#তোমার_নেশায়_আসক্ত
#part:22
#Suraiya_Aayat
অন্ধকার ঘরের মধ্যে থাকা রকিং চেয়ার টেনে বসে দুলছে আরিশ , হাতে রয়েছে আরূর লেখা সেই চিঠি….
চিঠির প্রত্যেকটা লাইন ও পড়ছে আর বারবারই মুখে ফুটে উঠছে চিরচেনা সেই মিষ্টি হাসি…..
আরুর লেখা শেষের লেখা লাইনটা,,,,
______”আমার আসক্তিতে কেবলই আপনি৷ “____
কথাটা পড়তেই সামনে বিছানার উপরে শুয়ে থাকা আরুর দিকে এক পলক তাকিয়ে একটা ডেভিল হাসি দিল ৷
এখনো তো অনেক কিছুই বাকি আরুপাখি ৷ যতদিন না আগে নিজের ভালো-মন্দ বুঝতে শিখবে ততদিন আমার থেকে দূরে দূরেই থাকবে তুমি, তারপরে তোমাকে কাছে টেনে নেব তার আগে নয় ৷
চিঠিটা রেখে দিয়ে ব্যালকনিতে চলে গেল আরিশ ৷
বাইরে মৃদুমন্দ হাওয়া বইছে আর বেলকুনিতে থাকা
ছোট সাদা সাদা মরিচ বাতি গুলো জ্বলজ্বল করছে, আর ঝুলিয়ে রাখা স্টিলের স্টিকগুলো হাওয়ায় দোলা দিয়ে বারবার এক অপরূপ শব্দ সৃষ্টি করছে…..
সেখান থেকে দাঁড়িয়ে রুমের ভিতরে ঘুমন্ত আরুশির দিকে তাকাল আরিশ ৷
ঘুমের ওষুধের ডোজটা আর কিছুক্ষণ পরই কেটে যাবে সুতরাং কিছুক্ষণের মধ্যে আরোশী জেগে যাবে….
কিছুক্ষণ পর হঠাৎই হুড়মুড়িয়ে আরুশি জেগে গেল , চোখ খুলে চারিপাশে তাকিয়ে দেখতে লাগলো ও৷ এখন কোথায় আছে তা জানার জন্য বেশ কিছুক্ষণ চারিপাশটা ভালো করে পর্যবেক্ষণ করল , করার পর সবকিছু যেন আশ্চর্যজনক লাগছে ওর কাছে কারণ কিছুক্ষণ আগের ঘটনা থেকে ওর যা মনে হয়েছিল তাতে এত কিছু আশা করার কথা নয়….
নিজের আর আরিশের ভালোবাসার সেই ছোট্ট ঘরটাকে খুঁজে পেয়ে আরু জোরে জোরে কাঁদতে লাগল ৷ এই ঘরে পুনরায় পা রাখতে পারবে সেটা ও ভাবেনি, সবই যেন কল্পনার মত লাগছে ৷ চোখ থেকে অনর্গল জল গড়িয়ে পড়ছে আর তৃষ্ণার্ত চোখ দুটো বারবার আরিশকেই খুজছে ৷ বারবার মনে পড়ে যাচ্ছে কিছুক্ষণ আগে ঘটে যাওয়া সমস্ত দৃশ্য , ভয়ে বিছানাটা থেকে পা ও যেন নামতে চাইছে না , বারবার মনে হচ্ছে এখনই যেন সর্বনাশী মানুষগুলো তার সর্বনাশ করে ফেলবে…..
এই মুহূর্তে আরিশ কে দেখে চোখ দুটো জুড়াতে চায় আরুশি তাই বিছানার থেকে চারিদিকে চোখ বুলাতে লাগলো , অবশেষে রুমের মধ্যে কাউকে দেখতে না পেয়ে কাঁপা কাঁপা শরীর নিয়ে বিছানা থেকে নামল৷
একপা দুপা করে সামনে এগোচ্ছে আর বড্ড জানান দিচ্ছে প্রিয় মানুষের উপস্থিতি, আরিশ যে এই ঘরেই আছে সেটা অনুভব করতে পারছে আরূ ৷
পিছন ফিরে তাকিয়ে আরিশ কে দেখেই দৌড়ে ছুটে গেল আরিশের কাছে, তারপর আরিশকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে উন্মাদের মতো কাঁদতে লাগল আরু…..
আরু কাদতে কাদতে : আপনি আমাকে প্লিজ নিজের থেকে কখনো ছাড়াবেন না , না হলে ওরা আমাকে নিয়ে চলে যাবে ৷ সব সময় আপনার বুকের মাঝে আপনার সাথে আগলে রাখবেন আমাকে , আমি আপনাকে খুব ভালোবাসি প্লিজ আমাকে দূরে সরাবেন না….
আরু: কখনো আপনাকে ছেড়ে যাব না, কখনো অন্যের কথা বিশ্বাস করব না , আপনি যা বলবেন তাই শুনে চলব , আপনার কথার অবাধ্য হবো না ,আপনি যা বলবেন তাই শুনবো কিন্তু প্লিজ আমাকে নিজের থেকে আমাকে দূরে সরিয়ে দেবেন না….
আরুশি আরিশ কে জড়িয়ে ধরে কেঁদেই চলেছে কিন্তু আরিশ কোন রেসপন্স করছে না….
আরিশ একটা ডেভিল মার্কা হাসি দিয়ে নিজের শরীরটাকে আরুশির হাতের বাঁধন থেকে মুক্ত করল৷ আরুশির হাতদুটোকে ছাড়িয়ে আরুশির মুখোমুখি হলো আরিস ৷
আরিশ আরূর দিকে ফিরে বলতে শুরু করল : আরুশি রহমান আর ইউ ম্যাড?আপনি কি মেন্টালি সিক…. এভাবে হঠাৎ করে আমাকে জড়িয়ে ধরলেন কেন? আর আপনি সকালেই বলছেন যে আপনি আমাকে ভালোবাসেন না, আর এখন বলছেন ভালোবাসি , এটা কি খুবই হাস্যকর বলে মনে হচ্ছে না আপনার কাছে?
আরূ যেন আরিশ এর প্রত্যেকটা কথায় মুহূর্তে মুহূর্তে অবাক হচ্ছে ৷ এই প্রথমবার আরিশ আরূর নাম ধরে ডাকলো , এর আগে কখনো আরুশি বলে ডাকতে শোনেনি , তার ওপর আরিশের অদ্ভুত ব্যবহার ওকে আরো চমকে দিচ্ছে ৷
আরুশি আরিশের দু গালে হাত রেখে: আপনি কীসব বলছেন ? আর আপনি আমার নাম ধরে ডাকছেন কেন ? আমি তো আপনার আরুপাখি!
আরিশ: লাইক সিরিয়াসলি ! সকালবেলায় তো বললেন যে আমাকে ভালোবাসেন না , আমার প্রতি আপনার ভালোবাসা মিথ্যা , আমার ভালোবাসাকে অপমান করেছো তুমি , তাহলে এখন হঠাৎ কি হল? তোমার বাবা আর তোমার প্রাণপ্রিয় অভ্র কি তোমাকে স্থান দেয়নি একটুকুও…..
আরিশ ওদের নাম বলতেই আরূ জোরে চেচিয়ে উঠলো,,,,
আরোশী : আপনি ওদের নাম বলবেন না , আমি ওই দুটো মানুষকে বড্ড বেশি ঘৃণা করি , আর উনি আমার বাবা নই উনি একজন অমানুষ , বলে মেঝেতে বসে কাঁদতে লাগল জোরে জোরে…
(বিঃদ্র: আরুশির বাবার সত্্যতা আরুর অজানা,অর্থাত ও যে ওনার মেয়ে নয় ৷)
আরুশির চোখের প্রতি ফোঁটা জল যেন আরিশের বুকে ছুরির মতো এসে বিধছে তাও এই মুহূর্তে নরম হলে চলবে না , সত্যিটার মুখোমুখি আরুশিকে হতেই হবে , বাস্তবটাকে মানতে হবে, চিনতে হবে সবাইকে ৷ তাই এখন এই মুহুর্তে আরিশকে কঠোর থেকে কঠোরতম হতে হবে ৷
আরিস: বুঝেছি , ওখানে আপনার জায়গা হয়নি বলে আপনি এখানে এসেছেন তাই তো ! আচ্ছা আপনাকে আমি থাকতে দিতে পারি তবে এখানে থাকতে হলে আমার থেকে দূরত্ব বজায় রেখেই থাকবেন বলে আরুশিকে উপেক্ষা করে রুম থেকে বেরিয়ে গেল আরিশ ৷
রুম থেকে বেরিয়ে আসতেই আরিশ একটা দীর্ঘশ্বাস নিল ৷ বুকে পাথর চাপা দিয়ে কথাগুলো বলেছে ও , কঠোর নাহলে কখনোই এসমস্ত কথাগুলো ও আরুশিকে বলতে পারত না….
আরু মেঝেতে বসে ক্রমাগত কান্না করেই চলেছে , জীবন ওকে অনেক কিছু শিখিয়ে দিয়ে গেছে এখন যেন ঠিক ভুলের মধ্যে পার্থক্য বুঝতে পারছে, মানুষগুলোর আসল রূপ জানতে পেরেছে , কে ওর আপনজন আর কে পর এ সমস্ত কিছুই আজ বড্ড চেনা চেনা বলে মনে হচ্ছে কিন্তু এত কিছুর মধ্যে ওর আগের আরিশকে হারিয়ে ফেলেছে….
শাওয়ারের নিচে দাঁড়িয়ে অনেকক্ষণ ধরে কেঁদেছে আরূ, নিজের জীবনের করা ভুল গুলো কিভাবে শুধরে নেওয়া যায় তারই হিসাব হিসাব নিকাশ কষেছে, আরিশকে আবার কিভাবে ফিরে পাবে এই সমস্ত কিছু ভাবছে ৷ অনেকক্ষণ পর শাওয়ার নিয়ে বেরিয়ে আসলো ও ….
বেরিয়ে আসতে দেখল আরিশ ল্যাপটপ নিয়ে বসে বসে কোন কাজ করছে….
আরোশী ঠিক করে নিল যে করেই হোক আরিস কে ও মনিয়েই ছাড়বে ৷ হাতে থাকা টাওয়ালটা বিছানায় ছুড়ে ফেলে দিল আরিশকে দেখিয়ে ৷ আরিশ একপলক ফিরে তাকালো কোন গুরুত্ব না দিয়ে আবার ল্যাপটপের দিকে মন দিল….
মাথাটা না মুছে ভিজেমাথায় আরিশের পাশে বসে পড়ল আরুশি যতে টাওয়াল টা নিয়ে আরিশ ওর মাথাটা মুছিয়ে দেয় , কিন্তু ওর সব plan .এ জল ঢেলে দিয়ে আরিশ ল্যাপটপটা নিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে গেল ,বেরিয়ে যাওয়ার আগে বলল : এসব আমাকে দেখিয়ে কিছু হবে না তোমার অভ্রকে দেখাও ৷
আরিশ এর বল কথাটায় যেন বড্ড কষ্ট পেয়েছে আরু৷ আরিশ চলে যেতেই আবার কান্না শুরু করে দিল, কিন্তু পরক্ষনেই ভাবল ওকে কাঁদলে চলবে না আরিশকে ওকে ফিরে পেতেই হবে কিন্তু তার আগে ওর বাবার আর আভ্রের একটা ব্যবস্থা করা দরকার….
❤
সবাই খেতে বসেছে আরিশের মা সবাইকে খেতে দিচ্ছেন , আরুশি কে ও বসতে বলেছে কিন্তু আরু বসেনি চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে আরিশের মায়ের পাশে…..
অনিকা খান : কিরে মামনি বস , সবাই খেতে বসেছে তুইও বসে যা ৷
আরিশ ওর মায়ের কথা শুনে একবার আরূর দিকে তাকালো…..
আরুশি : না মামনি আমি পরে তোমার সাথে খেতে বসছি ৷
অনিকা খান অনেকবার বলার পরেও আরু বসলো না ,তাই উনি না পেরে বাধ্য হয়ে ওদের তিনজনকে খেতে দিলেন ৷
আরোশী লক্ষ্য করলো সানা ও বেশ চুপচাপ ওর সাথে, কথা বলছে না ৷ তাহলে কি সকলেই জানে বাড়িতে ওর কথা, তাই কি সবা ওর উপরে রাগ করেছে!
অনিকা খান : আরিশ কালকে রাইসা আর তোর খালাম্মার আসবেন ৷
আরিশ খেতে খেতে : আচ্ছা,তা আমাকে কখন এয়ারপোর্ট আনতে যেতে হবে?
আফজাল সাহেব : সকাল সাড়ে নটায় ওদের বাংলাদেশের টেক অফ করবে তুই একটু দেখ কখন তোর বেরোনো উচিত সেই অনুযায়ী বেরিয়ে যাস ৷
আরিশ : ওকে ৷ এই বলে আরও আর কিছুক্ষণ পরে খেয়ে আরিশ উঠে চলে গেল ,আরুশিকে একবারও খাওয়ার কথা বলল না….
আরুশির খুব কষ্ট হচ্ছে কিন্তু কিছু বলার নেই যেহেতু ভুলটা ওর নিজের ই….
আরূশি চুপচাপ আনমনা হয় সুইমিংপুলের পাশে বসে আছে, বড্ড একা একা লাগছে আজকে ওর নিজেকে৷
হঠাৎ কাঁধে কারোর হাতের স্পর্শ পেতেই ভাবল আরিশ এসেছে তাই আনন্দের সঙ্গে ঘুরে তাকাতেই দেখলো অনিকা খান , উনি তারপর আরুশির পাশে বসলেন….
অনিকা খান আরূর পাশে বসে গম্ভীর কণ্ঠে বললেন: কি দরকার ছিল এতকিছু করার ? আমার ছেলেটাকে তো বলতে পারতিস না কি ! বিশ্বাস করিস না ওকে? জানিস তো ও তোকে কতটা ভালোবাসে ! তোর কথাতে ও কতটা কষ্ট পেয়েছে বুঝতে পারছিস? ওমন না বললে আমার ছেলেটা কখনো তোর সাথে এমন ব্যবহার করার মতো মানুষই নয় ৷ বড্ড কষ্ট দিয়ে ফেলেছিস আমার ছেলেটাকে ৷
❤
সকালে,,,,
আরু বেরিয়ে পরপরই আরিশ নীচে নামল,,,,,,,
অনিকা খান: আরু মামনি কোথায়ম বেরিয়ে গেল কাউকে কিছু না বলে ?আর তুই এখন কোথায় যাচ্ছিস?
আরিশ এরপর সবঘটনা ওর মাকে খুলে বলল,,,,,,
অনিকা খান: ছিঃ একটা বাবা হয়ে এতটা নীচু মানসিকতার মানুষ কেউ কী করে হতে পারে !
আরিশ: আমার বোকা বউটা যদি এসব বুঝতো ৷.
অনিকা খান: আমার খুব চিন্তা হচ্ছে মেয়েটার জন্য, ওর কোনো বিপদ হবে নাতো!
আরিশ: যতক্ষণ আমিও সঙ্গে আছি ওর কোন বিপদ হতে দেব না , আর ও যেখানেই যাক না কেন ফিরে ওকে আমার কাছে আসতেই হবে ৷ চিন্তা করো না শুধু তুমি আমাকে একটু সাপোর্ট করো ৷ ওকে এটুকু শিক্ষা দেওয়া বড্ড দরকার৷
অনিকা খান: মেয়েটা বড্ড অবুঝ , আবার কষ্ট পাবে খামোখা ৷ মেয়েটাকে আর কষ্ট দিস না তুই ৷
আরিশ বাঁকা চোখে তাকিয়ে : তোমার বৌমা কি জাদু করেছে তোমার ওপর!🙄
অনিকা খান আরিশের কান ধরে : আর বেশি পাকামো করতে হবে না , তাড়াতাড়ি মেয়েটাকে ফিরিয়ে নিয়ে আয় ৷ যতক্ষণ না বাড়ি তোরা বাড়ি ফিরছিস ততখন কিন্তু আমার মনটা অস্থির অস্থির করবে বলে দিলাম ৷
আরিশ ওর মায়ের কপালে চুমু দিয়ে : আচ্ছা ঠিক আছে আমি আসছি এখন ৷
অনিকা খান: সাবধানে ফিরিস ৷
অনিকা খান সবটাই জানেন , তাই আপাতত আরিশ ওনাকে যা যা করতে বলেছেন উনিও তাই অক্ষরে অক্ষরে পালন করছেন ৷
আরুশি নিজেকে আর আটকে রাখতে পারল না, না পেরে অনিকা খানকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে ফেলল ৷
আরোশী : বিশ্বাস করো মামনি আমি যদি জানতাম আমার বাবা নামক ওই লোকটা আমার সঙ্গে এরকম ব্যবহার করবে তাহলে আমি কখনোই ওনার কথা বিশ্বাস করতাম না ৷ আর আমি উনাকে বলতে ভয় পেয়েছিলাম বলে আবারো কাঁদতে লাগলো ৷
অনিকা খান : বিশ্বাস যখন তুই ভেঙেছিস তাই জোড়া লাগানোর দায়িত্বটাও তোর, এখন আমার ছেলেকে যদি আবার ফিরে পেতে চাস তাহলে ওকে মানানোর চেষ্টা কর….
{এতসব কি করে হলো পরে বলব}
চলবে,,,,,
#তোমার_নেশায়_আসক্ত
#part:23
#Suraiya_Aayat
পুল থেকে অনিকা খান যেতেই রুমে আরুশি কিছুক্ষণ সেখানেই বসে থাকল , অনেক কিছুর হিসাব-নিকাশ করছে ও , সব কিছু বোঝার চেষ্টা করছে , সকল মানুষদের আসল রূপটা ওর সামনে প্রকাশ পেয়েছে৷
আরিশকে বড্ড কষ্ট দিয়ে ফেলেছে আর তা দূর করার দায়িত্বটা সম্পূর্ণ ওর , তাই যা করার ওকেই করতে হবে….
তাড়াতাড়ি করে রুমের সামনে গিয়ে গুটি গুটি পায়ে রুমের ভিতরে ঢুকতেই দেখলো রুমের লাইট অফ….
ঘরের ভিতরে জ্বলতে থাকা ছোট্ট ডিমলাইটের আলোতে আলোকিত হয়ে যাচ্ছে সব ৷ আরিশ ঘুমিয়ে আছে তা বোঝা যাচ্ছে , ধীরে ধীরে গিয়ে ওর পাশে শুয়ে পড়ল আরু….
ও ভেবেছিল যে আরিশ হয়তো ওকে কাছে টেনে নেবে কিন্তু তা হয়নি ৷ ও আরিশের পাশে ঘুমালেও আরিশ একবারও ওর দিকে ফিরেও তাকাল না….
অনেকক্ষণ ধরে অপেক্ষা করতে লাগলো আরূ কিন্তু তাও কিছু হচ্ছে না দেখে নিজেই আরিশের দিকে সরে গেল…
সরে আসতে আসতে একেবারে আরিসের গা ঘেঁষে শুয়ে পড়েছে ও ৷
আরিশ এতক্ষন ঘুমিয়ে থাকার ভান করছিল, আসলে আরুশির জন্যই এতখন অপেক্ষা করছিল ও , আর তখন ওর মায়ের সঙ্গে যে আরুশি কথা বলেছিল তার সব কিছুই জানে আরিশ ৷
আরিশ এবার ইচ্ছে করে আরুর উল্টো দিকে ফিরে গেল…..
আরু আরিশের দিকে তাকিয়ে অবাক হয়ে গেছে কারন আরিশ উল্টোদিকে ফিরে গেছে ৷ না পেরে আরু কিছুটা আরিশের দিকে সরে যেতেই
আরিশ খাট থেকে পড়ে গেল ৷
আরিশ ঘুম থেকে জেগে উঠার ভান করে: আমাকে শান্তিতে ঘুমাতেও দেবেন না নাকি !
আরুশি ঠিক বুঝতে পারল না যে সামান্য একটু সরে যাওয়ায় আরিশ কি করে পড়ে গেল ? পড়ার তো কথা নয় ৷ আসলে আরিশ ইচ্ছা করেই পড়ে গেছে নিজে নিজেই ৷
আরুশি থতমত খেয়ে বলল : বিশ্বাস করুন আমি আপনাকে ফেলিনি ৷
আরিশ : তাহলে তোমার কি মনে আমি নিজে ইচ্ছা করে পড়ে গেছি নাকি?
আরিশ: বুঝেছি তোমার ধান্দা ভালো নয় , আমি আর তোমার পাশে শোবো না ৷
আরু অবাক হয়ে : কেন আপনি আমার পাশে শোবেন না কেন?
আরিশ: দ্বিতীয়বার খাট থেকে পড়ে যাওয়ার রিস্ক আমি নিতে চাই না , আর তোমার উপর আমার ভরসা নেই তাই তুমি সোফাতে ঘুমাবে ৷
আরুর সোফাতে ঘুমানোর ইচ্ছা ছিলনা , আরিশ অনেকটা জোর করেই পাঠিয়েছ ওকে না হলে আরিশ ওকে বলেছিল ঘর যে থেকে বেরিয়ে গিয়ে গেষ্টরুমে গিয়ে ঘুমাতে , কিন্তু সেটা তো আরু কখনোই হতে দেবে না , তাই বাধ্য হয়ে সোফাতেই ঘুমিয়ে পড়ল আরু ৷
আরুসি সোফাতে বারবার এপাশ ওপাশ করছে কোন ভাবে ঘুম আসছেনা , আর এদিকে আরিশ মুচকি মুচকি হাসছে আরুর কান্ড দেখে…
সকালে,,,,,
আরিশ জোরে চেচিয়ে বলতে লাগল : এই যে আপনি আমার পাশে শুয়ে আছেন কেন ? আপনাকে না আমি সোফায় শুতে বলেছিলাম ? আপনি আবার এখানে চলে এসেছেন আমার কাছে ! কেন?
আরুশি আরিসের চেঁচামেচিতে উঠে গেল , তারপরে উঠে নিজেকে আরিশের বিছানায় আবিষ্কার করল আর আরিশ সেই নিয়ে রামায়ণ মহাভারত রচনা করছে আরু দেখতে পেল…
আরোশী : সত্যি তো আমি এখানে এলাম কি করে, আমিতো সোফাতে ঘুমাচ্ছিলাম !
আরিশ : আপনার কোন ভরসা নেই , আপনি শুধু আমার সাথে সাথে ঘোরার জন্য ছঠফঠ করেন ,আর এখন নিজেই দোষ আমাকে দিচ্ছেন ৷
আরোশী অবাক হয়ে বিছানা থেকে নামল তারপর বললো : দেখুন আপনার কোথাও ভুল হচ্ছে, আর আমার রাত্রে জেগে হাঁটার অভ্যাস নেই যে আমি হেঁটে হেঁটে আপনার পাশে ঘুমাতে চলে আসব , আমি সত্যিই জানি না আমি এখানে কি করে এলাম ৷
আরিশ: আপনার মতিগতি ভাল নয় , আমার প্রথমেই আপনাকে দেখে সন্দেহ হয়েছিল যে আপনি আবার আপনার ভালোবাসার মানুষের কাছ থেকে আবার আমার কাছে কেন ফিরে এসেছেন তা নিয়ে !
আরুশির এবার অভ্রের কথা শুধতেই মাথা গরম হয়ে গেল , একে সকাল সকাল আরিশ এসব শুরু করে দিয়েছে আর তার ওপর অভ্রের নাম জপ ৷ আর এদিকে আরিশ ক্রমাগত আরুশিকে দোষ দিয়েই যাচ্ছে তাই আরুশি আর না পেরে তাড়াতাড়ি আরিশের কাছে গিয়ে আরিশের পিছনের চুলগুলো মুঠি করে ধরে নিজের কাছে এনে নিজের ঠোঁটের সাথে আরিশের ঠোঁট দুটো মিলিয়ে দিল ৷
আরিশ অবাক হয়নি কারন এরকম একটা চমক আরুশির কাছ থেকে আগেও একবার পেয়েছিল তাই আরোশী যে এরকম কিছু করতে পারে সেটা ও জানে….
তবে সময়টাকে বেশ ভালোই উপভোগ করছে আরিশ৷ আরুশির সাথে নিজেও রেস্পন্স করছে ৷দিনের শুরুতে এমন একটা ভালোবাসার পরশ আর দিন শেষে এরকম একটা ভালোবাসার পরশ পেয়ে ও সময়টাকে শেষ করতে চাই….
হঠাৎ আরুশির মাথায় একটা দুষ্ট বুদ্ধি এল তাই যখন আরিশকে ছেড়ে দেবে তার আগে আরিসের ঠোটে জোরে একটা কামড় দিল , এতদিন কেবল আরিশ দিয়েছে আর আজকে ওর আরিশের প্রতি এক প্রকার রিভেঞ্জ নেওয়া হয়ে গেল….
আরুশি ঠোটে কামড়ে দিতেই আরিশ ব্যাথা পেলেও তা প্রকাশ করল না বরং উল্টো আরুকে নিজের কাছে টেনে নিয়ে ঠোঁটদুটোকে আরো শক্ত করে চেপে ধরল৷ আরুশির একটা কামড় দেওয়ার পর আরিশ যে এরকম একটা ব্যবহার করবে সেটা ও ভাবেনি…
ডাইনিং টেবিলে বসে আছে আরূ আর মুখে একরাশ চিন্তার ছাপ তার কারণ আজকে সকালে ও জানতে পারল যে বাড়িতে নাকি নতুন গেস্ট আসবে না আর সেটা হল আরিসের খালাম্মা আর তার মেয়ে ৷ তার মেয়েটা হল তার ননদ , আর ননদরা যে অত্যন্ত একটা ডেঞ্জারেস জাতীয় বস্তু সেটা আরূ খুব ভাল করেই জানে , ও নিজের ফুপ্পি কে দেখেই বুঝেছে ৷
আরুশির ফুপি যখনই ওদের বাড়িতে আসেন তখন সারাদিন আরুশির মাকে খাটান, আর দোষ-গুণের বিচার করতে থাকেন, আরশির মা মুখ ফুটে কখনো তার প্রতিবাদ করেন না সব কিছু অন্যায় ভাবে সহ্য করে নেয় ৷ তাহলে এখন কি এই সমস্ত ঘটনার সাথে আরূশিকেও মুখোমুখি হতে হবে, এমন হাজারো প্রশ্ন ওর মাথায় ঘুরছে ৷
আরিশের মা রান্নাঘর থেকে আরুশিকে ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করছেন , একটা অদ্ভুত চিন্তা হচ্ছে আরূর সেটা উনি বেশ ভালই বুঝতে পারছেন, তবে এই মুহূর্তে আরুশিকে সাপোর্ট করতে পারছেন না উনি তাহলে মেয়েটাকে শিক্ষা দেওয়া যাবে না ৷ উনিও সবকিছু চান যে সবকিছু থেকে আরু শিক্ষা নিক তাহলে ভবিষ্যতে যেন কখনো এ ধরনের ভুল কাজগুলো না করে, আর নিজের ছেলেমেয়েকেও সেই শিক্ষা দিতে পারে যাতে তারা সঠিক দিকে চালিত হয়….
সানা সিঁড়ি দিয়ে নামছে আর ফোনের দিকে তাকিয়ে হাসছে তা দেখে আরুশির আর বুঝতে অসুবিধা হলো না যে আরাভকে নিয়ে কিছু একটা ভাবছো…
সানাকে এখন প্রায় দিনই খুব খুশি খুশি দেখায় ৷ সেই দিনের পর থেকে সানা আরূর সঙ্গে ভালো করে কথা বলছে না সেটা আরু বেশ ভালই লক্ষ্য করেছে ৷ ওর খুব কষ্ট হচ্ছে সানা ওর সঙ্গে কথা বলছে না তাই ৷সেই কলেজ লাইফ থেকে সানাকে নিজের বেস্ট ফ্রেন্ড ভাবে , আজ একটা ছোট্ট ভুলের জন্য এত বড় শাস্তি দিচ্ছে ওকে ৷
সানা একবার আড়চোখে তাকিয়ে দেখে নিল ডাইনিং টেবিলে বসে আছে আরূ তাই আরুশিকে দেখিয়ে সোফাতে গিয়ে বসলো সানা…
আরুশিও এবারে ধির পায়ে হেটে হেটে সানার কাছে গিয়ে ওর পাশে বসে পড়ল ৷
আরোশী বসতেই সোনা কিছুটা সরে গেল ৷
তারপর আবার আরুশি সানার দিকে খানিকটা সরে গেল তাতে সোনা আর একটু দূরে সরে যেতে আরুশির খুব রাগ হয়ে গেল ৷
সানার হাত ধরে টেনে নিয়ে ওর কাছে বসলো আরু ৷
আরু: আমার থেকে এভাবে দূরে দূরে বসছিস কেন ? আমি কি মানুষ না নাকি হ্যাঁ ? আমি একটা ভুল করেছি বলে তোরা সবাই এরকম ব্যবহার করবি আমার সাথে ? আরুর চোখে জল চলে এসেছে প্রায়, ও খুব ইমোশনাল আবেগটাকে প্রাধান্য দিয়ে চলে…
সানা আর যাই হোক আরুর কষ্টটাকে সহ্য করতে পারে না তাই সামান্য কিছুটা নরম হয়ে আরুশিকে বললো : এভাবে কান্নার কি আছে , আমি কি তোকে কিছু বলেছি?
আরোশী এবার কান্না কান্না করে দিয়ে: আমি কালকে থেকে দেখছি তুই আমার সঙ্গে কথা বলছিস না ৷ মানছি আমি একটা ভুল করেছি তার জন্য কি আমাকে ক্ষমা করা যায় না!
সানা কিছু একটা ভেবে বলল : আচ্ছা যা তোকে ক্ষমা করে দিলাম এবার তোমার হাত ছাড় ৷
আরোশী সানাকে জড়িয়ে ধরে বলল : আমি তোকে ছাড়বোনা , আমি জানি তুই আমাকে এখনো ক্ষমা করিস নি ৷
সানা মনে মনে : এই মেয়েটা দেখছি আমাকে মেরেই ছাড়বে , ও কি জানে না যে আমি ওর উপরে রাগ করে থাকতে পারি না ৷
সানা: আমি বলছিতো আমি রেগে নেই, এবার তো ছাড় ৷ অবশেষে অনেক বলার পর আরু ছেড়ে দিল৷
কিছুক্ষণ পর আর নিজের কৌতুহল চেপে রাখতে না পেরে আরু সানাকে জিজ্ঞাসা করল :
আরোশী কিন্তু কিন্তু করে: যারা আসছে মানে উনার খালাম্মা আর বোন , ওরা কি ভালো নাকি টিভি সিরিয়ালে যেমনটা হয় তেমনি?
আরুশির কথা শুনে সানার খুব হাসি পাচ্ছে , তারপর সামান্য একটু থেমে বলল : ওনারা কেমন আসলেই তুই বুঝতে পারবি কিন্তু একটা কথা শুনে রাখ ভাইয়াকে একটু রাইসা আপুর থেকে দূরে দূরে রাখিস৷ রাইসা আপু ভাইয়াকে খুব পছন্দ করে আর ভাইয়াকে বিয়ে করার জন্য উঠে পড়ে লেগেছে , আর এখন ভাইয়ের সঙ্গে তোর ঝামেলা চলছে তাই কিছু বলা যায় না ভাইয়া ওকেও বিয়ে করে নিতে পারে ৷ আরুশিকে শুনিয়ে শুনিয়ে বলল ৷
আরোশী শুনেই যেন চমকে উঠল , কারন ও ভেবেছিল অন্যরকম বিপদ কিন্তু এখন দেখছে তো সম্পূর্ণ আলাদা কেস ৷ এখন ও সব কি করে ঠিক করবে তা নিয়ে একপ্রকার চিন্তায় পড়ে গেছে ৷ আর যদি সত্যি রাইসাকে বিয়ে করে নে আরু কে ডিভোর্স দিয়ে দেয় আরিশ তখন ! তা কিছুতেই হতে দেবে না ও, আরিশকে কোন ভাবেই ছাড়বে না ও …..
❤
অনেকক্ষণ হয়ে গেছে আরিশ এয়ারপোর্টে দাঁড়িয়ে রয়েছে, সাড়ে নটায় ওদের আসার কথা ছিল এখন দশটা বাজে , ফ্লাইট যে আধ ঘণ্টা লেট করেছে তার খবরটা আগেই পেয়েছিল আরিস ৷
বিরক্তি লাগছে প্রচন্ড তবে সকালবেলা আরুশির সাথে অত সুন্দর একটা মুহূর্ত কাটিয়ে এখন বেশ ভালই লাগছে, হাজারো বিরক্তি র মাঝেও বারবার আরুশির কথাই মনে পড়তেই আরিশের , অদ্ভুত এক ভালো লাগা সৃষ্টি হচ্ছে ৷ মাঝে মাঝে মুচকি হাসছে ৷
হঠাৎ করে দূর থেকে কেউ দৌড়ে এসে যেন আরিশের উপর ঝাপিয়ে পড়ল এমনই একটা কিছু অনুভূত হলো আরিস এর….
বুঝতে অসুবিধা হলো না যে রাইসার কাজ…
আরিশের গলা জরিয়ে ধরল রাইসা ৷
রাইসা : কতদিন পরে তোকে দেখলাম , জানিস আমি এখানে আসার জন্য কত এক্সাইটেড , কত প্ল্যান আছে ৷সবথেকে খুশি হয়েছি তোকে পেয়ে ৷
আরিশের খালাম্মা দূর থেকে হাসতে হাসতে বললেন : কেমন আছিস আরিশ?
আরিশ নিজেকে রাইসার থেকে ছাড়িয়ে বলল : এইতো ভালো আছি , তুমি কেমন আছো?
উনি আরিশের কপালে একটা ভালোবাসার পরশ দিয়ে বললেন : আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি, এখন সবকিছু ঠিকঠাক ব্যবস্থা করে সবাই সুখী হলে আমিও খুশি ৷
আরিশ বুঝতে পারল যে উনি কি বুঝাতে চাইছেন তাই একটু গলা ঝেড়ে কেশে বলল: দেরি হয়ে যাচ্ছে আমাদের, এমনিতেই তোমাদের ফ্লাইট অনেক লেট করেছে ,আম্মু অপেক্ষা করছে তোমাদের জন্য চিন্তা করবে তাড়াতাড়ি চলো ৷
বলে গাড়িতে উঠে পড়ল ৷
চলবে,,,,,,