#তোমার_নেশায়_আসক্ত
#সিজন:2
#পর্ব:18
#Suraiya_Aayat
আরিশের আম্মু এবার আরিশের গালে হাত রেখে বললেন,,,,,,
__” কেন এমন করছিস ?”
__” আম্মু আমি কক্সবাজার যাচ্ছি প্রান্তর বিয়ের পরের দিন, 7 দিন পরে ফিরবো ৷ প্রান্ত হানিমুনে যাবে তাই আমি সাহেল আর তূর্য কক্সবাজার যাচ্ছি , অবশ্য প্রান্ত হানিমুনে সেন্ট মার্টিন যাচ্ছে তাই আমরা কক্সবাজার যাচ্ছি ৷”
আরিশের আম্মু অবাক হয়ে বললেন,,,,
__” কি বলছিস তুই এসব ! মাথা খারাপ হয়ে গেছে তোর?”
__” মাথা খারাপের কিছু হয়নি,আমি একদম ঠিক আছি ৷”
__” আরুর বিয়ে আর 5 দিন পর আর আর তুই এসব কি বলছিস?”
__” আরু ম্যাডামের বিয়ে করার শখ জেগেছে উনি করছেন, আমার কি ! উস্কা শাদি হে তো মে কেয়া কারু?🤷🏻
__” তোর মাথা খারাপ হয়ে গেছে , তাই এসব বলছিস ৷”
__” চিল আম্মু ৷”
অনিকা খান আরিশের দিকে রাগী চোখে তাকিয়ে বেরিয়ে গেলেন ৷
❤
সকাল বেলা আরূ ঘুমাচ্ছে তখন ফোনের রিংটোন এর আওয়াজ আরূরকানে পৌঁছাতেই ঘুমটা ভেঙে গেল ওর ৷
__” এত সকালে যে আমার ঘুমের বারোটা বাজিয়েছে আজ আমি তার বারোটা বাজাবো ৷”
বলে ফোনের দিকে তাকাতেই দেখল আশফি ফোন করেছে , আরূর এখন ইচ্ছা করছে ওর নিজের মাথার চুল নিজেই ছিড়তে , কেন যে নাম্বারটা আশফিকে দিয়েছিলো এই ভেবে ৷
__” এই লোকটা আমারে পাগল করে দিবে, উঠতে গেলে ফোন , বসতে গেলে ফোন, ঊফফ বিরক্তিকর ৷”
বিরক্তি নিয়ে ফোনটা হাতেই ধরে রইল তবে তুললো না আরু, কিছুক্ষণ পর ফোনটা বাজতে বাজতে বন্ধ হয়ে গেল….
আবার পরমুহূর্তেই আবার আশফির থেকে কল আসতেই এবার চরম পর্যায়ের বিরক্তি কাজ করছে আরুর মধ্যে , রেগে গিয়ে ফোনটা সুইচ অফ করে আবার ঘুমিয়ে পড়ল….
চোখটা বন্ধ করে দুমিনিট শান্ত হয়ে ঘুমিয়ে থাকতেই চোখে ঘুম ঘুম ভাবটা যখন প্রায় চলে এসেছে তখন দরজায় নক পড়ার শব্দে আরূর পুনরায় ঘুম ভেঙে গেল ৷
__” উফ এত সকালে আবার কেন বিরক্তি করে?”
ঘুমঘম কন্ঠে বলল,,,,,
__” কি হয়েছে টা কি আম্মু ?”
__” আরূ মা দরজাটা খোল, তোর অনিকা আন্টি এসেছেন তোর সাথে দেখা করতে ৷”
অনিকা খানের এসেছে কথাটা শুনেই আরূর যেনো হুস ফিরে এলো ,
__”. তাহলে উনি কি বিয়েতে রাজি ৷”
না না আর কিছুই ভাবতে পারছে না আরু, এক ঝটকায় উঠে গেল , ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখল সকাল সাড়ে আটটা , হঠাৎ এত সকালে উনি কেন এসেছেন তা নিয়ে কৌতুহল আছে ওর মধ্যে ৷
আরূ দরজা খুলে দেখল ওর আম্মু দাঁড়িয়ে আছে,
__” তোর আন্টি তোর সাথে দেখা করতে এসেছে, 5 মিনিটের মধ্যে নিচে নেমে আয় ৷”
কথাটা বলে উনি চলে গেলেন , ওনার মুখ দেখে আরু কিছুই বুঝতে পারলেন না যে উনি খুশি নাকি , অখুশি ৷ সম্পূর্ণ নিউট্রাল ৷
তাড়াতাড়ি করে ওয়াশরুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নিলো আরূ ৷
❤
__” কেমন আছো আরিশ?”
__”আলহামদুলিল্লাহ ভালো, তুমি কেমন আছো?”
__” ভালো না থেকে পারি , তোমাদের জন্য তো ভালো থাকতে হবে তাইনা ৷”
__” সে অবশ্যই, খারাপ থাকলে কি আর জীবনটা এগোবে ?”
__” বিয়েতে তুমি রাজি তো? না রাজি হলেও এখন আর কিছু করার নেই, বিয়েটা তোমাকে করতেই হবে ৷”
__” আরে তুমি তো দেখছি আগের থেকে এখন আরো বেশি ভাবতে শুরূ করে দিয়েছো ৷”
__” তুমি তো জানো যে আমি কতোটা ফাস্ট তাই আমাদের বিয়ের ব্যাপারটা নিয়ে আরো বেশিই ভাবছি ৷”
__” চিন্তা কোরো না একদম সব ঠিকঠাক হবে ৷”
__” হাহ, চিন্তা না তবে বড্ড বেশিই ব্যাকুল হয়ে পড়ছি দিনদিন ৷”
__” সব হবে বেশি ভেবোনা এটা নিয়ে ৷”
__” বাই দা ওয়ে আমি একটু কক্সবাজার যাচ্ছি পরশু ৷”
__” তাহলে বিয়ে ?”
__” ওই যে তুমি বললে যে হবে , তাহলে এখন নিজেই এতো চিন্তা করছো কেনো?”
__” একদম ঠিক বলেছো ৷”
কথাটা বলে দুজনেই হাসতে লাগলো ৷
❤
বিগত কয়েক মিনিট ধরে অনিকা খান নিঃশ্চুপ হয়ে আরুর সামনে বসে আছে , সম্পূর্ণ পরিবেশটা থমথমে, যেমনটা কোন বড় ঝড় আসার আগে পরিবেশ টা হয় ঠিক তেমনি , আরু কিছুই বুঝতে পারছে না যে উনি কি বলবেন, ওনার মুখের রিয়াকশন জিরো ৷
হঠাৎ আরূ যেই কিছু বলতে যাবে তখনই অনিকা খান একটা দীর্ঘশ্বাস নিয়ে বলতে শুরু করলেন,,,,,
__” আমি তোর কাছে ক্ষমা চাইছি রে মা , তোর সাথে আমরা যা করেছি অন্যায় করেছি , আমি সত্যিই বুঝিনি যে আমার ছেলেটা এমন একটা সিদ্ধান্ত নেবে৷ কিভাবে যে কি হয়ে গেল আমি নিজেও জানিনা, যদি জানতাম যে ও এভাবে বিয়ের জন্য না করবে তাহলে এই কথাটা কখনো ওর কানে পৌঁছে দিয়ে দিতাম না ৷”
আরু অনিকা খানের হাতে হাত রেখে বললেন,,,,,,
__” এইসব বলে আমাকে ও লজ্জিত করবেন না আন্টি , দেখো যা ছিল সেটা তোমাদের স্বপ্ন ছিল আর স্বপ্নটাকে বাস্তবায়িত করাটা কঠিন , তাই একটা কঠিন পরিস্থিতির সম্মুখিন না হলে বোঝা যায় না স্বপ্ন কে বাস্তবায়িত করার সত্ততা ৷ তাই দোষটা আমার কারোর নই, আমার কপালে যেটা ছিল সেটাই হওয়ার আর সেটাই হচ্ছে ৷”
__” নতুন জীবনে সুখী হোস মা, আশা করি আশফি বাবা খুব তোকে ভালো রাখবে , অনেক ভালোবাসবে তোকে, দোয়া করি তোর জীবন সুখের হোক ৷”
কথাটা শুনতে আরূর বুকের ভেতর মোচড় দিয়ে উঠলো , অনেকক্ষণ ধরে একটা ক্ষীন আশা নিয়ে বসে ছিল ও যে উনি হয়তো কোনো ভালো খবর দিতে এসেছেন , কিন্ত তা নয় , উনি যে আরূর নতুন জীবনের শুভকামনা করতে এসেছেন সেটা ওর ধারণাতেও আসেনি ৷ আরুর চোখের কোনে জল চলে এলো তবুও সেটা সকলের সামনে দেখালে হবে না তাহলে হয়তো সবাই বুঝে যাবে যে বিয়ে টা ও মন থেকে করছে না ৷
__” দোয়া করো আন্টি যেন সুখী হই ৷”
__” আলহামদুলিল্লাহ….”
❤
রাতের বেলা বাইরে কনকনে শীত , মাঝে মাঝে ঠান্ডা হাওয়া বয়ে যাচ্ছে, চারিদিকে ঘুটঘুটে অন্ধকার , বাড়ির সামনে সোডিয়ামের আলোটা মিটমিট করে জ্বলছে, মাঝে মাঝে আশেপাশের কয়েকটা কুকুরের ঘেউঘেউ আওয়াজ শোনা যাচ্ছে , শুনশান জনমানবহীন রাস্তা দিয়ে কয়েকজন কাঁপতে কাঁপতে হেঁটে চলেছে গন্তব্যের উদ্দেশ্য ৷ বেলকনির কাচের দেওয়ালটায় জমে থাকা কুঁয়াশাগুলো শিশিরবিন্দু আকারে টপটপ গড়িয়ে পড়ছে ৷
অনেকক্ষণ ধরেই প্রকৃতির এই সমস্ত গতিপ্রকৃতি কে খুব গভীরভাবে লক্ষ্য করছে আরূ ৷
কাচের দেওয়াল জমে থাকা কুয়াশা গুলো যখন শিশিরবিন্দু আকারে টপটপ করে ঝরে পড়ছে তখন ব্যাপারটা আরূর বেশ ভালো লাগছে, এই মন খারাপের মাঝেও যেনো কিঞচিত আনন্দ দিচ্ছে ওকে ৷ এর আগে অনেকবার এরকম দৃশ্য দেখার সৌভাগ্য হয়েছে ওর তবে আজকের অনুভূতিটা অন্য রকম ৷
কিছুটা এগিয়ে গিয়ে আলতো স্পর্শে কাচের দেওয়ালে একরাশ ভালোবাসা নিয়ে আঙ্গুল দিয়ে লিখলো A R I S H শব্দটা ৷ স্বপ্নটা পূরণ করেই আরিশের নামের থেকে কিছুটা দূরে যখন আরূশি নামটা লিখতে যাবে তখনই নামটাই একবার চোখ বোলাতেই দেখল যে নামের বর্ণমালা গুলো ঠিক তার আগের স্বাভাবিক অবস্থাতাতে নেই, শিশির বিন্দু গুলো টপটপ করে ঝরো ঝরে পড়ছে , অর্থাৎ মানুষটাকে চাইলেও হয়তো নিজের জীবনে ধরে রাখতে পারবে না আরূ , আর সে অধিকারটাও যে ওর নেই তাই বৃথা আর আরূশি নামটা লিখতে গিয়েও লিখলো না ৷ কি করবে ও লিখে যেখানে ভালোবাসাটাই একতরফা ৷
আর কয়েকদিন বাদেই অন্য কারোর হয়ে যাবে আরূ, কথাটা ভাবতেই শিউরে উঠল ও , নিজেকে আরিশের সাথে কল্পনা করেছিল , ভাবতে চেয়েছিল আরিশকে নিয়ে আরো বেশি বেশি করে , ভালোবাসতে চেয়েছিল কিন্তু আজ সব কিছই কল্পনার দোরগোড়ায় নাম লিখিয়েছে ৷
কিছুক্ষণ নীরব থেকে অঝোরে কেঁদে দিল আরূ ৷
__” কেন ভাবছি আমি ওনার কথা ? কেন ভুলতে চাইছি তবুও পারছি না ? কেন ঘৄনা করতে পারছি না ? আর কেনই বা এই আশফি নামক মানুষ টাকে মেনে নিতে দ্বিধা বোধ হচ্ছে? কেন ? কেন ? কেন? সব কিছুর উত্তর চাই আমার !
দিনদিন উনি নামক নেশাটা আরো বেশি করে আমার আসক্তিতে পরিনত হচ্ছে, ওনার প্রতে্কটা ছোঁয়া, ওনার শরীরের সেই মিষ্টি ঘ্রান, আলতো স্পর্শের সেই প্রেমানুভূতি , ওনার গলার সেই গান, সব ,সব কিছুই যে আজ আমার আসক্তি ৷
দিন দিন ওনার প্রতি ভালোবাসা কমার বদলে বেড়েই চলেছে , মন খারাপের রাজ্যের মেঘগুলো ক্রমে ক্রমে বিস্তার লাভ করলেও ভালোবাসার অনুভুতি দ্বিগুন হয়েছে ৷কেন এতোটা ভালোবাসি ওনাকে! আর যদি এতটা ভালোবাসলাম ই তখন কেন এতো দেরিতে ? আগে কি ওনার জীবনে আসতে পারতাম না ৷(আরু ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাদছে আর বলছে )
আরু এবার দৌড়ে ঘরের মধ্যে গেল গিয়ে ফ্লোরে ধপ করে বসে পড়ল ইনুর সামনে ৷
ইনুর খাঁচার ভিতর আলো জ্বলছে যাতে এই শীতেও কিছুটা গরম অনুভুতি আসে ওর ৷ ওরা যেহেতু কথা বলে নিজের ভাবটা কে প্রকাশ করতে পারে না তাই জন্যই মানুষরাও যদি ওদের অনুভূতিটাকে না বুঝে তাহলে তারাও তো এক প্রকার অবলাদের খাতায় না লেখাই ৷ যদিও বা কথা বলার মতো সৌভাগ্য টা ইনুর থাকলে আর অন্য সমস্ত পাখিদের নেই তাই তাদের কষ্টটা আরু বোঝে, তাই ওর জন্য এ ব্যবস্থা করেছে যাতে শীতে ওকে কষ্ট পেতে না হয় ৷
ইনু এই শীতে সামান্য উত্তাপ পেয়ে যেন ঘুমের ঘোরে কাতার প্রায় ৷
আরু কাঁদতে কাঁদতে বলল ,,,,
__” তুই বলনা কেনো আমি ওনাকে এতোটা ভালোবাসি, আর কি এর ব্যাখা !”
আরূর কান্নার আওয়াজে ইনু জেগে উঠলো, হঠাৎ করে এমন হওয়াতৈ ইনূ নিজেও যেন হতবাক ৷
__” কি রে বলনা , চুপ করে আছিস কেন ? কেন এত ভালোবাসি ? তুই ই তো সবার প্রথমে আমাকে বুঝতে শিখিয়েছিলি যে এটক ভালোবাসার অনুভূতি তাহলে তূই এখন চুপ কেনো?”
__”…………৷”
__” আমি থাকবো কি করে উনাকে ছাড়া? এতটা ভালোবেসে কীভাবে দূরে সরে যাবো?”
ইনু চুপ করে রয়েছে আর এদিক ওদিক তাকাচ্ছে, আজ ও নিজেও যেন ভাষা হারিয়ে ফেলেছে কিছু বলার ৷ একজন মানুষের মতো যদি ও শান্তনা দিতে পারতো তাহলে ও নিজের চেষ্টার হয়তো ত্রুটি রখতো না ৷
আরূ কাঁদতে কাঁদতে বলল,,,,,
__” অন্যসময় এত কথা বলিস তাহলে আজকে কি হচ্ছে তোর? আমার প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছিস না কেন বল? বল ! বল বল ! ”
আরু দেওয়ালে মাথা দিয়ে অঝোরে কাঁদতে লাগলো আর রইলো ইনুর উওরের অপেক্ষায়…..
সত্যি ভালোবাসা গুলো এমনই হয় , তা কখনো বা আনন্দদায়ক আবার তার থেকেও আরো বেশি বেদনাদায়ক ৷
#চলবে,,,,,,
#তোমার_নেশায়_আসক্ত
#সিজন:2
#পর্ব:19
#Suraiya_Aayat
মন খারাপ করে একমনে ছাদের এক কোণায় দাঁড়িয়ে আছে আরূ, আজকাল মনটা এমনিই ভাল থাকে না তার পরই দুপুরবেলা কলেজ থেকে ফিরে মুডটা যেন আরো বেশি খারাপ হয়ে গেছে…..আগের মতো যেন প্রান খুলে হাসতেও ভুলে গেছে,,,,এখন যেনো মুখের হাসিটাও অতীত ৷
পাশে ইনু খাঁচার মধ্যে রয়েছে আর আপন মনে পেয়ারা খাচ্ছে যেটা কিছুক্ষন আগে ভার্সিটি থেকে ফেরার পথে তিথি আরুকে দিয়েছে ইনুকে দেওয়ার জন্য ৷
একবার ইনুর দিকে তাকিয়ে সামনের বড়ো বড়ো বিলডিং গুলোর দিকে তাকিয়ে রইল আরু,,,,,,সূর্যটা দূর থেকে যেনে আরুর সাথে লুকোচুরি খেলছে, কখনো জোরে কিরন দিচ্ছে আবার কখনো বা ধীমে ,তা দেখে রিতীমতো বিরক্ত আরূ ৷
দিন দিন আরিশের উপর অভিমানের পাহাড় টাও অতিব প্রশস্ত হয়ে চলেছে তবুও অভিমান ভাঙ্গানোর জন্য মানুষটা ওর উপরে ওর কোন অধিকারে নেই যে তার সামনে গিয়ে আলতো করে তার শার্টের কলারটা ধরে তার বুকে মুখ লুকিয়ে সামান্য ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠে নিজের অভিমানটা প্রকাশ করবে ৷
ভার্সিটিতে গিয়ে যা যা হয়েছে তাতে রীতিমতো বিরক্ত আর তার কষ্ট এখনো পাচ্ছে আরূ….
________________❤
সবে ক্লাস শেষ হয়েছে, আরূর সাথে তিথি রয়েছে সানা আজকে আসেনি ৷ সন্ধ্যাবেলা প্রান্তর হলুদে যাবে বলে শপিং করতে গেছে , তাছাড়া সামনে নাকি ওর কাছের কারোর একটা বিয়ের অনুষ্ঠান আছে সেইজন্য সেখানে জমজমাটি সাজবে বলে কেনাকাটা করছে , সেই কথা শুনে আরূ ও আর কিছু বলেনি ৷ ওর নিজের বিয়ের কেনাকাটা এখনো বাকি আছে তবে তা নিয়ে ওর মাঝে কোন উদ্বেগ কাজ করছে না,ও ওর আম্মুকে বলেছে যেন উনার পছন্দমত শপিং গুলো করে আনে , ওর চোখজোড়া নাকি সবসময় ভুল জিনিসকে নির্বাচন করে ৷
ক্লাস থেকে বেরিয়েছি আরূ আর তিথি ৷ দুজনের টুকটাক কথার মাঝে আরু তিথির হাতে ওর বিয়ের কার্ড টা ধরিয়ে দিলো ৷ তিথি অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো কার্ড টার দিকে যেনো বিশ্বাস করতে পারছে না যে কি হচ্ছে ৷
তিথি অবাক হয়ে বলল,,,,,
__” এটা কার বিয়ের কার্ড?
__” ওপরে আমার নাম লেখা আছে তারমানে নিশ্চই আমারই হবে নো ডাউট ৷”
__” হঠাৎ বিয়ে ? আর কার সাথে বলিস নাই তো !”
__” সে অনেক লম্বা কাহিনী, তোকে আমি অন্যদিন,,,,,,”
এই অবধি কথাটুকু বলে আরু আর কিছু বলতে পারলো না ,তার আগেই পাশ থেকে কেউ ঢেকে উঠলো , আরূ পাশ ফিরে দেখল তূর্য দাঁড়িয়ে আছে,,,,আরু শান্ত কন্ঠে বলল,,,,
__” ভাইয়া কিছু বলবেন?আই মিন কোন দরকার ?”
__” দরকার তো ছিলো তবে আমার না আরিশের ৷ বাই দা ওয়ে আ্যটম বোমা আজকে পটকা বাজি ব্যাপারটা ঠিক হজম হচ্ছে না ৷”
আরু এই মুহূর্ত তূর্যর কথা শোনার প্রয়োজন বোধ করছে না , আরিশ ওকে কি বলবে তা অধিক গুরুত্বপূর্ণ ওর কাছে ৷
__” আরিশ ভাইয়া কোথায় আছে সেটা বললে আই থিঙক বেশী সুবিধা হতো ভাইয়া ৷”
তুর্য খানিকটা অবাক হলো আরূর এরকম শান্ত রুপ দেখে , ও ভেবেছিল কথাটা বলতেই হয়তো আরূ রেগে যাবে কিন্ত তেমনটা হলোনা ৷ সে যাই হোক তবে তা নিয়ে তূর্যর কোনো মাথাব্যথা নেই ৷
__” ক্যান্টিনে আছে ৷ 2nd ফ্লোরে ৷(যেহেতু NSU এর বিরাট ক্যান্টিন তাই তূর্য আরুকে না বললে আরূর ওকে খুঁজেতে অনেক সময় লাগবে তাই )
আরূ তিথির দিকে তাকিয়ে বলল,,,,,
__” তুই গাড়িতে গিয়ে বস 2 মিনিটের ব্যাপার আমি এক্ষুনি চলে আসব ৷”
__” আচ্ছা ঠিক আছে তাড়াতাড়ি আই ৷”
এই বলে আরূ তুর্যকে আর কিছু না বলে সেকেন্ড ফ্লোরে চলে গেল ৷ আরিস সেখানে আড্ডা দিচ্ছে সাহেলের সাথে , প্রান্ত হয়তো বিয়ের চাপে আজকে কলেজে আসতে পারেনি ৷
আরু আরিশকে দেখেই থেমে গেল , একতরফা ভালোবাসর ঝড় বয়ে যাচ্ছে মনের মধ্যে , এই মানুষটাকেই ও কত ভালবাসে, যার জন্য দিনরাত চোখের জল ফেলেই চলেছে ৷
যে ভালোবাসা পাই জীবনটা তার জন্য সুখের আর যে ভালোবাসাটা পাই জীবনটা তার জন্য দুঃখের ৷
এতটা রাস্তা আরু দৌড়ে দৌড়ে এসেছে আরিশকে দেখার উত্তেজনায়, তবে এখানে এসে যেন পা দুটো আর চলতে চাইছে না থেমে রয়েছে, ধীর পায়ে আস্তে আস্তে আরিশের কাছে গেল, নিচের দিকে তাকিয়ে আছে আরু ৷ আরূ এগিয়ে যেতেই আরিশ সাহেলকে ইশারা করলো সেখান থেকে বেরিয়ে যেতে ৷
সাহেল চলে যেতেই আরিশ আরূর দিকে তাকালো, আরূকে আসতে দেখে আরিশ ওর মুখের চওড়া হাসিটাকে ক্রমশ সংকুচিত করে একটা টেডি স্মাইল দিল…..
আরূ আরিশের কাছে গেছে , আরিশের চোখে চোখ মেলানোর সাহসটুকু ওর মধ্যে নেই , হয়তো তাকালেই বেশি আবেগাআপ্লুত হয়ে পড়বে , হয়তো আরিশের অগোচরে কয়েক ফোঁটা জল ও গড়িয়ে পড়বে চোখ থেকে…..
আরিশ এবার উঠে দাঁড়িয়ে আরূর সামনে গিয়ে দাঁড়ালো , খানিকটা ঝুকে গেল আরিশ আরূর দিকে ৷
আরূর বুকের ভিতর এখন টিপটিপ করছে, কি বলতে চাইছে আর কিই বা করতে চাইছে আরিশ তার কিছু বুঝতে পারছে না আরু , তবুও আগের মতোই মাথা নিচু করে চোখ বন্ধ করে রয়েছে ৷
__” এই যে আপনি তাকাচ্ছেন না যে আমার দিকে, মাথা নিচু করে আছেন কেন? তাকান !”
আরু কিছু বলছে না মাথা নিচু করেই আছে আগের মতো ৷
__” কি হলো তাকান !”
আরূর কোনো পরিবর্তন নেই , আরূ এবার মুখ ফুটে বলল,,,,
__” আপনার কি দরকার আছে তাড়াতাড়ি বললে আমার সুবিধা হয় ৷”
__” আচ্ছা , ম্যাডামের অনেক তাড়া দেখছি ৷ তা বিয়ের প্ল্যানিং চলছে বুঝি !”
__” আমার বিয়ের প্ল্যানিংটা আমি কিভাবে করছি সেটা কি আপনাকে জানাতে হবে ?”
__” ওকে সরি, ভেরি সরি ৷ সত্তিই তো তা কেনো আমাকে জানাতে যাবেন ! সে যাই হোক বিয়েতে ইনভাইট করলেন না তো , একা একাই বিয়েটা সেরে ফেলার ধান্দায় আছেন নাকি ? বিয়ের কার্ড এখনো পেলাম না তো !”
আরূ ভেবেছিল আরিশ অন্য কিছু বলবে তবে আরিশ যে এভাবে ওর কাছে ওর বিয়ের কার্ড চাইবে সেটা বুঝতে পারেনি ও , তাই রেগে গিয়ে বলল,,,,
__” যেচে নিমন্ত্রিত হতে চাইছেন?”
__” যদি বলি হ্যাঁ , আর বিয়েতে ইনভাইট না করলে তো আর বিয়ে করতে যাওয়া যায়না আইমিন কোন বিয়ের অনুষ্ঠানে যাওয়া যায় না সেটাই বলতে চাইছিলাম আরকি ৷”
রাগে-দুঃখে অভিমানে আরূর চোখের কোনে জল জমে এল , অশ্রু ভরা চোখে আরিশের দিকে তাকিয়ে বলল,,,,,
__” নিশ্চয় ইনভাইট করব , একদম নিশ্চিন্ত থাকবেন….আর হ্যাঁ আসবেন কিন্ত নাহলে কষ্ট পাবো ৷আর দোয়া করবেন যেন নতুন জীবনে সুখী হয় ৷”
__” আমিন !” (কথটা একটু টেনেই বলল)
আরূ চলে যেতে লাগল , চোখের কোনে জমে থাকা জলটা জামার হাতা দিয়ে কোনক্রমে মুছে নিল….
আরূ ক্রমশ দূরে চলে যাচ্ছে আরিসের নজর থেকে অনেক দূরে , দরজার শেষপ্রান্তে যেতেই আরু পিছন ঘুরে আরিশকে বলল,,,,,
__” আই হেট ইউ ৷”(জোঁরে চেচিয়ে বলল)
আরিশ শুধু মুচকি হাসছে….
_______
কথাগুলো ভাবছে আর আরুর মনটা ভেঙে টুকরো টুকরো হয়ে যাচ্ছে,যাকে বিয়ে করে সংসার করতে চেয়েছিল আজ তাকেই নিজের বিয়েতে ইনভাইট করতে হবে এর থেকে কষ্টের আর কিছু হতে পারে না….
আরু অনেকক্ষণ ধরে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে, নিস্তব্ধ সম্পূর্ণ , ইনুও হয়তো এমন আরুকে এর আগে কখনো দেখিনি তাই এবার
জোরে জোরে চেঁচিয়ে বলল,,,,,,
__” আরু কথা বল, আরু কথা বল ৷”
আরু না পেরে এবার ফুঁপিয়ে ওঠে ইনুকে বলল ,,,,
__” সমস্যাটা কি তোর ? আমার নিস্তব্ধতা কি তো সহ্য হচ্ছে না ? এতদিন ধরে সবাই বলতো আমি খুব কথা বলি, খুব চঞ্চল , বেখেয়ালি ! এখন যখন সমস্ত বেখেয়ালিপনা, সমস্ত চঞ্চলতার স্বাধীনতাকে ছেড়ে দিয়ে যখন শান্ত হয়ে গেছি তখন কেন বিরক্ত করছিস আমাকে ? বুঝেছি তোর ও সবার আমার সাথে থাকতে ভালো লাগছে না তাই, তো তুইও চলে যা , আমি তো তোকে আটকে রেখেছি তাই না ! যা তুই মুক্ত ৷”
এই বলে আরুর ইনুর খাঁচার দরজা খুলে দিল ৷
খাঁচার দরজা খুলে দিয়েছে তবুও ইনু খাঁচা থেকে বার হচ্ছে না, ওউ হয়তো চায় আরূর দুঃখের শামিল হতে কিন্তু আজ ও নিজের সমস্ত কথা ভাষায় প্রকাশ করতে পারে না বলে হয়তো আরুও ওকে মুক্তি দিতে চাইছে ৷
ইনূ আরূর দিক থেকে মুখ ঘুরিয়ে খাঁচার অপর দিকে তাকিয়ে রইলো ৷
__” কিরে আরু মা এত চেচামেচি কিসের?”
আরূর মা বলতে বলতে আসলো,,,,,
আরু একবার ফুপিয়ে ফুপিয়ে বলতে লাগল,,,,
__” তুমিও চলে এসেছে? বুঝেছি তোমরা চাও না আমি একটু একা থাকি তাইনা….?”
__” তুই খামোখা আমার উপর রাগ দেখাচ্ছিস কেন ? আমি কি করলাম? আর কি হয়েছে বল!”
__” না তোমরা কিছুই বোঝোনা আর কিছুই করোনি, শুধু আমিই করি সব দোষ , আমি ৷”
আরুর মা এবার কেঁদে ফেললেন তা দেখে আরূর এবার নিজের মধ্যে অনুশোচনা হতে লাগল ,
নিজেকে ক্রমশ শান্ত করে বলল,,,,
__” না আই এম রিয়েলি সরি আম্মু , আমার মাথার ঠিক নাই ৷”
ঈনি আর কিছু না বলে কাদতে কাদতে বললেন,,,, __” আমিতো শুধু তোকে বলতে এসেছিলাম যে আজকে তোর বিয়ে বাড়িতে যাওয়ার দরকার নেই , ওখানে আরিশ ও যাবে গেলেই তোর মন খারাপ হবে ৷”
__” এখানে আরিশ আছে, ওখানে আরিশ আছে, এই ঢাকায় আরিশ আছে, এই পৃথিবীতে আরিশ আছে, সব জায়গায় তোমাদের আরিশ আছে ৷ আর এই আরিশের জন্য আমি পৃথিবী ছেড়ে দিই !”
আরূর কথা শুনে উনি আর সেখানে দাঁড়াতে পারলেন না, চলে গেলেন ওখান থেকে ৷ এই কদিনে মেয়েটার মধ্যে এত পরিবর্তন হয়েছে যে উনি উনার সারা জীবনেও দেখেননি ৷
চলবে,,,,,,,,