তোমার জন্য সাইকো
লেখক: নুসরাত জাহান অংকুর
পার্ট_১৭
সকালে
রোদের ঘুম ভেংগে যায় রোদ চোখ ডলতে ডলতে নিজের উপর তাকিয়ে দেখে মুন রোদের বুকের উপর চুপটি করে শুয়ে আছে।
রোদ মুনের দিকে ভালো করে তাকিয়ে দেখে মুনের গায়ে দাগ পরে গেছে রোদের খুব খারাপ লাগছে। রোদ মুনের কপালে চুমু খেয়ে আঘাতে হাত বুলিয়ে দিচ্ছে।
তখনই মুনের ঘুম ভেংগে যায় মুন তাকিয়ে দেখে রোদ ওর দিকে তাকিয়ে আছে।
মুন চোখ নামিয়ে উঠতে গেলে রোদ উঠতে দেয় না । মুনের মনে একটা চাপা অভিমান কাজ করছে । করাটাই স্বাভাবিক ।
রোদ: কি ব্যাপার উঠছো কেনো ?
মুন: বাসায় যেতে হবে তো ( অভিমানী কণ্ঠে)
রোদ বুঝলো যে মুনের মনে অনেক অভিমান জমে আছে ।
রোদ মুনকে আরো কাছে টেনে বললো
রোদ: কোথাও যাবে না চুপ করে শুয়ে থাকো। তোমার জন্য কাল ঘুমাতে পারিনি ভালো মত ঘুমিয়ে তারপর যাবো।
মুন: না আমি উঠব( নিজেকে ছাড়িয়ে)
রোদ: দেখো একদম রাগিয়ে দিবা না চুপ করে শুয়ে থাকো।
মুন কিছু বললো না
রোদ: মুন আমি তোমাকে কষ্ট দিতে চাইনা কিন্ত কি করব মাঝে মাঝে তুমি আমাকে যেভাবে রাগিয়ে দাও। খুব ভালোবাসি তোমায় কখনো ছেড়ে যেও না তাহলে মরে যাবো বিশ্বাস করো আর কখনো কষ্ট দিব না। তোমাকে ছাড়া যে আমার নিশ্বাস নিতে কষ্ট হয়। খুব ভালোবাসি খুব ( করুন কণ্ঠে)
মুনের খুব খারাপ লাগলো । রোদকে এভাবে করুন কণ্ঠে কখনো কিছু বলতে শোনেনি।
মুন: আমার কি ওকে একটু বুঝা উচিৎ দোষ তো রোদের না যে কেউ ওই পিক দেখলে ভুল ভাববে আমাকে রোদকে সব বলতে হবে।( মনে মনে)
মুন: রোদ আমার আপনাকে অনেক কিছু বলার আছে।
রোদ: এখন কোনো কথা না চুপ করে শুয়ে থাকো তোমার ও শরীর খারাপ ( মুনের কপালে চুমু খেয়ে)
মুন: রোদ আমার কথাটা একটু শুনুন।
রোদ: উফফ বললাম না ঘুমাও চুপ।
মুন আর কিছু বলল না । কিছুক্ষণ পর রোদ ঘুমিয়ে পরলো।
কিন্ত মুনের চোখে ঘুম নেই মুন তো কালকের ঘটে যাওয়া সব কথা মনে পড়ছে।মুনের খুব খারাপ লাগছে শরীরে খুব ব্যাথা।
অনেকক্ষণ পর
মুন আর শুয়ে থাকতে না পেরে উঠতে গেল কিন্ত উঠবে কি করে রোদ যেভাবে ওকে ধরে আছে । মুন নিজের অজান্তেই রোদকে দেখে হেসে দিল। রোদ বাচ্চাদের মত শুয়ে আছে।
মুন: ঘুমের ঘোরে কি কিউট লাগে কিন্ত জেগে থাকলে পুরাই সাইকো।
মুন রোদের কপালে চুমু খেল ২গেলে চুমু খেয়ে উঠে পরলো।
মুনের উঠতে খুব কষ্ট হচ্ছে ধীরে ধীরে উঠে ওর আব্বু আম্মুর রুমে গেলো।
ওর আব্বু আম্মুর রুমে ওদের ৩জনের বড়ো ছবি।
মুন ছবিটা দেখে কাদতে লাগলো।
কিছু ক্ষণ কেদে ওর আম্মুর ক্যাবার্ড থেকে সারী বের করলো।
ওয়াশ্রুমে গিয়ে সারী পরে বেরিয়ে আসলো।
মুনের ওর আব্বু আম্মুর সব কথা বার বার মনে পড়ছে মুন নিজেকে ধরে রাখতে না পেরে কেদে দিলো। এই তো কিছু দিন আগের কথা ওরা ৩জন কত খুশি ছিল কিন্ত একটা ঝড় মুনকে একা করে দিল।
মুন কেদেই যাচ্ছে তখন হটাৎ কেউ মুনকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরলো।
মুনের বুঝতে বাকি নেই এটা কে কারণ রোদের সব কিছু যে মুনের খুব চেনা এমন কি গায়ের গন্ধ ও।
মুন চোখ মুখ মুছে পিছনে তাকালো।
মুন: আপনি এখানে।
রোদ: হুম আমার বউটা একা একা করছিলো তাই আমি চলে আসলাম।( কোমর জড়িয়ে)
মুন কিছু বললো না
রোদ: আব্বু আম্মুর কথা খুব মনে পড়ছে( মুনের গালে হাত দিয়ে)
মুন নিজেকে ধরে রাখতে না পেরে রোদকে জড়িয়ে ধরে কেদে দিলো।
রোদ ও মুনকে জড়িয়ে ধরে মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে।
কিছুক্ষণ পর
রোদ মুনের মুখ তুলে
রোদ: দেখি আর কত কাদ্বে। কাদতে কাদতে মুখ লাল হয়ে গেছে আর কাদতে হবে না আমি তো এখন ও মারিনি।
মুন: রদদ্দ প্লিজ এমন ধরনের কথা বলবেন না।
রোদ: কেনো আমি মরলে তুমি খুশি হবা না কাল যে এত মারলাম
মুন: খুশি হব না মানে খুব খুশি হব এতো খুশি আগে কখনো হবো না ( অভিমানী কণ্ঠে)
রোদ: ওহ আচ্ছা তাহলে তো এখনি মরতে হবে আমার বউ এর খুশির জন্য
এবার মুন কেদে দিল।
রোদ: কি হলো কাদছো কেনো।
মুন: আপনি না খুব খারাপ
রোদ: আমি জানি আমি খুব খুব খুব খারাপ
মুন: প্লিজ আমাকে ছেড়ে কোথাও যাবেন না আমি বাঁচতে পারব না( জড়িয়ে ধরে)
রোদ: তুমি ভাবলে কি করে আমি এতো সহজে মরবো আমি মরলে তোমাকে জ্বালাবে কে তোমাকে জ্বালানোর জন্য আমার সন্তান কে খুব তাড়াতাড়ি আনতে হবে তার পর ২জন মিলে তোমাকে জলবো( চোখ টিপ মেরে)
মুন লজ্জা পেয়ে কিছু বললো না ।
রোদ: চিন্তা করো না তোমার দলে ও কিছু দেবো
মুন এবার রোদের বুকে কিল মারতে লাগলো।
রোদ: কি হলো এভাবে কেউ স্বামী কে মারে পাপ লাগবে যে
মুন: আর কাল যে আপনি আমায় মারলেন তখন(মারতে মারতে)
রোদ: সরি বউ।
মুন: সরিতে কাজ হবে না
রোদ: তাহলে।
মুন: আমি যা বলব তাই করতে হবে।
রোদ: ওকে রাজি।
মুন: তো শুরু করুন।
রোদ: কি ( অবাগ হয়ে)
আধা ঘন্টা পর
রোদ: ও বউ প্লিজ এবারের মতো মাপ করে দাও আর কখনো ওমন করবো না সরি।
মুন: কোনো কথা হবে না
রোদ: আর যে পারছি না পা ব্যাথা করছে
মুন: আর আমার যে কত ব্যাথা লেগেছিল তার বেলায়।
রোদ: বউ গো মাপ করে দাও।( কান ধরে)
মুন: থামলে চলবে না এখন ও আধা ঘন্টা ( হেসে)
হ্যা মুন রোদকে কান ধরে উঠবস করাচ্ছে।
রোদ: খুব হাসি পাচ্ছে না আমর ও দিন আসবে।
মুন: আসুক না দিন কে ও রাত আসুক সমস্যা নেই।
তখনই ফোন বেজে উঠে।
রোদ: বউ ফোন বাজছে ধরবো কোনো ইম্পর্ট্যান্ট কাজ
মুন: হুম ধরেন আমি আপনার জন্য কফি আনছি।
রোদ: এই একদম না এই শরীর নিয়ে তুমি কোথাও যাবে না।
মুন: কিন্ত আপনি প্রতিদিন কফি খান।
রোদ: সমস্যা নেই আজ অন্য কিছু খাবো
বলে ফোন নিয়ে বাইরে গেলো।
আর মুন বসে বসে হাসছে।
মুন: খুব হয়ছে আজ সাইকোটাকে মজা বোঝাতে পারছি আমাকে কতো কষ্ট দিয়েছিল ।
এদিকে
রোদ: কি দেশের বাইরে গেছে মানে।
ওপাশ থেকে: হা স্যার দেশের বাইরে চলে গেছে আমাদের কিছু বুঝে উঠার আগেই।
রোদ: ওকে সমস্যা নেই আমি দেখছি ব্যাপারটা
ওপাশ থেকে: ওকে স্যার
( রোদ এতক্ষণ ওর বডিগার্ড এর সাথে কথা বলছিল)
কথা বলা শেষে রোদ মুনের কাছে গেলো।
গিয়ে দেখে মুন বারান্দায় দাড়িয়ে আছে।
রোদ মুনকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরলো।
রোদ: কি এখানে দাড়িয়ে কিছু করছো বাড়ি যেতে হবে না
মুন: হুম চলেন ।
রোদ: যাবো তার আগে আমার মিষ্টি
মুন: এখানে মিষ্টি কই পাবো
রোদ কিছু না বলে ওর মিষ্টি নিয়ে নিল ।
রোদ: এটাই আমার মিষ্টি।
মুন: অসভ্য লোক( ঠোঁট মুছে)
রোদ: সব তোমার এবার কল।
রোদ আর মুন বেরিয়ে পড়লো।
গাড়িতে টক মিষ্টি দুষ্টুমি তো লেগেই আছে।
অনেক ক্ষণ পর ওরা বাড়ি পৌঁছে গেলো।
রাইমা: কিরে সেই কাল গেলি আর আজ খোজ পাওয়া গেলো ।
মুন: আসলে মামনি
রাইমা: থাক তোকে আর কিছু বলতে হবে না।
যা গিয়ে ফ্রেশ হয়ে আয়।
মুন: ওকে মামনি
মুন আর রোদ গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নিচে খেতে আসলো।
রোদ: উফফ আম্মু তাড়াতাড়ি দাও তো খুব খুদা লাগছে।
রাইমা: হে দিচ্ছি।
মুন: এমন ভাব করছে যেনো কত দিন খায়নি( মনে মনে)
মুন: মামনি পাপাই কই?
রাইমা: তোর পাপাই অফিসে
মুন: মামনি খাওয়ায় দাও।
রোদ: না আজ আম্মু আমাকে খায়িয়ে দেবে
মুন: আজব তো আপনি নিজে হাতে খান না
রোদ: আমি আমার আম্মুর হাতে খাবো তাতে তোমার কি?
মুন: আমার সব
রোদ: হিংসুটে একটা
মুন: আপনি হিংসুটে ( ভেংচি কেটে)
রোদ: বেয়াদোব মেয়ে স্বামীর সাথে ঠিক ভাবে কথা বলতে পারো না কি শিখেছ?
মুন: আপনি।
রাইমা: এই থাম তো তোরা বাচ্চাদের মত করে বিয়ে হয় ছে তোদের এখন ও আগের মত।
রোদ: তোমার মেয়েকে একটি শিখিয়ে দাও কিভাবে স্বামীর সেবা করতে হয়
মুন: হুই আয়ছে আমার সোয়ামি
রাইমা: ওই চুপ কর ২টা নাহলে কানের নিচে দেবো। খা তোরা আমি গেলাম (বলে চলে গেলো)
মুন:😒
রোদ: অভাবে তাকানোর কি আছে?
মুন: আপনার জন্য সব হয়ছে
রোদ: আমি কি করলাম তুমি তো বেশি বকো
মুন: কিইই
থাকেন আপনি।
বলে মুন চলে যেতে গেলে রোদ মুনের হাত টান নিয়ে নিজের কোলে বসায়।
রোদ: কোথায় যাচ্ছ খাবার না খেয়ে হুম
মুন: খাবো না আমি ( মুখ গুমরা করে)
রোদ: বোকো যাই করো নিজের যত্ন না নিলে কালকের মতো আবার মরবো।
মুন: আপনার একটু ও খারাপ লাগেনি অভাবে মারতে (ইনোসেন্ট ফেস করে)
রোদ: লেগেছিল তো খুব কষ্ট লেগেছিল কিন্ত রাগটা ওর বেশি ছিল।( কোমর জড়িয়ে)
মুন: হুই ( ঠোঁট উল্টিয়ে)
রোদ: আর মরবো না খেয়ে নাও
বলে খাবার মুখে দেয় মুন ও চুপচাপ খায় ।
মুনের খাওয়া শেষ।
মুন: এবার আমি আপনাকে খায়ইয়ে দি
রোদ: আমার সব কিছুর উপর শুধু তোমার অধিকার কোনো কিছুর জন্য অনুমতি নেওয়ার দরকার নেই।
মুন একটা মুচকি হাসি দিয়ে রোদকে খায়ীয় দেয়।
দুর থেকে ওদের ২জনকে দেখে রাইমা চৌধুরী খুব খুশি হয়।
রাইমা: আল্লাহ এদের এভাবে সব সময় হাসি খুশি রেখো কারোর নজর যেনো ওদের ভালোবাসার উপর না পরে।
খাওয়া শেষে মুন রোদ ঘরে যায়।
রোদ: মুন
মুন: জী
রোদ: আমাকে এখন যেতে হবে
মুন: এখনই
রোদ: হুম তাড়াতাড়ি চলে আসবো।
মুন: আচ্ছা
রোদ: নিজের খেয়াল রেখো।
মুন: হুম সাবধানে যাবেন।
রোদ মুনের কপালে ভালোবাসার পরশ দিয়ে চলে যায়।
মুন রাইমা চৌধুরীর সাথে কথা বলতে যায়।
রাতে রোদ বাড়ি আসে ।
রোদ: মুন মুন কই তুমি
মুন: এই তো
রোদ: কোথায় ছিলে।
মুন: বারান্দায়
রোদ: নাও এগুলো ধরো ( প্যাকেট হাতে দিয়ে)
মুন: কি আছে এর মধ্যে?
রোদ: খুলে দেখো।
মুন খুলে দেখে ওর মধ্যে অনেক ধরনের চকোলেট আছে।
মুন: আমার ফেভারিট
রোদ: হম খুশি তো
মুন: খুব খুব খুব।
মুন চকোলেট খেতে লাগলো।
রোদ ওয়াশরুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে বেরিয়ে এসে দেখে মুন এখন ও বসে বসে বাচ্চাদের মত করে চকলেট খাচ্ছে।
রোদ: পাগলী একটা।
রোদ একটা হাসি দিয়ে মুনের কোলে গিয়ে শুয়ে পড়ে।
চলবে,