয়োজন বোধ করোনি আর বলছো আমকে মিস করেছো ৷”
উনিও খানিকটা আবেগ মাখা কন্ঠে বলে উঠলেন,,,,,
__” বিয়ে বাড়ির পরিবেশ , তাছাড়া নতুন একটা জায়গা নিজেকে মানিয়ে নিতে সময় লাগবে সেই জন্যই আর ফোন করিনি অপেক্ষা করেছি তোর কলের ,যে তুই ফ্রি হলে ফোন করবি ৷”
__” না চাইতেও তো তোমরা অনেক কিছুই ভেবে ফেল, আর তার পরিনামে আমাকে কষ্ট পেতে হয় ৷”
__” তুই তোর আম্মুর উপরে রাগ করেছিস মা ?”
আরু একবার জোরে কেঁদে দিয়ে বলল,,,,,
__” রাগ না অভিমান ৷ তোমরা নিজের মেয়েটার একটা খবর নেওয়ার সময় পেলে না হমম ৷”
আরুর মা নিজের চোখের কোনে জল টা মুছে নিয়ে বলল,,,,,
__” আমিতো জানি আরিশ বাবা তোকে কখনো কোনো কষ্ট পেতে দেবে না , ও তোকে খুব ভালবাসে তাই আমরা এতটা নিশ্চিন্তে থাকতে পারছি ৷ তাছাড়া তোরা কক্সবাজার গেছিস তাই আর কল করিনি ৷”
__” হ্যাঁ আম্মু , এই তো কিছুক্ষণ আগেই এসে পৌছালাম৷”
__” সব সময় আরিসের সাথে সাথেই থাকবি আর ওর কথার অবাধ্য হবি না ৷”
__” বাপি কেমন আছে আম্মূ? বাপি কি আমাকে মিস করছে না ?”
__” তোর বাপি তো কালকে থেকেই মন খারপ করে বসে আছে, লুকিয়ে কাদছে মাঝে মাঝেই ৷”
__” আম্মু আমিও তোমাদেরকে খুব মিস করছি ৷”
আর কিছুখন কথা বলে আরূ ফোনটা রেখে দিল ৷
ফোনটা কেটে দিয়ে আরূ চোখ বন্ধ করে দাঁড়িয়ে আছে সমুদ্রের দিকে , না চাইতেও চোখ থেকে কয়েক ফোটা নোনাজল গড়িয়ে পড়ল এটা ভেবে যে ওর জীবনের সব কিছুই অপ্রত্যাশিত ভাবে হয় , না চাইতেও সব হয়ে যাই ,তার জন্য আল্লাহর কাছে সত্যিই হাজারো শুকরিয়া জানায় ও ৷
চোখ থেকে টুপ টুপ কয়েক ফোটা জল গড়িয়ে পড়তেই কাধে আরিশের ঠোঁটের গভীর স্পর্শ আর পেটে ঠান্ডা হাতের ছোয়া পেতেই আরু তাড়াতাড়ি করে চোখের জলটা মুছে নিয়ে নিজেকে স্বাভাবিক করার চেষ্টা করলো ৷
হঠাৎ করে আরিশ ওর কাঁধে জোরে কামড়ে নিতেই আরূ আহ করে শব্দ করে উঠল ৷ আরিশের দিকে ঘুরে রাগী চোখে তাকিয়ে বলল,,,,
__” এমনটা কেউ করে ! ব্যাথা পাই তো আমি ৷”
__” ব্যথা দেওয়ার মতো আমি অনেক কিছুই করি তা তো তুমি জানোই ৷”
কথাটা বলে আরিশ আরূকে কোলে তুলে নিল ৷
#চলবে,,,,,,,
গল্পটা ভালো লাগছে তো?😕