২২+২৩+২৪
তোমার আকাশে হব প্রজাপতি
পর্ব ২২
Writer Tanishq Sheikh
শান যখন বাসায় ফেরে তখন বাড়িতে থমথমে পরিবেশ।শানকে দেখামাত্র মরিয়ম খালা এক নিঃশ্বাসে সব ঘটনা বলতে লাগলো।
“সন্ধ্যার আলো জ্বালানোর জন্য অহন বাবার রুমের পাশ দিয়ে ছাঁদে যাচ্ছিলাম।তখন প্রায় চারিদিকে অন্ধকার নেমে আইছে। আজ নামাজ শেষে দুআ দুরুদ পড়তে গিয়েই আমার দেরি হইছিল।এমনটা এর আগেও হয়েছে। যা হোক! নামার সময় ঠাস করে কিছু পড়ার আওয়াজে অহন বাবার জানালায় উঁকি দিতেই গো বাবা!”
খালা এবার দম ছেড়ে হাঁফাতে লাগলেন।সাথে শব্দ করে কান্না তো আছেই।শান উদ্বিগ্ন হয়ে জিজ্ঞেস করতেই আবার বলতে লাগলেন
” অহন বাবায় ফ্যানের সাথে রশি ঝুলায়া গলায় দিয়া গলা কাটা মুরগির মতোন ছটফট করতাছিল।”শান বিস্মিত হয়ে বললো
” হোয়াট! অহন এ কাজ করেছে। ও কই? ঠিক আছে তো? ”
” আমার তো কথা বন্ধ হয়ে গেছিল তবুও চিল্লান দিয়া দারোয়ান সহ সবাইরে ডাকাইয়া দরজা ভাঙছি।আরেকটু হলে সে বাঁচতো না গো বাবা।তার হাত পায়ে জায়গায় জায়গায় রক্ত জমাট বাধছে।”শান অহন বেঁচে আছে জেনে ছুটে অহনের ঘরের সামনে যায়।অহনকে ডাক্তার ঘুমের ইনজেকশন দিয়ে ঘুম পাড়িয়ে গেছে।ইমা ঘুমন্ত ভাইয়ের শিওরে বসে ঠোঁট চেঁপে শুধু কেঁদেই যাচ্ছে। শান স্বস্তির শ্বাস নিয়ে ইমার কাঁধে হাত রাখে।শানকে দেখে ইমার মনের জোর বেড়ে যায়।ঝাপিয়ে পড়ে গলা জড়িয়ে ধরে নিঃশব্দে কাঁদে।
” আমার ভাইকে আমি আরেকটু হলে হারিয়ে বসতাম।আমার ভাই কেন এমন করলো? ও তো এমন না।”
” হুশশ! শান্ত হও।আল্লাহ পাক ওকে বাঁচিয়ে দিয়েছে শুকরিয়া করো।কেঁদো না।ও একটু সুস্থ হোক আমি সবটা জেনে নেব।”ইমার মাথার হাত বুলিয়ে স্বান্তনা দেয় শান।শানের বুকে মাথা রেখে কাঁদো কাঁদো স্বরে বলে,
” আমার ভয় করছে খুব।”
ইমার চোখ মুখ নিজ হাতে মুছে গালে,কপালে চুমু দিয়ে বলে,
” আল্লাহর উপর ভরসা রাখো লক্ষিটি। সব ঠিক হয়ে যাবে। এখন চলো ফ্রেশ হয়ে নেবে কেঁদে চোখ ফুলিয়ে ফেলেছ।”
” না আমি ভাইকে একা রেখে কোথাও যাব না।ও যদি আবার কিছু করে বসে?”
” সেটাও ভাববার বিষয়। আচ্ছা আমি খালাকে বলছি এখানে এসে থাকতে। সানাকেও বলে দিচ্ছি এদিকটা দেখে রাখতে।”
ইমা চোখ মুছে ভাইয়ের শিওরে বসে ঘার ঘুরিয়ে অবসন্ন মুখে বলে,
” ওহ হ্যাঁ আপনাকে তো বলা হয় নি।সানা আপুও সেন্স লেস হয়ে পড়েছিল এ অবস্থা দেখে, তাই ডাক্তার তাকেও রেস্ট করতে বলেছে।”
শান কপাল টিপতে টিপতে চিন্তিত ভঙ্গিতে বলে,
” আমি মাত্র কিছুসময়ের জন্য দূরে গিয়েছি এরমধ্যেই এতোকিছু ঘটে গেল।আচ্ছা আমি সানাকে দেখে আসছি। পেছন ফিরে আবার ইমার মাথায় হাত রেখে বলে ,”আর শোনো! প্লিজ কেঁদো না।সব ঠিক হয়ে যাবে আল্লাহর রহমতে।”
” তাই যেন হয়।”
” তাই ই হবে।” শান ইমার চোখের জল মুছে কপালে চুম্বন দিয়ে বের হয়ে এসে সানার দরজায় নক করে।
ভেতর থেকে দূর্বল গলায় সানা প্রশ্ন করে
” কে”
” সানা আমি।”
” ভাই” সানা আর্তচিৎকার করে ওঠে।শান ভেতরে ঢুকতেই ঝাপিয়ে পড়ে ভাইয়ের বুকে।সানার সমস্ত শরীর কাঁপছে থরথর করে।গায়ের কাপড় এলোমেলো। চুলগুলো উসকোখুসকো পড়ে আছে পিঠের উপর ছড়িয়ে।বদ্ধ পাগল ভেবে ভুল করবে কেউ হঠাৎ এভাবে দেখলে।শানও চমকে যায় সানাকে এভাবে কাঁদতে দেখে।বিছানায় বসিয়ে চুল ঠিক করে চোখ মুছিয়ে গালে হাত রেখে পরম আদরে বলে,
” কি হয়েছে আমার পুতুলটার?ভয় পেয়েছিস?”
” ভাই অহন! সব আমার দোষ ভাই।কিন্তু আমি কি করতাম বলো?”
শানের কপালে ভাঁজ পড়ে বোনের বিলাপ শুনে।কি বলতে চাচ্ছে শান বুঝতে পেরে মুখটা শক্ত করে সানাকে বুকে জড়িয়ে ধরে।
” কিছু হবে না অহনের তুই শান্ত হ।ভাই সব ঠিক করে দেবে।শান্ত হ বোন আমার।”
সানা শান্ত হয় না।বিকারগ্রস্থ পাগলীর মতো বিলাপ করেই যাচ্ছে সে।ইমা দরজায় দাঁড়িয়ে ভাই বোনকে দেখে কাঁদছে। সবকিছু ঠিক হয়েও আবার এলোমেলো হয়ে গেল।কেন এমন হচ্ছে বার বার? ইমা কাঁদতে কাঁদতে রুমে এসে ফ্লোরে বসে পড়ে।
শান সানাকে ঘুম পাড়িয়ে তবে নিচে রুমে আসে।ইমা তখন কেঁদে দূর্বল হয়ে ফ্লোরেই গুটিশুটি মেরে ঘুমিয়ে পড়েছে।শান ইমাকে পাজাকোলে করে বিছানায় শুইয়ে গায়ে চাদর টেনে মাথায় হাত বুলিয়ে অন্য মনস্ক হয়ে পড়ে।আর কতো বিপদ অপেক্ষা করছে শানের জানা নেই।শুধু জানা আছে যাই আসুক বাঁচার জন্য তার মুখোমুখি লড়তে প্রস্তুত শান।আর হার মানবে না কষ্টের কাছে।
সকালে শান সবার আগে অহনকে দেখতে যায়।অহন চুপচাপ বিছানায় চোখ বন্ধ করে শুয়ে আছে।গলায় ভীষণ ব্যথা করছে কিন্তু এ ব্যথা হৃদয়ের ব্যথা থেকে বড় নয়।শানকে ভেতরে ঢুকতে দেখেও সে আগের মতোই শুয়ে রইল।শান চেয়ার টেনে ঝুঁকে বসলো অহনের বিছানার পাশে।
” এখন কেমন বোধ করছ অহন?”
” ভালো না ভাই।মরে গেলেই ভালো বোধ করতাম।বেঁচে যাওয়াটা খুব কষ্টের লাগছে।”শানের দিকে করুন চোখে তাকিয়ে বলতে লাগলো অহন।
শান তাচ্ছিল্যের হাসি হেসে অহনকে ধরে বিছানায় পেছনে বালিশ ঠেকিয়ে বসালো।
শানের ঠোঁটে হাসি দেখে রাগ হলো অহনের।মুখটা কালো করে বললো
” এই দুনিয়ায় কেউ কারো কষ্ট বোঝে না ভাই।নয়তো আমাকে এভাবে দেখেও আপনি হাসতে পারতেন না?”শান চোয়াল শক্ত করে অহনের মাথার পেছনের চুল টেনে মুখটা নিজের মুখের সামনে এনে চোখে চোখ রেখে বলে,
” কষ্ট কাকে বলে জানো তুমি?আমার বোন তোমাকে প্রত্যাখ্যান করেছে বলে মরতে হবে তোমায়? এই তোমার পুরুষত্ব অহন? সে তো অসহায় তুমিও কি তাই? তবে দু’ জন অসহায় দূর্বলের এক না হওয়ায় ভালো।”
অহন ভয়ে চুপচাপ চোখ নামিয়ে নেয়।আসলেই তার ভুল হয়েছে আবেগের বশে এমন একটা ঘটনা ঘটানোর।কিন্তু উপায়ও ছিল না বাঁচার। অহনকে মাথা নামিয়ে নিরুত্তর বসে থাকতে দেখে শান অহনকে ছেড়ে চেয়ারে বসে শান্ত স্বরে বলে,
” ভাবছ উপায় ছিল না তাই না?”মনের কথা ধরে ফেলেছে দেখে অহন অবাক হয়ে শানের দিকে তাকায়।তারপর অবাক চোখদুটো করুন থেকে করুনতর হয়ে ওঠে।শান সেদিকে তাকিয়ে বলে
” একদিন আমিও তোমার স্থানে ছিলাম।সব হারিয়ে নিঃস্ব।চারিদিকে শুধু অন্ধকার ছিল।মরতে গিয়েও মরিনি।শেষ দেখতে চেয়েছিলাম। একমাত্র অবলম্বন সানাকে বুকে নিয়ে শত ঝড় ঝাপটা মোকাবিলা করে বেঁচেছি।কিন্তু তুমি তো সব হারাও নি অহন।আমার সানা ছাড়া কেউ ছিল না।এই যে এতোকাল বেঁচে ছিলাম ওর মুখ চেয়ে বেঁচে ছিলাম।যদিও এখন আমার বাঁচার আরও একটা মাধ্যম হয়েছে।মজবুত মাধ্যম। কিন্তু তোমার বেলায় তো ভিন্ন। তোমার বাঁচার উপায় আছে।তোমার পরিবার, তোমার বোন।এক সানার জন্য এতোদিনের সম্পর্ক গুলো তোমার কাছে তুচ্ছ হয়ে গেল।সবাইকে কাঁদাতে প্রস্তুত হয়ে গেলে?”
অহনের ভুলের কপাট এবার ভাঙলো।তার মনে এখন অপরাধবোধ জাগতে শুরু করছে।আবেগের বশে কতোবড় ভুলই না সে করতে গিয়েছিল।যদিও সানার জন্য তার মনে এখনও না পাওয়ার সুর বাজতে লাগলো তথাপিও সে পরিবার ও বোনের কথা ভেবে কাঁদতে লাগলো অনুশোচনায়।
শান উঠে দাড়িয়ে বললো,
” যার কাছে দীর্ঘদিনের সম্পর্কের চেয়ে দুইদিনের আবেগ বেশি প্রাধান্য পায় তার কাছে শান নিহান খান কেন কোনো বলদেও বোন দেবে না।আশা করি তোমাকে আর কিছু বোঝানো লাগবে না আমার।”
” সরি ভাই।ভুল হয়েছে আমার।চরম ভুল।”
অহন মুখে হাত দিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়ে।
শান যেতে যেতে বলে,
” ভুল সবমানুষ করে তবে যারা বুদ্ধিমান ও জ্ঞানী তারা ভুল শুধরে সুদিন ফিরিয়ে আনে।”
অহন চোখ মুছে ওয়াশরুমে ঢোকে।বেশ দীর্ঘ শাওয়ার শেষে নিজেকে নতুন করে আবিষ্কার করে।শানের বলা প্রতিটি কথায় এখন সে মর্মে মর্মে উপলব্ধি করতে পারছে।তাকে লড়তে হবে জীবনযুদ্ধে।সানা সহ পরিবারের সবাইকে নিয়ে বাঁচতে হবে।যে প্রেম মরতে শেখায় সে প্রেম, প্রেম নয় বরং প্রেম তো সেটা যা আপনাকে,আমাকে বাঁচতে শেখায়,বাঁচাতে শেখায়।অহন হাসার চেষ্টা করে।হ্যাঁ সে পারছে হাসতে।এবার এই হাসিতেই ওর চারপাশটা আরও সুন্দর করে তুলবে।
আজকের সকাল টা সবার কাছে ভিন্ন অর্থ বহন করছে।শান ইমার চোখে নিজের সুন্দর ভবিষ্যৎ কল্পনা করছে।অহন সানার নত মুখের দিকে তাকিয়ে কি করে এই মুখটা উঁচু করা যায় সে চিন্তায় মগ্ন আছে।ইমা ভাইকে নিয়ে যথেষ্ট চিন্তায় পড়েছে। কাল যে ভাই তার হুট করে জীবনঘাতী কর্মকাণ্ড করে বসেছিল,আজ সেই ভাই ঠোঁটে একচিলতে হাসি এনে বেঘোরে সানাকে দেখে যাচ্ছে।
ইমা কিছুই বুঝে উঠতে পারছে না।সে জিজ্ঞাসু চোখে শানের দিকে দৃষ্টি রাখতে শান বা’চোখ টিপ দিয়ে মুচকি হাসে।ইমার চোখজোড়া ছানাবড়া হয়ে যায় শানের এহেন কাজে।সে চোখ দিয়েই শাসিয়ে যায় শানকে।কিন্তু শাসন মানে না শান।তার দুষ্টুমির মাত্রা যেন বাড়তেই থাকে।চোখ থেকে সে ঠোঁটের ইশারায় ইমাকে রাগাতে থাকে।ইমার রাগী চোখ আর লজ্জায় আরক্ত হয়ে ওঠা গাল দুটো দেখতে বেশ লাগছে তার।সে এখন একান্তে ইমাকে কাছে চাই।ইমাকে রুমে আসার ইঙ্গিত করে উঠে দাঁড়াল। কিন্তু ইমা সেটা না বোঝার ভান ধরে বসে রইল।শান চোখ রাঙিয়ে হুঁশিয়ার সংকেত দিলেও ইমা সেটা বুড়ো আঙুল দেখিয়ে বসে রইল ঠোঁট চাপা হাসি মুখে।
” ওকে! যথা আজ্ঞা ব্রাইড সাহেবার।শান এগিয়ে এসে হুট করে ইমাকে পাজাকোলে তুলে নিল সবার সামনে।ইমা বিস্ময়ে হতভম্ব বনে গেল।লজ্জায় এদিক ওদিক তাকিয়ে সবাইকে তাকিয়ে থাকতে দেখে চিংড়ি মাছে মতো ছটফট করে বলে,
“এই কি করছেন কি? নামান না।সবাই দেখছে তো?”
” দেখতে দাও।বউকে কোলে তুলে নেওয়া তো দোষের কিছু না তাই না?”
শান ইমার বকবক শুনতে শুনতেই সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠে গেল।অহন মুচকি হেসে সামনে তাকাতেই সানাকে ওর দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে সবগুলো দাঁত বের করে হেসে চোখ টিপে উঠে বাইরে চলে গেল।সানা ভ্রুকুটি করে মাথা নুইয়ে বিষন্ন মনে বসে রইল।
ইমাকে বিছানায় শুইয়ে ইমার গলায় মুখ ডুবিয়ে শুয়ে আছে শান।শান এমন ভাবে জড়িয়ে ধরেছে ইমা নড়াচড়া করতে পারছে না। গলায় শানের শ্বাস প্রশ্বাস পড়ায় শিরশির করছে শরীর।
” এই শুনছেন?”
” হুমম বলো”
” এভাবে চেঁপে ধরেছেন কেন দম বন্ধ হয়ে আসছে তো?”
” কিছুই হবে না।আস্তে আস্তে অভ্যাস হয়ে যাবে।”
” হু! বললেই হলো।”
” হুমম।”
” ধ্যাৎ! ইমার অস্বস্তি নিয়ে ধ্যাৎ বলার সাথে সাথে শান ইমার ঠোঁট জোড়া দখল করে নেয়।ক্রমশ চিবুক বেয়ে নিচে নামতে থাকে।একসময় খুব ঘনিষ্ঠ আলিঙ্গনে পরস্পর পরস্পরের স্পর্শ, অনুভূতি উপভোগ করে।একে অপরের নিবিড় সান্নিধ্যে কিছুটা সময় কাটিয়ে দেয়।তাদের কাছে এ সময় শ্রেষ্ঠ সময়।স্বর্গীয় সুখ এনে দেয় এই বৈধ সম্পর্কের মধুর আলিঙ্গন।
তোমার আকাশে হব প্রজাপতি
পর্ব ২৩
Writer Tanishq Sheikh
আজ সারাটা বেলা দু’জন একে অপরের সান্নিধ্যে কাটিয়ে দিল।বিকেলের শেষ দিকে নাস্তা খেতে খেতে চারজনে জম্পেশ আড্ডার আয়োজন করলো ছাঁদে। ইমা মাংস কাটাকুটি করছে শান স্পেশাল বারবিকিউ করবে বলে।কয়েকটা তাজা তেলাপিয়াও জাল ফেলে ধরা হলো।খালা, ইমা বসে বসে এসব কাটাবাছা করছে। সানা টুকিটাকি সাহায্য করেছে কিন্তু অহন সামনে থাকায় সে যেন লজ্জায় অথর্ব হয়ে যাচ্ছিল।ইমা এদের দু’জনের মতিগতি ঠিক ধরেছে।সানার কষ্ট ইমার ভালো লাগছে না।তার ভাইটা যে এই মেয়েকে ভালোবেসে পুড়ে মরছে মনে মনে তা ইমা এখন বুঝতে পেরেছে।ইমা নিশ্চিত শানও এ ব্যাপারে জানে,আর তাইতো এদের বিষয়ে কিছু জিজ্ঞেস করলে দুষ্টুমি করে এড়িয়ে যায় কথা।ইমাও না বোঝার ভান ধরে শুধু দেখে যাচ্ছে। এসব ভাবতে ভাবতে বেখেয়ালে বটিতে ইমার আঙ্গুলের বেশ খানিকটা কেটে যায়।রক্ত গলগল করে বের হতে থাকে।ইমা এদিক ওদিক তাকিয়ে খালাকে ইশারায় এদিকটা দেখতে বলে আঙ্গুল লুকিয়ে নিচে চলে আসে।কল ছেড়ে হাতটা ধুয়ে ঘুরতেই শানের সাথে ধাক্কা লাগে।
” আপনি এখানে কি করেন?”
” হাত কেটেছে তাই না? বলেছিলাম সাবধানে করবে।একটা কথাও তুমি আমার শোনো না।দেখি কতোখানি কেটেছে? ”
শানের রাগী স্বর শুনে ইমা আমতা আমতা করে হাত পেছনে লুকিয়ে ফেলে,
” একটু কেটেছে। ওতে কিছু হবে না।আপনি উপরে যান।”
শান রাগে কটমট করে তাকিয়ে ছোঁ মেরে ইমার হাতটা সামনে নিয়ে আসে।তখনও রক্ত বের হচ্ছিল অনেক ইমার আঙ্গুল থেকে।ইমা মাথা নুইয়ে দাড়িয়ে রইল শানের রাগে লাল হওয়া মুখটা দেখে।
” সবসময়ই বেশি বোঝো তাই না? কি করেছ হাতটা কেটে? আবার বলো কিছুই হবে না।মন তো চাচ্ছে একটা দেই লাগিয়ে।”
ইমা এবার শব্দ করে কেঁদেই দেয়।ব্যথা হচ্ছে তো হচ্ছে রক্ত দেখেই ভয় লাগছে ইমার।তার উপর শান রাগ হচ্ছে।
” কাঁদছ কেন?”
” আনন্দে কাঁদছি। বোঝেন না কেন কাঁদছি?”শেষকথা অভিমান করে বললো ইমা।
” আচ্ছা সরি।তুমি কেন বোঝো না তা হলে আমার কষ্ট। তোমার কিছু হলে আমার অবস্থা কি হয় জানো তো না।”
শান ইমার হাত ধরে বসার ঘরে নিয়ে এসে বসে।কাটা স্থানে ওষুধ লাগিয়ে দেয়।শানের মুখটা দেখে এখন খুব মায়া হচ্ছে ইমার।এইটুকুতেই কেমন কাঁদো কাঁদো করে ফেলেছে মুখ।ইমা ঠোঁট টিপে হেসে বলে
” কেউ মুখে কথা চেপে রাখলে মানুষ কি করে বুঝবে?”ইমার হাসি প্রসস্থ হওয়ার আগেই চমকে ওঠে দুটি চোখ শানের ঠোঁটের স্পর্শ পেয়ে।সিঁড়িতে কারো পায়ের আওয়াজে ঠোঁট আলাদা হয় দু’জনের।ইমা গাল ফুলিয়ে ঠোঁট কামড়ে শানের দিকে তাকিয়ে থাকে।কিন্তু সে মহাশয় এমন ভাব নিয়ে ব্যান্ডেজ করছে যেন একটু আগে কিছু করেন নি তিনি।খালা নিচে নেমে রান্নাঘর থেকে কি যেন নিয়ে গেল উপরে।খালা যেতেই ইমা নাকে কেঁদে বলে
” এমন করলেন কেন?
” কেমন করেছি?” শান ফাস্ট এইড বক্স যথাস্থানে রেখে জবাব দেয়।
” একটু আগে যা করলেন ”
” একটু আগে কি করেছি?” রাগে কর্ণ লতিকা গরম হয়ে আসছে ইমার। কি ভাব নিয়ে রিমোট হাতে টিভি চ্যানেল চেঞ্জ করছে আবার বলছে কি করেছি? শান ইমার গাল ফুলিয়ে বসে থাকা আড়চোখে দেখে মৃদু হাসছে।ইমা সেটা দেখে শানের বুকের উপর ঝাপিয়ে কিল চড় মারতে থাকে।
” আরে করছ কি? রেসলিং যাওয়ার প্রিপারেশন নিচ্ছ নাকি?”
” আপনি সবসময়ই এমন করেন।হুটহাট এমন করলে আমার হার্ট ধুকপুক করে সেটার খবর কি রাখেন?”ইমা কান্নাজুড়ে দেয় শানের বুকে মাথা ঝুঁকে।
” আচ্ছা এবার থেকে ঘোষণা দিয়ে হবে সব। শান ইমা মাথায় চুমু দিয়ে জড়িয়ে ধরতে যায়।
” ফাজিল লোক একটা।” ইমা রাগে হনহন করে ছাঁদে উঠে আসে।শানও হেসে পিছু পিছু আসে।
অহন তখন থেকে সানার সাথে নানা ভাবে কথা বলার চেষ্টা করছে কিন্তু সানা হু হা ছাড়া কোনো কথারই সঠিকভাবে জবাব দিচ্ছে না।তাতেই বেশ চটে আছে অহন।শানের সাথে মিলে মাছ,মাংসে মসলা মাখিয়ে সে নিচে চলে আসে।চোখে মুখে তার রাগের ছাপ।ইমা ভাইয়ের মনের অবস্থা আন্দাজ করে সানাকে লবন আনার নাম করে রান্নাঘরে পাঠায়।সানা রান্নাঘরে ঢুকতেই বাইরে অহনকে ধুমপান করতে দেখে।সানা চুপচাপ মাথা নিচু করে রান্নাঘরে ঢোকে কিন্তু তন্নতন্ন করেও সেখানে লবন পায় না।পাবে কি করে প্রয়োজনীয় লবন সব আগেই উপরে নেওয়া হয়েছে। অতিরিক্ত লবন সেগুলো সব স্টোর রুমে রাখা।লবন খুঁজতে খুঁজতে প্রায় ১০ মিনিট লাগলো।লবন না পেয়ে হতাশ মুখে বাইরে বেরোতেই অহনের মুখোমুখি হয়।দু’জনেই চুপচাপ দাড়িয়ে রয়।অহন সানাকে দেখে যায় আর সানা ফ্লোরে দৃষ্টি রেখে অহনের চাহনী অনুভব করে।
” কিছু লাগবে? ভরাট স্বরে জিজ্ঞেস করে অহন।
সানা মাথা নাড়ায়।
” কি লাগবে?”
” লবন।” খুব আস্তে করেই জবাব দেয় সে।
” লবন তো সব উপরে নিয়ে গিয়েছিলাম।কে পাঠিয়েছে ইমা না?”
অহনের রাগী স্বর আন্দাজ করে সানা ভীরু চোখে তাকায়।বিষাক্ত ধোঁয়া টেনে অহনের চোখ লাল বর্ণ ধারণ করেছে।আচ্ছা শুধু কি বিষাক্ত ধোঁয়ার কারনেই নাকি বুক ফাটা নোনোজলের কারনেও।সানা জিজ্ঞাসু চোখে অহনের দিকে তাকায়।অহন সে দৃষ্টি দেখে তাচ্ছিল্যের হাসি হেসে ঘুরে দাড়ায়।মুখটা শক্ত করে চলে যাওয়ার জন্য পা বাড়াতে সানা হাত টেনে ধরে।অহন আশ্চর্য হয় সানার স্পর্শে। ঘার ঘুরাতেই সানা মাথা নুইয়ে ডুকরে কেঁদে ওঠে,
” কেন এমন পাগলামি করছেন? কেন আমার অবস্থান বুঝতে চাইছেন না আপনি? আমাকে আমার মতো থাকতে দিন প্লিজ। আমার জীবনটা আর কঠিন বানাবেন না।”
অহন সানার হাতটা ছাড়িয়ে নিজের গালের একপাশে ধরে।
” আমার স্পর্শ তোমার কাছে পাপ মনে হয় সানা? ”
” এখন সব পুরুষের স্পর্শই আমার কাছে পাপ মনে হয়।মনে হয় আবিরের স্পর্শ। ঘৃণা হয় আমার।”সানা অহনের গাল থেকে নিজের হাতটা সরিয়ে কিছুটা উচ্চস্বরে বলেই হাত দিয়ে মুখ ঢেকে কান্নায় ভেঙে পড়ে।অহন বুকে জাপটে ধরে সানাকে।সানা ক্রন্দনরত গলায় বলে,
“আপনি আমার মোহ ছেড়ে দিন অহন।নয়তো জ্বলে পুড়ে মরবেন।আপনাকে দেওয়ার মতো কিছুই নাই আমার।”
“তোমার দেওয়ার কিছু না থাক আমার তো বহুকিছু আছে তোমাকে দেওয়ার।একবুক ভালোবাসা, স্ত্রীর সম্মান, আমার সন্তানের মায়ের অধিকার।”সানার মুখটা দু’হাতের আজলা ভরে কপালে ভালোবাসার স্পর্শ দেয় অহন।
” এসব এখন মরিচিকা আমার জন্য অহন।আমার মতো কলঙ্কিনীর এসব স্বপ্ন দেখা বারণ।”
” কে বলেছে তোমাকে এসব?আমি তোমার কোনো কথায় শুনবো না।কাল বাড়ি গিয়ে পরিবারকে রাজি করিয়েই তোমার ভাইয়ের কাছ থেকে চেয়ে নেব তোমায়। অনেক কেঁদেছ আর আমাকেও কাঁদিয়েছ আর না।”অহনের কন্ঠস্বরে দৃঢ়তার সুর।
” তারা আমাকে মানবে না অহন।আমি তাদেরকে এ মুখ দেখাতে পারবো না।”
” চুপপ! আর কোনো কথা নয়।ধৈর্য ধরো সব ঠিক হয়ে যাবে।আমার উপর আস্থা বিশ্বাস রেখে অপেক্ষা করো। অহন সানার দু’চোখের জল মুছে দিয়ে বুকে জড়িয়ে ধরে।
” আজ যে টুকু সময় আছি প্লিজ কাঁদবে না।কান্না আসলেও আমার সামনে কাঁদবে না।”
সানা কোনো জবাব দেয় না।নিশ্চুপ হয়ে শুধু এই আশ্রয়টুকু উপলব্ধি করে।
অন্ধকার ঘন হতেই ছাঁদে বারবিকিউ পার্টি জমে ওঠে।কোফতা,কাবাব থেকে শুরু করে গ্রিল রোষ্ট সব নিজ হাতে বারবিকিউ করছে শান আর সবাই খাচ্ছে।কালো টিশার্ট আর থ্রি কোয়াটার প্যান্টে কাঠের টুলের উপর বসে শান কোল্ডড্রিংস খাচ্ছে আর ঝলসানো মাংস উল্টে পাল্টে দিচ্ছে আগুনের শিখার উপর।ইমার যেন নজরই সরছে তা শানের উপর থেকে।শান আড়চোখে সব দেখে মুচকি হাসছে। শৌখিন, ইরাও এসেছে সন্ধ্যার পরপর।সানাকে আজ হাতছাড়াই করছে না অহন।সানার একহাত ধরে রেখেছে সর্বক্ষণ সে।এতে সবার সামনে বেকায়দা পরিস্থিতিতে পড়েছে সানা।লজ্জায় চোখ নামিয়ে জড়োসড়ো দাড়িয়ে আছে সবার আড্ডার মাঝে।ইমা, ইরা সানার আনইজিনেস দেখে নিজেরা যথেষ্ট চেষ্টা করছে সানাকে ইজি করার।খুব জমিয়ে গল্প করছে চারজন।সানা হু,হা ছাড়া কিছু বলছে না।ইমার নজর ঘুরে ফিরে একটু দূরে বসা শানকে দেখছে।ইমার খুব ইচ্ছা করছে তার বাহুতে মাথা ঠেকিয়ে বসতে তার পাশে,কিন্তু লজ্জায় যেতে পারছে না।বেশ রাত হওয়ায় খালা শুতে চলে গেছে।এখন ছাঁদে তিন কাপল।ইরা শৌখিন, সানা অহন নিজেদের মধ্যেই বুঁদ হয়ে আছে। ইমা ওদেরকে ডিস্টার্ব না করে হেলতেদুলতে শানের পাশে এসে বসে।
” এতোক্ষন পর স্বামীর কথা মনে পড়লো?” ইমা শানের বাহুতে মাথা রেখে গোমড়ামুখে বলে,
” তো কি করবো? আপনি তো আছেন আপনার কুকিং নিয়ে।আমার পাশে কেউ নেই।ওদিক দেখেন ওরা কেমন নিজেদের মধ্যে হারিয়ে গেছে। ”
ইমার কথা শুনে শান মুচকি হেসে একটা কাবাবের শিক পুরোটা ইমার সামনে ধরে বললো,
” ওদের পেট পুড়ে খাওয়া শেষ তাই এখন ভালোবাসায় মগ্ন।তোমার তো কিছুই খাওয়া হয় নি।নাও খাও।”
” আপনিও তো কিছুই খান নি।”
” তাহলে খাইয়ে দাও। ওহ তোমার তো আঙ্গুল কাটা।আসো আমি খাইয়ে দিচ্ছি।শান কোলের উপর প্লেটটা রেখে নান রুটি দিয়ে নিজে হাতে কাবাব সহ বাকিখাবারগুলোও খাইয়ে দেয়।নিজেও খায়।
” অনেক মজা হয়েছে। এতো দারুন রান্না কিভাবে পারেন আপনি?
” ম্যাজিক বুঝেছ?”
” ঘোড়ার আন্ডা।আচ্ছা আমাকে আরেকটা গ্রিল চিকেন দেন।”
” যথা আজ্ঞা মাই লেডি।”
ইমার ঠোঁটের এককোনে একটু খাবার লেগে ছিল শান সুযোগ বুঝে সেটা ঠোঁটের সাহায্যে মুখে পুড়ে নেয়।ইমা কপাল কুঁচকে কনুই দিয়ে গুঁতো দেয় ওদিক তাকিয়ে।ইমার লজ্জা পাওয়া লাল গালদুটো টেনে গলা পেচিয়ে ধরে শান।
“এগুলো সুন্নত বুঝেছ?আমাদের নবীজী ( সা.)মা আয়েশার রেখে দেওয়া হাড্ডি তুলে নিয়ে চুষতেন।মা আয়শা গ্লাসের যেদিকটায় মুখ লাগিয়ে পানি পান করতেন নবীজিও তাই করতেন।এতে স্বামী স্ত্রীর মধ্যে ভালোবাসা বাড়ে। কথাটা বলে শানও ইমার মুখে দেওয়া হাড্ডি টেনে নিয়ে চাবাতে লাগলো।ইমা থ হয়ে দেখে শানের হাত পেঁচিয়ে বাহুতে মাথা ঠেকাল মুচকি হেসে।
” বাব্বাহ! এতোকিছু জানেন? ”
” হুমম! ঈমাম সাহেব বলেছেন আজ।তোমাকে আমার সবটা উজার করে দেব ইমা।”ইমার মুখের দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে শান।ইমা লাজুক দৃষ্টিতে মুচকি হেসে জবাব দেয়,
” আমি যদি কষ্ট দেই? ছেড়ে চলে যায়?”
” হাত পা ভেঙে ঘরে বসিয়ে রাখবো নেক্সট টাইম এসব মুখে আনলে।তোমাকে ছাড়া আমার চলবেই না।তোমার জন্য যেমন ভালো হয়েছি দরকার পড়লে খারাপও হব।”ইমা খেয়াল করে শান রাগ হয়ে গেছে।মুখটা গম্ভীর করে ফেলেছে।
” আমি তো মজা করেছি।আপনি দেখি রাগ করলেন।আচ্ছা এই দেখেন কানে ধরেছি।বলেন তো উঠবস করি?”শান ইমার কথার জবাব দেয় না।মুখ ঘুরিয়ে বসে বারবিকিউ করতে থাকে।ইমা দেখছে অবস্থা সুবিধার না।সত্যি শান বেশ চটেছে ওর দুষ্টুমিতে।ইমা এদিক ওদিক তাকিয়ে টুপ করে শানের গালে চুমু দিয়ে বলে
” সরি! আর কোনোদিন বলবো না।”
” এখানে দাও তারপর মানবো।ঠোঁটে ইশারা করে মুচকি হেসে বলে শান।
” ইশশ! শখ কতো? যান ভাগেন।”
” দেবে না তো? আচ্ছা যাও তাহলে।যাও।শান চাপা ধমক দেয় ইমাকে।ইমা মুখ ফুলাতেই শান মুখ শক্ত করে নিজেই জোর করে ঠোঁটের স্পর্শ নেয়।হাসতে হাসতে বলে,
” যাও মাফ! ইমা কিছুক্ষণ মুখ ফুলিয়ে শানের বাহুতে কামড় দিয়ে ভেংচি কেটে দৌড়ে ইরার কাছে চলে যায় কিন্তু দু’জনের চোখে চোখে ইশারা ঠিক চলতে থাকে।রাত গভীর হতেই ইরা,শৌখিন নিচে চলে আসে সাথে অহন সানার।অহন আজ রাতটা সানার কোলেই মাথা রেখে ঘুমাবে।যে যার মতো রুমে চলে গেল।ছাঁদে এখন দুটো জীব।শান এবং ইমা।শান সবকিছু ঠিক করছে ইমাও সাহায্য করছে শানের কাজে।সব ঠিকঠাক হলে ইমা নিচে নামার জন্য ঘুরে দাঁড়ালে শান হাতটা টেনে ধরে।
” কি হলো? ঘুম ঘুম চোখে প্রশ্ন করে ইমা।
” আজ ঘরে যাব না। ছাঁদেই তোমাকে বুকে নিয়ে রাত কাটাব।”ইমাকে পাজাকোলে নিয়ে পাশের দোলনায় গিয়ে বসে দু’জন।অন্ধকার আকাশে এক ফালি চাঁদ উঁকি দিয়ে আছে।আর তার নিচে দুটো মানব মানবী গভীর ভালোবাসায় সিক্ত হচ্ছে আঙ্গুলে আঙ্গুল ছুঁইয়ে কিংবা অধর স্পর্শ করে।আজ সারা রাত শুধু ভালোবাসার রাত।একে অপরকে গভীর ভালোবাসায় আলিঙ্গণের রাত।ভালোবাসার এই রাত ফুরালেই কাল আসবে ঘোর অমানিশার হাতছানি।শান জানে না তার জন্য কতোবড় ধাক্কা অপেক্ষা করছে কাল।
তোমার আকাশে হব প্রজাপতি
পর্ব ২৪
Writer Tanishq Sheikh
গতকালকের পার্টির মূল কারন ছিল খুশি।সানার জীবনের নতুন অধ্যায় শুরুর খুশি।আবির গতপরশু দিবাগত রাতে পাপের জীবনাসন ঘটায়।শারীরিক কষ্ট তারউপর নিজের করা পাপ যেন কুঁড়ে কুঁড়ে খাচ্ছিল আবিরকে।আর তাই হসপিটালের ছাঁদ থেকে লাফিয়ে পড়ে আত্মহত্যা করে।আবিরের মা এ শোক সহ্য করতে না পেরে হার্ট ফেল করে গতকাল মারা যায়।কারো মৃত্যুতে কোনো খুশি নেই।আনন্দের পার্টিতো নতুনভাবে জীবনকে শুরু করার প্রচেষ্টার জন্য একটা ছোট উৎসাহ।বোনের জন্য যোগ্য পাত্র পেয়েছে শান আর সেজন্যই শান কাল এতো আয়োজন করে।এ খুশির অন্য একটা কারন হলো আনোয়ার আমিনকে বুঝিয়ে দেওয়া তার যোগ্যতা।
ড্রাইভিং সিটে বসে একমনে ড্রাইভ করছে শান।গন্তব্য মানিকগঞ্জ ছোট খালার বাসায়।সানার বিষয়টা জানার পর একবার ধামরাই এসেছিল ছোট খালা রুবিনা।তখন শানকে রিকুয়েষ্ট করে গেছে তার বাসায় দু’রাত থেকে আসার জন্য ওকে নিয়ে।শান দু’খালার মধ্যে ছোট খালার সাথেই যা একটু কথা বলে অন্যজনের ছায়াও ঘেঁষে না সে।বড় খালা রিনার কথা মনে পড়তেই না চাইতেও চোখে সামনে ভেসে উঠলো শানের জীবনের কালো অধ্যায়।আর সে অধ্যায়ের সূচনাকারীনি ফারহার কথা।গাড়ির ব্রেক শক্ত করে ধরে বাঁয়ে ঘুরিয়ে থেমে গেল শান।গাড়ির পেছন সিটে বসা সানা, ইমা ভয় পেয়ে গেল আচমকা ব্রেক কষায়।সানা অহনের চিন্তায় ভাইকে খেয়াল না করলেও ইমা অনেকক্ষণ ধরেই স্বামীকে অনমনা দেখছে।ব্রেক কষায় এবার কপালে ভাঁজ পড়লো ইমা।শানের মুখের দিকে ব্যাকুল ভাবে চেয়ে রইল।শান নিজেও অবাক হলো নিজের কান্ডে।ফারহা তার জীবনের অতীত।অন্ধকার অতীত তবে কেন সে আজ তার কথা মনে করে এমন করলো? শানের মাথা ধরে আসছে।বাইরে বের হয়ে বোতলের পানিতে মুখটা ধুয়ে দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে ঘুরতেই ইমাকে সামনে পেল।মুখে ভাসা চিন্তাদের অতি সাবধানে গোপন করে হেসে বললো
” বাইরে বের হলে কেন? যাও সিটে গিয়ে বসো।”
” আপনার কি অসুস্থ লাগছে? ইমা একটু উঁচু হয়ে শানের গালে হাত রাখলো।না শরীরের তাপমাত্রা ঠিক আছে।তাহলে? ইমা উদ্বিগ্ন চোখে শানের জবাবের আশায় অপেক্ষা করতে লাগলো।ইমার উদ্বিগ্নতা বুঝে নিজেকে যথাসাধ্য স্বাভাবিক রেখে ইমার গলা পেঁচিয়ে এগোতে এগোতে বললো,
” আরে বোকা মেয়ে কিছুই হয় নি আমার।রাতে এতো আদর করেছি যে, ঠিকমতো ঘুম হয়নি তারউপর মশা বাবাজি যে যন্ত্রণা দিল? তাই হেডএক করছে।”
” সত্যি তো? করুন চোখে অবুজ শিশুর মতো চেয়ে বললো ইমা।
” অভার ১০০%” এখন বসো পেছনে।”ইমার গলা ছেড়ে গাড়ির দরজা খুলে দেয় শান।
” না আমি আপনার পাশে বসবো।” ঠোঁট উল্টে আবদার করে বসে ইমা।
” পাগলিটা আমার! সানা অহনের জন্য মন খারাপ করে আছে।ওকে একটু সঙ্গ দাও।আফটার অল ভাবি বলে কথা।”ইমার গালে হাত রেখে বুঝায় শান।কিন্তু ইমা সেকথা শুনবে না।শানের জবাব ইমার মনঃপুত হয় নি আর তাইতো সে একা স্বামীকে একদন্ড ছাড়তে নারাজ।পাশে বসে শানের মতিগতি ঠিক বুঝে উঠতে পারবে।তখন তো ইমার চোখ এড়িয়ে কিছু গোপন করতে পারবে না।ব্যস ইমা মনে মনে সিদ্ধান্ত নিয়েই নিল সে শানের পাশেই বসবে।শানও বেশি কিছু বললো না।ইমা সামনে সিটে বসেও সানার সাথে গল্প করতে লাগলো।এরমধ্যে অহন কল করেছে।সে এখন ফেরিঘাটে পৌঁছে গেছে।সানাকে বেশ উৎফুল্ল লাগছে অহনের কল পেয়ে।ইমা শানের দিকে সুক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল।শান ইমার পাশে বসার মোটিভ ঠিক ধরতে পেরেছে আর তাই কোনো অতীত নিয়ে ভাবছে না সে।ভাবনা আসলেও সেটা এড়ানোর চেষ্টা করছে।ইমাকে সময় সুযোগ হলেই সব বলবে নয়তো মনের কোনে একটা অপরাধবোধ জমে আছে।ইমার তাকানো অস্বস্তি জাগাচ্ছে শানের ভেতর।মনে মনে ভয়ও পাচ্ছে যদি ইমা ধরে ফেলে শান উদ্বিগ্ন তাহলে সে গো ধরে বসবে এর কারন জানার জন্য। তখন কি বলবে শান? অতীত! না ইমার আর তার মাঝে কোনো অতীতের জায়গা হবে না।শান হতে দেবেই না।কিন্তু ইমার দৃষ্টি জানান দিচ্ছে সে শানকে নিয়ে চিন্তিত। এই চিন্তাটা প্রকাশিত হওয়ার আগেই ইমার মাথা থেকে শানকে এসব দূর করতে হবে।শান সানগ্লাস কপালে উঠিয়ে বাঁকা দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো,
” কিছু লাগবে?”
” কি লাগবে?” শানের দুষ্টুমি না বুঝে ইমা কপাল কুঞ্চিত করে জবাব দেয়।
” এটা? ” ঠোঁটের আঙুল রেখে ইশারায় বলে মুচকি হাসে শান।
ইমা পেছনে তাকিয়ে দেখে সানা এসব খেয়াল করলো কি না? না! সে চোখ বন্ধ করে বসে আছে।ইমা ঘাড় ঘুরিয়ে শানের দিকে চোখ বড় করে শানকে শাসায়।শান যেন তাতে আরও মজা পায়।ইশারায় ঠোঁট উঁচু করে,চোখ টিপে ইমাকে জ্বালাতে থাকে।ইমা সানার দিকে আড়চোখে চেয়ে শানের বাহুতে জোরে একটা চিমটি কাটে।শান উহু করে ওঠতেই পেছন থেকে সানা চোখ খুলে চিন্তিত হয়ে জিজ্ঞেস করে,
” কি হয়েছে ভাইয়া?”
” কিছু না বউ মশা চিমটি দিয়েছে। ” বলেই শব্দ করে হাসে ইমাকে আড়চোখে দেখে।ইমা লজ্জায় মুখ নামিয়ে শানের দিকে দাঁত কটমট করে তাকায়।তা দেখে সানা হাসতে হাসতে আবার চোখ বন্ধ করে গতকালের রাতের কথা ভাবতে ব্যস্ত হয়ে যায়।
” আপনাকে আমি দেখে নেব? ” ইমা ফিসফিস করে রেগে বলে।
” কিভাবে? উইথ ড্রেস ওর উইথআউট ড্রেস।” শানের ফাজিলমার্কা কথায় ইমা রাগ করলেও সে রাগ উবে যায় শানের স্নিগ্ধ মনোহর হাসির ঝলকে। কি সুন্দর হাসে শান? ইমার যেন ঘোর লেগে যায় তা দেখে। ইমার চোখের ঘোর শানকে আকৃষ্ট করে।গলা জড়িয়ে বুকের একপাশে টেনে ঠোঁটে ঠোঁট ছুঁইয়ে দেয় শান।ইমা চমকে যায় সাথে অপ্রস্তুত হয়ে সরতে চাই কিন্তু শান ছাড়ে না।এক হাতে ড্রাইভ করে অন্য হাতে ইমার মাথাটা বুকের পাশে ধরে রাখে।
” ছাড়েন! সানা দেখবে তো?”
” দেখুক।” শান সামনে দৃষ্টি রেখে ড্রাইভ করতে করতে বলে।
” আপনার ড্রাইভ করতে সমস্যা হবে।”ইমা মাথা উঠাতে গিয়েও পারে না।শান ইমার কাঁধ শক্ত করে ধরে রেখেছে।সে হাত দিয়েই ইমার একপাশের গাল টেনে বলে,
” চুপচাপ বসে থাকো কিছুই হবে না।নড়বা তো খবর আছে।”
ইমা আর কিছুই বলে না।চুপচাপ শানকে জড়িয়ে শানের বুকে মাথা রেখে বসে থাকে।দুপুরের আগেই মানিকগঞ্জের শিবচরে এসে গাড়ি থামে।রুবিনার ছেলে রাব্বি গাড়ির হর্নের আওয়াজে বাইরে এসে শান সানা কে দেখে খুশিতে চিৎকার করে মা বাবাকে ডাকে।রুবিনা, মাসুদ শানকে দেখে এগিয়ে আসে।সানাকে বুকে টেনে নেয় রুবিনা।ইমার দিকে তাকিয়ে এগিয়ে এসে বলে
” ও মা! কি সুন্দর বউ এনেছিস রে শান? সানা তো ঠিকই বলেছিল এ মেয়ে তো সত্যিই রূপসী। ” রুবিনা ইমাকে কাছে টেনে নিতেই ইমা খালা শ্বাশুড়ি ও খালু শ্বশুরকে সালাম করে।মাসুদ, রুবিনা দুজনই শানের বউয়ের রূপের প্রশংসায় পঞ্চমুখ। ইমার লজ্জায় মুখ লাল হয়ে যায় এসব কথা শুনে।শান সেটা বুঝে ঠোঁট কামড়ে হাসে গাড়িতে হেলান দিয়ে দাড়িয়ে। কিন্তু এ হাসিমুখে হঠাৎই অন্ধকার নেমে আসে এক পরিচিত মেয়েলী কন্ঠস্বর শুনে,
” আরে সানা যে? কেমন আছিস তুই?”
শান ঘার ঘুরে তাকানোর জোর পায় না।শ্বাস প্রশ্বাসও যেন ধীরগতিতে চলছে।এতোটা বছর পেরিয়ে গেছে তবুও যেন ও কন্ঠের চপলতার পরিবর্তন হয় নি।শানের চিনতে সেকেন্ড ও লাগে নাই কন্ঠস্বরের রমনীকে।
সানা ভাইয়ের মুখটার দিকে তাকিয়ে নিরস স্বরে জবাব দেয়,
” ভালো। তুমি কেমন আছ ফারহা আপু?”
ফারহা নামটা শোনামাত্র শানের হৃদস্পন্দন তীব্র গতিতে চলতে শুরু করে।হাত পা অস্বাভাবিক ভাবে কাঁপতে থাকে।মনে হচ্ছে আবার সেই দিনগুলোতে ফিরে গেছে ও।যেদিনগুলো ছিল বিভৎস আর ভয়ংকর।
ফারহা কথা বলতে বলতে শানের পাশে এসে দাঁড়ালো। তারপর ওর মুখে দিকে তাকিয়ে হেসে বললো,
” আমার খবর কি কেউ রাখে? সবাই ভুলে গেছে।তুই, খালা এমনকি শানও।তাই না শান?”
ফারহার সাথে সাথে সবাই শানের দিকে তাকিয়ে থাকে।রাব্বি, রিমি আর ইমা ছাড়া সবাই জানে শান আর ফারহার অতীত ইতিহাস। ইমা শানের দিকে তাকিয়ে অবাক হয়।সাহসী মুখটায় জমেছে একরাশ ভয়ের কালো মেঘ।সত্যি কি তাই? নাকি ইমার চোখের ভ্রম? শানের মুখটা প্রচন্ড ঘামছে ফারহার পাশে দাড়িয়ে। জবানি শক্তি ক্রমশ অসাড় হয়ে আসছে শানের।রুবিনা,মাসুদ ইমার চোখের কৌতূহল দেখে ইমা আর সানাকে ভেতরে নিয়ে গেল।ফারহাকে তাড়া দিল ভেতরে আসার।কিন্তু ফারহার পা একচুলও নড়লো না শানের পাশ থেকে।ইমা যেতে যেতে এদু’জনকে পাশাপাশি দেখে কি একটা অদ্ভুত পিঁড়া অনুভব করলো!কিন্তু কি পিঁড়া আবিষ্কার করার আগেই খালা তাকে অন্দরে নিয়ে গেল তড়িঘড়ি করে।সবাই ভেতরে যেতেই ফারহার ঠোঁটে হাসি ফুটে উঠলো।মুখ উচিয়ে শানের মুখোমুখি দাঁড়ালো। শান দৃষ্টি সরিয়ে অন্যদিকে ফিরে পাশ কেটে চলে যেতে উদ্যত হলে ফারহা হাত টেনে ধরলো।শানকেই আতঙ্কিত করে তুললো শানের শ্বাস প্রশ্বাসের শব্দ।এই স্পর্শ শানের বুকের দাবানো আগ্নেয়গিরিকে আবার জাগিয়ে তুললো।পুড়ছে শান।কেউ দেখছে না সে পোড়া।শুধু ফারহার চোখে ধরা পড়ছে আর তাইতো সে হাসছে।
” এখনও ভয় পাও আমাকে? আচ্ছা আমি কি বাঘ বলো তো?” শানের কাছে এগিয়ে আসলো ফারহা।শান চোখ খিচে নিজের ভয়কে তাড়াতে লাগলো।না! সে সেই ছোট্ট শান নয়।এখন সে অসহায়, বাস্তুহারাও নয়। এই তুচ্ছ নারীকে সে কেন ভয় পাচ্ছে? এর ক্ষমতা নেই তোকে কাবু করার শান? প্রতিঘাত কর!প্রতিঘাত কর!শানের অন্তর আত্না বিদ্রোহ করে উঠলো।শান চোখ খুলে ফারহার চোখে চোখ রাখলো।ফারহা শানের লাল বর্ন ধারণ করা চক্ষু উপেক্ষা করে হাসল।এ হাসি বিষাক্ত লাগলো শানের কাছে।কন্ঠস্বর রূঢ় করে বললো,।” হাত ছাড় ফারহা!
শানের রুক্ষ কথায় ফারহা অবাক হওয়ার ভাব ধরে জবাব দিল,
” বাব্বাহ! এতো রাগ।তোমার সব রাগ ভাঙ্গাতেই তো এসেছি আমি।”আহ্লাদিত হয়ে শানের বুকে হাত রাখতে যাবে তখনই সরে দাঁড়ায় শান।আগের মতোই রেগে বলে,
” বললাম না হাত ছাড়!
“ছাড়ার জন্য তো ধরিনি? তুমি তো জানোই আমাকে তাই না বলো?”
” অবশ্যই জানি।নষ্টা,চরিত্রহীন নারীকে কে না চেনে?”শান এক ঝটকায় হাতটা ছাড়িয়ে সামনে পা বাড়াতেই ফারহা শানের পেছনের টিশার্ট টেনে ধরে রেগে বলে।” শান! এতোবড় কথা তুমি আমাকে বলতে পারলে?”
” তোকে এর আগেও বলেছি আমার ছায়া থেকেও দূরে থাক বাট তুই শুনিস নাই।আবার বলছি আমার থেকে দূরত্ব বজায় রাখ ফারহা।”
রাগে ফারহার হাত চেঁপে ধরে শান।সেটা খেয়াল করতেই ঘৃণা ভরা মুখে হাত ছেড়ে দেয়।
” এখন আমার আদর তোমার মনে পড়ে না তাই না? ও বুঝেছি এখন তো বউয়ের আদর পাও। তোমার বউ জানে আমাদের মধ্যকার সম্পর্কের কথা।”
” চুপ! একদম চুপ।তোর স্পর্শ আমার কাছে সবচেয়ে ঘৃণিত। সেটা তুইও জানিস।ঘৃনিত জিনিস যতো ভুলে থাকা যায় ততই ভালো।আমার বউয়ের নাম তুই মুখেও আনবি না।”
শান ঘুরে দাঁড়ায় ভেতরে যাওয়ার জন্য। তখনই পেছন থেকে ফারহা হুমকির সুরে বলে,
” আমার থেকে দূরে তুমি কোনোদিন যেতে পারবে না।তোমার বউও পারবে না আমাদের মাঝে আসতে।আমার যখন প্রয়োজন তোমাকে, তুমি বাধ্য সে প্রয়োজন মেটাতে।আফটার অল প্রথম প্রেম বলে কথা।”
শান কোনোদিক না তাকিয়ে ছুটে এসে ফারহা গলা টিপে ধরে।হুঙ্কার দিয়ে আস্তে করে বলে,
” আমাকে সেই ছোট্ট শান ভাবিস না ফারহা! যাকে তুই তোর প্রয়োজন মাফিক ব্যবহার করেছিস।আমার স্ত্রী আর আমার মাঝে আসলে তোকে জ্যান্ত পুঁতে ফেলবো।” ফারহার মুখ বিবর্ন হয়ে যাওয়ায় শান গলা ছেড়ে ঢোক গেলে।হাঁফাতে হাঁফাতে বলে,
” দ্যাখ রিকুয়েস্ট করছি আমাকে ছেড়ে দে।তোর মতো ডায়নীর কবলে পড়ে আমার জীবন এতোদিন বিষিয়ে উঠেছিল। তুই আমাকে অমানুষ বানিয়ে ছেড়েছিলি।আমি মানুষ হয়ে বাঁচতে চাই প্লিজ আমাকে আমার মতো বাঁচতে দে।”
ফারহা গলায় হাত দিয়ে দাঁত পিষে রাগ গলধকরণ করে হাসে। চোখে জল থই থই করে ব্যথায়।
” তোমার দেওয়া ব্যথাও আমার কাছে অমিয় সুধা শান।আমি তোমার কাছে ফিরে এসেছি।স্বামী সংসার সব ফেলে।আমাকে তোমায় গ্রহণ করতেই হবে।”শেষের কথা শুনে শানের কপালের রগ ফুলে ওঠে। চুলে মুঠি ধরে আড়ালে টেনে আনে ফারহাকে।
” আমার শরীর চাই তোর তাই না? এজন্য এতো নাটক!আমার মনটা তোর কাছে সেদিনও খেলনা ছিল আজও খেলনা।কিন্তু আমি আর সেই আমি নেই।এই আমির সবটুকুর দাবিদার আমার স্ত্রী। তাকে ঠকিয়ে তোর আমি কোনোদিন হব না।যা পারিস কর যা!”ফারহার গাল চেঁপে ধরে ধাক্কা দিয়ে নিচে ফেলে চলে আসে শান।হ্যাঁ সে পেরেছে এই পিশাচীকে মোক্ষম জবাব দিতে।শান নিজের রূপে ফিরে এসেছে।এই দূর্বল নারীকে সে কেন ভয় করবে? না! আর করবে না ভয়।অতীত যায় হোক সেটা ভুল ছিল।ধোঁকা ছিল ফারহার।যার আগুনে নিজের সব বিসর্জন দিয়েছিল শান।দ্বিতীয়বার সেই ভুল করবে না।
চলবে,,