তোমার জন্য সিন্ধুর নীল পর্ব-১৪+১৫

0
336

#তোমার_জন্য_সিন্ধুর_নীল
#পর্ব_১৪
#সারিকা_হোসাইন

সকাল সাতটা বেজে পনেরো মিনিট।

আকাশে কালো মেঘের ঘনঘটা পরিলক্ষিত হচ্ছে।যেকোনো মুহূর্তে ধরনীতে বরষার জল আছড়ে পড়বে ঝুমঝুম শব্দে।থেকে থেকেই শো শো শব্দে বাতাস বইছে।বাতাসের প্রকোপে গাছপালা গুলো হেলে দুলে ঢলে পড়ছে।সাথে আকাশে সোনালী আলোর ঝিলিক দেখা যাচ্ছে।দেখেই বোঝা যাচ্ছে বৃষ্টির সাথে সাথে বজ্রপাতও হবে।

সাদা টি শার্ট আর সাদা ট্রাউজার সাথে স্পোর্টস শো পরে কোয়ার্টার এর মাঠে দৌড়াচ্ছে মেজর মুহিত ওয়াসিফ।দৌড়ের গতিতে তার হাতের পায়ের রগ গুলো ফুলে উঠেছে।এই ঠান্ডা আবহাওয়ার মধ্যেও তার শরীর ঘামে ভিজে একাকার।কপাল,চিপ বেয়ে গড়িয়ে পড়ছে মোটা মোটা ঘাম।

মুহিত থামতে ভুলে গেছে,আনমনে দৌড়ে চক্কর কেটে যাচ্ছে পুরো মাঠ।

এতদিন মুহিত মরীচিকার পিছে দৌড়ে বেড়িয়েছে।এতোগুলো বছর অযথা নষ্ট হয়েছে।
আহিয়ানের মুখ থেকে তার বাবা ভাইয়ের খুনির নাম শোনার পর থেকে বুকের ভেতরে যেনো পাথর চেপে বসেছে।

এতদিন ধরে সেই খুনি তার আশেপাশে ঘুরে বেড়িয়েছে অথচ সে কতো দেশ বিদেশে তাকে খুঁজে চলেছে।

যার কথা আহিয়ান বলেছে তাকে সাক্ষী, প্রমান ,ব্যাতিত কিভাবে আটক করবে মুহিত?
ফাঁসির দড়ি গলায় নিয়ে কেউ অন্ততঃ নিজের বাবা সম্পর্কে এমন মিথ্যে বলবেনা।
যখন আহিয়ান মুহিতকে বলেছিলো মুহিতের বাবা আর ভাইয়ের খুনি তার বাবা স্বয়ং আশরাফ চৌধুরী যিনিই কিনা ছদ্দবেশে আহমেদ খান!

তখনই মুহিতের পুরো দুনিয়া দুলে উঠছে,

মানুষটি চমৎকার অমায়িক,।

সমাজ,মানুষ ,দেশ নিয়েই যেনো তার সকল চিন্তা।
মুহিত নিজেও বিভিন্ন কাজে তার সান্নিধ্যে এসেছে।
কখনো মুহিতের মনে হয়নি লোকটি একজন নরঘাতক।

আহিয়ান যখন তার বাবার অপকর্মের কথা গুলো মুহিতকে বলছিলো, তখন মুহিত তার চোখে চিকচিক করা মুক্তোর ন্যায় জ্বল দেখতে পেয়েছে।

আহিয়ান কথা গুলো মুহিতকে বলার পর অনুরোধ করে মুহিতের হাত চেপে ধরে বলেছে
―মেজর আমাকে আজই ফাঁসিতে ঝুলিয়ে দিন।কয়েদের প্রত্যেকটা মিনিট আমার কাছে সর্প দংশনের মতো মনে হচ্ছে,

―আমার শ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে মেজর।

―প্লিজ আমাকে আজকেই ফাঁসিতে ঝুলিয়ে দিন।প্লিজ

একই কথা বার বার বলতে বলতে হাসতে হাসতে লাফানো শুরু করে আহিয়ান।

দ্রুত দুজন পুলিশ এসে তাকে ধরে নিয়ে যায়,এর পর মুহিত কাউকে কিছু না বলে সিক্ত নয়নে দ্রুত গতিতে বেরিয়ে আসে জেল থেকে।

আশরাফ চৌধুরী সম্পর্কে তথ্য জোগাড় করার পথ এতোটাও সুগম হবে না।
আশরাফ চৌধুরীর দিকে আঙ্গুল তোলার আগে মুহিতকেই সমাজের মানুষ আঙ্গুল তুলে বসে থাকবে।

―কিভাবে হবে বাবা ভাইয়ের হত্যার খুনির শাস্তি?

নাহ মুহিত আর ভাবতে পারছে না।এক ঘন্টা ধরে দৌড়ানোর ফলে তার বুকে প্রচুর ব্যাথা অনুভূত হয়।
দৌড়ের গতি কমিয়ে দাঁড়িয়ে যায়।
মাঠের নরম ঘাসে শরীর এলিয়ে দিয়ে চিত হয়ে শুয়ে পড়ে।

এই পৃথিবী,এই সময়,এই জীবন সবকিছুই তার কাছে বিষাক্ত লাগছে।

হাতে থাকা স্মার্ট ওয়াচ এর স্ক্রিনে টাচ করে সময় টা দেখে নিলো মুহিত।আজ আর অন্য কোনো এক্সারসাইজ করার প্রয়োজন নেই।
অলরেডি সে আটশত আশি ক্যালোরি লস করেছে শুধু দৌড়ে।

একটু আগে যেই আকাশ কালো মেঘে ছেয়ে গেছিলো তা এখন সূর্যের তেজে পরিপূর্ণ।
কথায় আছে
যতো গর্জে ততো বর্ষে না।
আসলেই তাই।

নিজের বরাদ্দকৃত রুমে এসে টাওয়েল নিয়ে মুহিত ওয়াশ রুমে চলে গেলো।
লম্বা একটা শাওয়ার নেবার পর বেরিয়ে এলো মুহিত।
এখন ভালো লাগছে।

ব্রেকফাস্ট করার জন্য ডাইনিং টেবিলে গিয়ে সবাইকে গুড মর্নিং জানালো।

টেবিলে সবাইকে দেখলেও স্বর্গকে না দেখে মনে চিন্তার উদ্রেক হলো।তবুও কিছু প্রকাশ করলো না।

মুহিত প্লেটে একটি পরোটা আর ভাজি নিয়ে নিলো।
পরোটা ছিড়ে মুখে পুড়তে পুড়তে মিসেস তারিন কে উদ্দেশ্য করে বলে উঠলো

―মা ,সোহাগ ভাই ফোন করেছিলো।
নামিরার যখন তখন লেবার পেইন উঠতে পারে।ভাইয়া একা ভয় পাচ্ছে।তোমাকে নামিরার পাশে থাকতে বলছে।
তুমি কি যাবে??

মিসেস তারিন কিছু ক্ষণ মৌন রইলেন।এর মধ্যেই নাফিজ মাহমুদ বলে উঠলেন
―আপা যাও না!
মেয়েটা একা একা আছে,তোমার ও শরীর টা এখন অনেক ভালো।ঘুরে এসো ভালো লাগবে।

তনুজা চুপচাপ সবার কথা শুনে বলে উঠলো
―আহা এভাবে কেনো বলছো তোমরা?
আপার সিদ্বান্ত আপাকেই নিতে দাও।

মিসেস তারিন লম্বা একটা দীর্ঘশ্বাস নিলেন।
মুহিতকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠলেন―

এখানে আছি মনে হচ্ছে তোমার বাবার কাছাকাছি আছি,তার গন্ধ আমার নাকে লাগে।মনে হয় সে আমার সাথে আছে।
নামিরা আমার মেয়ে তার প্রতি আমার কর্তব্য অবশ্য পালনীয়।

আমি অবশ্যই যাবো।

তবে মুহিত তোমার কাছে আমার একান্ত অনুরোধ থাকবে তোমার সকল সমস্যার সমাধান করে ঘরে একটা বউ আনো।

সোহাগ নামিরাকে দেশে আনার ব্যাবস্থা করো।

তোমার বাবা কেনো তাদের দূরে সরিয়ে রেখেছিলো তা আমার কাছে সেদিন ই স্পষ্টমান ছিলো।তবুও সব জেনে বুঝে আমি চুপ ছিলাম।

কারন কোনোদিন তোমার বাবার কথার উপর আমার গলার আওয়াজ তুলিনি আমি।কখনো আমি তাকে প্রশ্নবিদ্ধ করিনি ,যার উত্তর দিতে গিয়ে তিনি মাথা অবনত করবেন।

মানুষটা নেই,তার স্মৃতি নিয়ে আমি কোনোরকম বেঁচে আছি।আমি তোমাদের এক সাথে সুখে দেখে হাসি মুখে মরতে চাই।
যে কটা দিন বাঁচবো তুমি,নামিরা,তোমার বউ,সোহাগ কে নিয়ে বাঁচতে চাই।

মাম্মা তো বেশি কিছু আবদার করিনি রে বাবা!
মিসেস তারিন আবার বলে উঠলেন―

আমি যেতে চাই আমার মেয়ের কাছে।

―কিন্তু ফেরার সময় আমাকে একা ফিরিয়ে এনো না।আমি ওদের সাথে নিয়ে ফিরতে চাই।

বলেই মুহিতের দিকে অসহায়ের মতো তাকিয়ে রইলেন মিসেস তারিন।

সবার চোখের কোনেই জমা হলো জল।কারোর ই আর পেট ভরে খাওয়া হলো না।
মুহিত মিসেস তারিনের হাতের উপর হাত রেখে আশ্বস্ত করলো।

★★★★

স্বর্গ ঘরে দরজা আটকে বসে আছে।আজ কয়েকদিন ধরেই সে মুহিতের সাথে কথা বলে না।মুহিত অনেক বার সুযোগ পেতে ই কথা বলার চেষ্টা করেছে।কিন্তু স্বর্গ পাত্তা দেয়নি।

কেনো দেবে,??
প্রেমিকা হিসেবে সে কি বেশি কিছু আবদার করেছে,?

একটু আদর করে কথা বললে কি এমন ক্ষতি হয়?একটু বেশি ভালোবাসলে কি খুব লস হয়ে যায়?

স্বর্গ যথেষ্ট ম্যাচিউর একটা মেয়ে।সে জানে তার মতো মেডিকেল অফিসার এর এসব মানায় না।

তবুও ভালোবাসার ব্যাপারে সে ইমম্যাচিউর হয়েই থাকতে চায়।মুহিত কে এসব ব্যাপারে এক বিন্দু ছাড় ও দেবেনা।

মুহিত তাকে আদর কেনো করবে না?

নানী দাদির মতো সারাক্ষন আপনি আপনি করে বেড়ায়।
ব্যাটা খাটাশ।

নাহ আর ভাত ও খাবোনা,কথাও বলবো না।

এরই মাঝে তনুজা এসে দরজায় নক করে স্বর্গ বলে ডাকে উঠলো।

অনেক ক্ষণ ডাকার পর দরজা খুললো স্বর্গ।

ঝাঁঝালো কন্ঠে তনুজার উদ্দেশ্যে বলে উঠলো
―কি চাই?
ব্রেকফাস্ট করবি না?

না করবো না,খিদে নেই,চলে যাও।
বলেই তনুজাকে ধাক্কা দিয়ে তাড়িয়ে আবার দরজা বন্ধ করে বিছানায় উপুড় হয়ে শুয়ে পড়লো।

————–

ক্যাপ্টেন সৌম্য চোরের মতো দাঁড়িয়ে আছে মুহিতের সামনে।কিভাবে কথা শুরু করবে সেটাই গুছিয়ে উঠতে পারছে না।

একজন মেজরের ব্যাক্তিগত বিষয়ে একজন ক্যাপ্টেন হয়ে কিভাবে কথা বলবে সেটা ভেবেই কুলকিনারা পাচ্ছে না সৌম্য।

তবুও বলতে হচ্ছে,!

এক দিকে প্রেমিকার চাপ,অন্য দিকে ডাক্তার সাহেবা।

সৌম্যের কাচুমাচু দেখে মুহিত কপাল কুঁচকে ভরাট কন্ঠে জিজ্ঞেস করে উঠলো কি ব্যাপার ক্যাপ্টেন?
এমন চোরের মতো ভান ধরে আছো কেনো?

পাঁচ মিনিটের মধ্যে ঘটনা খুলে না বললে বিদেয় হও।

কাজ আছে আমার বলেই ঘস ঘস করে কলম দিয়ে লিখতে শুরু করলো মুহিত।

জিভ দিয়ে শুষ্ক ঠোঁট জোড়া ভিজিয়ে নিলো সৌম্য।এর পর মিনমিন করে বলে উঠলো―

স্যার বিষয় টা খুব সেনসেটিভ,বললেও শাস্তি পাবো না বললেও শাস্তি পাবো।
অনেকটা শাঁখের করাতের মতো।

মুহিত এবার সোজা হয়ে বসে বলে উঠলো

―নাটকবাজি করা ছাড়া আর কিছু জানোনা ক্যাপ্টেন?

জী স্যার জানি !

সেটাই এখন বলবো।

বলেই সৌম্য মুহিতের সামনের চেয়ার টেনে নিয়ে বসে পড়লো।
টেবিলের উপর থেকে পানির বোতল নিয়ে ঢকঢক করে খেয়ে গলাটা ভিজিয়ে নিলো।

স্যার আমার হালুয়া টাইট করার চিন্তা বাদ দেন,আপনার চিন্তা করেন।আপনার তো সামনে ভীষন বিপদ!

মেজর জেনারেল এর মেয়ে,মানে ডাক্তারনী বলেই মুহিতের চোখের পানে চাইলো সৌম্য।

মুহিতের প্রশ্নবিদ্ধ চাহনি দেখে সৌম্য বুঝে নিলো মেজর পুরো ঘটনা শুনতে চাচ্ছে।

সৌম্য এবার নিজেকে মেলে ধরে আয়েশ করে বলতে শুরু করলো
―স্যার মেয়েটা বোধ হয় আপনাকে ভালোবাসে।
সে একটু কেয়ার চাচ্ছে আপনার থেকে।বিষয় টা ঠিক কেয়ার না!উম কিভাবে যে বলি?
অন্যপাশে মুখ ফিরিয়ে মিনমিন করে বলে ফেললো―

“”আদর বলতে পারেন!””

কথাটা শোনা মাত্র খুকখুক করে কেশে উঠলো মুহিত।

সৌম্য পানি এগিয়ে দিয়ে বললো লজ্জার কিছুই নেই স্যার,পানিটা খেয়ে নিন।

সৌম্য লজ্জা লজ্জা ভাব নিয়ে মুহিত কে উদ্দেশ্য করে বলে উঠলো―
বয়সে আপনার থেকে ছোট হলেও প্রেমের অভিজ্ঞতায় বড়।
আমার কথা মাথায় রাখবেন।
আজ আমি গেলাম।

ম্যাডাম কে একটু কেয়ার মানে ঐটা আরকি দিয়েন।

বলেই রাজাদের যেমন সৈন্যরা কুর্নিশ করে ঐভাবে সৌম্য প্রস্থান নিলো।

সৌম্য যাওয়া মাত্র মুহিতের ফর্সা গালে লজ্জার আভা ছড়িয়ে পড়লো।
লাজুকতায় আপনা আপনি ই হাসি চলে আসছে তার।
এমন সময় মুহিতের ক্যাবিনে প্রবেশ করলেন নাফিজ মাহমুদ।

নাফিজ মাহমুদ কে হঠাৎ তার কক্ষে দেখে ভ্যাবাচ্যাকা খেলো মুহিত।
স্যালুট দিতেও ভুলে গেলো।
নাফিজ মাহমুদ সেসব গায়ে মাখলেন না।গদগদ হয়ে মুহিতের উদ্দেশ্যে বলে উঠলেন―

তোমার মা অস্ট্রেলিয়া যাবার আগেই তোমার হবু বউকে যদি তাকে দেখিয়ে দেই কেমন হবে মুহিত?

মামার এমন ভিত্তিহীন কথায় চিন্তিত হয়ে মুহিত জিজ্ঞেস করলো ―কিসের বউ স্যার?
নাফিজ মাহমুদ খুশিতে গদগদ হয়ে জিজ্ঞেস করলো
―ক্যাপ্টেন তুলিকা ফার্নাজ কে তোমার কেমন লাগে?

মুহিত ভাষা হারিয়ে ফেললো মুখের।

এরা বাপ মেয়ে তাকে পেয়েছে কি?
যখন যার যেভাবে খুশি অত্যাচার চালাচ্ছে।
এ আবার কোনো নতুন মুসিবত হাজির করতে চাইছে?

স্বর্গ জানলে তো মুহিতকে সরাসরি ক্রসফায়ার দিবে।

নাফিজ হাসি মাখা কন্ঠে বলে উঠলো কি ভাবছো মুহিত?

স্যার আমি ক্যাপ্টেন তুলিকা কে সেই ভাবে পর্যবেক্ষণ করে দেখিনি।মিনমিন করে জবাব দিলো মুহিত।

দেখোনি কি হয়েছে ?একটু পরেই দেখার ব্যাবস্থা করে দিচ্ছি,।
বলেই ফোন টিপে হ্যালো বলে মুহিতের কেবিন থেকে বেরিয়ে গেলেন ।

মুহিত অসহায় এর মতো বসে রইলো ।মাথায় কিছুই ঢুকছে না তার।

**********

পিউ কে নিয়ে একটা কফিশপে যাবার জন্য তৈরি হচ্ছে স্বর্গ।
কফিশপ টা নতুন খোলেছে।ফেসবুকে বেশ হাইপ উঠেছে ।
এখানে ছবি তোলার কর্নার রয়েছে।আর তাদের রুফটপ টা নাকি অনেক সুন্দর।
স্বর্গ আর পিউ ঠিক করেছে আজ তারা শাড়ি পরবে আর সুন্দর সুন্দর ছবি তুলবে।

পিউ পড়বে গোল্ডেন কালার এর জর্জেট শাড়ি আর স্বর্গ পরবে ব্ল্যাক।

আয়নার সামনে বসে আছে স্বর্গ,শাড়ি পরেছে সে,ম্যাচিং অর্নামেন্টস পরেছে তার সাথে।বাদামি চুল গুলো কাঁধের দুই পাশে ছেড়ে দিলো এক পাশে সিঁথি করে।ঠোঁটে লাগালো টকটকে লাল লিপস্টিক।
চোখে ভালো ভাবে মাসকারা লাগিয়ে নিলো।
মুখে ব্লাশনের টাচ আপ দিলেই সাজ কমপ্লিট।

হাতে চুরি পড়তে পড়তে পিউ কে কল দিলো স্বর্গ।
পিউ উত্তর দিলো রাস্তায় গাড়ি নিয়ে অপেক্ষা করছে।

তনুজার কাছে বলে বেরিয়ে গেলো স্বর্গ।

কাঙ্খিত রেস্টুরেন্টের দুতলায় এসে উপস্থিত হলো পিউ আর স্বর্গ।

খাবার ওর্ডার করে বসে গল্প করছে তারা দুজন।
হঠাৎই স্বর্গের চোখ যায় কর্নারে থাকা টেবিলে।
সেখানে দেখতে পায় মুহিত একটি মেয়ের সাথে হেসে হেসে কথা বলছে।
আর মেয়েটি ঠাট্রার ছলে বারবার মুহিতের গায়ে হালকা করে ছুঁয়ে দিচ্ছে।

এসব দৃশ্য দেখে স্থির থাকতে পারলো না স্বর্গ।মাথা ঘুরে উঠলো তার।
চোখের কোনে জমা হলো জ্বল।এক সময় তা বর্ষনের রূপ নিলো।
দম বন্ধ হয়ে হাঁসফাঁস লাগছে।এখানে থাকলে মরে যাবে সে।মুহিতের পাশে অন্য মেয়েকে দেখে কষ্টে বুকের ছাতি ফেটে যাচ্ছে তার।
চেয়ার ছেড়ে উঠে বাইরে বের হতে চাইলো।
শরীর সায় দিলো না।
লুটিয়ে পড়লো রেস্টুরেন্ট এর মেঝেতে।

#চলবে।

#তোমার_জন্য_সিন্ধুর_নীল
#পর্ব_১৫
#সারিকা_হোসাইন
[১৮+এলার্ট,যারা সহ্য করতে পারবেন তারাই পড়বেন,সম্পূর্ণ মুক্ত মনাদের জন্য]
●●●
চিন্তিত মুখে স্বর্গের বেডের চারপাশে কেউ বসে আছে কেউবা দাঁড়িয়ে আছে।হঠাৎ অজ্ঞান হবার কারন কেউ খুঁজে পাচ্ছে না।নাফিজ মাহমুদ হাত মুঠি করে ঠোঁটে ছুঁইয়ে বসে বসে ভাবছেন―

মেয়ে সেজে গুঁজে খুশি মনে রেস্টুরেন্টে গেলো সেখানে কি এমন দেখলো যে জ্ঞান হারালো?
তিনি তো মেয়ের সুরক্ষার জন্য বাইরে দুটো সোলজার কেও রেখে ছিলেন।
পিউ মেয়েটাও তো মুখ খুলছে না।

জ্ঞান হারানোর পিছনের ঘটনা কি??


মুহিত থেকে থেকে ঘেমে উঠছে শুধু।মুখ দিয়ে কিছুই প্রকাশ করতে পারছেনা।ভেতরে নানান ধরনের ভয়ানক চিন্তায় বমি বমি ভাব হচ্ছে তার।আর কেউ না জানলেও মুহিত তো জানে স্বর্গ কেনো জ্ঞান হারিয়েছে।

তনুজা মেয়েকে হাতে পায়ে তেল মালিশ করেই যাচ্ছেন।মিসেস তারিন স্বর্গের মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছেন আর দোয়া দুরূদ পড়ছেন।

নিমিষেই খুট করে খুলে গেলো দরজা।একজন নার্স কে সাথে নিয়ে কিছু মেডিসিন সমেত হন্তদন্ত হয়ে রুমে প্রবেশ করলো পিউ।

স্টেথোস্কোপ কানে দিয়ে কিছুক্ষণ নিরীক্ষণ চালালো। এরপর প্রেসার মাপতে মাপতে বললো―

―আংকেল ভয়ের কিছুই নেই,অতিরিক্ত টেনশন থেকে প্রেসার ফল করে প্যানিক এট্যাক এসেছে।এমনিতেই ও এখনো দুর্বল এজন্য সামান্য টেন্সড হতেই আর নিউরন কাজ করেনি।

এক্ষুনি জ্ঞান ফিরবে।

বলেই হাতে থাকা একটি নল স্বর্গের নাক বরাবর ঢুকিয়ে দিলো।
দক্ষ হাতের কৌশলে নিমিষেই জ্ঞান ফিরলো স্বর্গের।

জ্ঞান ফিরেই পিউকে উদ্দেশ্য করে ফ্যাসফ্যাসে কন্ঠে বলে উঠলো স্বর্গ―――

― গুঁতো টা আস্তে দিলে কি খুব ক্ষতি হতো তোর?
“”দেখ চোখ দিয়ে পানি এসে গেছে।””
বলে চোখের কোনা থেকে অশ্রু বিন্দু এনে দেখালো।

পিউ কে কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই নাফিজ মাহমুদ হুমড়ি খেয়ে পড়লেন মেয়ের উপর।

সে কোনো জ্ঞান হারিয়েছে, কি দেখে ভয় পেয়েছে?

যে তার মেয়েকে প্যানিক এট্যাক দিয়েছে তাকে খুঁজে পেলে শুলে চড়াবেন বলে মেয়েকে প্রতিশ্রুতি দিলেন।

দাঁত দিয়ে নখ কামড়াতে কামড়াতে মনে মনে মুহিত বললো―

নিজেকে আগে শুলে চড়তে হবে !

তনুজা কিছু বলতে নিবে তার আগেই দুর্বল কন্ঠে স্বর্গ বলে উঠে
―অনেক রাত হয়েছে সবাই ঘুমুতে যাও, আমার খুব ঘুম পাচ্ছে।

পিউ ও সকল কে উদ্দেশ্য করে বললো আপনারা ওকে একটু স্পেস দিন প্লিজ।
রাতে ফ্রেস ঘুম হলে সকালেই সুস্থ হয়ে যাবে ।

বলেই কিছু মেডিসিন এর লিস্ট দিয়ে গেলো তনুজার হাতে।
আন্টি টাইমলি মেডিসিন গুলো ওকে দেবেন।

পিউ তনুজার উদ্দেশ্যে আরো বললো

আন্টি স্বর্গ এখনো একটু দুর্বল আছে ।আপনারা খেয়াল রাখবেন কোনো বিষয় নিয়ে ডিপ্রেসড বা মারাত্মক লেভেলের টেনশন যাতে না করে।

কদিন আগেই ও কতবড় মিজারেবল লাইফ থেকে ব্যাক করেছে এ কথা আমরা সকলেই জানি।

আমি চলে যাচ্ছি,আংকেল চিন্তা না করে আপনারাও শুয়ে পড়ুন ।

বলেই নার্সকে নিয়ে বেরিয়ে এলো পিউ।

মেয়েকে ঠিকঠাক ভাবে শুইয়ে দিয়ে এসির পাওয়ার বিশ করে একটি কাঁথা স্বর্গের গায়ে জড়িয়ে মিসেস তারিন কে নিয়ে বেরিয়ে গেলেন তনুজা মাহমুদ।

নাফিজ মাহমুদ মুহিত কে ইশারা দিয়ে নিয়ে বেরিয়ে গেলেন।

–———–

ঘড়ির ঘন্টা,মিনিট,সেকেন্ডের কাটা দুইয়ের ঘরে পৌঁছানো মাত্র ঢং ঢং করে বেজে উঠলো।চারপাশ নিস্তব্ধ, শুনশান।গুড় গুড় করে মেঘ ডাকছে আর টুপটাপ শব্দে বৃষ্টি হচ্ছে।জানালার পর্দা ভেদ করে বৃষ্টির ছিটা ঘরে এসে পড়ছে।

প্রত্যেকে হয়তো বেঘোরে ঘুমুচ্ছে।কিন্তু মুহিতের চোখে কোনো ঘুম নেই।

মুহিত উঠে দাঁড়িয়ে জানালা বন্ধ করে দিলো।
স্বর্গের জন্য মুহিতের কষ্টে বুক ফেটে যাচ্ছে।স্বর্গ যদি মুহিত কে নারী সংঘটিত কারনে ভুল বুঝে , মুহিত কখনোই নিজেকে ক্ষমা করতে পারবে না।
মুহিতের মনে স্বর্গ ব্যাতিত অন্য কারো জন্য কোনো ফিলিংস তো দূরের কথা কোনো মেয়ের ভাবনাই নেই।

মুহিত জানে মুহিতের কাছে স্বর্গ কতখানি।

আহিয়ান যখন স্বর্গ কে অপহরণ করেছিলো, মুহিতের মনে হয়েছে আহিয়ান তার জান নিয়ে পালিয়েছে।
প্রতিটা সেকেন্ড মুহিতের শ্বাসরুদ্ধকর অবস্থায় কেটেছে ।

চাপা স্বভাবের জন্য মুহিত স্বর্গ কে তার অব্যক্ত অনুভূতি গুলোও কখনো বলতে পারেনি।

―অথচ স্বর্গ তার সকল অনুভূতি কি সুন্দর সাবলীল ভাবে মুহিতকে জানিয়েছিলো।

রাশিয়ান পোর্টের কথা মনে পড়তেইএকটা লম্বা দীর্ঘশ্বাস ফেললো মুহিত।

মুহিত নাফিজ মাহমুদের কাছে পাত্রী দেখতে যাবেনা বলে দু তিন বার মানা করার পর ও নাফিজ মাহমুদ আর লেফটেন্যান্ট জেনারেল মাহতিম কিবরিয়া জোর করে তাকে পাঠিয়েছে।

শুধু তাই নয় রেস্টুরেন্টের টেবিল পর্যন্ত তার মামাই রিজার্ভ করে ক্যপ্টেন তুলিকা ফার্নাজ কে ইনভাইট করেছে।
এখন মুহিত যদি না যায় মেয়েটার সামনে তার মামা ছোট হবে।

মুহিত সিদ্ধান্ত নেয় যে,
― দেখা করে মেয়েকে বুঝিয়ে বলে সব কিছু হ্যান্ডেল করবে।

কিন্তু মেয়েটার গায়ে পড়ার স্বভাবের জন্য সব ভেস্তে গেলো।

মুহিত বারবার সাইড কেটে থাকার চেষ্টা করেছে।
কিন্তু বজ্জাত মেয়েটার মুখের হাসি ই যেনো শেষ হচ্ছে না।
অযথাই গায়ে হাত দেয়ার বাহানা করছিলো।

মুহিত অবশ্য মনে মনে ভেবে রেখেছিলো একজন ক্যপ্টেন হয়ে মেজরের সাথে এমন অভদ্রতামি করার জন্য কৌশলে পানিশমেন্ট দিবে এই মেয়েকে।

মুহিত যদি জানতো স্বর্গ এতোটা কষ্ট পাবে তাহলে মুহিত মামার কথা কখনোই মানতো না।
দরকার হলে বেয়াদবি করে হলেও ত্যাড়ামো করতো।

বাইরে বৃষ্টির দাপট বেড়েই চলছে সাথে মুহিতের মনের সাথে যুদ্ধ।

মুহিত সকাল হবার অপেক্ষা করতে পারছে না।
এখনই স্বর্গের ভুল ভাঙানো চাই।

যেই ভাবনা সেই কাজ।
আস্তে করে দরজা খুলে বাইরে বের হয়ে আসে মুহিত।গন্তব্য স্বর্গের রুম।

ফোনের টর্চ জেলে আস্তে আস্তে মুহিত স্বর্গের রুমের সামনে এসে দাড়ালো।
আঙ্গুল দিয়ে সামান্য ধাক্কা দিতেই দরজা খোলে গেলো অল্প ।

মুহিত পা টিপে টিপে স্বর্গের কক্ষে প্রবেশ করলো।মনে দ্বিধাদ্বন্দ্ব নিয়ে স্বর্গের বেডের কাছে এসে দাড়ালো।

ডিম লাইটের মৃদু আলোয় স্বর্গের কোমল মুখ খানি দেখে অন্তর ধক করে উঠলো মুহিতের।
মেয়েটাকে দেখলেই মুহিতের কামড়ে খেয়ে ফেলতে ইচ্ছে করে।

এইযে এখনই ইচ্ছে করছে নিষিদ্ধ ইচ্ছে গুলোর বহিঃপ্রকাশ করতে।
মেয়েটি এলোমেলো হয়ে শুয়ে আছে,তার স্লিপিং ট্রাউজার এর একটা পা হাটু সমান উঠে আছে যার জন্য লোমহীন ধবধবে সাদা পা দৃষ্টিগ্রাহ্য হচ্ছে।
টি শার্ট টা উপরে উঠে নাভীরন্ধ্র পর্যন্ত দেখা যাচ্ছে।
এসব দৃশ্য দেখে কি কোনো প্রেমিক পুরুষ স্বাভাবিক থাকতে পারবে?

স্বর্গের ঘুমের ঘোরে ঠোঁট উল্টানো দেখে বুকে কাঁপন ধরলো মুহিতের।

নিমিষেই মুহিতের শরীর গরম হয়ে উঠলো।

মুহিত চায়না তার পবিত্র ভালোবাসা অপবিত্রে রূপান্তর করতে।
স্বর্গের গায়ে কলঙ্কের কালো কালি মুহিত সহ্য করতে পারবে না।এজন্য নিজের গাম্ভীর্য পূর্ণ ভাব বজায় রেখে চলার চেষ্টা করে মুহিত সর্বত্রই।

মুহিত চায় তার দিক থেকে যেনো স্বর্গের কোনো ক্ষতি না হয়।

কিন্তু মুহিতের এমন কাঠিন্য ভাব যে এই কোমলমতি মেয়ের হৃদয়ে এতোটা কষ্টের কারন হবে এটা মুহিত স্বপ্নেও ভাবেনি।

জানলে চুমুতে চুমুতে ভরিয়ে দিতো স্বর্গের পুরো কায়া।

সকল ভাবনাকে দূরে ফেলে দ্বিধা ভুলে স্বর্গ কে ফিসফিসিয়ে ডেকে উঠলো মুহিত।
―স্বর্গ
―এই স্বর্গ!

যখন স্বর্গ রেসপন্স করলো না তখন মুহিত গায়ে হাত দিলো।হাত দিতেই চমকে উঠলো মুহিত।

―আরেহ ! জ্বরে তো সারা শরীর পুড়ে যাচ্ছে!

সাথে সাথেই মুহিত বিচলিত হয়ে গেলো।এতো রাতে মামা মামীকে ডাকবে নাকি ডাকবে না সেই চিন্তায় অস্থির হয়ে গেলো।

ডাকার পর তারা যদি প্রশ্ন করে
―এতো রাতে আমার অসুস্থ মেয়ের রুমে তুমি কি করছো?

―তখন কী জবাব দেবে মুহিত?

ভাবতে ভাবতে মুহিত নিজের রুম থেকে ছোট টাওয়েল নিয়ে এলো।
ছোট একটি বোলে করে পানি নিয়ে এলো।
এরপর সেগুলো কে বেড সাইড টেবিলে রেখে স্বর্গের পাশে বসলো।

টাওয়েল পানিতে চুবিয়ে,নিংড়ে স্বর্গের মাথায় জল পট্টি দিয়ে দিলো মুহিত।

জ্বরের ঘোরে স্বর্গ বলে উঠলো―
“”আপনি খুব খারাপ মেজর,খুব খারাপ
―আপনি আমাকে একটুও আদর করেন না, সব সময় অহংকারী ভাব ধরে থাকেন।
অথচ বাইরের মানুষের সাথে হেসে হেসে কথা বলেন।

―আপনাকে আমি কঠিন শাস্তি দিবো মেজর ,কঠিন শাস্তি।
বলেই পাশ ফিরে মুহিতের কোমর জড়িয়ে ধরলো।

স্বর্গের এহেন স্পর্শে ভেতরে তোলপাড় শুরু হলো মুহিতের।
জ্বলপট্টি দিতেও হাত কাঁপছে তার।

কোন বিপদের মুখে এসে পড়লাম এই রাতের বেলা?

হঠাৎ ই বাইরে জোরে বজ্রপাত হলো।স্বর্গ চমকে উঠে মুহিতের কোমর আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো।

হঠাৎ ই মুহিতের খেয়াল হলো এসি চলছে সাথে বাইরের ওয়েদার ঠান্ডা কিন্তু স্বর্গের গায়ে কাঁথা নেই।

শীতে স্বর্গের শরীর কাঁটা দিয়ে উঠলো
স্বর্গ মুহিতের কোমর জড়িয়ে বিড়াল ছানার মতো গুটিয়ে রইলো।

কোনো মতে স্বর্গ কে ছাড়িয়ে মুহিত ভালোভাবে বালিশে শুইয়ে দিলো।
পিঠের নীচে থেকে কাঁথা টান দিতেই স্বর্গের ঘুম ভেঙে গেলো।

নিজের আশেপাশে পুরুষালী অতি পরিচিত গন্ধ পেতেই চোখে জল জমলো।
এই কঠিন হৃদয়ের পুরুষ তাকে আজ অনেক কষ্ট দিয়েছে।কোনো ভাবেই তাকে ক্ষমা করবেনা স্বর্গ।

মুহিত বুঝতে পারলো স্বর্গ জেগে গেছে তাই স্বর্গ যাতে তাকে ভুল না বুঝে তাই জন্য কোমল কন্ঠে বলে উঠলো――

―আপনাকে সরি বলতে এসেছিলাম স্বর্গ।

এসে দেখি আপনার সাংঘাতিক জ্বর এসেছে।
তাই জ্বলপট্টি দিয়ে দিচ্ছিলাম।

প্লিজ আমাকে ভুল বুঝবেন না।

মুহিতের মুখে আপনি সম্বোধন শুনে আর নিজেকে এমন রিজার্ভ রেখে কথা বলার জন্য স্বর্গের প্রচুর কান্না পেলো।

ইদানিং তার হুটহাট কান্না পায়।

একজন চব্বিশ বছরের মেয়ের এমন নিব্বীদের মতো আচরণ শোভা পায়না।

কিন্তু মুহিতের কথা মনে পড়লেই স্বর্গের এমন অবস্থা হয়।

মুহিতের ভালোবাসা পাবার আকুলতা তাকে ষোলো বছরে এনে নামিয়েছে।

বহু কষ্টে গলার স্বর স্বাভাবিক রেখে স্বর্গ মুহিত কে উদ্দেশ্য করে বললো――

―আপনি চলে যান এখান থেকে মেজর মুহিত।
আর আমার সেবা করার জন্য ধন্যবাদ।

বলেই পাশ ফিরে নাকে মুখে কাঁথা টেনে ঘাপটি মেরে রইলো স্বর্গ।

মুহিত অপরাধীর ন্যায় চুপ করে দাঁড়িয়েই রইলো।স্বর্গের ভুল না ভাঙিয়ে সে এখান থেকে এক কদম ও নড়বে না।

হঠাৎই ফুঁপিয়ে কান্নার আওয়াজ পেলো মুহিত।

মেয়েটির কান্নার আওয়াজে হৃদয়ে ছেদন হলো মুহিতের।কান্না যুক্ত প্রতিটি নিঃশাস মুহিতের হৃদয়ে চিনচিনে ব্যাথার সৃষ্টি করলো।
হাতের টাওয়েল কে ছুড়ে ফেলে এক টানে সরিয়ে ফেললো স্বর্গের গায়ের কাঁথা।

হেঁচকা টানে স্বর্গকে তার দিকে ঘুরিয়ে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো।

ফুপানোর ফলে স্বর্গের ঠোঁট বারবার কেঁপে কেঁপে উঠছে।

মুহিতের নিজেকে বেসামাল মনে হলো।

নিজেকে কন্ট্রোল করা দায় হলো।

মুহিতকে বেসামাল করার সকল দায় স্বর্গের উপর চাপিয়ে এক অবাধ্য জিনিসের অনুমতি চাইলো মুহিত।

―আমি কি তোমার ঠোঁটের দখল নিতে পারি জান?

মুহিতের এমন আদুরে মাদকতা মাখানো স্বরে মুহিত থেকে প্রাপ্ত সকল কষ্ট ভুলে গেলো স্বর্গ।

অশ্রুসিক্ত বড় বড় পাপড়ি যুক্ত নয়নে মুহিতের চোখের পানে দৃষ্টি দিলো।
মুহিতের সিন্ধুর নীল জলের মতো স্বচ্ছ চোখে মাতাল হলো স্বর্গ।

বশীভূত মন্ত্রের ন্যায় সায় জানিয়ে নিজেই খামচে ধরলো মুহিতের টিশার্ট এর কলার।
মুহিতের ফোলা ফোলা লালচে ঠোঁটে ছুঁইয়ে দিলো নিজের ঠোঁট।

মুহিত কে আর পায় কে?

পাগলের মতো চুম্বন করতে থাকলো তার শ্রেয়সী কে।
এক পর্যায়ে মুহিত কন্ট্রোললেস হয়ে গেলো।

সব কিছু ভুলে নিজের বোধ শক্তি হারিয়ে মুহিত স্বর্গের কমলার কোয়ার ন্যায় ঠোঁটে কামড় বসিয়ে দিলো।

ব্যাথায় স্বর্গ মুহিতের পিঠে খামচে ধরলো। হারিয়ে যেতে চাইলো অন্য জগতে।
এর পর স্বর্গ এক অন্যায় আবদার করে বসলো মুহিতের কাছে।

নেশাতুর কন্ঠে ভাঙা ভাঙা শব্দে বলে উঠলো―

―প্লিজ কিল মি জান।
বলেই নেশা যুক্ত চাহনি নিক্ষেপ করলো মুহিতের পানে।

হাতের বিচরণ অবাধ্য হবার আগেই হুঁশে ফিরলো মুহিত।জোর করে স্বর্গ কে ছাড়িয়ে এক দৌড়ে নিজের রুমে ফিরে আসলো।
আবেগে পরে এমন ভুল কিভাবে করতে যাচ্ছিলো সে,?

পাগল পাগল লাগছে সব কিছু।

নিজেকে ঠান্ডা করতে শাওয়ার নিতে চলে গেলো মুহিত।

যেই আগুন শরীর মননে জ্বলছে তা কি ঠান্ডা পানিতে নিভবে?

★★★>>>

ঢাকার নামিদামি একটি হসপিটাল এর স্পেশাল কেবিনে পিছনে হাত দিয়ে সমানে পায়চারি করছেন আশরাফ চৌধুরী।
ভেবেছিলেন ছেলের ফা*সিঁ হয়ে গেলে ভং ছেড়ে দুদিন কাদাকাটির নাটক করে ভালো হয়ে যাবেন।
কিন্তু খবর এসেছে ছেলে উন্মাদ হয়ে গেছে।সুস্থ না হওয়া পর্যন্ত ফাঁ*সি কার্যকর হবে না।
রাগে ক্ষোভে চক্ষু রক্তবর্ণ ধারণ করলো ভদ্রলোকের।

যাদের জন্য তার এই অবস্থা হয়েছে তাকে তো একবার চরম শিক্ষা দিতে হয়।

টেবিলের উপর থেকে ফোন দিয়ে দ্রুত গতিতে কল লাগালেন লেফটেন্যান্ট জেনারেল নাসের হায়দার কে।

ওপাশ থেকে হ্যালো বলতেই গর্জে উঠলেন আশরাফ চৌধুরী।
রাগে অগ্নিশর্মা হয়ে নাসের হায়দার এর উদ্দেশ্যে চিল্লিয়ে উঠলেন―
―টাকা দিয়ে তোমাকে চাকর বানানো হয়েছে বা*ল ফালানোর জন্য?
এমন বিশ্রী ভাষা শুনে নাসের হায়দার এর রাগে পায়ের রক্ত মাথায় ছলকে উঠলো।তবুও সুর নত রেখে হেতু জিজ্ঞেস করলো।

ওই মেজর এর সকল আপডেট আজ সন্ধ্যার মধ্যে চাই।আর পারলে আমার ছেলেকে জেলের ভেতর লটকে দেবার ব্যাবস্থা করো।
বলেই ফোন কেটে আছাড় মারলেন বেডের উপর।

****
মুহিতের মায়ের অস্ট্রেলিয়া যাবার সকল ব্যাবস্থা হয়ে গিয়েছে।আগামী বৃহস্পতিবার তার ফ্লাইট।
যাবার আগে তার রুমে তনুজা আর নাফিজ মাহমুদ কে ডাকলেন।
নাফিজ মাহমুদ বোনের ব্যাপারে খুব যত্নশীল ।বোনের প্রতি তার ভালোবাসা অগাধ।

বোনের রুমে এসে চেয়ার টেনে বসতে বসতে প্রশ্ন করলেন
―কেনো ডেকেছিস আপা?
মিসেস তারিন কিছুটা দ্বিধান্বিত হয়ে মনে সাহস সঞ্চয় করে অনুরোধের স্বরে নাফিজ কে বললেন―

তোর মেয়েটা আমাকে দিবি?
আমার মুহিতের জন্য?

#চলবে।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে