#তোমার_নেশায়_আসক্ত❤
#part:26❤
#Suraiya_Aayat❤
❤
সকালবেলা ঘুম ভাঙতেই আরিশ আরুর জায়গাটা হাতেরে দেখল কেউ নেই অর্থাৎ আরু উঠে পড়েছে অনেকক্ষণ আগেই ৷
আসলে কালকে রাতের ঘটনায় আরু খুব লজ্জা পেয়েছে সেই কারণে তাড়াতাড়ি উঠে পড়েছে , আরিশ এর মুখোমুখি হবে কি করে ও ! লজ্জায় ওর দিকে হয়তো তাকাতেই পারবেনা ৷
আরিশ জানে আরুশির ওকে ঘুম থেকে না ডেকে দেওয়ার কারণ ৷ অন্য দিন আরু ঘুম থেকে ওঠার সাথে সাথেই ওকে ডেকে দেয় কিন্তু আজকে ডাকেনি লজ্জায় ৷
ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখতেই বুঝতে পারল যে অনেকটাই লেট হয়ে গেছে ওর উঠতে , আসলে আগের দিন আরুকে নিয়ে চিন্তা করতে করতে সময়টা যে কিভাবে কেটে গেছে সেটা ওর ধরাছোঁয়ার বাইরে….
ঘুমের ভাবটা কাটতেই বিছানা ছেড়ে উঠতেই দেখতে পেল বিছানার উপরে ওর অফিসে যাওয়ার জন্য শার্ট আর সমস্ত যাবতীয় কিছু রেডি করে রাখা আছে৷ আরু এই সমস্ত কাজগুলো যে তার নিজের প্ল্যানমাফিক করেছে সেটাও বুঝতে হয়তো আর অসুবিধা হলো না আরিশের ৷ বিছানার পাশে থাকা টেবিলের দিকে তাকাতেই দেখলো কফি রয়েছে , তা থেকে ধোঁয়া উড়ছে অর্থাৎ কফিটা যে কিছুক্ষণ আগেই দিয়ে গেছে তা আন্দাজ করতে পেরেছে বেশ ৷
কফির কাপটা তুলতেই তার নিচে থেকে একটা চিরকুট পেল আরিশ আর তাতে লেখা আছে ,,,,,,
“__আপনার সমস্ত কিছু রেডি করে দিয়েছি, কফিটা তাড়াতাড়ি খেয়ে নিন নয়তো ঠান্ডা হয়ে যাবে ৷”
লেখাটা যে অনেকটা চটজলদিতেই লিখেছে আরুশি সেটা ওর আঁকাবাঁকা হাতের লেখা দেখেই বোঝা যাচ্ছে ৷
আরিশ মুচকি হাসি দিয়ে কফিতে চুমুক দিল তবে আজকে কফি র টেস্ট টা একটু অন্যরকম, অন্যদিনের থেকে সামান্য কিছুটা আলাদা ৷ অন্যদিন কফি বানিয়ে দেয় ওর মা , তবে আজকেরটায় একটু একটা ভিন্ন ধরনের স্বাদ আছে তাতে বুঝতে পারল যে আরু কফিটা বানিয়েছে ৷ মুচকি একটা হাসি দিয়ে কফিটা শেষ করে শার্ট আর প্যান্ট এর দিকে তাকালো আরিশ ৷ আরুশি বেছে বেছে আরিশ এর জন্য একটা অ্যাস কালারের শার্ট আর ব্লু কালারের প্যান্ট রেখেছে৷ ব্লেজার রাখেনি কারণ আরূ সবসময় বলে যে ওকে নাকি শুধু শার্ট এই বেশি ভালো লাগে তাই হয়তো ব্লেজার রাখেনি ৷ কোন পারফিউম টা দেবে সেটাও রেখে দিয়ে গেছে আরূশি ৷
জামা কাপড়ের দিকে তাকিয়ে আরিশ বলতে লাগলো ,,,,,,
“___তোমার পছন্দের সমস্ত জিনিস আমি পরবো তবে আজকে নয় , আজকে তোমার কথাটা যেন রাখতে পারছিনা আমি কারণ তোমার শাস্তির মেয়াদ এখনো শেষ হয়নি, যতদিন না সব ঠিকঠাক হচ্ছে ততদিন তোমার বিরুদ্ধে যেতেই হবে আমাকে , জানি তুমি কষ্ট পাবে তবে পরে আমি ভালোবাসা দিয়ে তা সুদে আসলে উসুল করে দেব সব ৷
ওয়াশ রুমে ঢুকেই শাওয়ারটা অন করতেই সমস্ত শরীরটা ভিজে গেল আরিশ এর , ভেজা চুলগুলো চোখের ওপর এসে আছড়ে পড়ায় সামনের দেওয়ালে আটকে রাখা চিরকুটটাতে কি লেখা আছে সেটা বুঝতে পারছে না ও ৷ আছড়ে পড়া চুলগুলোকে হাত দিয়ে মাথার পিছন দিকে ঠেলে চিরকুট টাতে কি লেখা আছে বোঝার চেষ্টা করলো আরিশ ৷
“___আচ্ছা কফি খাবার সময় অন্য একটা স্বাদ পেয়েছিলেন আজকে ? জানি পেয়েছিলেন ! আর এটাও জানেন যে আজকে কফিটা আমি বানিয়েছি, আর কফির প্রথম চুমুকটাও আমিই দিয়েছি , তারপর আপনি দিনশেষে ভালোবাসার পরশটাও আমিই দেবো ৷ আমি চাই আমার ভালোবাসার স্বাদ গ্রহন করে আপনার দিনের শুরু এবং সমাপ্তি দুটোই ঘটুক৷ তাই যতদিন বেঁচে আছি ভালোবেসে যাবো ৷ অজস্র ভালবাসা প্রিয় ৷___”
আরুশির লেখা শব্দ গুলো পড়ে কিছুক্ষণের জন্য আরিশের হৃদস্পন্দন গুলো যেন বেড়ে গিয়েছিল, কারণ কথাগুলো এতই আবেগী যে আরিশের হৃদয়কে স্পর্শ করে গেছে ৷ মনে মনে মহান আল্লাহকে অনেক ধন্যবাদ জানাচ্ছে আরিশ , যে এত কিছু উপভোগ করতে দেওয়ার জন্য ৷ আজ যদি আরু এই পরিস্থিতির সম্মুখীন না হতো তাহলে হয়তো নিজের ভালবাসার প্রকাশ ঠিকঠাক করতে পারত না আর আরিশের ও হয়ত পাওয়া হতোনা আরুশির এমন আবেগ মাখা ভালোবাসা ৷
রুমের ভিতরে ঢুকতেই চোখ পড়ল আরুশির পছন্দ করে রাখা শার্ট এর উপরে ৷মনটা বারবার টানছে শার্ট টা পরার কিন্তু এখন তা সম্ভব নয় , তাই অনেক উপেক্ষা করার চেষ্টা করে অবশেষে সফল হয়ে ওয়ারড্রব থেকে একটা সাদা রঙের শার্ট বার করে আনল আরিশ ৷ আর একটা কালো রঙের ব্লেজার ও পরেছে ৷
আজকে ব্রেকফাস্ট বানাচ্ছে আরুশি , অনিকা খানের আজকের দিনের মত আপাতত ছুটি ৷ সারা বছর তো উনিই কাজ করেন, আরুশিকে কিছু করতে দেন না তাই অনেকটা জোর করেই ওনাকে বসিয়ে রেখেছে আরু ৷
সুজির হালুয়া, পরোটা , ডিম ভাজা , জুস , আলু ভাজা আর পায়েস বানিয়েছে আরুশি ৷ মাঝে মাঝে ওই বাড়িতে থাকতে ওর মায়ের থেকে এগুলো শিখে নিয়েছিল তাই বানাতে খুব একটা অসুবিধা এবং কারোর সাহায্যের প্রয়োজন হয়নি….
আরুশিকে দেখে খুব খুশি খুশি লাগছে তা দূর থেকে অনিকা খান এবং সানা দুজনেই দেখতে পাচ্ছেন আর আরুশিকে ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করছেন ৷
অনিকা খান সানার কানে কানে বললেন : মেয়েটাকে বেশ খুশী দেখাচ্ছে আজকে ৷ আল্লাহ যেন সারাজীবন ওকে এভাবেই খুশি রাখে , কখনো যেন ওর মুখ থেকে হাসিনা কেড়ে না নেয় , তবে কি এই খুশির কারণ সেটাইতো বুঝতে পারছিনা ৷ আরিশের সাথে সব ঝামেলার কি সমাপ্তি হয়েছে? তোকে কি কিছু বলেছে এ ব্যাপারে ?
সানা উদাস চোখে আরুর দিকে তাকিয়ে বলল: আমাকে কিছু বলেনি , তবে ওকে খুশি দেখে রাইসা আপু যে লুচির মতো ফুলে যাবে সেটা ভালভাবেই বুঝতে পারছি ৷ (বলে দুজনেই মুচকি মুচকি হাসতে লাগল ৷)
ওরা দুজন এভাবে হাসাহাসি করছিল তখনই অনিকা খানের বোন রেনু খান এলেন ৷
রেনু খান বলতে বলতে আসছিলেন : আজকে সকালে ব্রেকফাস্ট কি পাবো নাকি পাবো না ! সেই কখন থেকে ওয়েট করছি ৷ আজকে মনে হয় এই মেয়ে খেতে দেবে না, সবাইকে না খাইয়েই ছাড়বে ৷
কিচেন থেকেই কথাগুলো আরুশী শুনতে পাচ্ছিল কিন্তু আপাতত এই কথাগুলো কানে নেওয়ার মুডে নেই খুব ভালো মুডে আছে এখন ,তাই উনার কথা শুনে সকাল সকাল নিজের মুডটাকে আর খারাপ করতে চায় না আরু , আর তার উপর যদি এখন উনার মেয়ে এসে টেপ রেকর্ডারের মতো চালু হয় তাহলে তো আর কোন কথাই নেই ৷
আনিকা খান রেনু খানকে নিজের পাশে বসিয়ে : আরে আপু আরেকটু বসো না , আরু মামনির প্রায় হয়ে গেছে , আর তাছাড়া আরিশ আসুক তারপর…
আরুশির ইতিমধ্যে সব রান্না কমপ্লিট, এক এক করে সব খাবার টেবিলে সাজিয়ে আবার রান্নাঘরে চলে গেল , হঠাৎই তখনই আরিশ এল , আরিশ দেখতে পেলে যে আরূ কিচেনে রয়েছে , কফিটা খাওয়ার সময়ই আন্দাজ করতে পেরেছিল যে সকালে ব্রেকফাস্টটা আরুই বানাবে ৷
আরিশ আসতেই ঝটপট করে আরোশী রান্নাঘর থেকে পায়েশ নিয়ে এল….
সবাই খেতে বসেছে তবে অনিকা খান বসেনি দেখে ওনাকে জোর করে বসাল আরূ ৷
এতক্ষণেও আরূ আরিশের দিকে লক্ষ্য করেনি , হঠাৎ আরিশকে খাবার দিতে গিয়ে বুঝতে পারল আরিসের সাজগোজের পার্থক্যটা ৷ ও যা যা পছন্দ করে দিয়েছিল আরিশ তার কোন কিছুই পরেনি , এমনকি ঘড়িটাও নয়, পারফিউমটা অব্দি আলাদা ৷
কালকের পর আরিশ এর থেকে অমন ব্যবহারের পাওয়ার পর আরূশি ভেবেছিল আরিশ হয়তো ওকে ক্ষমা করে দিয়েছে কিন্তু আরিশ যে এখনও ওর উপরে রাগ করে আছে এগুলোই হল তার প্রমান ৷
আরুশি সবকিছুই লক্ষ্য করলো কিন্তু কিছু বললো না চুপচাপ সবকিছু সহ্য করে নিল ৷ মনের ভিতর কষ্ট যে হচ্ছে না তা নয় , কষ্ট হচ্ছে কিন্তু তা এখন সকলের সামনে প্রকাশ করতে চাইছেনা ৷
আরিশ : সবাইকে দেখছি রাইসাকে দেখছি নাতো, রাইসা কোথায়?
সানা: রাইসা আপুতো এখনো ঘুম থেকেই উঠিনি ৷(মুখ চেপে হাসে ৷)
আরিশ : ওহহ ৷ (আরিশ অবাক যে হয়নি তা নয় বরং বেশ ভালোই অবাক হয়েছে ৷ )
আরিশের চোখ মুখের অবস্থা দেখে ব্যাপারটা সামাল দেওয়ার জন্য রেনু খান বললেন ,,,,,
রেনু খান : আসলে কালকে তোর বউ যা করলো তারপর থেকে ওর শরীরটা খুবই খারাপ খারাপ লাগছে ৷ আর মেয়েটা প্রচন্ড কান্নাকাটি করেছে, না জানি তোর বউ আবার কখন কোন ক্ষতি করে দেয়৷ শরীরটা ভালো নেই বলেই হয়তো উঠতে পারেনি তাড়াতাড়ি ৷ও তো সবসময় 6.30 টাই ওঠে ৷( মিথ্যা কথা😒)
আফজাল সাহেব : আমি যতদূর শুনলাম রাইসা কেবলমাত্র একবার চুমুক দিয়েছে কিন্তু আরুশি যে পুরো কফিটা খেল কিন্তু এখন আরূ মামনিকে বেশ ঠিক দেখাচ্ছে তাহলে !
আরু চুপচাপ মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে , আরিসের থেকে সকাল সকাল এরকম একটা ব্যবহার পেয়ে কোন ভাবেই খুশি নয় ও , ভালো মুডটা যেন খারাপ হয়ে গেল তাই এখন কে ওকে কে কি অপমান করল আর কে ওকে সান্তনা দিলো তার কোন কিছুতেই যায় আসে না ওর ৷
কথাটা শোনামাত্রই আরিশ আরুর দিকে তাকাল ,,,,
আরিশ : মেয়েটার মুখটা কেমন চুপসে গেছে, কিছুক্ষণ আগে বড্ড বেশি প্রাণোচ্ছল দেখাচ্ছিলো ৷ ওর ব্যতিক্রমী কিছু কাজ যে ওকে এতটা দুঃখ দেবে তা আগে জানলে কখনোই এ ধরনের কাজ করার সাহস পেত না আরিশ ৷ আরুশিকে দেখে খুব কষ্ট হচ্ছে ওর , ভাবছে সামান্য জামাকাপড়ের ব্যাপার ছিল পরে নিলেই পারত ৷
কিন্তু এখন আফসোস করা ছাড়া আর কিছুই করার নেই ৷
অফিসে এসে বসে আছে আরিশ ,এতদিনের একগাদা কাজ পড়ে আছে, কোন কাজে মন বসছে না ৷ সকালবেলা আরুশির ওই রকম মনখারাপ দেখে আরিশের মনটা যেন কেমন আনচান আনচান করছে৷
ল্যাপটপের দিকে গভীর ভাবে তাকিয়ে আছে আরিশ, আর তাতে নিজের ঘরে সিসিটিভি ফুটেজটাই ফুঁটে উঠছে স্ক্রিনে , আরুশিকেই দেখছে laptop এ ৷
অনেকখন ধরেই উদাস হয়ে বসে আছে মনমরা হয়ে ৷
আরিশের ইচ্ছা করছে এখনি ছুটে যেতে আরুর কাছে, মেয়েটাকে আজানাই বড্ড কষ্ট দিয়ে ফেলে ও ৷
❤
আরু চুপচাপ হাত পা গুটিয়ে বসে আছে তখনই সানা রুমের মাঝে প্রবেশ করল ৷
সানা:আমম্মু ডাকছে তোকে ৷ আর সকাল থেকে দেখছি তোর মন খারাপ ৷ কি হয়েছে তোর ?
আরুশি মুখে সামান্য হাসির রেখা টেনে : হমমম যাচ্ছি , কিন্তু কেন?
সানা: আগে এটা বল যে তোর মন খরাপ কেন?
আরু: আরে কিছু না , তুই বল ৷
সানা : আরে ভাইয়ার খাবার দিতে তোকে অফিসে তোকে যেতে বলেছিল ৷
আরু:আমি যাব না , রহিম চাচাকে বল দিয়ে আসতে ৷
সানা: না তুই ই যাবি, নাহলে আম্মু খুব রাগ করবে ৷
আরু: আচ্ছা আমি যাচ্ছি ৷ আরু এতক্ষন এটার জন্যই অপেক্ষা করছিল ,সানার কাছ থেকে কথাটা শুনতেই খুশি আর ধরলো না ,তাই ঝটপট রাজি হয়ে গেল ৷
আরু রান্না করেছে সব আরিশের. জন্য,আর তারপর রুমে এসে মনমরা হয়ে বসেছিল এতক্ষন ৷
যাওয়ার কথা শুনেই একপ্রকার উৎফুল্লতা কাজ করলো আরুর মাঝে ৷
তাড়াতাড়ি করে একটা black colour এর শাড়ি নিয়ে ওয়াশ রুমে চলে গেল আরু ৷
এতক্ষণে আরিশের মনটা খুব খারাপ ছিল কিন্তু হঠাৎ আরু আসবে জেনে মনটা ওর খুশিতে ভরে গেল আর এত কষ্টের মধ্যেও একপ্রকার শান্তি পেল আরুর মুখে হাসি দেখে , যা দেখে ও সারা জীবন কাটিয়ে দিতে পারে ৷
আরিশ অপেক্ষা করছে আরুর আসার জন্য৷
চলবে,,,,,,,
#তোমার_নেশায়_আসক্ত
#part:27
#Suraiya_Ayat
একটা ব্ল্যাক কালারের শাড়ি পরেছে আর সাজগোজ বলতেও খুবই নরমাল , বেশি সাজুগুজু খুব একটা পছন্দ হয় না ওর, নিজেকে যেন জোকার জোকার ভাবে বেশি সাজগোজ করলে ৷
আরিশ বলে যে ওকে নাকি অতিসাধারণ এই খুব ভালো লাগে ৷
নিজের ভালবাসার মানুষটার চোখে যখন সাদামাটা হিসেবেও বেশ আছে তখন লোকের সামনে নিজেকে প্রকাশ করার জন্য বাহ্যিকভাবে আলাদা কোনো সাজগোজের প্রয়োজন হয় বলে আরু সেটা মনে করে না ৷
হাতে কালো রঙের কাঁচের চুড়ি পড়েছে আর গলায় একটা সিম্পল চেন দেওয়া লকেট আর চুলগুলো ছেড়ে দিয়েছে , খুব সুন্দর লাগছে ওকে দেখতে….
আরুশী আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে আছে আর বলছে :
নিজেই নিজের উপর ক্রাশ খেয়ে যাই না জানি আমার জামাই দেখলে তো পাগলই হয়ে যাবে ৷
কথাটা বলেই হাসতে লাগলো আরু ৷
আরিশ এদিকে সিসিটিভি ফুটেজ চেক করছে আর হেসে গড়াগড়ি খাচ্ছে আরুর কথা শুনে ৷ মেয়েটা সত্যিই খুব বাচ্চা , তা ওর হাবভাবেই ভাবে বোঝা যায় ৷
হঠাৎ করে সানার ডাক কানে এলো , ,,,,
সানা: আরু তুই রেডি, আম্মু সব গুছিয়ে দিয়েছে তাড়াতাড়ি আয় নিচে ৷
আরূ : হ্যাঁ আমি আসছি ৷
তাড়াতাড়ি করে নিজের ওপর আর একবার চোখ বুলিয়ে নিয়ে দেখে নিলে সবকিছু ঠিকঠাক আছে কিনা , তারপর তাড়াতাড়ি করে রুম থেকে বেরিয়ে গেল তবে ফোনটা বিছানার ওপরই রেখে গেছে সেটা নিয়ে যেতে আর মনে নেই ৷
আরিশ ল্যাপটপটা বন্ধ করে দীর্ঘ একটা নিঃশ্বাস নিয়ে আবার কাজে মনোযোগ দিলো , আর কিছুক্ষণ পরেই আরু আসবে , আর আরুকে দেখলে মনোযোগটা যে বিন্দু পরিমান থাকবে সেটা ওর মনে হয় না ৷ ওই একটা মেয়েই ওর মনোযোগে বিঘ্ন ঘটাতে যথেষ্ট ৷
রাইসা রেডি হচ্ছে ৷ একটা প্লাজো আর একটা টপ পরেছে , পারফিউমটা বাতাসে ওড়াতেই রুমটা সুগন্ধে ভরে গেল,,,,
রেনু খান : কিরে আর কত পারফিউম লাগাবি? আর দিস না এবার একটু বেশিই বিধঘুটে লাগছে৷
রাইসা : আমার নেশায় আরিশকে আমি পাগল করতে চাই ৷ আরিশ কে আমি আজকে আমার করেই ছাড়বো , ওকে বিয়ের জন্য রাজি করাবো আমি৷
রেনু খান : সে ঠিক আছে তবে তুই একটু পরে যাস ৷
রাইসা অবাক হয়ে বলল : কেন একটু পরে যাব কেন ? আরিশের সঙ্গে দেখা করার জন্য কি আমাকে এখন টাইম মেনটেন করতে হবে নাকি!
রেনু খান : আরে ওই মেয়েটা এক্ষুনি আরিশের সেজন্য লাঞ্চ নিয়ে গেল , তুই এখন গেলে ব্যাপারটা ঘেটে যাবে সম্পূর্ণ ৷ আর ওই মেয়েটার প্রতি আরিশের টানটা তোর থেকেও বেশি , মনে হয় না ও থাকলে আরিশ তোর কথা ভাববে ৷
রাইসা ওর মায়ের কথা শুনে রেগে গেল, তারপর বলল: তুমি কি এখন ওই মেয়েটার হয়ে কথা বলবে নাকি আমার হয়ে?
রেনু খান : আরে রেগে যাচ্ছিস কেনো, আরিশ যতই দেখাক যে ও মেয়েটাকে ইগনোর করছে কিন্তু আমার মনে হয় না ও সম্পূর্ণ ইগনোর করতে পারছে ৷ দেখ সারা দিন টা ও কাছে না পেলেও কিন্তু সারারাত ও মেয়েটার সঙ্গে থাকে একই রুমে ৷ আর একটা মেয়ের একটা ছেলেকে বশ করার জন্য একটা রাতই যথেষ্ট, তোর আগে বিয়ে হোক তারপরে তুইও বুঝবি ৷
রাইসা : যত তাড়াতাড়ি হোক না কেন ওই মেয়েকে আরিশের কাছ থেকে সরানোর ব্যবস্থা করতে হবে না হলে আমি আরিশকে কখনোই পাবো না ৷ বলে ধপ করে বিছানার উপর বসে পড়ল ৷
❤
সারা রাস্তাটা আরুশির মুডটা খুব ভালো ছিল ৷ সকালে আরিস এর কাছ থেকেও রকম একটা ব্যবহার পেয়ে তার পরে এটা একটা খুবই ভালো শুভারম্ভ তাই এখন বেশ ফুরফুরে লাগছে নিজেকে৷ আরিশ যত কষ্টই দিকনা কেন তাও যেন মিলিয়ে গেছে সব ৷ ও নিজে লাঞ্চ করেনি তবে খাবার টা একটু বেশি করেই নিয়েছে ৷
কাজের ব্যস্ততার ফাঁকে ল্যাপটপের দিকে একবার তাকাল আরিশ, তাকাতেই দেখলো আরু আসছে ৷ দেখল যে সিকিউরিটি গার্ড দরজাটা খুলে দিতেই আরু ভিতরে ঢুকলো, মুডটা ভালো , বেশ হাসিখুশি দেখাচ্ছে ওকে ৷ আরুকে হাসতে দেখে প্রাণটা জুড়িয়ে গেল আরিশের ৷ ওর কাজটা খুব একটা ইম্পরট্যান্ট ছিল বলে আরুর থেকে চোখ সরিয়ে নিয়ে ফাইলের উপরে নজর দিল আরিশ ৷
হয়তো আর এক মিনিটও লাগবেনা আরুর আসতে, কয়েক সেকেন্ডের ব্যাপার ৷
আরু এই প্রথম আরিশের অফিসে আসল তাই সেইভাবে কাউকে চেনে না ৷কিছুটা পথ যেতেই
অন্যমনস্ক হয়ে আরু এদিক ওদিক তাকাতে তাকাতেই একটা ছেলেটা কে জিজ্ঞাসা করল :
ভাইয়া আরিশ খানের রুম কোনটা বলতে পারবেন?
কন্ঠটা খুব চেনা চেনা লাগলো তুরানের কাছে তাই আর বেশী দেরী না করে ও সামনের দিকে তাকাতেই খুশিতে তুরানের মুখটা ঝলমল করে উঠল….
তুরান খুশি হয়ে বলে উঠলো : আরুশি তুই
হঠাৎ এখানে !
একটা অচেনা মানুষের থেকে নিজের নাম শুনে তাছাড়া তাও আবার তুই বলে সম্বোধন করে বলার কারণে আরু সামনের দিকে তাকালো ৷
তুরানকে দেখে আরোশী খুশিতে গদগদ , খুবই ভালো লাগছে ওকে দেখে ৷
আরু: বেশ কয়েক বছর পরে তোর সঙ্গে দেখা আবার৷
তুরান এবার নিজের জায়গা থেকে বেরিয়ে এল তারপর আরুশিকে বলল : হঠাৎ তুই এখানে ?
অনেকদিন পর তোর সঙ্গে দেখা খুব ভালো লাগছে তোকে দেখতে পেয়ে ৷
আরুশি তুরানের গাল দুটো টেনে দিয়ে :আমারও তোকে দেখে খুব ভালো লাগছে , সত্যিই অনেকদিন পর তোর সঙ্গে দেখা ৷ সেই দু’বছর আগে যখন ড্রয়িং ক্লাস ছেড়ে দিয়েছি তারপর থেকে তোর সঙ্গে আর কোন যোগাযোগ নেই ৷
তুরান: এই কয়েক বছরে তোকে বড্ড মিস করছি রে , তোর ছোট ছোট পাগলামিগুলো , তারপর দুজনে একসঙ্গে ফুচকা খাওয়া , তোকে বাড়ি অব্দি দিয়ে আসা, সবকিছুই বড্ড মনে পড়ে আজ ৷ কিন্তু হঠাৎ ওর সঙ্গে দেখা হয়ে গেল এখন খুব ভালো লাগছে৷ এখন আমরা আগের মতোই হতে পারব, আর আমাদের ফ্রেন্ডশিপটাও ৷
আরু মুচকি একটা হেসে : হ্যাঁ ৷
তুরান :তুই এখানে হঠাৎ ! জবের ইন্টারভিউয়ের জন্য এসেছিস নাকি?
আরুশি মুচকি হেসে : আমি ওনার ওয়াইফ ৷
তুরান খুশি হয়ে আরুশিকে জড়িয়ে ধরল : কংগ্রেটস অবশেষে স্যারের মত একজন লাইফ পার্টনার কে পেলি তুই ৷
আরুশি তুরান কে ছাড়িয়ে: ঠিক বলেছিস, সত্যি আমি উনাকে পেয়ে খুব খুশি ,,,,,,,,
আশেপাশে অনেকেই ওদের দিকে তাকাচ্ছে তবে ওদের কথোপকথন দেখে সবাই বুঝতে পারল যে ওরা খুব ভালো একটা ফ্রেন্ড তাই কেউ কিছু মনে করেনি….
তুরান আরুর হাতে লাঞ্চ বক্স দেখে বলল :sir এর জন্য নিশ্চয়ই লাঞ্চ এনেছিস ৷
আরোশী লজ্জা পেয়ে: হমম ৷
তুরান্: লাঞ্চ টাইম পার হয়ে গেছে অনেকখন তবে sir আজকে এখনো lunch করেননি ৷ স্যারের বোধহয় খুব খিদে পেয়েছে তুই তাড়াতাড়ি যা তবে আমার নাম্বারটা নিয়ে যা , তুই আমার নাম্বারটা নোট করে নে৷
আরুশী ব্যাগ হাতড়েও ওর ফোনটা পেল না,,,
আরশি: তুই আমার নাম্বারটা নোট করে নে,আমি ফোন আনিনি ৷ এরপর তুরান নাম্বারটা নোট করে নিল ৷
আরুশি আর বেশি লেট করল না ৷ ও জানে যে আরিসের খুব খিদে পেয়েছে, আর তাছাড়া ওর নিজেও সকাল থেকে কিছু খাইনি তাই খুব খিদে পেয়েছে ওর ৷ তাই তাড়াতাড়ি করে তুরাণের দেখানো ডাইরেকশন টার দিকেই গেল আরোশী৷
আরিশের রুমের দিকে যত এগিয়ে যাচ্ছে আরোশী হার্টবিট ক্রমশ বেড়েই চলেছে , বলতে পারবে না ও যে কেন এরকম হচ্ছে , নিজের চিরচেনা মানুষের কাছে যেতে গিয়ে হঠাৎ এই অনুভূতির কারণ ওর অজানা৷
আরিশ ফাইলটা চেক করছে হঠাৎই শুনতে পেল দরজা খোলার আওয়াজ , কেউ রুমের মধ্যে প্রবেশ করল তার থেকে বুঝতে পারল যে আরুশি এসেছে৷ তাই তাড়াতাড়ি করে মুচকি একটা হাসি দিয়ে আবার নরমাল আগের অবস্থায় ফিরে গেল আরিশ….
আরুশি ধীরে ধীরে আরিস এর কাছে গেল তারপর আরিস এর পাশে দাঁড়িয়ে রইলো ৷ বেশ কিছুক্ষণ ধরে দাঁড়ানোর পরও আরিশ ওর দিকে ফিরেও তাকাচ্ছে না বলে আরু এবার গলা পরিষ্কার করে বলল: এহেম এহেম, আপনার জন্য লাঞ্চটা এনেছি , আপনার কি সময় হবে ওটা খাওয়ার ?
আরিশ আরুর দিকে তাকিয়ে বলল: কারও রুমে ঢোকার আগে তার পারমিশন নিয়ে ঢুকতে হয় সেটুকু জ্ঞান কি আছে?
কথাটা শুনেই আরোশী ভড়কে গেল , অবাক করা কথাবাত্রা বলছে আরিশ ৷ ও তো আরিসের নিজের বউ আর তার পারমিশন লাগে বলে আরূ মনে করেনা৷
আরুশির মাথাটা গরম হয়ে গেল এবার, তাই টিফিনটা টেবিলের উপর রেখে ফাইলটা আরিস এর হাত থেকে কেড়ে নিয়ে আরিশের কোলের উপর বসে পড়ল তারপর আরিশের গলা জড়িয়ে বলতে লাগল :
আমি মনে করি না যে নিজের জামাইয়ের রুমে ঢোকার জন্য পারমিশন এর প্রয়োজন হয় ৷ সো মাই ডিয়ার হাজব্যান্ড আমার সাথে আর কথা কাটাকাটি না করে আপনি যদি লাঞ্চটা তাড়াতাড়ি করতেন তাহলে আমার খুবই ভাল লাগত ৷
আরিশ আরুশির কান্ড দেখে হাসবে নাকি কাঁদবে কিছুই বুঝতে পারছে না , মেয়েটা ওকে জব্দ করে ফেলে প্রতি পদে পদে…..
আরিস : এটা আমার অফিস , আমাদের বেডরুম নয় যে যখন তখন না বলে ঢুকে পড়বে ৷
আরূশী এবার রেগে গেল রেগে গিয়ে আরিশের কানে জোরে একটা কামড় দিল ৷
আরিশ: পাগল হয়ে গেছে নাকি , সারাদিনে কি কিছু খাওনি নাকি যে আমাকে এখন খেয়ে ফেলেছো!
আরোশী আরিশকে আরো আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরে ওর বুকে মাথা রেখে গুটিসুটি হয়ে বলল : আপনি ছাড়া আর কেই বা আছে আমার, আপনাকে খেয়ে ফেলবো আমি ৷ জানেন সেই আমি সকাল থেকে আমি কিছু খাইনি , আমার কি খিদে পায় না !
কথাটা শুনতেই যেন আরিশের বুকের ভেতর মোচড় দিয়ে উঠলো ৷ সারাদিনের ব্যস্ততায় আরু কিছু খেয়েছে কি সেটুকুও নিয়েও ভেবে উঠতে পারেনি ও৷ মেয়েটা সেই সকাল থেকে না খেয়ে রয়েছে আর এখন প্রায় দুটো পনেরো বাজে…..
আরিশ আবার নিজেকে সামলে নিয়ে বললো :আমার খুব খিদে পেয়েছে , আমাকে কি কিছু খেতে দেবে নাকি এভাবেই না খাইয়ে রাখবে কোনটা?
আরুশি ঠিক আগের অবস্থান থেকেই বললো : আমাকে একটু খাইয়ে দেবেন নিজের হাতে করে !
আরুশির বলা প্রত্যেকটা কথা যেন আরিশ এর বুকে গিয়ে লাগছে ৷ মেয়েটা সেই সকাল থেকে না খেয়ে রয়েছে কত কষ্টই না পেয়েছে , আর এত কষ্টের মাঝেও ওর জন্য খাবার এনেছে ৷ এতোটুকু তো করতেই পারে আরিশ, তাছাড়া ও নিজে চেয়েছিল আরুর হাতে খেতে …
নিজের রাগ অভিমান সমস্ত কিছুকে দূরে রেখে আরিস খাবার গুলো খুলতে শুরু করলো কিন্তু আরুশী ঠিক আগের মতোই রয়েছে , ও আরিশের বুক থেকে নড়বে না বলেই হয়তো ঠিক করেছে…
আরোশী জানত যে আরিশ যতই রাগ করে থাকুক না কেন কখনো ওর কষ্ট সহ্য করতে পারবে না ৷ কতগুলো ভাবতেই দাঁত বার করে হি হি করে হাসছে আরু আর আরিশ তা বেশ ভালই বুঝতে পারছে ৷ আর এই ছোট ছোট মিষ্টি ব্যবহারগুলোর কারণেই তো আরিশ আরুর প্রেমে পড়েছিল ৷
আরিশ ভাতটা মেখে প্রথম লোকমা আরুর গালে তুলে দিলো ৷ আরূও না করল না , ভালোভাবে জমিয়ে খেতে লাগলো ৷ আরিশ নিজেও খাচ্ছে আর চুপ করে আছে , আরু বকবক করেই চলেছে , আরিশ ও বাধ্য ছেলের মতো আরুর সব কথা শুনছে ৷ তবে তুরাণের কথা আরু এখনো আরিশ কে বলেনি, বলতেই ভুলে গেছে ৷
খাওয়া ওদের প্রায় শেষ ৷
আরূশি আরিশ এর কোন থেকে নেমে বলল( হাসিমুখে ):জানেন তো আজকের রান্না আমি করেছি ৷
আরিশ পকেটে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে বলতে লাগলো: তাই বলি রান্নার টেস্টটা আজকে এত বাজে কেন!
আরোশী কোমরে হাত দিয়ে বলল : আপনি একথা বলতে পারলেন ! ওহহ, আমিতো এখন পুরনো হয়ে গেছি তাইনা, নতুন অনেক মানুষ এসেছে তারা তো আমার থেকেও ভালো সব পারে…..
আরিশ : একদম তাই , একদম ঠিক বুঝেছো তুমি ৷ তুমি তো আমার এক্স তাইনা, বলে আরুশির কোমর জড়িয়ে কাছে টেনে নিল ৷
আরুশি সারা শরীর জুড়ে শিহরণ বয়ে যাচ্ছে ,
আরিশের বুকের সাথে লেপ্টে গেছে ও ৷
আরুশির মুখের ওপর পড়া চুলগুলো আরিশ হাত দিয়ে কানের পেছনে গুঁজে দিল৷
আরিশ এবার আরূশির কানের কাছে গিয়ে বলল : আর একটা বিয়ে করবো আমি, তুমি পুরনো হয়ে গেছে তাই ঠিক আর ইন্টারেস্ট পাচ্ছিনা ৷(ফিসফিস করে বলল)
আরোশী চোখ বন্ধ করে নিয়েছিল , ভেবেছিল যে আরিশ হয়তো ওকে কিস করবে কিন্তু আরিস এর কাছ থেকে এরকম একটা কথা শুনে তাড়াতাড়ি চোখ খুলে আরিশ কে ধাক্কা মারলা….
আরিশ কোনক্রমে নিজেকে সামলে নিল…
আরোশী : হ্যাঁ বিয়ে করেন , আমিও করবো ৷ আপনাকে দেখিয়ে দেবো যে আমিও কিছু কম যায় না ৷
বলে আরিশ এর দিকে তাকিয়ে মুখ ভেংচি দিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে গেল ৷
আরুশি গাড়িতে উঠে বসলো,তারপরে গাড়ি ছেড়ে দিতেই নিমেষেই চোখের সামনে থেকে মিলিয়ে গেল আরু আর এই সমস্ত কিছু লক্ষ্য করছিল রাইসা এতক্ষণ ধরে,অপেক্ষা করছিল অফিসে ঢোকার জন্য, আরু বেরিয়ে যেতেই রাইসা অফিসের মধ্যে ঢুকল৷
আরিশ বসে বসে ল্যাপটপ ল্যাপটপ চেক করছে আর তখনই দরজার-নক পড়ার শব্দে বাইরে থাকা ব্যক্তিকে ঘরে ঢোকার অনুমতি দিল ও ৷
রাইসা:তুই কি খুব বিজি?
আরিস রাইসাকে দেখে চমকে গেল হঠাৎ এমন একটা সময়ে রাইসাকে মোটেও আশা করে নি ও ৷
আরিশ : হঠাৎ তুই এখানে?
রাইসা একা একা বাড়িতে বসে খুব বোর ফিল করছিলাম তাই ভাবলাম তোর সঙ্গে দেখা করতে চলে আসি ৷ তাছাড়া অনেকদিন বাংলাদেশের আসা হয়নি, সবকিছুই বড্ড অচেনা অচেনা লাগছে, তাই ভাবলাম তুই যদি ফ্রি থাকিস তোর সঙ্গে একটু বার হবো ৷
আরিশ মনে মনে : এই মেয়েটা আমার সংসারটাকে জ্বালিয়ে পুড়িয়ে ছারখার করে দেবে দেখছি ,বিরক্তিকর !
আরিশ : তাহলে তোকে আধঘন্টা অপেক্ষা করতে হবে কারন আমি এখন খুবই বিজি আধঘন্টা পর ফ্রি হবো৷
রাইসা: ওকে তুই কাজ কর আমি বসে আছি কোন সমস্যা নেই….
আরিস : ওকে ৷
আরিশ মনে মনে : তুই বাড়িতে গিয়ে আমার আরূপাখিকে পাঠিয়ে দে , তোর সঙ্গে ঘুরতে গিয়ে আমার কোন কাজ নেই, ওর সঙ্গে গেলে তাও দুজনে কিছু ভালো সময় কাটাতে পারব ৷
তারপরে আরিশ আর রাইসা বেরিয়ে গেল চারটের দিকে….
আরিশ ড্রাইভ করছে আর রাইসা পাশে বসে আছে৷
আরিশ : কোথায় যেতে চাস তুই?
রাইসা : তুই যেখানে নিয়ে যাবি ৷
আরিশ মনে মনে: বিরক্তিকর সব কথাবার্তা ৷
রাইসা : আমি ঠিক করেছি প্রথমে বেশকিছু শপিং করে রেস্টুরেন্টে গিয়ে ডিনার করে ফিরব৷
আরিশ: এতো লেট?
রাইসা : আমি বাড়িতে সবাইকে বলে এসেছি চিন্তা করিস না ৷
আরিশ মনে মনে: আমার জানটাকে যে বাড়ি একা ফেলে আমি এখানে রয়েছি আমি ,কি করে ঠিক থাকি ৷
রাত প্রায় সাড়ে নটা , আরিশ বাড়ি ফিরছে না দেখে আরুশির খুব চিন্তা হচ্ছে ৷ আরিশকে অনেকবারই কল করেছে কিন্তু বারবারই নট রিচেবল বলছে , কোন বিপদে পড়লে না তো! নাকি অফিসের কোন কাজে আটকে গেছে সেটা বুঝতে পারছে না আরূ ৷ জানলে চিন্তাটা কম হতো….
না পেরে তুরান কে একটা কল করলো,,,,,
আরুশি: হ্যালো তুরান , উনি এখনো বাড়ী আসেনি জানিস ৷ অফিসে কি আজকে কোন জরুরী কাজ রয়েছে যার জন্য উনি আটকা পড়ে গেছেন !
তুরান: এতদিন sir অফিসে ছিলেন না , .অনেক কাজ ওনার জমে ছিল তবে উনি তো সেই চারটের সময় বেরিয়ে গেছেন ৷
আরু: ওহহহ!
এরপর তুরানের সাথে আরো কিছু কথাবার্তা বলল আরু ৷ কোন কিছুই ভাল লাগছে না ওর আরিশকে ছাড়া ৷ তুরানের সাথে কথা বললেও মনটা রয়েছে আরিস এর কাছে খুব চিন্তা হচ্ছে ওর ৷
হঠাৎই গাড়ির হর্নের আওয়াজ শুনে বুঝতে পারল যে আরিশ এসেছে তাই তুরান কে তাড়াতাড়ি বাই বলে ফোনটা কেটে দিল….
বেলকনি থেকে দাঁড়িয়ে আরুশি দেখছে , মুখটা ওর খুশিতে ভরে গেছে আরিশকে নামতে দেখে, তবে গাড়ি থেকে রাইসাকে নামতে দেখে ওর খুশিটা যেন মুহূর্তের মধ্যে মিলিয়ে গেল….
চলবে,,,,,,,