তোমার জন্য সাইকো পর্ব-০৩

0
3849

তোমার জন্য সাইকো
Part_3
লেখিকা: নুসরাত জাহান অংকুর
সকালে,
মুন ঘুম থেকে উঠে দেখে রোদ ওর পাশে চেঁয়ারে বসে বিছানায় মাথা রেখে ঘুমিয়ে আছে।
ঘুমন্ত রোদকে দেখতে কি সুন্দর লাগছে ফর্সা চেহারায় গোলাপী ঠোট টা ফুটে উঠেছে।মুখে খুছা খুঁছা দাড়ি চুল গুলো সব সময় জেল দিয়ে রাখে কিন্ত আজকে চুল গুলো এলোমেলো হয়ে
আছে যা মুনকে রোদের দিকে টানছে।হটাৎ মুন এর কালকের কথা মনে পড়তেই মুন এর গলা সুখিয়ে গেলো
মুন: কালকে রোদ যা রেগে ছিল আজ যদি প্রতিদিন এর মত আরো বেশি অপমানিত হতে হয় (এসব মনে মনে ভাবছে )
রোদ যে উঠে পড়েছে সেদিকে মুন এর খিয়াল নেই মুন ওর মতো ভেবে যাচ্ছে। রোদ মুনের দিকে তাকিয়ে দেখে কি যেনো ভাবছে রোদ একটা মুচকি হাসি দিয়ে মুনকে বললো
রোদ: কি ব্যাপার কি এতো ভাবছো মন দিয়ে
(রোদের কথায় মুন এর ভাবনার ছেদ ঘটে)
মুন: নায়ায়া মানে আসলে
রোদ: ওতো মানে আসলে করতে হবে না তাড়াতাড়ি ফ্রেশ হয়ে রেডী হয়ে নিচে আসো ভার্সিটিতে যেতে হবে না
মুন: কি ব্যাপার রোদ কালকের ব্যাপার নিয়ে তো আমায় কিছু বললো না কি হলো( মনে মনে)
রোদ: কি ওতো ভাবচ তাড়াতাড়ি রেডী হতে নিচে আসো তাড়াতাড়ি ( এই বলে বেরিয়ে গেলো মুন এর রুম থেকে)
মুন: কাল সারারাত কি রোদ আমার ঘরে ছিল আজ বা এতো ভালো ব্যাবহার করলো কেনো সকাল সকাল কি কিছু খেয়েছে থাক বাবা ওতো ভেবে লাভ নেই তাড়াতাড়ি রেডী হয়ে নিচে যেতে হবে তাহলে যে আবার কি করবে ঠিক নেই।
মুন বিছানা থেকে উঠতে গিয়ে দেখে বিছানার পাশে টেবিল এ বাড়িতে পানি আর একটা কাপড় রাখা
মুন: তাহলে আমার কাল রাতে জ্বর হয়েছিলো আর রোদ ( ভেবেই একটা মুচকি হাসি দিয়ে বাথরুমে চলে গেলো)
এইদিকে
রোদ: তোমাকে অনেক ছার দিছি এবার থেকে আমার ভালোবাসার বাঁধবো দেখি কত দূর পালাতে পারো my sweetheart (বলে বাথরুম এ চলে গেলো)
কিছুক্ষণ পর
মুন রেডী হয়ে নিচে নেমে দেখে সবাই বসে আছে মুন ও তাদের সাথে বসে পরলো।
নাহিল চৌধুরী: এখন কেমন আছো মামনি আগের থেকে শরীর ভালো লাগছে?
মুন: হা পাপ্পাই এখন ঠিক আছি
রাইমা চৌধুরী মুনকে খারাব বেড়ে দিতে দিতে বললো
রাইমা চৌধুরী: এবার থেকে আমার কথা মত চলতে হবে বেশি করে খেতে হবে শরীর কি অবস্থা করেছি সেদিকে খেয়াল আছে হমম?
মুন: উফফ মামনি আমি ঠিক আছি আমার কিছু হয়নি তুমি ওতো চিন্তা করোনা তো ( মুন রোদের আব্বু কে পাপপাই আর রোদের আম্মুকে মামনি বলে ডাকে)
রাইমা চৌধুরী: আমি ছাড়া কে চিন্তা করবে বলতো আমার কথা তো কারোর কানেই যায়না
নাহিল চৌধুরী: আহা সকাল সকাল মেয়েটাকে বলছো কেনো আয় তো মামনি রোজ তোর মামনি তোকে খায়িয়ে দেয় আজ আমি তোকে খাইয়ে দেবো(বলে মুন এর মুখে খাবার দিলো আর মুন ও খেতে লাগলো)
তখন রোদ আসে আর এসে একটা চেয়ার টেনে বসে ।
রোদ: gd m9 everyone
নাহিল চৌধুরী: gd m9 ( মুনকে খায়ীয়ে দিতে দিতে)
রোদ: আব্বু মুনকে আজ থেকে আমি দিয়ে আসবো আর নিয়ে আসব
রোদের কথায় মুন ভিসুম খেলো)
রোদ: আছতে খাওয়া যায়না ( চোখ রাঙিয়ে)রোদের চোখ রাঙানো দেখে মুন শুকনো ঢুক গিললো
নাহিল চৌধুরী: অছতে মামনি নাও পানি খাও ( পানির গ্লাস এগিয়ে দিয়ে)
রাইমা চৌধুরী: তুমি ঠিক করে খাওয়াতে পারণা মেয়েটা ভিসম খেলো।
মুন: আমি ঠিক আছি
নাহিল চৌধুরী: হা তো রোদ তুমি যেনো কি বলছিলে
রোদ: বলছি যে মুন কে নিয়ে ভরসা নেই এখন থেকে আমি ওকে ভার্সিটিতে দিয়ে যাবো আর নিয়ে আসবো।
নাহিল চৌধুরী: তুমি যদি ওকে নিয়ে যেতে চাও তো কোনো সমস্যা নেই কিন্ত ওর দেখে শুনে গাড়ি চালাবা
রোদ: ওকে আব্বু
মুন: আমি বলছি কি রোদের এতো কষ্ট করার কি দরকার আমি বাড়ির গাড়িতেই যেতে পার..(বাকিটা বলার আগেই মুনের রোদের দিকে নজর পড়ল আর মুন দেখলো যে রোদ চোখ লাল করে তাকিয়ে আছে এটা দেখে মুন শুকনো ঢুক গিললো)
মুন: আল্লাহ জানে এখন আমার কি হবে( মনে মনে)
রোদ: আমার সাথে যেতে কি খুব সমস্যা হবে ।
নাহিল চৌধুরী: মামনি তুমি রোদ এর সাথে যাও রাস্তায় যদি কোনো সমস্যা হয়
মুন: ওকে প্যাপ্পাই
খাওয়া শেষ করে রোদ আর মুন বেরিয়ে পড়লো।মুন তো পড়েছে মহা বিপদে যেই লোকটাকে দেখে ভয় এখন থেকে নাকি তার সাথে যেতে হবে( জানালার দিকে মুখ করে এসব ভাবছে মুন)
রোদ একটু পর পর মুন এর দিকে তাকাচ্ছে হটাৎ নিরবতা ভেঙ্গে রোদ বললো।
রোদ: শরীর কি খারাপ লাগছে ওভাবে বসে আছো কেনো?
মুন: না তেমন কিছু না এমনি ভালো লাগছে না
রোদ: আমার সাথে থাকলে তোমার কোন সময় ভালো লাগে যাই হক ছুটির সময় আমাকে ফোন দিবা আমি এসে নিয়ে যাবো আবার মাতবরের মতো একা যেতে না বুঝতে পারছো আমি কি বলছি
মুন: হমমম ( এমন ভাবে বলছ যেনো আমি উনার বিয়ে করা বউ লাগি লুচু কোথাকার কথায় কোথায় শুধু আমায় ধমকাবে তোর বউ জুটবে না)
রোদ: গালি দেওয়া শেষ(ড্রাইভ করতে করতে)
রোদের কথায় মুন কিছু টা অপুস্তট হয়ে বললো
মুন: জি??( কিছু শুনে ফেলেনি তত)
রোদ: সব শুনে ফেলছি এতো জোরে কেউ মনে মনে ভাবে
মুন:( এর জ্বালায় কি কিছু ভাবা যাবে না)
রোদ : তোমার ভাবনায় সব কিছুতে শুধু আমি থাকবো তোমার সব কিছু শুধু আমায় ঘিরে থাকবে
মুন: বুজলাম না
রোদ: সময় হলে বুঝতে পারব এখন গাড়ি থেকে নামো ভার্সিটি এসে গেছে।
মুন তাকিয়ে দেখে সত্যি সত্যি ভার্সিটি চলে আসছে মুন তাড়াতাড়ি করে নেবে যেই দোর দেবে রোদের কথায় থেমে গেলো।
রোদ: কোথায় পালাছো আমি কি যেতে বলছি (মুন মাথা দিয়ে না বুঝালো)
রোদ: তাহলে চলে যাসছিলে কেনো এতো সাহস কে দেছে হম?
মুন: সরি আসলে..
রোদ: থাক আর কিছু বলতে হবে না শোনো যা বলছি ভার্সিটিতে যাও কিন্ত কোনো ছেলেদের সাথে কথা বলতে পারবা না খুব দরকার না পরলে মেয়ে বন্ধু থাকবে কিন্ত ছেলে বন্ধু যেনো না দেখি নাহলে আমি কি করবো সেটা তোর জানোই । তোমার জন্য যেনো কাউকে জীবন হারাতে না হয় got it
মুন: হম আমি কি এখন যাবো ( ভয়ে ভয়ে)
রোদ: হমম যাবে আমার কথা গুলো যেনো মনে থাকে।
মুন: আচ্ছা (মুন চলে যেতে গেলে রোদ ওর হাত ধরে নিজের কাছে আনে)
মুন এর ২ গালে হাত দিয়ে বললো
রোদ: আমাকে ওতো ভয় পাওয়ার কিছু নেই আমি তোমারই(বলে কপালে একটা ভলোবাসার পরশ একে দিল মুন ত পাথর হয়ে দাড়িয়ে আছে আজ সব কিছু অর্ট মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে)
রোদ: এবার যাও (রোদের বলতে দেরি কিন্ত মুন এর যেতে দেরি না এক সুটে ভার্সিটির ভিতরে চলে গেলো)
রোদ টা দেখে একটা মুচকি হাসি দিয়ে গাড়ি নিয়ে চলে গেলো।
এদিকে মুন ভার্সিটির ভিতরে এসে হাফাতে লাগলো তখন কেউ একজন দৌড়ে এসে মুন কে জড়িয়ে ধরলো মুন বুজলো এটা কে তাই ও জড়িয়ে ধরলো।
রুমা: হাই মাম্না তোকে খুব মিস করছি
মুন: আমি ওর তোকে খুব মিস করছি (রুমা মুন এ বেষ্ট ফ্রেন্ড )
রুমা: কেমন মিস করছিস সে আমার জানা আছে (মুখ গোমড়া করে)
মুন: আরে সত্যি মিস করছি তোরা সারা আমার আছে কে বাই দা রাস্তা লামি কই( লামী মুন এর আর একটা বেষ্ট ফ্রেন্ড লামিয়া। মুন আর রুমা লামী বলে ডাকে আর রুমাকে রো বলে)
রুমা: ও তো
লামিয়া: এই তো আমি এখানে (দৌড়াতে দৌড়াতে)
মুন: এত দেরি হলো কেন ?
রুমা: ও তো রোজই দেরি করে আসে
লামিয়া: চুপ থাক ঘুম থেকে উঠতে দেরি হয়ে গেছিলো তাই
রুমা: রাতে বোফ এর লগে জানু,সোনা করে তো ঘুমাবে আবার সকালে উঠে
লামিয়া: তুই বেশি বগিস কেন বলতো হিংসা হয়নাকি
রুমা: তোকে দেখে পাগল এ হিংসা করবে যা ভাগ
মুন: হয়ছে তোদের এখন চল ক্লাস শুরু হয়ে যাবে ।
রুমা: হা চল ( এর পর ৩বান্ধবী মিলে ক্লাস এ গিয়ে ক্লাস করলো)
এদিকে
রোদ অফিস গিয়ে ওর কাজ করে হটাৎ ওর মুন এর কথা মনে পড়লো কাকে যেনো একটা ফোন করলো বললো
রোদ: ওর দিকে খেয়াল রেখো আর কোনো সমস্যা হলে আমাকে জানিও
ওপাশ থেকে…..
রোদ: হম গুড ( বলে ফোনটা কেটে দিলো)
ফোন থেকে মুন এর ছবি বের করে দেখতে লাগলো কি মায়াবী চেহেরা
রোদ: কেনো তুমি আমার ভলোবাসা বোঝ না তোমায় নিয়ে আমার সব কিছু কবে তুমি আমাকে একটু বুজবে আমাকে বলবে ভালোবাসি আর কত অপেক্ষা করতে হবে তুমি যে আমার লাইফ এর মুন তোমায় ছাড়া তো আমি শূন্য ।
হটাৎ দরজায় নক পড়লো
রোদ: ফোনটা থুয়ে কাম ইন
রুহি: স্যার আজকে খান দের সাথে আমাদের একটা মিটিং আছে (রুহি রোদের পি এ)
রোদ: ওকে তুমি রেডী করো আমি আসছি আর আজ আমায় একটু তাড়াতাড়ি যেতে হবে
রুহি: ওকে স্যার
রোদ মিটিং এ চলে গেলো।

ক্লাস শেষ হওয়ার পর
রুমা: এই মুন চলনা কিছু খেয়ে আসি খুব খুদা লাগছে
মুন: আর কত খাবি খেতে খেতে তো মুটি হয়ে যাবি
রুমা: তোদের কথায় মুটা হবো না
লামিয়া: রাক্ষসী একটা
রুমা: তোর বাপের খাই
লামিয়া: বাপে যাবি না
রুমা: চাল হাট
মুন: উফফ তোরা থামতো আমি মরছি আমার জ্বালায় এরা আছে নিজেদের ঝগড়া নিয়ে( রাগী ভাব নিয়ে)
লামিয়া: ওর কথা বাদ দে তো তুই বল তোর কি hoyche অন্য দিন তো কথা বলিছ আজ চুপ কেন কি হইছে জানু?
মুন:কিছু হয়নী চল কিছু খেয়ে আসি ( এদেরকে রোদের কথাবলা যাবে না নাহলে টেনশন করবে হোয়ত ওটা আমার কল্পনা ছিল রোড ওমন করতেই পারে না হা ওটা আমার ভুল)
লামিয়া: তুই কবে ওর মতো খাওয়া শরু করলি?
রুমা: বেশি বগলে তোকেই খেয়ে ফেলবো
লামিয়া: রাক্ষসী
রুমা: যা ভাগ
মুন: উফফ তোরা থামতো চল (২জন কে টেনে কান্টিনে নিয়ে গিয়ে খাবার অর্ডার দিয়ে গল্প করতে লাগলো)
ওদের গল্পের মাঝে একটা ছেলে এসে বসলো(ছেলেটা দেখতে হিরো দের মতো আমাদের রোড ও কিন্ত হাজারো মেয়েদের ক্রাশ)
মুন, লামিয়া,রুমা একে অপরের দিকে তাকিয়ে
ছেলেটা: হাই আমি আরুষ
লামিয়া: আমি লামিয়া এ রুমা আর o মুন ( রুমা আর মুন এর দিকে তাকিয়ে) আর কিছু বলবেন
আরুস: আমি এখানে বসাতে কি আপনারা রেগে গেছেন
লামিয়া কিছু বলতে যাবে রুমা লামিয়াকে থামিয়ে দিয়ে
রুমা: আরে না তেমন কোনো কিছু না
অরুস: ওহ ভালো টা কেমন আছো?
রুমা: জি ভালো আপনি কেমন আছেন?
অরুস: হা ভালো টা তুমি কথা বলছো না কেনো?( মুন এর দিকে তাকিয়ে)
মুন কি বলবে কিছু বুঝতে পারছে না রোদ ওকে আজ যা বলছে তাতে
অরুষ: এই যে ম্যাডাম কোথায় হারিয়ে গেলেন
মুন: হা বলেন
আরুষ্: থ্যাংক গড আপনি ফিরে আসছেন আমি তো ভাবলাম আপনাকে হারিকেন দিয়ে খুঁজে আনতে হবে
আরূষ এর কথায় মুন ফিক করে হেসে দিল।আর অ্যারুষ অপলক নয়নে মুনের হাসি দেখছে

চলবে…

হ্যাপি রিডিং)

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে