তোমার নেশায় আসক্ত পর্ব-৪০+৪১

0
2406

#তোমার_নেশায়_আসক্ত
#part:40
#Suraiya_Aayat

বিছানা থেকে পা ঝুলিয়ে বসে আছে আরূ, পা টা বারবার দোলাচ্ছে অস্থিরতায় ৷ আরিশকে ছাড়া আর এক মুহূর্তও ভাল লাগছে না ওর, সেই কখন থেকে একা একা ঘরের মাঝখানে বসে আছে ৷ অস্থিরতায় ঘড়িটার দিকে তাকাতেও এখন বিরক্তি লাগছে তবুও তাকাচ্ছে ঘড়িটার দিকে না পেরে ৷ সময়টাও আজকে যেন ওর সামনে বিরাট প্রাচীর গড়ে তুলেছে হয়তো ওর অপেক্ষার দীর্ঘ পরীক্ষা নিচ্ছে….

ঘড়ির ছোট কাঁটাটা এখন দশের ঘরে আর বড় কাটাটা নয়ের ঘরে , অর্থাত 10.45 বাজে এখন ,এই মুহূর্তে আরুর ইচ্ছা করছে ঘড়ির কাঁটাটাকে নিজের ইচ্ছেমত চালাতে যাতে সময় টা ওর হিসাবেই চলে কিন্তু এই ঘড়িটাকৈ থামিয়ে দিতে পারলেও জীবনের বাস্তবতার ঘড়িটাকে তো আর পাল্টাতে পারবে না কোনভাবেই ৷ পারলে আরু এবার কেঁদেই ফেলে,
এমনিতেই সকালথেকে কিছু খাইনি আরিশ ,আর ওর ও মন টানছে না যে আরিশকে ছাড়া কিছু করতে এমনকি কিছু খেতেও , না জানি মানুষটা সারাদিন কিছু খেয়েছে কি ! আরিশ মুখে যতই বলুক অফিসে গিয়ে লাঞ্চ করে নেবে কিন্তু আরু বেশ ভালোই জানে যে একবার কাজের মধ্যে ঢুকে গেলে আরিশের কোন দিকে খেয়াল থাকে না ‌৷ আরু এখন নিজেকেই নিজে বকা দিচ্ছে এটা ভেবে যে ও নিজে যদি একটু নিজের প্রতি যত্নশীল হতো তাহলে হয়তো আজকে ওকে নিয়ে এতটা ধকল আরিশকে সহ্য করতে হতো না , এগুলো ভাবলেই বুক ফেটে কান্না আসে আরুর ৷ আজ ওর জন্যই মানুষটা এত কষ্ট করছে ৷

আপনা আপনিই চোখ থেকে কয়েক ফোটা জল গড়িয়ে তা চিবুক বেয়ে গড়িয়ে পড়তেই তাড়াতাড়ি করে জামার হাতা দিয়ে মুছে নিল আরু , এভাবে আর চলবে না আরিশকে ফোন করতেই হবে এবার ৷

তাড়াতাড়ি করে আরিশের এর নাম্বারে ফোন করলো….
ফোনটা কানে ধরে আছে আরু , বেশ কয়েকবার রিং হচ্ছে তবে ওপাশ থেকে রিসিভ করছে না আরিশ , শেষ মুহূর্তে একরাশ রাগ আর হতাশা নিয়ে ফোনটা যখনই কাটতে যাবে তখনই আরিশ ক্লান্তিমাখা কন্ঠে বলে উঠলো ,,,,,,

__” এইতো আমি আসছি আরূপাখি, আর পাঁচ মিনিট লাগবে ৷”

আরু আরিশের কথার কোন উত্তর না দিয়ে ফোনটা কেটে দিলেন ৷ আরিশ ওকে মিথ্যা কথা বলেনি,রাস্তায় গাড়ির হর্নের আওয়াজ শুনে আরূ বুঝতে পেরেছে যে আরিশ বাড়িতে ফিরছে ৷ আরিশের ক্লান্তিমাখা কন্ঠ শুনে আরুর ভিতরে যেন ছারখার হয়ে গেল , আরিশের সঙ্গে কথা বলার অবস্থায় ছিল না ও , ফোনটা কেটেই ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠলো আরু , প্রিয় মানুষের কষ্টে আজ ও নিজেও কষ্ট পাচ্ছে খুব , আজ ও বুঝতে পারছে তাহলে ওর সামান্য কিছু হলে আরিশ কতটা কষ্ট পায় ৷ তাহলে ভালোবাসা বুঝি এমনই হয় !

