তোমার নেশায় আসক্ত পর্ব-২০+২১

0
2647

#তোমার_নেশায়_আসক্ত
#part:20
#Suraiya_Aayat

আর দুইদিন পরে আরিশ এর ফাইনাল এক্সাম খুব জোরালো প্রস্তুতি নিচ্ছে যতই হোক সবাই ওর থেকে অনেক বেশি এক্সপেক্ট করে আর সেই অনুযায়ী ফলাফল না হলে নিজেকে কখনো ক্ষমা করতে পারবে না আরিশ ৷ তাছাড়া এ সঙ্গে ওর কলেজের নামও জড়িয়ে আছে ৷

সারাদিন পড়াশোনা তে খুবই ব্যস্ত থাকে আরিস আরুর সাথে ঠিকমত কথা বলার সময়ও পায়না, সকালবেলা উঠে পড়তে বসে যায় , লাঞ্চ , ব্রেকফাস্ট ডিনার করার জন্য সাধারণত রুম থেকে বের হয়৷ আরূ মাঝে মাঝে বাড়িতে টুকটাক কিছু কাজ করে ওর শাশুড়ি মায়ের সঙ্গে ৷ আরিশের সঙ্গে খুব একটা বেশি কথা হয় না বলে আজকাল নিজেকেও বড্ড বেশি একা একা মনে হয় , তাছাড়াও সানাও এখন বেশিরভাগ সময়ই আরাভের সঙ্গে গল্প করতে থাকে আর এই সবকিছুর মাঝখানে আরিশকে ছেড়ে যাওয়ার ব্যথাটা বড্ড বেশি ঝাঁঝরা করে দেয় ওর হৃদয় টাকে…..

আর কিছুক্ষণ পরেই সানা আর আরু বাইরে যাবে কিছু শপিং করতে, যদিও বা যাওয়ার উদ্দেশ্যটা সানার কারণেই ৷সানা আরাভের সঙ্গে দেখা করবে, দুজনের মধ্যে সম্পর্কের উন্নতি ঘটেছে বেশ , ততবেশি মনোমালিন্য হয় না এখন আর , দিনদিন ক্রমশ মধুর সম্পর্ক গড়ে উঠছে ওদের মধ্যে তা নিয়ে সকলেই বেশ খুশি, কিন্তু এদিকে আরিশের এই ব্যস্ততা আরিশ আর আরুর মধ্যে সামান্য হলেও দূরত্ব সৃষ্টি করেছে ৷ এখন আর দুজনের আগের মত ঠিকঠাক কথা হয়না , অবশ্য আরুও এতে রাগ করে না কারণ ও জানে এক্সাম হয়ে গেলে আরিশ আবার আগের মতোই হয়ে যাবে কিন্তু হয়তো সেই দিনের সেই ভালো সময়টা ভালোভাবে উপভোগ করতে পারবে না আরূ ৷ তবে আজকাল অভিমান নামক জিনিসটা জেন বড্ড বেশি সুযোগ পেতে চাই ৷

হাতের পাশে থাকা কফির মগটায় চুমুক দিয়ে আবার টেবিলের উপরে রাখতেই মনোযোগে ব্যাঘাত ঘটলো আরিশ এর ৷

আরু পাশে এসে দাঁড়াতেই ওকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে খপ করে হাতটা টেনে ধরে ওর কোলের উপরে বসিয়ে দিল আরিশ, আর শক্ত করে কোমরটাকে জরিয়ে ধরে রেখেছে ও ৷

আরিস: তুমি আমার উপর রাগ করেছো আরূপাখি?

আরুশি অভিমান করে: আমি আপনার উপর কেন রাগ করতে যাব!

আরিশ : আমি বুঝি আরূপাখি তোমার মনের ভাষা গুলোকে, আমার কাছে যে বড্ড স্পষ্ট তুমি আর তোমার চাওয়াপাওয়া গুলো , কখন কি অনুভব করো সবকিছুই আমি বুঝি ৷ আমি খুব প্রেসার এর মধ্যে আছি আরুপাখি আশা করি তুমি বুঝতে পারছো….

আরোশী আবার আগের মতোই চুপ করে রইলো, চোখের কোনে বিন্দু বিন্দু জল জমে আছে আরুর, আরিশ আর একটা শব্দ বললেই যেন তার বাঁধ ভেঙে গড়িয়ে পড়বে ৷

আরিস : আমার এক্সামটা হতে দাও সবকিছু আবার আগের মত হয়ে যাবে , পৃথিবীর সব ভালোবাসা আমি তোমার কাছে এনে দেবো , ভালবেসে বুকের মাঝে আগলে রাখবো তোমায় যেমনটা এখন রেখেছি ৷

আরিশের কথাগুলো শুনে আরূ আর পারল না নিজেকে আটকে রাখতে, আরিসের শার্টের কলার ধরে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদতে লাগল….

আরিশ শক্ত করে আরুশির মাথাটা নিজের বুকের সাথে চেপে ধরল ৷ আরিশের চোখের কোনেও জল জমে এসেছে ,ওর ও যে কষ্ট হচ্ছে না তা নয় বরং আরুশির থেকে হাজার গুন বেশি কষ্ট হচ্ছে….

আরিশ আরুর কপালে একটা ভালোবাসার পরশ একে নিজেকে ক্রমশ সংযত করে নিয়ে আরুকে খানিক্ষন নিজের সাথে জড়িয়ে ধরে রাখলো ৷

রিকশায় একা বসে আছে আরূ, গন্তব্য ওর নিজের বাড়ি….

সানা আর আরাভ দুজনেই একসঙ্গেই আছে আরূ নিজেও এতক্ষণ ওদের সঙ্গেই ছিল তবে দুজনের মাঝখানে থাকতে কেমন একটা অস্বস্তি লাগছিল আরুর, আর তাছাড়া সবে সবে ওদের সম্পর্কের একটা শুভ আরম্ভ হতে চলেছে তাই ওদেরকেও কিছু একান্তে সময় দেওয়া উচিত বলে আরুশি ওখান থেকে চলে এল ৷ সানা আর আরাভ যখন জিজ্ঞাসা করলো যে ও কোথায় যাচ্ছে তখন বলল যে ওর কিছু কেনাকাটা করার আছে ,তাই আরাভ আর সানা না করতে পারল না….

বুকের ভেতর টিপটিপ করছে আরুর ক্রমশ, ভয়ও লাগছে যদি আরিশ কোন ভাবে জানতে পারে তাহলে ওকে ছাড়বে না সেটা ও ভালোই জানে….
তবুও একরাশ সাহস নিয়েই যাচ্ছে ওর বাবার কাছে,এটা বলতে ওর বাবাকে যে ও আরিশকে ছাড়া থাকতে পারবেনা ৷ সিদ্ধান্ত নিতে ওর এক মিনিট ও সময় লাগেনি ৷আর এটা ওর সারা জীবনের ব্যাপার, প্রয়োজন হলে অভ্রকে বোঝানোর জন্য সমস্ত রকম ব্যবস্থা নেবে আরূ তবে আরিশ কে ছাড়তে চায় না ও ৷ এইকদিন আরিশের থেকে ওর দূরত্বটা ওর ভালোবাসাকে জানান দিয়েছে , বুঝতে পেরেছে ও ওর আরিশের প্রতি ভালোবাসা ৷ এই ভালোবাসা কে ও হারাতে চাইনা ৷

আরুর মা: আরূ মা অনেকক্ষণ হলো তুই এসেছিস চল এবার কিছু খেয়ে নিবি, আমি নিজের হাতে তোকে খাইয়ে দেবো ৷ তোকে বড্ড মিস করেছি এই কদিন এ বলে উনি কেঁদে দিলেন ৷

তখনই আরুর বাবা ধমকে বলে উঠলেন,,,,

আরমান সাহেব:ওসব খাওয়া-দাওয়া পরে হবে ,এখন এই মেয়ে কি বলছে শুনছো না ! এই মেয়ে বলছে যে ওই ছেলেটাকে নাকি ও ছাড়তে পারবে না, এটা কোন কথা হলো ! আমি অভ্রদের ফ্যামিলির সবাইকে জানিয়ে দিয়েছে যে আবার অভ্রর সাথে আরুর বিয়ে হবে ৷ এবার তো আমাকে ওরা নির্ঘাত জেলে পাঠাবে প্রতারনার দায়ে ৷ ওরা কি আমাকে ছাড়বে ?আর সে ভাবনা কি এই মেয়ের মাথায় আসেনা? জোরে জোরে চেঁচিয়ে বলতে লাগলেন ৷

আরুর বাবা ওকে ধমকা দিতেই আরু বারবার চমকে উঠছে আর বুকের ভিতরটা বারবার কেঁপে উঠছে ৷ শুধু ভাবছে যে এসমস্ত ওর সঙ্গে না ঘটলেও পারতো ৷

আরু কাঁপা কাঁপা স্বরে বলল:আমি যা চাই আমি তোমাকে তাই বলেছি বাবা !

আরমান সাহেব উচ্চস্বরে চেঁচিয়ে বললেন: তার মানে তুই আমাকে জেলের ভাত খাওয়াবি তাই তো? এটাই তো তুই চাস তাই না! তাহলে মনে রাখিস আজ থেকে তোর সাথে আমার আর এ বাড়ির কারোর কোন সম্পর্ক নেই….

কথাগুলো যেন আরুর বুকে তীরের মত এসে বিধছে৷ নিজের বাবা তার মেয়েকে এতটা জোর করছে তার মেয়ের সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন করার ৷ এগুলো ভাবতেই বুক ফেটে কান্না আসছে ওর ৷

আরুর মা কাঁদতে কাঁদতে বলল: তা বলে তুমি মেয়েটাকে এইভাবে বলবে? একটা মানুষের একটা মানুষের প্রতি ভালোবাসা হতেই পারে তাই বলে তুমি বুঝবেনা ? ও তো তোমারি মেয়ে….

কথাটা বলতেই আরমান সাহেব থামিয়ে দিলেন আরুর মাকে ৷

আরমান সাহেব: তুমি আমাদের মাঝখানে একটাও কথা বলতে আসবেনা , এখন ও যদি রাজি হয় তো ওর সাথে আমাদের সম্পর্ক থাকবে আর যদি মনে কর একটা বাইরের ছেলের জন্য আমাদের সাথে চিরতরের মত সম্পর্ক হারাবে তাহলে সেটা ওর ব্যাপার ৷

অনেকক্ষণ ধরে নিজেকে কঠোর থেকে কঠোরতম বানানোর চেষ্টা করছে আরূ যেন বাবার মুখের উপর না করে দিতে পারে ৷ কিন্তু এখন ওর বাবা যা বলছেন তা শুনে আরুশী বলল: আমি তোমার কথাতে রাজি বাবা….

আরমান সাহেব মনে মনে নিজেকে সফলতার হুঙ্কার দিচ্ছেন কারণ উনি জানতেন আরুশিকে সামান্য ইমোশনালি ব্ল্যাকমেইল করলেই ও গলে যাবে সেই জন্য এত নাটক করলেন সেই থেকে…..

কথাটা বলে আরু আর এক মুহূর্তও দাঁড়াল না, ওখান থেকে দ্রুত পায়ে হাঁটা দিল ৷

আরুর মা: মেয়েটার সর্বনাশ করে তোমার কি লাভ?

আরমান সাহেব : টাকা চাই আমার টাকা , অনেক বেশি টাকা চাই , তুমি তো জানো তাহলে কেন আমার পথে বাধা হয়ে দাড়াও ?

আরুর মা: আমি কখনো অন্যায় কে সমর্থন কখনো করিনি আর আজও করবোনা বলে ঘর থেকে বেরিয়ে গেলেন ৷

আরমান সাহেব মনে মনে বিজয়ীর হাসি দিলেন…..

ঘড়ির কাঁটা সন্ধ্যা ছটা ছুঁইছুঁই ৷ আরাভ আর সানা অনেকক্ষণ ধরেই আরুকে ফোন করার চেষ্টা করছে কিন্তু আরু কোনভাবেই ফোন ধরছেনা ৷ ওরা নিজেরাও চিন্তায় পড়ে গেছে যে আরুর কোনো বিপদে পড়ল কিনা….

সানা যখন আরেকবার আরুশিকে ফোন করতে যাবে তখনই দেখল আরুশি ধীরপায়ে মাটির দিকে তাকিয়ে অন্য মনষ্ক হয়ে এগিয়ে আসছে ওদের দিকে ৷ওকে দেখে কেমন উস্কোখুস্কো মনে হচ্ছে, সকালে যেমন প্রাণোচ্ছলতা ওর মুখে ছিল সেই প্রাণোচ্ছলতা ভাব এখন আর ওর মধ্যে নেই , চেহারায় বিসন্নতার ছাপ…

সানা আরুর কাছে ছুটে গিয়ে বলল: কিরে তুই এতক্ষণ কোথায় ছিলি আর চোখ মুখের এমন অবস্থা কেন?

আরূ ক্লান্তিমাখা স্বরে বলল : আমি বাড়ি যাব সানা, তাড়াতাড়ি চল ৷

সানা আর আরাভ আরুর অবস্থাটা বুঝতে পেরে আর বেশি কথা না বাড়িয়ে বাড়িতে চলে গেল…..

আরিশ সারাদিনে এতো ব্যস্ত ছিল যে আরুশিকে একবারও ফোন করে খোঁজ নেওয়ার সময়টুকু পায়নি, নিজেকে মনে মনে অনেক বকা দিচ্ছে যে এত কেয়ারলেস কি করে হয়ে গেল ও ৷ অনেকক্ষণ হয়ে গেল আরোশী রুমে আসলো না দেখে আরিস এবার একটু নড়েচড়ে বসল,,,,

সানার রুমে আরুশিকে খুজতে যেতেই দেখল গেস্ট রুমের দরজাটা খোলা , হঠাৎ দরজাটা খোলা তা দেখতে গিয়ে আরিশ দেখল আরোশী গুটিসুটি হয়ে এক পাশ ফিরে শুয়ে আছে ৷

দ্রুতপায়ে আরুশির কাছে গেল, যেতেই দেখল আরুশি ঘুমিয়ে আছে ৷ আরিশ এবার আরুশির কাছে গিয়ে ওর পাশে বসে মাথায় হাত বোলাতে লাগলো ৷

আরিশ : অনেক বেশি কষ্ট দিয়ে ফেলেছি আরুপাখি তবে আর বেশিদিন নয় , সব তাড়াতাড়ি ঠিক হয়ে যাবে, শুধু একটু অপেক্ষা করো , হার মেনো না সময়ের কাছে ,বিশ্বাস রাখো নিজের ওপর ৷
এই বলে আরুশিকে কোলে নিয়ে ওর নিজের রুমে চলে গেল ৷ আরুশিকে নিয়ে বিছানায় শুইয়ে দিল আরিশ৷
চোখ-মুখ বড্ড শুকনো লাগছে আরুর তাই ওয়াশরুম থেকে টাওয়েল ভিজিয়ে এনে পরম যত্নে চোখ মুখ মুছিয়ে দিলো এবং অবশেষে ঠোঁট দুটোতে হালকা করে ওর ঠোঁট দুটো ছোঁয়াল ৷ দিনশেষে এটুকু ভালোবাসা আরিশের জন্য খুবই দরকার ৷

চলবে,,,,,,,

#তোমার_নেশায়_আসক্ত
#part:21
#Suraiya_Aayat

দীর্ঘ 14 দিন পর আজকে আরিশ এর এক্সাম এর শেষ দিন ৷
এই এক্সামের কদিন আরূর সঙ্গে আরিসের দূরত্বটা বেড়েছে বরং কমেনি ৷ এতোসব কিছুর মধ্যে আরুর খেয়াল রাখতে পারেনি আরিশ , কেবলমাত্র দিন গুনছে এক্সাম শেষ হওয়ার জন্য ৷ এক্সামের দিন যত এগিয়ে এসেছে আরুর আরিশকে ছেড়ে যাওয়ার ভয়টাও ক্রমশ বেড়েছে ৷ চারিদিক থেকে ওর বাবার প্রেসার , অভ্রর প্রেসার সমস্ত কিছুতে পাগলপ্রায় অবস্থা আরুর….

