তোমার জন্য সাইকো
লেখক: নুসরাত জাহান অংকুর
পার্ট_১৬
মুন: মামনি
রাইমা চৌধুরী: কিরে এতো তাড়াতাড়ি উঠলি।
মুন: এমনি খুব ভেঙ্গে গেছে।মামনি রোদের জন্য কফি দাও
রাইমা: ওহ আচ্ছা আয়
মুন গিয়ে ওর মামনির কাজে হেল্প করতে লাগলো।
রোদের ঘুম ভেংগে গেল । রোদ চারিদিকে তাকিয়ে দেখে মুন নেই। হটাৎ ওর কালকের কথা মনে পরলে।
রোদ: উফফ এটা আমি কি করলাম মুনকে এত কষ্ট দেওয়ার উচিত হয়নি। ওর অনুমতি ছাড়া। না আমি তো ওর হাসব্যান্ড আমার অধিকার আছে।
কিন্ত উফ আর ভাবতে পারছি না মাথা টা ব্যাথা করছে।
রোদ উঠে ফ্রেশ হয়।
ফ্রেশ হয়ে বেরিয়ে এসে দেখে মুন কফি নিয়ে দাড়িয়ে আছে।
মুনকে আজ খুব সুন্দর লাগছে। একদম নিল পরীর মত।রোদ মুনকে আগে কখনো সারী পরতে দেখিনি। রোদ অপলক নয়ণে মুনের দিকে তাকিয়ে আছে।
হটাৎ রোদের মুনের গলার দাগের দিকে নজর যায়।
রোদ কিছু না বলে কফিটা নিয়ে বেলকলনিতে চলে যায়।
মুন ওখানে আর না দাড়িয়ে নিচে চলে আসে।
খাবার টেবিলে সবাই বসে আছে।
রাইমা: কিরে মুন রোদ কই?
মুন: মামনি আমি ডাকতে যাচ্ছি।
তখনই রোদ নিচে নামলো।
রোদ এসে বসে পরলো।
মুন দাড়িয়ে গেলো।
নিহাল: কিরে মা দারালি কেনো?
মুন: পাপাই তোমরা খাও আমার খিদে নেই আমি একটু পর খাবো।
রাইমা: খিদে নেই মনে ভার্সিটিতে যেতে হবে না।
মুন: না মানে আসলে।
( আমি যদি এখন বসি তো রোদ তো চলে যাবে)মনে মনে
রোদ বুঝতে পারছে মুন কেনো উঠে গেলো।
রোদ কিছু না বলে খেয়ে যাচ্ছে।
নিহাল: রোদ যা হয়ছে ভুলে যাও নতুন করে সব শরু করো মুনকে ভার্সিটিতে যেতে দাও।
রোদ কিছু না বলে খেয়ে যাচ্ছে।
নিহাল: আমি কি বলছি তুমি শুনছো।
রোদ: আমি বেরোলাম
বলে উঠে গেলো
নিহাল: রোদ মুনকে নিয়ে যাও।
মুন: পাপাই আমি একা যেতে পারবো।
নিহাল: না তুমি বাসার গাড়িতে যাবা।
মুন: পাপাই আমি ভাবছি কি আমি আমার বাড়ি যাবো ওখানে আমার স্কুটি আছে আব্বু কিনে দিয়েছিল ওটা নিয়ে আসবো আর বাড়িটা ও দেখা হয়ে যাবে।
রাইমা: কিন্ত ওতো দুর তুমি যাবে কি করে?
মুন: মামনি আমি গাড়িতে যাবো।
নিহাল: আচ্ছা যা ভালো বোঝ করো একটা নতুন কিনলে তো হয়
মুন: না পাপাই ওটাতে আমার আব্বু স্মৃতি আছে।
রাইমা: আচ্ছা তাহলে তুই খেয়ে বেরিয়ে পর
মুন: হুম মামনি ।
মুন খেয়ে বেরিয়ে পরলো।
রোদ অফিস বসে বসে ভাবছে মুনের সাথে যা করলো টা কি ঠিক হলো।
এসব ভাবছে তখনই রোদের বডিগার্ড এর ফোন আসলো।
রোদ ফোন ধরে
রোদ: হুম বল।
ওপাশ থেকে: …
রোদ: আচ্ছা ওর দিকে নজর রাখ আর কোথায় যায় সব আমায় জানাও
ওপাশ থেকে…
রোদ: হুম
বলে রোদ রেখে দিল।
রোদ অফিসার কাজ করতে লাগলো।
মুন যাচ্ছে তখনই ওর গাড়ির সামনে আর একটি গাড়ি এসে দাড়িয়ে পড়লো। ড্রাইভার গাড়ি ব্রেক করলো।
মুন: কি হলো?
ড্রাইভার: ম্যাডাম সামনে
মুন সামনে তাকিয়ে দেখে অন্য একটি গাড়ি দাড়িয়ে আছে।
সেই গাড়ি থেকে আরুশ বেরিয়ে আসলো।
মুন তো আরুশ কে দেখে অবাগ।
আরুশ গাড়ির কাছে এসে মুনকে বের করলো।
মুন: কি ব্যাপার আপনি জেল থেকে ছাড়া কিভাবে পেলেন ?
আরুশ: কেনো জান তুমি কি ভেবেছিলে আমি ওখানেই থাকবো। আমাকে আটকাতে কেউ পারবে না বুজলে।
মুন: ফালতু কথা বাদ দিয়ে আমাকে কেনো নামালেন সেটা বলেন( রেগে)
আরুশ: তোমাকে আমি ভালোবাসি কেনো বোঝ না
মুন: আমি অন্য কেউ কে ভালোবাসি আর আমার বিয়ে হয়ে গেছে তাই আমার আসা বাদ দিন আমার স্বামী জানলে আপনার যে কি করবে সেটা আপনি জানেন না।
আরুশ: কি করবে একটু বলো শুনি
এই বলে হুট করে মুনকে জড়িয়ে ধরলো।
মুন অনেক চেষ্টা করছে ছড়ানোর শেষে ছাড়িয়ে
ঠাসস করে একটা কর বসিয়ে দিল
মুন: পেয়েছেন আপনার উত্তর সেদিন কিছু বলতে পারিনি বলে ভাববেন না যে যা খুশি তাই করবেন আর আমি চুপ করে থাকবো নেক্সট টাইম আমার সামনে আসলে জানে মেরে দেবো।
বলে মুন গাড়িতে উঠলো।
মুন: ড্রাইভার গাড়ি চালান।
আরুশ: দেখি তুমি আমার থেকে কোথায় পালায় তোমাকে তো আমার আছে ধরা দিতেই হবে যেভাবেই হোক।বলে একটা বাকা হাসি দিল।
মুন ওর বাড়ি গিয়ে ওর আব্বু আম্মুর সব জিনিস গুলো দেখতে লাগলো।
মুন: আব্বু আম্মু দেখো তোমাদের মেয়ের বিয়ে হয়ে গেছে যার সাথে তোমরা চেয়েছিলে তার সাথে। আজ যদি তোমরা থাকতে তাহলে কত খুশি হতে।
মুন ওর আব্বু আম্মু কবরে গিয়ে কান্না করতে লাগলো।
অনেকক্ষণ সেখানে থেকে মুনের বাড়ি গিয়ে সব কিছু ঠিক করতে লাগলো।
তখনই রোদ আসলো।
মুন তো রোদকে দেখে খুশি মুন ভাবছে রোদ ওকে নিয়ে আসছে।
মুন: রো..
আর কিছু বলতে পারলো না রোদ এসে মুনের গালে ঠাস করে চর বসিয়ে দিল।
মুন গালে হাত দিয়ে রোদের দিকে তাকিয়ে আছে। রোদের চোখ অনেক লাল হয়ে আছে।
রোদ : ভেবেছিলাম কাল কের ঘটনার পর থেকে হয়টো আমাকে ছেড়ে যাওয়ার কথা মাথায় আনবি না কিন্ত আমি ভুল ছিলাম।
বলে বেল্ট খুলে মুনকে ইচ্ছা মত পিটাতে লাগলো ।
মুন ব্যাথায় কেদে দিচ্ছে বার বার ক্ষমা চাচ্ছে কিন্ত রোদের মনে আজ মুনের জন্য একটু ও দয়া নেই।
মুন ব্যাথা সহ্য করতে না পেরে সেন্সলেস হয়ে পরে।
টা ও রোদের পাষাণ মুন গোলে নি ইচ্ছা মত পিটিয়ে রোদ মুনের রক্তাক্ত শরীরের দিকে তাকিয়ে আছে।
রোদ চোখ দিয়ে পানি পড়ছে। রোদ মুনকে এভাবে দেখতে পারছে না।
কিন্ত আজ ওর রাগ ও যে অতিরিক্ত হয়েছিল।
অতীত
রোদ যখন অফিসের কাজ করছিল তখন রোদের কাছে একটা মেসেজ আছে রোদ মেসেজটা ওপেন করে দেখে ওতে আরুশ আর মুনের পিক যেখানে আরুশ মুনকে জড়িয়ে ধরে আছে।
এটা দেখে রোদের মাথায় রক্ত উঠে যায়।
তখনই ওর কাছে ফোন আসে রোদ ফোনটা ধরে।
আরুশ: কিরে আমার দেওয়া গিফট পেয়েছিস এটা তোর বিয়ের গিফট।
রোদ: তোর সাহস কি করে হয় মুনকে টাচ করার।
আরুশ: হাসালী মুনকে আমি ছাড়া কে টাচ করবে তুই তো ওকে বিয়ে করে নিলি কিন্ত ও এখন ও আমায় ভালোবাসে। তাই তো বাড়িতে মিথ্যে বলে আমার সাথে দেখা করতে আসছে। উফফ যা ভালোবাসে আমায় কি বলবো
রোদ: তোকে তোর আমি
আরুশ: আমাকে কি হা জেলে দিবি কিন্ত কত দিনের জন্য সেই তো আমি মুনের কাছে আসবো।
রোদ কিছু না বলে ফোন কেটে ওর বডিগার্ড এর কাছে ফোন দিয়ে শুনে যে মুন আরুশ এর সাথে দেখা করেছিল কি না।
যখন জানতে পারে যে হা তখন রোদ মুনের কাছে যায়।
তারপর তো আপনরা জানেন।
বর্তমান
রোদ ডক্টর কে ডেকে মুনের চেকআপ করলো।
ডক্টর: একটা বাচ্চা মানুষকে কে এভাবে মারলো?
রোদ: আমার স্ত্রীর গায়ে আমি ছাড়া কে হাত দেবে
ডক্টর কিছু না বলে মুনকে একটা ইনজেকশন দিয়ে কিছু ওষুধ দিয়ে চলে গেলেন ।
রোদ মুনের কপালে চুমু খেয়ে মুনের হাত ধরে বসে আছে।
রোদ: আমি এটা করতে চাইনি যানো সত্যি আমি তোমার গায়ে হাত দিতে চাইনি কিন্ত তুমি আমার রাগ উঠিয়ে দিয়েছ। কেনো তুমি আরুশ এর সাথে দেখা করলে কেনো আমি কি তোমাকে ভালোবাসি না বলো ।
পাশে থাকা কাচের টেবিলে বারি দিয়ে।
রোদের হাত দিয়ে রক্ত পড়ছে কিন্ত রোদের সেদিকে খেয়াল নেই রোদ তো ঐ ছবি গুলোর কথা মনে করে ওর রাগ আরও বেড়ে যাচ্ছে।
রোদের চোখ দিয়ে কয়েক ফুটা পানি গড়িয়ে পরলো।
রাত ২ টাই মুনের সেন্স ফিরলো।
মুন তাকিয়ে দেখে রোদ নিচে পরে আছে আর ওর হাতে রক্ত শুকিয়ে গেছে।
মুন অস্তে আসতে উঠে রোদ পাসে গিয়ে বসলো তারপর টেবিল থেকে ফাস্টাসেবক্স নিয়ে রোদের হাতের রক্ত মুছে দিয়ে ওষুধ লাগিয়ে দিল।
রোদ তাকিয়ে দেখে মুন ওর হাতে ওষুধ লাগিয়ে দিচ্ছে।
রোদ উঠে বসতে ।মুন ভয়ে পিছিয়ে গেলো।রোদ মুনের কাছে যেতে গেলে
মুন: রোদ প্লিজ আমাকে আর মেরো না আমি আর পারছি না ( কেদে কেদে)
রোদ মুনকে কাছে টেনে মুনকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো।
মুন ভয়ে কিছু বলতে পারছে না।
রোদ: কেনো আমাকে এত কষ্ট দাও বলো তো কেনো ।তুমি যদি আরুশ এর সাথে দেখা করতে না যেতে তাহলে তো আমি এমন কিছু করতাম না কেনো দেখা করতে গেলে কেনো?
মুন বুঝলো যে রোদকে ভুল বুঝানো হয়েছে।
মুন রোদ বুক থেকে উঠে কিছু বলতে যাবে তার আগে আবার রোদের বুকে শুয়ে পড়ল শরীর দূর্বল থাকার কারণে ।
রোদ বুজলো যে মুনের শরীর খুব দূর্বল তাই রোদ মুনকে কোলে নিয়ে বিছানায় বসালো।
কপালে একটা চুমু দিয়ে খাবার আনতে গেলে
মুন রোদের হাত ধরে।
মুন: রোদ আমার অনেক কিছু বলার আছে।
রোদ কিছু না বলে হাত ছাড়িয়ে মুনের জন্য খারাপ আনতে যায়।তখনই রোদের ফোন কল আসে।রোদের ব ফোন দেছে রোদ ধরে
ওপাশ থেকে…
রোদ: what
ওপাশ থেকে…জী স্যার
রোদ: তুমি sure তো
ওপাশ থেকে…
রোদ : ওকে খুঁজে বের করো।
রোদ ফোন রেখে নিজেকে নিজের মারতে ইচ্ছা করছে।
রোদ: আমি এতো বড়ো ভুল করলাম কি করে একটা বার ও মুনের কথা ভাবলাম না। আমার বেচে থাকার কোনো অধিকার নেই
এটা আমি কি করে করলাম ছি আমি না জেনে শুনে মুনের গায়ে হাত তুললাম।
আমায় মুনের কাছে যেতে হবে ।
রোদ ঘরের দিকে যায় গিয়ে দেখে মুন ওভাবেই বসে আছে রোদ গিয়ে মুনের পাসে বসে মুন কে খাওয়াতে লাগলো আর মুন ও বাধ্য মেয়ের মত খেয়ে নিল।
খাওয়া শেষে রোদ মুনকে ওষুধ খাইয়ে দিল।
মুন: রোদ আমার কিছু বলার আছে( ভয়ে ভয়ে)
রোদ: আমি জানি তুমি কি বলবে কিন্ত এখন ওসব কথা না তোমার শরীর খুব খারাপ তার জন্য আমি দায়ী( মনে মনে)
মুন: রোদ
রোদ: হুশ কোনো কথা না লক্ষ্মী মেয়ের মতো শুয়ে পরো।
মুনকে আর কিছু বলতে না দিয়ে মুনকে বুজে জড়িয়ে শুয়ে পরলো যেনো মুনকে ছেড়ে দিলে মুন কোথায় চলে যাবে।
আজ যে রোদের আনন্দের দিন কত দিন পর নিজের ভালোবাসার মানুষকে বুকে নিতে পারছে।
রোদ: অনেক কষ্ট দিয়েছি তোমাকে আর না আর কখনো কষ্ট দেব না নিজের কাছে আগলে রাখবো আজকের জন্য সরি জানি সরি বললে ও ক্ষমা পাবো না কিন্ত খুব ভালোবাসি তোমায় । যার জন্য তোমাকে আঘাত করেছি তাকে ছাড়বো না( মনে মনে)
মুন: রোদকে সব বলতে হবে সব কিছু নাহলে আরো ভুল বুঝাবুঝি হবে ( মনে মনে)
মুন রোদের বুকে চুপটি করে শুয়ে আছে আর রোদ মুনের মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে।
২জন এসব ভাবতে ভাবতে ঘুমিয়ে পরলো
চলবে