#তোমার_নেশায়_আসক্ত
#part:7
#Suraiya_Aayat
গোটা বিয়েবাড়ী নিস্তব্ধ , একটা পিন পড়লেও যেন তার শব্দ টা শোনা যাবে এরকম ৷ কারোর মুখে কোন কথা নেই , সবাই যেন বাকহারা হয়ে গেছে ৷ সকলের সাথে চুপ করে আছে আরু আর তার সঙ্গে ওর গোটা পরিবার ৷ আহান রাগ করে অনেকক্ষণ আগেই বেরিয়ে গেছে , ওর মা ঘরে নিজেকে বন্ধ করে রেখে কান্নাকাটি করছেন ক্রমাগত ৷ ওর বাবার মুখে আছে একরাশ হতাশা আর রাগ ৷ সকলের মাঝখানে বসে আছে আরিশ মুখে ডেভিল মার্কা হাসি নিয়ে ৷
|
|💖
|
কিছুক্ষণ আগের কথা,,,,,,
আরুকে অভ্রের পাশে বসানো হয়েছে , সামনে কাজী বসে আছেন ৷ বিয়ে পড়ানো কিছুক্ষণের মধ্যেই শুরু হবে , সব আত্মীয়স্বজনরা ভিড় করে রয়েছে, সকলের নজর এখন নতুন বর আর কনের উপরে….
আরুর বাবাকে আজকে বেশ খুশী দেখাচ্ছে , আরুকে খুব একটা স্নেহের চোখে না দেখলেও এই বিয়েটা হয়ে উনি যে বেশ খুশি তা উনাকে দেখে সহজেই বুঝতে পারবে যে কেউ ৷
আরুর বুকের ভিতর টিপটিপ করছে ভয়ে৷ অভ্র পাশে বসে থাকলেও সাহসে কুলাতে পারছে না , আর না পারছো অভ্রর সঙ্গে কথা বলতে ৷ অভ্রের সাথে কথা হলে সমস্তটা খুলে বলত কিন্তু তা হয়নি কারন আগের দিন অভ্র আরুর সঙ্গে যা ব্যবহার করেছে তার পরিপ্রেক্ষিতে অভ্র আরুকে সরি পর্যন্ত বলে নি৷
এমনকি সারাদিনে ফোনও করেনি ৷
আরু ভেবেছে গায়ে হলুদের অনুষ্ঠান টা নষ্ট হয়ে যাওয়ার কারণে অভ্র ওকে ফোন করতে পারেনি কিন্তু কি কারণে ফোন করেনি তার সঠিক কারণটা এখনো আরূ জানেনা, হয়ত জানার চেষ্টাও করেনি ৷
কাজী এবার বিয়ে পড়ানো শুরু করলেন ৷রেজিস্ট্রি পেপারে সই করে অভ্র তিনবার কবুল বলল বেশ হাসি মুখে ৷ বিয়েটা তে ও বেশ খুশি ৷
এবার আরূর পালা,,,,,
কাজী সাহেব : বিনতে আরুশি রহমান তুমি কি অভ্র মাহমুদের সাথে এই বিয়েতে কবুল ? যদি কবুল হও তাহলে বল কবুল ৷
আরুশির এখনো রেজিস্ট্রি টা বাকি ৷ আরূশির বাবা চেয়েছিল যে আরু প্রথমে কবুল বলে বিয়েটা করুক তাই উনার কথা মতোই আরূশির সইটা এখনো বাকি আছে ৷
আরুশি : ক….
আর কিছু বলতে পারল না আরু, কথাগুলো যেন গলায় আটকে গেছে বললেই হয়তো সামনে মুখে হাসি নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা ব্যক্তিটি ওকে খুন করে ফেলবে৷
কাজী সাহেব: মা তুমি কি কবুল?
আরুশি:______
কাজী সাহেব : মা তুমি যদি এ বিয়েতে কবুল হয়ে থাক তাহলে বলো কবুল ৷
আরু তাও কোন কথা বলছে না , মনে হচ্ছে ওর গলাটা কেউ যেন চেপে ধরে আছে, ওকে কথা বলতে দিচ্ছে না , কারণ আরিশ এর নজর ওর দিকে আগের মতোই স্থির ৷
কাজী সাহেব এতবার বলার পরেও আরু কোন কথা বলছে না দেখে এবার আরমান সাহেব অত্যন্ত রেগে গেলেন, না পেরে তিনি জোর গলায় বলতে লাগলেন,,,,,,
আরমানি সাহেব :এভাবে চুপ করে থাকার মানে কি? এখানে কি সবাই মজা দেখার জন্য এসেছে? আর এভাবে চুপ করে আছ কেন ? বিয়েটা কি আমরা জোর করে দিচ্ছি তোমাকে ৷
পিছন থেকে আরিশ বলে উঠলো : অবশ্যই জোর করে দিচ্ছেন , না হলে একটা মেয়ের বিয়ে হয়ে যাওয়ার শর্তেও সে আবার কি করে দ্বিতীয়বার বিয়ে করার জন্য রাজি হয় ৷
এই কথাটার ভয়ই এতক্ষণ আরু করছিল ৷আরিশের মুখ থেকে কথাটা শুনতেই বুকের ভেতরটা ধক করে উঠলো আরুর ৷
না পেরে অভ্র এবার বলতে শুরু করল: এসবের মানে কি ? আর এসব কি বলছ তুমি?
আরিশ এবার অভ্রের দিকে ডেভিল মার্কা হাসি দিয়ে: কেন তুমি কিছুই বুঝতে পারছ না? আমি তো খুব সহজভাবে বলতে চাইলাম যে একটা বিবাহিতা মেয়ের দ্বিতীয়বার তার অমতে বিয়ে দিতে গেলে এরকমই তো হবেই ৷ এটাই তো স্বাভাবিক তাই না!
আরমান সাহেব : এই ছেলে তুমি এসব কি বলছ? আর গোটা বিয়ে বাড়ির সামনে মজা করছ ? আর কে তুমি?
আরিশ : আমি কে সেটা তো আপনার মেয়ে ভালো করে বলতে পারবে আঙ্কেল ৷ ওকেই না হয় জিজ্ঞাসা করুন ৷
আরমান সাহেব আরুর দিকে অগ্নিদৃষ্টি নিক্ষেপ করলেন , উনি আরুকে জিজ্ঞাসা করলেন: এই ছেলেটা কে? আর ও এ সমস্ত কথা কেন বলছে? এই ছেলেটা যা বলছে তা কি সত্যি?
আরুর আর বলার কোনো ভাষা নেই , চোখ থেকে অনবরত টপটপ করে নোনা জল গড়িয়ে পড়ছে, এই দিনটা দেখাই বাকি ছিল ,,,,,,যেখানে গোটা বিয়ে বাড়ির লোকের সামনে ওকে এভাবে অপমানিত হতে হচ্ছে ৷
আহান ও আর না পেরে বলল: কিরে চুপ করে আছিস কেন বল উনি যা বলছে তা কি সত্যি?
আরু কোন কথাই বলছে না কেবল নির্বাক হয়ে চোখের জল ফেলে যাচ্ছে ৷ আর কিই বা বলবে ও কারন আরিশ যা বলছে সবই তো সত্যি কথা ৷ ওর সঙ্গে সত্যি ই তো আরিশের বিয়ে হয়ে গেছে ৷
আরিশ : আসলে ও বলতে লজ্জা পাচ্ছে, আমি বলছি আপনাদের আর প্রমাণও দেখাচ্ছি ৷
এই বলে আরিশ ওর আর আরুর ম্যারেজ সার্টিফিকেটটা সকলের সামনে দেখালো, যেখানে স্পষ্ট দুজনের সই রয়েছে , আর সাক্ষী হিসেবে রয়েছে আরিশ এর একটা ফ্রেন্ড….
সানা আরিশের কাছে এগিয়ে আসলো এসে বলল: ভাইয়া তুই এসব কি বলছিস, তোর মাথা ঠিক আছে?
আরিস : সানা তুই তো জানিস তোর ভাইয়া কখনো মিথ্যা কথা বলে না , তুই নিজেই দেখ আমার আর আরুপাখির বিয়ের পেপারসগুলো ৷
সানা সহ আরুর বাবা, আহান,অভ্র সবাই পেপারস গুলো দেখতে লাগল , তারপর দেখল যে সত্যিই ওদের বিয়ে হয়ে গেছে….
আরুর বাবা রেগে গিয়ে আরু কে যেই চড় মারতে এগোবেন সামনে তখনই আরিশ ধীর কন্ঠে বলল : আর এক পাও এগোবেন না , যেখানে আছেন সেখানেই থাকুন ৷ ও আপনার মেয়ে ছিল কিন্তু এখন আমার বউ তাই অধিকারটা আপনার থেকে আমার কিছুটা হলেও বেশি ৷আর ওর গায়ে হাত দিবেন না তাহলে ভালো হবে না….
অভ্র: আমি এসব মানি না , আমি আরুশিকেই বিয়ে করবো ব্যাস্ , ও হাজারটা বিয়ে করলেও আমি ওকেই বিয়ে করব ৷
অভ্রের কথা শুনে আরুর কান্নার বেগ যেন আরও দ্বিগুন হয়ে গেল , কারণ ও অভ্র কে ধোঁকা দিয়েছ৷ আরিস যে ওকে আজকে যেভাবেই হোক বিয়ে করবে সেটা আরুকে বলেছিল আর তা আরূর অভ্রকে জানানো উচিত ছিল , তাহলে সকলের মাঝে এত বড় সিনক্রিয়েট করতে পারত না আরিশ ,অভ্র কোন না কোন ব্যাবস্থা করত ৷
আরিশ : এতদিন জানতাম বেহায়া শব্দটা মেয়েরা মেয়েদেরকেই বেশি ইউজ করে , কিন্তু আপনাকে দেখে আমার আজ থেকে ছেলেদের উপর এই ট্যাগটা দেওয়ার জন্য মনটা আনচান করছে ৷ সত্যি বলছি বড্ড বেহায়া আপনি ৷ অন্যের বউকে তার সামনে বিয়ে করার কথা বলছেন হ্যাঁ !সাহস আছে আপনার, না হলে কি আর……..
এইটুকু বলে আরিশ থেমে গেল আর কিছু বলল না৷
আরিশের বলা কথাগুলো অভ্রর বড্ড গায়ে লেগেছে বোধ হয় তাই আর এক মুহূর্তও দেরি না করে ওখান থেকে বেরিয়ে গেল ৷ অভ্রর সাথে সাথে বাকি বরযাত্রীরাও বেরিয়ে গেল নিস্তব্ধ হয়ে ৷
কনেপক্ষে সকলের মাথা হেঁট , সবাই যেন চমক’ টা কাটিয়ে উঠতে পারছেন না এখনও ৷
আরিশ আরুর কাছে গেল গিয়ে ওর চোখের জলটা মুছে দিয়ে ওকে বুকে টেনে নিল ৷
আরিশ : একদম কাঁদবে না আরুপাখি, আমি আছি না !যতদিন আমি থাকবো কেউ তোমার কোন ক্ষতি করতে পারবেনা ৷ আরমান সাহেবের দিকে তাকিয়ে৷
|
|💖
|
বর্তমানে,,,,,
|
আরিস : আরুপাখি চলো অনেক দেরি হয়ে গেছে, মা আর বাবা অপেক্ষা করছে বাড়িতে আমাদের জন্য৷
( সানা তো আগেই চলে গেছে ,আগে থেকে সবকিছু রেডি করার জন্য , যতই হোক নিজের বেস্ট ফ্রেন্ড সে বাড়িতে ওর ভাবি হয়ে যাচ্ছে তাই প্রচুর এক্সাইটমেন্ট কাজ করছে ওর মধ্যে ৷ সে এর আগে যত কিছুই হোক না কেন ৷)
আরু নিস্তব্ধ হয়ে চুপচাপ উঠে দাঁড়াল , কারন না চাইলেও আরিশ এর সঙ্গে ওকে যেতেই হবে ৷ আর ও না চাইলেও আরিশ জোর করে ওকে নিয়ে যাবে৷ আরিশ যে ওর জীবনটাকে ধ্বংস করার জন্যই এতকিছু করছে সেটাও বেশ ভালই বুঝতে পারছে আরু ……..
আরু আর কোন পিছুটান না রেখে আরিসের সঙ্গে হাঁটতে লাগলো,,,,,
আরোশী দরজার কাছে যেতেই আরমান সাহেব কড়া কণ্ঠে বলে উঠলেন : একবার এই বাড়ি থেকে চলে যাচ্ছ মনে রেখো এই বাড়ীর দরজা তোমার জন্য চির কালের জন্য বন্ধ…..
আরু একবার পিছন ফিরে ওর বাবার দিকে তাকালো, চোখের জলটা ও যেন আর আড়াল হতে চাইল না, গড়িয়ে পড়ল এক কোণা থেকে ৷
|
|
|💖
|
|
একমনে গাড়ি চালাচ্ছে আরিশ, বেশ সুন্দর একটা রোমান্টিক গান বাজেছে গাড়িতে , আর মাঝে মাঝে গানের তালে সঙ্গে গুনগুন করে গানটার সাথে সুর মেলাচ্ছে ৷ আরিসের মনের কোন বিশেষ কিছু পাওয়ার একরাশ আনন্দ হচ্ছে এখন আর সেটা এখন আর বলতে বাকি রাখে না…..
হঠাৎই গাড়ি অন্যদিকে ব্যাক নিতেই আরু বলে উঠলো,,, ,
আরু: আপনি এ রাস্তায় যাচ্ছেন কেন?আপনার বাড়ি তো এদিকে না ৷ আমরা তো রাস্তা পার করে চলে এসেছি অন্য দিকে ৷
আরিশ জোরে জোরে হাসতে লাগলো তারপর বলল: শশুরবাড়ির রাস্তা টা তো ভালই চিনে রেখেছ দেখছি৷ বেশ ভালো ৷ পথ ভুলবেনা কখনো আর আমি কখনো ভুলতেও দেব না ৷
আরু: আমরা তার মানে আপনার বাড়ি যাচ্ছি না!
আরিশ: একদমই তাই ৷
আরু : আপনি আমাকে তাহলে কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন?
আরিস আরূর কানের কাছে এসে ফিসফিস করে বলল :তোমাকে মেরে গুম করে দেওয়ার জন্যই এদিকে যাচ্ছি ৷
আরু ভয় পেয়ে : আপনি প্লিজ আমাকে এখানেই নামিয়ে দিন , আমি আপনার সাথে কোথাও যাবো না৷
আরিস : তুমি না চাইলেও আমার সাথে যাবে যেমনটা এতদিন তুমি না চাইতেও হয়ে আসছে ৷ আর না চাইলেও ভালোবাসতে হবে আমাকে ৷(অস্তে আস্তে)
আর তুমি তো দেখছি সত্যিই ভয় পেয়ে গেলে ৷
আরিশ কথাটা বলতে বলতেই গাড়িটা থেমে গেল একটা ফার্ম হাউসের সামনে ৷
আরূ : এটা কোথায়?
আরিস : চলো গেলেই দেখতে পাবে কোথায়৷
আরূ: আমি কোথাও যাব না , আমি এখানেই বসে থাকবো ৷
আরিশ : তুমি কোথাই থাকবে না থাকবে সেটা তো আমি দেখব বলে আরূকে গাড়ি থেকে নামিয়ে কোলে তুলে নিল….
বাড়ির ভিতরে ঢুকতেই আরূর বেশ একটু ভয় ভয় লাগলো কারন সারা বাড়িতে কেউ নেই , একটা সার্ভেন্ট অবধি ও নেই ৷ ঢোকার সময় দারোয়ানকে দেখেছিল আর কাউকে দেখেনি ৷
আরিশ একটা রুমের ভেতরে ঢুকল,দরজা টা আগে থেকেই খোলা ছিল ,হয়ত ওরা আসবে সেটা বাড়ির সার্ভেন্ট খুব ভালোভাবেই জানতো তাই জন্যই খুব পরিপাটি করে গুছিয়ে রেখেছে সবকিছু ৷
রুমে ঢুকতেই আরিস আরুকে বিছানার উপরে শুইয়ে দিল ৷
হাতে কিছু নরম বস্তু স্পর্শ হতেই আরূ সেদিকে তাকিয়ে দেখল গোলাপের পাপড়িতে সাজানো বিছানাটা আর ঘরটার ডেকোরেশনও সেভাবেই করা….
আরিশ আরুর পাশে বসে আরুর দিকে ঝুঁকে গেল, দুজনের মাঝখানে দূরত্বটা এতই কম যে আরিশের মুখের নিঃশ্বাসগুলো আরুর মুখের ওপর এসে পড়ছে….
আরিশ: আরুপাখি পছন্দ হয়েছে ডেকোরেশন?
আরু: এসবের মানে কি?( তোতলাতে তোতলাতে)
আরিশ আঙুল দিয়ে আরুল ঠোঁট দুটোকে আলতো করে স্পর্শ করে বলল: কিছুই বুঝতে পারছ না আরুপাখি যে এসব কেন? আজ তোমার আর আমার বাসর মনে নেই?
ভয়ে আরুর গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে যাচ্ছে৷
আরুর অবস্থা দেখে আরিশ বলল:
এখনই ভয় পেয়ে গেলে চলবে ? এখনো তো অনেক কিছুই বাকি ৷
চলবে,,,,,,