আরিশের মা কিচেনে আরিশ এর জন্য ওর সমস্ত পছন্দের খাবার রান্না করছেন, আরূ ও ওনার সঙ্গে হেল্প করতে চেয়েছিল কিন্তু উনি বারণ করে দিয়েছেন তাই না পেরে আরু ঘরে চলে এসেছে….
বিছানার উপরে আনমনা হয়ে বসে আছে আরু, ঘরের মধ্যে টিভি চলছে তার আওয়াজটা ও যেন ওর কানে এসে পৌঁছাচ্ছে না….
হঠাৎ ফোনে ফোন আসতেই চমকে উঠলো, কাঁপা কাঁপা হাতে ফোনটা ধরতেই দেখল আরমান সাহেব ফোন করেছেন ৷

আরমান সাহেব : আর কতদিন সময় নিবি তুই? দেখতে দেখতে তো প্রায় 13 থেকে 14 দিন হয়ে গেল আর এদিকে অভ্রের বাড়ি থেকেও সবাই তোড়জোড় শুরু করেছে ৷ অভ্র অলরেডি কালকের টিকিট বুক করে ফেলেছে ৷ তুই কালকে ওই ছেলেকে সব বলে দিবি, আর সকালের মধ্যে যেন তোকে এই বাড়িতে দেখি ৷ সন্ধ্যে সাতটার সময় ফ্লাইট ৷

ফোনের ওপাশে আরু নিসতব্ধ ৷

আরমান সাহেব : নতুন করে যেন কোন ভুল ত্রুটি না হয় বলে আরূকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে উনি ফোনটা কেটে দিলেন….

আরুর চোখের জলটাও যেন শুকিয়ে গেছে , এই কদিন ধরে আরু নিস্তব্ধ হয়ে চোখের জল ফেলেছে ৷
দীর্ঘশ্বাস নিয়ে আলমারি থেকে ডাইরি বের করে লিখতে বসে গেল আরূ…

প্রিয়,,,,,

আপনি কি জানেন যে আপনি মানুষটা বড়ই অদ্ভুত আমার কাছে ! আপনাকে বোঝার সাধ্য টা যেমন কারো নেই ঠিক তেমনি আমারও হয়ে ওঠেনি এখনো , জানিনা সেই সুযোগ আর কখনো পাবো কি তবুও না চাইতেও বড্ড বেশি ভালোবেসে ফেলেছি আপনাকে৷

কখনো নিজের ভালোবাসাটাকে মুখে প্রকাশ না করলেও হৃদয় থেকে ভালোবাসা টা আপনার জন্যই ব্যক্ত হয় তা আপনি হয়তো জানেন ৷

যেদিন আমাকে আপনি হাত ধরে টানতে টানতে অচেনা সেই রুমটার বিছানায় নিয়ে গিয়ে ফেলেছিলেন মুখে তখন একরাশ হিংস্রতা ফুটে উঠলেও তা আমার চোখে দৃশ্যমান হয়নি ৷ অদ্ভুত এক ভালোবাসা দেখেছিলাম আপনার চোখে আমার জন্য, তখন হয়তো এতটা গুরুত্ব দিয়ে দেখি নি ব্যাপারটা কে ৷ আমারও তখন বিয়ের কিছুদিন আগে কার সময়, অভ্র কে ছাড়া কাউকে নিয়ে অতোটা ভেবে দেখিনি৷
ভার্সিটিতে আপনাকে দেখেও যে কখনো বিশেষ কোন অনুভূতি হয়েছে তাও নয় কিন্তু ভালবাসার সংজ্ঞা গুলো প্রতিটা মুহূর্তে আপনি আমাকে বোঝাতে শিখিয়েছেন…..

আপনার নেশায় বড্ড আসক্ত হয়ে পড়েছি ৷ আজ আপনার কথা গুলো বড্ড বেশী মনে করতে ইচ্ছা করছে ৷ আপনি আমাকে বলেছিলেন যে আমার অনুভূতিতে আপনি থাকবেন , আমার আসক্তিতে পরিণত হবেন আপনি, আমার হৃদয়ের মণিকোঠায় স্থান নেবেন সমস্ত টা জুড়ে , কেবল স্থান থাকবে শুধু আপনার ৷ সত্যিই আজ তাই , তবে অনুভূতিগুলো প্রকাশ এ আমি ব্যর্থ ছিলাম….

আপনাকে যেদিন একান্তে কাছে টেনে নিয়ে ছিলাম সেদিন আবেগের বশে কিনা জানিনা তবে আপনার অশ্রুমাখা চোখগুলো দেখে বুকের ভিতর চিনচিন ব্যথা অনুভব করেছিলাম, আটকে রাখতে পারি নিজেকে৷ আপন করে নিয়েছিলাম আপনাকে কষ্টের মধ্যেও অদ্ভুত এক প্রশান্তি এনে দেওয়ার জন্য ৷

আর কখনো একান্তে ভালোবাসা হবে কি জানি না, হয়তোবা হবে না তবে এটুকু জানবেন আমার সবটুকু জুড়ে শুধু আপনারই স্থান ৷ দূরে থাকলেও ভালোবাসা কমবে না কখনো ৷ শুধু বঞ্চিত হব আপনার সমস্ত স্পর্শ, আপনার আবেগ , অনুভূতি আর ভালোবাসা থেকে ,তবে সহ্য করে নেব সব ৷

আপনার এক্সামের এই কদিনে নিজেকে অনেকটাই শক্ত করে নিয়েছি ৷ জীবনের থেকে আর কিছুই বেশি আশা নেই ৷

জানেন সবথেকে অবাক হয়ে গেছিলাম যখন আমার বাবা তিনি আমাকে এতটা জোর করেছিলেন আপনার থেকে ছেড়ে দেওয়ার জন্য ৷ কোন নিজের বাবা যে সন্তানের সঙ্গে এমনটা করতে পারে সেটা নিজের চোখে না দেখলে বিশ্বাসই করতাম না কখনো ৷ তবুও ভালোই হলো এতো কিছুর মাঝেও সমস্ত কিছু জানতে আর বুঝতে শিখেছে ৷

যখন আপনি এগুলো জানবেন তখন হয়তো আমি হয়ে যাব অন্য কারোর ,তাই আর ফিরে পাওয়ার বৄথা চেষ্টা না করায় শ্রেয় ৷

আমার আসক্তিতে কেবলই আপনি….
ভালবেসে যাব প্রিয় ||

ইতি,
আপনার আরূপাখি

ডাইরি থেকে পেজটা ছিঁড়ে আলমারির মধ্যে রেখে দিল ৷ কাগজটা কালকে চলে যাওয়ার সময় রেখে যাবে….

দুপুর বেলাতে আরিশ বাড়ি আসলো না ৷ আরু ফোন করেছিল একবার তবে জানালো যে ওর দেরি হবে আসতে ৷

রাত সাড়ে আটটা,,,,,

ড্রয়িং রুমে মধ্যে বসে আছে আরু, হঠাৎই গাড়ির হর্নের আওয়াজ শুনে বুকের ভেতরটা কেঁপে উঠলো ৷ আরিশ বাড়ি এসেছে ৷ আর কিছুক্ষণ মাত্র সময় আরিসের সঙ্গে কাটাব তারপর বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে ওর থেকে ৷

আরিশ ড্রইং রুমে প্রবেশ করতেই ওর মা জিজ্ঞাসা করে উঠলো,,,,

আরিশের মা : কিরে এত দেরি হল?

আরিশ ওর মা কে জড়িয়ে ধরে বলল:
এইতো আমি চলে এসেছি, আসলে আজকে সবাই মিলে বিকালবেলা একটা ছোটখাটো পার্টি করেছিল তাই সেখানে গিয়েছিলাম…..

আরিশের মা : মেয়েটা সেই দুপুর থেকে তোর জন্য অপেক্ষা করছে কখন বাড়ি আসবি তাই এখনো খাইনি মেয়েটা ৷

আরিশের মায়ের কথা শুনে আরুর দিকে তাকাতেই দেখল আরূ মাথা নিচু করে বসে আছে , চোখ মুখ অনেক শুকনো শুকনো লাগছে….

আরূর দিকে তাকাতেই বুকের ভেতর চিনচিনে ব্যথা অনুভব করল আরিশ ৷ এই কদিনে মেয়েটা কেমন হয়ে গেছে , একেবারে যেন ঝিমিয়ে পড়েছে….

আরিশের মা: তুই রুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নে আমি তোদের দুজনের জন্য খাবার পাঠাচ্ছি…

হঠাৎ করে আরূ উঠে গিয়ে রুমের ভেতরে চলে গেল,
আরিশ ওর পিছন পিছন গেল,,,,,,

রুমের ভিতর আরুশি যেতেই আরিশ পিছনদিকে আরুশিকে জড়িয়ে ধরল ৷

আরিস: সরি আরূপাখি আমার অনেকটা লেট হয়ে গেল ৷ আসলে আমি তাড়াতাড়ি আসতে চেয়েছিলাম কিন্তু ওরা আসতে দিলনা….

আরুশি: সারা দিন অনেক ধকল গেছে,ফ্রেশ হয়ে আসুন আমি খাবার আনছি বলে আরিশ কে ছাড়িয়ে রুম থেকে বেরিয়ে গেল ৷

আরিস কোন কিছু একটা ভেবে হেসে ওয়াশ রুমে ঢুকে গেল….

রাত যতো গভীর হচ্ছে ততো আরিস আর আরু ভালোবাসায় মেতে উঠেছে ৷ ঘড়ির কাঁটা যতবারই টিকটিক করে বেজে উঠছে আর সময়টাকে জানান দিচ্ছে ততই আরুশির মনে আরিশকে হারানোর ভয়টাও তত বেড়েই চলেছে , তবে আরিসের থেকে ভালোবাসা পেয়ে যেন সমস্তটাই ভুলে যাচ্ছে আরু….

রাত সাড়ে তিনটে,,,,,,

আরিসের থেকে কোনরকম নিজেকে ছাড়িয়ে বিছানা ছেড়ে উঠলো আরোশী ৷ বিছানার চাদরটা ভালোভাবে শরীরের সাথে জড়িয়ে নিয়ে ব্যালকনিতে গিয়ে দাঁড়ালো ৷ চাঁদের আলোটা এসে সরাসরি ওর মুখে পড়েছে ৷ চাঁদের আলোতে ওর সারা শরীর আলোকিত হয়ে যাচ্ছে….

চোখ থেকে এক ফোঁটা নোনা জল গড়িয়ে পড়ল আরুশির ৷ পরিবর্তন হচ্ছে জীবনের নিয়মিত সূচি, হয়তো এরপরে জীবন টাই পাল্টে যাবে , সব ধারণা গুলো কোনোক্রমে পরিবর্তন হবে…..

হাত দিয়ে আলতো করে সাদা পর্দাটা সরাতেই জোছনা রাতে চাঁদের আলোটা সরাসরি আরিশের মুখের উপর গিয়ে পড়ছে , অদ্ভুত সৌন্দর্য সৃষ্টি করেছে ৷আরিশ কে দেখতে অতুলনীয় লাগছে ৷ এই ভাবে যেন আরিশের দিকে তাকিয়ে হাজার বছর অতিক্রম করে দিতে পারে আরু…..

চোখ থেকে যখন ক্রমাগতই জল গড়িয়ে পড়ছে তখন আর নিজেকে আটকে রাখতে পারল না, ফ্লোরে বসে অনবরত কেদেই চলেছে আরূ….

সকাল আটটা,,,,

লাল রঙের একটা শাড়ি পরে অগোছালো হয়ে দাঁড়িয়ে আছে আরূ ঘরের মাঝখানে , অপেক্ষা করছে আরিশের জেগে ওঠার , বিগত এক ঘন্টা ধরে একই জায়গায় এভাবেই দাঁড়িয়ে আছে আরু ৷ আরিশকে ডাকার সাহস পাচ্ছে না….

আরিশের ঘুম ভাঙতেই আরুর জায়গাটা হাত দিয়ে হাতেরে দেখতেই জায়গাটা ফাঁকা অনুভব করতেই উঠে পরল আরিশ ৷

আরিশকে উঠতে দেখে আরুশির সমস্ত শরীর টা কেঁপে উঠল….

চারিদিকে চোখ বুলিয়ে রুমের মাঝখানে আরুশিকে দেখলো আরিশ ৷

আরিশ মিষ্টি হাসি দিয়ে : গুডমর্নিং বউ , আর তুমি ওখানে কি করছো?

আরুশি কোন কথা বলছে না ঠায় দাঁড়িয়ে রয়েছে৷
আরিশ এবার বিছানা ছেড়ে উঠে আরুর এর কাছে গেল , গিয়ে আরূকে জড়িয়ে ধরল…..

হঠাৎ আরূ বলে উঠলো: আমি আপনাকে ভালোবাসি না , আমার সমস্ত ভালোবাসা মিথ্যা ছিল ৷ আপনাকে ভালোবেসে প্রতিটা স্পর্শানুভূতি , সমস্তটা মিথ্যে ৷ আপনাকে আমি কখনও ভালোই বাসিনি , আপনি আমাকে জোর করে বিয়ে করেছিলেন সেই কারণেই আপনাকে শিক্ষা দেওয়ার জন্য আমি এত কিছু করেছি ৷

আরিসের হাতের বাঁধনটা ধীরে ধীরে আলগা হতে লাগলো , আরুশিকে ছেড়ে দিয়ে বললো : সকাল সকাল মজা করছো আরূপাখি?

আরোশী : আমি কোন মজা করছি না , আমি যা বলছি সত্যি কথা বলছি (দৃঢ়কণ্ঠে ৷)

আরিশ কিন্তু কিন্তু করে: আমি জানি তুমি আমার সাথে মজা করছো৷

আরুশি : আপনাকে আমি ভালোবাসি না আর আমি এগুলো মজা করছি না ৷ আপনার সাথে যা যা করেছি আমি তাই বলছি ৷ আর তাছাড়া আমি ভালোবাসে আপনাকে যতবারই গ্রহণ করেছি ততবার অভ্র আমাকে বাধ্য করেছে তাই করেছি ৷ ওহঅভ্র আর আমি দুজনেই মনে করেছি আপনাকে শিক্ষা দেওয়া প্রয়োজন সেই কারণে ৷

আরিশ ঠাস করে আরুশিকে একটা চড় মারলো৷

আরিশ : মজা করার একটা সীমা থাকে, তুমি এবার সব সীমা পার করছ আরুপাখি ৷

আরু উচ্চস্বরে হেসে উঠল আর বলল: মজা তো আমি এতদিন করেছি আপনার জীবনের সাথে আপনি যা যা করেছেন সমস্তটা আপনাকে আবার ফিরিয়ে দেওয়ার পালা….

আরিশ রাগে হাত মুষ্টিবদ্ধ করে নিল,,,,,,

আরিশ : তুমি একটা প্রতারক ,প্রতারণা করেছো আমার সাথে ৷ ভালোবেসে তোমাকে নিজের কাছে এনে রেখেছিলাম কিন্তু আমার ভালোবাসাকে এভাবে যে তুমি অপমান করবে তা ভাবিনি ৷ ভেবেছিলাম তুমি হয়তো আমাকে ভালবাসতে শুরে করেছ , কিন্তু তোমার ভালোবাসা নামক প্রতারণার পিছনেও যে এত বড় একটা উদ্দেশ্য আছে তা যদি জানতাম তাহলে এত, ভালোবাসা তোমাকে দিতাম না যার তুমি যোগ্যই ছিলে না কখনো ৷ কথা দিয়েছিলাম তোমাকে নিজের সাথে ভালোবেসে রাখার কিন্তু তুমি কি করলে!

আরোশী : যা করেছি বেশ করেছি আর এখন শুনে রাখুন আমি আপনার সাথে থাকতে চাই না ৷ বলে রুম থেকে বেরিয়ে যেতে লাগলো,,,,,

আরু বেরিয়ে যেতেই ওকে বলল,,,,,

আরিশ ছলছল চোখে বললো : এটা মনে রেখো আরূপাখি , কাউকে ঠকিয়ে কখনো সুখী হওয়া যায় না ‌ আমার এত বড় ক্ষতি করে তুমি নিজেও কখনো ভালো থাকবে না ৷

আরুশির পিছন ফিরে তাকানোর সাহস হল না , চোখ থেকে গড়িয়ে পড়া জল গুলোকে উপেক্ষা করে সামনের দিকে এগিয়ে গেল ৷

আরু চলে যেতে আরিশ হাতের পাশে থাকো ফুলদানীটা নিয়ে ফ্লোরে ছুড়ে মারল ৷ চোখ থেকে অনবরত জল গড়িয়ে পড়ছে আরিশের ৷ নিজের প্রিয় মানুষটিকে হারিয়ে ফেলেছে ও ৷

রুম থেকে কিছু ভেঙে যাওয়ার শব্দ শুনে আরুর সার শরীর কেঁপে উঠল তবুও আরিশ এর মুখোমুখি হওয়ার সাহস ওর আর, নেই তাই সবকিছু উপেক্ষা করে চলে গেল ৷

চলবে,,,,,,

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে