#তোমার_নেশায়_আসক্ত
#part:24
#Suraiya_Aayat
সারা রাস্তায় রাইশা আরিশের সঙ্গে বকবক করতে করতে এসেছে আরিশ কেবলমাত্র হ্যাঁ হু করছে আর মাথা নাড়াচ্ছে , আর রাইসা আছে নিজের তালে , আর ওর সঙ্গে যোগ দিয়েছে আরিশের খালাম্মা ৷
রাইসা বুঝতে পারল যে আরিস ওকে সামান্য কিছুটা হলেও ইগনোর করছে ৷ মনে মনে ও ভেবেই নিয়েছে একবার আরিসে সঙ্গে ওর বিয়েটা হয়ে গেলে তারপরে সবকিছু ঠিকঠাক করে নেবে ৷
এয়ারপোর্ট থেকে আরিশের বাড়ি প্রায় 45 মিনিটের ডিসটেন্স তাই 45 মিনিট পর আরিশ ওদেরকে নিয়ে বাড়িতে ঢুকলো ৷ গাড়ির হর্ন দিতেই সবার মধ্যে উৎফুল্লতা আর ব্যস্ততার , তার মাঝে উদাস হয়ে বসে আছে আরু ৷ ওর যেন কিছুতেই ইন্টারেস্ট লাগছে না ব্যাপারটা নিয়ে, যখন থেকে শুনেছে যে রাইসা নাকি আরিশকে পছন্দ করে তখন থেকেই মনের মাঝে গভীর চিন্তা চলছে যে কি করে রাইসার থেকে দূরে রাখা যায় আরিশকে ৷
গাড়ি থেকে লাগেজ পত্র বাড়ির সার্ভেন্ট রার করে নিতেই হঠাৎ রাইসার চেঁচানোর শব্দ আরিশের কানে এলো , সঙ্গে সঙ্গে রাইশার দিকে তাকিয়ে দেখতেই দেখল যে ও মাটিতে পড়ে গেছে ৷
আরিস তাড়াতাড়ি করে রাইসাকে তুলে ধরে: কি হয়েছে তোর আর পড়লি কিভাবে?
রাইসা এমন একটা ভাব করছে যেন ও ব্যথায় কথা বলতে পারছেনা ৷
রাইসা : পায়ে কি ব্যথা পেয়েছি !
আরিশের খালাম্মা : কি হলো রে মা তোর হঠাৎ? এতক্ষণ তো ঠিকই ছিলি তুই ৷
আরিস : সেই তো, তুই হঠাৎ পড়ে গেলি কিভাবে?
রাইসা আরিশের দিকে ইশারা করল ওর পায়ের দিকে ইশারা করল যা থেকে বোঝা যায় যে লম্বা হিল পরার কারণে পা মচকে গেছে ৷
আরিস : কি দরকার এসব পরার, এমনিতেই তো তুই লম্বা ৷
রাইসা : আরে কখনোই এরকম হয়না কিন্তু আজকে কিভাবে হলো জানি না, কিন্তু আমি এখন হাটবো কিভাবে?
আরিশ বাঁকা চোখে রাইশার দিকে তাকিয়ে : তুই কি আমাকে এখন কোলে নিতে বলছিস ?
সঙ্গে সঙ্গে রাইসা খুশি হয়ে বলল : হ্যাঁ আমাকে তুই কলে নে, না হলে আমি যাব কিভাবে?
আরিশ মনে মনে কিছু একটা ভাবল তারপরে রাইসাকে কোলে তুলে নিয়ে বাড়ির দিকে হাঁটা দিল, রাইসা তো বেজায় খুশি আর তার সঙ্গে আরিসের খালাম্মাও ৷
আরিসের রাইসাকে কোলে নেওয়ার উদ্দেশ্যে একটাই যে যখন সকলের সামনে ওকে নিয়ে যাবে তখন আরুশি তখন বেশি অবাক হবে আর জ্বলবে সেই দৃশ্যটা আরিশ একবার দেখতে চাই , একটু হলেও বেশ মজা নেওয়া যাবে এটা ভাবল ৷
আরিশ রাইসাকে কোলে তুলে নিয়ে ড্রয়িংরুমে প্রবেশ করতেই সবার চোখ যেন অপ্রত্যাশিতভাবে ছানাবড়া হয়ে গেল ৷
সবথেকে অবাক হলো আরু ৷
আরিশকে ও যে এই ভাবে রাইসার সঙ্গে দেখবে সেটা হয়তো আন্দাজ করতে পারেনি আরু ৷
আরিশ রাইসাকে নিয়ে সোফায় বসিয়ে দিলো তারপর নিজেও ওর পাশে বসলো ৷
আরিসের মা : কি হয়েছে রাইসার?
রেনু খান (আরিশের খালাম্মা ) : আর বলিস না আসার সময় মেয়েটার পা মচকে গেছে তাই আরিশ ওকে কোলে করে নিয়ে আসলো , না হলে এতটা রাস্তা আসতো কি করে ?(কথাটায় কিছুটা মসলা মাখিয়ে উনি বললেন যাতে সবাই একটু অবাক হয় ৷)
সানা রাইশার পাশে গিয়ে বলল : এখন ঠিক আছো আপু ?
রাইসা : হ্যাঁ এখন ঠিক আছি , আর আরিশ আমাকে কোলে করে না আনলে যে কি হত !
রাইশা এতক্ষণে আরুশিকে খেয়াল করেনি….ও জানে যে আরিশের বিয়ে হয়ে গেছে , আশার কিছুক্ষণ আগেই ওর মা ও কে বলেছে, কথাটা শুনে প্রচন্ড রেগে গেছিল রাইসা ৷ প্লেনের মধ্যে ছিল বলে সিন ক্রিয়েট করতে পারেনি, না হলে একটা লজ্জার ব্যাপার ঘটে যেত ৷ আরুশিকে দেখে মনে মনে রেগে ফেটে পড়ছে রাইসা….
রেনু খান :: এই যে সেই মেয়ে যাকে তুই আরিস এর গলায় ঝুলিয়ে দিয়েছিস ৷ মেয়েটার কোন শিক্ষা আছে বলে তো মনে হয় না ! বাড়িতে যে একজন মুরব্বি এসেছেন তাকে সালাম করতে হয় সেটুকুই শিক্ষা মেয়ের মধ্যে নেই , কেমন ভাবে দাঁড়িয়ে আছে এখনো! আর আমার রাইসাকে তো এইসব কথা দ্বিতীয় বার বলতেই হয় না….
রাইসা ও রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে এবার বলেই ফেলল,,,,,,,,
রাইশা : কি দেখে তুই এই মেয়েকে বিয়ে করেছিস? তোর চয়েজ বলে কি কিছু নেই নাকি?আর তাছাড়া তুই আমার জন্য আর কদিন অপেক্ষা করতে পারলি না, শেষমেষ এই মেয়েকে বিয়ে করলি, আমি জানি এই মেয়েটির কোন যাদু মন্ত্র করে তোকে আমার কাছ থেকে কেড়ে নিয়েছে, না হলে তুই কখনো বিয়েতে বিয়ে করতে রাজি হতিস না…
রাইসা আর আরিশের খালাম্মার বলা কথাগুলো আরুর বুকে এসে যেন তীরের মত বিধছে , সবেমাত্র হল ওনারা এসেছেন আর এসেই এত খারাপ খারাপ কথা বলতে শুরু করে দিয়েছেন ৷ আরু যা ভেবেছিল এরা তার থেকেও আরো বাজে ব্যবহার করছে ওর সাথে ৷
কথাগুলো শুনে আরুর খুব খারাপ লেগেছে তবে আশা রেখেছিল মনে মনে যে আরিশ এসবের প্রতিবাদ করবে তাই ও কিছু বলেনি চুপ করে ছিল, আরিশের কথা বলার জন্য অপেক্ষা করছিল আরোশী৷ কিন্তু অনেকক্ষণ রাইসার এই সমস্ত কথা বলার পরও আরিশ একটা কথাও বলল না চুপ করে আছে আর তা থেকে আরুর চোখের কোনে জল চলে এলো ৷
রাইসা বলতে শুরু করেছে আর থামার নাম নেই দেখে আরিশ বলল : ছাড় না রাইসা , সব সত্যি না হয় সকলের সামনে নাইবা বললি…..
আরিসের কথাটা শুনে আরু চোখে জল নিয়ে আরিশের মুখের দিকে তাকাল কারন আরিশ যা বলেছে সম্পুর্ন মিথ্যা কথা , সত্যিটাকে এড়িয়ে গেল৷ আরিশ ওকে জোর করে বিয়ে করেছে সেটা আর বলল না বরং আরুকে দোষারোপ করল ৷
রাইসা : আমি ঠিক জানতাম যে এই মেয়ে ছলে-বলে-কৌশলে তোকে বিয়ে করেছে না হলে এই মেয়ের মাঝে এমন কি আছে যা আমার মাঝে নেই ৷ তুই চিন্তা করিস না আমি এসে গেছি আর কিছু হতে দেব না…
একেতো রাইসা আর রেনু খান দুজন মিলেই নানান বাজে বাজে কথা শোনাচ্ছে আরুকে আর তার উপর আরিশ ও তাদের সঙ্গে সঙ্গে তাল মিলাচ্ছে দেখে আরু পারল না নিজেকে আটকাতে , চোখের জল গুলো বাঁধ ভেঙে চিবুক বেয়ে গড়িয়ে পড়েছে টপটপ করে৷ আরু তাড়াতাড়ি করে ওর রুমে চলে গেল…
সানা: ভাইয়া তুই এসব,,,,,
সানা আর কিছু বলবে তার আগেই আরিশ সানাকে থামিয়ে দিয়ে রুমে চলে গেল ৷
আরিশ রুমে গিয়ে দেখল আরু বিছানার উপরে বসে গুটিসুটি হয়ে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছে , আর কান্নার ক্ষীন শব্দটা হালকা ওর কানে ভেসে আসছে ৷ মানুষ তার মনের ভিতর কষ্ট দূর করতে যেভাবে কান্না করে আরু ও ঠিক সেভাবেই কাদছিল….
আরিশ এসে আরুর সামনে দাঁড়িয়ে রয়েছে আর আরু এদিকে কেদেই চলেছে ক্রমাগত…
আরু জলে ভেজা চোখ নিয়ে পিট পিট করে আরিশের দিকে তাকালো , দেখতেই যেন আরুর রাগটা দ্বিগুন হয়ে গেল ৷ চোখে এখন কিছুক্ষণ আগে ঘটে যাওয়া সমস্ত কথাগুলোই ভাসছে ৷
আরিশ কে দেখে যেন রাগটা চরম পর্যায়ে পৌঁছে গেছে , তাই বিছানা থেকে নেমে আরিশের জামার কলার ধরে বলতে লাগলো,,,,
আরুশি :: আপনার সাহস কি করে হয় ওই মেয়েকে কোলে নেওয়ার ! জানেন কিভাবে আপনাকে জড়িয়ে ছিল ! আপনার শরীরে ওর স্পর্শ রয়েছে ! কেন থাকবে? আপনার উপর শুধু আমার অধিকার আর কারো নয় ৷ আর আপনি তখন সবার সামনে এভাবে মিথ্যা বললেন কেন যে আমি আপনাকে জোর করে বিয়ে করেছি , সত্যিটা বলার সাহস কি আপনার নেই? আপনি কি পারতেননা আমার হয়ে কথা বলতে!
এতক্ষণ রেগে রেগে কথাগুলো বলছিল আরু কিন্তু এখন আর নিজেকে পারছে না সামলাতে , তাই এবার অঝোরে কেঁদে দিল আরুশি ৷
আরুশির চোখের জল দেখে এমনিতেই আরিস বুকের মধ্যে চিনচিনে ব্যথা অনুভব করে ,আর তার ওপরে নিজে সেখানে প্রতিবাদ না করে এখন আরিশকে জড়িয়ে ধরে কাঁদছে ৷ আরিশ ভেবেছিল আরু হয়তো নিজের অধিকারের জন্য রাইসাকে উল্টে দু’চারটে কথা শুনিয়ে দেবে , আরোশীর রূপটা দেখার জন্য আরিশ আরুর সাথে এসমস্ত কাজ করলো কিন্তু এতে হিতে-বিপরীত হলো ৷ এখন আরু ক্রমাগত কেদেই চলেছে আর তার প্রত্যেক কষ্টের ব্যথা অনুভব করছে আরিশ নিজেই ৷
আরিশ আবার আরুশিকে কোলে তুলে নিয়ে বিছানার ওপর ফেলে দিল,,,,
হঠাৎ আরিশের দিকে থেকে এমন একটা প্রতিক্রিয়ায় আরু চমকে গেল ৷
যতক্ষণে ও আরিশকে কিছু বলতে যাবে তার আগে আরিশ ওর হাতদুটো বিছানার সাথে শক্ত করে চেপে ধরেছে , ধরে ওর মুখের কাছে মুখটা নিয়ে এসে বলল,,,,,,
আরিশ : আমাকে দোষারোপ করছো তুমি ! নিজের অধিকারটা নিজে বুঝে নিতে পারো না ? তুমি কি পারতেনা সত্যের জন্য প্রতিবাদ করতে ? নিজে তো মুখ লুকিয়ে চলে এলে ! এতে যে প্রতিপক্ষ আরো সুযোগ পায় তা কি বোঝনা ? কবে সমস্ত কিছু বুঝতে শিখবে? তোমাকে সব কিছু বোঝানোর দায়িত্বটা কি আমার!
কথাগুলো অত্যন্ত জোরে চেচিয়ে চেচিয়ে বলছিল আর প্রত্যেকটা কথার আওয়াজ শুনে আরুর বুকের ভিতর ধক ধক করে উঠলো ৷
আরিশ : নিজের অধিকারটা বুঝতে শেখো , এমন কিছু করো না যাতে কেউ তোমার জায়গায় নিজের ভাগ বসিয়ে নেই,তবে সেইদিন কিন্তু বড্ড বেশি আফসোস করতে হবে তোমাকে আরুপাখি ৷ বলে আরুশির গলায় জোরে একটা কামড় দিল ৷
আরোশী যেন এতক্ষণ আরিশের কথার মাঝে হারিয়ে গিয়েছিল হঠাৎ আরিশ জোরে কামড়ে নিতেই আহ করে চেঁচিয়ে উঠলো ৷ নিজেকে যে আরিশের থেকে ছাড়াবে সে শক্তি টুকুও নেই ওর ৷আরিশ ওর হাত দুটোকে চেপে ধরে রেখেছে…
আরিশ : তোমাকে আমি কষ্ট দেবো , বকব আর তারপর আমিই তোমাকে ভালোবাসবো , আর এ বিষয় নিয়ে যদি মনের মধ্যে কোন সন্দেহ থাকে তাহলে তা মুছে ফেলাই ভাল, কারণ তোমার ওপর শুধু আমার অধিকার , শুধু আমার ৷ বলে কামড়ে দেওয়া জায়গাটায় গভীরভাবে একটা কিস করে আরুশিকে ছেড়ে উঠে গেল ৷
আরিশের কাজকর্মে যেন আরুশি হতভম্ব ৷ একটা মানুষ কত ভাবে কত রূপে নিজেকে প্রকাশিত করে তা হয়তো আরিশকে না দেখলে বুঝতেই পারতো না আরূ ৷
অনিকা খানের সঙ্গে রান্নাঘরে কিছু টুকটাক কাজ করছে আরূ , যদিও বা উনি করতে দিতে চাননি তবুও আরোশী নিজে থেকেই জোর করে করছে ৷ মাঝে মাঝে হাতে হাতে কাজ করে দিতে ওর বেশ লাগে ৷ আগে ওর মায়ের সঙ্গে কাজ করে দিত তবে আজকে ওর মাকে বড্ড মিস করছে ৷ ওর বাবা ওর প্রতি এমন খারাপ ব্যবহার করলেও ওর মা কখনো ওর প্রতি এমন ব্যবহার করেনি , কথাগুলো ভাবতেই আরুশির চোখে জল চলে এলো, তবু নিজেকে সংযত করে নিয়ে আবার নরমাল হয়ে গেল ৷
আরিশ রুমের ভিতরে ল্যাপটপে কাজ করছে আর রাইসা সানার সঙ্গে গল্প করছে আর আরিশের খালাম্মা রুমের মধ্যে শুয়ে আছেন ৷ এতটা লং জার্নি করার পর উনি বেশ ক্লান্ত….
হঠাৎই রুম থেকে আওয়াজ এল কফি বলে ৷
তা শুনে অনিকা খান বললেন : আরূ মা আমি খুব ব্যস্ত , তো তুই কি একটু ফ্লাক্স এর মধ্যে থাকা কফিটা ওদের দুজনকে একটু দিয়ে আসবি !
আরূ: আচ্ছা মামনি আমি দিয়ে আসছি ৷
বলে দু কাপ কফি ঢালল আর ইচ্ছা করে রাইসার কফিতে চার চামচ গুঁড়ো লঙ্কা মিশিয়ে দিল ৷
আরুশি কফি টা নিয়ে যাচ্ছে ওদের কাছে আর বলছে মনে মনে : আমার জামাইয়ের কোলে ওঠার বড্ড শখ তাই না , এবার আমি দেখাচ্ছি মজা…..
সানা কফিতে চুমুক দিয়ে টিভির দিকে মন দিল, আরোশী অপেক্ষা করে আছে যে রাইসা কখন কফিতে চুমুক দেবে ৷ তবে বেশিক্ষণ আর দেরি না করে রাইসা কফিটা মুখে দিতেই চোখ মুখের অবস্থা বেহাল হলো,চোখ মুখ লাল হয়ে গেছে ৷ জোরে চেচিয়ে উঠল রাইসা…
রাইসা : এই মেয়ে তুমি এটা কি বানিয়েছ? এটা কি কফি না অন্যকিছু?( চেঁচাতে চেঁচাতে)
ওর চেঁচামেচি শুনে আরিশ নিচে নেমে এলো , দেখতে গেল যে কি হচ্ছে আসলে ৷
আরিশ এসে দেখে রাইসার অবস্থা খারাপ ৷
সানা: কিন্তু আমার কফিটা তো ঠিকই আছে ৷
আরিস আরুশির দিকে চেঁচিয়ে বলল :কি মিশিয়েছ তুমি কফিতে? রাইসার চোখমুখ তো লাল হয়ে গেছে৷তো ঝাল মিশেছে কেন তুমি ওর কফিতে?
আরোশী : আমি কিছু করিনি ডোন্ট কেয়ার ভাবনিয়ে৷
আরিশ : তুমি যখন মিথ্যা বলছো না তাহলে তুমি কফিটা খেয়ে দেখাও…
আর যাইহোক আরূঝি কফিটাতো খাবেইনা ৷মঅনেকবার না না করল কিন্তু এবার আরিস জোর করে কপি টা খাইয়ে দিল আরুকে ৷ কফিটা খেয়ে আরুর খুব বাজে অবস্থা ৷ যেখানে রাইসা কফিতে একটা চুমুক দিয়েছে সেখানে আরু সমস্ত কফিটা আরুকে খাইয়েছে ৷ শরীরটা যেন জ্বলে পুড়ে ছারখার হয়ে যাচ্ছে আরুর….
চোখ থেকে টপটপ করে জল গড়িয়ে পড়েছে আর অস্থিরতা কাজ করতে গোটা শরীরের মধ্যে ৷ আরশি আর দেরি না করে দৌড়ে রুমে গেল ৷
আরিশ ভেবেছিল রাইসা হয়তো মিথ্যা কথা বলছে আরুশিকে কথা শোনানোর জন্য কিন্তু আরোশী যে সত্যিই কফিতে ঝাল মিশিয়েছে সেটা ও বুঝতে পারেনি ৷ আরিশ ও পিছনে পিছনে গেল কারণ আরুশির অবস্থা বেহাল….
ওয়াশরুমে গিয়ে হড়হড় করে বমি করে দিল আরুশি, শরীর ক্রমশ নেতিয়ে আসছে, আনছান আনছান করছে ও ৷
আরিশ রুমে ঢুকে দেখল যে আরুশি বমি করছে, আরিশ ওয়াশরুমে ঢুকে আরুশির হাত-মুখ ধোঁয়াল, তোয়ালে দিয়ে চোখ মুখ মুছে দিল , দিয়ে আরুশিকে শাওয়ারের নিচে দাঁড় করালো জোর করে ৷
একেই আরুর ঝালে বেহাল অবস্থা তার ওপর আরিশ ওকে জোর করে সবকিছু করাচ্ছে ৷আরিশকে বাধা দিয়ে বেরিয়ে আসতে যাবে তখন আরিশ আরুশিকে ধরে শাওয়ার নিচে দাঁড়িয়ে পড়ল ৷ আরুশে ছটফট করছে ঝালে ৷ আরিশ আরো শক্ত করে চেপে ধরে আছে আরুকে ৷ দুজনেই ভিজে যাচ্ছে , হঠাৎ করে আরুশির ছটফটানিটা বন্ধ হয়ে যেতেই আরিস আরুর দিকে তাকিয়ে দেখলো আরুশি জ্ঞান হারিয়েছে ৷
#suraiya_Aayat
চলবে,,,,,,
#তোমায_নেশায়_আসক্ত
#part:25
#Suraiya_Aayat
আরুর থেকে কোনরকম কোন সাড়াশব্দ না পেয়ে আরিস আরূর দিকে তাকাতেই দেখল আরূর শরীরটা নেতিয়ে পড়েছে , আর ওর বুকে মাথা রেখে জ্ঞান হারিয়েছে ৷
আরিশ বুঝতে পারল আরুশির এখন কি অবস্থা ! আরু বেশি ভয় পেয়ে আর প্রচন্ড শরীরের অস্বস্তিতে সেন্সলেস হয়ে গেছে ৷
হঠাৎই বাইরে থেকে সানার আওয়াজ শোনা গেল,,,
সানা : ভাইয়া আরুর কি অবস্থা ? ও কি ঠিক আছে ? আমাকে কি দরকার ?
আরিশ আরুশিকে শক্ত করে নিজের সঙ্গে জড়িয়ে ধরে বলল : ও এখন সেন্সলেস হয়ে গেছে আর জামাকাপড় ও সম্পূর্ণ ভিজে ৷
সানা : আমি কি হেল্প করব ? আই মিন আমি কি চেঞ্জ করিয়ে দেবো ?
আরিস : তার কোন দরকার নেই আমি নিজেই পারবো ৷ তুই চিন্তা করিস না আর তুই নিচে গিয়ে আম্মুকে বল যে আরুপাখির শরীরটা খারাপ , আমি সবটা সামলে নেবো , না হলে খামোখা চিন্তা করবে আর আর যতক্ষণ না আরুপাখির সেন্স ফিরে আসে ততক্ষণ আমি নিচে যাব না ৷
সানা মুচকি মুচকি হেসে : আচ্ছা ভাইয়া…..
সানা রুম থেকে বেরিয়ে যেতেই আরিশ আরুশির শরীর থেকে ভেজা জামা কাপড়গুলো খুলে একটা টাওয়েল দিয়ে ভালো করে জড়িয়ে দিল আরূশির শরীরে,,,,,,
তাড়াতাড়ি করে আরুশিকে বিছানায় শোয়ালো আর নিজে দু মিনিটের মধ্যেই চেঞ্জ করে আসলো তাড়াতাড়ি করে ৷
আরুশির ভিজে চুল থেকে পড়া জলগুলো বিছানায় পড়ে বিছানা ভিজে গেছে অনেকটাই ৷ আরিশ আরুশিকে এবার নিজের সাথে জড়িয়ে ধরল তারপর আরশির গালে হাত দিয়ে বলতে লাগলো,,,,
আরিস : এই আরুপাখি ওঠো, কি হলো তোমার?
আরু উঠছে না দেখে গ্লাস থেকে জল নিয়ে আরিশ আরুর মুখে ঝাপটা দিল….
তাতেও কোনো কাজ হচ্ছেনা ৷
কিন্তু আরুশির শরীরের তাপমাত্রা ধীরে ধীরে কমেই চলেছে…
আরিশের চিন্তাটা আরো বেড়ে গেল ৷ দেরী না করে ওয়ারড্রব থেকে ব্ল্যাঙ্কেট বার করে এনে আরুশির শরীরে জড়িয়ে দিল….
কোন ভাবেই কোন কাজ হচ্ছে না , আরুশির শরীর আগের থেকেও বেশী ঠাণ্ডা হয়ে যাচ্ছে ৷
আরিশ বুঝলো যে এভাবে কোন কিছুই হবে না তাই নিজেকেও আরশির সঙ্গে জড়িয়ে নিল আর দিতে শুরু করলো ওর ভালোবাসার ছোঁয়া ৷
ক্রমশ আরুশিকে ভালোবাসায় ভরিয়ে দিচ্ছে আরিস আর আরিশের ভালোবাসার উষ্ণতায় আরোশীর শীতলতা কেটে যাচ্ছে….
ধীরে ধীরে আরুশির জ্ঞান ফিরে আসায় অরিশের দেওয়া ব্যাথা গুলোকেও ক্রমশ অনুভব করতে পারল আরু ৷
নিজেও মিশে একাকার হয়ে যাচ্ছে আরিস এর ভালোবাসায় ৷
কিছুক্ষণ পর আরিশ দেখল যে আরুশি ক্রমশ নরমাল হয়ে আসছে , আর এখন চোখ পিটপিট করে তাকাচ্ছে বাচ্চাদের মতো , চোখের জল জমে আসার কারণে মাঝে মাঝে একটা পাপড়ি অপর পাপড়ির সঙ্গে লেপটে যাচ্ছে ৷
আরুশিকে আবার নরমাল হয়ে আসতে দেখে যেন প্রাণ ফিরে পেল আরিশ ৷ কিছুক্ষণের জন্য যেন ওর মাথা আর কাজ করছিল না ৷
আরুর খুব দুর্বল লাগছে তাই কিছু বলছেনা ৷ কেবল ভেজা ভেজা চোখে তাকিয়ে আছে আরিশের দিকে….
আরিশ আরুর দিকে তাকিয়ে তারপর ওর ঠোঁটে হালকা করে নিজের ঠোঁট দুটোকে স্পর্শ করে ওকে জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়ে পড়ল…..
আরুশির কাছে আরিশ যেন একটা নিরাপদ আশ্রয়, এখানে থাকলে কোন বিপদে ওকে ছুঁতে পারবে না এটা আরু বিশ্বাস করে ৷সারা জীবনটা আরিস এর বুকে এভাবেই কাটাতে চায় আরূশী ৷
❤
ওই মেয়ের সাহস কি করে হয় আমার কফিতে লঙ্কাগুঁড়ো মেশানোর ! আমি তো ওকে শেষ করে ফেলব ৷ নাটক করে নিজেকে অসুস্থ প্রমাণ করে আরিশ এর কাছ থেকে সিমপ্যাথি আদায় করতে চাই তাই না ! আমি তা কিছুতেই হতে দেবো না,ও এই বাড়িতে এভাবে কতদিন টেকে আমিও দেখবো, ওর আরিশের সঙ্গে ডিভোর্স করিয়ে দিয়ে আমি ওকে বিয়ে করব যদি না করি তাহলে আমার নাম ও রাইসা নয়…
রাইসার রুমে ঢুকতেই কথাগুলো শুনতে পেল সানা, বুঝতেই পারলো যে রাইসা ব্যাপারটা নিয়ে তুমুল দাঙ্গা-হাঙ্গামা বাধাবে ৷ আর রাইসা যদি একবার জানতে পারে যে আরিশ আর আরু ওই ভাবে রয়েছে তা হলে তো জমে যাবে ৷ সানা এবার মজা নেওয়ার জন্য রাইসার কাছে গেল ৷
সানা যেতেই রাইসা আবারও শুরু করলো,,,,,
রাইসা: তুই বল সানা মেয়েটার কত সাহস যে আমার কফিতে লংকা মিশিয়েছে ,রাইসার কফিতে !
সানা মনে মনে : হ্যাঁ তুমি তো বিরাট কিছু যে তোমার কফিতে কিছু মেশানো যাবে না , যত্তসব আজাইরা ৷ আরূমন যা করেছে ঠিক করেছে, আমি হলে তো আরও বেশিকরে মেশাতাম ৷
সানা এবার তবু নিজের রাগটাকে চেপে নর্মাল হয়ে বলল : সে ওর মেশানো ঠিক হয়নি , কিন্তু ও সেন্সলেস হয়ে গেছে ৷ ভাইয়া ওর ড্রেসটা চেঞ্জ করে দিয়েছে , বলে হাসি টাকে আটকে রাখার চেষ্টা করলো তবুও যেন বারবার ব্যর্থ হচ্ছে….
কথাটা শুনে রাইসা যেন আরো তিনগুণ হাইপার হয়ে গেল , কোনভাবেই আরিসের সঙ্গে আরূকে ও সহ্য করতে পারে না সেই ছোটবেলা থেকে,,,,
রাইসা : আমি এক্ষুনি যাব আরিশের কাছে , ওই মেয়ের কাছ থেকে নিয়ে আসবো আরিশকে ৷ আমি এক মুহূর্তও আরিশকে ওর কাছে রাখবো না ৷ আজকে আমার সাথে এরকম করেছে , না জানি অন্য দিন আরিস এর সাথে কি করে !
সানা মনে মনে: ও আরিশ ভাইয়া কে কেন , কাউকে কখনো কিছু করবে না , তোমাকেও কিছু করত না কিন্তু সকালে তুমি ওর সঙ্গে যে ব্যবহারটা করেছো তার কারনে এটা তোমার পাওনা ছিল রাইসা আপু৷
রাইসা যেই যেতে যাবে তখনই সানা ওর হাতটা ধরলো, যে করেই হোক ওদের এত সুন্দর মুহূর্তটাকে কেবলমাত্র রাইসার জন্য নষ্ট হতে দিতে পারেনা ও কখনোই ৷ এমনিতেই ওদের দুজনের মধ্যে এই কদিনের যা হয়েছে তাতে আরুর অসুস্থতায় যেন আরিশ এর ভালোবাসাটা আরো বেড়ে গেছে আর সব পিক হয়ে যাচ্ছে ক্রমশ ৷ এই সব কথাগুলো মনে মনে ভাবছে সানা ৷
রাইসা : কি হলো তুই আমাকে আটকাচ্ছিস কেন?
সানা : আপু তুমি এখন যেও না, ওরা নিজেদের মধ্যে প্রাইভেট কিছু সময় কাটাচ্ছে তাই আমার মনে হয় না তোমার এখন যাওয়াটা ঠিক হবে ৷
রাইসার রাগ তো এবার সপ্তম আসমানে ছাড়িয়ে গেল৷
রাইসা : আরিশ শুধু আমার , শুধু আমার আর কারো নয় ৷
❤
আরুকে জড়িয়ে ধরে শুয়ে আছে আরিশ ,ঘুম অনেকক্ষণ আগেই ভেঙ্গে গেছে , উঠছে না কেবলমাত্র আরুশির কারণে ৷ আরুশি বাচ্চাদের মত গুটিসুটি হয়ে ওর বুকের মাঝে ঘুমিয়ে আছে , এখন বিছানা ছেড়ে উঠে গেলে আরুশি জেগে যাবে তাই এখন আরুশিকে জাগানো ঠিক হবে না তাই উঠতেও পারছেনা আরিশ ৷
সকালের ঘটনা পরিপ্রেক্ষিতে আরু যে এমনকিছু ঘটাবে সেটা হয়তো আরিশ কল্পনাও করেনি ৷ কথাটা ভেবে খুব হাসি পেল আরিশের কারণ এমন বাচ্চাদের মত কাজগুলো আরুশির দ্বারাই সম্ভব ৷মেয়েটা এখনো বড়ো হলো না ৷ কপালে ভালোবাশার একটা পরশ একে অনেকক্ষন আরুশির দিকে তাকিয়ে রইল আরিশ ৷ মেয়েটাকে নিজের থেকেও বড্ড বেশি ভালোবাসে আরিশ , ওর কেউ কখনো ক্ষতি করার চেষ্টা করলে তাকে আরিশ ছাড়বে না ৷
❤
গুটি গুটি পায়ে অনিকা খানের রুমের সামনে গিয়ে দাঁড়াল আরূ, সরাসরি রুমে ঢোকার সাহস পাচ্ছে না ৷ দরজার পাশে দাঁড়িয়ে উঁকি মারছে , রাত 11 টা প্রায়, আরিশ ওকে জড়িয়ে ঘুমিয়ে ছিল , আরশকে ছাড়িয়ে কোনক্রমে ওনাদের রুমে এসেছে আরু ক্ষমা চাওয়ার জন্য ৷ আফজাল সাহেবের রুমে আছেন তবে ওনাকে খেয়াল করেননি আরুশী….
আরুশী আর একবার উঁকি মারতেই আফজাল সাহেব পেপার পড়তে পড়তে হেসে ফেললেন ৷ওনাকে হাসতে দেখে অনিকা খান অবাক হয়ে বললেন : পেপারে কি কোন সুন্দরী মেয়ের ছবি দিয়েছে যে তাকে দেখে তোমাকে হাসতে হবে , নাকি আবার নতুন করে বিয়ে করার শখ জেগেছে , কোনটা ?
শ্বশুর-শাশুড়ির এমন প্রেমের কথোপকথন শুনে আরুশির নিজেরও বেশ খানিকটা লজ্জা লাগছে৷
আফজাল সাহেব চোখের ইশারায় অনিকা খানকে দরজার কাছে যেতে বললেন , অনিকা খান প্রথমে কিছু বুঝলেন না তবে উনার ইশারা বুঝতে পেরে দরজার কাছে গিয়ে দেখল আরুশী দাঁড়িয়ে আছে৷
অনিকা খানকে এভাবে দেখে আরুশি চমকে গেছে সঙ্গে খানিকটা লজ্জায়ও পড়ে গেছে , কারণ উনি নিশ্চয়ই জেনে গেছেন যে এতক্ষণ ধরে লুকিয়ে লুকিয়ে উনাদের প্রেমের কথোপকথন শুনছিল ও ৷
অনিকা খান আরুশিকে রুমের ভেতর নিয়ে গেলেন,,,,,
আফজাল সাহেবের সামনে কাচুমুচু মুখ করে বসে আছে আরুশি কিছুই বলছে না ভয়ে যেন কাঠ হয়ে গেছে ৷ বারবার ভাবছে যে যদি দুপুরের ঘটনার জন্য আফজাল সাহেব ওকে কিছু বলেন তাহলে !
আফজাল সাহেব গম্ভীর কণ্ঠে বলে উঠলেন : আমি যা শুনলাম তা কি ঠিক আরু মামনি ৷
আরু থর থর করে কাঁপছে, কি বলবে ও এখন ! এই ঘটনাটার কারণে আফজাল সাহেব যদি এখন ওকে বাড়ি থেকে বার করে দেয় সেই ভয় পাচ্ছে ও , আর
অনিকা খান তো আরুর কান্ড দেখে মুচকি মুচকি হাসছেন
হঠাৎ করে আফজাল সাহেব জোরে উৎফুল্লতা সঙ্গে বলে উঠলেন : এটাই তো আশা করেছিলাম মামনি তোর থেকে , কেউ তোকে অপমান করবে আর তুই তাকে এত সহজে ছেড়ে দিবি , পাল্টা জবাব দিবি না এটা জানলে আমিও খুব রেগে যেতাম ৷ কিন্তু তুই যা করেছিস একদম ঠিক করেছিস , নিজের অধিকারটা সবার আগে , কখনো নিজের অধিকার ছাড়বি না ৷
আফজাল সাহেবের কথা শুনে আরুশি ছলছল চোখে তার দিকে তাকালো ৷ আরিশের বাবা মায়ের মত একজন শ্বশুর-শাশুড়িকে পেয়ে আরু নিজেকে ধন্য মনে করে ৷ কতজন মেয়ের কপাল এমন সৌভাগ্য হয়?
মাঝে মাঝে নিজের বাবার সঙ্গে আফজাল খান কে মেলানোর চেষ্টা করতে গিয়ে আরূ যেন কখনোই মিলিয়ে উঠতে পারে না কারণ দুটি চরিত্রের মধ্যে যে বড্ড তফাৎ , কেউ নিজের সন্তানকে কাছে পেয়েও দূরে ঠেলে দেয় আবার কেউ পড়ে সন্তানকে নিজের সন্তানের মতো করে কাছে টেনে নেয় ৷
Suraiya Aayat
চলবে,,,,,,,