তোমার নেশায় আসক্ত পর্ব-৩৪+৩৫

0
2747

#তোমার_নেশায়_আসক্ত
#part:34
#Suraiya_Aayat

আরুশি : আপনি আমার সাথে কথা বলছেন না কেন ? আমি কি ভুল করেছি যে আপনি কথা বলছেন না আমার সাথে !

আরিস : তোমাকে অত রাত্রে গোসল করতে বলেছি আমি যে তুমি গোসল করতে গেলে! যদি এখন জ্বর কাশি হয় তখন কি হবে , তুমি তো অসুস্থ হয়ে পড়বে ৷

আরু কান ধরে : আই এম রিয়েলি সরি, আপনি তো জানেন যে আমার ওই অবস্থায় বেশিখন থাকতে ভালো লাগে না, গোসল না করলে অস্বস্তি লাগে ৷

আরিশ আগের মতোই ড্রাইভিং এ মন দিলো, আরুর উপর খুব রাগ করেছে ও , তাই এখন কথা বলার মুডে নেই ৷

আরু: আমি কিন্তু এবার কান্না করে দেব ৷

আরিস তাও কিছু বলছে না দেখে আরুশি এবার আরীশের হাত ধরে ঝাকাতে লাগলো ৷ আরিশের হাত ধরে ঝাকুনির ফলে গাড়িটা ডিসব্যালেন্স হয়ে গেল সামান্য ৷

আরিশ গাড়িটাকে কোনরকম কন্ট্রোল করে আরুশির দিকে রাগি চোখে তাকালো ৷

আরিশ : এখনই তো একটা বড়সড় বিপদ হয়ে যেতে তখন !

আরুশি কাচুমাচু ফেস করে : আপনি তো আমার সাথে কথা বলছেন না তাই আমি এমন টা করলাম, আপনি আমার সাথে কথা বললে আমি কি আর আপনার আমনভাবে হাত ধরে ঝাকালাত?

আরিশ : একদম চুপচাপ বসে থাকো না হলে এক্ষুনি গাড়ি থেকে নামিয়ে দেবো মাঝে রাস্তায়….

আরুশি আরিশের ধমক শুনে একদম চুপ হয়ে গেল বাচ্চাদের মত, ও ভাবল সত্যিই হয়তো আরিশ ওকে গাড়ি থেকে নামিয়ে দেবে ৷

সারা রাস্তায় চুপ করে এসেছে আরু আর আরিশের ধমক খেয়ে আরিশের সঙ্গে আর কোনো কথা বলার সাহস পায়নি আরূ….

এখন প্রায় রোজই আরিশ আরুকে ভার্সিটিতে দিয়ে আসে , আর কখনো কখনো আরু একা একাই আসে যখন আরিশ খুব ব্যস্ত থাকে…..

কলেজের সামনে গাড়ি এসে থামতেই আরু চুপচাপ নেমে গেলো তবে আজকে আরিশ ও গাড়ি থেকে নামল ৷ সাধারনত আরিশ গাড়ি থেকে নামে না , ওকে ড্রপ করে দিয়ে চলে যায় কিন্তু আজকে গাড়ি থেকে নামতে দেখে অবাক হলো আরু ৷

আরু আরিশকে জিজ্ঞাসা করল,,,,,,

আরূ : আপনি নামলেন যে, আপনি কি আজকে ভার্সিটির ভিতরে যাবেন ?

আরুর কথার কোন উত্তর না দিয়ে আরিশ এবার ভার্সিটির ভিতরে ঢুকতে লাগল ৷

আরোশী অবাক হয়ে গেল কারণ আরিশ ওর কথার উত্তর না দিয়ে ভার্সিটির ভেতর যাচ্ছে, ব্যাপারটা ঠিক কি তা এখনো বুঝতে পারছেনা ও ৷

আরোশী আরিশের সাথে হেঁটে উঠতে পারছে না ,আরিশ অনেক ফার্স্ট হাঁটছে ৷ আরু কোনোক্রমে দৌড়ে গিয়ে আরিশের পাশে দাঁড়ালো ৷

আরুশিকে দৌড়াতে দেখে আরিশ থেমে গেল, তারপর বলল : এই মেয়ে তুমি কি পাগল নাকি , এভাবে দৌড়াচ্ছ , যদি এখনি পড়ে যেতে তাহলে কি হতো !

আরু আরিশের পাশে দাঁড়িয়ে দাঁত বের করে হাসছে, হেসে হেসে বলল : আপনি আছেন তো আমার খেয়াল রাখার জন্য….

আরিশ আবার রাগী রোখে তাকিয়ে নিয়ে আবার হাটতে লাগল , ও জানে আরুর সাথে এ ব্যাপারে কথা বলে ওর কাজ নেই কারণ এখন বাচ্চামো করাটা ওর স্বভাবে পরিণত হয়ে গেছে , আরিশ আরুর বাচ্চামোটাকেই সবথেকে বেশী ভালোবাসে তবে ওর কেয়ারলেস স্বভাবগুলো একদমই পছন্দ নয় আরিশের ৷ বয়সের সঙ্গে ম্যাচিউরিটিটা এখনো আসেনি আরুর , সবসময় আরিশকেই আরুর খেয়াল আর যত্ন রাখতে হয়….

আরুশি আর কিছু বলতে যাবে তার আগেই আরিশ প্রিন্সিপালের রুমের দিকে ঢুকে গেল….

ক্লাস রুমে একাএকা বসে আছে আরূ , সানা এখনো আসেনি আরাভের সঙ্গে আসবে আর কিছুক্ষণ পরেই , আর তিথি তো এখন আসতে পারবে না কারণ সবে তিন দিন হল ওর নাহিদ ভাইয়ের সাথে বিয়ে হয়েছে, এখন হয়তো হানিমুনে ব্যস্ত ৷ এত সবকিছুর মাঝে আরূ বসে বসে বোর হচ্ছে ৷

আজকে যেন পৃথিবীর সবথেকে রোর জিনিস গুলো আরুর সাথে ঘুরছে ৷ প্রথমত আরিশ কথা বলছে না ওর সাথে তারপর সানা এখনো কেউ আসেনি ও হুদাই একা একা বসে আছে ৷

জানালার দিকে তাকিয়ে ভার্সিটির গার্ডেন এর দিকে নজর দিলো আরুশি, এতদিন লক্ষ্য করেনি যে ওখানে দুটো দোলনা রয়েছে, মনটা খুশি হয়ে গেল একেবারেই তা দেখে ৷ আরিশদের বাড়িতেও রয়েছে তবে তাতে বেশি উঁচুতে উঠে দোল চড়া যায় না ৷আরুর মনে পড়ল যে এইরকম একটা দোলনা আরূশির বাড়ির পিছনের আম গাছটাই ছিল যেখানে ছোটবেলায় ও বসে থাকতো আর আহান দোল দিত ওকে ৷ সবকিছুই বয়স বাড়ার সাথে সাথে কোথায় যেন হারিয়ে যায় কিছুই বুঝে ওঠা যায় না….
আরুশির আর ভাবতে বাকি রইলো না যে এরপরে ও কি করবে , ভার্সিটির ক্লাস শেষ হয়ে গেলেই বেরিয়ে গিয়ে দোলনাটা চড়বে না হলে একটা ক্লাস মিস দেবে😁৷

বাইরের দিকে অন্যমনস্ক হয়ে তাকিয়ে আছে আরু তখনই পরিচিত কন্ঠের ধমক শুনে সামনের দিকে তাকালো…..
ক্লাসেয সকলেই দাঁড়িয়ে আছে শুধু ও এতক্ষণ জানলার দিকে তাকিয়ে সমস্ত আকাশ পাতাল ভাবতে গিয়ে ক্লাসে কি হচ্ছে কোন কিছুই ওর কানে পৌঁছায় নি….
দেখল যে ক্লাসের মধ্যে দাঁড়িয়ে আরিশ আর ওর সঙ্গে প্রিন্সিপাল স্যার ৷ আরু সে দিকে অবাক চোখে তাকিয়ে থাকতেই পাশ থেকে সানা একটা চিমটি কাটলো ৷

আরূ: কিরে তুই কখন এলি ?আর এই সব কি হচ্ছে আমি তো কিছুই বুঝতে পারছিনা….

আরুশি কথা বলার সঙ্গে সঙ্গেই আরিশ ধমক দিয়ে বলল : এটা কি তোমার গল্প করার ক্লাস ?

আরিসের কথা শোনা মাএই আরুর চোখদুটো যেন গোল গোল হয়ে গেল ,ও ভবছে এসব উনি কি বলছেন?

প্রিন্সিপাল স্যার আরিশের কাজ দেখে একটু মুচকি হাসলেন কারণ দুজনের মধ্যে যা চলছে তা দেখে কেউ বলবে না যে ওরা দুজন হাসবেন্ড ওয়াইফ….

প্রিন্সিপাল স্যার শুকনো কেশে বললেন : আচ্ছা আরিশ আমি বলি কি তুমি শান্ত হও ৷
সো স্টুডেন্ট তোমরা সবাই আরিশকে চেনো , আমাদের কলেজের ছাত্র সে ৷ আমাদের কলেজ থেকে সম্মধনা দেওয়া হল কলেজ টপার হিসাবে তার জন্য বেশ কয়েকদিন আগে একটা অনুষ্ঠানও করা হয়েছিল, আই হোপ তোমাদের সকলের মনে আছে৷

সকলে একসাথে চেঁচিয়ে অনেক জোরে বলল : ইয়েস স্যার…

সবার কথা শুনে আরু মুখ ভাংচি দিল তা শুনে ,,,,,
মনে মনে : নিজের বউয়ের সাথে যে নিরামিষ হয়ে কথা বলে না সে আমার নাকি ক্লাস টপার ৷

প্রিন্সিপাল স্যার : আরিশের কাছে একটা সুযোগ ছিল দেশের বাইরে গিয়ে প্রফেসারি করার , কিন্তু আমাদের সকলের কথা ভেবে আমাদের এই কলেজের কথা ভেবে, কলেজের স্টুডেন্ট এর কথা ভেবে আমাদের কলেজের প্রফেসর হিসেবে ক্লাস করাবে ও তোমাদের সবাইকে , আই থিঙ্ক তোমাদের কোনো অসুবিধা হবে না,কারন ও এলিজেবল ৷আমার কথাটা আরিশ রেখেছে তার জন্য আমি খুবই খুশি ৷

প্রিন্সিপালের কথা শুনে সব মেয়েরা আরিশের দিকে হা করে তাকিয়ে আছে , কারণ এত দিন আরিশের উপর সকলে ক্রাশ খেয়েছে একজন সিনিয়র হিসেবে তবে আজকে একজন টিচার হিসেবে পেয়ে এখন সবাই ওকে গিলে গিলে খাচ্ছে , যদিওবা সবাই জানে যে আরিশ বিবাহিত তবুও ক্রাশ খেতে সমস্যা কোথায়….(আমার(লেখিকার) মতো😕)

প্রিন্সিপালের কথা শুনে আরূ অবাক হয়ে গেল,এ ঝটকাটার মধ্যে থেকে বেরিয়ে ও আসতে পারছেনা ৷

সানা ফিসফিস করে বলল : মুখটা বন্ধ কর নাহলে মুখে মাছি ঢুকে যাবে তারপরে সেটা পেটে গিয়ে ভো ভো করবে ৷

সানার কথা শুনে আরু আরিশের দিকে তাকিয়ে মুখটা বন্ধ করে নিল , তারপর ও সানাকে বলতে লাগল :
উনি তো আমাকে বলেননি আগে যে এই কলেজের প্রফেসর হিসেবে যোগদান করছেন ৷

সানা: সে তো আমিও জানতাম না তবে এখন বেশ ভালোই হলো, সবাই ভাইয়ার উপর crush খাবে আর তুই হাঁ করে সবার দিকে তাকিয়ে তকিয়ে দেখবি কিছু বলতে পারবি না ৷

আরূ সানার দিকে রাগি চোখে তাকালো ৷

প্রিন্সিপাল স্যার : আশা করি তোমরা সবাই ক্লাসে এটেন্ডটিভ হবে ,আর আরিশ যা যা বলবে সেগুলো ফলো করবে , কোন অসুবিধা হওয়ার কথা নয় ৷

স্টুডেন্ট : ইয়েস স্যার ৷

প্রিন্সিপাল আরিশের সঙ্গে হ্যান্ডশেক করে তার পরে রুম থেকে বেরিয়ে গেলেন,,,,,,

আরিশ সকলকে বসতে বলল ৷
সবাই আরিশের দিকে তাকিয়ে আছে , আরিশ আজকে একটা ব্লু কালারের শার্ট পরে এসেছে যাতে ওর সৌন্দর্য আরো বেড়ে গেছে….

আরিশ এক এক করে সকলের নাম জানতে চাইছে, সবাই নাম বলছে ৷সানার কাছে আসতেই সানা বলে উঠলো: আমি সানা খান ৷

আরিস : ওকে বসো ৷

এবার আরুশির পালা…..

আরোশী উঠছে না, ওর এখন ভীষণ রাগ হচ্ছে আরিশের উপরে কারণ ক্লাসে ঢুকেই আরিশ ওকে বকাবকি করেছে, আর তার উপরে সকাল থেকে কথা বলছে না আবার তার সঙ্গে কলেজে জয়েন করেছে সেটাও বলিনি ৷ আরু খুশি হয়নি তা নয়, খুব খুশি হয়েছে তবে সেই খুশিটা যেন রাগ দিয়ে চাপা পড়ে গেছে ৷ তাই এই মুহূর্তে মুডটা বেশ গরম আছে….

আরোশী উটছে না দেখে আরিশ বলে উঠলো : আপনাকে কি আবার ডেকে ডেকে তুলতে হবে?

আরুশি রাগি মুড নিয়ে বলল: বিনতে আরুশি রহমান ৷ অন্য সময় হলে আরুশি বলতো বিনতে আরশি খান তবে আজকে আরিশের সঙ্গে ঝগড়া হয়েছে বলে খান না বলে রহমান বলেছে ৷

আরিশ ভ্রু নাচিয়ে বলল : ওহহ আচ্ছাহ ! বেশ তা, বসো…..

আরিশ ক্লাস করাচ্ছে সবাই মনোযোগ দিয়ে শুনছে ওর কথা , তার মধ্যে থেকে তাহিরা বলে মেয়েটা আরিশের দিকে অনেকক্ষণ ধরে অদ্ভুত এক নজরে তাকিয়ে আছে….

আরু ব্যাপারটা লক্ষ্য করেছে , দেখে খুব রাগ হচ্ছে ওর ৷ এভাবে একটা বিবাহিত পুরুষকে দেখার কি আছে সেটা ও বুঝতে পারছে না ৷

হঠাৎই তাহিরা উঠে দাঁড়ালো , তারপর আরিশকে জিজ্ঞাসা করল….

তাহিরা: sir এই আমি ইকুয়েশনটা ঠিক বুঝতে পারিনি , আপনি প্লিজ একটু বলবেন ? যদি এখানে এসে বলতেন তাহলে একটু সুবিধা হত ৷

আরিশ তাহিরার কাছে এলো , তা দেখে আরু সানাকে বলল :
দেখ তোর ভাইয়া ওই মেয়েটা ডাকতেই চলে এল, কত লুচু ছেলে একটা ৷ আবার সকলের সামনে আমাকে অপমানও করল ৷

সানা : আরু এটা ভার্সিটি , আর ভাইয়া প্রফেশনাল কাজের মধ্যে কখনো পারিবারিক সম্পর্ক কে এন্টার করতে দেয় না, তাই ভার্সিটিতে এসে ভাইয়ের থেকে এরকম ব্যবহার পাবি সেটা ভুলে যা ৷

আরিশের কথা শুনে আরু প্রায় কাঁদো কাঁদো হয়ে গেল…..
চোখের জল টলটল করছে , এক পলক পড়লেই হয়তো গড়িয়ে পড়বে ৷
মনে মনে ভাবছে : উনি এখন আর আগের মতো আমাকে ভালোবাসে না….

হঠাৎ করে বেল পড়ে গেল লাঞ্চের জন্য , এখন ক্লাস শেষ তাই চাইলেও আর ক্লাস নিতে পারবে না ৷

আরিশ : এবার বুঝেছো?

তাহিরা: না sir বুঝতে পারিনি এখনো ৷

আরিশ : তাহলে তুমি লাঞ্চ কমপ্লিট করে এসো ৷

তাহিরা: ওকে স্যার….

আরিস ওর রুমের দরজার আড়ালে দাঁড়িয়ে রয়েছে , কখন ওখান দিয়ে আরু যাবে সেই অপেক্ষায় , বেশিই বকাবকা করে ফেলেছে ৷ লাঞ্চ টাইম বলে সমস্ত স্টুডেন্ট চারিপাশে ঘোরাঘুরি করছে…

সানা আর আরু দুজনে হেঁটে যাচ্ছে আর আরুর চোখে জল টলমল করছে ৷ সানা বুঝতে পারলেও কিছু বলার সাহস করে উঠতে পারছে না কারণ ও যদি এখনও কিছু বোঝাতে যায় আরু কিছু বুঝবে না উল্টা ওকেই আরো দু’চারটা কথা শুনিয়ে দেবে ৷

আরু জানেনা যে আরিশের নতুন রুম টা কোথায় তাই আরিশের রুম পার করে যখন যাচ্ছিল তখনই হাতে হালকা টান দিয়ে হ কেউ একজন ওকে ঘরের মধ্যে ঢুকিয়ে নিলো, এরকমই অনুভব করল আরু….

সানা দেখতে পেলে আরিশকে ৷ আরিশ ইশারায় ওকে ক্যান্টিনে যাওয়ার জন্য বললো,, আর ওরাও আসছে….

আরু আরিশকে দেখে বলল : আমার হাত ধরেছেন কেন, ছাড়ুন , আমার হাতে লাগছে , হাতটা ছাড়ানোর চেষ্টা করে ৷

আরিশ আরূকে ওর বুকে জড়িয়ে নিল…

আরিশ আরুকে বুকে জড়িয়ে নিতেই আরু কেঁদে ফেলল , ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে ৷

আরু : আপনি আমাকে সবার সামনে তখন অপমান করেছেন , আমার দোষটা কি বলবেন ? আমি জানি তো আপনার আর এখন আমাকে ভালো লাগেনা , আপনি সমস্ত কিছু এখন আমার থেকে এড়িয়ে যান, কোন দিন হয়তো বলবেন আরুপাখি তুমি আমার জীবন থেকে চলে যাও ৷(কাঁদতে কাঁদতে)

আরুকে বুক থেকে সরিয়ে নিয়ে ওর ঠোঁটজোড়া দখল করে নিল আরিশ ৷

বেশ কিছুক্ষণ পর আরুকে ছেড়ে দিয়ে বলল : আমাকে ছেড়ে যাওয়ার কথাটা কখনো মুখে আনবে না , তোমাকে ছাড়া একটা মুহূর্তও ভাবতে পারি না আমি , তুমি কি তা জানো না , আয আমি তোমাকে কতটা ভালোবাসি সেটাও জানো তারপরও কেন এসব মুখে আনো বলোতো ৷

আরুশি: তাহলে আপনি আমাকে ওইভাবে বললেন কেন সকলের সামনেই?

আরিস: কারণ তুমি খুব অমনোযোগী তাই , তুমি কি জানো তুমি যখন অন্য দিকে তাকিয়ে ছিলে তখন আমি আর sir আসতেই যখন সবাই যখন উঠে দাড়াল,তুমি অন্যদিকে তাকিয়ে ছিলে তাই সবাই তোমাকে নিয়ে হাসাহাসি করছিল….

আরোশী : আমাকে নিয়ে হাসাহাসি করার কি আছে? আমাকে দেখে কি হাসি পাই ?

আরিশ : তুমি তো আমার আরুপাখি, তোমাকে দেখে কেন হাসতে যাবে ৷
ওরা তো আমার দিকে তাকিয়ে ছিল😍৷

আরিশ : আমি তো ওদের ক্রাশ তাই না ! আরুর দিকে চোখ মেরে ৷

আরু রাগি চোখে আরিশের দিকে তাকালো,,,

আরু: খবরদার এসব কথা দুবার মুখে আনলে আমি আর আপনাকে আসত রাখব না ৷

আরিশ ভ্রু নাচিয়ে : কেন হিংসা হয় বুঝি ?

আরু আরিশকে ধাক্কা মেরে নিজেকে ছাড়িয়ে : তা হবে কেন , আমিও তো ভাবছি একটা নতুন করে প্রেম করব , কি ভাল হবে তাইনা….

আরিশ: তুমি করলে আমিও করতে পারি ৷

আরু আরিশের কলার ধরে : সে কথা ভুলেও ভাববেন না , বলে আরিশ কে জড়িয়ে ধরলো আর আরিশ ও পরম আবেশে আরিশকে জরিয়ে ধরল….

একটা কফিশপে বসে আছে আরিশ , আর তার সামনে বসে আছে আহান….

আহান: তুমি আরূকে সমস্ত সত্যি কথা বলেছো?

আরিস : আমি এখন ওকে সমস্তটা বলিনি তবে কালকে বলবো ৷

আহান চিন্তিত হয়ে : না জানি ওর মনের ওপর দিয়ে কতটা প্রেসার যাবে যখন সমস্ত টা জানাবে ৷

আরিশ: চিন্তা করবেন না ভাইয়া, আপনার বোনের সারা জীবনের দায়িত্ব যখন নিয়েছেন তখন ওর দুঃখটাকে নিজেও ভাগ করে নেব আর নিজের সমস্ত সুখ টাকে উজাড় করে দেব ৷ কালকে ওর সব আমি ওকে ফিরিয়ে দেবো আমি যা ওর প্রাপ্য ৷

আহান : আমার বাবা এতদিন ধরে এই দিনটির জন্যই অপেক্ষা করেছিলেন তবে আরুর এই কুড়িতম জন্মদিনের কথা বলতেন বারবর তবে তার পিছনে যে এতটা কুৎসিত একটা উদ্দেশ্য থাকতে পারে তা যদি আমরা আগে জানতাম তাহলে এতটা খারাপ পথে ওনাকে এগোতে দিতাম না ৷

আরিশ : ওনার জায়গায় উনি ঠিক ভাইয়া,আজকাল কে চাই বলুনতো একটা বাইরের মেয়েকে নিজেদের সমস্ত সম্পত্তি দিতে ৷

আহান: তুমিও একথা বলছ?

আরিশ মুচকি হেসে কফিতে চুমুক দিয়ে বলল : এটা ওনার পয়েন্ট অফ ভিউ থেকে আমি কথাটা বলছি , আর আমিও চাইনা যে আরূপাখি অন্য কারোর সম্পত্তি নিক ৷তার কোন প্রয়োজনই নেই, আমার যা আছে তাতে ওর চলে যাবে ভালোভাবেই , আর আশাকরি ভবিষ্যতে আমার সন্তানের কোন অসুবিধা হবে না….
আমি নতুন সব ধরনের ব্যবস্থা করেছি , আরুপাখি সই দিয়ে আপনাকে আপনার সমস্ত সম্পত্তি টা দিয়ে দেবে ৷

আহান : কিন্তু আমার ওই সম্পত্তি চায়না ৷

আরিস : কিন্তু ভাইয়া ওটা আপনার প্রাপ্য অধিকার, তাই না চাইলেও আপনাকে তা নিতে হবে , আমি চাইনা আমার আরুপাখি কোন খারাপ কাজের তকমা লাগিয়ে ঘুরুক, সেটা আপনি হয়তো না মানলেও আপনার বাবা সারা জীবন এটাই বিশ্বাস করবেন ৷ তাই উনি যা চাইছেন সেটাই পূরণ করবো আমি ৷

আহান চুপ করে আছে মাথা নিচু করে , ওর বাবার করা কাজকর্মের কারনে ও খুবই লজ্জিত , এখন আরিশকে ভরার মতো আর মুখ নেই ৷

আরিশ : ভাইয়া কালকে আপনি আর মামনি কালকে আসবেন আমাদের বাড়িতে আরূর জন্মদিন উপলক্ষ্যে , যতই হোক আপনারা ওর নিজের মানুষ ৷

আহান: নিজের মানুষ আর হতে পারলাম কই, নিজের মানুষ হলে ওকে খারাপ মানুষদের থেকে রক্ষা করতে পারতাম ৷

আরিস : আপনারা দুজনেই হলেন এমন একজন যারা ওকে এতদিন ভালোবেসে এসেছেন, ওকে ভালোবেসে বড় করে তুলেছেন, তাই নিজেদেরকে একটা মানুষের খারাপ কাজের কারণে ছোট ভাববেন না ||

আহান আরিশের হাতে নিজের হাতটা রেখে বলল : আমার বোনকে তুমি ভালো রেখো , ছোটবেলা থেকে কখনো খারাপ মানুষের ছায়া লাগতে দেই নি আমি , ওর সাথে কথা না বলে আমি নিজেও কষ্ট পাই ৷

আরিস : ভাইয়া আপনি কোন চিন্তা করবেন না আরূপাখিকে নিয়ে , আর কালকে একটু তাড়াতাড়ি আসবেন ,ও নাহলে মন খারাপ করবে ৷

সন্ধ্যাবেলায় আরুশিকে নিয়ে আরিশ ওদের ফার্ম হাউসে চলে এসেছে ৷ আরুশিকে একান্তে জন্মদিনের শুভেচ্ছাটা ভালোবেসে জানাতে চায় , আর তার সঙ্গে নিজের সমস্ত ভালোবাসার প্রকাশ করতে চাই ৷

সুইমিং পুলের পানিতে পা ডুবিয়ে বসে আছে দুজনে , আরিশের কাধে মাথা রেখে যেন অদ্ভুত এক শান্তি পাচ্ছে আরু…..

আরু: হঠাৎ আমাকে এখানে নিয়ে আসলেন আপনি?

আরিশ: ইচ্ছা হল তোমার সাথে একান্ত সময় কাটানোর সেই কারণে ৷

আরিশ : আমি ভাবছি আবার একবার বিয়ে করবো ৷

আরিসের কথা শুনে আরূর বুকের ভিতর ধক করে উঠল , তার মানে কি সত্তিই ওকে ছেড়ে দেবে?

পরমূহূর্তেই আরু সরে এলো আরিশের থেকে ৷

আরিশ আরুর দিকে তাকিয়ে বলল : আরে পাগলি আমাদের আবার বিয়ের কথা বলছি ৷ তোমার সাথে ভাবছি আবার বিয়ে করবো, বলে আরুকে আবার নিজের সাথে জড়িয়ে ধরল ৷

আরু যেন এবার প্রাণ ফিরে পেল , আরিশের বুকে মাথা রেখে চোখটা বন্ধ করে নিল ৷আর হাত দিয়ে আরিশের শার্ট খামচে ধরে বললো : কখনো আমাকে ছেড়ে যাবেন না তাহলে সেদিনই আমি ….

আরিশ আর আরূকে বেশি কিছু বলতে দিল না, আরুশি ঠোঁট দুটোকে আকড়ে ধরল পরম আবেশে….

চলবে,,,,,,,

#তোমার_নেশায়_আসক্ত
#part:35
#Suraiya_Aayat

একটা কালো কাপড় দিয়ে আরুর চোখটা বেঁধে আরিশ আরুর কে সামনের দিকে আস্তে আস্তে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে আর আরুর যেহেতু চোখটা বাধা তাই আরিশ ওকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছে , আর এরপরই বা কি হতে চলেছে সেগুলো ওর ধারণার বাইরে, ওর যে আজ জন্মদিন সেটা ওর মনে নেই যদি মনে থাকত তাহলে বুঝতে পারতে যে আরিশ ওকে সারপ্রাইজ দেওয়ার জন্যই এমনটা করছে, কিন্তু বরাবরের মতই আরু তো একটা বলদ 😒 ৷

আরূ চোখে হাত দিতেই আরিশ বলে উঠলো : একদম নয় আরুপাখি, আমি যখন তোমাকে চোখ খুলতে বলবো তখনই তুমি চোখ খুলবে তার আগে নই….

আরু : আপনি আমাকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন বলবেন তো, না হলে আমি বুঝবো কি করে !

” তোমাকে যদি এখন বলি তাহলে এভাবে আনার মানে কি? আর এত কথা বলার কি আছে , একটু চুপ করো,আর একটু পরেই তো সবকিছু দেখতে পাবে ৷”

আরূ বুঝতে পারল যে আরিশ নাছোড়বান্দা , ওকে কোনমতেই বলবে না তাই ও শান্তশিষ্ট মেয়ের মতো চুপ হয়ে গেল ৷

আরিশ ঘড়ির দিকে তাকিয়ে আছে আর ক্রমাগত কাউন্টডাউন করছে,,,3…..2……1…..

তারপরে আরুর চোখটা খুলে দিতেই হঠাৎ করে কানে তীব্র একটা আওয়াজ ভেসে এলো….
শব্দটার উৎস খুঁজতে গিয়ে আকাশের দিকে তাকাতেই দেখলো বড় বড় অক্ষরের বাজির আলোতৈ লেখা আছে❤” হ্যাপি বার্থডে আরুপাখি”❤,আর তার সঙ্গে অজস্র সাদা আর লাল রঙের বেলুন আকাশে উড়ে যাচ্ছে ৷
অসম্ভব সুন্দর একটা দৃশ্য , এমনটা আরু এর আগে কখনো দেখেনি….

আরিস আরুর কাঁধে চুমু দিয়ে বলল :
হ্যাপি বার্থডে আরুপাখি , আমার ছোট্ট আরুপাখি আজ 20 বছরে পা রাখলো ৷

আরিসের থেকে এরকম একটা সারপ্রাইজ পেয়ে আরুর চোখে জল চলে এলো , কখনো এসব কল্পনাও করেনি , তারপরে আরু আরিশের দিকে ঘুরে তাকালো…

আরু ভাঙ্গা ভাঙ্গা কন্ঠে বলল : আপনি আমার জন্য এতটা,,,,,

এরপর আর কিছু বলতে পারল না আরিশ আরুর ঠোঁটে আঙুল দিয়ে আলতো করে স্পর্শ করে বলল:
একদম এমন কথা বলবে না আরুপাখি , তোমার জন্য করবো না তো কার জন্য করবো ? আমার কি আর দশটা পাঁচটা বউ আছে যে তাদের জন্য আমি করবো, তুমিই তো আমার সব বলে আরুকে জড়িয়ে ধরল…

আরিশ আরুশিকে জড়িয়ে ধরতেই আরু ফুপিয়ে ফুপিয়ে কেঁদে উঠলো…

আরিশ আরুকে নিজের সাথে আরও জোরে চেপে ধরল : একদম কাঁদবে না আরুপাখি, তোমার চোখের জল আমার সহ্য হয় না….

আরিশ এর কাছ থেকে ও ওর জীবনে নতুন করে বাঁচতে শেখার অনুপ্রেরণা পেয়েছে, জীবন টাকে কিভাবে সঠিক পথে আর আনন্দ করে সবার সাথে কাটাতে হয় সেটা ও আরিশকে ভালোবেসে বুঝেছে ৷

আরু এখনো কেদেই চলেছে আরিশের বুকে,,,

আরিশ এবার আরুর মাথায় হাত বুলিয়ে বলতে লাগলো : আরুপাখি দেখো এখন 12:05,অলরেডি 5 মিনিট তুমি এভাবেই কেদে কেদে কাটিয়ে ফেলেছ, এবার কেকটাও তো কাটতে হবে নাকি, তারপর তোমাকে আবার অনেক অনেক আদরও করতে হবে তাই আর দেরী করা ঠিক হবে না….

আরিসের কথা শুনে আরু লজ্জা পেয়ে গেল, তারপর আরিশকে নিজের থেকে ছাড়িয়ে বলল : আপনি কেন সবসময় এভাবে আমাকে এমন কিছু বলে লজ্জা দেন বলুন তো….

আরিশ চোখ মেরে বললো : শুধুই কি বলি,কিছু কি ,,,,,,

আরু আরিশের মুখ চেপে ধরলো হাত দিয়ে ৷

“আপনাকে বলতে হবে না আমি বুঝে গেছি৷”

আরিশ আরুর কথা শুনে হাসতে লাগল তারপর আরুর হাত ধরে সামনের টেবিলটার দিকে এগিয়ে গেল যেখানে কেক রাখা রয়েছে…..

টেবিলের কাছে যেতেই হঠাৎ করে আরিশ আরুর সামনে একটা কাগজ ধরিয়ে দিল ৷
হঠাৎ এমন একটা সময়ে এই কাগজটার কি তাৎপর্য সেটা বুঝতে না পারে আরু আরিসকে জিজ্ঞাসা করল: এটা কিসের কাগজ?

আরিশ আরুর হাতে পেনটা ধরিয়ে দিতে দিতে বলল: এখানে একটা সই করে দাও ছোট্ট করে ৷

আরু: আমার সই কেন লাগবে?

আরিশ আরুর চোখের দিকে গভীর ভাবে তাকিয়ে বলল : বিশ্বাস করো তো আমাকে?

” নিজের থেকেও বেশি”, বলে কাগজটায় কি লেখা আছে তা না পড়ে আরু সিগনেচার করে দিল৷

আরিশ আরুর কপালে একটা চুমু দিয়ে মনে মনে ভাবতে লাগল: আমি চাই না কখনো কারো খারাপ আঁচ তোমার গায়ে লাগুক তাই সকল খারাপের থেকে সারা জীবন এভাবেই আগলে রাখব তোমায় , কোনো খারাপ কাজের তকমা তোমাকে পেতে দেব না ৷

“আপনি কি এত ভাবছেন ?’

আরুর কথাই আরিশের ধ্যান ভাঙ্গলো , তারপরে আরিশ বলল : তেমন কিছু না আরুপাখি,এটাই ভাবছিলাম যে তোমার বয়স এখন 20 তাহলে আমাদের বেবিও তার আম্মুর থেকে প্রায় কুড়ি,তারমানে আমাদের বেবি তোমার থেকে20 বছরের ছোট হবে,আমার থেকে আরো 26 বছরের ছোট হবে,তুমি আমার থেকে 6 আর আমি তোমার থেকে 6 এর ছোটবড়ো মানে অলসেট ৷ বলেই আরিশ হাসতে লাগলো ৷ আসলে ও আরূকে কনফিউজড করার জন্য এমনটা বলল ৷

আরিশ কি বলল তা আরুর মাথার উপর দিয়ে গেল, কথায় কোনো লজিক নেই , আউলাঝাউলা কথাসব৷
আরিশ কি বললো আরু আর কানে নিল না কারণ সত্যিই কথাটাই কোনো লজিক নেই , যে তা থেকে বুঝে কোন মানে বার করবে আরু ৷

” আচ্ছা আর বেশি দেরি না করে ম্যাডাম আপনি এবার কেকটা কেটে ফেলুন ৷”

“আপনিও আমার হাতে ধরবেন, “আরিশ আরুর কথা রাখতে ছুরিটা আরূর সাথে ওউ ধরলো ৷

কেকটার দিকে আরুশি এতক্ষণ নজর দেয়নি , কিন্তু যখন সেদিকে তাকালো অবাক হয়ে গেল খুব কারণ কেকটার ওপরে আরুর একটা ছবি রয়েছে যেখানে আরু পাউট করে একটা পোজ দিয়েছে সে রকমই৷ ছবিটা আরুর খুব পছন্দের, ছবিকাকে আরো কিউট লাগছে কেকটার ওপরে দেখতে ৷

এরপর দুজন মিলে কেক কাটলো….

দুজন দুজনকে খাইয়ে দিয়ে আরিশ আরুশির কোমর ধরে নিজের কাছে নিয়ে এলো ৷

” আমি জানিনা তুমি কি মনে করবে, তবে আমি আজ তোমার জন্য কোন গিফট নিয়ে নি আরুপাখি ৷”

আরু আরিশের গালে স্পর্শ করে বলল :
আমার আবার কিসের গিফটের দরকার , যেখানে আপনি নিজেই আল্লাহর দেওয়া আমার সর্ব শ্রেষ্ঠ উপহার , আপনাকে পেয়েই আমি খুশি আর কিছু চাইনা আমার ৷

আরিশ মুচকি হাসলো , তারপর আরুর হাত ধরে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে গেল…..

পিছন থেকে একটা মিউজিক বাজতে লাগলো ৷

“একদিন আকেলে থে হাম তুম….

তুম মূঝমে মে ,মে তুমমে তুম ,

একদিন আকেলে থে হাম তুম,

তুম মুঝমে,মে তুমমে তুম,

মেরে কানোমে আহিসতা সে,

উস রোজ কাহাথা যো তুমনে,

কিসি ওর সে না বো কেহনা,,,,,

তুম মেরে হো,মেরে রেহনা,

তুম মেরে হো মেরে রেহনা,

তুম সাথ মেরা হার দাম দেনা

তুম মেরে হো,মেরে রেহনা….”

গানের সাথে সমান তালে নাচছে দুজন , আর দুজন দুজনের মাঝে যেন হারিয়ে গেছে…
গান থামতেই আরূ নিজেই আরিশের ঠোঁট দুটো আঁকড়ে ধরল, এই দ্বিতীয়বারের মতো আরূ নিজে থেকে আরিশকে ভালোবাসছে, আর আরিশ কোনোভাবেই তা ফিরিয়ে দিতে চায় না…..

” মামনি আর কত খাওয়াবে বলো তো , সেই থেকে খাইয়েই যাচ্ছ আমাকে , এবার তো আমি পুরো ফুটবল হয়ে যাব, প্লিজ মা মণি আর না ৷”

” নিজের দিকে একবার তাকিয়ে দেখেছিস, কি অবস্থা চেহারাটার,আর এর উপরে আবার একটা নাতি-নাতনি আসলেই উল্টে যাবি তখন কি হবে বলতো, তোকে সামলাবো নাকি তাকে সামলাবো কোনটা?”

কথা গুলো শুনতেই আরু চুপ হয়ে গেল ৷ এই একটা জিনিস নিয়ে কোন কথা হলেও আরু আর কোন কথা বলে উঠতে পারে না , খুব লজ্জা পায় ও ৷

আরু চুপ হয়ে গিয়েছে, অনিকা খান ওকে খাওয়াচ্ছেন আর ও মুখ বুজে সব খেয়ে নিচ্ছে না হলে আবার লজ্জায় পড়বে ওনার কথা শুনে ৷

আরুকে চুপ থাকতে দেখে অনিকা খান মুচকি মুচকি হাসছেন সানার দিকে তাকিয়ে হাসছে ৷

” তা এই যে আপনার জন্মদিন , তার ট্রিট কোথায়?”

আরু সানার দিকে অবাক চোখে তাকালো ,,,,,

” কিসের ট্রিট ? কবেকার ট্রিট?জন্মদিন তার জন্য আবার ট্রিট দিতে হয় ! কোথায় তুই আমার একটু কেয়া করবি, তা না !”

“সত্যিই তো , তোর খেয়াল রাখা উচিত ওর, আমার কেন জানি না মনে হচ্ছে খুব তাড়াতাড়ি একটা সুখবর আসতে চলেছে আমাদের পরিবারে ৷”

আরু কথাটা শুনেই মাথা নিচু করে মুচকি মুচকি হাসতে লাগল, সত্তিই ওদের পরিবারের একজন সদস্য বাড়তে চলেছে তবে তা খুব শীঘ্রই, কিন্তু আপাতত এ ব্যাপারে সম্পূর্ণ সঠিক নই আরু নিজেও…

অনেকক্ষণ ধরে আরিশ ওই বৃদ্ধ দম্পতিকে মানাচ্ছে যাতে তারা আজকে আরুর জন্মদিনে যায়….

” আজ আরু যদি আজ আপনার নিজের মেয়ে হতো তাহলে কি আপনি যেতেন না ?”

কথাটা শুনে রেজওয়ানা আহমেদ কেঁদে ফেললেন , করে কারণ আজকের দিনেও যে তার মেয়ের জন্মদিন ছিল ৷ এরকমই একটা দিনেই তিনি তার মেয়েকে হারিয়েছিলেন সে কথাটা বারবার চোখে ভাসছে ৷ চোখে জমে থাকা জল নিয়ে ঝাপসা চোখে দূরে ফ্রেমে বাঁধানো বাচ্চাটার ছবির দিকে তাকিয়ে বলে উঠলেন : দেখো বাবা তোমাকে আমি কি করে বোঝাই যে আজ নয় অন্য দিন যাবো আমরা ৷

” তা আমি জানিনা তবে আপনারা না গেলে আরূপাখি খুবই কষ্ট পাবে ৷”

আজিজ আহমেদ রেজওয়ানা আহমেদের কাঁধে হাত রেখে বললেন: ছেলেটা তো ঠিকই বলছে, আজ নিজের সন্তানের কাছে নেই বলে অপরের সন্তানের খুশিতে শামিল হবো না সেটা কি করে হতে দেই বল , যতই হোক সেও একটা সন্তান ৷”

রেজোয়ান আহমেদ চোখটা মুছে আরিশের দিকে তাকিয়ে বললেন : আচ্ছা বাবা আমরা যাব ৷

” শুধু আপনারা দুজন গেলে হবে না , আপনাদের গোটা ফ্যামিলিকে যেতে হবে তার সাথে আয়ুশিকেও৷”

বলে আরিস আয়ূশির কাছে গিয়ে ওকে কোলে তুলে নিল , আর পকেট থেকে চকলেটটা বার করে আয়ূশির হাতে দিল ৷

চকলেটটা আয়ূশির হাতে দিতেই খুব খুশি হলো ও, আর আরিশের গালে চুমু খেলো…..

রেজওয়ানা আহমেদ (মনে মনে):মেয়েটা বড়োই ভাগ্যবতী যে এমন একজন স্বামী পেয়েছে ৷ আল্লাহ সবসময় ওদেরকে ভালো রাখুক ৷ আমিন ৷

রাত আটটা,,,,,,

চলবে,,,,,

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে