#তোমার_নেশায়_আসক্ত
#সিজন:2
#পর্ব:16
#Suraiya Aayat
তাড়াতাড়ি করে আরিশদের বাড়িতে থেকে ফিরে দৌড়ে নিজের রুমের দিকে গেল আরূ ৷ তাড়াতাড়ি করে ওয়াশ রুমে ঢুকেই হড়হড় করে বমি করে দিল , চোখ মুখ সব জ্বালা করছে , সমস্ত শরীর জুড়ে বিক্ষিপ্ত এক অনুভূতি হচ্ছে, দুর্বল দুর্বল লাগছে নিজেকে ৷
ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে এসে কাঁপতে কাঁপতে ফ্লোরে বসে গেল আরু ৷
বাইরে ঘোর অন্ধকার , শীতের দিনের সন্ধ্যা তো সেই কারণে চারিদিকে ঘন কুয়াশা জমেছে ৷ ঘন কুয়াশার কিছু অংশ খুলে থাকা বেলকনির দরজা দিয়ে ঘরের ভিতরে এসে সমগ্র ঘরটা জুড়ে শীতল অনূভুতি জাগাচ্ছে ৷ ঠাণ্ডা ফ্লোরে বসে পড়ল আরু ৷ ক্রমে ক্রমে কেঁপে কেঁপে উঠছে আর অদ্ভুত এক বেদনায় জর্জরিত হচ্ছে ৷
হঠাৎ করেই হাউ হাউ করে কেঁদে দিল আরূ ৷ জীবনে প্রথম এমন এক অনুভূতি হচ্ছে যেখানে নিজেকে খুবই নিকৄষ্ট মনে হচ্ছে ৷এমনটা আগে কখনো হয়নি , আসলে সেইভাবে জীবনে কাউকে কখনো ভালোবাসার কথা ভাবেনি আরূ তাই হয়তো কষ্টটা আরো বেশি ৷
ফুপিয়ে ফুপিয়ে কাদতে কাদতে বলে উঠলো,,,,
__” আমি কি এতটাই খারাপ যে উনার পক্ষে আমাকে বিয়ে করো সম্ভব নয় ৷”
পরখনেই বলে উঠলো,,,,
__” না না এটা আমি কি বলছি , উনি তো অন্য কাউকে ভালোবাসেন ! কেন আমার সাথে এরকম হলো ? কেন উনি আমার জীবনে এলেন এবং ক্ষণিকের মধ্যে সমস্ত জীবনটাকে উথালপাথাল করে দিলেন ? আমি কি এতটাই খারাপ? আর যদি আমাকে ভালো নাই বাসেন তাহলে কেন বারবার আমাকে এতোটা নিজের কাছে টেনে নিয়েছেন , চাইলেই তো পারতেন আমাকে দূরে সরিয়ে দিতে তবে কেন এমন আবেগে জড়ালেন আমাকে ? কেন ?কেন ?কেন? কেন? আমার সাথেই কেন এমন হতে হল… আমার জীবনের গল্পটা অন্য হলেও তো পারতো !”
কথাগুলো বলছে আর অনবরত আরূর চোখ দিয়ে টপটপ করে জল গড়িয়ে পড়ছে, জীবনের এমন একটা পর্যায়ে এসে ও যেখানে নিজেকে গুছিয়ে নেওয়ার কথা ভেবেছিল, একজনের হাত ধরে চলতে চেয়েছিল আর যেদিন বুঝেছিল তার অনুভূতি টা সামান্য কোন অনুভূতি নয় এটা একটা ভালোবাসার অনুভূতি , যার কারণে দীর্ঘ এক সপ্তাহ ধরে নির্ঘুম রাত কাটিয়েছে , একজন কল্পনাবিলাসীর তালিকায় নিজের নাম লিখিয়েছে , আজ সব স্বপ্ন ভেঙ্গে চুরমার হয়ে গেল ৷
আরু কাঁদতে লাগল অনবরত ৷ চোখগুলো চোখ থেকে অনবরত জল গড়িয়ে পড়ছে টপটপ করে ৷ এমনভাবে কখনো কাঁদেনি ও…..
হঠাৎ দরজায় নক করতেই আরূর সমগ্র শরীর কেঁপে উঠল,,,,,,
__” আরু মা আমার , দরজা খোল ৷ দরজা বন্ধ করে কি করছিস তুই? দরজা খোল মা , দেখ আমি এসেছি , তোর সাথে কিছু কথা আছে আমার ৷ আম্মূ দরজাটা খোলো ৷”(কাঁদোকাদো গলায়)
আরু বুঝতে,পারলো ওর আম্মু চলে এসেছে, এবার নিজের মুখ চেপে কাঁদতে লাগল ও , এখন জোরে জোরে কাঁদতে পারবে না তাহলেই ওর আম্মু শুনে ফেলবে আর তখন উনিও ওর সাথে কষ্ট পাবে ৷ নিজেকে সামলাতে মুখটা চেপে রেখে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাদছে ৷ নিজেকে ক্রমাগত সামলানোর চেষ্টা করছে তবুও যেন পারছে না , কিন্তু ওকে যে পারতেই হবে , এতটা অধিকার নিয়ে যখন কান্না করতে পেরেছে তখন সেই অধিকার দিয়ে আবার কান্না থামাতেও পারবে ও ৷ তাড়াতাড়ি করে দৌড়ে ওয়াশরুমে গিয়ে চোখেমুখে জল দিল, নিজের মুখটা আয়নায় বারবার দেখছে তবুও যেন আগের মত স্বাভাবিক চেহারায় ফিরতে পারছেনা ৷ অনবরত চোখেমুখে জল দিয়েই চলেছে তবুও স্বাভাবিক হচ্ছে না দেখে আবার ফুঁপিয়ে কাঁদতে শুরু করল ৷
__”আমি কেনো পারছি না ! এবার আমি আম্মুকে কি বলবো? কি করে বোঝাবো যে আমি ওনাকে অনেক ভালবাসি , উনি যে আমার অদ্ভুত এক আসক্তি ৷”
পরমুহূর্তে আবার নিজের মনকে বোঝালো,,,,,
__” আরু তোকে যে পারতেই হবে, ইউ হ্যাভ টু ডু ইট ৷”
আরু বেশ কিছুক্ষন সময় নিয়ে নিজেকে কোনক্রমে সামলে বেরিয়ে এলো, তবে মুখে একটা মিথ্যা হাসি নিয়ে ৷ মুখে হাসিটা এনে আয়নাতে মুখটা একবার দেখে নিল ৷
এমনটা হয়তো আগে কখনও করার প্রয়োজন হয়নি ওর ৷ ভালোবাসা ওর জীবন টাকে সম্পূর্ণ পরিবর্তন করে দিয়েছে….
আরু দরজাটা খুলে নিয়ে শান্ত হয়ে ধীর পায়ে বিছানায় বসলো,,,,
মাথাটা নীচু করে আছে , মাথাটা উঁচু করে তোলার ক্ষমতা ওর নেই , ওর চোখ মুখ দেখলেই ওর আম্মু বুঝতে পারবে যে এতক্ষণ ধরে কান্না করেছে তখন আবার হাজারো প্রশ্ন করবে আর সেগুলোর সম্মুখীন হওয়ার ক্ষমতাটুকু আরুর মাঝে আর নেই , সবচেয়ে বড় কথা হলো কি উত্তর দেবে সেটাই ওর জানা নেই ৷
আরুর মা রূমে ঢুকে তাড়াতাড়ি করে আরূর পাশে গিয়ে বসলেন , তারপর আরূর মুখে হাত রেখে বললেন,,,,,
__”দেখ মা যা হয়েছে ভুলে যা , আমাদেরই ভুল এইভাবে আগে থেকে তোদের বিয়েটা ঠিক করা ৷ আর এটাতো ঠিক তাই না যে একজনের অনুভূতিটা কোনভাবেই পাল্টানো যায় না , আমি যদি জানতাম যে এরকম দিনের মুখোমুখি হতে হবে তো কখনই এমনটা করতাম না ৷ কেবলমাত্র স্বপ্ন দেখেছি, স্বপ্ন যে আগে কখনো বাস্তবে পরিণত হবে কি সেটা নিয়ে কোনো রকম কোনো সংশয় রাখিনি কখনো, সেই জন্যই হয়তো আজ এরকম দিন দেখতে হলো ৷ “(উনিও কাঁদো কাঁদো গলায় বললেন ৷ উনিও মন থেকে প্রচন্ড ভেঙে পড়েছেন ৷ যখন থেকে আরূ আর আরিশ স্বাভাবিক জ্ঞান বুদ্ধি সম্পন্ন হয়েছে তখন থেকে ওদের বিয়েটা নিয়ে কত স্বপ্ন দেখেছে দুই পরিবার, তখন এটা ভাবেনি যে পরে কি হতে পারে ৷
আরু ক্রমশ নিজেকে স্বাভাবিক করে বলল,,,,,
__” আমি কিছু মনে করিনি আম্মু , আমার তো শরীর খারাপ লাগছিল বলে আমি চলে এলাম , আর এগুলো হতেই পারে, ইটস নরমাল ৷ আর তুমি কি ভাবলে আমি ওনাকে পছন্দ করি? একদম নয় ,আমি তো ওনাকে দু’চোখে সহ্য করতে পারি না , ওনার সাথে যে কত ঝামেলা করি তার ঠিক নেই, আর উনি যা করেছেন ঠিক করেছেন , বেশ করেছেন , আমি কারোর যগ্্যই নই ৷”
কথাটা বলে আরু আর নিজেকে ধরে রাখতে পারলো না, ও ওর মাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে লাগল হাউহাউ করে ৷ ওর কান্না দেখে ওর মাও ক্রমাগত কাদছেন ৷ উনি এটা ভেবেই কষ্ট পাচ্ছেন যে যখন ওনার মেয়েটা ভালোবাসা আবেগ এই সমস্ত জিনিস গুলো কে বুঝতে শিখেছে তখনই ওর ভালোবাসায় ব্যর্থতার ছাপ ৷ উনি নিজেকে আর ঠিক রাখতে পারছেন না ৷
__” তুই কাঁদিস না, দেখবি সব ঠিক হয়ে যাবে, তুই চিন্তা করিস না…..”
আরু কাঁদতে কাঁদতে ওর আম্মুকে বলল,,,,,
__” আম্মু তুমি এ কথাটা বাপিকে জানিও না তাহলে বাপি খুব কষ্ট পাবে আর ভেঙে পড়বে , আমি চাইনা আমার কারণে কেউ কষ্ট পাক ৷”
_”তোর কারনে কিছুই নয়, যা হয়েছে সব আমাদের কারনেই হয়েছে , আমাদের ব্যাপারটা নিয়ে ভাবা উচিত ছিল ৷”
আরু আর কিছু বলছে না ,বলার আর কোন ভাষাও নেই ওর ৷ কেবলই কেদেই চলেছে ৷ এরপরে ওর জীবনে কি ঘটতে চলেছে হয়তো তার নিয়ন্ত্রণ আর ওর নিজের মধ্যেই নেই , হয়তো বিতৃষ্ণা চলে এসেছে নিজের প্রতি ৷ একটা মানুষ ওর জীবনে এসে ওর জীবনটাকে এভাবে পাল্টে দেবে সেটা ও কখনো ভাবেনি….
🧡
__” কি হয়েছে তোমার আম্মু? তুমি এমন করছ কেন? আর আমার মনে যেটা আছে আমি সেটাই বলেছি, আমি ওনাকে বিয়ে করে মনে মনে অন্য একজনকে ভালোবাসতাম সেটা কি উনার প্রতি অন্যায় হতোনা তুমি বলো ?”
__” তোর সাথে আমার কোন কথা নেই, তুই বেরিয়ে যা ৷ আর এক মুহূর্তও আমার চোখের সামনে থাকবি না , বেরিয়ে যা….”
__” কিন্তু তুমি আমার অবস্থাটা বোঝার চেষ্টা করছো না !”
__” বললাম না তুই চলে যা ৷”
কথাটা শোনামাত্র আরিশ আর একমুহূর্তও দাঁড়ালো না বেরিয়ে গেল ৷ ও জানে ওর আম্মুর এখন মাথার ঠিক নেই যা বলবে তাতেই রেগে যাবে , তাই আর বেশি কথা বাড়ালোনা আরিশ , যা হয় পরে দেখা যাবে ৷
🧡
কালকের অনেক কান্নাকাটি করার পর রাত্রে অত্যন্ত মাথা ব্যাথা করছিল আরুর তারপর ঘুমানোর পর ঠিক হয়েছে ৷ সকালবেলা উঠেও মাথাটা কেমন ঝিমঝিম করছে ৷
__”কালকের ঘটনাটার পর অনিকা খান ফোন করে অনেক বার ক্ষমা চেয়েছেন ওনার ছেলের কার্যকলাপের জন্য, তবুও উনার যে কোন দোষ নেই , উনি নিজের মনের কথাটাই জানিয়েছেন , সত্যি উনি যাকে ভালোবাসেন সে সত্যিই অনেক লাকি ৷”
কথাটা বলে মিথ্যা একটা হাসি দিয়ে ওয়াসরুমে যেতে গেলেই ওর ফোনটা বেজে উঠল ৷
আজকের দিনটা যদি অন্যরকম হতো তাহলে হয়তো কালকেই আরিশকে নিজের ভালবাসার কথাটা জানিয়ে দিত আর ফোনটা হয়তো এখন আরিসের ই হতো আর আরুও তখন ব্যস্ততা নিয়ে নিজেও ছুটে যেত ফোনটা ধরার জন্য ৷ কিন্তু তেমনটা তো চাইলেও আর হওয়ার নই ৷ধীরপায়ে গিয়ে ফোনটা হাতে নিয়ে দেখল সানা কল করেছে , মুচকি একটা হাসি দিয়ে ফোনটা ধরতেই সানা বলে উঠলো,,,,,,
__” আর ইউ ওকে আরূ?”
__”ইয়াহ, আই এম ফাইন, আমার আবার কি হবে!”
__” নাহ মানে কালকে যেটা হলো সেটার জন্যই বলছি ৷”
__” আরে আমি কিছু মনে করিনি , এটাই নরমাল ৷ আর আমিতো জানি আমি কারো যোগ্য নয় সেই কারণেই হয়তো এমনটা,,,,,,,,
সে সব কথা বাদ দে , তুই আজকে ভার্সিটি যাচ্ছিস তো?”
__” আমি তো সেটা জানার জন্যই তোকে ফোন করেছিলাম ৷”( মনমরা হয়ে )আমি ভাবলাম তুই হয়তো যাবি না ৷”
__” হাস, আমিতো যাবোই আর তুইও যাবি ,না গেলে মার দিবো তোকে ৷”
__” আচ্ছা যাব ৷”
__” তাহলে ভার্সিটিতে দেখা হচ্ছে ৷ আর আন্টিকে বলিস যেনো ব্যাপারটা নিয়ে মন খারাপ না করে , আর ওনার উডবি বৌমার জন্য যেন সমস্ত ভালোবাসা তুলে রাখে যেগুলো এতদিন আমার জন্য রেখেছিলেন ৷ আর আরিশ ভাইয়ার উপর যেনো রাগ করে না থাকেন ৷”
__” আম্মু কথাটা মেনে নিতে পারছে না ৷”
কথাটা শুনে আরু একটা দীর্ঘশ্বাস নিল তার সাথে চোখ থেকে এক ফোঁটা জল ও গড়িয়ে পড়লো ৷
🧡
আরু ওর মায়ের সাথে কথা অনেক কাটাকাটি করে, অনেক আবেগের যুদ্ধ করে তারপর আজকে ভার্সিটিতে এসেছে ৷ উনি আরুকে বারবার আসতে বারণ করেছিলেন কারণ কালকে যা হয়েছে তারপরে আরূ অনেকটা অসুস্থ হয়ে গেছে , একদিনেই আরুর চোখ মুখ আর চেহারার পরিবর্তন ঘটে গেছে তা যে কেউ দেখলেই বুঝতে পারবে…..
ভার্সিটিতে এসে ভার্সিটির মাঠে সবুজ ঘাসের উপরে একমনে চুপচাপ বসে আছে আরু , সানা আর তিথি এখনো আসেনি ৷ অন্য দিন হলে হয়তো এতখন চুপচাপ না থেকে ফোনটা বার করে কার্টুন দেখতে আরম্ভ করে দিতো আরূ, কিন্ত অন্যদিনের তুলনায় আজকের দিনের পার্থক্যটা অনেক বেশি, অনেকটাই বেশি ৷ নিজেকে অনেকটাই পরিবর্তনশীল লাগছে ওর, এত নিরবতার মাঝে নিজেকে কখনো অনুভব করেনি ৷ ওর কাছে এখন মনে হচ্ছে সমগ্র পৃথিবীটাই যেনো নিরব কিন্তু এটা যে ভুল ধারণা ! সারা পৃথিবী চলমান থাকলেও নিস্তব্ধ হয়ে গেছে কেবল ও নিজেই , আর তা ও বুঝতে পারছে কিন্তু স্বীকার করছে না , স্বীকার করলেই যে দুর্বল হয়ে পড়বে, আর তা হলে কখনোই ওর পক্ষে আরিশকে ভোলা সম্ভবপর হয়ে উঠবে না……
হঠাৎ পিছন থেকে একটা পুরুষালী কন্ঠস্বর পেয়ে সামান্য কেঁপে উঠলো আরু ৷ আরিশের গলার আওয়াজ না হলেও অন্য কোন একজন ছেলে যে ওকে ডাকছে এখন সেটা ও ভালোই বুঝতে পারছে৷ পিছনে ঘুরে তাকিয়ে দেখল একটা ছেলে দুই হাত পিছনে রেখে দাঁড়িয়ে আছে ৷ তাকে দেখে তৎক্ষণাৎ তারাতারি উঠে দাঁড়ালো আরূ ৷
আরূ উঠে দাঁড়াতেই ছেলেটা আমতা আমতা করে বলল,,,,,,
__” একচুয়ালি আমার তোমার সাথে কিছু কথা আছে, সেটা বলার জন্য তোমাকে ডাকলাম ৷
__” হমম ভাইয়া বলুন কি বলবেন ৷”
ছেলেটা এবার পিছন থেকে হাত দুটো সামনে এনে হাতে থাকা গোলাপ ফুলটা আরুর দিকে ধরল ৷
__” আই লাভ ইউ এন্ড আই ওয়ান্ট টু ম্যারি ইউ ৷ উইল ইউ ম্যারি মি ৷(একনাগাড়ে কথা গুলো বলে ফেলল)
হঠাৎ করে এমন কিছু যে হবে সেটা ও ভেবে উঠতে পারেনি , আর এত কিছু কিভাবে হলো কিছুই বুঝতে পারছে না আরু ৷ ছেলেটাকে না ও কখনো দেখেছে আর না ওকে চেনে , ইভেন ভার্সিটিতেও কখনো দেখিনি আরু তাকে ৷ তবে অন্যদিন হলে হয়তো আরু এখনই গোটা কতক চড় বসিয়ে দিত তার গালে তবে এখন পরিস্থিতি সম্পূর্ণ ভিন্ন, তাই শান্ত স্বরে বললল,,,,,,
__” ভাইয়া আপনি এসব কি বলছেন? আর আমি আপনাকে চিনিও না, কিভাবে কি ?”
__” তুমি আমাকে চিনবে না এটাই স্বাভাবিক কিন্তু আমি তোমাকে চিনি প্রায় 2 মাস ধরে, এতদিন তোমাকে ফলো করেছি আর তোমাকে খুব ভালো লেগেছে , তাই আজকে অনেক সাহস নিয়ে বলতে এসেছি ,তাই প্লিজ না করোনা ৷”
আরু আর কিছু বলতে যাবে তখন হঠাৎই দেখল ভার্সিটির গেট দিয়ে আরিশ আর প্রান্ত ঢুকছে ৷
ওরা দু’জনই আরুর দিকে তাকিয়ে আছে ৷ আরুর নজর আরিশের দিকে আর আরিশের ও ৷আরিশকে দেখে কালকের সমস্ত কথা আবার মনে পড়ে গেল আরুর ৷ পুরনো কথাগুলো আবার যেন দগদগ করে উঠতে লাগলো আবার , তাই সামান্য আরিশের প্রতি রাগ আর অভিমান নিয়ে আরিসের থেকে চোখ সরিয়ে নিয়ে সামনে দাঁড়িয়ে থাকা ছেলেটার কাছ থেকে ফুলটা নিয়ে নিল, তারপরে সামান্য জোরেই বলল,,,,,
__” আমিও আপনাকে বিয়ে করতে চাই….”
__” সত্যি !”
__” হমমম ৷”
__” থ্যাঙ্কস আ লট , তুমি এত তাড়াতাড়ি আমাকে মেনে নেবে আমি সেটা কখনো ভাবি নি , বাই দ্যা ওয়ে আমি আশফি ৷”
__” আমি আপনাকে বিয়ে করতে চাই খুব তাড়াতাড়ি আই মিন এক সপ্তাহের মধ্যেই তাই আমি চাই আপনি আজকেই আমার বাড়িতে গিয়ে আমার বাড়ির লোকের সাথে কথা বলবেন বিয়ের ব্যাপারে ৷”
__” সিউর ৷ আমিতো তোমাকে বিয়ে করতেই চাই তাই যত তাড়াতাড়ি হোক ততই ভালো তবে কালকে গেলে তুমি কি রাগ করবে?”
__” আপনার প্রতি রাগ করলে আমার চলবে না, ভালোবাসা দিয়ে সবটা শুরূ করতে হবে তাই যত তাড়াতাড়ি পারেন তত ভালো হয় ৷”( আরিশকে শুনিয়ে)
কথাগুলো প্রান্তর কান অবধি পৌছালো তবে খুব একটা হজম হলো না তাই তাড়াতাড়ি করে ওদের সামনে এগিয়ে গেলো আরিশ আর প্রান্ত ৷ দুজনে এগিয়ে আসতেই আরু আর আশফি দুজন সামনের দিকে তাকালো….
প্রান্ত সামনে আরিশের পিছনে দাঁড়িয়ে আছে , পকেটে হাত রেখে দেখছে যা যা হচ্ছে ৷ ওকে এখন দেখে মনে হচ্ছে যে ওর থেকে নিশ্চিত আর কুল মানুষ এই পৃথিবীতে নেই, টর্নেডো ঝড় ওর ওপর দিয়ে গেলেও ও স্বাভাবিক অবস্থায় থাকবে, পুরো চিল মুডে আছে ৷
__” তোমরা কি খুব বিজি? আসলে একটা দরকার ছিল ৷”(প্রান্ত)
আশফি আরূর দিকে তাকিয়ে বলল,,,,,,
__” উনাকে তো ঠিক চিনলাম না, কে উনি?”
আরু আশফির কথার উত্তর না দিয়ে প্রান্তকে বলে উঠলো,,,,,
__” জ্বী ভাইয়া ৷ আপনি কি কিছু বলবেন , মানে জরুরী কিছু?”
__”হ্যাঁ দরকারি কিছুই ৷”
কথাটা বলে প্রান্ত ওর হাতে থাকা কার্ডটা আরুর হাতে দিল ৷
__” পরশুদিন আমার বিয়ে, তুমি এসো প্লিজ ৷ বিয়ের প্রথম কার্ড এটা , তোমাকেই দিলাম ছোট বোন মনে করে ৷ এসো কিন্তু ভালো লাগবে আসলে…..”
__” প্রথম কার্ডটা আমাকে দিলেন ! বেশ ভালো , তবে আমাকে একা দিলেন যে আমার উডবিকে দেবেন না?”
প্রান্ত অবাক চোখে তাকিয়ে বলল,,,,,,
__” তোমার বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে?”
__” হ্যাঁ ভাইয়া আগামী এক সপ্তাহের মধ্যেই আমাদের বিয়ে ৷ দোঁয়া করবেন ৷”
প্রান্ত এবার হতভম্ব হয়ে আর খানিকটা রাগী চোখে পিছন ঘুরে আরিশের দিকে তাকালো, আরিশ এখনো আগের মতই ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে,
ওর হাবভাব দেখে কিছুই বুঝতে না পেরে আরূর দিকে তাকিয়ে মিথ্যা একটা হাসি দিয়ে বলল,,,,,,
__” আসলে সরি আমি জানতাম না তো তাই ৷ বাই দ্যা ওয়ে তুমিও এসো আশফির কাঁধে হাত রেখে ৷”
__” নিশ্চয়ই যাবো ভাইয়া , ভালো লাগলো আপনাদের সাথে পরিচয় হয়ে ৷”
__” আসবেন কিন্তু , আমার খুব ভালো লাগবে আপনারা বিয়েতে আসলে ৷”
__” নিশ্চয়ই যাবো , আপনার যখন এত কষ্ট করে ইনভাইট করেছেন তখন তো যেতেই হয় ৷”
প্রান্ত আর দাঁড়ালোনা, আরিশের দিকে সামান্য রাগী চোখে তাকিয়ে চলে গেলো ৷
আরিশ যেতে গিয়ে আবার পিছন ঘুরে আরুকে উদ্দেশ্য করে বলল,,,,,
__” মিস আরুশি যা করার একটু তাড়াতাড়ি করবেন,আমার আবার ধৈর্য জিনিসটা কম বেশিদিন ওয়েট করতে পারিনা ৷ ”
আরু হতভম্ব হয়ে রইল আরিসের কথাটা শুনে ৷ ও কিছুই বুঝল না আরিশের কথার মানে টা ৷
চলবে,,,,,,,
#তোমার_নেশায়_আসক্ত
#সিজন:2
#পর্ব:17
#Suraiya_Aayat
ভার্সিটি থেকে বাড়ি এসে আরূ রুমে বসে আছে, বিছানার উপর বসে দুহাত দিয়ে বিছানার চাদরটা কে শক্ত করে মুঠি করে ধরে আছে , সারা শরীর জুড়ে অস্থিরতা বিরাজমান , এই শীতেও দরদর করে ঘামছে আর বারবার কেবল মনে পড়ছে পুরনো স্মৃতিগুলো ৷ কেন ভুলতে পারছেনা আরিশকে ! ওকে তো ভুলতেই হবে ৷ জেদের বশে নিজের জীবনের এত বড় একটা সিদ্ধান্ত কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই নিয়ে ফেলেছে ও ৷ যাকে চেনে না, জানে না , সে কি করে, কোথায় থাকে , তার সম্পর্কে কোন বিন্দুমাত্র হিতাহিত ধারনা টুকুও আরূর নেই, এমনকি যখন বিয়েতে হূট করে রাজি হয়ে গেল তখন নামটাও যানতো না , সেই পরিস্থিতিতে আসফির সঙ্গে বিয়েতে রাজী হয়ে গেছে আরু ৷ আসলে ওর আরিশকে দেখে যেন মাথা কাজ করা বন্ধ করে দিয়েছিলে তাই সেই মুহূর্তে মাথায় যেটা এসেছে সেই সিদ্ধান্ত নিয়েছে ও ৷
মানুষ সবসময় বলে যে আবেগের বশে কোন কাজ করলে পরে সেই ব্যাপারটা নিয়ে রিগ্রেট করতে হয় কথাটা যেন আজকে আরু বেশ ভালই উপলব্ধি করতে পারছে, আর তার সত্যতা টা বুঝতে পারছে…
ভার্সিটি থেকে আসার সময় আসফি খানিকটা জোর করেই আরুর কাছ থেকে ওর ফোন নাম্বার টা নিয়েছে , যদিও বা আরূর দেওয়ার কোনো ইচ্ছা ছিল না তবুও অনেকটা বাধ্য হয়েই ওকে দিতে হয়েছে , যতই হোক আরিশের সামনে আসফিকে নিজের উডবি বলে পরিচয় দিয়েছে এমনকি এক সপ্তাহের মধ্যে বিয়ে করবে বলেও জানিয়েছে , আর কথাটা যখন বলেছে ওকে রাখতেই হবে তাই সামান্য কিন্তু কিন্তু করে হলেও নাম্বারটা ওকে দিতে হলো আশফিকে ৷
আরু বাড়ি পৌঁছাতেই আসফি কল করেছে এটা জানতে যে ও ঠিকমতো বাড়ি পৌঁছেছে কি না , তারপরে আশফির নাম্বারটা সেভ করারো প্রয়োজন বোধ করেনি আরূ….
আরিসের বলা শেষের কথাটার অর্থ এখনো উদ্ধার করে উঠতে পারল না, কি বোঝাতে চাইল সেটাও বুঝলো না ৷
__” উনি কি বুঝাতে চেয়েছেন সেটা আমার ভেবে কি লাভ , কোন দরকার নেই আমার জানার বা বুঝার ,উনি যদি নিজের মানুষ ভালোবাসার মানুষকে বিয়ে করতে পারেন আর আমাকে প্রত্যাখ্যান করতে পারেন তাহলে আমি কেন পারিনা !”
আরূ আর কোনরকম দেরি না করে তাড়াতাড়ি রুম থেকে বেরিয়ে গিয়ে ওর আব্বু আম্মুর রুমে গেল….
শীতের দিন তাই সন্ধ্যাটা তাড়াতাড়ি হয়ে যায়, ভার্সিটিতে পাঁচটা অবধি ক্লাস করে বাড়ি আসতে আসতে অলরেডি চারিদিকে অন্ধকার নেমে আসে তাই এই মুহূর্তে ওনারা দুজন ওনাদের নিজেদের রুমে থাকবে এটাই স্বাভাবিক ৷
দুজনে রুমে বসে কোন একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে আলোচনা করছেন সেই মুহূর্তে আরূ গিয়ে পৌঁছল…
আরমান সাহেব সামান্য চমকে উঠলেন আরূর উপস্থিতিতে ৷ উনারা এতক্ষণ আরুকে নিয়ে কথা বলছিলেন ৷ এরপর ওর জীবনে কি হবে তা কিছুই উনারা জানেন না, সে নিয়ে খুবই চিন্তিত না ওনারা , তাছাড়া এত বড় একটা আঘাত মেয়েটা একা মুখ বুজে সহ্য করে যাচ্ছে কাউকে কিছু বলছে না এতে ওর যে কষ্ট হচ্ছে তা উপলব্ধি করার ক্ষমতা টুকু উনাদের আছে ৷
__” আরু মামনি তুমি কি কিছু বলবে?”
আরূ গিয়ে ওর আব্বুর পাশে গিয়ে বসল মাথা নিচু করে তারপরে কাঁপা কাঁপা গলায় বললো,,,,,
__” আমি বিয়ে করতে চাই বাপি ৷”
কথাটা শুনে ওনারা দুজন বেশ অবাক হলেন তা তাদের মুখ দেখেই বোঝা যাচ্ছে ৷
আরূর মা আমতা আমতা করে বললেন,,,,
__” এসব তুই কি বলছিস মা !”
আরূ এবার রেগে গেল তারপরে সামান্য চেঁচিয়ে বলল ,,,,,,
__” কেন বিয়ে করাটা কি অন্যায়ের নাকি অপরাধের কোনটা যে আমি বিয়ে করতে পারব না বা আমি বিয়ে করার কথা বললে সেটা ভুল যে তোমরা বিশ্বাস করতে পারছ না ৷ নিজেরা তো আমার বিয়ে দেওয়ার জন্য উঠে পড়ে লেগে ছিলে এবার আমি যখন নিজে বিয়ে করার কথা জানাচ্ছি তাহলে প্রশ্নবোধক চিহ্ন টা কেন আসছে? কেন নিজের জীবনটাকে নিজের মতো করে উপভোগ করতে পারব না আমি? সারাজীবন তোমাদের কথা শুনে চলে এসেছি আর তোমরা যে সব সময় যে সিদ্ধান্তটা নেবে সেটাই সব সময় ঠিক হবে তার কোনো মানে হয় না, আমার কথার ও তো একটা গুরুত্ব থাকা দরকার তাই নয় কি ? ”
(একনাগাড়ে কথাগুলো বলে দিলো আর এখন মনের মাঝে যা আসছে সেটাই বলে দিচ্ছে ও , কোন রকম কোন দ্বিধা ছাড়াই ৷)
__” আসলে আমি সেভাবে বলতে চাইনি রে মা , হঠাৎ করে এত বড় একটা সিদ্ধান্ত নিচ্ছিস তো সেই জন্যই বললাম ৷”
আরমান সাহেব আরূর মা কে থামিয়ে দিয়ে বলতে আরুর মাথায় হাত বুলাতে লাগলেন,,, ,
__” তোর কি কাউকে পছন্দ?
__” হ্যাঁ বাপী , আমার একজনকে পছন্দ আর আমি তাকে বিয়ে করতে চাই আর সেটা খুব তাড়াতাড়ি পারলে এই এক সপ্তাহের মধ্যেই ৷”
কথাটা শুনে আরমান সাহেবের মুখে কিঞ্চিৎ হাসি ফুটে উঠল আর একটু স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললেন উনি ৷উনি আরূর কথাটা বিশ্বাস করেছেন কারণ আরূর কথা মতো আরূর মা আরূর বাবাকে কথাটা জানায় নি যে ও আরিশকে কতকা ভালোবাসে আর কতটা আরিশকে চাই ৷
__” তুই যা বলছিস তাই হবে মা ৷তবে ছেলেটাকে আমাদের সাথে এখনো পরিচয় করালি না তো ৷”
__” উনার নাম আসফি রহমান , উনি একজন ইঞ্জিনিয়ার , উত্তরাতে উনার বাড়ি, আশা করি তোমাদের কোনো আপত্তি থাকবেনা ৷”
__” এটা আর বলতে বাকি রাখে না মা ৷”
__” তাহলে বিয়েটা তাড়াতাড়ি ঠিক করো আমি ওনাকে কালকে আসতে বলেছি….”
কথটা বলে আরু নিজের রুমে চলে গেল….
আরুর মা আরুর ববার সামনে মুখে মিথ্যা হাসি ফোটালেন কারন উনি তো জানেন যে ওনার মেয়ে কতটা ভালবাসেন আরিশকে , তাই আরূ যে জোর করেই বিয়েটা করছে আরিশকে ভোলার জন্য বাধ্য হয়ে তা উনি বেশ ভালোই বুঝতে পারছেন ৷ তবে এভাবে কি ভালো থাকা সম্ভব ? এভাবে কি একসাথে দুটো মনের বলিদান দেওয়া নই ?
আরমান সাহেব ঘুমিয়ে পড়তেই আরুর মা ফোনটা নিয়ে বেরিয়ে এলেন রুম থেকে , রাত প্রায় 11:00 প্রায় ৷ এতক্ষণ আরমান সাহেব ওনার সাথে কথা বলছিলেন আর তাছাড়া এই মুহূর্তে কোথাটা শোনা মাএই অনিকা খানকে ফোন করলে উনি হয়তো রাগ করতেন তাই উনি এতখন অপেক্ষা করছিলেন আরমান সাহেবের ঘুমানোর ৷
বেশ কয়েকবার রিং হলেও ফোনটা কেউ ধরল না দেখে উনি মনে মনে ভাবলেন,,,,
__” এত রাত্রে হয়তো ঘুমিয়ে পড়েছে তাই সকালেই কথাটা জানাবো, বলে উনিও ঘুমিয়ে পড়লেন….”
❤
__” হ্যাঁ আপনি কোথায়?”
__” আমি তো তোমাদের বাসার সামনে দাঁড়িয়ে আছি প্রায় কুড়ি মিনিট ধরে ৷”
আরু মনে মনে,,,,,
__” বলদ একটা ৷”
__” কুড়ি মিনিট ধরে কেন দাঁড়িয়ে আছেন, আমাকে ফোন করতে পারেননি?”
__” তোমার ফোনে আমি অন্তত 35 বার মিসড কল দিয়েছি কিন্তু তুমি ফোনটা ধরোনি তাই আরকি ৷”
আরু এবার ফোনের দিকে তাকিয়ে দেখল 37 টা মিসডকল , অবাক হয়ে নিয়ে আবার ফোনটা কানে নিয়ে সামান্য মিষ্টি সুরে বলল,,,,,
__” আসলে আমি ব্যস্ত ছিলাম ৷ আপনি ভিতরে আসুন, আমার আব্বু আম্মু দুজনেই বাসায় রয়েছে…”
__” আচ্ছা আমি আসছি কিন্তু আমার না কেমন ভয় ভয় লাগছে ৷”
আরূর ইচ্ছা করছে এখন আশফিকে স্টুপিড, গাধা, গরু সবকিছু বলতে কিন্তু তবুও নিজেকে সংযত করে নিয়ে বললো,,,,
__” বেশী কথা না বলে তাড়াতাড়ি আসুন ৷”
____________❤
আসফি আর আরমান সাহেব অনেকক্ষণ ধরে ওদের বিয়ে নিয়ে আলোচনা করলেন ৷ আশফিকে ওনার বেশ পছন্দ হয়েছে ৷
__” আঙ্কেল আমার বাবা-মা চিটাগং থাকেন তাই উনারা বিয়ের দিন উপস্থিত হবেন ৷”
__” কোন সমস্যা নেই বাবা , তবে আজকে তোমাদের ইংগেজমেন্ট হয়ে গেলে ভালো হতো নয় কি !”
__” না না আমাকে আজকে না , হলুদের দিন এঙ্গেজমেন্ট টা হলেই ভাল হয় ৷”
__” আচ্ছা ঠিক আছে…..”
__” তার মানে আগামী 28 শে ডিসেম্বর তোমাদের বিয়ে ৷”
__” হমম আঙকেল ৷”
আসফি বাড়ি চলে যেতেই আরূর মা অনিকা খানকে ফোন করতেই ফোনটা সুইচ অফ বললো….
উনি যেন সব আশাভরসা হারিয়ে ফেললেন ,উনা এখনো হাল ছাড়েননি , কেন জানিনা উনার বারবার মনে হচ্ছে যে হয়তো ভালো কিছু হলেও হতে পারে কিন্তু তেমনটা তো কিছুই হচ্ছে না দেখে উনি বার বার আশা হারিয়ে ফেলেছেন ৷
আরও কিছুক্ষণ পর ফোন করতে উনি ফোনটা ধরলেন ৷
__” কিরে তোকে কতক্ষণ ধরে ফোন করছি তুই জানিস ? আমার আরূর বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে, কিছু একটা কর না , আমি এখনো আশা ছাড়িনি কিছু হলেও হতে পারে আরিশকে বুঝিয়ে ৷”
উনি জানেন যে এরকমটা সম্ভব নয় , একটা মানুষের অনুভূতিকে কখনোই পরিবর্তন করা সম্ভব নয়, আর তার ওপর বিয়ের মত একটা সম্পর্ক তো অনেক বড় ব্যাপার , তবুও সান্ত্বনা দিচ্ছেন নিজের মনকে যে আরিশকে বললে যদি আরিশ মেনে যায় , তাই কোন কিছুই বলতেই উনি ছাড়ছেন না ৷
__” এটা কি বলছিস আরু মামনির বিয়ে? মানে হঠাৎ করে এক দিনের মধ্যে কিভাবে কি?”
এর পরে উনি অনিকা খানকে সবটা বললেন প্রথম থেকে,,,,,
__” আমি আমার ছেলেকে বোঝাবো ,নিজের সাধ্যের বাইরে চেষ্টা করবো , তবুও আরূ মামনি কে হারাতে পারবো না আমরা ৷”
বলে উনি ফোনটা কেটে দিলেন, তাড়াতাড়ি করে এখন বাড়ি থেকে বের হচ্ছেন আরিশের কাছে যাবেন তাই ৷
উনাকে এমন হুড়মুড়িয়ে তাড়াহুড়ো করে বেরোতে দেখে সানা জিজ্ঞাসা করল,,,,,
__” আম্মু তুমি কোথায় যাচ্ছ?”
__” তোর ভাইয়ার কাছে, আজ ওর একদিন কি আমার একদিন….সবকিছুর আজকে একটা বোঝাপড়া হবে, এভাবে আর চলবে না ৷”
❤
পড়ন্ত বিকালের কমলা আভার সূর্যের কিরন আরিশের ব্যালকনির সাদা পর্দা ভেদ করে গোটা ঘরকে অদ্ভুত এক রঙে রাঙিয়ে তুলেছে ৷
হাতে থাকা ক্যাকটাসটা নিয়ে ঘরের একদিকের দেওয়ালে যেখানে 19 টা ক্যাকটাসের সমাহার আর 1 টা রাখলেই ফাঁকা জায়গাটি পূরন হবে তাতে আলতো করে রেখে দিলো ওর কালেকশানের শেষ ক্যাকটাসটি ৷
__” কথা দিয়েছিলাম যে সঠিক সময়ে জায়গাটা পূরন করবো, আমি আমার কথা রেখেছি ৷ ”
কথাটা বলে বিছানার ওপরে থাকা গিটারটা নিয়ে ব্যালকনিতে থাকা বিন ব্যাগটায় বেশ আয়েশ করেই বসলো আরিশ,,,,,,
শুকনো কন্ঠে গানটা ধরলো,,,,,,
আমার সকল আভিযোগে তুমি,,,,,
তোমার মুখের মিষ্টি হাসিটা কি আমি,,,,
আমার না বলা কথার ভাজে
তোমার গানের কতো সুর ভাসে
তোমার নিয়ে আমার লেখা গানে
অযথা কতো স্বপ্ন বোনা আছে
আমার হাতের আঙুলের ভাজে
তোমাকে নিয়ে কতো কাব্য রটে হে
ভুলিনিতো আমি ,তোমার মুখে হাসি,
আমার গাওয়া গানে তোমাকে ভালোবাসি
আসো আবারো কাছে
হাতটা দিয়ে পাশে
তোমায় নিয়ে যাবো আমার পৄথিবীতে…..
এ হে,,,,,,,,এএএএএএ
এই পৄথিবীতে,,, ওহো হো !”
আরিসের গান শুনে যেন প্রকৃতি ও যেনো আরিশের গানের সুরে আসক্ত হয়ে যায় , এতোটা মধুর কন্ঠে গানটা ও গায় যে যে কেউ ওর গানের প্রতি আসক্ত হতে বাধ্য যেমনটা আরুও হয়েছিল ৷ তবে সমগ্র আরিশ মানুষটাই আরুর কাছে এক প্রকার আসক্তি ৷ আর একটা মানুষের প্রতি আসক্তি চাইলেই কি কমানো যায় ? হয়তো বা নয় !
গানটা শেষ হতেই ফোনের রিংটোন টা বেজে উঠতেই আরিশ প্যান্টের পকেট থেকে ফোনটা বার করে নিয়ে কানে ধরতেই অপর পাশ থেকে অত্যন্ত উত্তেজিত হয়ে প্রান্ত বলে উঠল ,,,,,,
__” আন্টির তোর রুমে যাচ্ছে, আমি কোন ভাবেই আটকাতে পারলাম না আন্টিকে , জানি না এরপর কি হবে !
__” আসতে দে ৷”(মুচকি হেসে)
বলে ফোনটা কেটে দিল আরিশ ৷
একটা মিস্ট্রিয়াস স্মাইল দিয়ে বেলকনির রেলিং ধরে তাকিয়ে রইল বাইরের দিকে…..
__” আরিশ কোথায় কোথায় তুই ? আজ তোকে আমার প্রশ্নের জবাব দিতেই হবে, তোকে আমার কথা মানতেই হবে সে তুই চাস আর না চাস ৷”
কথাটা বলে উনি হুড়মুড় করে আরিশের রুমে ঢুকে গেলেন, এর আগে কখনো আরিশের এই বাসার রুম উনি দেখেননি তাই উনি জানেন ও না যে রূমটক ঠিক কেমন আর কিই ব আছে !”
আরিশের রুমে পা রাখতেই দরজাটা হাত দিয়ে আলতো করে ছেড়ে দিতেই ধক করে বন্ধ হয়ে গেল দরজাটা ৷ গোটা ঘর অন্ধকার , আর সূর্যের আলোটা ঘরের মধ্যে প্রবেশ করে চারিদিকের দেওয়ালে থাকা ফটোগুলো যেন ঝকমক করছে , সামনের দিকে তাকাতেই দেওয়কলে আটকে রাখা ফটোটা দেখে উনি থমকে গেলেন, উনি অবাক হচ্ছেন সবকিছু দেখে ৷ ওই ফটো ফ্রেম টা থেকে চোখ সরিয়ে রুমটা ভালো করে চোখ বোলাতেই ওনার সমগ্র শরীর শিউরে উঠল, এটা কি সত্যি দেখছেন উনি নাকি এটা কোন কোন আজগুপি গল্প…..
উনি চুপচাপ রুম টা ভালো করে দেখছেন, দেওয়াল জুড়ে আটকে রাখা ছবিগুলো যেন বাস্তব হয়ে ফুটে উঠছে সেখানেই…..
আরিস প্যান্টের পকেটে হাত ঢুকিয়ে ধীর পায়ে রুমের দিকে গেলো,,,,,
হঠাৎ রুমের ভিতরে আরিশের ছায়ামূর্তি দেখে উনি ছলছল চোখে আরিশের দিকে তাকালেন ৷
কাপাকাপা গলায় বললেন,,,,
__” আব্বু এগুলো কি ?”
__” তোমার বৌমা ওরফে আবরার আরিশ খানের ঊডবি বউ, তোমার পছন্দ হয়নি ৷”
উনি কাঁদতে কাঁদতে বললেন,,,,,
__” মাশাআল্লাহ !”
আরিশকে জড়িয়ে ধরে উনি কেঁদে উঠলেন ৷আরিশের ঠোঁটের কোনেও এক চিলতে হাসি ফুটে উঠলো ৷
চলবে,,,,,,,,