তোমার আকাশে হব প্রজাপতি
পর্ব ১৯ +২০+২১
Writer Tanishq Sheikh
” ইমা! এই ইমা! শুনছ! এই মেয়ে।”
” উহু! ঘুমাতে দিন না।”ইমা ঘুম জড়ানো চোখেই বললো।
” আরে ঘুমাও তুমি সাথে আমাকেও একটু ঘুমাতে দাও।দু’চোখের পাতা সারাটা রাত এক করতে পারি নি।” শানের কন্ঠস্বরে করুন সুর।রাতে রাগ করে ছাঁদে গিয়েছিল কিন্তু মশার উপদ্রবে বেশিক্ষণ ছাঁদে থাকতে পারে নি।বাধ্য হয়েই রুমে চলে এসেছিল।এসে দেখে ইমা নিজের করা কুশনের বর্ডার ডিঙিয়ে শানের সাইডে পা ছড়িয়ে এলোমেলো শুয়ে আাছে।বাচ্চাদের মতো শুয়ে আছে।গায়ের কাপড়টা পর্যন্ত ঠিক নেই।শান বিছানায় বসে ইমাকে ঐ পাশে ঠিক করে শুইয়ে দিয়ে নিজেও এ পাশে শুয়ে পড়ে।ইমার ঘুমন্ত মুখটার দিকে তাকিয়ে কষ্টে চোখের জল চলে আসে।ভালোবাসার মানুষের চোখে ঘৃণা দেখে কোন মানুষটাই বা নিজেকে ঠিক রাখতে পারে? শান পারে না তবুও সমস্ত শক্তি দিয়ে নিজের আবেগকে ঠেলে মনের এককোনে চাপা দেয়।ইমার মুখের উপর আসা চুলগুলোকে সাবধানে সরিয়ে দিয়ে কান্নার জল মুছে স্থির হয়ে তাকায়,
” আমি সত্যি তোমার যোগ্য না ইমা। আমার সব থেকেও কিছুই নেই।এই যেমন তুমি থেকেও তোমার ভালোবাসা আমার জন্য নেই।আমার অতীত খুব ভয়ংকর ইমা।তুমি সবটা জানলে আরও ঘৃণা করবে আমাকে।আমি কি করবো তখন বলো? আমি যে এখনই দূর্বল হয়ে যাচ্ছি তোমায় হারানোর ভয়ে।আমার অতীতের কালো ছায়া আমাকে সুখী হতে দেবে না।কোনোদিন না।এভাবে বাঁচাও যে সম্ভব না।আমি মরে গেলে আমাকে মনে করবে তো ইমা?” শান নিরবে অশ্রু বিসর্জন দেয়।শানের কালো অতীতই শানের বর্তমান শেষ করে দিয়েছে। দৈহিক মানসিক বল একনিমিষেই শেষ হতে থাকে অতীত ছায়ার আভাস পেলে।শান অন্যদিকে মুখ ফিরিয়ে অতীতের দূর্ষহ স্মৃতিচারণ করতে থাকে।নিজেকে এতোটা ছোট সে কোনোদিন মনে করে নি আজ যতোটা উপলব্ধি হচ্ছে। বার বার নিজেকে দুষছে। কেন সয়লো সে? কেন মরে গেল না তাহলে আজ এতো নিরুপায় তাকে হতে হতো না।সবটা জানলে ইমার সামনে কি করে দাঁড়াবে সে? কান্নায় ভেঙে পড়ে শান,
” তোমাকে ভালো না বাসাই উচিত ছিল আমার।কিন্তু কি করবো বলো? আমার কাঙ্গাল মন সংকেত না দিয়েই তোমার প্রেমে পড়ে গেল।আজ তোমাকে ভালো না বাসলে আমার এতো ভয় ছিল না ইমা।আগে আমি মরে গেলেও তাতে আফসোস ছিল না কিন্তু এখন যে আর মরতে ইচ্ছা হয় না।খুব করে বাঁচতে ইচ্ছা হয়।তোমার কোলে মাথা রেখে গোধূলি দেখতে ইচ্ছা হয়।এতো ইচ্ছার কেন জন্ম দিলে ইমা?”শান দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে।কষ্টে ভারি হয়ে আসে বুকটা।ঝড় ওঠে কাল বৈশাখীর ঝড়।ভেতরটা লন্ডভন্ড করে দিচ্ছে সে ঝড়ে।ঝড়ের তান্ডব থেমে গেল ইমার স্পর্শে।
হঠাৎই ইমার একটা পা শানের হাঁটু অব্দি উঠে আসে।শান ঘুরে তাকাতেই ইমা শানের গলা জড়িয়ে ধরে। সারাটা রাত শান চেষ্টা করেও ইমার হাত পা ছোড়াছুড়ি বন্ধ করতে পারলো না।এভাবে ঘুমানোর অভ্যাস শানের নেই।একসময় ছিল।সানাকে বুকে নিয়ে ঘুমাতো।কিন্তু যেদিন পাপের পথে চলে গেল।দেহ,বিবেক সবটায় বিলিয়ে দিল পাপের পথে সেদিন থেকে সানাকে আর কাছে টানে না।
ইমার ঘুমন্ত মুখটা দেখে নিজের দূর্ভাগ্যের উপর হাসে শান।ইমার গালে এক হাত রেখে বলে
” ইমা! এই ইমা।”
না ইমা এবারও নড়াচড়া করলো না।গলা জড়িয়ে শুয়ে রইল। শান নিজেও মানিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে আবেগকে চেপে।আজানের ধ্বনি কানে পৌঁছাতেই ইমা আড়মোড়া ভেঙ্গে চোখ মেলে।নিজের শরীরের অর্ধেক শানের গায়ে উঠে আছে দেখে ইমা ঢোক গিলে তড়িঘড়ি সরে আসে।জিহ্বা কামড়ে কাপড় ঠিক করে শানের দিকে তাকায়।শান এপাশ ফিরে শুয়ে ঘুম জড়ানো কন্ঠেই বলে
” গুড মর্নিং!”
” গুড মর্নিং “ইমা লজ্জায় মৃদু স্বরে বলে। উঠে সোজা ওয়াশরুমে ঢোকে।লজ্জায় গাল দুটো ডালিমের মতো রাঙা হয়ে যায়।কিভাবে শুয়েছিল ভাবতেই চোখে মুখে পানির ছিটা মারে।ফজরের নামাজ শেষে সুন্দর সকালটা উপভোগ করে বাইরে এসে।এখনও রোদ ওঠে নি।চারিদিকে শান্ত স্নিগ্ধ পরিবেশ।ইমা খালি পায়ে বাড়ির পেছনটায় হেঁটে আসে।ইমাকে সকাল সকাল দেখে মরিয়ম খালা খুশি হয়ে জিজ্ঞেস করে
” বউ মা নামাজ পড়ছ?”
” জ্বী খালা।”
” বেশ! বেশ।”
” খালা একটা কথা বলি?”
” হ্যাঁ মা বলো?”
” ঐ যে পেছনে আম ঝুলে আছে ওগুলো কাদের?”
” ওগুলো তো মানুষের।” ইমার মুখটা চুপসে যাওয়ায় খালা হেসে ওঠে
” আরে পাগলি মেয়ে ওগুলো সব তোমাগোই তো।”
” আমাদের!”ইমার চোখে মুখে খুশির জোয়ার।
” হ! শান বাবা নিজে লাগাইছে।এগুলা সবই তোমাগো।খালা সামনের বাগান থেকে পেছনের সবটা ইশারা করে বলে।
” খালা তাহলে আমি আম পেরে নিয়ে আসি?”
” চলো আমিও যাই। এগুলা হলো বারোমাসি ফলের গাছ।” আম গাছের পাশের কয়েকটা গাছকে লক্ষ্য করে বলে খালা।ইমা কাঁচা আম, আর তেঁতুল পেরে নিয়ে আসে।
সকালের ব্রেকফাস্ট রেডি করে না খেয়েই ইমা আম কেটে আচার বানানোর জন্য তৈরি করে।এরমধ্যে সবাই ফ্রেশ হয়ে নিচে নামে।শানকে নিচে নামতে দেখে ইমা লজ্জায় দৃষ্টি সরিয়ে নেয়।ইমার লজ্জা পাওয়া মুখটা দেখে শান মুচকি হাসে।ইমা লজ্জায় শানের দিকে চোখ তুলেও তাকাতে পারাছে না।চুপচাপ বসে খেয়ে যাচ্ছে আর অহন সানার সাথে টুকটাক কথা বলছে।শান খাবার সেড়ে উপরে চলে যায়।সানা বসার ঘরে গিয়ে বসে।সানাকে দেখে অহনও সেখানে গিয়ে বসে।
” ভালো আছো সানা?”
” জ্বী ভাইয়া”দৃষ্টি নিচে রেখে মৃদু স্বরে জবাব দিল সানা।
দু’জন চুপচাপ বসে থাকে কিছুক্ষণ। সানার অস্বস্তি লাগছে অহনের সামনে বসে থাকতে।আবার উঠতেও পারছে না কারন ছাড়া।
অহন জড়তা কাটিয়ে আবার বললো,
” তোমাকে একটা কথা বলবো বলবো ভাবছি।”
” জ্বী বলুন”
” তুমি কিছু মনে করবে না তো সানা?”
সানার কাছে অহনের এই কথা অন্যরকম লাগলো।না চাইতেও অহনের চোখে চোখ রাখলো।অহনের চোখের কোনে লাল হয়ে থাকাটা সানার দৃষ্টি এড়ালো না।সানা থমথমে গলায় বললো
” কি হয়েছে অহন ভাই? কোনো সমস্যা ভাবিকে নিয়ে?”
অহন হাসলো সানার কথা শুনে।তবে সেটা স্বাভাবিক হাসি নয়।ব্যাঙ্গাত্মক হাসি।
সানা মলিন মুখে বললো
” আপনি হাসছেন যে? আমি কি হাসির কিছু বলেছি?”
” তা নয়।নিজের উপরই হাসলাম।”
ভ্রজোড়া এক করে জিজ্ঞেস করলো সানা।
“মানে?”
” সে যদি তুমি বুঝতে তবে আজ আমার হাসা লাগতো না নিজের অনুভূতিকে ব্যাঙ্গ করে।যা হোক বিকেলে একটু হাঁটতে বেরুবে আমার সাথে?”
সানা অহনের প্রথম কথাগুলো শুনে বিস্মিত নয়নে চেয়ে থাকে।কি বলতে চাচ্ছে সানা বুঝেও বুঝে উঠতে পারছে না?সানাকে ওভাবে মূর্তির মতো চেয়ে থাকতে দেখে অহন তুড়ি বাজিয়ে বললো
” হ্যাঁলো!
সানা নড়েচড়ে উঠলো।বললো,
” জ্বী বলুন।
অহন আবারও হাসলো তবে এবার মিষ্টি করে স্বাভাবিক হাসি ফুটে উঠলো ঠোঁটের কোনে
” যাবে বিকেলে?
” ভাইকে জিজ্ঞেস করতে হবে।তাছাড়া আমার ভালো লাগে না কোথাও ঘুরতে।”
” বেরুলেই ভালো লাগবে।আমি লাগিয়েই ছাড়বো।তুমি তৈরি থেকো আমি ভাইয়ের অনুমতি নিয়ে নেব।”সানা না করতে চেয়েও পারলো না তার আগেই অহন বাইরে চলে গেল।সানার ইচ্ছা করছে না কোথাও যেতে।সূর্যের আলো এখন আর সহ্য হয় না ওর।দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে সোফায় গা এলিয়ে বসে সানা।
ইমা আম মাখিয়ে রুমে নিয়ে আসে।সানার অপারেশন হয়েছে নয়তো সানাকেও দিত।হাত চেটেপুটে খেতে খেতে রুমে ঢোকে ইমা।শান বিছানায় বসে অফিসের ফাইল দেখছিল।ইমাকে এভাবে খেতে দেখে ভ্রুকুটি করে তাকায়।ইমা দৃষ্টি নামিয়ে জানালার পাশে হেলান দিয়ে দাড়িয়ে খেতে থাকে।শানকে আড়চোখে দেখে যাচ্ছে সে।কি মনোযোগেই না ফাইল দেখছে?এমন মনোযোগে বউকে একদিনও দেখলো না।ইমার মনে আক্ষেপের সুর বাজে।লজ্জা নিয়ে কতোক্ষন চুপ থাকা যায়? না ইমা আর পারাছে না চুপ থাকতে।হালকা কেশে বললো,
“খাবেন?”
” না”
ইমা আঙুল মুখে পুরে বাটিটা শানে সামনে ধরে বলে
” খেয়েই দেখেন।খালা বলছে খুব মজা হয়েছে।”
শান ধমকের সুরে বলে।
” ডিস্টার্ব করো না। মজা হয়েছে চুপচাপ খাও।আমি খাব না।”
ইমা মুখ থেকে আঙুল নামিয়ে আমের ভর্তা নাড়তে নাড়তে মুখ কালো করে বলে
” না খেলে নাই।সামনে বসে আছেন তাই জিজ্ঞেস করলাম নয়তো নজর লাগার সম্ভবনা থাকতো।আপনাকে সাধতে আমার বইয়ে গিয়েছিল।”
ইমা মন খারাপ করে চলে যাওয়ার জন্য ঘুরে দাঁড়াতেই শান ইমার ডান হাতটা টেনে দুটো আঙুল মুখে পুরে নেয়।ইমার শরীর শিরশির করে ওঠে।হকচকিয়ে যাওয়ায় হাতের বাটিটা নিচে পড়ে যায়।ইমা হাত টেনে ছাড়িয়ে ছুটে পালায় ঘর থেকে।শান শব্দ করে হেসে আবার ফাইল দেখায় মনোযোগী হয়।
তোমার আকাশে হব প্রজাপতি
পর্ব ২০
Writer Tanishq Sheikh
সানা বসার ঘর ছেড়ে ডায়নিং এ আসলো পানির জন্য। ইমাকে ছুটে আসতে দেখে চকিত চাহনীতে চেয়ে বললো
” কি হয়েছে ভাবি?”
ইমা চোর ধরা খাওয়ার মতো আমতা আমতা করে,
” কককই! কিছু না তো।”
” সিওর!”
” হ্যা! হ্যাঁ!
” তা শুনলাম তুমি আম মেখেছ আমাকে যে দিলে না?”
ইমা বিস্মিত হয়ে ভ্রুযুগল এক করে বলে
” তোমার টক খাওয়া নিষেধ না?আমি তো ভেবেছি অপারেশনে কাটা জায়গা টক খেলে পাকবে পরে ঘা হয়ে যাবে।”
ইমার কথায় সানা শুকনো হাসি দেয়
” না এমন টা না।ভিটামিন সি ঘা শুকানোর জন্য ডক্টর রেকমেন্ড করে।খেলে সমস্যা নাই।”
” ইয়া আল্লাহ! আমি কতো বলদি দেখেছ তো?সত্যি আমার বুদ্ধি কম।আচ্ছা আমি এখনি মেখে নিয়ে আসছি।”
ইমার লজ্জিত চেহারা দেখে সানা বলে,
” ভাবি ইটস ওকে।আমি খাব না। মজা করছিলাম।”
” না! না আমি এখনই আনছি তাছাড়া আমিও তো খেতে পারি নি।”ইমার মুখটা হঠাৎই লজ্জায় লাল হয়ে উঠলো।
” কেন খেতে পাও নি কেন? ”
” তোমার ভাই ফেলে দিয়েছে।”
” ভাইয়া ফেলে দিয়েছে? কি বলো? সে এমনটা কেন করবে?
” আরে না! না। মানে আমার হাত থেকে পরে গেছে।কিন্তু দোষ তার।”
সানা কিছুটা বুঝে মুখ টিপে হাসে।ইমার কাঁধে হাত রেখে বসার ঘরে দু’জন বসে।ইমা তো রেডিওর মতো বাজতেই আছে ননস্টপ। তার যতো গল্প সে সব আজ সানাকে বলে।একদম স্কুল জীবন থেকে শুরু করে বিয়ের আগ অব্দি। সানা মনোযোগ সহকারে শোনে আর হাসে।হঠাৎই ইমার গালে দু’হাত রেখে বলে
” তুমি না খুব ভালো মেয়ে।একদম সহজ সরল।” ইমা লজ্জায় মাথা নত করে ফেলে সানার আদুরে কথায়।
সানা হেসে ইমার থুতনি ধরে বলে
” এতোও ভালো হয়ো না।একটু কড়া হবে আর চালাকও বুঝেছ?যেন কেউ তোমাকে দূর্বল ভেবে ঠকাতে না পারে।”
ইমা মাথা নাড়ায়।সানার মনটা ভার হয়ে যাওয়ায় ইমা উত্তেজিত ভঙ্গিতে বলে
” একটা মজার কথা শুনবে সানাপু!”আমাদের এলাকার মাতব্বরে পোলা আশিক আছে বুঝছো।আমার দু ক্লাস বড়।এই টুকু বলে এদিক ওদিক তাকিয়ে সানাকে ফিসফিস করে বলে”অহন ভাইকে বলবা না বুঝেছ? ”
” হ্যাঁ বলবো না বলো।”সানা মুচকি হেসে অভয় দেয়।
” আশিক সবসময়ই আমার স্কুল যাওয়া আসার পথে পিছু নিত।আর গান শোনাত।ওর গান শুনলে তুমি ফিদা হয়ে যাবা।”
” তুমিও হয়েছ বুঝি?”সানা মুচকি হাসতেই ইমা আবার লজ্জা পায়।
” আরে কি যে বলো? তবে সত্যি বলতে আমিও ওর গানের গলা পছন্দ করতাম।”এটুকু বলেই ইমা মাথা নত করে নখ কামড়ায়।
” শুধু কি গানের গলার? হুম! হুমম?”
” না মানে! আরে এই বিষয় বাদ।যা বলছিলাম শোনো। একদিন সন্ধ্যার পর আমি ঘরের খোলা জানালার পাশে বই পড়ছিলাম।হঠাৎই ভূত দেখার মতো চমকে যায়।দেখি কি!আশিক দাড়িয়ে আছে।আমার তো লজ্জায় সাথে ভয়েও কন্ঠ রোধ হয়ে গেল।জানালা আটকে দিতে গেছি তখন হাতটা খপ করে ধরে একটা গোলাপ আর চিঠি গুঁজে ভো দৌড়। হি! হি! হি! “ইমা হাসতে হাসতে সিঁড়ির দিকে তাকাতেই হা করে রইল।সানা ইমার চোখে মুখে ভয় আর বিস্ময় দেখে পেছন ফিরে তাকাতেই দাড়িয়ে পড়ে।শান চোয়াল শক্ত করে ইমার দিকে ক্ষুব্ধ নয়নে চেয়ে আছে।সানা ইমার দিকে তাকাতেই বেচারির জন্য মায়া হয়।ছলছল চোখে কিভাবে তাকিয়ে আছে নিচে।
” সানা ওষুধ খেয়েছিস?”
শানের গলার রুক্ষ স্বরে সানা দাড়িয়ে যায়।
” হ্যাঁ ভাই।”
” রুমে গিয়ে গোসল সেড়ে নামাজ পড়ে খেতে আয়।রেস্ট নিয়ে আমরা সন্ধ্যার আগে আগেই ছোট খালামনির বাসায় রওনা হব।”
সানার চোখে মুখে খুশি উপচে পড়ে ছোট খালামনির নাম শুনে।পরক্ষনেই ইমার কথা ভেবে খুশিটা ম্লান হয়ে যায়।সে সাহসও পায় না ভাইকে ইমার বিষয়ে কিছু বলার।তার আগেই শান তাকে তাগাদা দেয় উপরে যাওয়ার।সানা চলে যেতেই শান ইমার থুতনি শক্ত করে ধরে মুখ তোলে।
” আশিক! বাহ। ভালোই তো সিনেমা করেছ।আবার সেগুলো বলা হচ্ছে হেসে হেসে।”
ইমা ভয়ে শুধু ঢোক গেলে।শান সেটা স্পষ্ট দেখতে পায়।রাগে কর্কশ গলায় বলে
” এদিকে তাকাও।তাকাও আমার চোখের দিকে।”
” না! আমার ভয় করে ইমা ভয়ে ভয়ে জবাব দেয়।
” ভয় কেন করে? ভয় কাদের করে জানো তো? যার মনে দোষ থাকে।”
ইমা অস্থির চোখে নিচে তাকিয়ে ভাবে কি জবাব দেবে?জবাব না দিলে খেয়েই ফেলবে আজ।অনেক ভেবে ইমা দুষ্টু বুদ্ধি খাটিয়ে বললো,
” আরও কারন থাকতে পারে ভয়ের।সামনে বাঘ, সিংহ কিংবা ডায়নোসর দেখলেও তো ভয় করে তাই না?কথাটা শেষ না হতেই শান ইমার বাহুধরে দাঁড় করিয়ে দেয়।
” আরে বাহ! খুব তো পটর পটর করছ দেখছি।যুক্তিখন্ডন ভালোই শিখেছ।গুড। কিপ ইট আপ।”
ইমা এদিক ওদিক ফাঁক খোঁজে পালানোর।কিন্তু সেই চালাকি ধরে ফেলে শানের নজর।ইমা পালাবে তার আগেই হাত ধরে টেনে উপরে নিয়ে এসে দরজা বন্ধ করে দেয়।ইমা লাফ দিয়ে খাটে জবুথবু হয়ে বসে থাকে আড়চোখে শানকে দেখতে দেখতে। কি ভয়ানক চাহনী!ইমার গলা শুকিয়ে আসে।
” আশিক! নাইচ নেইম হুমম! আর কি কি ভালো লাগে তার?”
শানের গলায় রাগের সহিত ব্যাঙ্গাত্মক সুর।ইমা কোনো জবাব দেয় না।কি না কি বলে ফেলবে পরে মেরে না চাপা ভেঙে দেয় এই লোক।আরে ইমা কি দরকার ছিল ওসব থ্রিলার কাহিনির?ইমা নিজের মনে নিজেকে হাজারটা বকে।
শান এক হাত কোমড়ে রেখে অন্য হাতে কপাল টিপছে।বেডের সামনে এ অবস্থায় পায়চারি করে যাচ্ছে। ইমা শানকে এমন বিচলিত হতে দেখে মুখ ফসকে বলে ফেলে,
” মাথা ব্যথা করছে।আসুন টিপে দেই।”
” মাথা টিপে দেবে না? আরেকটা কথা বললে গলা টিপে এখানেই পুঁতে রাখবো।”দাঁত কিড়মিড় করে বলে শান।ইমা ঠোঁট উল্টে ফুঁপিয়ে কাঁদে।
” কাঁদছিস কেন?
” আপনি আমাকে গলা টিপে মারবেন?”
” চুপ! কে বলেছে তোকে?
” এইমাত্রই তো বললেন।গলা টিপে মেরে পুঁতে রাখবেন।ইমা ফুঁপিয়ে কাঁদতে কাঁদতে বলে।
” ওটা তো কথার কথা।হুশশ।কান্না থামাও।মেজাজ কিন্তু আগে থেকেই খারাপ করেছ।”
” ইশশ! আমি কি প্রেম করতাম নাকি।ও আমাকে পছন্দ করতো। আপনি না বুঝেই মেজাজ আকাশে তুলে বসে আছেন।”
শান ভ্রুজোড়া নিচে নামিয়ে ঠোঁট মুখ শক্ত করে বলে
” করবে কেন ও পছন্দ? তুই শুধু,,
” কি! ইমার কপাল কুঞ্চিত হয় চোখে ভাসে কৌতূহল।
” কিছু না।আমার সামনে থেকে যাও।জাস্ট গেট লস্ট। ”
ইমা ভীরু পায়ে নামতেই শান হাত টেনে আনে।
” কই যাও?”
” আপনিই তো বললেন চলে যাও।গেট লস্ট।”
” আমি বলবো আর তুই চলে যাবি?”শানের চোখ রাগে লাল হয়ে যায়।কন্ঠ ধারালো তলোয়ারের মতো ঝনঝন করে।
ইমা এবার শব্দ করে কেঁদে দেয়।
” তাহলে কি করবো? যাবো না।”
” চুপ!কেন মাথায় বুদ্ধি নাই? বুঝিস না কিছু? সারাদিন তো সুযোগ পেলেই পটরপটর করিস। এখন কেন বুঝিস না।”
” ইয়া আল্লাহ! এ কোন গ্যারাকলে পড়লাম।যেদিকে যাই সেদিকেই দোষ।যেতে বললে বসে থাকতে হয় আজই প্রথম জানলাম।হায়রে এতো বেকুব কেন আমি?কিছুই জানি না।”
” বিরবির করছিস কেন? জ্বিনে ধরেছে? আশিক জ্বিন?
” ইয়া মাবূদ!আশিক রে তুই তো কূফা রে হারামজাদা। তোর নাম নিয়ে এ কি টর্নেডোর কবলে পড়লাম?মাবূদ রক্ষা করো। ১০০ টাকা ফকিররে দেব। ইমা বেকুবের মতো শানের মুখের দিকে তাকিয়ে থাকে ড্যাবড্যাবিয়ে।
” কথা বল?”
” কি বলবো?”
” আমি কি জানি কি বলবি?ওহ হ্যাঁ আশিক আর তোর লাভ স্টোরি বল।”
ইমা বিরক্ত হয়ে কাঁদো কাঁদো গলায় ঝাড়ি মেরে বলে,
” আরে দুরো!
” কি!”
শানের ধমকে ইমা ভড়কে গিয়ে বলে,
” না! না!কিছু না।আমার হাতে ব্যথা করছে হাত ছাড়েন।”
শান আরও জোরে হাত চেপে কিছুক্ষণ দাড়িয়ে ইমার মুখে ব্যথার ছাপ আসার পর ছেড়ে দেয়।ইমা তাড়াতাড়ি বিছানার এককোনে চুপটি করে বসে হাত ডলে।শাড়ির আঁচল সরিয়ে হাতটা দেখে লাল হয়ে আছে।খুব রাগ হয় ইমার।শ্বাস প্রশ্বাসের গতি বেড়ে যায়।শব্দ করে কেঁদে ওঠে অভিমানে,
” আপনি যখন আনিকার আপুর সাথে উম্মা উম্মা করেন সেটা কিছু না।আরও তো কতো কিছুই করছেন মেয়েদের সাথে।আর আমি! আমিতো কিছুই করি নাই।ঐ ছ্যারা আমারে চিঠি দিছে আমার কি দোষ?দুনিয়ার সব ছ্যামরা গুলা লুইচ্চা। আপনার আর ঐ আশিকের মতো।আমার হাত।”ইমা ভ্যা ভ্যা করে গলা ছেড়ে কাঁদে। শানের এতোক্ষনে হুশ ফেরে।মাথাটা পুরো আউলে গিয়েছিল ইমার মুখে অন্য পুরুষের কথা শুনে।সহ্য হয়নি শানের।কিছুতেই সহ্য হয় নি।বাড়াবাড়ি রকমের বিহেভ করে বসেছে মেয়েটার সাথে।দ্রুত ওয়াশরুমে ঢুকে মুখে চোখে পানির ছটা দেয়।স্পষ্টভাবে ইমার কান্নার আওয়াজ পাচ্ছে সে।প্রচন্ড অপরাধবোধ কাজ করছে এবার শানের।ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে ইমার মুখোমুখি বসলো।ইমা হাঁটুতে মুখ ঠেকিয়ে তখনও কেঁদে যাচ্ছে।
” আচ্ছা সরি! ভুল হয়েছে আমার।আমি তোমাকে কষ্ট দিতে চাই নি বিশ্বাস করো।”
ইমা অন্য দিকে ফিরে আছে। সে বোধহয় পণ করেছে এদিক তাকাবে না।শান কয়েকবার হাত এগিয়ে আবার নামিয়ে নিল সংকোচে।
“ইমা! সরি। আচ্ছা বলো কি করলে আমার গুনাহ মাফ হবে।আমি তাই করবো।”
ইমা ভেজা চোখে শানের দিকে অভিমানে গাল ফুলিয়ে বলে,
” সত্যি! যা বলবো তাই মানবেন?”
” ১০০%”শানের মুখে হাসি তবে ইমার ভেজা চোখ সে হাসিটা যথাযথ ভাবে ফুটতে দিল না ঠোঁটের কোনে।
” না কোন পারসেন্টে ফারসেন্ট বললে হবে না।বলেন আল্লাহ তুমি সাক্ষী ইমা যা বলবে আমি চোখ বন্ধ করে তা মেনে চলবো। শুধু আজ নয় আজীবন মানবো।”
” কি এমন বলবে যার জন্য আল্লাহ কে সাক্ষী রাখতে হবে?”
” যান আপনার সাথে কথা নাই।যান আপনি।”ইমা আবার অন্যদিকে মুখ ফিরিয়ে ফুপায়।
” ওহ গড! ওকে।যা বলবা তাই হবে বলো। কান্না থামাও প্লিজ। আমি ওষুধ নিয়ে আসি আগে ওয়েট।”
শান ইমার বাহুর লাল হয়ে যাওয়া স্থানে মলম লাগিয়ে দেয়।ইমা গাল ফুলিয়ে বসে থাকে শানের মুখের দিকে ক্রুর দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে।
” তুমি জানো এভাবে তোমাকে পেঁচার মতো লাগছে।গলুমলু পেঁচিটা আমার।”ইমার দু’গাল টেনে শান শব্দ করে হেসে ওঠে।
ইমা রাগে নামতে গেলে শান হাতটা ধরে বলে
” আচ্ছা আর হাসবো না।বলো কি করলে তোমার চোখে জল আনার গুনাহ ক্ষমা হবে?”
” যা বলবো তাই করতে হবে।এর হেরফের হওয়া চলবে না।আরেকবার আগেভাগে ভেবে নিন। পরে মত পাল্টে ধোঁকাবাজি করতে পারবেন না।”
” এ জীবন চলে গেলেও শান তোমাকে ধোঁকা দেবে না।যা বলবে তাই মাথা পেত নেব।যদি মরতে বলো মরে যাব নির্দিধায়।”
শানের এই কথা ইমাকে বাকরুদ্ধ করে দেয়।শানের ঠোঁটজোড়ায় হাত রেখে বাকি শব্দ গুলোকে থামিয়ে দেয় শানের কন্ঠনালিতেই।দু’জন দু’জনের চোখে হারিয়ে যায় সব ভুলে।দৃষ্টি বদলে আজ আনুষ্ঠানিকভাবে মন বদলও হয়ে যায়।মুখোমুখি বসে অথচ যেন কত কাছাকাছি তারা দু’জন।শানের চাহনীর মায়ায় হারিয়ে ইমা ভুলে যায় কি বলতে চেয়েছিল?দু’জনের হৃদয়ের ভাষা প্রকাশিত হয় সকল জড়তা, বিভেদ ভুলে।পরস্পরকে তারা আজ গ্রহণ করে আপনজন রূপে।
তোমার আকাশে হব প্রজাপতি
পর্ব ২১
Writer Tanishq Sheikh
মোবাইলের রিংটোনে ঘুম ভাঙলো শানের।নড়তে গিয়েও তড়িঘড়ি নড়তে পারলো না ইমার মাথাটা বুকে থাকায়।আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে শুয়ে আছে ইমা।শানের ঠোঁট জোড়া অন্যরকম সুখে প্রসস্থ হলো।আজ জীবনটা পূর্ণ হলো শানের।বাঁচার নতুন মানে খুঁজে পেল।রিংটোনের আওয়াজে ইমা কপাল কুঞ্চিত করে মুখ তুলে তাকালো।শান তখনও সমস্ত পৃথিবীকে অগ্রাহ্য করে ইমার মুখপানে চেয়ে ছিল।ইমার ঘুমজড়ানো চোখ লজ্জায় নত হয়ে গেল।অতি মোলায়েম স্বরে বললো
” রিংটোন বাজছে তো।”
” বাজতে দাও।ওটা ইম্পটেন্ট নয় তোমাকে দেখার থেকে।”
ইমা লজ্জায় সম্পূর্ণ মুখ লুকায় শানের বুকে।
” ধরেন না।কান ঝালাপালা হয়ে যাচ্ছে আমার।”ইমা মুখ লুকিয়েই বলে গেল।শান মুচকি হেসে ঘার ঘুরিয়ে মোবাইলটা হাতে নিয়ে দেখে রিফাত কল করেছে।কল রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে উত্তেজনায় টগবগ করে কিছু বলতে যাচ্ছিল তার আগেই শান গম্ভীর গলায় বললো
” আ’ল কল ইউ লেটার”
কথাটা বলেই মোবাইল কেটে ইমাকে শক্ত করে জড়িয়ে কপালে, গালে চুমু দিয়ে বললো
” আমার শাস্তি তো পেলাম না।উল্টো ভালোবাসার সঞ্জিবতায় ভরিয়ে দিলে এই রুক্ষ শুষ্ক বিরান জীবনটাকে।বলো না কি বলতে চেয়েছিলে?”
” এখন নয় পরে বলবো।”
” না এখনই বলো।”
” আপনি ওয়াদা করেন আমার মন ভাঙবেন না।”ইমা মুখ তুলে কাতর কন্ঠে শানের মুখের দিকে হাতটা বাড়িয়ে দেয়।শান একাগ্র চিত্তে ইমার মলিন মুখটার দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে ইমার মাথাটা মুখের কাছে এনে কপালে আলতো করে চুমু দিয়ে বলে
“তোমার মন ভাঙার আগে যেন আমি মরে যাই ইমা।”
ইমা শানের ঠোঁটে হাতটা চেঁপে ধরে গাল ফুলিয়ে বলে,
” শুধু ফালতু কথা বলেন আপনি।মরুক আপনার দুশমন।আমার স্বামীর আয়ুতে আল্লাহ বরকত দিন।”
” আচ্ছা! “ইমার হাতটা ঠোঁট থেকে সরিয়ে বুকের বা’পাশে রাখে।আমার স্বামী! কথাটা শানের কাছে মধুময় লাগলো।
“এবার বলি?”ইমা মুখ তুলে বললো।
” হুমম বলো।”
” ১ম.আপনি দ্বিতীয়বার কোনো নারীর দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করবেন না।জানেন তো!প্রথম নজরে মাফ দ্বিতীয় নজরেই কিন্তু পাপ।২য়.নিয়মিত নামাজ কায়েম করবেন।৩য়.অতীত পাপের জন্য মহান আল্লাহর কাছে কায়মনোবাক্যে ক্ষমা চাইবেন।আমি চাই না আপনার অতীত আপনার আর আমার ভবিষ্যত নষ্ট করুক।আপনার তওবা আমাদের সুন্দর জীবনের জন্য অতীব জরুরি। ৪র্থ. আদর্শ মানুষ তথা আদর্শ স্বামী রূপে নিজেকে তৈরি করবেন।
শান মুচকি হেসে বলে
” ব্যস এতোটুকুই! তোমার জন্য তো আমি জীবনটাও বিনা বাক্যে দিয়ে দিতে পারি।
আমি আজ আমার ব্রাইডের কাছে ওয়াদা করলাম সে যা বলেছে আমি তাই করবো।এর অন্যথা হবে না।”
ইমা খুশিতে শানের গলা জড়িয়ে কেঁদে দেয়।এতো ভালো লাগছে আজ ইমার।শান অবাক হয়ে বলে,
” আবার কি বললাম?এই দেখ প্লিজ কেঁদো না।”
“আপনি আমাকে আজ অনেক কিছু দিয়েছেন। সম্মান, সুখ,সংসার সব।এতোকিছু পেয়ে খুশিতে কেঁদে ফেলেছি। ভাবি নি এমন সুখের কপাল আমার হবে।”
” আমি তো ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম। যাক খুশি হোক আর দুঃখ। আমার বউয়ের চোখের জল গড়ানো মানা।”
ইমা ফিক করে হেঁসে ওঠে সাথে শানও।
” আচ্ছা শুনুন।”
” জ্বী বলুন আমার ব্রাইড!”
” আপনার হৃদয়ে আমি ভিন্ন অন্য নারী কোনোদিন আসবে না কথা দিন।”
” আসলে সমস্যা কি? একটা বান্ধবী পাবা।সারাদিন আশিকের গল্প শুনাবা তাকেও।”
” যান সরেন।কথা নাই আপনার সাথে।আমি জানি আপনি দু’দিন না যেতেই অন্য মেয়েদের সাথে আবার উম্মা উম্মা শুরু করবেন।এমন করলে ঠিক আমাকে হারাবেন বলে দিলাম। ”
” চুপপ! শান ধমক দিয়ে ইমাকে বুকে লুকিয়ে রাখে।
” আপনি জানেন আমি আপনাকে অন্য কোনো মেয়ের সাথে দেখতে পারবো না।কোনোদিন না।কিছু সম্পদ থাকে মানুষের জীবনে যাকে সে কারো সাথে শেয়ার করে না।যা আমার তা শুধুই আমার।তা অন্য কাওকে দেব না।আপনিও আমার তেমন কিছু।যাকে ছাড়া আমি মরেই যাবো নয়তো বিকারগ্রস্থ হয়ে যাব।”
ইমা এবার শব্দ করে কেঁদে ওঠে।শান ইমার মাথায় হাত বুলিয়ে বলে
” আমাকে বিশ্বাস করতে পারো ইমা।আমি জানি বিশ্বাস ভাঙার দহনজ্বালা কতোটা ভয়াবহ। নিজে জ্বলছি তোমাকে জ্বলতে দেব না। কোনোদিনই না।”
” সত্যি তো?”
” হুমম।সত্যি।”শান মৃদু হেসে ইমার গাল টেনে দেয়।
” আপনার হাসিটা অনেক সুন্দর। আপনি হাসেন না কেন?”
” হাসির কারন হারিয়ে ফেলেছিলাম এতোদিন।আজ তোমার জন্য আবার সেই কারনটা খুঁজে পেলাম।তুমি থাকলে পাশে এভাবে। আমার হাসির এ ঝরনা না থামবে।”
” বাব্বাহ! কবি কবি ভাব।”
” তোমার ভালোবাসার রিয়াকশন বুঝেছ।”
” আচ্ছা হয়েছে এবার উঠতে দিন।কোথায় না বলে যাবেন?”
” ওহ হ্যাঁ। তবে আজ হয়তো হবে না।আজ অন্য কোথাও যাবো।তবে একা আমি।”
” আপনি একা কেন? এই তো পেলাম আপনায় এখনই দূরত্ব কেন? “ইমার মুখ জুড়ে কালো মেঘের ঘনঘটা।শান ইমাকে আরও নিবিড় ভাবে আলিঙ্গন করে বলে
” এই শেষ দূরত্ব তোমার আমার।কথা দিচ্ছি আর দূরে যাবো না।তুমি চাইলেও না।”
শান ইমার একান্ত মুহূর্তের রেশ কাটে।শান শাওয়ার শেষে ফরমাল ড্রেসে রুম থেকে বের হয়ে আসে।ইমা,সানা এবং অহনকে বলে বেরিয়ে পড়ে ঢাকার উদ্দেশ্যে।আসার সময় ইমা দরজায় দাড়িয়ে ছিল মলিন মুখে।শান জানে ইমার মনে বিচ্ছেদের করুন সুর বাজছে শানের দূরে যাওয়ায়। শানেরও যে ইমাকে ছেড়ে আসতে মন চাই নি।কিন্তু না এসেও উপায় নেই। গাড়িতে বসেই রিফাতকে কল করে।রিফাত রিসিভ করে আগের মতোই উত্তেজিত গলায় বলে,
” শান আবিরের খবর পেয়েছি। ঢাকার এক সরকারি হাসপাতালে জীবন মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে ও।”
শান গাড়ি ব্রেক করে রাস্তার পাশে থামালো।কপালের রগ ফুলে উঠেছে শানের।মুখে খিস্তি এনে বলে
” কোথায় ঐ বাস্টার্ড টা।জীবনের শেষ পাপ ওকে মেরেই করবো।বল কোথায় ও।”
” রিলাক্স শান! তুই অফিস আয় আমি তোকে নিয়ে যাচ্ছি। ”
” হুমম”
শান দ্রুত বেগে গাড়ি ড্রাইভ করে গেল সেখানে।রিফাত সহ শানের বাকি লোকেরা ঘিরে রেখেছে কেবিনটা।আবিরের মা ছেলেকে এমন মুমূর্ষু অবস্থায় দেখে পারছেন না এখনই হার্ট ফেল করতে।তবে তার অবস্থাও বেশি সুবিধার নয়।শান আবিরকে টেনে বিছানায় বসিয়ে মারতে গিয়েও রিফাতর বাঁধায় মারে না।রিফাত ফিসফিসিয়ে কিছু বলতেই শানের চোয়াল ও কপালের রগ ফুলে ওঠে।রিফাতের দিকে রেগে তাকায়।
“শান মাই সন!” কোর্ট টাই পড়া মাঝবয়সী একলোক শানকে জড়িয়ে ধরতে গেলেই শান পিছিয়ে যায়।লোকটি তা দেখে মোটেও রাগ দেখায় না বরং তার মুখে ফুটে ওঠে হাসি।মারাত্মক ব্যাঙ্গের হাসি।
“রিফাত ওনাকে বল উনি যেন আমার কাজে ব্যঘাত না ঘটায়।”
রিফাত কিছু বলবে তার আগেই লোকটি রিফাতের দিকে মুখ খিঁচিয়ে তাকায়।তাতে আর সাহস পায় না রিফাত লোকটিকে কিছু বলার।শান বিষয়টা লক্ষ্য করে বলে,
” মি. আমিন! ডোন্ট ডেয়ার টু থিংক।আমি সেই ছোট্ট শান নই যে আপনাকে অবলীলায় ছেড়ে দেবে।শান ইটের জবাব পাথর দিয়ে দিতে পারে এতোদিনে নিশ্চয়ই আপনার সেটা বোঝা যাওয়া উচিত ছিল।সমস্যা নাই আসলে সবার ব্রেন তো আর এক না কেউ কেউ তো ফাইভ ফেলও হয়।”
” শান ডোন্ট ক্রস ইওর লিমিট। ”
শানের দিকে আঙুল তুলে শাসিয়ে বলে।শান তাচ্ছিল্যের হাসি হেসে তালি বাজায়।
” উহু!মি. আমিন এই কথাটাই আপনি নিজে কেন বোঝেন না?শুধু শুধু চলে আসেন অপমান হতে।আপনাকে অপমান করতেও আমার রুচিতে বাঁধে বুঝলেন।””শানের কথায় কতোক্ষন ক্ষুব্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে হঠাৎ হেসে ওঠে আনোয়ার আমিন।
” ওহ মাই সন!এজন্যই তোমাকে আমার এতো ভালো লাগে।আচ্ছা যাও মনে কিছুই নিলাম না আমি।আফটারওল তুমি আমার স্ত্রীর প্রিয় সন্তান বলে কথা।যা হোক তোমার সমস্যা আমার সমস্যা। তুমি একবার শুধু বলো ড্যাড! আবিরের লাশ চাই।দেখ সাথে সাথে ওর কেল্লাহ ফতে করে দেব।নচেৎ!”
” নচেৎ কি মি. আমিন” পাশ থেকে রিফাত বলে ওঠে।
” আমি কোনো পালতো কুকুরের সাথে কথা বলা পছন্দ করি না।”
” মি. আমিন। ও আমার ভাই এবং বন্ধু। ওকে নিয়ে একটা বাজে কথা আমি সহ্য করবো না।ভালোয় ভালোয় বলছি চলে যান আপনি এখান থেকে।”শান রেগে আনোয়ার আমিনের মুখোমুখি হয়ে ঝাঁঝালো গলায় বলে।আনোয়ার ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে পাশের চেয়ারটায় পায়ের উপর পা তুলে বসে বলে
” তাহলে বলো ড্যাড আপনি আবিরকে আমায় দিয়ে দিন।একবার বলেই দেখ আবিরের জীবন এখনই সাঙ্গ করে দেই।শুধু আমাকে পিতা বলে আমার বশ্যতা স্বীকার করে নাও।নয়তো আবিরের একটা পশমও তুমি ছুতে পারবে না।”
” ওহ রিয়েলি! “শান আশ্চর্য হওয়ার ভঙ্গিতে বলে।
” হুমম।” আনোয়ারও দৃঢ়তার সাথে জবাব দেয়।
” লেটস সি!” শান হিংস্র সিংহের মতো হুঙ্কার ছেড়ে পি ৯২ পিস্তল বের করে আবিরের কপালে ঠেকায়।”আনোয়ার আগের মতোই নির্বিকার ভঙ্গিতে বসে আছেন।যেন তিনি এটাই চাইছেন।রিফাত ভালোয় বুঝতে পেরেছে এই আনোয়ারের মতলব।দ্রুত শানকে বাঁধা দেয় পিস্তল কেড়ে নিয়ে।
” শান কাম ডাউন।তোকে উত্তেজিত করছে সে।সে চাই তুই ভুল কর।কিন্তু আমি তোকে ভুল করতে দেব না।চল এখান থেকে।”শানকে জোরপূর্বক সেখান থেকে নিয়ে বাইরে আসে রিফাত।
শান রাগে ফুঁসতে থাকে।গাড়িতে কয়েকটা লাথি দিয়ে রাগের মাত্রা কিছুটা কমাতেই আবার আনোয়ার আমিন এসে হাজির।শানের দিকে তাকিয়ে বিদ্রুপের হাসি দিয়ে রিফাতকে উদ্দেশ্যে করে বলে,
” কতোদিন বন্ধুকে আমার জাল থেকে বাঁচাবি? একদিন ওকে আমার জালে ধরা দিতেই হবে।সেদিন আমার বশ্যতা না চাইলেও স্বীকার ওকে করাই লাগবে।”শান তেড়ে যেতেই রিফাত শানের কাঁধ শক্ত করে ধরে থামায়।তারপর আনোয়ারের দিকে তাকিয়ে হাসি মুখে বলে,
” আঙ্কেল বয়স তো ভালোয় হলো।এসব বাদ দিয়ে আল্লাহর নাম নেন।আজরাইলের কাছে কিন্তু আপনার পাওয়ারের বিন্দু পরিমাণ মূল্য নেই।সো বি কেয়ারফুল। ”
আনোয়ার রাগে দাঁত কটমট করতে করতে সানগ্লাস পড়ে গাড়িতে উঠে চলে যায়।এদিকে আবিরকে পাহাড়া দেওয়ার জন্য রেখে যায় বডি গার্ড ও পুলিশ।রিফাত অনেক বুঝিয়ে শানকে ধামরায় পাঠিয়ে দেয় সন্ধ্যায়।এদিকে রিফাত কিন্তু থেমে নেই।সে শৌখিন কে সাথে নিয়ে লেগে পড়ে আবিরকে শেষ করার প্লানে।আনোয়ার আমিনকে যে চরম শিক্ষা তাদের দিতেই হবে।যেন ভবিষ্যতে ওদের পথে আসার সাহসও না পায় জানোয়ারটা।
সন্ধ্যার অন্ধকার ক্রমশ ঘন হয়ে আসছে।সানার ঘরটায় অন্ধকারে ছেয়ে গেছে।সানা বিকালের ঘটনায় তটস্থ মনে বসে আছে বিছানার এককোনে।সে কখনও কল্পনাও করে নি অহন তাকে নিয়ে এমন কিছু ফিল করে।সানার এখনও হাত পা কাঁপছে। কন্ঠ নালি থেকে শব্দ বের হচ্ছে না।বিকালে সানা ছাঁদের দোলনায় বসেছিল।কিছুক্ষণ পর অহন সেখানে আসে।দু’জন দুপাশে নিরবে ছিল।হঠাৎই অহন সানার মুখোমুখি এসে হাঁটু মুড়ে বসলো।সানার কপালে ভাঁজ পড়লো তা দেখে।কিন্তু পরে অহন যা বললো তাতে সানার মাথায় আকাশ ভেঙে পড়লো।
অহন কতোক্ষন মাথা নুইয়ে সানার সামনে বসে মুখ তুলে স্থির দৃষ্টিতে বললো
” আমি বহু চেষ্টা করেও মনকে বোঝাতে ব্যর্থ সানা।তোমাকে সে কিছুতেই ভুলতে চায় না।কিছুতেই মানতে চায় না তুমি আমাকে নও অন্য কাওকে মন দিয়ে মন পুড়িয়েছ।তোমার পোড়া মনটাই আমাকে দাও সানা।কথা দিচ্ছি আর পোড়াবো না।ভালোবেসে সতেজ করে তুলবো তোমার মন।”
সানা অহনের কথার জোয়ারে উথাল পাতাল হওয়া মনটাকে শান্ত করে বলে,
” এসব কি বলছেন অহন ভাই?আপনার তো কিছুই অজানা নয় তবুও।”
” হ্যাঁ তবুও! তবুও আমার মন তোমায় চাই।আগের চাইতেও এখন বেশি চায় সে তোমাকে।একবার হারিয়ে ফিরে পাবার নেশায় সে ব্যাকুল হয়ে আছে।ফিরিয়ে দিও না প্লিজ সানা।”
সানা দাঁড়িয়ে সরে যায়।শুকনো গলায় কাঁপতে কাঁপতে বলে,
” এ হয় না অহন ভাই।আপনার পরিবার আমার পরিবার কোনোদিন এটা মেনে নেবে না।তারা মানলেও আমি আমার এই নষ্ট জীবনের সাথে আপনার জীবন জুড়ে নষ্ট করতে পারব না।আমার অন্ধকার জীবনে দয়া দেখাতে আসবেন না দোহায় আপনার।”
” এ দয়া নয় সানা একে ভালোবাসা বলে।”
“ভালোবাসা। সানার ঠোঁটে তাচ্ছিল্যের হাসি।ভাইয়া এসব সো কল্ড ভালোবাসাতেই আমি শেষ হয়েছি।এই দেখছেন আমাকে! আমার ভেতরটা পুড়ে পুড়ে এখন ছাই চাপা আগুনে পরিনত হয়েছে।কোনো হৃদয় নেই।আপনাকে কি দেব বলেন?”
” কিছুই চাই না আমার।শুধু তুমি নামক মানুষটা আমার হও সানা।” অহনের গলা ধড়ে আসে।কথা বলতে কষ্ট হচ্ছে তবুও সে আজ সব বলবে।এভাবে প্রতিমুহূর্ত মরতে রাজি নয়।হয় সানা তার হবে নয়তো সে জীবন ত্যাগ করবে বলে পণ করেছে।
সানা অহনের মুখপানে চেয়ে বলে,
” পাগলামী করবেন না ভাইয়া।আবেগ কন্ট্রোল করতে শিখুন নয়তো আমার মতো আপনিও পুড়ে ছাই হয়ে যাবেন।আপনি ম্যাচিউরড পারসন হয়ে এমন ভুল করতে পারেন না। ”
সানা আর দাড়িয়ে থাকে না।পা বাড়ায় নিচে নামার জন্য।শরীর দূর্বল হয়ে আসছে সানার।অহনের বিধ্বস্ত চেহারা সহ্য করার মতো ক্ষমতা হয়তো তার বেশিক্ষণ থাকবে না।
অহন ছুটে গিয়ে সানাকে দু’বাহুতে জড়িয়ে ধরে।সানার মাথাটা বুকের বা’পাশে শক্ত করে চেপে ধরে বলে
” শোনো সানা! আমার হৃদয়ের গতি ক্রমশ দূর্বল হয়ে আসছে।তোমার প্রত্যাখ্যান সে মানতে পারবে না।আমি ভালোবেসে সকল ম্যাচুরিটি জলাঞ্জলি দিয়েছি।আমার মাথায় এখন শুধু তুমি।তুমি চলে যাবে তো সব শেষ আমার।প্লিজ ছেড়ে যেয়ো না।কিছুতো বলো?”
সানা কিছুই বলে না।বলতে পারছেই না সে।কন্ঠস্বর আড়ষ্ট হয়ে এসেছে তার।এখান থেকে না পালাতে পারলে আজ আবার সে দূর্বল হয়ে যাবে।না! তার দূর্বলতা দু’ পরিবারের সম্পর্ক নষ্টের কারন হয়ে দাঁড়াবে।শান ভাইয়ের মুখে হাসি সে আর নষ্ট হতে দেবে না।সানা মাথা নিচু করে শরীরের শক্তি দিয়ে ছুটে পালিয়ে এসেছিল অহনের বুক থেকে।ঘরে এসে কান্নায় ভেঙে পড়ে মুখ ঠেসে বিছানায়।
চলবে,,৷