তোমার জন্য সাইকো
লেখক: নুসরাত জাহান অংকুর
Part_1+2
ভার্সিটির সবার সামনে চুলের মুঠি ধরে টেনে নিয়ে যাচ্ছে রোদ নিজেকে বাঁচাতে প্রাণপণ চেষ্টা করে যাচ্ছি কিন্তু রোদের সারার কোনো নাম নেই টানতে টানতে ভার্সিটির বাইরে নিয়ে এসে গাড়িতে বসিয়ে সোজা বাড়িতে নিয়ে গেলো বাড়ি গিয়ে সবার সামনে ধাক্কা দিয়ে ফেলো দেলো অপিস্থিত সবাই আমার দিকে তাকিয়ে আছে আর আমি অনবরত কেদে যাচ্ছি (আসুন এবার পরিচয় দিয়ে দি আমি মুন চৌধুরী আর একটু আগে যে আমায় টেনে নিয়ে আসলো সে আমার আব্বুর বন্ধুর ছেলে রোদ আহমেদ।আমার বাবা মা নেই আমার বয়স যখন 17 তখন তারা মারা যায় তখন থেকে আমি আমার আব্বুর বন্ধ নাহিল আহমেদ চৌধুরীর বাড়ি থাকি বাড়ির সবাই আমায় খুব ভালোবাসে শুধু রোদ বাদে জানিনা কেনো সব সময় আমাকে বকে ।রোদের আম্মু রাইমা চৌধুরী আমাকে নিজের মেয়ের মতো দেখে ।বাকি কথা গল্প পড়লে জানতে পারবেন)
নাহিল চৌধুরী: কিরে রোদ তুই এভাবে মামনি কে ধাক্কা মেরে ফেলে দিলি কেন মামনির কতো ব্যাথা পেলো (কথা টা বলে আমার কাছে এসে আমাকে তুলে সোফায় বসি দিলো)
আমি তো কেদেই যাচ্ছি আর রোদ চোখ বন্ধ করে রাগ কন্ট্রোল করার চেষ্টা করছে
রাইমা চৌধুরী: হা রে বাবু তুমি মেয়ে তাকে এভাবে টেনে এনে ফেলে দিলে কেনো কি করছে ও
রোদ: সেটা ওকে জিজ্ঞেস করো ভার্সিটি তে কি যায় ছেলেদের সাথে আড্ডা দিতে কি শিখিয়েছো ওকে (চোখ বন্ধ করে বললো)
নাহিল চৌধুরী: কি হয়ছে রে মামনি রোদ এমন রেগে আছে কেনো? আমাকে বল মামনি
আমি: কিছু বলছি না শুধু কেদে যাচ্ছি
রোদ: ও কি বলবে আমি বলছি আজ ভাবলাম ওর তো কোথাও যাওয়া হয়না তাই ওকে নিয়ে একটি ঘুরতে ছেয়েছিলাম ওর ভার্সিটিতে গিয়ে দেখি একটা ছেলে ওর ওরনা ধরে আছে আর ও
নাহিল চৌধুরী: ব্যাস ( রোদ কে থামিয়ে দিয়ে)
আমি আর কিছু শুনতে চাইনা আমি আমার মামনির কাছ থেকে শুনতে চাই বলতো মামনি কি হয়েছে ( আমার দিকে তাকিয়ে)
আমি কিছু বলার অবস্থায় নেই শুধু কেদে যাচ্ছি
রোদ: ও কি বলবে ওর বলার কোনো মুখ আছে যত তাড়াতাড়ি পারো ওকে বিয়ে দিয়ে দাও নাহলে আমাদের মানসম্মান কিছু রাখবে না
আমি আর এক মুহুর্ত না দাড়িয়ে সোজা নিজের ঘরে এসে দরজা বন্ধ করে দিলাম ওখানে থাকা আমার পক্ষে সম্ভব না।
এদিকে
নাহিল চৌধুরী: তোমাকে কেউ বলতে বলছে মেয়ে আমার তাই আমি বুঝবো কি করতে হবে কি না আমার মামনি কে আমি খুব ভালো করে চিনি।
রাইমা চৌধুরী: তোর বাবা তো ঠিক বলছে মুন ওমন মেয়ে না যেমন তুই ভাবছিস
রোদ: আমি ওত কিছু বুঝিনা ওকে চোখে চোখে রাখবে ( এটা বলে রোদ বাড়ি থেকে বেরিয়ে গেলো)
নাহিল চৌধুরী: ছেলেটার যে কি হয় বুঝিনা মেয়েটার সাথে এমন ব্যাবহার কেনো করে
রাইমা চৌধুরী: ছেলেটা যে খুব ভালোবাসে মুনকে হারাতে চায়না তাই তো এমন করে ও তুমি বুজবা না।
নাহিল চৌধুরী: যাই করুক আমার মামনির যদি কোনো রকম ক্ষতি হয় সেটা আমি মেনে নেবো না ( কথাটা বলে নাহিল চৌধুরী চলে গেলেন)
আর রাইমা চৌধুরী একটা দীর্ঘ শ্বাস ছেড়ে কিচেনে চলে গেলেন
এদিকে রুম এ এসে বাথরুম এ শাওয়ার এর নিচে বসে অনবরত কেদেই যাচ্ছে মুন তার যে বাবা মার কথা মনে পড়ছে ।
আজ যদি বাবা মা বেচে থাকতো তো কতোই না ভালো হতো।কেনো ছেড়ে চলে গেলে কেনো তোমাদের সাথে নিয়ে গেলে না। তোমাদের ছাড়া আমার থাকতে খুব কষ্ট হয় প্লিজ ফিরে এসো।
এসব ভাবতে ভাবতে চোখটা একদম বুঝে এলো
এদিকে
রোদ রেগে গাড়ি নিয়ে একটা ফাঁকা জায়গায় গেলো
রোদ: কেনো মুন কেনো আমায় একটু বোঝো না । শুধু কি আমার রাগটাই দেখলে আমার ভালোবাসা কি কিছুই না তোমার কাছে। জানো তোমায় না খুব ভালোবাসি কিন্তূ সেদিনের কথা এখন ও আমার মনে পড়ে যখন
part_2
যখন তুমি আমাকে ছেড়ে চলে গিয়েছিলে
অতীত
আজ নাহিল চৌধুরী তার পরিবার নিয়ে আমজাদ চৌধুরীর বাড়ি যাচ্ছে(আমজাদ চৌধুরী মুন এর আব্বুর নাম আর আয়েশা বেগম মুন এর আম্মুর নাম)
আমজাদ চৌধুরী আজ খুব খুশি বহুদিন পর তার কলিজার বন্ধুর সাথে দেখা হবে । মুন ৪ বছর এর বাচ্চা মেয়ে খেলা করে বেড়াচ্ছে।
আমজাদ চৌধুরী: কি হলো বেগম সাহেবা সব রেডী তো কোনো কিছুর যেনো কমতি না থাকে আজ আমার বন্ধু আসছে।
আয়েশা বেগম: হ্যা সব ঠিক আছে । ওরা কখন আসবে ফোন দিয়ে…
নাহিল চৌধুরী: আসবে না এসে গেছে ( ভিতরে ঢুকতে ঢুকতে)
আমজাদ চৌধুরী: ওই তো আরে আসো আসো চৌধুরী বাড়িতে স্বাগতম (বুকে জড়িয়ে ধরে)
নাহিল চৌধুরী: ওই মিয়া চৌধরী কি একা তুই
আমজাদ চৌধুরী: আরে হা আমি তো ভুলেই গেছিলাম …টা ভাবী কেমন আছেন?
রাইমা চৌধুরী: জি ভালো আপনি কেমন আছেন?
আমজাদ চৌধুরী: আলহামদলিল্লাহ ভালো টা এই বুঝি আপনাদের রোদ (রোদের দিকে তাকিয়ে)
নাহিল চৌধুরী: হা এটাই রোদ । যাও বাবা আংকেল এর কাছে যাও
রোদের আমজাদ চৌধুরী কাছে যায় আমজাদ চৌধুরী রোদ কে অনেক আদর করে আর বাড়িটা ঘুরতে বলে। রোদ ও সব টা ঘুরে ঘুরে দেখছে।
আয়েশা বেগম আর রাইমা চৌধুরী মিলে গল্প করে
আর দুই বন্ধু অনেক পর একসাথে গল্প জুড়ে দেছে
এদিকে রোদ ঘুরতে ঘুরতে একটা ঘরের সামনে গিয়ে দেখে ঘরটা খুব সুন্দর করে সাজানো। দেয়ালটা বেবি পিঙ্ক রঙের করা বিছানার পাশে বড়ো বড় টেডিবিয়ার । রোদ ঘর টা দেখছে তখন পিছনে থেকে কেউ ধাক্কা মেরে ফেলে দিয়ে খিল খিল করে হেসে ওঠে
রোদ তাকিয়ে দেখে একটা বাচ্চা মেয়ে পিঙ্ক কালার এর ড্রেস পড়ে চুল গুলো ছোট ছোট ঝুঁটি করা মুখে হাত দিয়ে হাসছে রোদের খুব রাগ হলো
রোদ: এই মেয়ে কে তুমি আর এভাবে আমায় ভয় দেখলে কেনো যদি আমার কিছু হয়ে যেতো(রাগী ভাব নিয়ে)
মুন: এই তুমি এত ভিত কেনো ( বলে আবার হাসতে লাগলো)
রোদ: কি আমি ভীত তুমি তো আমাকে ভঁয় দেখালে
মুন: তুমি ভয় পেলে কেনো আর এটা তো আমার রুম তুমি কি করছো আমার রুম এ ( ভ্রু কুচকে )
রোদ: আমি তো এমনি দেখছিলাম।আমার নাম রোদ তোমার নাম কি?
মুন: আমার নাম মুন।তুমি আমার সাথে খেলা করবে আমার খেলার কেউ নেই
রোদ: নআয়া আমি খেলবো না তুমি আমায় ভয় দেখিয়েছো
মুন: সরি আমি আর ভয় দেখাবো না প্লিজ আমার সাথে খেলো( কিউট ফেস করে)
রোদের মায়া লাগলো কি মায়া ভরা দেখতে মেয়েটাকে
রোদ: তুমি তো একটা বাচ্চা মেয়ে
মুন: না আমি বাচ্চা না(কোমরে হাত দিয়ে)
রোদ: হা তুমি বাচ্চা
মুন: খেলতে হবে না আমার সাথে ( মুখ ভেংচি কেটে)
রোদ:( হালকা হেসে) আছা খেলবো কিন্ত এখন না পরে
মুন: আচ্ছা তুমি কার সাথে এসেছো
রোদ: আব্বু আম্মুর সাথে ।উপরে এসে বাড়ি টা ঘুরছিলাম
মুন: চলো আমি তোমাকে সব ঘুরিয়ে দেখছি (মুন ওর সব কিছু রোদকে দেখাতে লাগলো আর রোদ ও দেখছে মুন এখে একে সব কিছু দেখাতে লাগলো ওদের মধ্যে খুব ভালো বন্ধুত্ব হলে গেলো )
কিছুক্ষণ পর ওরা নিচে চলে আসলো
আমজাদ চৌধুরী আর নাহিল চৌধুরী এখন ও গল্প করছে ( পোরানু বন্ধু বলে কথা)
আয়েশা বেগম আর রাইমা চৌধরী ওদের খেতে ডেকে গেলো। খাওয়া দাওয়া শেষে ওদের যাওয়ার সময়
রোদ: তুমি আমাদের বাড়ি এসো আমার সব প্রিয় জিনিস তোমাকে দেখাবো।
মুন: আব্বু এর সাথে ঘুরে আসবো
রোদ: আচ্ছা আমি চলে যাচ্ছি টাটা
মুন: টাটা
( রোদ যাওয়ার আগে অনেক চকোলেট দিয়ে গেলো)
এভাবে প্রায় মুন আর রোদের দেখা হতো আর ফোন এ তো কথা হতোই রোদ আচতে আসতে মুন এর প্রতি দূর্বল হতে শুরু করে…..
মুন এর আব্বু বিজনেস এর জন্য দেশের বাইরে যাবে কয়েক বছর থাকবে মুন দের যাওয়ার দিন রোদের সে কান্না মুন কে কিছুতেই যেতে দেবেনা ছোটো মুন তো ওতো কিছু বোঝে না রোদ বারবার ওকে যাওয়ার জন্য বারন করছে কিন্ত মুন তো নতুন জায়গায় যাওয়ার জন্য ব্যাকুল রোদের কান্না ও সেদিন দেখে ও দেখেনি আর মুন তো ছোটো বাবা মাকে সারা থাকবে বা কি করে।সেদিন মুন একা যায়নি রোদের ভলোবাসা ও নিয়ে গিয়েছিল।তারপর মুন ওখানে গিয়ে যখন রোদের সাথে যোগাযোগ করতে চায় রোদ কথা বলতে নারাজ ।মুন বড়ো হয় রোদ ও বড়ো হয় মুন দেশে ফিরে রোদের সাথে দেখা করতে যায় কিন্তু রোদ ওকে চিনে ও না চিনার ভান করে ।রোদের বয়স্ যখন ২২ আর মুনের বয়শ যখন ১৭ তখন মুনের বাবা মা গাড়িতে আসার সময় অ্যাকসিডেন্ট করে মারা যায় তখন থেকে মুন রোদের বাড়িতে থাকে
বর্তমান
রোদ গাড়ির উপর বসে কথা গুলো ভাবছে আর চোখ দিয়ে টপটপ করে পানি পরছে।
রোদের ধ্যান ভেঙ্গে ফোনের রিংটোন এর চোখ টা মুছে ফোন টা হাতে নিয়ে দেখে বাড়ি থেকে ফোন করছে নিজেকে ঠিক করে ফোনটা রিসিভ করে
রোদ: হ্যালো…
রাইমা চৌধুরী: রোদ তুই কোথায় এদিকে মুন তো সাওয়ার এর নিচে ভিজে শরীর একদম ঠান্ডা হয়ে গেছে তুই তাড়াতাড়ি বাড়ি আয়
রোদ: whaaat?? ওকে আমি এক্ষুনি বাড়ি আসছি (বলে ফোন টা কেটে দিল)
রোদ: মুন তুমি এটা কী করলে কেনো আমি নাহয় একটু বেশি বলেছিলাম তাই বলে কি তুমি এমন করবেন। যার জন্য তোমার সাথে খারাপ ব্যাবহার করতে হলো তাকে তো আমি ছাড়বো না (কথাটা বলে কাকে যেনো ফোন করলো)
রোদ: বুঝতে পারছো কি করতে হবে
ওপাশ থেকে:………..
রোদ: গুড কাজ টা যেনো হয়ে যায় ।
ওপাশ থেকে…….
রোদ ফোনটা কেটে দিয়ে একটা রহিষজনিত হাসি দিয়ে গাড়িতে উঠে drive করতে লাগলো।
ওদিকে
মুন কে অনেক ডাকাডাকির পর যখন দরজা খুললো না তখন সা দিয়ে দরজা ভেঙ্গে দেখে মুন এর এই অবস্থা রাইমা চৌধুরী উনার স্বামী মিলে ডক্টর ডাকেন
ডক্টর: মেয়েটা এভাবে এতো শীতে ভিজলো কেনো ?
রাইমা চৌধুরী: জানিনা ডক্টর কখনো এমন করে না
ডক্টর: আমি কিছু ওষুধ লিখে দিয়ে যাচ্ছি আর রাতে কোনো সমস্যা হলে আমাকে জানাবেন
নাহিল চৌধুরী: ওকে ডক্টর আমার বডিগার্ড আপনাকে পৌঁছে দেবে জন( জন বডিগার্ড এর নাম)
ডক্টর: ওকে mr. চৌধরী
রোদ এসে দেখে মুন বিছানায় শুয়ে আছে ঠোট ফাকাসে হয়ে গেছে মুখে সেই উজ্জ্বলতা নেই
রোদ: মুন কেমন আছে ডক্টর কি বলছে?( ব্যাস্ত হয়)
রাইমা চৌধুরী: মুন ঠিক আছে ডক্টর ওষুধ দেছে এখন ঘুমাচ্ছে দেখ রোদ যা হয়চে বাদ দে মেয়েটকে আর কষ্ট দিস না এমনিতেই অনেক কষ্ট পেয়েছে
রোদ: হুমমম তোমরা যাও আমি ওর সাথে আছি
রুমে থেকে সবাই বেরিয়ে গেলো।রোদ ধির পায়ে মুন এর দিকে যাচ্ছে মুন এর পাশে বসে মুন এর কপালে নিজের গভীর ভাবে ছুয়িয়ে দিলো। রোদ দেখলো মুন এর খুব শীত লাগছে কাবার্ড থেকে কম্বল বের করে মুন এর গায়ে দিয়ে ওর পাশে বসে ওর দিকে তাকিয়ে থাকলো
রোদ: কেনো বোঝ না তোমায় যে খুব ভালোবাসি আমি তো তোমাকে ছেড়ে যায়নি তুমি গিয়েছিলে আমাকে ছেড়ে খুব কষ্ট দিছাও আমাকে এখন থেকে তোমাকে ও কষ্ট পেতে হবে তবে হ্যা তোমার কষ্ট টা শুধু আমি দেবো রেডী হয়ে নাও আমার love torture সহ্য করার জন্য (কথাটা বলে রোদ রহস্য জনিত হাসি দিয়ে মুন এর দিকে তাকিয়ে থাকলো)
চলবে….