তোমার নেশায় আসক্ত ২ পর্ব-২৪+২৫

0
1986

#তোমার_নেশায়_আসক্ত
#সিজন:2
#পর্ব:24(বিবাহ পর্ব ধামাকা)
#Suraiya_Aayat

আরূর সম্পূর্ণ সাজ কমপ্লিট, একটা লেহেঙ্গা পড়েছে,হাতভর্তি চুরি , আর তারসাথে ম্যাচ করে অর্নামেন্টস পরেছে , একটু গাঢ় মেকআপ, সম্পূর্ন অপ্সরীর মত লাগছে আরূকে দেখতে, তবে সব কিছুর মাঝে একটা কমতি থেকেই গেছে, আর সেটা হলো ওর পায়ে থকা নুপুর , এক পায়ে নুপুর আছে আর এক পায়ে নুপুর নেই কারণ আরেকটা নুপুর তো আরিশের কাছে ৷ আরিশ বলেছে যে সন্ধ্যাবেলা যখন বিয়ের দাওয়াতে আসবে তখন নুপুর টা নিয়ে আসবে ৷

আরিশকে অনেকবার বললেও আরিশ নূপুরটা দেইনি ৷ আরু মনে মনে আরিশকে হাজারো বকা দিচ্ছে,

__” নির্লজ্জের মত আমার বিয়েতে আসবে , কতবার বললাম বিয়েতে আসবেন না তবুও আসবেই , বুঝেছি যতক্ষণ না আমাকে সম্পূর্ণ শেষ করে দেয় ততক্ষন তো না শান্তি নেই ৷ যখন আমার বিয়ে হয়ে যাবে তখন ঐ নুপুর টা দিতে আসবেন তার সাথে কাটা ঘায়ে এত নুনের ছিটা দিয়ে দেবেন,,,মনটা আর এক দফা ভেঙে চলে যাবেন….”

পার্লারের মেয়েটা আরূ কে সাজানো শেষে আরূকে বলে উঠলো,,,,
__” এ কি আপু তোমার পায়ে আর একটা নুপুর কই? আরেকটা কোথায় গেল?”

আরূ চমকে গিয়ে পায়ের দিকে একবার তাকিয়ে নিয়ে থতমত খেয়ে মেয়েটাকে বলল,,,,

__” ওহ তাইতো , আসলে ওটা হারিয়ে গেছে ৷”

__” আপু তোমার নুপুর হারিয়ে গেছে তুমি এতক্ষণ খেয়াল করনি? একটা নূপুর পরে আছো , তুমি বরং নুপুর টা খুলে ফেল, একটা নুপুর পরার থেকে খুলে ফেলায় বেটার ৷”

আর যা কিছুই হোক আরিসের দেওয়া এই চিহ্নটা নিজের থেকে কখনো আলাদা করবে না আরূ তাই ও বলে উঠলো,,,,,
__” না থাক কোন সমস্যা নেই , একটাই পড়ে থাকি আর আরেকটা নুপুর ঘরে এদিকে ওদিকে কোথাও আছে হয়তো আমি খুঁজে নিচ্ছি ৷”

আরুর এরকম একটা কথা শুনে পার্লারের মেয়েগুলো আর কিছু বলল না, সম্পূর্ণ সাজটা একবার ঠিক করে দিয়ে ওরা রুম থেকে বেরিয়ে গেল ৷
আরূ ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখল 6:15 বাজে, কিছুক্ষণ পরেই সাড়ে ছটা বাজবে আর তখনই ওর কাবিন ৷

সময়টা যত এগিয়ে যাচ্ছে বুকের ধুকপুকানিটাও ততই বেড়ে চলেছে মনে হচ্ছে যেন হৃদয়টা খুলে এক্ষুনি বাইরে বেরিয়ে এসে ছটফট করবে ৷ আজ নিজের প্রিয় মানুষের থেকে চিরকালের মতো আলাদা হয়ে যাওয়ার বেদনা টা বড্ড বেশি আঘাত করছে ওকে, বছরশেষের সাথে ওর জীবনের পূরোনো সব মূছে নতুন মুহূর্তভাবে সবকিছু শুরু হবে…..

একটা দীর্ঘশ্বাস নিয়ে বিছানার ওপর বসতেই চোখ থেকে টপটপ করে কয়েক ফোটা জল গড়িয়ে পড়ল নিজের অজান্তেই , তাড়াতাড়ি করে হাত দিয়ে ঝটপট করে মুছে নিল , এখন ওকে কেউ কাঁদতে দেখলে তা নিয়ে হয়তো আবার হাজারো প্রশ্ন করবে , তা নিয়ে পুরো বিয়ে বাড়ি শোরগোল পড়ে যাবে ৷ আসলে এটাই হল সমাজের বাস্তবতা, কখনো একটা কোন খুত পেলে সেটাকে নিয়ে ছোট থেকে কিভাবে বড়ো কোন জটিল বিষয় বানাতে হয় তা এই সমাজের মানুষজন ভালোই জানে , তাই কাউকে কোন রকম কিছু বলে সুযোগ করে দেওয়াটা নিজের পায়ে কুড়াল মারার মতোই ৷ তাই চুপচাপ স্থির হয়ে খাটের উপরে বসে রইল ৷ কিছুক্ষণের মধ্যেই ওর কাজিন রা সবাই হাসতে হাসতে রুমের মধ্যে এলো ৷ ওরা সবাই রুম থেকে বেরিয়ে গেছিল যখন চারিদিকে বর আসছে বর আসছে ধ্বনিতে ফেটে পড়ছিল তখন ৷ আর তিথি আর সানা দুজনের গিয়েছিল তবে ওর কাজিন রা ফিরলেও ওরা ফেরেনি দেখে আরূ খুব বিরক্ত হলো ৷

মনে মনে ভাবতে লাগল,,,,,
__” ওই ভ্যাবলা আশফিকে দেখার মাঝে এত উৎসাহ কিসের সেটাই বুঝিনা ৷”

আরু চুপচাপ বসে আছে তখনই ওর কাজিন দের মধ্যে থেকে একটা কাজিন বলে উঠলো,,,
__” জিজু কিন্তু আমাদের সেই লেভেলের মানে চরম লেভেলের হ্যান্ডসাম যাকে বলে ৷ আমি তো দেখেই ক্রাশ খেয়ে ফেলেছি , ফেসবুকে রিকুয়েস্ট দিয়েছি দেখলাম সঙ্গে সঙ্গে একসেপ্ট করেছেন ৷ ফেসবুকের ছবিগুলো পুরোই মার ডালা…”

কথাটা শুনে আরূর মধ্যে কিঞ্চিত খটকা লাগলো , তবুও এখনই ওদের সামনে অবাক হলে ব্যাপারটা ভালো দেখায় না তাই ক্রমশ স্বাভাবিক রাখল নিজেকে ৷ আশেপাশের ওর কাজিন রা প্রায় সবাই ওর হবু জামাইকে নিয়ে প্রশংসায় পঞ্চমুখ ৷ আরূ মনে মনে ভাবছে যে আশফির মাঝে এমন কি খুঁজে পেল ওরা যে এত প্রশংসা করেই চলেছে, কই ও নিজে তো কখনো আশফির প্রতি এতটা আকর্ষিত হয় নি, এর থেকে আর বেশি কিছু ভাবতে পারলো না আরূ কারণ তখন কাজী সাহেব ওর রুমে ঢুকে পড়েছেন….

কাজি সাহেবকে দেখেই ওর বুকের ভিতর ধক করে উঠলো, ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখল একদম ঠিক সাড়ে ছটা বাজে , উনি যেন এক মুহূর্তও দেরি করেননি ৷
এই মুহূর্তে আরূর মনে হচ্ছে যে এই বিয়েটা দেওয়াই যেন কাজী সাহেবের জীবনের মূল উদ্দেশ্য , এমনটাই লাগছে ওর কাছে এখন….

কাজী সাহেব এশে আরুর সামনে বসলেন , বসে চোখের চশমাটা সামান্য ঠিক করে নিয়ে আরূশিকে রেজিস্ট্রি পেপারের সই করার জায়গাটায় সই করতে বললেন ৷ আরূ আর কোনো দিকে না তাকিয়ে সরাসরি সই করে দিল , পাশে মানুষটার করা সইয়ের দিকে তাকানোর প্রয়োজন বোধ করেনি ও,……

পেপারে সই করা হয়ে গেলেই কাজী সাহেব আরুশিকে বলে উঠলেন,,,,,,
__” বিনতে আরুশি রহমান আপনাকে ধানমন্ডি নিবাসী আফজাল খান এর পুত্র আবরার আরিস খান নগদ 25 লাখ টাকার দেনমোহর দিয়া আপনাকে বিবাহের প্রস্তাব দিয়েছেন আপনি কি কবুল, যদি কবুল হন তাহলে বলেন কবুল ৷”

কথাটা শোনামাত্র আরূর বুকের ভিতর মোচড় দিয়ে উঠলো , এটা কি শুনল ও ! আরিশ ওকে বিয়ে করবে মানে ও যাকে ভালোবাসে সে ওকে বিয়ে করার প্রস্তাব দিয়েছে , বিয়ে করার জন্য বর সেজে সেখানে এসেছে, কথাটা ওর বিশ্বাসই হচ্ছে না , এটা যেন অবাস্তবের মতো লাগছে ওর কাছে , এখন হয়তো বিয়ে বাড়ির প্রত্যেকটা মানুষ কথাটা ওকে বুঝাতে চাইলেও ও বিশ্বাস করবে না যতক্ষণ না আরিশ নিজের মুখে আরূকে বলবে ৷

আরু অবাক, এতটাই অবাক যে মুখ থেকে কোন আর কথা বের হচ্ছে না , যে মেয়ে আগে একটা মুহূর্তও কথা না বলে থাকতে পারতো না সেই মেয়েই আজ মুখের বুলি হারিয়ে ফেলেছে , সেটা ওর নিজেরই বিশ্বাস হচ্ছে না , কি বলবো কোন ভাষা খুঁজে পাচ্ছে না , চোখের কোনে আনন্দে জল চলে এসেছে , এ আনন্দ ও কিভাবে প্রকাশ করবে সেটা ও জানেনা ও, আচ্ছা এটা কোন স্বপ্ন নই তো? এগুলোই ভাবছে ও…

আরূ এবার কাঁপা কাঁপা গলায় বললো,,,,
__” এইটা আপনি কি বলছেন আমার তো !”

তখনই ওর চিরচেনা সেই পরিচিত কন্ঠটা থেকে কিছুটা উঁচু স্বরে আওয়াজ ভেসে এলো,,,

__” হ্যাঁ তোমার আবরার আরিশ খানের সাথেই বিয়ে হওয়ার কথা , আবরার আরিশ খানই তোমাকে বিয়ে করতে এসেছে ৷ আর নিজেই তো বিয়ে করার জন্য ইনভাইট দিলা , আর এখন বলছ যে অন্য কাউকে বিয়ে করবা, এটা কিভাবে মেনে নিই আরূপাখি বল ৷
এভাবে বিয়ে আসরে একটা ছেলেকে কথা দিয়ৈ তাকে প্রত্যাখ্যান করে দেওয়া এটা কি একটা ছেলের জন্য অপমানের নই ? বল!
( ভ্রু জোড়া নিচিয়ে কথাগুলো বলল )

আরিশের কথাগুলো শুনে আরূর মনে হলো যেন আগে যেমনটা আরিশ ওর মনটা কে ভেঙেছে আজও ঠিক সেই পরিকল্পনাতেই আছে , তাই আরিশ কথাটা বললেও ওর আরিশের বলা কথাটা যেন এখন আর ওর কাছে বিশ্বাসযোগ্য বলে মনে হচ্ছে না , এবার অভিমান আর রাগ নিয়ে কিছুটা দৃঢ়স্বরে কাজী সাহেব কে বলে উঠলো,,,,,
__” আমি ওনাকে বিয়ে করব না ,আর আমার সঙ্গে ওনার বিয়ের হওয়ার কথা নয় , আমার যার সঙ্গে বিয়ে হওয়ার কথা তিনি কোথায় ? উনাকে কেন এখানে আনা হয়নি! আর এই মানুষটাকে কেন এনেছেন, আমি কি তাকে বিয়ে করতে চেয়েছি? আমি তাকে বিয়ে করতে চাই না , তাই যার সঙ্গে আমার বিয়ে হওয়ার কথা ছিল তাকে নিয়ে আসুন অন্যথায় আমি বিয়ে করবো না ৷”

আরুর কথা শেষে সানা আর তিথি বলে উঠলো,,,
__” এটা তুই কি বলছিস, তুই তো ভাইয়াকে ভালোবাসি তাহলে এখন এমন টা বলছিস কেন?”

আরূ একটা তাচ্ছিল্যের হাসি হেসে বলল,,,,
__” ভালোবাসা জিনিসটা ঠিক উনার নামের সাথে গ্রহণযোগ্য নয় , সম্পূর্ণ বিপরীত শব্দ ওনার সাথে ৷ উনি ভালোবাসা পাওয়ারই যোগ্যতা রাখেন না কারণ কাউকে ভালোবাসলে ভালবাসার দাম দিতে হয় আর উনি তা দিতে শেখেননি ৷ ”

আরিশ এবার একটা টেডি smile দিয়ে কাজী সাহেব আর ঘরের মধ্যে থাকা সকলকে উদ্দেশ্য করে বললো,,,,,
__” আপনারা 5 মিনিটের জন্য একটু বাইরে গিয়ে অপেক্ষা করুন , 5 মিনিট পর আমি যখন রুমে থেকে বেরিয়ে আসবো তখন কাজি সাহেব আপনি রুমে আসবেন আর এসে বিয়েটা পড়িয়ে দেবেন ৷”

সবাই একে অপরের দিকে তাকা তাকি করতে লাগলো , এর আগে কখনো এমনটা বিয়ে হয়তো কেউ দেখেনি ৷ কেউ কিছুই বুঝতে পারছে না যে আরিশ ঠিক কি করতে চাইছে ৷ আরুর কাজিসহ সবাই অবাক হয়ে রুম থেকে বেরিয়ে গেল , সানা আর তিথি মুচকি মুচকি হাসছে , রুম থেকে বেরিয়ে যাওয়ার আগে তিথি আরূর দিকে ইশারা করে বললো,,,,
__” সোজা আঙ্গুলে ঘি না উঠলে আঙুলটা যখন ব্যাকাতে হয় তখন এরকমই হয় ৷”

সানা আরিশকে কে উদ্দেশ্য করে বলল,,,
__” ভাইয়া বেস্ট অফ লাক , জানি যদিওবা এই পাঁচটা মিনিট সময় তোর জন্য একটা বছরের মতো বড় হবে , সো এনজয় ইউর টাইম ৷”

আরিশ আরূর দিকে তাকিয়ে একটা ডেভিল স্মাইল দিয়ে বলল,,,,,
__” তোর ভাবিকে বলে দিস যে তার জামাই তেমন একটা সুবিধার নয়, চাইলেই অনেক কিছুই করতে পারে ৷”

কথাটা শুনে সানা আর তিথি মুখ টিপে হেসে চলে গেল বাইরে…..

বাইরে সবাই অপেক্ষা করছে কখন 5 মিনিট হবে সেই অপেক্ষায় , আর তারপরে কখন কাজি বিয়েটা পড়াবেন ৷ পাঁচ মিনিট পরে কি সেটা দেখার জন্যই সবাই উৎসুক হয়ে বসে আছে ৷ নিচে সবার কানে খবরটা পৌঁছে গেছে , আরূর মা আর অনিকা খান দুজন দুজনের হাত ধরে বসে আছেন ভয়ে ৷

__” তুই এত চিন্তা করছিস কেন?”

__” চিন্তা এমনি আর হচ্ছেনা , আমার মেয়েটা খুব জেদী, ও যদি এখন বিয়ে টা না করে তাহলে কি হবে?”

অনিকা খান মুচকি হেসে বললেন ,,,
__” আমার ছেলেটা কে কি তুই চিনিস না?”

আরুর মা মুখৈ কিঞ্চিৎ হাসি নিয়ে বললেন,,,,
__” মেয়ের মা তাই চিন্তা টাও বেশি তবে তোর কথা শুনে এখন খানিকটা রিলেক্স লাগছে ৷”

__” চিল বেয়ান সব ঠিক হবে ৷”

কথাটা বলে দুজনেই হো হো করে হাসতে লাগলেন ৷ এটা হচ্ছে সেই সময়কার খুশি যখন দুই বেস্ট ফ্রেন্ড গভীর একটা সম্পর্কে পরস্পরের সাথে আরো গভীর সম্পর্কে যুক্ত হয়ে যায় ৷

সেকেন্ডের কাঁটাটা 12 টার ঘরে পৌঁছতেই সবাই আগ্রহ নিয়ে দরজার দিকে তাকাতেই দেখল আরিশ দরজা খুলে দাড়িয়ে আছে ৷

আরিশ কাজী সাহেব কে বললেন,,,,
__” এবার আপনি জান ৷’

কাজী সাহেব খানিকটা থতমত খেয়ে রুমে ঢুকলেন, ওনার পিছনে সবাই ঢুকলো এর পরে কি হয় তা দেখার জন্য ৷

উনি আবার বিয়ে পড়ানো শুরু করলেন,,,,

__” বিনতে আরূশি রহমান , ধানমন্ডি বাসী আফজাল খান এর পুত্র আবরার আরিশ খান নগদ 25 লক্ষ টাকার দেনমোহর ধার্য করিয়া আপনাকে বিবাহের জন্য প্রস্তাব দিচ্ছে, আপনি কি এ বিবাহে কবুল?”

__” জ্বী আমি কবুল ৷”

__” তাহলে তিনবার বলেন কবুল,,,,,”

__” কবুল , কবুল , কবুল ৷”

__” সকলে বলেন আলহামদুলিল্লাহ ৷”

সবাই একসাথে মুচকিহেসে বলল,,,
__” আলহামদুলিল্লাহ ৷”

সবাইতো অবকের চরম পর্যায়ে পৌঁছে গেছে, মানে যে আরূশি এতক্ষণ ধরে বিয়ের জন্য আমত করছিল সেই আরূশি এখন সম্মতিতে বিয়ে করছে দেখে সবাই অবাক হয়ে গেল…

বিয়ে পড়ানো হয়ে গেলে কাজী সাহেব রুম থেকে বেরিয়ে গেলেন, উনি বেরিয়ে যেতেই সবাই আরুশিকে ঘিরে ধরল জানার জন্য যে কি এমন হলো যে আরূ বিয়ে করতে রাজি হয়ে গেল ৷

আরূ বিরক্তি নিয়ে বললো,,,,
__” কিছু হয়নি উনি বললেন রাজি হয়ে গেলাম আর কিছু না ৷”

আরূকে আর কেউ বেশি ঘাটালো না তবে সবার মধ্যে এখন চরম কৌতুহল এটা নিয়ে যে এত সহজে আরূ কিভাবে রাজি হয়ে গেলো , যৈখানে আরূ এতটা একগুয়ে আর জেদি ৷ আরূ কেমন তা সকলেরই কমবেশি জানা….

বেশ কিছুক্ষণ পর ওর কিছু কাজিন রুম থেকে বেরিয়ে গেল আর সানা আর তিথি আরূর পাশে বসে আছে , আর আরূ এখন ওর রাগি দৃষ্টি ওদের দিকে নিক্ষেপ করছে ৷
আরূকে এভাবে দেখে সানা আর তিথি ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বলল,,,,
__” আমরা তো কিছুই জানিনা ৷”

আরূ আর কিছু বলতে যাবে তখনই সাথে সাথে আরুর ফোনটা বেজে উঠতেই ফোনের স্ক্রিনে মিস্টার অভদ্র নামটা ফুটে উঠতে তিথি বলে উঠল,,,,
__” নে তোর মিঃ অভদ্র জামাই ফোন করেছে , বাসরের আগে কিছুক্ষণ প্রেম আলাপ করে নে ৷আমরা আর থেকে কি করবো? তুই কথা বল ৷”

কথাটা বলে ওরা রুম থেকে বেরিয়ে গেল ৷

আরু ফোনটা কানে নিয়ে ধরে আছে কিছু বলছে না রাগে , অপর দিক থেকে আরিশ বলে উঠলো ন,,,
__” কি বলেছিলাম মিসেস আবরার আরুশি যে আমি যা চাই তাই পাই ৷ আর বিয়েটা সবাইকে কেমন চমকে দিয়ে করলাম বলুন, যতই হোক আইএম ইউনিক ইউ নো ৷”

আরিশের কথা শুনে আরূ রেগে বলে উঠলো,,,,,
__” আপনাকে আমি দেখে নেব , আপনাকে আমি ছাড়বো না বলে দিলাম ৷”

আরিস আরূকে রাগানোর জন্য বলল ,,,,
__” আমি ও তো চাই আপনি আমাকেই দেখুন শুধু, আর শুধু আমাকেই কেন সম্পূর্ণ আরিশ খানকেই দেখুন, তার মাথা থেকে পা অবধি দেখুন ভালো করেই দেখুন আর আমাকেই ছাড়বেন কেন পারলে আরও জোরে চেপে ধরে রাখবেন ৷ তবে অবশ্যই আপনার পানিশমেন্ট টা কিন্ত পাওনা রইল, সময়ের সাথে সাথে পানিশমেন্ট পেয়ে যাবেন ৷ আর বাই দ্যা ওয়ে আজ কিন্তু আমাদের বাসর রাত ৷ বাসর রাত মানে বুঝেন তো? মানে কি কি হয় ! আই মিন শুধু আমি আর তুমি কেউ থাকবে না সেখানে , তাই বি প্রিপেয়ার ফর দ্যাট ৷”

আরিশের কথা শুনে আরূ রেগে গিয়ে ফোনটা কেটে দিলো,,,, মানুষটার সাথে তর্ক করাই বেকার, তবে মনের মধ্যে এখন হাজারো রাগের মাঝেও এক প্রকার প্রশান্তি অনুভব করছে, এত মান-অভিমান দুঃখ কষ্টের পর নিজের মনের মানুষটাকে নিজের করে পেয়েছে সারা জীবনের মতো , তার সাথে সারাটা জীবন কাটাবে তাকে একান্ত নিজের করে পাবে , মানুষটা যে শুধু তারই , কথাটা ভেবে আরুর মুখের কোনে এক চিলতে হাসি ফুটে উঠল…

💓

আরিশ বসে আছে আরূর পাশে আর তূর্য আর সাহেল ও বসে আছি ওদের সাথে , মাঝে মাঝে এটা ওটা নিয়ে আরিসের সাথে মজা করছে ওরা ৷ তখনই হঠাৎ সামনে পরিচিতি কণ্ঠ ভেসে আসতেই আরিশ চমকে গিয়ে ছুটে গিয়ে জড়িয়ে ধরল তাকে ৷

__” তুই কি ভেবেছিলি যে তোর বিয়ে আর আমি আসবো না এটা কখনো হতে পারে ! ওরে তোরাই তো আমার সব , তোরা ছাড়া আমার আর কে আছে বলতো ৷ নিজের প্রিয়জনের খুশির সময় যদি শামিল না হতে পারি তাহলে আমরা তার কেমন প্রিয়োজন ৷”

আরি শক্ত করে প্রান্তকে জড়িয়ে ধরে বলল,,,
__” অনেক ধন্যবাদ তোকে, তুই এসেছিস এটাই অনেক ৷”

প্রান্ত আরিসের পিঠে একটা চাপড় মেরে বলল ,,,,
__” ধন্যবাদ কিসের রে শালা, তোকে এক্ষুনি মেরে বৃন্দাবন পাঠাবো , যদি thank u বলিস ৷
আর আমার থেকে তো তোর ভাবীর এক্সাইটমেন্ট আরো বেশি , সেই বিকাল থেকে সাজতে বসেছে যতোই হোক একমাত্র দেবরের বিয়ে বলে কথা ৷”

কথাটা শুনে আরিস মিথিলার দিকে তাকিয়ে বলল,,, __” থ্যাংক ইউ ভাবি ,থ্যাংক ইউ সো মাচ ৷”

প্রান্ত আরিশকে বলে উঠল,,,,
__” তোর জন্য আমার হানিমুন cancel হলো, তা হানিমুনে একসাথে যাচ্ছি তো নাকি ? নাকি ওটাও তুই একা একাই যাবি?”

__” আমার হানিমুনে কাউকে এলাও না, ইভেন তোকেউ না , তাই আমি আর আমার আরূপাখি একাই যাব ৷ তোরা অন্য জায়গায় যা পরে যখন খোকা-খুকি হবে তখন ভেবে দেখা যাবে ৷”

কথাটা শুনে প্রান্ত আর মিথিলা দুজনেই হেসে উঠলো , তার সাথে আরিশ তুর্য আর সাহেল ও ওদের সাথে যোগ দিল ৷ সত্যি ভালোবাসার পূর্ণতা কতই না আনন্দদায়ক তা বাস্তব জীবনে না ঘটলে কখনো বোঝা যায় না….

আরূ ওর বাড়ি থেকে বিদায় নেওয়ার সময় অনেক কান্নাকাটি করেছে , অবশ্য এটা সব মেয়ের ক্ষেত্রেই অত্যন্ত দুঃখের একটা মুহূর্ত , আর সেই মুহূর্তেও আরিশ ওকে নিয়ে মজা করতে ছিড়েনি ৷ সেই মুহূর্তে আরিশ আরুর কানে কানে বলেছে,,,,
__” এখনে যত পারো কাদো, পরে আর কাদার সুযোগ পাবে না , কারণ ভালোবাসা পেয়ে আর কিছুই মনে থাকবে না ৷”

সেই মুহূর্তের আরিশের কথাটাকে গুরুত্ব দেয়নি আরূ তবে এখন আরিশের পাশে বসে থেকে ওর কথাটার গুরুত্ব টা বুঝতে পারছে ৷ গাড়িতে আরিশ আর ও সম্পূর্ণ একা , গাড়িতে উঠার আগে অলরেডি ওকে অল দ্যা বেস্ট জানিয়েছে আরিশের ফ্রেন্ডরা ৷ ওদের সাথে তাল মিলিয়ে আরিশো বলেছে যে,,,,
__” সুখবর নিয়েই আসবে ৷”

ওরা সবাই ই একই পরযায়ের ৷

হঠাৎ গাড়িটা অন্য রাস্তায় দিকে ব্যাক করতেই আরু বলল,,,
__” কি হল এ রাস্তা দিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন কেন , এটা তো আপনার ধানমন্ডির বাসার রাস্তা ৷”

আরিশ আরূর দিকে তাকিয়ে চোখ মেরে বলল,,,,
__” একলা বাড়ি , ফাঁকা ঘর , চারিদিকে নিস্তব্ধতা, পর্দার আড়ালে জোছনা রাতে হালকা চাঁদের আলো, আর শুধু তুমি আর আমি , আর আমাদের বাসর রাত , ওহ আলাদাই ফিলিংস , আই এম সো এক্সাইটেড, তআর তুমি আমার থেকেও বেশি এক্সাইটেড, না বললেও বুঝি😎 ৷”

আরিসের কথা শুনে আরুশির ইচ্ছে করছে এখুনি আরিশকে গাড়ি থেকে ধাক্কা মারতে,তবে চাইলেও তা সম্ভব নয় ৷

__” আপনার ড্রিম এগুলো,,,বাস্তবে সব প্ল্যানে আমি পানি ঢেলে দেবো ৷”

__” দেখা যাবে আরূপাখি ৷”

চলবে,,,,,

#তোমার_নেশায়_আসক্ত
#সিজন:2
#পর্ব:25
#Suraiya_Aayat

গাড়িটা নিয়ে আরিশ ওর বাসার সামনে এসে দাঁড়াল , আরিশ প্রথমে গাড়ি থেকে নেমে আরূর হাতটা ধরে ওকে গাড়ি থেকে নামল ৷ আরূকে হাত ধরে গেটের সামনে নিয়ে যেতেই আরূ একদফা চমকে গেল কারণ কালকে রাতে বাসাটা যেমন দেখেছিল আজকে সম্পূর্ণ তার বিপরীত ৷ চারিদিকে মরিচ বাতিতে সাজানো , রংবেরঙের আলো তে সারা বাড়ি ঝিলমিল করছে , বাসায় ঢোকার মাঝখানের রাস্তার দুই ধারে মোমবাতি দিয়ে সাজানো ৷ পুরো বাড়িতে মরিচ বাতি জ্বলছে , আরীশের বেলকনিতে বেশকিছু মোমবাতি রাখা রয়েছে ৷আজকে বাড়িটাকে চেনার উপায় নেই ৷ কালকে রাতে মনে হচ্ছিল একটা জনমানব শূন্য ভুতুড়ে বাড়ি সেই বাড়িতে আজ রং বেরঙের আলোর সজ্জায় সজ্জিত হয়ে এক অপরূপ সৌন্দর্য নিয়েছে….

আরিশ আরূর দিকে মুচকি হেসে তাকিয়ে বলল,,,
__” কেমন লাগলো আরুপাখি?”

আরুর বাড়ির সাজানো টা খুব পছন্দ হয়েছে তাছাড়া ওর কাছে সবথেকে আকৃষ্ট হলো আরিশ নামের ব্যক্তিটা ৷ আরূর সাজানোটা খুব পছন্দ হয়েছে তবুও তার সৌন্দর্য এখন আরিশের সামনে দেখাতে চায় না আরু , এখনো আরিশকে কিছু শাস্তি দেওয়া বাকি আছে ওর….

আরিশের দিকে মুখ ভ্যাংচিয়ে বললো,,,,
__” আপনি যেমন আপনার বাড়িও এমন পচা, কোনটাই ভালো না ৷”

আরিশ আরূকে কোলে নিয়ে বলল,,,,,
__” সে যাই হোক আমার বাসা পচা আমিও পচা সব ওকে তবুও তো সেই পচা মানুষের সাথেই এই পচা বাড়িতে ,পচা ঘরে ,পচা বিছানায় রাত পার করতে হবে ,আর সারাটা জীবনও পার করতে হবে ৷ তাই তোমার এসব অভিযোগ মেনে নিলাম বউ ৷

আরিশের এমন আবেগমাখা কথা শুনে আরূর মনে প্রশান্তির অদ্ভুত এক ঝড় বয়ে গেল ৷

আরূর মনে মনে বলল,,,,,
__”এই পচা মানুষটার সাথেই যে আমি নিজের সারাটা জীবন কাটাতে চাই , ভালোবাসতে চাই, তার সেই ছোট্ট হৄদয়টা জুড়ে বিরাজ করতে চাই ৷”

আরিশ আরুকে কোলে তুলে নিয়েছে আর আরূ আরিশের গলাটা জড়িয়ে ধরে রেখেছে শক্ত করে আর ছলছল চোখে আরিশের দিকে তাকাচ্ছে , মানুষটাকে দেখলেই যেন সমস্ত পিপাসা মিটে যাই ওর ৷

আরিশ সিঁড়ি বেয়ে ওপরে উঠছে আর আরু ওর কোলে, আরিশের দিকে একনজরে তাকিয়ে আছে ক্রমাগত ৷
__” নিজের বরের ওপর কেউ এত নজর নেই?

আরূ থতমত খেয়ে বলল,,,,,
__” কে বলল আপনাকে আমি আপনার দিকে তাকিয়ে আছি?মোটেও আমি আপনার দিকে তাকিয়ে নেই ৷”

__” That means তুমি ট্যারা ৷”

__” আরু আরিশের দিকে মুখ ভ্যাংচিয়ে বলল,,,,,,

__” আপনি ট্যারা আপনার বউ ট্যারা ৷”

__” সেটাই তো বলছি আমি যে আমার বউ ট্যারা ৷”

__” এত প্যারা দেন কেন আমাকে শান্তিতে থাকতে দেন না এক মুহূর্তও ৷”

__” প্যারা তো সবে সুরূ সানশাইন , এখনো তো কিছুই দেখলেনা ৷”

আরূর মনে মনে ভয় পাচ্ছে এই ভেবে যে আরিশ ওকে কি পানিশমেন্ট দেবে এই ভেবে ৷

আরিশ আরূকে নিয়ে ওর রূমে গেল ৷রূমে ঢুকতেই আরূশি একদফা অবাক হলো,,,,আরিশের রূমটা একদম নরমাল,, সারা বাড়িটা যেভাবে আলোয় ঝলমলে আর রূমটা একদমই নয় ৷ আরূ আরিশের ভাবগতিক কিছুই বুঝতে পারছে না, মানুষটাকে ও কবে সঠিকভাবে জানবে আর বুঝবে সেই দিনটার জন্য দীর্ঘ প্রতিক্ষায় অপেক্ষারত ও ৷

ব্যাপারটা ওর কাছে খুব অবাক জনক লাগলেও তবুও তার ভাবভঙ্গির কোনটাই মুখে প্রকাশ করলো না কারণ এই মুহূর্তে আরিশকে যদি প্রশ্নটা জিজ্ঞাসা করে যে সারা বড়ি এতো সুন্দর করে সাজালেও ঘরটাকে সাজাইনি কেন তাহলে আরিশ ওর দুষ্টুমি গুলো করার জন্য আরও বেশি সুযোগ পেয়ে যাবে আর সেই সুযোগ আরু এই মুহূর্তে দিতে চায়না , তাই নিজের এই মুহূর্তে নিজের অবাক হওয়া টাকে আটকে রেখে চুপ করে রইলো ও ৷

আরিশ আরূকে কোল থেকে নামিয়ে দিয়ে মুচকি হেসে জিজ্ঞাসা করল,,,,,,
__” কি পছন্দ হয়েছে নিজের রুমটা?”

আরূ আরিশের কথার কোন উত্তর না দিয়ে আরিসকে বলল,,,,,
__” আমি কি আজকে সারাদিন এভাবেই থাকবো নাকি ড্রেসটাও চেঞ্জ করবো ৷”

আরিশ হালকা হেসে বলল রুমের ভিতরে থাকা বড় ওয়াড্রবটার দিকে এগিয়ে গিয়ে তার থেকে একটা সাদা রঙের শাড়ী বার করে আরূকে দিল ৷ সাদার মধ্যে শাড়িটা এত সুন্দর কারুকার্য করা যে তা দেখলে যেকোনো মেয়েরই পছন্দ হবে , আর আরিশের কথার মতো শাড়িটা সত্তিই ইউনিক একদম ৷ এর আগে আরূ এই ধরনের শাড়ি দেখেনি ৷

আরিশ ওয়াড্রপের দরজাটা সম্পূর্ণ খুলে দিয়ে আরূকে সেদিকে তাকাতে বলল,,,,

আরু অবাক চোখে তাকিয়ে দেখল যে এতবড়ো ওয়াড্রব জুড়ে শুধু শাড়ি আরা শাড়ি ৷ ঘটনাটা ওর চোখে অত্যন্ত আশ্চর্যজনক কারন আরূ নিজেও কখনো এতগুলো শাড়ি কেনেনি আর এতগুলো শাড়ি কেনার কথা হয়তো কখনো ভাবেওনি ৷

একটা ছেলে হয়ে কতোটা সৌন্দর্য নিয়ে আরুর চাওয়াপাওয়া গুলোকে ভালোবেসেছে,,,, কতগুলো ভাবতেই আরুর অবাক লাগছে ৷ মানুষ টা সত্যিই কতোটা ওকে ভালবাসে , ওর ছোট ছোট আশা ইচ্ছে গুলো পূরণ করে যেগুলো আরূ নিজেও হয়তো কখনো ভেবে দেখেনি ৷

চাইতে না চাইতে আরুর চোখে বারবার জল চলে আসে আরিশের সব কর্মকাণ্ডে ৷ আরিশ ওকে যতটা ভালোবাসে ও নিজেও হয়তো কখনো নিজেকে এতটা ভালোবাসেনি ৷ তাহলে হয়তো ভালোবাসার সংজ্ঞাটা এখনো বুঝে উঠতে পারিনি আরূ , আরিশের হাত ধরে পথ চলতে চলতেই হয়তো ভালোবাসার সংজ্ঞাটা বুঝাবে আর আরু সেই দিনের জন্য অপেক্ষা করতে রাজি ৷

আরু এই মুহূর্তে নিজেকে সংযত করে নিল শুধুমাত্র আরিশ কে পানিসমেন্ট দেবে তাই ৷ তারপর নিজের সমস্ত আবেগ অনুভূতি গুলোকে আরিসের সামনে প্রকাশ করবে যেমনটি আরিশ করে চলেছে এখন ৷

আরিসের হাত থেকে শাড়ীটা নিয়ে ওয়াশ রুমে চলে গেল আরূ ৷

আরিশ মনে মনে বলতে লাগল,,,,
__” বউকে কষ্ট দেওয়ার সময় মনে থাকেনা এবার ঠেলা সামলা ৷”
কথাটা ভেবে রুম থেকে বেরিয়ে গেল আরিশ ৷

শীতের দিনে রাত, চারিদিকে ঠান্ডা আবহাওয়ার মাঝে ঠাণ্ডা জলটা মুখে দিতেই ওর সারা শরীর জুড়ে শীহরন বয়ে গেল ৷ শীতকালে ঠান্ডা জলের স্পর্শ পেয়েও খুব একটা খারাপ লাগছে না ৷ সারাদিনের ধকলে শরীরটাও ক্লান্ত তাই ভাবল গোসল করবে, ঝট করে শাওয়ারটা অন করতেই শাওয়ারের জল ওর সারা শরীরটাকে ভিজিয়ে দিল ৷ সারা শরির জুড়ে শীতল অনুভুতির সাথে ক্রমশ তাল মেলাচ্ছে ওর আবেগমাখা অনুভীতিগুলো ৷

পাঞ্জাবির হাতাটা ভাজ করে হাতে থাকা ঘড়িটার দিকে তাকাল আরিশ, সময় ক্রমশ এগিয়ে চলেছে তবে আরূর ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে আসার নাম নেই, বিগত কুড়ি মিনিট ধরে বসে আছে আরিশ আর অপেক্ষা করছে আরিশ তবুও মেয়েটা এখনও ওয়াশরুম থেকে বেরোচ্ছে না ৷ পাশে ট্রে তে রাখা খাবারটাও ক্রমশ ঠান্ডা হয়ে আসছে ৷ কিছুক্ষণ আগে যে গরম খাবার থেকে ধোঁয়া উঠেছিল সেই ধোঁয়া যেন শীতের হিমেল হাওয়াই ভাসিয়ে নিয়ে গেছে ৷

আরিশ এবার একটু দৄঢ় কণ্ঠে বলে উঠলো,,,,,
__” আরূপাখি আর কতক্ষণ ! প্রায় 40 মিনিট হয়ে গেল তুমি সেই ওয়াশরুমে ঢুকেছ তার পরে কি আর বের হতে ইচ্ছা করছে না, নাকি আমি না গেলে তুমি বেরোবে না ৷ আমার কিন্ত প্রেম প্রেম পাচ্ছে ৷

কথাটা বলা মাত্রই আরুশি ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে এলো, পরনে আরিসের দেওয়া সাদা শাড়িটা , মুখে কোন মেকাপ ছাড়া সৌন্দর্যটা যেন দ্বিগুণ হয়ে গেছে ৷ ভিজে চুল থেকে টপটপ করে জলগুলো ফ্লোরে পড়ছে আর শাড়ির আঁচলটা ক্রমশ মাটিতে নেতিয়ে যাচ্ছে তবে আরুশিল সেদিকে খেয়াল নেই , সে তো এখন তার দুই হাত দিয়ে এই ঠান্ডার জড়তা টাকে কাটাতে নিজের শরীরটাকে ঢাকতে ব্যস্ত , তবু যে এটা করে এই প্রবল শীতের প্রবল কাঁপুনিটাকে নিজের অয়ত্তে আনা সম্ভব নয় সেটা হয়তো এখন তার বোধগম্য নয়….

আরিশ আবার উঠে আরুর কাছে গিয়ে নিজের গরম হাড়জোড়া আরুশির মুখে স্পর্শ করতেই আরু আবেগে চোখ দুটো বন্ধ করে নিল…..

__” এত এত রাত্রে গোসল কেন করলে সানশাইন?”

আরু চোখ জোড়া বন্ধ করে রেখেই বলল,,,,
__” নিজেকে কেমন একটা অগোছালো মনে হচ্ছিল , পানির ছোঁয়াতেই নিজেকে খুঁজে নিতে চাইছিলাম ৷”

আরিশ মুখে কিঞ্চিত হাসির রেখা ফুটিয়ে তুলে আরুকে বিছানায় বসালো তারপরে আরূর হাতে থাকা তোয়ালেটা নিজে নিয়ে পরম যত্নে আরূর ভিজে চুলগুলো মুছে দিতে লাগলো ৷

__” আমি যে আমার এই অগোছালো আরূপাখিকেই বেশি পছন্দ করি কারণ আমি যে চায় তাকে আমি নিজের মতো করে পরিপাটি করি , কারণ তাকে ভালোবাসার সমস্ত দায়িত্বটা যে আমার ৷”

আরুশি অজান্তেই মুচকি একটা হাসি দিল আরিশকে লুকিয়ে ৷ আরিশের কথার বিপরীতে তার উত্তরটা যেন ওর কাছে বড্ড কঠিন , মুখে হাসি ফুটিয়ে তোলা ছাড়া আর কোন উপায় নেই কারণটা ও নিজেই কখনো ভেবে দেখেনি কখনো ৷ প্রিয় মানুষটার কাছে নিজেকে সম্পূর্ণ সপে দিয়ে নিজেকে বড্ড বেশি আবেগি অনুভব করছে, এতটা ভালবাসা হয়তো আগে কখনো পাওয়া হয়ে ওঠেনি ৷ প্রিয় মানুষের ভালবাসাটাকে অনুভব করার মতো প্রশান্তি আর কোন কিছুতেই নেই ৷

আরুর চুলটা যত্ন সহকারে মুছিয়ে অরিশ আরুকে নিজের দিকে ঘোরালো….
মুখের ওপর পড়ে থাকা চুলটা আরুর কানে গুজে দিয়ে বলল,,,,

__” এমনটা আর কখনো করবে না , করলে কিন্তু আমি রেগে যাব….”

__” আপনি রেগে গেলেন বা না গেলেন তাতে আমার বয়েই গেল ৷”

__” যখন পানিশমেন্টটা ভালোভাবে পাবে তখন কথাটা বারবার মনে আসবে, তখন মনে হবে আগ বাড়িয়ে পানিশমেন্ট টা কেন নিতে গেলাম ৷ একসাথে সমস্তটা নিতে পারবে না আরুপাখি তাই এমনটা করো না আর ৷”

আরু আরো অবাক হয়ে আরিশের দিকে তাকালো, __” এমন ভাবে কি কখনো আমি ভেবে দেখেছি ?”(আরু মনে মনে)

__” এই যে সানশাইন হা করো এবার ৷”

আরিশের কথাই চমকে খিয়ে আরূ দেখল আরিশ ওর মুখের সামনে এক চামচ নুডুলস ধরে আছে ৷
আরিশের হাতে নুডুলসটা দেখে আরু সামনে থাকা বাটিটার দিকে তাকালো,,,,

নুডুলসটা থেকে হালকা গরম ভাব,আসছে , তার মানে একটু আগেই যে নুডুলসটা বানানো সেটা বেশ ভালই বোঝা যাচ্ছে,তবে ওর কিছুটা অনিয়মের জন্য তা ঠান্ডা হওয়ার পথে…..

আরূ মুখ বাঁকিয়ে আরিসের থেকে নুডুলস এর বাটিটা নিতে গেলেই আরিশ বলে উঠলো,,,,
__” প্রথমটা আমি দেবো তারপর চাইলে নিজে খাবে তার আগে নয় ৷ নাও হা করো তাড়াতাড়ি করে ৷”

আরু মনে মনে ভীষণ খুশি , আরিশের এমন কাজে ও খুব অস্থির হয়ে যাই ৷ বাস্তবে তা এতটাই ভালোবাসা পেতে চেয়েছিল আরিশ এর কাছ থেকে আর যখন তা সত্যি হচ্ছে তাহলে কেন নিজে থেকে এভাবে ফিরিয়ে দিতে চাইছে সেটা ও জানে না ৷ এটা কি ওর ক্ষনিকের অভিমান থেকে !

__” চুপচাপ আর কোন কথা না বাড়িয়ে তাড়াতাড়ি হা করো আরুপাখি ৷”
আরু আর কোন কথা বাড়ালো না, চুপচাপ আরিশের হাত থেকে খেয়ে নিলো ৷ আরুকে এক চামচ খাইয়ে দিয়ে আরুর হাতে নুডুলস এর বাটিটা ধরিয়ে দিল ৷

__”নাও এবার তুমি খাও ৷”

আরূ আরো দু চামচ খেতেই মুচকি হসলো,,,,আসলে নুডুলসটা খুব মজার তবে এটা কি আরিশ বানিয়েছে তা জানার জন্য আরিশকে একটু ঘেটে দেখল আরু ৷

__” তা এতো রাতে খাবার অর্ডার দেয়ার কি দরকার ছিল ? আমারটা আমি নিজেই বানিয়ে নিতে পারতাম ৷”

__” আজ্ঞে না , খাবারটা আমি বানিয়েছি , এখন বলেন কেমন লাগলো,আসলে সেভাবে রান্না পারি না, 1st টাইম বানালাম ৷”

একটা পুরুষ মানুষ এতটা ভাল রান্না করতে পারে সেটা আগে জানতো না আরু তবে আরিশ ওর জন্য প্রথম বার কিচেনে গিয়ে নিজের হাতে বানিয়েছে প্রথমবার এটা ভেবেই ভালো লাগছে ৷

__” আমার জামাইতো দেখছি multi-talented ৷”( মনে মনে)

__” এত লাফালাফি করার কিছু হয়নাই, খুব একটা ভাল হয়নি ৷ আপনার যদি এতই জানার ইচ্ছা হয় যে এটা কেমন খেতে হয়েছে তাহলে আপনিই না হয় এক চামচ খেয়ে দেখেন যে কেমন হয়েছে ৷”

নুডুলস এর বাটিটা থেকে নুডুলস নিয়ে আরিশের মুখের সামনে দিতেই আরিশ মুচকি হেসে খেয়ে নিলো ৷

__” আরিশ মুচকি হেসে বললো, সত্যিই খারাপ হয়েছে, কেমন একটা লাগছে খেতে যেনো , আজিব আজিব ৷”

(এটা সত্তি যে নিজের রান্না নিজেরই কখনো পছন্দ হয় না, আরিশের ও যেমন রুচিতে ধরে নাই তেমনটা লেখিকার ও ৷”)

আরু আরিশের দিকে বাঁকা চোখে তাকিয়ে বলল,,,,

__” এত খারাপ খাবার তো আমি একা খেতে পারিনা, তাই আপনিও খান আমার সাথে ৷”

__” তুমি খাইয়ে দিলে খাবো নাহলে না ৷”

__” পারবোনা ৷”

__” তাহলে আমিও খেলাম না, আমারো বয়েই গেলো ৷”
আরু এবার ফিক করে হেসে ফেলে বলল,,,,
__”আমার ডাইলগ আমাকেই?”

__” তুমিও তো দাও আমার ডাইলগ ওই যে ” লাইক সিরিয়াসলি ৷”

__” হোয়াটএভার ৷”

__”আবার !”

__” মিঃঅভদ্র ৷”

__” 😎 ৷”

আরু জানে যে আরিশ নিজেও সারাদিন কিছু খাইনি , যে মানুষটা ওকে এত ভালবাসে সে যে ওকে রেখে কখনো খেয়ে নেবে সেটা আরূ কখনোই বিশ্বাস করবেনা, এমনকি আরিশ বললেও না ৷ তাই নিজেও খেলো আর আরিশকেও খাওয়ালো ৷ এটাই হয়তো দুজন দুজনের প্রতি ভালোবাসা , আর আন্ডারস্ট্যান্ডিং…..(প্রতিটা সম্পর্কে এমনটাই হওয়া উচিত)

আরুর খাওয়া শেষ হয়ে গেলে আরিশ বললো,,,,
__” তুমি এখন ঘুমিয়ে পড়ো আরূপাখি,কালকে অনেক ধকল যাবে ৷ আর ঘুমিয়ে বেশি বেশি এনার্জি কালেক্ট করে নাও, আমার দেওয়া পানিশমেন্ট গুলো এখনো বাকি আছে যে ৷”(কথাটা বলৈ আরুর দিকে চোখ মারলো)

আরূর খুব হাসি পাচ্ছে আরিশের কান্ড দেখে , ও কিছুই বুঝতে পারছেনা আরিশের কথার মানে ৷ তবে আজকে কোনো পানিশমেন্ট দেবে না শুনে আরু এভার একটু মুড নিয়ে বললো,,,

__” আপনি কি এখানেই ঘুমাবেন ? না আপনি যদি তেমনটা ভেবে থাকেন তাহলে তেমনটি হচ্ছে না ৷ আপনি আমার সাথে ঘুমাবেন না, অন্য কোথাও গিয়ে ঘুমান ৷”

আরিশ মুচকি হেসে ব্যালকনিতে চলে গেল ৷

আরুর আরিশের রিয়েকশানটা যেন ঠিক হজম হলো না ৷ আরুকে নিজের করে পাওয়ার জন্য যে আরিশ এত কিছু করলো আর সে এত সহজে নিজের বাসর রাতে আরূর কথাটা এতো সহজ ভাবে মেনে নিলো ! কথাটা যেন ঠিক বিশ্বাস হলো না আরিশের , তার ওপরে সারা রাস্তায় আরিশ বলতে বলতে এসেছে যে আজ ওদের বাসর রাত ৷আর পানিশমেন্ট হিসাবে একরাশ ভালোবাসা এনে দেবে আরুকে ৷

__” তার মানে কি উনি আমার উপর রাগ করেছেন? নিজের অভিমান গুলোকে দেখাতে গিয়ে কি নিজের ভালোবাসার মানুষটাকে নিজের থেকে দূরে সরিয়ে দিচ্ছি ?আমি কি আমার কথাতে ওনাকে আঘাত দিয়ে ফেললাম?”

কথাগুলো ভাবতে ভাবতেই একরাশ ঘুম আরুর দুচোখে ভর করলো ৷

বেলকনির রেলিং এর হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে আরিস , চোখ দুটো রুমে থাকা তার প্রেয়শীর দিকে ৷ আরুর দিকে তাকিয়ে একটা দীর্ঘশ্বাস নিয়ে মনে মনে বলতে লাগল,,,,

__” তোমার কি মনে হয় না আরুপাখি যে এত কিছু করে তোমাকে কষ্ট দিয়ে তোমাকে বিয়ে করার পর আজ বাসর রাতে বাসর করার জন্য তোমার ওপর নিজের স্বামীর অধিকারটা খাটাতে পারতাম না? আমি কি জোর করতে পারতাম না তোমাকে নিজের করে নিতে? জোর না করে হলেও তোমাকে মানিয়ে নিয়ে তোমার ওপর অধিকার ফলাতে পারতাম , কিন্তু আমি যে তেমনটা চাইনা ! এতটা কঠিন রাস্তা পার করে যখন তোমাকে পেয়েছি তখন পাওয়ার পর এতটা ভালোবাসা দেওয়ার অযুহাত দিয়ে তোমার থেকে কোন কিছুই পেতে চাইনা আমি ৷ আর আমি যদি তোমার ওপর জোর খাটাতাম তাহলে তোমার একটা সময় হলেও মনে হতো যে আজ রাতের ভালোবাসাটা তুমি দিতে না চাইলেও আমি তোমার কাছ থেকে জোর করে নিয়েছি ৷ সব সময় জোর করে সব কিছু পাওয়া গেলেও মন থেকে কখনো তার সাই দেওয়া যায়না ৷ আজ রাতের পর তুমিও বুঝবে যে তুমি আমার প্রতি কতোটা আসক্ত,,,,,যেমনটা আমি তোমাকে চাই তেমনটা তুমি চাও ৷ চাইলেও কা কখনো এই আসক্তি থেকে বেরিয়ে আসতে পারবে?আমাতেই ফিরতে হবে তোমাকে ৷
এবার ভালোবাসাটা হবে অন্য যেখানে তুমি নিজেই তোমার ভালোবাসা দিয়ে তোমার মিঃ অভদ্র নামক অদ্ভুত আসক্তিটাকে কাছে টেনে নেবে ৷ আমাকে একবার তোমার নেশায় আসক্ত করে তুমি ভালোবেসে তোমার কাছে টেনে নাও তারপর তুমি আর সেই সুযোগটা পাবে না তার কারন তোমার এই. মিঃ অভদ্রটা নিজে থেকেই তোমাকে ভালোবেসে কাছে টেনে নেবে বারাবার ৷ এটাই যে আসক্তি ৷”

#চলবে,,,,

ব্যাপরগুলো বেশ অবেগী না?

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে