তোমার নেশায় আসক্ত পর্ব-৩৬+৩৭

0
2613

#তোমার_নেশায়_আসক্ত
#parr:36
#Suraiya_Aayat

আরুশির বার্থডে উপলক্ষে একটা পার্টির আয়োজন করেছে আরিশ, যতই হোক আরুশির খুশি টাই ওর কাছে আগে, আর তাছাড়া আজকে আরুশির জীবনের সমস্ত সত্য উদ্ঘাটন করেই ছাড়বে এটা ঠিক করল ৷ যে করেই হোক আরুশিকে সমস্ত খুশি এনে দেবে ও ৷

সারাদিনটা আরুর খুব ভালোই কেটেছে , তবে সকাল থেকে মনটা খারাপ কারণ সকাল বেলা ওর মা একবার ওকে ফোন করেছিল, খুব কান্নাকাটি করেছেন , তবে আহানের সাথে আর কথা হয় নি, এতদিন ধরে ও আহানের সাথে কথা না বলে আছে সেটা ও নিজেই বিশ্বাস করতে পারেনা মাঝেমাঝে , কারণ ওর বিয়ের আগে ওদের দুই ভাইবোনের মধ্যে সম্পর্কটা এমন ছিল যে তা এভাবে একটা দূরত্বে পরিণত হবে সেটা ও কখনোই কল্পনাতে আনেনি, সময়ের পরিবর্তনের কারণে সময় মানুষকে কত কিছু শিখিয়ে দেয় আবার মানুষের জীবনে কত কিছু এনে দেয় ৷

অরিশের কিনে দেওয়া লাল রঙের শাড়িটা আরূ পরে আছে , একদম নতুন বউয়ের মত টুকটুক করছে ৷ সানা আর আরু বসে বসে গল্প করছে তার মাঝে আরিশের মা ঘরে এসে ওর কাছে গিয়ে উনার নিজের চোখ থেকে একটুখানি কাজল নিয়ে আরূর ঘাড়ে পিছনে দিয়ে দিলেন ৷

“আমার মেয়েটার ওপর যেন কারোর কখনো নজর না লাগে , সব সময় যেন ভালো থাকে ৷”

আরূশি মুচকি মুচকি হাসছে,,,,,,

আরুশি কৌতুহল নিয়ে জিজ্ঞাসা করল : আমার আম্মু এসেছে?

” উনি তো অনেকক্ষণ আগেই এসেছে নিচে বসে আছে, তোর জন্য অপেক্ষা করছে ৷”

আরূ উত্তেজিত হয়ে বলল : অনেকক্ষণ এসেছে, আমাকে এতক্ষণ বলো নি কেন?

” আরে মামনি সাজুগুজু করছিলি তাই তোকে বলতে পারিনি ৷”

আরুসি তাড়াহুড়ো করে বলল : মামনি আমি এখুনি দেখা করে আসছি ৷

অনিকা খান আর কিছু বলবেন তার আগেই আরূ কথাটা না শুনে ওর মায়ের কাছে চলে গেছে….

ড্রয়িংরুমের সোফায় একমনে সামনের দিকে তাকিয়ে আছে না আরুর মা, কেমন যেন বিচ্ছিন্ন লাগছে ওনাকে , জীবন থেকে বড় কিছু যেনো হারিয়ে ফেলেছেন তারই ছাপ মুখে…

এতদিন পর আরূর ওর মাকে দেখে ওর চোখে জল চলে এলো, দৌড়ে গিয়ে ওর মাকে জড়িয়ে ধরল ৷ হঠাৎ আচমকা ওনাকে কেউ জড়িয়ে ধরায় উনি বেশ চমকে গেলেন ৷

তাকিয়ে দেখলেন পাশে আরূ, উনি ছলছল চোখে আরূর গালে হাত রাখলেন ৷

কেমন আছিস মা?

এবার ওনাকে ধরে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠলো আরূ,,,,

তুমি জানো না তোমাকে ছাড়া আমার থাকতে ভালো লাগে না আমার,তুমি পারলে কি করে এতদিন আমার সাথে না দেখা করে থাকতে, আর তুমি আর ভাইয়া আমাকে একেবারে পর করে দিয়েছো ৷ যেমন তুমিও কোন যোগাযোগ রাখো না তেমনি ভাইয়াও আমার সাথে আর কথা বলে না ৷

আরূর মা ওর চোখের জল মুছে দিয়ে বললেন: তোর ভাইয়া এতো দিন তোর উপরে অভিমান করে ছিল তবে এখন আর তা নেই ৷

আরূ তাও কেদেই চলেছে , যতই হোক এতদিন ধরে একটা মান-অভিমানের পালা চলেছে তা এত সহজে যে ঠিক হওয়ার ছিল না সেটাও ভালোই বুঝতে পেরেছিল ৷

তা ভাইয়া কোথায় ? ভাইয়াকে তো কোথাও দেখছি না ?

তোর ভাইয়া আরিশের সঙ্গে কথা বলছে তাই অন্যদিকে কোথাও গেছে হয়তো….

আরূ ওর মাকে জড়িয়ে ধরে বসে আছে, আজ অনেকদিন পর ওর মাকেও পেয়েছে তাই এত সহজে ওনাকে ছাড়বে না ৷

তখনই রেজোয়ান আহমেদ আর ওনার গোটা পরিবার এলেন ৷ আরিশের জোরাজুরিতে উনি না এসে আর পারলেন না তাছাড়া মেয়েটার ওপরে অদ্ভুত একটা টান কাজ করে উনার তাই মনটা আনচান করছিল ৷

আরূকে ওর মাকে জড়িয়ে থাকতে দেখে ওনাল নিজের চোখেও জল চলে এলো , আজ যদি উনার মেয়েটাও উনার কাছে থাকতেন তাহলে হয়তো এমন ভাবেই ওধাকে জড়িয়ে ধরে থাকত, এভাবে ধুমধাম করে হয়তো ওনার মেয়ের জন্মদিন পালন করতেন….

নিজেকে কোনরকম ভাবে সামলে নিয়ে উনি আরুর কাছে গেলে ৷

উনারা আরূর কাছে যেতেই আরূ ওর মাকে ছেড়ে মুখে হাসি নিয়ে ওনাকে জড়িয়ে ধরলেন ৷

কেমন আছো আন্টি? আর তোমার শরীর ভালো আছে?

আমি ঠিক আছি,আরূর গালে একটা চুমু দিয়ে বললেন , তুমি কেমন আছ?

এইতো আলহামদুলিল্লাহ ভালো , তা আয়ূশিকে দেখছিনা ও কোথায়?

তখনই আরিশ আয়ূশিকে কলে করে নিয়ে আরুর কাছে আসল ৷

এইতো আয়ূশি ৷

আরু ওকে কলে নিয়ে আদর করতে লাগল ৷

যে মুহুর্তে রেজোয়ান আহমেদ আরুশিকে জড়িয়ে জড়িয়ে ধরেছিল তখন আরুর মায়ের মনে কেমন একটা অদ্ভুত অনুভুতি হচ্ছিল , বারবার মনে হচ্ছিলো এই বুঝি তার মেয়েটা তার কাছ থেকে হারিয়ে গেল ৷ তখনই আবার পর মুহূর্তেই নিজের মনে মনে ভাবল মেয়েটা যে তার নয় তবুও যে নিজের মেয়ের মতোই ভাবে সে আরূকে….

কিছুক্ষণ পর অনুষ্ঠান শুরু হতেই আরিশ আরূর হাত ধরে কেকের কাছে নিয়ে গেল,,,,

কেকটা কাটো ৷

আরু আরিশের দিকে তাকিয়ে : আমি একা না আপনিও কাঁটবেন আমার সাথে ||

আরিশ আর কোন কথা না বাড়িয়ে মুচকি হেসে আরূর সাথে কেকটা কাটলো ৷

আরো প্রথম আরিস কে দিল তারপর ওর মাকে তারপর একে একে সবাইকে দিল….
সবাই খুব খুশী ৷

আরু দেখলে অনেক দূরে এক কোণে দাঁড়িয়ে রয়েছে আহান, চোখের জল চলে এলো ওর এতদিন পর আহান কে দেখে ৷ সেই দিন ওর বাবা ওকে বাড়ি থেকে বার করে দিয়েছিল তারপর থেকে আর আহানের মুখোমুখি হয়নি ও ৷

ও আহানের কাছে গিয়ে ওকে জড়িয়ে ধরে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কেঁদে দিল ৷

তোর কি আমাকে আর মনে পড়ে না ভাইয়া , তুই তো ছোট বোনটার আর খোঁজ নিসনা ৷

আহান আর পারল না নিজেকে আটকাতে , ওউ জড়িয়ে ধরে কাঁদতে লাগলো , চোখে ফোটা ফোটা জল গড়িয়ে পড়েছে , বড্ড বেশি ভালোবাসে আরূকে, নিজের বোনটাকে খুব বেশি কষ্ট দিয়ে ফেলেছে ও ৷

আমি নিশ্চিন্তে আছি কারণ আমি জানি আমার বোনের জামাই তাকে কখনো কোনো কষ্ট পেতে দেবে না ৷ বলে আরুশির হাত ধরে আরিশের কাছে নিয়ে গেল…

আহান : আমার বোনটার সবসময় খেয়াল রেখো ৷

আরিশ মুচকি হাসল, সবাইকে একটু অপেক্ষা করতে বলল তারপর নিজের রুমে চলে গেল ৷

আরুশি সহ সবাই বেশ অবাক হল ,তবে আহান অবাক হলো না কারণ সমস্তটাই ও জানে যে এর পর কি হতে চলেছে ৷

কিছুক্ষণ পর আরিশকে সাথে করে একটা কাগজ আনতে দেখি আরুশির ভ্রু কুঁচকে গেল ৷

আরুপাখি এটা তোমার ভাইয়াকে দিয়ে দাও

আরু আরিশের দিকে তাকিয়ে বলল : কিন্তু এটা কিসের পেপার ?

কাল রাতে যেটাতে তুমি সিগনেচার করেছে সেই কাগজ ৷

আরূ কাগজটা হাতে নিয়ে পড়তে শুরু করল, তারপরে অবাক চোখে আহানের দিকে তাকাল ৷

এগুলো কি ভাইয়া ? আমি তো কিছুই বুঝতে পারছিনা ৷

আজ আমি সব বলছি আরুপাখি একটু অপেক্ষা করো ৷

উপস্থিত সবাই বেশ অবাক কারণ হঠাৎ এমন একটা সুন্দর মুহূর্তের মাঝে একটা সিরিয়াস টপিক চলে আসায় পরিবেশ থমথমে ৷

আরুপাখি তোমার মনে কি প্রশ্নটা আসেনা যে তোমার বাবা তোমার সাথে আমন টা করলেন কেন , অভ্র তোমার সাথে এমন টা করল কেন? বা তোমার বাবার তোমার প্রতি এত অনীহা কি কারনে ?

আরু এবার চমকে যাচ্ছে আরিশের এর প্রত্যেকটা কথায় ৷

তবে এই সমস্ত অদ্ভুত কথা শুনে রেজোয়ানা আহমেদ আর তার পরিবারের সবাই বেশ অবা হচ্ছে কিন্তু আসলে কি হচ্ছে সেটা বুঝতে পারছে না….

আপনি প্লিজ একটু বলবেন যে কি বলতে চাইছেন আমি ঠিক বুঝতে পারছিনা ৷

সবগুলো বলব আরুপাখি সব ৷

তুমি যাকে তোমার বাবা বলে মনে করো আই মিন আমরান সাহেব উনি আসলে তোমার বাবা নয় , ইভেন তুমি উনার পরিবারের কোনো সদস্য নও, না উনি তোমার মা , না আহান ভাইয়া তোমার নিজের ভাইয়া৷

কথাটা শোনা মাত্রই আরূর যেন পা এর নীচ থেকে মাটি সরে গেল, নিজের কানে যেন এসমস্ত কথা আর বিশ্বাস করতে ইচ্ছা করছে না হঠাৎ করে কি থেকে কি সমস্ত শুনছে ৷

আপনি এসমস্ত কি বলছেন ,আমি বিশ্বাস করি না ৷

আরিশ আরুর কথার কোন উত্তর না দিয়ে বলল ,
যাকে তুমি তোমার নিজের মা বলে মনে করো উনি তোমাকে ধানমন্ডি থেকে কুড়িয়ে পেয়েছিলেন যখন তোমার এক বছর বয়স ছিল…
আইমিন আজকের এই দিনটাতে ৷

আমি এসব বিশ্বাস করি না , আপনি কি সমস্ত আজগুবি কথা বলছেন ?

তোমার বিশ্বাস না হলে তুমি তোমার মাকে জিজ্ঞাসা করো উনি নিশ্চয়ই মিথ্যা বলবেন না ৷

আরু ওর মায়ের দিকে তাকাতেই ওর মা মাথাটা নিচু করে দিলেন আর অনবরত যে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কেঁদে চলেছে তা উনাকে দেখেই বোঝা যাচ্ছে ৷

আরিসের কথা শুনে রেজওয়ানা আহমেদ এবং তার স্বামী যেন নতুন এক আশার আলো খুঁজে পাচ্ছেন, কারণ ধানমন্ডিতেই উনারা নিজেদের সন্তানকে হারিয়ে ফেলেছিলেন , একটা মীরাক্কেলের অপেক্ষা করছেন ওনারা ৷

আরিশ: যে পেপার টা দেখছো সেটা একদম সঠিক, তোমার দাদুভাই তোমাকে খুবই ভালোবাসতেন সেই জন্য নিজের সমস্ত প্রপার্টি তোমার নামে দিয়েছিলেন, আর একজন বাইরের মানুষ হয়ে তোমার বাবা মানে আরমান সাহেব উনি কোনোভাবেই মেনে নিতে পারেননি যে সমস্ত প্রপার্টির মালিক আহান না হয়ে তুমি হবে ৷ তবে পেপারে ভালো করে লেখা ছিল যে তোমার কুড়ি বছর হলেই সমস্ত প্রপার্টির মালিক তুমি হবে তাই আমি চাই তুমি এখন সমস্ত প্রপার্টি আহানকে ফিরিয়ে দাও, আমি চাইনা অপরের কোন জিনিস তুমি নাও , তাই কালকে তোমার থেকে সিগনেচারটা নিয়েছিলাম সেই কারনেই ৷

আরু যেন এবার মাটিতে বসে পড়বে এরকম অবস্থা, মুহূর্তের মধ্যে কেমন উলট পালট হয়ে গেল সব ৷

আরিশ আবার বলতে শুরু করল ,,,,
আর এটাও জেনে রাখ যে তোমাকে বিয়ে করার পিছনে অভ্রের উদ্দেশ্য ছিল যা হলো ও তোমাকে বিক্রি করে দিতো , আর সে ক্ষেত্রে তোমার বাবা ও তার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন , আর উনিও টাকার লোভে তোমাকে বেচে দিতে একবারোও দ্বিধাবোধ করেননি ৷
যেদিন তুমি বাড়ি থেকে বেরিয়ে গেছিলে আমি জানতাম তোমার সন্ধ্যাবেলা ফ্লাইট তাই তোমাকে সন্ধ্যা বেলা ওরা নিয়ে যাবে , কিন্তু তখন তোমার মা আমাকে ফোন করতেই আমার জানতে সুবিধা হলো ৷

” আরিস বাবা তুমি আমার মেয়েটাকে বাঁচাও, আরূ খুব বিপদে আছে এক্ষুনি এয়ারপোর্ট এর দিকে চলে যাবে তুমি ওকে বাঁচাও ৷”
বলে ফোনটা রেখে দিলেন ৷

উনি ভেবেছিলেন আমি হয়তো কিছু জানি না তবে আমি যে সমস্তটাই জানতাম , তাই এক মুহূর্ত আর দেরী করলাম না তোমার কাছে যেতে ৷ আশা করি পরের টুকু নিশ্চয়ই তোমার মনে আছে ৷

আরু কাঁপা কাঁপা গলায় বললো : হ্যা মনে আছে, আমি গাড়িতে উঠে পড়েছি, হঠাৎ করে আমার ফোনে আম্মুর কাছ থেকে ফোন আসতেই ফোনটা ধরতেই আম্মু কান্না করতে করতে বললো :
আরু মা ফিরে আয় ,অভ্র আর তোর বাপির উদ্দেশ্যে খারাপ , তুই আরিশের কাছে ফিরে যা ৷

আমি অপেক্ষা করছিলাম যে কেউ একজন আমাকে বলুক যে আপনার(আরিশ) কাছে ফিরে আসার জন্য তাহলে নিজের মনোবল টা আরো শক্ত হবে তবে আম্মু বলতেই দুবার আর ভাবি নি যে আমাকে আর কি করতে হবে তা নিয়ে ৷
যখনই গাড়ি থামাতে বললাম তখনই বাপি বলে উঠলো :
“কোথাও যাবিনা তুই, আমার সাথে তুই যাবি আর ওর সাথেই তোর বিয়ে হবে ৷”

“আমি ওনার কাছে ফিরে যাবো ৷”আরূ জোরে চেঁচাতে চেঁচাতে বলল ৷

আরমান সাহেব এবার একটু ধমক দিয়ে বললেন ,,,,,
“তোকে যদি এখন অভ্রের সাথে না পাঠাতে পারি তাহলে আমার সমস্ত পরিকল্পনা জলে মিশে যাবে, আর আমি এতো বড় লস কিছুতেই হতে দিতে পারি না ৷” কথাটা বলার পর কি হল তা শুনতে পেল না আরু কারণ তার আগেই অভ্র ক্লোরোফরম দিয়ে অজ্ঞান করে ফেলেছে…

এটুকু বলে আরু থেমে গেল আর তখনই আরিশ বলতে শুরু করল :
” তারপরেই এয়ারপোর্টে আমি গিয়ে তোমাকে নিয়ে বাড়ি আসলাম , আর প্রমাণসহ ওনাদেরকে পুলিশের কাছে ধরিয়ে দিলাম ৷ আর উনি যে এত সহজে উনার কাজটা হাসিল করতে চেয়েছিলেন তা আমি বেশ ভালই জানতাম ৷
ভার্সিটিতে যখন তুমি পড়তে তোমার প্রতি আমার ছিল অদ্ভুত এক ভালো লাগা,আর তা আস্তে আস্তে ভালোবাসায় পরিণত হতে থাকে ৷ তোমাকে চোখে চোখে রাখার সমস্ত দায়িত্ব কারোর ওপর না দিয়ে নিজেই নিয়েছিলাম , তখন দেখেছিলাম অভ্রকে তোমার সাথে সাথে ঘুরতে , প্রথমে উদ্দেশ্যটা ঠিক লাগলেও পরে খুব একটা ভালো লাগেনি আমার ৷ তার পরে জানতে পারলাম ওর আসল উদ্দ্যেশ্য , আর এক মুহূর্তও তোমাকে কাছছাড়া করতে দিতাম না , সবসময় চোখে চোখে রাখতাম আর তাতেই আমার কাজে আরো সুবিধা হল ৷”

আরু এবার কাঁদতে কাঁদতে নিচে বসে গেল , তখনই আরুর মা ওকে গিয়ে জড়িয়ে ধরল ৷
” কাঁদিস না মা , তুই আমার নিজের মেয়ে না হলেও আমি কখনো তোকে সেই নজরে দেখি নি, নিজের মেয়ের মতোই বড় করেছি,আর ভালোবেসেছি “…

রেজোয়ান আহমেদ কাঁপা কাঁপা গলায় বললেন : আরু আমার মেয়ে ৷

আরু কাঁদতে কাঁদতে ওনার দিকে অবাক চোখে তাকাল ৷

তখন আরিস মুচকি হেসে বলল : হ্যাঁ ও আপনারই মেয়ে , আপনার হারিয়ে যাওয়া সেই ছোট্ট আরুশি যার জন্য আপনারা এত বছর ধরে চোখের জল ফেলছেন ৷”

এবার আজিজ আহমেদ বলতে শুরু করলেন :
” আমরা তখন ধানমন্ডিতে থাকতাম , আমার ছেলেটাও তখন সবে সাত বছর বয়স, সেদিন ছিল আরুশির প্রথম জন্মদিন ছিল , পরীর মত সাজিয়ে ছিলাম নিজের মেয়েটাকে, তারপরে পার্কে ঘুরতে যেতেই একটু বেখেয়ালী হতেই মেয়েটাকে হারিয়ে ফেলেছিলাম সেদিন ৷”

আরিশ এবার বলতে শুরু করল :
” তার পরে যিনি নিয়েছিলেন তিনি হলেন একজন বাচ্চা পাচারকারী, আরমান সাহেব ওনাকে একটা বাচ্চা জোগাড় করতে বলেছিলেন তারপর উনিই বাচ্চাটা রাস্তার ধারে ফেলে রেখেছেন আর তারপরে যা হয়েছে সব আশা করি সকলেই জানেন ৷”

আরূ যেন নিজের মধ্যে নেই, জীবনের বড় সত্যি আজ জানতে পেরেছে, এতদিন যাদেরকে নিজের পরিবার ভেবেছে এখন তারা কেউ নিজের নয় , আজকের নতুন বাবা-মা পেয়েছে , পেয়েছে একটা পরিচয় আর একটা পরিবার ৷

দীর্ঘ উনিশ বছর পরে রেজোয়ানা আহমেদ নিজের মেয়েকে খুঁজে পেয়ে আরুশিকে জড়িয়ে ধরে হাউমাউ করে কেঁদে উঠলো ৷ আজ সকলের চোখে জল , অবসান হলো সমস্ত দুঃখের ৷

চলবে,,,,,

#তোমার_নেশায়_আসক্ত
#patt:37
#Suraiya_Aayat

আরিশ ক্লাস নিচ্ছে আর আরু চুপচাপ মন দিয়ে আরিশ এর লেকচার শুনছে ৷ আরোশী খুবই অ্যাটেনটিভ আরিশের ক্লাসে, যতই হোক প্রিয় মানুষের বলা প্রত্যেকটা কথাই যেন মধুর লাগে , খুব ভালো লাগে ওর আরিশের ক্লাস টা করতে….

আজকে সানা আসেনি , সামনে আরাভের সাথে ওর এনগেজমেন্ট বলে তাই আরাভ ভাইয়া সানাকে নিয়ে শপিং এ গেছে….

আরিশ বোর্ডে লিখে লিখে বোঝাচ্ছে,,,,
বোর্ডে মার্কারটা বুলিয়ে বলল :
এই মলিকিউলটার সঙ্গে যদি এই মলিকিউল বিক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করে তাহলে তীব্র বিস্ফোরণ ঘটতে পারে তাই সব সময় আমরা এই বিক্রিয়াটি এড়িয়ে চলব , অন্যভাবে বিক্রিয়া ঘটানোর পদ্ধতি অবলম্বন করবো ৷

হুট করে আরু উঠে দাঁড়িয়ে বলল,,,

মে আই গো টু ওয়াশরুম?
মুখে হাত চেপে বললো কারণ ওর খুব বমি বমি পাচ্ছে,
আরূর কথা শুনে আরিশ ওর দিকে ফিরে তাকাতেই আরিশের ভ্রু কুঁচকে গেল , মুখে হাত চেপে দাঁড়িয়ে রয়েছে আরু, খুব যেন অস্বস্তি বোধ করছে দাঁড়িয়ে থাকতেও ৷

আরিশ আরুকে আরো কিছু বলতে যাবে তার আগেই আরু আরিশের পারমিশন না নিয়েই মুখটা হাত দিয়ে চেপে ধরে দৌড়ে বেরিয়ে গেল রুম থেকে,আরেকটু দেরী করলেই হয়তো ক্লাসরুমেই বমি করে দেবে ৷

আরিশ বুঝতে পারল আরুশির শরীরটা একটু খারাপ বমি করতে গেছে ৷ বেশ কয়েকদিন ধরেই আরোশী কিছু খাচ্ছে না সেটাও বেশ ভালই লক্ষ্য করছে ও ৷ আরুশিকে বারবার জিজ্ঞাসা করলেও আরোশী বলতো যে খেতে ভালো লাগেনা , জোর করে খাওয়াতে গেলে আরূ শুধু বলে আপনি আমাকে আর ভালোবাসেন না তাই আর কিছু বলতে পারেনা আরিশ ৷

আরুশিকে অমনভাবে ছুটে যেতে দেখে আরিসের কপাল কুঁচকে গেল , মনটা আনচান করছে আরিশের, হয়তো শরীরটা খুবই খারাপ না হলে আর অমনভাবে বেরিয়ে যেত না ৷

আরিশ কপালে বিন্দু বিন্দু জমে থাকা ঘামটা মুছে কনুই দিয়ে মুছে একটু কাঁপা কাঁপা গলায় সবাইকে উদ্দেশ্য করে বললো,,,,,,

আই থিং সি ইজ ইন বেড সিচুয়েশন , আই এম কামিং আফটার টেন মিনিটস , বি সাইলেন্ট আনটিল আই কাম ৷

সবাই একসাথে বলল : ওকে স্যার ৷

আরিশ ব্যস্ততার খাতিরে সকলের সামনে থেকে দৌড়ে বেরিয়ে গেল রুম থেকে ৷

আরিশ চলে যেতেই স্টুডেন্টরা মুচকি মুচকি হাসছে, সবাই বলাবলি করছে ,,,
আরুশিকে কত ভালোবাসেন স্যার , আর কতো কেয়ারিং ,সবার যদি এরকম একটা হাজবেন্ড থাকতো! এই ধরনের নানান কথা সবাইকে সবাই নিজেদের মধ্যে বলা-কওয়া করছে…

গার্লস ওয়াশ রুমের সামনে দাঁড়িয়ে আছে আরিস তবে ভিতরে ঢুকতে পারছে না, ঢুকলে একটা বাজে ব্যাপার হবে তাই বাইরে দাঁড়িয়েই অপেক্ষা করছে ৷ কপালের ঘাম মুছতেই তা আবার পুনরায় বিন্দু বিন্দু হয়ে জমা হচ্ছে কপালে , যতক্ষণ না আরূকে নিজের চোখের সামনে ঠিক দেখছে ততক্ষণ ওর চিন্তা যাচ্ছে না….

কিছুক্ষণ পর আরোশী ক্লান্ত হয়ে বেরিয়ে এলো, বেরিয়ে আসতেই আরিশকে দেখল ৷

আরিশ আরুশির কাছে ছুটে গিয়ে আরুকে জরিয়ে ধরল, আশেপাশে অনেক স্টুডেন্টরাই দেখছে ওদেরকে কিন্তু সে নিয়ে আরিশ কখনও ভাবেনি’ আর কখনো ভাববেও না ৷

আরিস আরুশিকে আর কিছু বলতে না দিয়ে ওর হাত ধরে ওর নিজের রুমে নিয়ে গেল ৷

আরুশিকে সোফায় বসিয়ে দিয়ে আরুশির পায়ের কাছে হাঁটু গেড়ে বসলো আরিস ৷ আরূশির হাত দুটো শক্ত করে চেপে রেখেছে আরিশ ৷ আরুশির শরীর এখনো কাঁপছে, বমি হয়ে আরো দুর্বল হয়ে পড়েছে ৷ একেই খাওয়া দাওয়া করে না তার ওপর নিজের যত্নও নেয় না , যতটুকু আরিশ করে ততটুকুতেই ওর যত্ন সীমাবদ্ধ থাকে, নিজে থেকে বাড়তি যত্ন নেয় না আরোশী ৷

আরিশ কাঁপা কাঁপা গলায় বললো : এখন কেমন লাগছে আরূপাখি ?

আরুশি চোখটা বন্ধ করে কিছুক্ষণ পর চোখ খুলে আরিশের দিকে মুচকি হেসে বলল :
আরে আপনি চিন্তা করছেন কেন , এই দেখুন আমি একদম ঠিক আছি ৷

আরিশ এবার একটা ধমক দিল আরুশিকে ৷
” সব সময় আমাকে মিথ্যা কথা বলে কোন লাভ আছে ? আমার নিজের কি সেন্স অফ হিউমার নেই যে কে সুস্থ আর কে অসুস্থ তা বোঝার ক্ষমতা আমার থাকবে না ৷
বারবার বলি নিজের যত্ন নাও ঠিকঠাক খাওয়া-দাওয়া করো তা নয়…”

আরোশী কাচুমাচু ফেস করে বলল : আপনি আমাকে এভাবে বকছেন কেন ? আর আপনি তো নেন আমার যত্ন , আপনি আমার কল্পনার থেকেও বেশি যত্ন করেন তাই নিজের খেয়াল রাখার প্রয়োজন বোধ করি না ৷

আরিশ আরুর দুই গালে হাত রেখে বলল:
তোমাকে নিয়ে আমি সবসময় ভয়ে ভয়ে থাকি তা কি তুমি বোঝনা ! তুমি জানোনা তোমার কিছু হয়ে গেলে আমি বাঁচবো না ৷ বলে আরুশির কোমর জড়িয়ে ধরল ৷

আরুশি মুচকি মুচকি হাসছে , আরিশের ব্যবহারে মাঝে মাঝে ও নিজেও চমকে যায়, ভালো লাগে অবশ্য ৷

আরিশ মাথা তুলে বললো :
চলো তোমাকে এক্ষুনি আমি ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাবো ৷

ডক্টর এর নাম নিতেই আরুশির মাথায় এলো সবার প্রথমে স্যালাইনের বোতল আর ইনজেকশনের কথা, ভাবতেই ঢোঁক গিলে বলল :
আমি একদম ঠিক আছি দেখুন , আমার ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাওয়ার কোন দরকার নেই ৷

আরিস : তা বললে আমি শুনবো না , আমি যখন বলেছি তুমি যাবে তখন যাবেই ৷

আরু এবার আরিশকে ইমোশনাল ব্ল্যাকমেইল করা শুরু করলো ৷
“আমি যাব না প্লিজ আমাকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাবেন না , আমার খুব ভয় করে বলে একটু ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদতেই আরিশ ঘাবড়ে গেল , তারপর আরুকে নিজের সাথে জড়িয়ে নিয়ে বলল :
আচ্ছা যাব না , তবে তুমি প্রমিস করো ঠিকঠাক খাওয়া-দাওয়া করবে আর নিজের যত্ন নিবে ৷

” আমি বললাম তো ,আমি নিজের যত্ন নেব,এবার প্লিজ আপনি চিন্তা করবেন না , আর আপনি ক্লাস থেকে বেরিয়ে এলেন কেন?”

আরিশ রেগে গিয়ে বলল : কানের নিচে এক থাবড় দেবো , তুমি ওভাবে চলে এলে আর আমি ওখানে ক্লাস নেব তাই না?

“সবাই কি ভাববে বলুন তো?”

কে কি ভাবলো আই ডোন্ট কেয়ার তুমি কি তা জানো না যে আমি কাউকে পরোয়া করিনা , যে যা ভাববে সেটা তার একান্তই পার্সোনাল ব্যাপার আমার তাতে কিছু যায় আসে না ৷

তবে আপনি এখন ক্লাসে যান, অন্তত ক্লাস টা কমপ্লিট করে আসুন ৷

আরিশ একটু ভেবে বলল :
আচ্ছা ,তবে তুমি এখানে বস যতক্ষণ না আমি আসবো ততক্ষণ কোথাও যাবেনা ৷

আচ্ছা আমি আপনার জন্য ওয়েট করছি, আপনি ক্লাসটা করে আসেন ৷

আরিশ আরুর কপালে একটা কিস করে বলল: আমি আসছি কেমন , এক পাও নড়বে না, যদি এক পা ও নড়েছ তো তোমার খবর আছে ৷

আরিশ ক্লাস রুমের দিকে যাচ্ছে আর ভাবছে, এখন ঠিক বুঝতে পেরেছে যে আরুশি কিছু না কিছু বলে ওকে ডাক্তার দেখাতে বারণ করে দিয়েছে কিন্তু বাড়ি ফিরে ও ডক্টরের চেকআপ করিয়েই ছাড়বে সে আরুশি যত বাহানায় করুক না কেন ৷

সোফাতে বসে আছে আরুশি আর অনিকা খান একের পর এক বকা দিয়ে চলেছেন আরুশিকে, আরুশি শুনছে ঠিকই কিন্তু আর এক কান দিয়ে তা বার করে দিচ্ছে , কারণ ও এই পরিবারের প্রত্যেকটা মানুষকে ভাল করে চেনে এবং জানে, এটাও বোঝে যে সবাই ওকে কতটা ভালোবাসে তাই ওগুলো বলাটাই স্বাভাবিক ৷
অনিকা খান আরুশিকে বকছেন আর তখনই আরুশি ফিক করে হেসে ফেললো , ওকে হাসতে দেখেই অনিকা খান অবাক হয়ে গেল কারণ উনার এত বকাঝকা শর্তেও মেয়েটা কিভাবে হাসে সেটা উনি ঠিক বুঝে উঠতে পারছেন না ৷

আমি বকছি আর তুই হাসছিস , আমি কি তোকে কোন হাসির কথা বলেছি?

আরশি মুখে আঙ্গুল দিয়ে বলল : সরি আর হাসবো না,তুমি বলো ৷

আসলে আরুশি যে আরিশ কে কিভাবে ইমোশনাল ব্ল্যাকমেইল করে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাওয়া থেকে আটকাতে পেরেছে সেটাই মনে পড়তেই খুব হাসি পেল ওর,তাই ফিক করে হেসে ফেললো….

আর এদিকে অনিকা খান আরুকে আবারো বকাবকি করেই চলেছেন ৷

এবার থেকে যদি ঠিকঠাক খাওয়া-দাওয়া না করেছিস তো আমি তোর সব দায়িত্ব কিন্তু এবার আরিশের উপর ছেড়ে দেবো , আর যদি আরিশ তোর সমস্ত দায়িত্ব নিয়ে নেয় , টেক কেয়ার করে তাহলে বুঝতেই পারছিস কি হবে তোর ৷

আরু অনিকা খানকে জড়িয়ে ধরে বলল:
ও মামনি তুমি এমন করছ কেন বলোতো, আর আমার আমাদের মা মেয়ের মাঝে উনাকে ডেকে আনার কি দরকার ? তুমি তো আমার কত যত্ন করো বলো ৷
আরু জানে আরিশ যদি ওর খেয়াল রাখতে শুরু করে তাহলে ওর আর রেহাই নেই….

নিচের ঠোটটা কে দাঁত দিয়ে শক্ত করে কামড়ে ধরে রেখে ফোনের স্ক্রিনের দিকে মনোযোগ দিয়ে তাকিয়ে আছে আরোশী হয়তো খুবই একটা ইম্পোর্টেন্ট জিনিস হচ্ছে ফোনে আর তা দেখায় মগ্ন ও ৷

আরিশ শাওয়ার নিয়ে ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে এলো, ভেজা চুল গুলোকে হাত দিয়ে একবার ঝেড়ে নিয়ে আরুশির দিকে চোখ যেতেই দেখল আরোশী একমনে ফোনের দিকে তাকিয়ে আছে, ফোনে ঠিক কি এমন হচ্ছে যার জন্য আরুশি ওভাবে তাকিয়ে আছে তা নিয়ে আরিশের ও একটু বেশ কৌতূহল হল ৷ তবে তা দেখার জন্য আরিশ আরূশির পিছন দিক দিয়ে উঁকি মারতেই আরুশি জোরে চেঁচিয়ে বলে উঠলো :
গেল গেল গেল, শাশুড়ি টা এবার গেল ৷ বউটা কিভাবে মারছে , কি ডেঞ্জারেস রে বাবা ৷ আরূ এসব বলেই যাচ্ছে আর. এদিকে যে আরিশ এসেছে তাতে ওর খেয়াল নেই…

আরোশী যে এমন টপিকের কিছু জিনিস দেখে তা আরিশ ও আজ দেখে খানিকটা হলেও চমকে গেছে৷ লাইক সিরিয়াসলি ! এত বড় মেয়ে এসমস্ত দেখে ? এগুলো তো ছোট ছোট পিচ্চিরা দেখে হাসতে হাসতে গড়াগড়ি দেওয়ার জন্য ,এখন আরূ এই বউ শাশুড়ি র ঝগড়া দেখে !
এসব ভাবলেই আরিশের যেন নিজেকে পাবনা থেকে ফেরত পাগল বলে মনে হলো ৷

আরিশ আর আরুশিকে ডিস্টার্ব করলো না , ওয়ারড্রব এর দিকে এগিয়ে গেল শার্টটা আনার জন্য তখনই আরুশির গলার আওয়াজ পেতেই সেদিকে তাকিয়ে দেখলো আরুশি ছুটেছে ওয়াশ রুমের দিকে,
অরিশের আর বুঝতে বাকি রইল না যে আরু আবার বমি করতে গেছে , ও নিজেও আর দেরি না করে আরুশির পিছন পিছন ওয়াশরুমে গেল ৷

আরশির অবস্থা খারাপ বমি করতে করতে ৷

আরিশ ওর হাত-মুখ ধুয়ে দিয়ে বিছানায় শুইয়ে দিল৷

আরেকটা বার তুমি এখান থেকে নড়ো দেখো কি করি ৷ তুমি দাড়াও আমি এক্ষুনি ডক্টর আংকেলকে ফোন করছি ৷

প্লিজ আপনি ওনাকে ফোন করবেন না ৷

আমি তোমার কোন কথা শুনছি না বলে ফোন নিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে গেল আরিশ…

ইতিমধ্যেই আরুশির ভয়ে হাত পা কাপাকাপি শুরু হয়ে গেছে ৷ ইনজেকশন নামক জিনিসটা কে বড্ড ভয় পায় ও ৷ ওর মনে আছে ছোটবেলায় একবার টিটেনাস দিতেই দুদিন ওর জ্বর ছিলো তারপর থেকে ইনজেকশন এর প্রতি তীব্র ভয় ওর ৷

ডাক্তার গম্ভীরমুখে আরুর সামনে বসে আছে আর আরোশী ভয়ে মুখ কাচুমাচু করে রেখেছে ৷
ডাক্তারের মুখ দেখে কোন কিছুই বোঝা সম্ভব নয় যে উনি কি বুঝাতে চাইছেন , আরু এবার ভয়ে কান্না করে দেওয়ার অবস্থা ৷

ডাক্তার গম্ভীর কণ্ঠে বলল:
তুমি কি খাওয়া-দাওয়া কিছু করো না? এত কেয়ারলেস কেন ? নিজের প্রতি যত্নশীল হও , এখনই যদি নিজের কেয়ার না করো তাহলে পরে কি হবে, তোমার শরীরে যে ছোট্ট প্রাণটা বেড়ে উঠছে তার কি হবে!

ডক্টর ঠিক কি বলতে চাইছেন তার কিছুই আরু বুঝতে পারছেনা, কারণ ডাক্তার এমন কথা এর আগে ওকে কখনও বলেনি ৷.

আমার কি খুব বড় কোন সমস্যা হয়েছে ডক্টর, প্লিজ বলুন না কাঁদো কাঁদো গলায় আরু বলল…..

ডাক্তার জোরে জোরে হাসতে হাসতে বললেন : আলহামদুলিল্লাহ, ভালো খবর আপনাদের পরিবারে, আপনারা দাদা দাদিমা হতে চলেছেন তুমি মা হতে চলেছ….

সানা তো খুশিতে আরুকে জড়িয়ে ধরলো, সারা পরিবারজুড়ে আনন্দের বড় বন্যা বয়ে যাচ্ছে ৷

আরিশ রুমের এক কোণে দেওয়ালের সাথে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে , ডাক্তারের মুখ থেকে এতক্ষণ এই কথাটা শোনার অপেক্ষায় ছিলো ও ৷ কিছু আন্দাজ করতে পারেনি তেমনটা নয় , আন্দাজ করেছিল তবে শিওর ছিল না ৷

আরুশির চোখে জল চলে এলো, এ এক অদ্ভুত প্রাপ্তি, মা হওয়ার একটা অদ্ভুত আনন্দ যে কি তা ও আজকে বুঝতে পারছে,আর এটাও বুঝতে পারছে যে এতবছর ধরে ওর মা কতটা কষ্ট পেয়েছেন ওকে ছাড়া থাকতে ৷চোখ থেকে এক ফোটা জল গড়িয়ে পড়তেই আরিশের দিকে তাকাতেই আরিশকে রুম থেকে বেরিয়ে যেতে দেখেই আরূর বুকের ভেতর মোচড় দিয়ে উঠলো ৷ তাহলে কি আরিশ এই খুশির খবরে খুশি নয় ? ও কি চায়না এই বেবিটা কে ?

এসমস্ত হাজার আজগুবি কথা আরূর মাথায় আসছে এখন ৷

আরু কাঁদছে আর এসব কথা ভাবছো তখনই অনিকা খান আরুর কাছে গিয়ে ওর কপালে ভালবাসার পরশ একে চোখের জলটা মুছে দিয়ে বললেন :
এমন খুশির দিনে কাঁদতে নেই রে মা , এ এক আনন্দের দিন ৷ কথাটা বলেই আরূকে জড়িয়ে ধরলেন….

ডাক্তার অনেকক্ষণ আগেই চলে গেছেন তবে এখনও আরিশ রুমে আসছে না দেখে আরূর চিন্তায় কাতর হয়ে যাচ্ছে , তাহলে কি আরিশ সত্যিই বেবীটা কে চায় না, কিন্তু ও তো চাই এই বেবিটা কে ভীষণভাবে আর তার সাথে আরিশ কেও চায় ও ৷ দুজনকে নিয়ে একসাথে ভালোভাবে থাকতে চায় আরূ, এখন যদি আরিশ বলে নেগেটিভ কথা বলে তাহলে আরূ কি করবে?
এসব ভাবতে ভাবতেই ওর মাথা খারাপ হয়ে যাচ্ছে ৷

গুটি গুটি পায়ে সারা বাড়িতে ঘুরেও খুঁজে খুঁজে আরিশ কে পেল না আরূ , তাহলে হয়তো ছাদে আছে এই ভেবে ছাদের দিকে পা বাড়ালো ও ৷

জোসনা রাতে আকাশের চাঁদটাও তীব্রভাবে উজ্জল, মাঝে মাঝে একরাশ সাদা মেঘগুলো তাকে ঢেকে দেওয়ার বৃথা চেষ্টা করছে, তারপর আবার ক্লান্ত হয়ে সরে যাচ্ছে একে অপরের থেকে , হয়তো মেঘগুলোও অভিমান করে চাঁদের থেকে দুরত্ব বজায় করে চলছে৷

ছাদের মাঝখানে দাঁড়িয়ে থাকা মানুষটার উপরে চাঁদের আলো পড়ে তার সৌন্দর্যতা যেন আরো দ্বিগুন করে দিয়েছে ৷ মানুষটার প্রেমে হাজারবার পড়লেও আরু কখনো বিরক্তবোধ করবে না ৷

ধীর পায়ে আরিশের কাছে যেতেই আরিস আরূশির হাতটা টেনে আরুশিকে ওর বুকের সাথে মিশিয়ে নিল ৷ হঠাৎ আচমকা এ মনটা হওয়াই আরূ ও বেশ একটু ভয় পেয়ে গেল ৷

আরিস কাঁপা কাঁপা গলায় বললো :
তুমি কি ভাবলে আরূপাখি আমি বেবি টা কে চাইনা ? তুমি এটা ভাবলেই বা কি করে ৷ তুমি আর আমার বেবিটাই তো আমার জীবনের একমাত্র সম্বল যাদেরকে আঁকড়ে ধরে আমি সারাজীবন পার করে দিতে পারি, বলে আরুশির কপালে ভালোবাসার পরশ একে বলল:
থ্যাংক ইউ আরূপাখি আমার জীবনের সবথেকে বড় সুখ এনে দেওয়ার জন্য ৷
তোমাকে না পেলে হয়তো জানতেই পারতাম না জীবনটাকে কতভাবে আর কতটা সুন্দর ভাবে রঙিয়ে দেওয়া যায় , কতভাবে একটা মানুষকে ভালোবাসা যায়, কতটা গভীর ভাবে চাইলে একটা মানুষ কে নিজের করে পাওয়া যায়….

আরিশূর কথা শুনে আরূও ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠলো, সব সময় নেগেটিভ কথাই আরূশির মাথায় আসে বারবার, আর সব সময় আরিস তা ভেঙে দিয়ে ওর ভাবনার পরিবর্তন করে দেয় ৷

আসলে আরিশ তখন ওখান থেকে চলে এসেছে কারণ খুশিতে ওর চোখে জল চলে এসেছিল আর ও নিজের চোখের জলটা কারো সামনে দেখাতে চায় না তাই এতক্ষণ ছাদে সে চোখের জল ফেল ছিল কিন্তু এ হলো খুশীর , আনন্দের, এক অদ্ভুত প্রাপ্তির ,ওর আর আরুর ভালোবাসার ফসল ৷
আসলে আরু আর আরিশ হলো একে অপরের পরিপূরক , যারা বিশ্বাস করে যে তারা একে অপরকে ভালবাসতে শিখিয়েছে ৷

এভাবেই বেঁচে থাকুক হাজার হাজার ভালোবাসা , পূরন হোক তাদের প্রত্যাশিত স্বপ্নবিলাস , ভালোবাসার রঙে রঙিন হয়ে উঠুক সকলের জীবন,
পূর্ণতা পাক সকলের ভালোবাসা ৷

চলবে,,,,,,,

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে