#তোমার_নেশায়_আসক্ত
#সিজন:2
#পর্ব :14
#Suraiya_Aayat
এক সপ্তাহ পর,,,,,,
এই এক সপ্তাহ ধরে আরুর চোখে বারবার ভেসে উঠেছে আরিশের সাথে কাটানো মুহূর্তগুলো ৷ কিভাবে ঝগড়া থেকে শুরু হয় ওদের আলাপ আর আজ অদ্ভুত এক নেশায় আসক্ত ও নিজেই ৷ সেই রাতের পর থেকে আর ওর পক্ষে সম্ভব হয়নি না আরিস এর স্পর্শগুলো কে উপেক্ষা করার , আর না পেরেছে নিজের মনে আরিশের উপস্থিতিকে অগ্রাহ্য করতে , তবে এই অদ্ভুত আসক্তির মূল কারণটা কি তা ও বুঝেও বুঝতে চাইছে না ৷ হঠাৎ করে কিছুক্ষন কাটানো সময়ের ভিত্তিতে কি একটা মানুষের অনুভূতিগুলো এভাবে পাল্টানো সম্ভব ! আরূ যেনো বুঝেও কিছু বুঝতে চাইছে না ৷
এতদিন ভার্সিটি বন্ধ ছিল আর আরিশদের এক্সাম চলছিল ,আজকে আরিশের শেষ exam ৷
আরুর খুব ইচ্ছা হচ্ছিল একবার আরিশকে কল করে জানার যে কেন এমন হচ্ছে ওর , চাইলেও কেন সবটা ভুলতে পারছে না ৷
কললিস্টের একেবারে শেষে থাকা আরিশের নাম্বারটাকে টেনে এনে কল লিস্টে সবার উপরে এনেছে বাকি সব কলের হিসট্রি ডিলিট করে, তাতে যেন নিজের অজান্তেই অদ্ভুত এক প্রশান্তি অনুভব করছে ও ৷
বারবার ইচ্ছা জাগছিল যে একবার কল করে আরিশের কাছে ওর কাঙ্খিত প্রশ্নের উত্তর জানতে কিন্ত ও তো চাইলেও তা পারবে না কারন এটা খুব আশ্চর্যনীয় লাগবে আরিশের কাছে , আর তাছাড়া ওর যেমনটা অনুভুতি হচ্ছে আরিশের তো তেমনটা অনুভুতি নাও হতে পারে,,,, এগুলো ভেবেই নিজেকে শান্ত রেখৈছে আরু ৷
তবে এই অদ্ভুত অনুভূতি যার ব্যাখ্যা ওর কাছে নেই তা আরিশের কাছে আছে ৷ তাহলে তার উত্তর কি একমাত্র আরিসই দিতে পারবে ?
কথাগুলো ভাবতে ভাবতেই নিচে ব্রেকফাস্ট করার জন্য চলে গেল আরু…..
ডাইনিং টেবিলে বসতেই ওর আব্বু আর মায়ের কিছু কথা কানে পৌছোল ৷
__” আমরা কিন্তু বিকাল বেলায় ফিরে চলে আসবো,আরিশ যদি রাজি না হয় তাহলে তো আমাদের আর কিছু করার নেই ৷”
__” তুমি হাল ছাড়ছো কেন আমার মনে হয় না যে না আরিশ বাবা না করবে , আমার এইটুকু বিশ্বাস আছে৷”
__” দেখো কি হয় ৷ আল্লাহ যা চান তাই হবে তা তো আমরা চাওলেও খন্ডাতে পারবো না ৷”
ওদের কথার কোন হাতামাথা কোন কিছুই বুঝতে পারছেনা আরু ,তাই না বুঝতে পেরে জিজ্ঞাসা করে উঠলো,,,,,
__” তোমরা কিসের কথা বলছো বাপি?”
আরমান সাহেব সামান্য নিশ্চুপ হয়ে বললেন,,,,,
__” সেটা না হয় পরেই জানতে পারবে, সবাই যখন জানবে তুমিও তখন জানবে ৷”
__” তবুও আমাকে এখন বললে সমস্যা কোথায়?”
আরমান সাহেব এবার রেগে গিয়ে বললেন ,,,,,,
__” সব সময় ফাইজলামি ভালো লাগে না আরু ৷”
আরূ ওর বাবার কথা শুনে ভয় পেয়ে গেল ৷ আরমান সাহেব সাধারণত কখনো ওর সাথে রেগে কথা বলেন না, নিশ্চয়ই উনি খুব চিন্তিত সেই কারণেই ওর সাথে এমন ব্যবহারটা করল , ঐরকমটা নিজেকে বোঝালো আরু ৷
__” আহা তুমি ওকে বকছো কেন ! ওকে বকলেই কি সব ঠিক হবে, দেখোই না আগে কি হয় ৷”
আরু চুপ করে খেতে শুরু করল , পুনরায় কথা বলার সাহস পেলো না আর তবে মনে মনে কিঞ্চিত খারাপ লাগাটাও কাজ করছে ওর….
ব্রেকফাস্ট শেষে আরূ যখন নিজের রুমে যেতে গেল তখন কিছু একটা ভেবে থেমে গেল ৷
__” আম্মু তোমরা কি কোথাও যাবে?”
__” আমি একটু পর তোর অনিকা আন্টির বাড়িতে যাব ৷”
__” তোমার কি সব সময় যাওয়া লাগে আন্টির বাড়ি ?”
__” শুধু আমি একা না তুই ও যাবি মানে আমরা সবাই যাচ্ছি , আর যাওয়াটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ , আর তাছাড়া আজকে আরিশের লাস্ট এক্সাম তাই ও. আজকে বাসায় আসবে ,আর তোর আণ্টি দাওয়াত দিয়েছে ৷”
আরু আর কিছু বলল না চুপচাপ নিজের রুমে গেল ৷ আজকে ওউ যাবে আরিশদের বাড়িতে, এটাই ওর কাছে একমাত্র সুযোগ নিজের কাঙ্ক্ষিত প্রশ্নের উত্তর জানার, তার ফলাফল পজেটিভ আর নেগেটিভ যেটাই হোক না কেনো ৷ তবে উত্তরটা জানা ওর খুবই প্রয়োজনীয় ৷
সানার রুমে বসে আছে আরু অনেকক্ষণ ধরে , আজকে ভিষন শান্ত হয়ে বসে আছে অন্য দিনের তুলনায় ৷ আসার সময় সানার সাথে একবার দেখা হয়েছিল , তখন সানা নিচে ওর আম্মুর হাতে হাতে কাজ করে দিচ্ছিল তাই আরূ ওকে আর ডেকে বিরক্ত করে নি ৷ চুপচাপ সানার রুমে এসে বসে আছে…..
আরুর খুব ইচ্ছা করছে এখন আরিসের রুমে ঢুকে সমগ্র রুমটা আরেকবার দেখতে যদিওবা চাইলেও সেটা সম্ভব নয়….
যতক্ষণ না সানা আসছে ততক্ষণ ওর সেখানে চুপচাপ বসে থাকা ছাড়া কোন উপায় নেই ৷ আরু বসে বসে বোর হচ্ছে তাই ফোনটা অন করে ফেসবুকে লগ ইন করতে সার্চ লিস্টে গিয়ে প্রথমে থাকা নামটা ক্লিক করতেই একাউন্ট টা চলে এলো ৷
[ আবরার আরিশ খান ]
[নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটি]
[ফলোড বাই 15000 পিপল]
[হবি : সিঙ্গিং ]
প্রোফাইল পিকচারের লাস্ট আপডেট আছে 24 শে নভেম্বর , মানে এক্সামের বেশ কয়েক দিন আগেই ৷আর তাতে মেয়েদের হাজার হাজার লাইকস আর কমেন্টস, বেশিরভাগ মেয়েরাই হল ওর ভার্সিটির মেয়ে, তাদের কমেন্ট গুলো পড়লে ওর নিজের খুব বিরক্তি লাগে, সব কটাই বাবু , সোনা, জান ছাড়া কথা নেই ৷
__” একটা মানুষকে এতটা সুন্দর কেন হতে হয় ! আর এই মেয়েগুলোও কেমন গায়ে পড়া টাইপের ৷ সুন্দর ছেলে দেখতে আর হুশ থাকে না….”
তাড়াতাড়ি করে ফেসবুক থেকে বেরিয়ে আসল ও ৷ এই এক সপ্তাহে আরিশের প্রোফাইল টা যে কতোবার সার্চ করেছে তা ওর নিজেও জানা নেই ৷ বলতে গেলে আরিসের প্রোফাইলের A টু Z সমস্তটাই ওর মুখস্থ হয়ে গেছে প্রায়….
ঘড়ির দিকে তাকালো আরূ ৷ দেড়টা বাজে , একটাই সবার এক্সাম শেষ হয়ে যাওয়ার কথা আর ভার্সিটি থেকে ওদের বাড়ি আসতে সময় লাগে আধঘণ্টা মতো তাই আর এক্ষুনি যে আরিশের পৌঁছে যাওয়ার সম্ভাবনা আছে সেটা বুঝতে পারছে আরু ৷ কিন্ত কিভাবে আরিস এর মুখোমুখি হবে সেটাই বুঝে উঠতে পারছে না….
সানা একটা ট্রে তে করে 2 গ্লাস কোলড্রিংস এনে বেডের উপর রাখলো , আর হাতে একটা গ্লাস ধরিয়ে দিয়ে নিজে একটা গ্লাস হাতে নিলো …..
সানা লক্ষ করল আরু আজকে চুপচাপ ৷ আরুর নীরবতা টা যেন ও আজ মানতে পারছে না ৷ না পেরে সানা বলে উঠলো,,,,,,
___” একটা কথা কি জানিস তো তোকে চুপচাপ থাকলে একদম সটুপিড লাগে ৷”
কথাটা শুনতেই আরু একটু থতমত খেয়ে গেল , সত্যিই আজকাল ওর নিজেকেই খুব অবাক লাগছে, গোটা এক সপ্তাহ ধরেই যেন এক অন্য আরু কে দেখছে আর চিনছেও, যার সঙ্গে আগে নিজের কখনো মিল পাইনি….
__” এমনি তেই ভালো লাগছে না….”
__” ভাইয়ার আজকে এক্সাম শেষ , আজকে ও বাড়ি ফিরবে ৷”
আরিশ কে নিয়ে কথা উঠতেই আরু সুযোগ পেয়ে গেল ওর প্রশ্নটা করার তাই আর বেশী জটিলতার সৃষ্টি না করে সানাকে বলে উঠল,,,,,,,
__” আরিশ ভাইয়াদের তো এতখনে exam শেষ !”
__” হ্যাঁ , বাট ভাইয়ার ফিরতে লেট হবে ৷”
আরু সানার কথার পরিপেক্ষিতে কিছু বলল না আর ,চুপচাপ শুনে গেল ৷
সানা ফোনটা হাতে নিয়ে একটা ছবি বার করে আরুকে দেখালো ৷
__”আপুটা কত সুন্দর তাই না !”
ছবিটা দেখে আরু চমকে গিয়ে বললো,,,,,
__” এই আপুটা কে?”
__” ভাই আজকে এই আপুটাকে দেখতে গেছে , ওর বেশ পছন্দ হয়েছে তাই আমাকে পিকটা পাঠালো ৷ আমাকেও জিজ্ঞাসা করছে পছন্দ কিনা ৷ আমার তো দারুণ লেগেছে কি সুন্দর পুতুলের মতো ৷ মাশাআল্লাহ ৷”
কথাটা শুনতেই আরূর বুকের ভিতর মোচড় দিয়ে উঠলো,,,, কিন্তু কিন্তু করে কথটা ঘুরিয়ে বলল,,,,,
__” আরিশ ভাইয়া বিয়ে করছেন জানাসনি তো?”
সানা মুচকি হেসে বলল,,,,,
__” প্রান্ত থেকে ভাইয়ার সাথে আপুটার বিয়ে হবে তাই পছন্দ করতে গেছে ৷”
আরু মুচকি হেসে বললো,,,,,
__” সত্যিই খূব সুন্দর, আরিশ ভাইয়ার চয়েজ আছে ৷”
আরু একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস নিল, কিছুক্ষণের জন্য কথাটা শুনে ভয় পেয়ে গিয়েছিল ও ৷
❤
বেশ অনেক্ষণ হলো আরিশ বাড়ি ফিরেছে ৷ নিচে এখন সবাই গল্প-গুজবে ব্যস্ত, সানাও নিচে রয়েছে শুধুমাএ আরিশ আর আরু উপরে রয়েছে ৷ কিছুক্ষণ পরেই হয়তো ওরা বাড়ি ফিরে যাবে তাই আরু আর বেশী দেরী করলো না , দেরি করলে আরিশের থেকে নিজের প্রশ্নের উত্তরটা জানতে পারবে না তাই জন্য আর এক মূহূর্তও দেরি না করে আরিশের রুমের দিকে পা বাড়ালো…..
কোনরকম আরিসের পারমিশন না নিয়ে ওর রুমে ঢুকে পড়ল আরু ৷ বিছানার উপর বসে টাওয়াল দিয়ে মাথাটা মুচছে আরিশ ,ভেজা মুখে বিন্দু বিন্দু জল জমে আছে , মাথার চুল গুলো থেকে টপটপ করে জল ঝরে পড়ছে মাঝে মাঝে , গায়ে সাদা রংয়ের shirt টা যেন আরিশের সৌন্দর্যটাকে দ্বিগুন বাড়িয়ে দিয়েছে…..
আরু মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে আরিশের সামনে,
আরিশ অবাক হয়ে ভ্রু কুঁচকে বললো,,,, ,
__” কারোর রুমে ঢোকার আগে পারমিশন নেওয়ার প্রয়োজন বোধ করেন না বুঝি ? হোয়াট এভার ! তা আপনি কিছু বলবেন?”
আরু কাঁপা কাঁপা গলায় বললো,,,,
__”আমি আপনার কাছে একটা প্রশ্নের উত্তর জানতে এসেছি , উত্তরটা পেলেই চলে যাব ,তাই আপনিও বেশি জটিলতা সৃষ্টি না করে সরাসরি উত্তরটা দিলে খুশি হয় ৷”
তোয়ালেটা বিছানার উপর রেখে আরিস কয়েক কদম এ গিয়ে আরুর কাছে চলে এল ৷
__” তা কি প্রশ্ন আপনার শুনি ? যদি জানি তাহলে নিশ্চয়ই উওর দেবো ৷”
প্রশ্নটা আরু করবে কিন্তু এখন ওর ভয়ে হাত-পা কাঁপছে , যতটা সাহস নিয়ে এসেছিল ততটা সাহসের এক বিন্দু মাত্রও নেই আর , কিভাবে বলবে কিছুই বুঝতে পারছে না , চুপচাপ ঠায় দাঁড়িয়ে রয়েছে ৷
আরিশ হালকা স্বরে বলল,,
__” কি হলো বলুন কি প্রশ্ন আছে আপনার ?”
__” ……”
__” কি হলো বলুন ৷”
__”…..”
__” যদি কিছু না বলার থাকে তাহলে প্লিজ আপনি এখন আসতে পারেন ৷”
__” আমার আপনার প্রতি এক অদ্ভুত অনুভূতি হচ্ছে সেই রাতের পর থেকে , আপনার স্পর্শ গুলো আমি কোনোভাবেই ভুলতে পারছিনা, না ভুলতে পারছি আপনার সাথে কাটানো সেই মুহূর্তগুলো, বারবার সেই স্মৃতিগুলো ভেসে উঠছে আর অদ্ভুত এক অনুভূতি কাজ করছে আপনার প্রতি তবে সে অনুভুতির কারণটা আমি জানিনা তাই আপনি যদি জানেন আমার এ অনুভুতির কারন তাহলে বলেন কারন আমি আর এভাবে এই দোটানা নিয়ে সময় পার করতে পারছি না, কষ্টকর হয়ে উঠছে দিন দিন ৷ “(চোখ বন্ধ করে)
আরিশ পকেটে হাত দিয়ে বলল,,,,,,
__” তা ঠিক কেমন অনুভূতি মিস আপনার আমার প্রতি?”
আরূ আগের মত চোখ বন্ধ করে রেখে বলল,,,,,
__” সেটা ঠিক কেমন অনুভূতি আর কি কারণে সেই অনুভূতি তা জানলে আমি কি আপনার কাছে আসতাম আর না আপনার কাছে তার উত্তর চাইতাম…!”
__” ওহ আচ্ছা, তা আপনি চোখটা না খুললে আমি তার উত্তরটা দেবো কিভাবে !”
__’ না আমি চোখ বন্ধ করেই থাকবো, খুলবো না, আপনি তাড়াতাড়ি বলুন , আমি উত্তরটা নিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে যাচ্ছি ৷”
আরিশ এবার এক ঝটকায় আরুর কোমরটা জড়িয়ে ধরে নিজের সাথে আরূ কে মিশিয়ে নিল….
আরু আচমকাই আর ভয়ে চোখটা খুলে ফেলল , আরিশের এখন ওর উপর নজর স্থির, আর আরুর ও ৷ আরুর সমগ্র শরীর জুড়ে যেন অদ্ভুত শিহরণ বয়ে যাচ্ছে , আর ঠিক তেমনটাই অনুভূতি হচ্ছে যেমনটা এইকদিন হয়ে এসেছে…..
আরিশ ওর বাম হাতটা আস্তে আস্তে আরূর গলায় স্পর্শ করতেই আরূ শক্ত করে আরিশের shirt টা খামচে ধরল ৷ হার্ট বিট টাও ক্রমশ বাড়ছে, ঠোটজোড়া কাপছে আর শরীরটাও যেনো ক্রমশ ঝিমিয়ে আসছে ৷
আরিশ আরুর কানের কাছে ফিসফিস করে বলল,,,, __” এমনটাই অনুভূতি কি যেমনটা এখন হচ্ছে ৷”
আরু চুপ করে আছে , কিছু বলছে না ৷
__” আমি যদি এখন আমার ঠোট দিয়ে আলতো করে আপনার কম্পমান ঠোঁট দুটোকে স্পর্শ করি তাহলে কি আমাতেই হারিয়ে ফেলবেন নিজেকে ? ”
কথাটা শুনে আরু আরিশকে দূরে সরিয়ে দিল,মনে মনে লজ্জা পাচ্ছে খুব আরিশের কথা শুনে তবুও এখন তা আরিশের সামনে প্রকাশ করবে না ৷
__’ কি বলছেন এগুলো আপনি?”
আরিশ ডেভিল মার্কা হাসি দিয়ে বলল,,,,,,
__” যেমনটা আপনি আপনার ফিলিংস এর বর্ণনা দিলেন আমিও ঠিক তেমনি প্রাক্টিক্যালি সব কিছু করে দেখালাম, কেন বুঝতে পারেন নি ? এবার কি থিওরিটিক্যালি বুঝিয়ে দিতে হবে ?”
আরু দূরে সরে গিয়ে এক পা এক পা করে পিছিয়ে যেতে যেতে বললল,,,,,,
__” এই আপনি নামটা মি ঃ অভদ্রটা খুব বাজে, খুবই বাজে , আর লুচু প্রকৄতির মানুষ ৷”
কথাটা বলে তাড়াতাড়ি করে বেরিয়ে গেল আরু…..
আরিশ একটা টেডি স্মাইল দিল তারপর আলতো করে হাত দিয়ে চুল গুলো ঝেড়ে নিয়ে তোয়ালেটা নিয়ে ব্যালকনিতে চলে গেল…….
আরু দৌড়ে গিয়ে সানার রুমের দরজা লক করে দরজায় মাথা দিয়ে বসে পড়ল,,,,,,
__” এটা কি আমার মিঃ অভদ্র নামক আসক্তি, যা থেকে মুক্তি পাওয়ার একমাএ উপায়ই ” উনি সম্মোধনকারী ব্যাক্তিটি ৷” আমি কি ওনাতেই আসক্ত হয়ে পড়েছি ?
তাহলে কি #তোমার_নেশায়_আসক্ত ৷”
#চলবে,,,,,,,,
#তোমার_নেশায়_আসক্ত
#সিজন:2
#পর্ব:15
#Suraiya_Aayat
আরূর অনুভূতি বলছে যে আরিশ ওকে ভালোবাসে ৷ আর ও নিজেও ধীরে ধীরে তাহলে আরিশকে ভালোবাসতে শুরূ করেছে ৷
কথাগুলো ভাবতেই আরূর হার্টবিট আরো বেড়ে গেল, সারা শরীর থরথর করে কাঁপছে , অদ্ভুত এক অনুভূতি ওর সমগ্র শরীরে শিহরন বইয়ে দিচ্ছে….
চোখ বন্ধ করে মুহূর্তগুলোকে পুনরায় ভাবার চেষ্টা করতেই হঠাৎ দরজায় নক পড়তেই আরূ চমকে উঠলো….
__” কিরে তুই রূমের দরজা বন্ধ করে কি করছিস ? নিচে সবাই তোকে ডাকছে ৷”
আরূ তাড়াতাড়ি করে দরজাটা খুলে দেখল সানা দাঁড়িয়ে আছে ৷
__” কি জন্য ডাকছে আমাকে?”
__” এটা আমি কি করে বলবো ! তাড়াতাড়ি চল এখন আবার আমাকে ভাইয়া কেউ ডাকতে যেতে হবে ৷”
__” কোন সিরিয়াস ব্যাপার নিয়ে কিছু?”
সানা মুচকি মুচকি হেসে বলল,,,,,,
__” নীচে গেলেই দেখতে পাবি ৷”
আরুর মনে এবার চিন্তাটা ঘন মেঘের মতো জমা হয়ে এলো ৷
প্রথমে তো ওর বাপি আর মা ও কিছু নিয়ে আলোচনা করছিলো যা ওকে জানাইনি আর এখন আবার কোন একটা ব্যাপারটা নিয়ে আলোচনা হবে ৷ চিন্তায় পড়ে গেল আরু ৷ ব্যাপারটা আসলে কি সেটা জানতে যতটা না উত্তেজনা কাজ করছে তার থেকেও বেশি ভয় কাজ করছে মনের মাঝে৷
❤
নীচে সবাই একত্রিত হয়ে রয়েছে আর আরূও সোফার এককোনে বসে আছে আর ওর সামনে বসে থাকা আরিশের দিকে মাঝে মাঝে সকলের আড়ালে আড় চোখে তাকাচ্ছে,,,,,,,
__” আম্মু তুমি কি আমাকে কিছু বলবে মানে হঠাৎ করে এভাবে ডেকে আনলে সেজন্য আর কি !”
__” হ্যাঁ তোকে ঢেকেছি তার মাঝে থাকা কারনটা হলো তোর বিয়ের ব্যাপার নিয়ে কিছু কথা বলতে চাই ৷”
আরিশের বিয়ের কথা শুনে আরুর সমগ্র শরীর জুড়ে যেন উথাল পাথাল হয়ে গেল, নিজের কানকে যেন বিশ্বাস করতে পারছে না ৷ এইকদিন যার প্রতি এক অদ্ভুত অনুভুতিতে জর্জরিত ছিল আর আজ যখন বুঝতে পারে যে সেটা ভালোলাগা নয় বরং দিন দিন ভালবাসায় পরিনত হচ্ছে তখন আজকেই তার বিয়ের সংবাদ সমগ্রটা ওলট পালট হয়ে যাচ্ছে ওর ৷ শক্ত করে নিজের জামাটা খামছে ধরলো , আজানা এক ভয় ও কাজ করছে মনের মাঝে যে যদি আরিশ রাজি হয়ে যাই তাহলে তো সবটা শুরু হওয়ার আগেই শেষ হয়ে যাবে ৷আরিশের কথায় ঘোর ভাঙলো ওর ৷
__” লাইক সিরিয়াসলি আম্মু, আমার বিয়ের কথা ! আমার এখনো বিয়ের বয়স হয়েছে?”
__” দেখ আরিশ আব্বু আমরা মজা করছি না , ব্যাপারটা নিয়ে আমরা সিরিয়াস ৷(আফজাল সাহেব )
__” আমরা তোর বিয়ে ঠিক করেছি ৷”(অনিকা খান)
__” আর ইউ কিডিং উইথ মি ?”(আরিশ)
__” আমরা আরূ মার সঙ্গে তোর বিয়ে ঠিক করেছি ৷”
আরু ছলছল চোখে তাকালো, কথাটা শুনেই মনের মাঝে অদ্ভুত এক প্রশান্তি কাজ করছে ওর , তাহলে ওর কাঙখিত আশা কি পূরন হতে চলেছে ! আরিশকে ও নিজের করে পাবে ৷ আরু আরিশকে নিয়ে ভাবতে চাই খুব বেশি করেই ভাবতে চাই ৷
আরূ চুপ করে আছে বলার ভাষাটাও যেনো হারিয়ে ফেলেছে , কি বলবে ও কিছুই বলার নেই ওর ৷
কথাটা শোনমাএই আরিশ অদ্ভুদ এক দৄষ্টিতে আরুর দিকে তাকালো, দেখতে পেলো আরুর চোখ ছলছল করছে ৷
__” বাট আমি তো তোমাদের আরুকে বিয়ে করতে পারবো না আম্মু ৷”
কথাটা শুনে যেনো আরূর দুনিয়া ঘুরে গেলো ৷ এসব কি বলছে আরিশ , তাহলে কি ওর ধারনাটা ভুল, ওর আরিশের প্রতি ভালোবাসাটা একতরফা , আরিশ কি ওকে ভালোবাসেনা ?
কথাগুলো বারবার মনে আসছে আরূর ৷ চোখ ফেঁটে অঝোরে জল বেরিয়ে আসতে চাইছে তবুও নিজেকে সংযত করে রাখতে হচ্ছে ৷
__” এসব তুমি কি বলছো আরিশ ৷ আর তোমাদের বিয়েটা যে আমাদের স্বপ্ন , তুমি এরকম বলতে পারো না ৷”(আরমান সাহেব )
আরিশ মুচকি হেসে আরূর দিকে একপলক তাকিয়ে বলল,,,,,
__” সব স্বপ্নকে কি সবসময় পূরন হতে দেখেছেন?”
আরমান সাহেব চুপ হয়ে গেলেন, উনিও এতোদিন এটার ভয় পেয়েই চুপ ছিলেন ৷
__” কিন্ত আরু মকে বিয়ে করতে তোর সমস্যা কোথায়? ওকে দেখতে মাশাআল্লাহ, আল্লাহ এরকম মেয়ে কতজন কে দেই বলতো !আর আমাদেরকে যথেষ্ট ভালোবাসে ৷”(অনিকা খান )
__” বাট আমার পক্ষে ওনাকে বিয়ে করা পসিবল নয়!”
আরু আর চুপ থাকতে পারলো না, নিজেকে আজ বড্ড অপমানিত ফিল হচ্ছে ওর , এরকম টা আগে কখনো হয়নি ৷ তাই না পেরে কাপা কাপা গলায় বলে উঠলো,,,,,,
__” পারবেন না ঠিক আছে তবে কারনটা জানালে খুশি হতাম আর নিজের মধ্যে থাকা ক্রটিগুলোকে ভালো করে উপলব্দি করতাম যাতে দ্বিতীয়বার আর এরকমটা না হয় ৷”
__” কারনটা অবশ্যই জানাবো ,আর এমনিতেও আমার exam শেষ আমি বাড়িতেও জনাতাম ৷ আমি একজন কে ভালোবাসি আর তাকেই বিয়ে করতে চাই ,তাই আমার পক্ষে অন্য কাউকে বিয়ে করা সম্ভব নয় ৷”
কথাটা শুনে আর কিছু না বলে আরিশের মা রেগে ওখান থেকে উঠে গেলেন হয়তো কান্নাটা আর আটকে রাখতে পারছেন না ৷
__” তুই কি এগুলো ভেবে বলছিস!”(আফজাল সাহেব)
__” হমম বাবা ৷”
আরুর মা র চোখেও জল, এবার উনি কি করবেন কিছুই বুঝতে পারছেন না ৷ আরুর দিকে একবার তাকাতেই দেখলেন আরুর চোখ থেকে টপটপ করে কয়েকফোটা জল গড়িয়ে পড়ছে অনবরত ৷ এই প্রথম উনি ওনার মেয়কে এমন নিশ্চুপ ভাবে কাদতে দেখলেন , এর আগে আরু যতবার কেদেছে তখন সারা বাড়ি মাথায় করে রেখেছে ৷ মানুষ যখন ভীষনভাবে কষ্ট পায় তখন হয়তো এমনভাবেই নিশ্চুপ হয়ে যাই ৷ মেয়েকে এভাবে কাদতে দেখে ওনার মনটা জ্বলে উঠছে বারবার ৷আরূ যে ব্যপারটাই এতটা আঘাত পাবে ত হয়তো উনি ওনার ধারনাতেও আনেননি ৷ এটা একটা মেয়ের জন্য কতটা অপমানের তা উনি বেশ ভালোই বুঝতে পারছেন ৷
আরূ আর পারছে না ওখানে সবার মুখোমুখি বসে থাকতে , ওর আলাদা ভাবে একটা জায়গায় প্রয়োজন যেখানে ও মন ভরে কাদবে ৷ তাই না পেরে বলে উঠলো,,,,,,
__”আম্মু আমার শরীরটা ভালো লাগছে না, ভীষন বমি বমি পাচ্ছে, আমি বাসায় যাচ্ছি, তোমরা পরে চলে এসো ৷”
__” সে কি , আমিও যাচ্ছি তোর সাথে, আর আমাদের ও তো ফিরতে হবে ৷”
__” না না আম্মু আমি পারবো, তোমরা বরং নিজেদের স্বপ্নটাকে নতুন করে সাজিয়ে গুছিয়ে আবার এসো, যাতে পুনরায় স্বপ্নভঙেগর বেদনায় কাতরাতে না হয় ৷”(আরিশের দিকে ছলছল চোখে তাকিয়ে)
কথাটা বলে আর এক মুহূর্তও দেরি না করে আরূ তাড়াতাড়ি করে বেরিয়ে গেলো, হয়তো ওদের মুখোমুখি হওয়ার সাহস ওর আর নেই ৷ নিজেকে আজ ডানাবিহীন পাখির মতোই নিশ্চল লাগছে ৷
আরুর মা চোখের জলটা মুছে আরিশের দিকে মুচকি হেসে বললেন,,,,,,
__”আমি তোমার সিদ্ধান্তকে সম্মান করি বাবা, আমরাও ভালোবেসে বিয়ে করেছি তাই সবটা বুঝি যে ভালোবাসার মানুষটাকে পাওয়ার আকাঙখাটা ৷ তুমি সুখী হও বাবা , আল্লাহ ভালো করূক ৷ আশাকরি সেরা জিনিসটাই তুমি পছন্দ করবে তাই চয়েজ নিয়ে বলার আর কিছুই রইলো না ৷ আর অবশ্যই খারাপো একটু লাগছে তবে সময়ের পরিবর্তনের সাথে হয়তো সবটাই,ঠিক হয়ে যাবে আর থেকে যাবে খারাপ সমৄতিগুলো ৷ আর আল্লাহ হয়তো আরূকে অন্য একজনের জন্যই পাঠিয়েছেন তাই হয়তো স্বপ্নটা এখানেই থেমে রইলো ৷”
__”আমি সত্তিই খুব দুঃখিত আন্টি বাট আমার চাওয়া পাওয়ার ও তো দাম থাকে তাইনা ৷”
__” অবশ্যই থাকে ,আর আল্লাহ তোমার ভালো করূক এটাই চাই ৷”
__”দোয়া করবেন যেনো জীবনের সঠিক সময়ে সঠিক মানুষটাকেই পাই ৷”(মুচকি হেসে)
চলবে,,,,,,