Monday, October 6, 2025







তোমার ছায়া পর্ব-০৪

#তোমার ছায়া (পর্ব ৪)
#মেহেদী_হাসান_রিয়াদ

– আবরার স্যার কিন্তু সেই হ্যান্ডসাম তাই না দোস্ত?
দাত কেলিয়ে কথাটা বললো সাথি। আয়রিন পাশ থেকে বললো,
– আমার ভাইটাকে কি তোরা চোখ দিয়ে গিলে খাবি নাকি?
সাথি মুখ দিয়ে ‘চ’ সুচক একটা শব্দ ছেড়ে বললো,
– সুন্দরকে সুন্দর বলবো না তো কি বলবো?
মুখ ফসকে পাশ থেকে ফারহা বললো,
– আমারও স্যার কে খুব ভালো লাগে।

ফারহার কথায় কেও কিছু বলছে না। ফারহা পেছনে তাকিয়ে দেখে মাত্রই আবরার তাদের পাশ দিয়ে হেটে গেলো।
মুহুর্তেই জ্বিভে ছোট্ট একটা কামড় দিলো ফারহা। ইশ রে স্যার কিছু শুনে ফেলেনি তো?

কিন্তু তা নিয়ে আলোচনা বন্ধ হয়নি ফ্রেন্ড মহলের মাঝে। ক্লাসেও চলছিলো লুকিয়ে আলোচনা। যেটার সূত্র ধরে আবরার স্যার সারা ক্লাস কান ধরে দাড় করিয়ে রেখেছিলো।
শেষে যাওয়ার সময় আস্তে করে বললো,
– এখন তোমার পড়াশুনা করার বয়স এসব করার বয়স না।

সেদিনের পর থেকেই আয়রিন তাকে ভাবি বলে সম্বোধন করে। মাঝে মাঝে আয়রিন বলতো, আবরারও ফারহাকে পছন্দ করে সেটা আয়রিন বুঝে। বাট তা আবরার প্রকাশ করতে চায় না৷ এসব নিয়ে ফারহা কে কতো দিন ক্ষেপিয়েছে তার হিসেব নেই।

বাট আজ ফারদিনের মুখে কিছু কথা শুনে সকল চিন্তা ভাবনা হাওয়ায় উরিয়ে গেলো তার। আয়রিনের ছবি হাতে নিয়ে ফারদিনকে এবাবে কাঁদতে দেখে ফারহা বললো,
– এতোই যখন ভালোবাসতে তাহলে কাউকে বলো নি কেন এতো দিন? কেন চুপ করে ছিলে ভাইয়া? কাউকে না বললেও অন্তত আমায় বলতে তুমি। যা হওয়ার তা পরে দেখা যেতো। কেন চুপ থেকে এখন আফসোসের পাহাড় বইছো?
ফারদিন চোখের পানি মুছে নিজেকে স্বাভাবিক করে বললো,
– আমি চাইনি আয়রিনের বিষয় টা নিয়ে আমাদের মাঝে বন্ধুত্ব শেষ হয়ে যাক। আর আবরার এটা কখনোই মেনে নিতো না। তুই তো জানতি আমাদের বেস্ট ফ্রেন্ডের তালিকায় তিনজন ছিলাম।
ফারহা একটু ভেবে বললো,
– হুম, তুমি আবরার ভাই আর সোহেল ভাই৷ কিন্তু সোহেল ভাইর সাথে তোমাদের সম্পর্ক নষ্ট হয়ে যায়। আবরার ভাইয়া নাকি চ/র ও মে/রেছিলো তাকে।
ফারদিন বললো,
– হুম, কিন্তু আবরার সেদিন কেন এমন করেছিলো জানিস?
ফারহা দুই দিকে মাথা নাড়িয়ে ‘না’ বললো। ফারদিন একটু মুচকি হেসে বললো,
– সোহেল তোকে পছন্দ করতো। আর সেটা আমাকে সরাসরি বলতে পারেনি দেখে আবরার কে বলে আমায় রাজি করাতে চেয়েছিলো। কিন্তু আবরার সেদিন সোহেলের সাথে খুব খারাপ ব্যাবহার করেছিলো। দুশ্চরিত্র বলে তাড়িয়ে দিয়েছিলো। আর বলেছিলো, বন্ধুর বোন মানে তোরও বোন। বোনের দিকে কিভাবে বাজে নজর দিস কোন সাহসে? দুশ্চরিত্রের সাথে আরো যা তা বলেছিলো।

ফারদিনের কথায় চোখ বড় বড় করে তাকায় ফারহা। এই সামান্য বিষয়টা নিয়ে এতো বছরের ফ্রেন্ডশিপ নষ্ট হয়ে গেলো তাদের?

ফারদিন আবারও বলতে লাগলো,
– সেদিনই আয়রিনের বিষয়টা মনের ভেতর মাটি চাপা দিয়ে দিয়েছিলাম আমি। মাঝে মাঝে আফসোস হতো, কেন আবরারের বন্ধু হতে গেলাম। আবার এটা ভেবেও নিজেকে শান্তনা দিতাম, তার মতো বন্ধু পাওয়াও তো ভাগ্যের ব্যাপার। মাঝে মাঝে মনে হয় আমরা বন্ধু না, যেন দুই ভাই।

হালকা ভয়েই যেমন ফারহা’র বুকের ভেতর টিপ টিপ শব্দ তৈরি করে, তেমন আজও বুকের ভেতর টায় টিপ টিপ করতে শুরু করলো। এতো কাহিনি আগে জানলে কখনো আবরারের প্রতি তার এতো ফিলিংস কাজ করতো না। তাহলে তারও কি এখন উচিৎ আবরারের জন্য তৈরি হওয়া বিন্দু বিন্দু ফিলিংস গুলো একটা একটা একটা করে চাপা দেওয়া শুরু করা?

এর মাঝে ফারদিনের কথায় ধ্যান ভাঙে ফারহার। ফারদিন খুব করুন গলায় বললো,
– কথা গুলো কাউকে বলবি না প্লিজ। কারণ এসব কথা জানাজানি হয়ে গেলে আয়রিনের সংসারে অশান্তি তৈরি হতে পারে। আমি চাইনা আমার কারনে তার শান্তি নষ্ট হয়ে যাক। সে সারা জীবন সুখে থাকুক এটাই আমার চাওয়া।
,
,
রাত ধীরে ধীরে গভির হতে লাগলো। আর এদিকে সেই অনেক্ষন ধরে মাহিনের জন্য অপেক্ষা করছে আয়রিন। চার পাশের কাঁচা ফুলের সুভাষ ভেষে উঠছে। আর এদিকে ভয়ে বুকটা ধুক ধুক করছে আয়রিনের। এর পর কি হবে ভাবতে ভানতে মাথায় ভর করে আছে নানান দুঃশ্চিন্তা।

ভাবতে ভাবতে দরজায় আওয়াজ পেতেই নড়ে চড়ে বসে সে। মাহিন এসেছে রুমে। শুদর্শন দেখতে পারফেক্ট একটা মানুষ তার চোখে। তাই তো ছবি দেখেই বিয়েতে রাজি হয়ে গিয়েছিলো।

যদিও মেয়েকে এখন বিয়ে দিতে চায় নি আয়রিনের বাবা মা। তবে ছেলে ও ছেলের কোয়ালিফিকেশন আর চেলের কয়ারিয়ার দেখে প্রস্তাব ফিরিয়ে দেয় নি তারা।
চাকরির সুবাদে ছয় মাসের জন্য আমেরিকা পারি দেবে সে। এই তো দশ বারো দিন পরই প্লাইট।
তাই তারাহুরো করে মাহিনকে বিয়েটা করিয়ে দিলো তার ফ্যামেলি।

রুমে এসে খাটের পাশে এসে দাড়ায় সে। আয়রিন মাথা নিচু করে বসে আছে। মাহিন হাত ঘড়ি খুলতে খুলতে বললো,
– কয়েকটা কথা বলবো, মন দিয়ে শুনেন। বিয়ের আগে আপনি আমি খুব বেশি পরিচিত ছিলাম, বিষয়টা কিন্তু এমনও নয়। আমার ফ্যামিলি থেকে হুটহাট এই সিদ্ধান্ত আর আপনার ফ্যামিলিও রাজি হয়ে যায়। এর মাঝে আমি আপনাকে কিছু বলতে চেয়েছিলাম, কিন্তু আপনিও নাকি আমার ছবি দেখে বিয়েতে মত দিয়ে দিলেন। আমার ফ্যামিলিও হয়তো ভেবেছিলো আপনি দেখতে সুন্দরি বলে আমিও সব মানিয়ে নিবো। এর পর আমার চলে যাওয়ার সুবাদে বিয়েটাও খুব তারাহুরো করে হয়ে গেলো। বাট এখন আপনি এটা ভাববেন না যে, আপনাকে আমার পছন্দ হয়নি বা বিয়েতে আমার মত ছিলোনা দেখে আপনাকে বাড়ি থেকে বের করে দিবো। এমনটাও করবো না আমি। আপনি এই বাড়িতে আপনার মতো করেই থাকতে পারেন আমার কোনো প্রব্লেম নেই। তবে আমার স্ত্রী হওয়ার অধিকার টা চাইবেন না। কথা গুলো আমি আপনাকে বিয়ের আগেই বলতে চেয়েছিলাম। বাট বলতে পারিনি দেখে এখন বলছি। এখন আমি চাইলে আপনাকে ডিবোর্স দিতে পারবো। বাট বাবা মা এটা কখনোই মেনে নিবে না৷ তাই বাকি সিদ্ধান্তটা আপনার। শুধু বৌ নামে এই বাড়িতে থাকবেন, নাকি এখান থেকে চলে যাবেন। আর এখানে থাকলেও রানীর বেশে থাকতে পারবেন, ওটা নিয়ে ভাববেন না।

বলেই একটা ট্রাউজার আর টাওয়াল নিয়ে ওয়াশ রুমে চলে গেলো মাহিন। এতোক্ষনের এই মুহুর্তটা যেন পুরোটাই মাথার উপর দিয়ে গেলো আয়রিনের। কথা বলার ভাষা খুজে পাচ্ছে না, মাথাটা ভন ভন করতে শুরু করলো তার।
প্রথম দেখায় কাউকে ভালোবেসে ফেলে তার মুখে এমন কিছু শোনার জন্য অপেক্ষায় ছিলো না সে।
কতো কিছুই তো ভেবে রেখেছিলো সে। বিয়েটা হবে, এর পর মাহিনের সাথে পরিচয় টা হবে এই দশ-বারো দিনেই। তারপর মাহিন চলে গেলে ফোনে কথা হবে তাদের। গভির রাত পর্যন্ত লুকিয়ে লুকিয়ে ফোনে প্রেম করবে দুজন। কেউ দেখবে না তাদের এই লুকোচুরি প্রেম। ধীরে ধীরে তেরি হবে মাহিন ফিরে আসার অপেক্ষা টা।
হুট করে একদিন এক আকাশ সমান আনন্দ নিয়ে ফিরে আসবে মাহিন। যেই আনন্দে মনাকাশের তাঁরা গুলো মিট মিট করে জ্বলতে থাকবে তার।
বাট আজ সব স্বপ্নই যেনো দির্ঘশ্বাসে পরিনত হয়ে গেলো।
,
,
আজ আর ঘুম আসছে না ফারহা’র। ফারদিনের কথা গুলো এক পাশে রাখলো আর অন্য পাশে রাখলো আবরারকে। দুটুই মিলানোর চেষ্টা করছে সে। ফারদিনের ভালোবাসা হারানোর কষ্ট টা সে একটু হলেও অনুভব করতে পারছে।
কিন্তু এসবের মাঝে তার ভাবনায় বার বার নতুন করে আবরারকে কেন জড়িয়ে পেলছে তা সে নিজেও বুঝে উঠতে পারছে না। আজ এই বুকের বা’পাশ টায় টিপ টিপ শব্দ করছে কেন? কিসের এতো ভয়?

To be continue…..

পূর্ববর্তী নিবন্ধ
পরবর্তী নিবন্ধ
গল্প পোকা
গল্প পোকাhttps://golpopoka.com
গল্পপোকা ডট কম -এ আপনাকে স্বাগতম......
RELATED ARTICLES

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

- Advertisment -

Most Popular

Recent Comments

Md masrur Hasan mahi على অবুঝ_বউ পার্ট: ৫
আমিনুল ইসলাম على প্রয়োজন পর্ব: ৩০ ( অন্তিম)
সাজিবুল ইসলাম على ধর্ষিতাবউ২ ৯ তথা শেষ পর্ব
শাহিদুল ইসলাম على জীবন সঙ্গী ১ম পার্ট
শাহিদুল ইসলাম على জীবন সঙ্গী ১ম পার্ট
Nita Sarkar على স্বপ্নীল ৬৮
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على রহস্য শেষ_পর্ব
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على অলক্ষ্যে তুমি পর্ব-০৬ এবং শেষ পর্ব
Nazmun Nahar Akhi على Psycho_is_back? part_7
Nazmun Nahar Akhi على Dangerous_Villian_Lover part 2
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على জানালার ওপারে পর্ব-১৭ এবং শেষ পর্ব
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على লীলা বোর্ডিং ১২১৫ পর্ব-১১ এবং শেষ পর্ব
মিজানুর রহমান রাহুল على সেই তুমি পর্ব-০১
@feelings على প্রহেলিকা
Anamika Basu على সে পর্ব-১২
Anamika Basu على সে পর্ব-১২
Nusrat jahan على coffee & vanilla Part-10
Pallabi Roy على স্বপ্নীল ৬৮
M.D Mahabub على The_Villain_Lover Part_2
Labani sarkar على Dangerous_Villain_Lover part 23
MD Akas Apc على বিবেক
Tanisha Ahmed على Devil love part-18 
Aius Barmon shorob على নারীর দেহকে নয়
Chandan roy على স্বপ্নীল ৬৮
Chandan roy على স্বপ্নীল ৬৮
Riya Biswas على তুমি রবে ৬০
Priya Banerjee على devil love married life last part
Riya Biswas على তুমি রবে ৬০
Riya Biswas على তুমি রবে ৫২
Mohammad Adib على তুমি রবে ৬০
Avni Ayesha على তুমি রবে ২৮
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
সুমিত على তুমি রবে ২৮
TANJIBA ZENIFAR على তুমি রবে ৫০
TANJIBA ZENIFAR على তুমি রবে ৫০
Samiah Begum على তুমি রবে ৫১
biddut das rocky على নর নারী
গল্প পোকা على নষ্ট গলি শেষ পর্ব
Md Jobayer Hossain Shohag على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
গল্প পোকা على দুই অলসের সংসার
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤৪২.
A.J.S Rakib على মন ফড়িং ❤৪২.
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
Samiya noor على গল্পঃ ভয়
Sadikul على গল্পঃ ভয়
Samia Islam على গল্পঃ ভয়
শূন্য মায়া على মন ফড়িং ❤ ৪০.
Sutapa biswas على মন ফড়িং ❤৩৯.
Foysal Mahmud على My_Mafia_Boss_Husband Part: 16
sutapa biswas على মন ফড়িং ❤ ৩৮.
sutapa biswas على মন ফড়িং ❤ ৩৭
Foysal Mahmud على My_Mafia_Boss_Husband Part: 16
Siyam على বিবেক
Sudipto Guchhait على My_Mafia_Boss পর্ব-৯
saptami karmakar على devil love married life last part
saptami karmakar على devil love married life last part
মায়া على মন ফড়িং ৩০.
মায়া على মন ফড়িং ৩০.
মায়া على মন ফড়িং ২৬.
Shreyashi Dutta على  বিয়ে part 1
Sandipan Biswas على  বিয়ে part 1
Paramita Bhattacharyya على অনুরাগ শেষ পর্ব
জামিয়া পারভীন তানি على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
মায়া على মন ফড়িং  ২২
সুরিয়া মিম على খেলাঘর /পর্ব-৪২
গল্প পোকা على মন ফড়িং ২১
গল্প পোকা على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
Sahin ssb على মন ফড়িং ২১
মায়া على মন ফড়িং ২১
মায়া على মন ফড়িং ❤ ২০.
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤ ২০.
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৮. 
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৭.
Jannatul Ferdous على খেলাঘর পর্ব-৩৫
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤ ১৬. 
গল্প পোকা على ফাল্গুনের_ফুল last_part_8
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৬. 
গল্প পোকা على ছাত্রী যখন বউ পাঠঃ ১
গল্প পোকা على বাজির প্রেম পাঠঃ ১
Foujia Khanom Parsha على মা… ?
HM Ashraful Islam على অবুঝ_বউ পার্ট: ৮
HM Ashraful Islam على অবুঝ_বউ পার্ট: ৫
Ibna Al Wadud Shovon على স্বার্থ