কিছুক্ষণ পর গাড়ির আওয়াজ শুনেই দৌড়ে ছুটে ব্যালকনিতে চলে গেল আরু , ডাক্তার ওকে বারণ করে দিয়েছে যাতে কোনরকম লাফালাফি বা দৌড়াদৌড়ি না করে তবুও এই মুহূর্তে যেন এই সমস্ত কিছুই উপেক্ষিত ওর কাছে, কোনো বারণ শুনবে না এখন ৷
আরিশকে এক পলক দেখে রুমের ভিতর চলে এলো৷
মনে মনে ভাবছে,,,,,,
__” কাঁদবেনা আর কারণ আমি কাঁদলে উনি আমার থেকে আরো বেশি কষ্ট পায়….”

আরূ রুমে বসে আছে তখনই চিরচেনা মানুষটা ওর কাছে এগিয়ে আসতেই বুকের হৃদস্পন্দন টা যেন বেড়ে গেল, কয়েক ঘণ্টা আগে দুজনের মধ্যে দেখা হলেও এখন যেন মনে হচ্ছে যে বহু যুগ পরে আবার ওরা দেখা পেয়েছে নিজেদের ৷

আরিশ দেখল আরু অন্যদিকে ফিরে তাকিয়ে আছে, ধীরে ধীরে এগিয়ে আরুর পাশে গিয়ে বসলো,,,,,

__” তুমি এখনো জেগে আছো আরুপাখি? তোমাকে না আমি বললাম যে আমার ফিরতে লেট হবে তুমি ঘুমিয়ে পড়ো ৷
তাও তুমি জেগে আছো ?”
খানিকটা ধমকের সুরেই বললো আরিশ ৷

আরিশের কথা শুনে আরু আরিশের দিকে তাকালো গভীর দৃষ্টিতে,,,,,,

আরুর চোখের দিকে তাকাতেই আরিশের বুকের ভিতর মোচর দিয়ে উঠল, চোখ দুটো লাল হয়ে গেছে, ভয়ঙ্কর কষ্টে মানুষ যেমনটা জর্জরিত হয় তেমনিই রাঙা সেই চোখ দুটো….

আরিশ আর কিছু বলার সাহস পেলো না , বাকরুদ্ধ এই মুহূর্তে ৷ ও কি বলবে কিছুই বুঝতে পারছেনা , আর আসল কারণটাই ব কি?

আরোশী দৃঢ় কণ্ঠে বলে উঠলো,,,,,,
__” আপনি ফ্রেশ হয়ে আসুন ৷”
বলে উঠে চলে গেল ৷

আরিশ কিছুই বুঝতে পারছে না যে কি হয়েছে আরুর ৷ মনটা ওর বড্ড আনচান করছে , সারাদিন এত ধকল এরপর আবার এতকিছু হওয়াতৈ চিন্তাটা যেন আরও দ্বিগুন হয়ে গেল ৷

আরুশি নিচে গেছে দেখে আরিশ আর কোনরকম সময় নষ্ট না করে জামা-কাপড় নিয়ে ওয়াশ রুমে চলে গেল ৷
শাওয়ারের নিচে দাঁড়িয়ে নিজের সমস্ত ক্লান্তি দূর করছে আরিশ আর মনে মনে ভাবছে,,,,
” তাহলে আরুপাখিকে কি কম সময় দিয়ে ফেলছি? ঠিকঠাকই সময় দিয়ে উঠে পড়তে পারছি না যখন এই মুহূর্তে ওর আমাকেই সব থেকে বেশি প্রয়োজন ৷”

সমস্ত কিছুই আজ এলোমেলো আরিশের কাছে আরুশির চোখ দুটো দেখে…..

আরু ঝটপট করে নিচে গিয়ে খাবারগুলো গরম করে নিল ৷ ফ্রিজ থেকে মাছ আর চিকেনটা বের করে গরম করে নিল তারপর গরম করে রাখা বাটিগুলো ট্রে তে বসিয়ে নিয়ে ঘরের দিকে রওনা দিল ৷ খাবারগুলো সামান্য বেশি করেই নিয়েছে কারন ও নিজেও কিছু খাইনি ৷ অনিকা খান অনেকবার জোর করা সত্বেও ওকে খাইয়ে উঠতে পারেনি , একটাই কথা আরিস না আসলে ও খাবেনা….

রুমের দিকে পা বাড়াতেই মনে পড়লে সিংগারার কথাটা যেটা মামনি সন্ধ্যাবেলা বানিয়েছিল ওর জন্য৷ সারাদিনে কিছু না খাওয়ার পর সিঙ্গারা খেলে এসিডিটি হয়ে যেতে পারে তা জেনেও আরোশী সিঙ্গারা টাও নিয়ে গেল কারণ মামনি অত্যান্ত যত্ন আর ভালোবেসে ওর জন্য বানিয়েছে, না খেলে তাকে অপমান করা হয় ৷ তারাও যেমন ওদের কথা ভাবে তাই আরুর ও কর্তব্য তাদের কথা ভাবা ৷

শাওয়ার শেষে আরিশ দেখল খাটের উপরে ট্রেতে করে অনেক খাবার সাজানো রয়েছে, আর আরুশি বোতল থেকে গ্লাসে জল ঢালছে…..

ভেজা চুল গুলোকে হাত দিয়ে ভালো করে ঝাঁকিয়ে নিয়ে তোয়ালেটা দিয়ে আর একবার সমস্ত শরীর টা মুছে নিয়ে সোফার ওপরে রাখা শার্ট টা পড়ে নিল….
ধীর পায়ে এগিয়ে আরুশিকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরল আরিশ ৷

অদ্ভুত এক সুগন্ধ ভেসে আসছে আরিশের শরীর থেকে আর যাতে আরু ক্রমাগত পাগল হয়ে যাচ্ছে, মানুষটি সত্যিই ওকে পাগল করে দেয় ৷ এতটা কাছে না আসলেই কি নয় !
যদিও এটা আরিশের ভালোবাসা ৷ দিন শেষে নিজের প্রাপ্য ভালোবাসাটুকু নিজের করে নিতে ভোলেনা আরিশ ৷ হাজার ব্যস্ততার মাঝেও যে আরুকে ভালোবাসার দায়িত্ব ওর ৷

আরুশি নিজে থেকে আর আরিশকে ছড়ালো না , দিনশেষে এটুকু ভালোবাসা ওর নিজের জন্যও খুব দরকার ৷

__” বিয়ে করবো আবার আরুপাখি, আবার গড়ে তুলব নতুন করে সংসার একরাশ ভালোবাসা দিয়ে ৷”

আরু কোন উত্তর দিল না আরিসের থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে আরিশ কে বিছানায় বসতে বলল,,,,

আরিশ বিছানায় বসতেই আরু বাটি থেকে একটু তরকারি নিয়ে ভাত মেখে আরিশের মুখের সামনে ধরল ৷

__”নিন হা করুন ৷”

__” তুমি খেয়েছ আরুপাখি?”

__” আমি খেলাম কি না খেলাম সেটা বড় কথা নয়, আমি আপনাকে এখন খেতে বলেছি তো আপনি খাবেন ৷”

আরিশ এবার রেগে গেল ,,,, ধমকের সুরে বলল :
__”তারমানে তুমি খাওনি তাইতো? এতটুকু বোঝেনা যে তুমি আর একা না তোমার সাথে আর একটা প্রান ও বেড়ে উঠছে তাই তুমি কিছু না খেলে তুমি যেমন কষ্ট পাবে সে ও সমানভাবে কষ্ট পাবে , এতটা কেয়ারলেস কেন তুমি !”

আরুশি এবার ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠলো, টপটপ করে জল গড়িয়ে পড়ছে চিবুক বেয় ৷

আরিশ তাড়াতাড়ি করে আরুর কাছে গিয়ে ওকে জড়িয়ে ধরল ৷ওর নিজের চোখের কোনেও জল ৷ আজকে দুজনের মনের মাঝেই দীর্ঘ কালো মেঘ ৷

আরুশির কপালে ভালবাসার পরশ একে আরিশ জিজ্ঞাসা করল:
__” কি হয়েছে আরুপাখি কাঁদছো কেন তুমি? তুমি কি জানো না যে তুমি কাঁদলে আমার কষ্ট হয় ৷”

আরু ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদতে কাঁদতে বলল :
__” আপনি নিজের কখনো কোনো যত্ন নেন না , আপনি নিজেও তো দুপুরে লাঞ্চ করেননি আর আপনি আমাকে বকছেন ৷ সবাইকে ভালো রাখতে গিয়ে দিনশেষে আপনি নিজেই ভালো নেই সেটা কেন মানতে চান না আপনি ? কেন সবাইকে দেখান যে আপনি হাজারো ব্যস্ততার মাঝেও ভালো আছেন যা আপনি নেই ৷ কি হবে এত কাজ করে ? দিনরাত এক করে সামান্য কিছু টাকার জন্য অফিসে পড়ে থাকার কি খুব দরকার ? আমাদের তো ভালোভাবেই দিনটা চলে যাচ্ছে তাই না ! আর আমার খুব কষ্ট হয় আপনাকে এত স্ট্রাগল করতে দেখে , আমার নিজের ও ভালো লাগেনা ৷”

আরিশ আরুশিকে নিজের থেকে ছাড়িয়ে বলতে লাগলো ,,,
__’ বুঝেছি আমার বউটা খুব কষ্ট পেয়েছে , আসলে তুমি যেমনটা ভাবছো তেমনটা নয় , আমার সত্যিই কোন কষ্ট হয়না ৷”

আরুশি এবার রেগে গিয়ে বলল ,,,,,,
__” তাই বুঝি ! তাহলে আমিও ভালোবাসা থেকে কিছু অনুভব করলে তাও বুঝি আজকাল মিথ্যে হয়?”

আরিশ এখানেই থেমে গেল, বুঝতে পারছে যে আরুশির সাথে তর্ক করে লাভ নেই তাই আরুশিকে থামানোর জন্য আরশির ঠোঁটে আলতো করে স্পর্শ করে বলল :
__” লেট হবে না কখনো প্রমিস ৷”

__” এটুকুতেই নয়, এটাও বলেন যে ঠিকঠাক নিজের যত্ন নেবেন আর ঠিকঠাক টাইমে লাঞ্চ করবেন ৷”

__” আচ্ছা বাবা সব মেনে চলবো আমি , চলোতো এবার আমাকে খাইয়ে দাও , আমার খুব খিদে পেয়েছে আর পেটের মধ্যে ইঁদুর দৌড়াচ্ছে ৷”

আরু ফিক করে হেসে দিল আরিশের কথা শুনে, তারপরে আরিশকে সামনে বসিয়ে আরিশকে খাইয়ে দিল,আর তার সাথে নিজেও খেলো….

আরিসের বুকে মাথা রেখে শুয়ে আছে আরূ, আর মনে হচ্ছে পৃথিবীর সমস্ত সুখ যেনো আজ এক জায়গায় হয়ে ওদের কাছে এসেছে ৷ প্রিয় মানুষটার সাথে একসঙ্গে সুখ অনুভব করা এক অদ্ভুত ভালো লাগা , এভাবে যেন দুজনে শত শত যুগ পার করে দিতে পারে….

আরিশ আরুর মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে আর আরুকে বলছে,,,,,

__”আরুপাখি আমরা আবার বিয়ে করব ৷ কালকেই আব্বুকে বলবো বিয়ের ডেট ঠিক করার কথা ৷”

আরু চমকে আরিশের দিকে তাকাল,তাকিয়ে বলল :
_”না না তার কোন দরকার নেই এখন আবার নতুন করে কি সব বলছেন পাগল হয়ে গেছেন আপনি?”

আরুশিকে নিচে শুইয়ে দিয়ে আরূশির উপরে উঠে বলল:
__” কেন দরকার নেই হমম ? আলবাত দরকার আছে, তাছাড়া তোমার আমার বিয়েটা ঠিকঠাকভাবে হয়নি তাই আমি চাই আরো বড় করে ধুমধাম করে আমাদের বিয়েটা হোক , তারপরে আমাদের বেবি যখন আসবে তখন তাকেও তো বলতে হবে তাই না যে একবার তা আম্মুকে আমি জোর করে বিয়ে করেছি আর একবার ভালোবেসে ৷”

আরোশী আরিশের কথা শুনে লজ্জা পেয়ে গেল , লজ্জায় মুখটা লাল হয়ে গেছে , কি বলবে কিছুই বুঝতে পারছে না ৷

লজ্জায় আরুর গাল দুটো চকচক করছে, আরুশির গলায় মুখ ডুবিয়ে দিতেই আরিশকে আরো জোরে জড়িয়ে ধরল নিজের সাথে শক্ত করে ৷

ওদের ভালোবাসাটা কত অদ্ভুত তাইনা ! সারা জীবন যেন এভাবেই সুখে থাকে দুজনে ৷

Suraiya Aayat
চলবে,,,,

#তোমার_নেশায়_আসক্ত
#part:41
#Suraiya_Aayat

আজকে আরিশ আর কলেজে যাইনি কারন আজকে অফিসে অনেক কাজ আছে ওর ৷ তাছড়া এখন থেকে আরুর সম্পূর্ণ খেয়াল ওকে রাখতে হবে তাই একটু বেশি বেশি করে সময় দিতে চাই আরুকে ৷
|
অফিসে,,,,,,

__” আমার তোমার সাথে কিছু কথা ছিল দরকারি ৷”
|
__” তোর দরকারি কথা মানে খুবই গুরুত্বপূর্ণ ,তা তো শুনতে হবেই ,,,,,,,, তা কি কথা মাই সন ৷”
|
__” আরিশ চেয়ারে হেলান দিয়ে মাথাটা এলিয়ে দিল চেয়ারে ,নিজের ক্লান্তি দূর করে দীর্ঘশ্বাস নিয়ে বলল:
__”আমি আবার বিয়ে করতে চাই বাবা ৷”
|
আফজাল খান মুচকি হাসি দিয়ে বললেন:
__”তা কবে?”
|
আরিশ শান্ত দৄষ্টি নিক্ষেপ করে বলল:
__” খুব তাড়াতাড়ি,,,,,,আমি চাইছি আগামী 23 শে নভেম্বর ৷”
|
আফজাল খান আরিশের কাছ থেকে পুনরায় বিয়ের কথা শুনে অবাক হলেন না কারন উনি যানেন যে ওনার ছেলে এমন কিছু করবে না যাতে আরু কষ্ট পাই ৷
|
__” মুখে চিন্তার রেখা ফেলে আফজাল খান বললেন:
|
__”তাহলে আর বেশি দেরি নেই,এই কদিন পরেই ৷”
|
__”আমি চাই সানার বিয়েটাও আমাদের সাথে হোক ৷”
|
__”আরাভের বাড়ির সবাই কি তাতে একমত হবে?
|
__”আমার আরাভের সাথে কথা হয়েছে ওউ আমার সাথে একমত ,আর তাছাড়া ওর family ও চাইছে যে বিয়েটা যত তাড়াতাড়ি সম্ভব হহহোক, তাই আর দেরি করে লাভ কি!”
|
__” ওদের তো এখোনো এনগেজমেন্ট টাও হয়নি,তাহলে কেমন কি !”
|
__” আমাদের গায়ে হলুদের দিন ই ওদের এনগেজমেন্ট হবে ৷”
|
__” আচ্ছা তবে তাই হোক, আমি ও এতমত ৷”
|
__” আমি তাহলে সবকিছুর এরেনজমেন্ট করছি ,তুমি চিন্তা করোনা ৷”
|
__” তুই থাকতে আমার চিন্তা কিসের !”
|
__” আচ্ছা বাবা আমি এখন তাহলে আসি,আমাকে একটু তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরতে হবে, নাহলে আরুপাখি রাগ করবে ৷”
|
__” ভালো করে যত্ন নিস আর যা চাইবে না করবি না ৷”
|
আরিশ মুচকি হেসে বেরিয়ে গেল ৷
|
|
|
আরূ বসে বসে আচার খাচ্ছে, আমের আচার ,সিজেন পার হয়ে গেছে তাই মুখে যেন বেশি ধরছে আচার টা ৷ আরুর আম্মু বানিয়ে রেখেছিলেন ওর জন্য সেটা দিয়ে গেছেন ৷
|
প্রতিবার আচারে কামড় দিচ্ছে আর চোখ মুখ টেনে ধরেছে আরু আচারটা প্রচন্ড টক তবুও ও খাবেই, মুখে ধরেছে বেশ ৷ আজকাল তো আর কিছুই খেতে পারে না তাই এখন যখন এটা ভালো লাগছে তখন সহজে আচারের বয়মটা রাখছে না ৷
|
আগের দিন আরোশী অভিমান করেছিল দেখে আরিশ আজকে তাড়াতাড়ি বাড়ি চলে এসেছে , বেশি বেশি করে খেয়াল রাখতে হবে ওকে ৷
|
আরিশ রুমে ঢুকতেই ভেবেছিল আরুশিকে দেখতে পাবে কিন্তু আরুশিকে দেখতে না পেয়ে নিচে গেল গিয়ে ওর মাকে জিজ্ঞাসা করল যে আরোশী কোথায়?
|
__”আরে আর বলিস না মেয়েটা সেই কখন থেকে ছাদে বসে আছে ৷”
|
__” এরকম টাইমে ছাদে বসে কি করছে?”
|
আসলে ওর আম্মু আচার বানিয়ে দিয়েছে সেটাই বসে বসে খাচ্ছে ৷ আমিও আর না করিনি , এই সময়ে যেটা মুখে ভালো লাগে সেটাই খাক ৷ সানাও গিয়েছিল,সানাকে জোর করে খাওয়াতে গেছে আচারটা , আর সানা রাগ করে নিচে চলে এসেছে, সানাতো এসব আচার একদমই পছন্দ করেনা ৷”
|
আরিশ আঙ্গুল দিয়ে চুলগুলোকে সামান্য আলতো করে বুলিয়ে বলল :
__”আচ্ছা আমি আসছি ৷”
|
অফিসের পোশাকটাও এখনো চেঞ্জ করেনি আরিস,অফিস থেকে বাড়ি ফিরে আরুশি কে না দেখতে পেরে মনটা ছটফট করছে এখন ৷
|
তাড়াতাড়ি করে সিঁড়ি বেয়ে ছাদে উঠল , তিন ধাপের সিড়ি এক ধাপে পার করেছে ও ব্যস্ততায় ৷
|
ছাদে উঠে সামান্য হাফছেড়ে সামনের দিকে তাকিয়ে দেখল আরোশী দোলনায় বসে পা দোলাচ্ছে আর আচার খাচ্ছে মনোযোগী হয়ে, কেউ যে সেখানে উপস্থিত সেটা যেন ওর চোখে ধরছেনা ৷
|
আরিস ফেরার সময় আজ আরুশির জন্য শখ করে লাল রঙের কাঁচের চুড়ি আর একজোড়া নুপূর কিনে এনেছে , অনেক দিনের ইচ্ছা ওর আরুশিকে এগুলো নিজের হাতে করে পরিয়ে দেবে , আর যেহেতু আজ তাড়াতাড়ি অফিস ছুটি হয়েছে তাই অফিস থেকে ফেরার পথে এগুলো কিনে এনেছে রাস্তার একটা দোকান থেকে ৷
|
চুড়িগুলো একটা প্যাকেট ছিল বলে সেটা ঘরে রেখে দিয়েছে কিন্তু নুপুরটা প্যান্টের পকেটে ঢুকিয়ে রেখেছিল ৷
|
আরিশ ধীরে ধীরে আরূর সামনে গিয়ে হাটু গেড়ে বসে আরূর পা টাকে নিজের পায়ের উপর রাখল রেখে নূপুরটা পরাতে শুরু করতেই হাতের স্পর্শ পেয়ে আরূ চমকে গেল ৷
এতক্ষণ ধরে দূরের ফ্ল্যাটে ছাদে দুটো পায়রাকে দেখছিল ও, পায়রাগুলো কে দেখে ওর আরাভদের বাড়িতে দৃশ্যের কথা মনে পড়ে গেছিল, সেটা নিয়েই এতক্ষণ গভীর ভাবনায় মগ্ন ছিল ও ৷
|
আরিশ নুপুরটা পরিয়ে দিচ্ছে যত্নসহকারে ৷
|
আরু আরিশকে ছাড়িয়ে উঠে দাঁড়াল, চমকে বলল,,,,,
__”এটা আপনি কি করছেন! আপনি আমার পায়ে হাত দিচ্ছেন কেন ? উঠুন !”
|
আরিশ রাগী চোখে আরুর দিকে তাকাল,,,,
|
__”চুপ করে বস যেমনটা আগে বসেছিলে না হলে আজকে তোমার খবর আছে ৷”
|
আরিসের চোখদুটো দেখে আর ওর গলার ভয়েস শুনে আরুর কাজ শেষ , ভয়ে ভয়ে চুপচাপ বসে পড়ল ও ৷ এই মুহূর্তে আরিশকে ওর কাজ থেকে ডিস্টার্ব করা ঠিক হবে না, ও যা করছে ওকে সেটাই করতে দেওয়া ভালো ৷
|
আরিশ আরুর এক পায়ে নুপুর পরিয়ে দিয়ে আর একটা পা ওর পায়ের উপর রেখে সেটাতো নুপুর টা পরিয়ে দিল, শেষে পায়ের পাতায় আলতো করে চুমু দিল ৷
|
আরিসের স্পর্শ পেয়ে আরুশির সর্বাঙ্গ কেঁপে উঠলো, সারা শরীর জুড়ে শিহরণ বয়ে যাচ্ছে তার সঙ্গে অদ্ভুত এক ভালো লাগা কাজ করছে ৷
|
আরিশ এবার উঠে আরুশির হাত ধরে ওর কাছে টেনে নিয়ে আসলো আর কোমরটা জড়িয়ে ধরেছে আলতো করে….
কাছে টেনে এনে আরুশির ঠোঁটের কোণে আলতো করে স্পর্শ করে দিল, সেখানে অল্প একটু আচার লেগেছিল সেটা আরিশ খেয়ে নিল ৷
|
আরুশি আরিসের জামার কলারটা জোরে চেপে ধরেছে , চোখ দুটো বন্ধ করে নিল ৷
|
আরিশ আরুর দিকে তাকিয়ে দেখল আরুশি চোখ মুখ খিচে দাঁড়িয়ে রয়েছে, আরিশ মুচকি মুচকি হাসতে লাগল….
|
আরুশি একটা চোখ খুলে দেখল আরিশ হাসছে তা দেখে ও নিজেও খানিকটা লজ্জায় পড়ে গেল তারপর তাড়াতাড়ি করে আরিশের কাছ থেকে সরে গেল….
|
__” আমার বউটা দেখি লজ্জা পেয়ে গেছে , জানো তো তোমাকে এখন লজ্জা পেতে দেখে পুরো গুলুগুলু লাগছে বলে আরশির গালদুটো টেনে দিল হালকা করে ৷”
|
আরুশি লজ্জা পেয়ে পিছন ঘুরে চলে যেতে নিলেই আরিশ আরুর হাতটা ধরে ফেলল,,,,,
|
__”বললেনাতো নুপুর টা কেমন লাগছে!”
|
আরুশি আরিশের কাছে ফিরে এসে ওর গলাটা জড়িয়ে ধরে বলল ,,,,,,,
__”আপনি ঠিক যেমন নুপুর টাও থেকে ঠিক তেমন…”
|
__”আচ্ছা তাহলে এখন একটু ভালোবাসি ৷”
|
বলে আরুশিকে কোলে তুলে নিল ৷
|
আরুশিকে কোলে করে ঘরে এনে খাটে বসাল…
|
আরুশি দাঁড়িয়ে আরিশের টাই টা খুলে দিতে লাগলো,
|
__”আরুপাখি আজকে বাবাকে বলেছি বিয়ের কথা ৷”

কথাটা শোনামাত্রই আরুশি থেমে গেল , তারমানে আরিশ সত্যিই নতুন করে আবার ওদের বিয়ের প্ল্যান করছে , ও ভেবেছিলাম হয়তো মজা করছে কিন্তু তা আরিশ যে এত সিরিয়াসলি নেব সেটা ও বুঝতে পারেনি ৷”

__”আর ইউ সিরিয়াস?”

__”আমাদের পরশুদিন হলুদ সন্ধা হবে তার সঙ্গে আরাভ আর সানার ও হলুদ একসঙ্গে হবে ৷”

আরু অবাক হয়ে বলল
__”ওদের এঙ্গেজমেন্ট?”

__”সেদিনই হবে৷”

__”ওহ আচ্ছা , তা না হয় ঠিক আছে কিন্তু আমাদের ভিয়েটা আবার না করলেই কি নয় !”

আরিশ বাঁকা চোখে তাকিয়ে,,,,,
__” কেন তোমার কি কোন সমস্যা আছে?”

আরু কিন্তু কিন্তু করে বলল,,,,,
__” ঠিক তা নয় মানে একবার বিয়ে হয়ে গেছে তারপরে আবার একবার বিয়ে করাটা কেমন একটা দেখায় না !”

__”তুমি তো জানো আই ডোন্ট কেয়ার টু এনিওয়ান, কে কী ভাবল না ভাবল আমার তাতে কোনো যায় আসে না ৷ কখনও ভাবিনি’ আর কখনো ভাববোও না, আই হোপ তুমিও ঠিক তেমন ভাবেই চলবে ৷”

__”হমমম ৷”

চলবে,,,,,,,

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে