তোমার আকাশে হব প্রজাপতি পর্ব ১৬+১৭+১৮

0
1756

তোমার আকাশে হব প্রজাপতি
পর্ব ১৬+১৭+১৮
Writer Tanishq Sheikh

পুরো বাড়ি জুড়ে থমথমে ভাব।কঠিন নিরবতা চারপাশে। এর মাঝে ইমা চিন্তিত মুখে লিভিং রুমে বসে আছে।চোখ সদর দরজায় নিবদ্ধ।চাচী নামাজে বসে কান্নাকাটি করছে।জহুরা মামী একটু পরপরই বাইরে বের হয়ে তার স্বামীকে কল করে সব ডিটেইলসে রিপিট করছে।তার কথা বলার ধরনেই বোঝা যাচ্ছে প্রচন্ড রকমের দুশ্চিন্তায় হাঁসফাঁস করছেন তিনিও।চুমকিও উুউু করে কেঁদে যাচ্ছে থেমে থেমে।ইমা চুমকিকে নিয়ে এসে পাশে বসালো।চুমকি ফুঁপিয়ে কাঁদছে। ইমা নিজেও সানার জন্য কষ্ট অনুভব করছে।তবুও চুমকিকে স্বান্তনা দিল
” কাঁদবেন না!আল্লাহ কে ডাকেন। সানা আপুর কিছুই হবে না।”
” ম্যাডাম আমার কেমন কেমন লাগছে বুঝাতে পারছি না।সে আমারে খুব ভালোবাসা দিছে।কিন্তু তার কষ্টের সময় তাকে আমি ঠিকমতো স্বান্তনাও দিতে পারি নাই।এমন একটা ভালো মেয়েরে আল্লাহ এতো কষ্ট কেন দিল ম্যাডাম?”চুমকি আবার নাক টেনে কাঁদতে লাগলো।
” আল্লাহ কে ডাকেন। সব ঠিক হয়ে যাবে।”
” ম্যাডাম! সানা আপার কিছু হলে শান স্যার মরেই যাবে।এই বাড়ি,ঘর সব উলোট পালোট হয়ে যাবে ম্যাডাম।”
” শান্ত হোন আপনি।নিন পানি খান।”
চুমকি পানির গ্লাস হাতে নিয়েই কেঁদে যাচ্ছে। ইমা বিষন্ন চোখে সেদিক তাকিয়ে শানের মনের অবস্থা আন্দাজ করছে।সত্যি তো বলেছে চুমকি! লোকটা বোনের জন্য এতো কিছু করেও শান্তি পেল না।ইমা ল্যান্ড ফোন থেকে ইরার নাম্বারে কল করলো। ওপাশ থেকে দুঃখভারাক্রান্ত স্বরে ইরা জবাব দিল
” ইমা! ভালো করেছিস কল করে।শোন না বোন আমার।শান ভাইয়ের অবস্থা ভালো না,,ইরার কথা শেষ না হতেই ইমা কাঁপা গলায় আতঙ্কিত স্বরে জিজ্ঞেস করে,
” কেন কি হয়েছে উনার? আপা সানা আপু কেমন আছে?”
ইরা এবার ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠলো।নিজেকে কোনোমতে সামলে বললো
” ইমা রে! সানার অবস্থা ক্রিটিকাল। বাচ্চাকে বাঁচানো যায় নি। ডাক্তার এখনও কিছু বলতে পারছে না।”
ইমার গলাটা ধড়ে আসছে।চোখে জল টলমল করছে।কথা এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে। তবুও বোনকে স্বান্তনা দিল,
” আপা আল্লাহ সব ঠিক করে দেবে তুই নিজেকে সামলা।সানা আপুর কিছুই হবে না দেখিস?”
” তাই যেন হয় রে।আচ্ছা শোন আমি, বাবা আর শৌখিন এখানে আছি।শান ভাইয়ের মানসিক অবস্থা ভালো না।শোকে পাথর হয়ে গেছে।জোর করে ড্রাইভার কে দিয়ে বাসায় পাঠিয়ে দিয়েছি।একটু খেয়াল রাখিস বোন।”
ইরার ক্রন্দনভরা অনুনয় ইমার চোখের টলমলে জলকে মুক্ত করে দেয়।ইমা কাঁদে। কেন কাঁদে জানে না? শ্বাস ছেড়ে কান্নার জল মুছে বলে
” আপা চিন্তা করিস না আমি তাকে দেখে রাখবো।তুই ওদিকটা দেখে রাখিস। আমাকে মোবাইল করে জানাইস পরবর্তী অবস্থা।”
” আচ্ছা ঠিক আছে। রাখি রে।আর শোন! পারলে কিছু খাইয়ে ঘুমের ওষুধ খাইয়ে দিস ভাইকে।”
” আচ্ছা আপা! ইমা মোবাইল রেখে চুমকির দিকে তাকাতেই চুমকি মুখে হাত দিয়ে কাঁদতে কাঁদতে রান্নাঘরের দিকে ছুটে যায়।
ইমা লিভিং রুমে বসে বিপদ মুক্তির দুআ পড়তে থাকে।বেশকিছুক্ষন পর শান বিধ্বস্ত চেহারায় দূর্বল ভাবে এলোমেলো পায়ে সদর দরজা দিয়ে প্রবেশ করে।চোখ দুটো স্থির রক্ত শূন্য। যেন সারারাজ্যের কষ্ট ওদু’চোখে চাপা দিয়ে রেখেছে।চুলগুলো উশকোখুশকো,পড়নের পোষাক এলোমেলো।সিঁড়ি ধরে উপরে উঠতেই হোঁচট খেয়ে মুখ থুবড়ে পড়তে যায় তখনই ইমা ছুটে এসে হাত ধরে ফেলে।শান ভয়ার্ত চোখে ইমার দিকে তাকায়।হঠাৎই চোখজোড়ায় বিষাদের কালো মেঘ জমে যায়।বাচ্চা শিশু কান্নার পূর্বে যেমনটি করে তাকায় শান ঠিক সেভাবে তাকিয়ে থাকে ইমার দিকে।ইমার দেহ ভেদ করে হৃদয় কাঁপায় সে চাহনী।যাকে এতোদিন রাগী,কঠিন চেহারায় দেখেছে তার আজ শিশুসুলভ অসহায় চেহারা! দু’জন কতোক্ষন একেঅপরের চোখে চেয়ে থাকে জানে না।শুধু ভাবে এ দৃষ্টিবিনিময়ের যেন সমাপ্তি না হয়।কিন্তু সমাপ্তি হয় তাদের মনের অবচেতন চাওয়া উপেক্ষা করে।শান ধীর পায়ে হেঁটে নিজের রুমে না গিয়ে সানার এলোমেলো রুমে যায়।গত কয়েকদিন এ ঘরেই নিজেকে একা বন্দি করে রেখেছিল সানা।সাথে থাকা নার্স কে নিজেই টাকা পয়সা দিয়ে বিদায় করে দেয়।যেন স্বেচ্ছায় গৃহবন্দীত্ব গ্রহণের প্রস্তুতি নিল সে।শান সানার এলোমেলো বিছানায় হাত বুলিয়ে নিরবে চোখের জল ফেলে।ইমা আজ প্রথমবার এলো সানার ঘরে।দরজায় দাড়িয়ে শানকে কিছুক্ষণ দেখে এগিয়ে এলো। মোলায়েম স্বরে শানকে বললো
” চলুন ফ্রেশ হয় নেবেন।”
“আচ্ছা ইমা! আমার বোন কি আমার পাপের শাস্তি ভোগ করছে? ”
ইমার কথার জবাব না দিয়ে প্রশ্ন করে বসলো শান।ইমা কি জবাব দেবে ভেবে পায় না।কান্না পাচ্ছে ওর ও।তবুও নিজেকে শক্ত রেখে বলে
“এখন এসব ভাবার সময় না।আল্লাহ কে ডাকুন।”
” তুমি আমার জবাব এড়িয়ে যাচ্ছ ইমা।আমি জানি তো! তুমি অনেক ঘৃণা করো আমাকে।আমি যোগ্যই ঘৃণার। ঠিকই করো তুমি।আমার কোনো অনুযোগ নেই এতে।কিন্তু আমার বোনটা কেন শাস্তি পেল বলো?”
আবার সেই ছলছল চোখের চাহনীতে ইমার দিকে তাকায়।
” আপনি চুপ করুন।কিছুই হবে না সানা আপুর চলুন রুমে।”ইমার কান্না গলা অব্দি এসে আটকে যায়।
” তুমি আমাকে মিথ্যা স্বান্তনা দিচ্ছ।আমি তোমাকে কষ্ট দিয়েছি। তোমার ভাইকে কাঁদিয়েছি। তোমার পরিবারকে কাঁদিয়েছি তার শাস্তি দেখো বোনকে মরণযন্ত্রনায় ভুগতে দেখে পাচ্ছি।আমি পাপী ইমা।আমাকে শাস্তি দাও।আমাকে মৃত্যু দাও।আমার বোনকে বাঁচতে দাও।”শান ইমার সামনে হাঁটু মুড়ে বসে নত মস্তকে কান্নায় ভেঙে পড়ে।ইমাও আর নিজের চোখের জল আটকে রাখতে পারে না।মুখে হাত চেপে কাঁদতে কাঁদতে রুম থেকে বেরিয়ে যায়।
শান চিৎকার করে বলতে থাকে
” ক্ষমা করে দাও আমাকে ইমা।আমার পাপে আর কাওকে শাস্তি পেতে হবে না।আমি সব ছেড়ে চলে যাব।বহুদূর! শুধু আমার সানাকে সুস্থ করে দাও আল্লাহ।” সেজদায় অবনত হয়ে উপুড় হয়ে পড়ে কাঁদে ফ্লোরে।
ইমা রুমে এসে কান্নায় ভেঙে পড়ে।রাত ১২ টার দিকে শৌখিন বাসায় মোবাইল করে জানাই সানার অবস্থা আশঙ্কামুক্ত।ইরা আবার ইমাকে মনে করিয়ে দেয় শানকে জোর করে হলেও কিছু খাইয়ে দিতে নয়তো বিপি লো হয়ে মারাত্মক অবস্থা হয়ে যাবে শানের।বাসায় রান্না বান্না হয় নি এসব চিন্তায়।ইমা আগের রাতের খাবারগুলোয় গরম করে শানের জন্য নিয়ে যায়।শান সানার বিছানায় সানার আদরের টেডিটা বুকে জড়িয়ে গুটিশুটি মেরে ঘুমাচ্ছে। ইমা ট্রে আস্তে করে একপাশে রেখে শানের শিওরে বসে।এই শানের জন্য এখন ইমার মনে ঘৃণা আসে না শুধু করুনা আসে।ইমা শানের দিকে তাকিয়ে অজান্তেই শানের মাথার এলোমেলো চুলগুলো হাত দিয়ে ঠিক করে দিতেই শান চোখ মেলে ইমার হাতটা খপ করে ধরে। বুকের সাথে চেপে ধরে বলে
” সানা! দেখ ভাই তোকে আর কখনোই একা করে দেবে না। ভাই অনেক খারাপ রে।অনেক।পশু।ক্ষমা করে দে আমাকে।তোর ভাই তোকে নিয়ে সব কিছু ছেড়ে অনেকদূরে চলে যাবে।তুই যাবি তো বল?” চোখ তুলে তাকিয়ে দেখে ইমা কঠিন চোখে ওর দিকে তাকিয়ে আছে।শান তাড়াতাড়ি ইমার হাত ছেড়ে দিয়ে উঠে বসে চুল,শার্ট ঠিক করে গম্ভীর গলায় অন্য দিকে দৃষ্টি সরিয়ে বলে,
” তুমি কখন এলে? সরি আমি,,,
” ইটস ওকে।আপনি ফ্রেশ হয়ে আসুন আমি খাবার রেডি করছি।”
” হুমম।” শান ফ্রেশ হয়ে এসে বিছানায় বসলো।চোখে মুখে এখনও বিষাদ।একটু পর পর নাক টানছে।
ইমা ভাত, এঁচোড়ের তরকারি, মাছের ঝোল সহ আরও কয়েক পদ সামনে দিল।চামুচ দিয়ে খেতে যাবে কিন্তু চামুচ ধরতে পারছে না। হাতের কাটা স্থান দীর্ঘ সময় অযত্নের কারনে তাতে ফুলে দগদগে ক্ষত হয়ে গেছে।চামচ ধরার জন্য হাতের তালু ভাঁজ করতে পারছে না কারন আঙুল ও তালু বরাবর কেটেছে। ইমা শানের হাতটা দেখে কপালে ভাঁজ ফেলে জিজ্ঞেস করে।
” অনেকটা কেটে গেছে।ওষুধ লাগান নি? যদিও আমার হক নেই তবুও জিজ্ঞেস করছি এতো অসচেতন কেন আপনি?হাত কেটে কি অবস্থাটাই না করেছেন।”
” এ আর কি? এই সামান্য ক্ষতে শানের কিছু হয় না।তুমি যাও রুমে গিয়ে রেস্ট নাও।আমি খেয়েই হসপিটালে চলে যাব।”
শানের এমন অনুভূতিহীন কথা ইমাকে প্রভাবিত করে।শান বহুকষ্টে চামুচে খাবার তুলে মুখে দিচ্ছে এটা ইমার মানবিক মনে বাধ সাধছে।তাইতো সে সব ভুলে মানবিকতা দেখিয়ে বলেই ফেলে,
” দিন আমি খাইয়ে দিচ্ছি।” ইমার কথায় শান বিস্মিত চোখে তাকিয়ে রয়।ইমা নিজেই অস্বস্তিতে পড়ে যায় এ কথা বলে।মাথা হেট করে চুপচাপ বসে থাকে লজ্জায়।
শান ইমার চেহারায় অস্বস্তি দেখে বলে
” থ্যাংকস বাট আমি পারবো।”
ইমা চুপচাপ উঠে রুমে চলে আসে।চোখ বন্ধ করে দাঁত কামড়ে বালিশে মুখ লুকায় এমন কথা বলে ফেলায়।
শান খেয়ে রুমে আসে।ইমা তখন নিচে সবকিছু ঠিকঠাক আছে কি না দেখতে গেছে।শান কাপড় পাল্টে রেডি হয়ে নিচে নামে।ইমাকে রান্না ঘরে কাজ করতে দেখে দরজার কাছে এসে বলে,
” আমি যাচ্ছি। তুমি সদর দরজা বন্ধ করে দাও।”এ কথা বলার প্রয়োজন ছিল না তবুও শান বললো।মন চাচ্ছিল ইমাকে কিছু বলতে।কি বলবে ভেবে না পেয়ে এটাই বলে ফেললো।শানকে রান্না ঘরে দেখে ইমা লজ্জায় মাথা নত করে দাড়িয়ে ঘাড় নাড়িয়ে “আচ্ছা বলে।”শান ঘুরে দাড়িয়ে বাইরে চলে যায়।ইমা দরজার আড়াল থেকে শানকে চলে যেতে দেখে দরজা বন্ধ করে রুমে চলে আসে।ঘুম হবে না জেনেও শুয়ে পড়ে।মধ্য রাতে উঠে তাহাজ্জুদ আদায় করে সানার সুস্থতার জন্য। ফজর পড়ে ইমার চোখে ঘুম নেমে আসে।কতোক্ষন ঘুমিয়ে ছিল জানে না।দরজায় শব্দ হওয়ার আওয়াজে চোখ মেলে।কে জিজ্ঞেস করলে চুমকি জবাব দেয়।ইমা ভেতরে আসতে বললে চুমকি ভেতরে এসে মাথা নত করে বলে
” ম্যাডাম দুপুর হতে চললো আপনি ব্রেকফাস্ট করবেন না?”
ইমা তড়িঘড়ি করে বিছানা ছেড়ে উঠে ফ্রেশ হয়ে নেয়।চুমকির সাথে নিচে এসে ব্রেকফাস্ট সেড়ে রান্নার কাজে হাত লাগায়। সবার জন্য রান্না করে।হাসপাতালেও খাবার পাঠায় ড্রাইভার কে দিয়ে।গোসল সেড়ে নামাজ পড়ে ইরাকে কল করে সব খোঁজ খবর জানে।এভাবেই ৬/৭ দিন কেটে যায়।শানের সাথে এ’কদিন ইমার দেখা সাক্ষাৎ হয় নি।শান বাড়ি আসে নি।ড্রাইভার শানের কাপড় সহ আনুসঙ্গিক জিনিসপত্র নিয়ে গেছে হাসপাতালে। ৮দিনের দিন সানাকে ডিসচার্জ করা হয়।কিন্তু সানাকে এখানে আনা হয় না।শান ওকে নিয়ে সাভার খামার বাড়িতে নিয়ে রাখে।সারাক্ষণ বোনকে নিয়েই থাকবে সে।তাছাড়া খামার বাড়ির পরিবেশটা গ্রামীণ আবহাওয়ার বলে সানার মন ভালো হবে ভেবেই ডাক্তারের পরামর্শে শান বোনকে ওখানে নিয়ে গেছে।খান মঞ্জিলের পরিবেশ এখন কিছুটা ভালো।সবার মন থেকে দুশ্চিন্তার বোঝা কিছুটা হলেও হালকা হয়েছে।ইমার মনও আগের থেকে কিছুটা ভালো কারন অহন,মা,চাচীদের সাথে যোগাযোগ করতে পারছে সে।অহন কাল আসবে শুনে ইমার খুশির অন্ত নেই।ভাইকে এতোদিন পর কাছে পাবে সেই খুশিতেই ইমার দিন কেটেছে আজ।

তোমার আকাশে হব প্রজাপতি
পর্ব ১৭
Writer Tanishq Sheikh

আকাশে কড়া রৌদ্রের খেলা।গাছে গাছে আম্র মুকুলে ভরে উঠেছে। বাতাসে মিশে গেছে সে গন্ধ। ঋতু পরিবর্তনের এ ধারা মানুষের অবচেতন মনেও প্রভাব ফেলে।ইমা ব্যালকনিতে দাড়িয়ে জৈষ্ঠ্যের আগমনি সাজ দু’চোখ ভরে উপলব্ধি করছিল।ইমার পছন্দের ঋতু ফাল্গুন তবুও সব ঋতুর বৈচিত্র্যময় সৌন্দর্য ইমার হৃদয় হরণ করে।বিমুগ্ধ করে। দু’চোখে সতেজতায় ভরিয়ে তোলে।
কখন সোনার রোদ নিভে গেছে — অবিরল শুপুরির সারি
আঁধারে যেতেছে ডুবে — প্রান্তরের পার থেকে গরম বাতাস
ক্ষুধিত চিলের মতো চৈত্রের এ অন্ধকার ফেলিতেছে শ্বাস;
কোন চৈত্রে চলে গেছে সেই মেয়ে — আসিবে না করে গেছে আড়ি :
ক্ষীরুই গাছের পাশে একাকী দাঁড়ায়ে আজ বলিতে কি পারি
কোথাও সে নাই এই পৃথিবীতে তাহার শরীর থেকে শ্বাস
ঝরে গেছে বলে তারে ভুলে গেছে নক্ষত্রের অসীম আকাশ,
কোথাও সে নাই আর — পাব নাকো তারে কোনো পৃথিবী নিঙাড়ি?
অহনের গলায় জীবনানন্দের রচিত কবিতাংশের কিছু চরন শুনে ইমা ব্যালকনি থেকে ছুটে এসে ভাইকে জড়িয়ে ধরে। চোখের কোনে খুশি অভিমানের মিশ্রিত জল গড়ায়।অহন বোনকে দু’হাতে জড়িয়ে ইমার কপালে চুমু দেয়।ইমা মুখ উঁচিয়ে অবোধ বালিকার মতো অশ্রুসিক্ত চোখে বলে
” তুই খুব পাষান অহন ভাই।একটিবার আমাকে দেখতে আসলি না?”
অহন ইমার গালটা টেনে বিছানায় বসে হাসে।এদিক ওদিক তাকিয়ে পুরো রুমটা দেখে বলে
” রুচিশীল মানুষ শান ভাই কি বলিস?সিম্পলের মধ্যে অসামান্য সুন্দর রুমটা।”
ইমা কপট রাগে অহনের পাশে বসে বললো
” কি ব্যাপার বলতো?এতো সুনাম করছিস কেন? তোর সাথে কথা হয়েছে তার?”
” হ্যাঁ! পরশু অফিসে ডেকেছিল।”
” কেন ডেকেছিল?”
ইমার প্রশ্নের ঝুড়িতে অহন কপাল চাপড়ে আবার ইমার গাল টেনে বলে,
” তোর এতো কথা জেনে লাভ নাই।যা তৈরি হয়ে নে আমরা ধামরায় যাবো।”
ইমা কপাল কুঞ্চিত করে চোখ পাকিয়ে জিজ্ঞেস করে
” ধামরায় কেন যাবো? আমি যাবো না।তুই আসছিস এখন গান শুনাবি,গল্প করবি।আমি বসে বসে শুনবো।কোথাও যাবো না আজ।”
অহন একপ্রকার জোর করতে লাগলো
” চল না! গেলে অনেক ভালো লাগবে।আমি হাঁপিয়ে উঠেছি বদ্ধঘরে।”
ইমা ভাইয়ের আকুতি জানানো কথা ফেলতে পারে না।তৈরি হওয়ার জন্য থ্রি পিছ আর বোরকা বের করতেই অহন এসে দাঁড়ায় পেছনে।ইমা অহনকে দেখে ভ্রুকুটি করে বলে,
” এখানে ভূতের মতো দাঁড়িয়ে আছিস কেন ভাই? যা বস আমি তৈরি হয়ে আসছি।”
” কি পড়বি তুই? এই বোরকা, থ্রি পিছ?”
” দ্যাখ অহন ভাই আজও যদি আমার ড্রেস সিলেকশন নিয়ে পেকর পেকর করিস সত্যি আমি কিন্তু যাবো না। আমি যা পড়বো তাতেই তুই সন্তুষ্ট থাকবি।”
ইমার গলায় বিরক্তের ঝাড়ি অহনের জন্য। অহনের ভাব ভঙ্গি দেখে কিন্তু স্পষ্ট সে ইমার কোনো কথায় কানে তোলে নি। সাথে আনা প্যাকেটটা ইমার হাতে ধরিয়ে দিয়ে বলে,
” মা এটা তোকে দিয়েছে।বলেছে আজ পড়তে।আরও অনেক কিছু দিয়েছে সেগুলো নিচে ইরার কাছে।
মা দিয়েছে শুনে ইমা তৎক্ষনাৎ প্যাকেটটা খুলে দেখে ফিরোজা রঙের একটা শাড়ি, ম্যাচিং ব্লাউজ ও অন্যান্য সামগ্রী।ইমার শাড়ির রঙ আর চুড়ি দেখে খুশি লাগে।মায়ের কাছে কতো আবদার করেছিল কিন্তু মা দিতে পারে নি।আজ পেয়ে খুশিতে চোখ ছলছল করে।অহন ইমাকে বুকে জড়িয়ে বলে
” পাগলি একটা।যা তৈরি হয়ে নে।”
” আচ্ছা। তবে এর উপর কিন্তু আমি বোরকা পড়বো।
অহন হের্ডবোর্ডে হেলান দিয়ে বললো,
তার দরকার হবে না।রিজার্ভ গাড়িতে যাব।কেউ দেখবে না তোকে। বোরকা পড়লে যে গরম পড়েছে তুই অসুস্থ হয়ে পড়বি।তার চেয়ে হিজাব বেঁধে নিস শাড়ির উপরে।”
” আচ্ছা ঠিক আছে।” ইমা আনন্দিত মুখে শাড়িটা নিয়ে ইরার ঘরে গিয়ে তৈরি হয়।ইরা ইমার চোখে কাজল দিয়ে ঠোঁটে হালকা লাল লিপিস্টিক দিয়ে দেয়।বাড়ি থেকে বেরোনোর সময় ইরা অহনকে দুটো ব্যাগ ধরিয়ে দেয়।ইমা জানতে চাইলে ইরা সঠিক জবাব দেয় না।আসার আগে ইরা ইমাকে দেখে হেসেছিল।অহন চোখ গরম দেওয়ায় ইরা হাসি চেপে রাখে।ইমার বিষয়টা গোলমেলে লাগলেও কিছু বলে না।কিন্তু এখনও রহস্যটা মাথায় কুড়মুড় করছে।তাই ভাইকে প্রশ্ন করেই বসলো।
” ভাই ইরাপা তখন হাসছিল কেন রে?”
” আমি কি করে বলবো?” আমি কি মনোবিজ্ঞানী নাকি?”
অহনের কথা শুনে ইমা মৃদু ভেংচে আবার বললো
” ভাই আমার গরম লাগছে খুব ঘেমে একাকার হয়ে গেলাম।”
এই তো চলে আসছি।ভাইয়ের রুমটা এসি রুম।গিয়ে আরাম করিস।”
অহনের মুখে ভাই ডাক শুনে ইমার শিরদাঁড়া বেয়ে শীতলতা বয়ে গেল।ঢোক গিলে প্রশ্ন করলো,
” ভাই! কার ভাই,কিসের ভাই? আমরা কই যাচ্ছি অহন ভাই?
ইমার চোখের করুন চাহনি দেখে অহন হাসি সংবরন করে। জানালার দিকে মুখ ঘুরিয়ে বলে
” আছে এক ভাই।তোর এতোকিছু জেনে কাম নাই।চুপ থাক।”
” ভাই তুই আমার সাথে গেম খেলিস না বলে দিলাম।আমাকে শাড়ি পড়িয়েছিস কার কানপড়ায় বল?না বললে আমি চলন্ত গাড়ি থেকে নেমে যাব দেখিস।”
ইমার হুমকি শুনে অহন অট্টহাসিতে ফেটে পড়ে।ইমার বুঝতে বাকি থাকে না তাকে সাজিয়ে গুজিয়ে সিংহের গুহায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। ইমা অহনের বাহুতে কিল ঘুষি দিতে দিতে কাঁদে
” তুই এমনটা কেন করলি? আমি যাবো না ওখানে।এজন্য ইরাপা হাসছিল।আমি যাব না।”
অহন ইমার মাথাটা এক হাত দিয়ে জড়িয়ে বুকে এনে বলে।
“সত্যি পাগলি তুই।আচ্ছা শান্ত হ।মা, ফুপু আমাকে বলেছে তোকে ওখানে রেখে আসতে।শাড়ি পড়িয়ে রেখে আসতে।বিয়ের পর নাকি শাড়ি পড়া বাধ্যতা মূলক।তারা চাই তুই সংসারি হ।”
” তারা চাইলেই হবে।আমি ঐ শয়তানের সাথে সংসার করবো না।তুই কেন আমাকে আগে বললি না?”
ইমা ফুঁপিয়ে কাঁদে।ইমার মাথায় হাত বুলিয়ে অহন বলে,
” দ্যাখ যা হয়েছে তাতে আমিও এ বিয়েতে রাজি ছিলাম না।ইচ্ছা ছিল তোকে এখান থেকে নিয়ে যাব।কিন্তু,,,
ইমা অহনের বুক থেকে মাথা সরিয়ে বলে
” কিন্তু কি?”
” শান ভাই ঐদিন অফিসে ডেকেছিল। তিনি ক্ষমা চেয়েছেন। বাড়ির সবার সাথেই তার কথা হয়েছে।সবাই তাকে ক্ষমা করে দিয়েছে।এজন্য সবাই চাই তুই ও তাকে ক্ষমা করে নতুন করে জীবন শুরু কর।”
” সবার কথায় তো আমার মন চলে না তাই না ভাই।আমার দ্বারা এটা সম্ভব না।আমি তাকে চাই না।তার সাথে সংসারও করতে চাই না।”
ইমার কন্ঠ স্বরে দৃঢ়তা ফুটে ওঠে।সাথে একরাশ রাগও।অহনের পাশ থেকে সরে বসে জানালার দিকে মুখ ফিরায়।রাগ, অভিমানে অন্তরটা জ্বলছে।
অহন কিছু বলতে চাইলেও ইমা শোনে না।বাকি পথ দুভাই বোন চুপচাপ থাকে।গাড়ি সাভার পেরিয়ে ধামরায় চলে আসে।এখানেও শানের ছোট্ট একটা দ্বিতল বাড়ি আছে।ইমা,অহন যখন পৌছায় বিকাল শেষ হয়ে এসেছে প্রায়।দূর আকাশে রক্তিম আভা খেলা করছে।একটু ভেতরে বিধায় গাড়ি গেল না।ইমা সরু মাটির রাস্তা ধরে অহনের পিছু পিছু যেতে লাগলো।অহনের হাতে ব্যাগ।ইমা শতভাগ নিশ্চিত এর একটাতে ইরাপা ওর কাপড়ই দিয়েছে লুকিয়ে।পুরো দুনিয়া যেন এই সিংহের গুহায় পাঠানোর আয়োজন করছে মহাসমারোহে।বুকটার বা’পাশে ধামধাম শব্দ হচ্ছে। গলা শুকিয়ে আসছে কেন যেন?শানকে এতোদিন পর আবার দেখবে ভাবতেই ভেতরে অজানা শিহরণ হতে লাগলো।কিছুটা আধা কাঁচা রাস্তা পেরিয়ে শানের খামার বাড়ি।আশপাশের বাড়ির মহিলা,বাচ্চারা কৌতুহল চোখে ইমার দিকে তাকিয়ে আছে।অবশেষে শানের খামার বাড়ির গেটে এসে থামলো দুজন। সরু রাস্তার দুপাশে বাগানে ঘেরা। তারকাটা দিয়ে সেগুলো নিরাপদ রাখার ব্যবস্থা করা হয়েছে।গেটের সামনে সুপারি,মেহগনি, নারিকেল গাছের ছায়াময় বাগান। দারোয়ান গেট খুলে দিতেই ওরা ভেতর ঢুকলো।দ্বিতল বাড়ির একপাশে কবুতরের ঘর,আর চারপাশে ফল ফলাদির বাগান ঘেরা।পেয়ারা,আমড়া,পেঁপে,আম, কাঁঠাল সহ নানা গাছের ছড়াছড়ি।চক্ষু জুড়িয়ে যায় এই পরিবেশ আর বাড়িটা দেখে।ইমা বাড়িটার কাছে গিয়ে সদর দরজার দুপাশে টাইলসের বেঞ্চিমতো জায়গায় বসলো।সুনির্মল শিতল বাতাসে ইমার সর্বাঙ্গ জুড়িয়ে গেল। ইমা এদিক ওদিক তাকাতেই হৃদপিণ্ডের গতি বেড়ে গেল।হাতও চোখে পাতা কাঁপছে। দাঁড়াবে দাঁড়াবে ভাবতেই মানুষটা কাছাকাছি এসে দাঁড়ালো। গেঞ্জি,লুঙ্গি পড়ে শান গেট দিয়ে প্রবেশ করলো।ইমার মনে হয় এই মানুষকে কিছুতেই সাধারণ লাগে না অসাধারণ তার মুখশ্রী ওদেহের গড়ন। ইমা লাজুক লতার মতো চুপচাপ চোখ নামিয়ে বসে আছে।শান গেটে ঢুকে কপাল কুঁচকে তাকিয়ে থাকে ইমার দিকে।ইমাকে এখানে দেখে অপ্রত্যাশিত আনন্দ অনুভব করে।মনের কোনের এই স্বপ্ন টুকু যে সত্যি হবে শানের ভাবনার বাইরে ছিল।না চাইতেই ঠোঁটে মৃদু হাসি আসে।শান হাত বাড়ি হ্যান্ডশেক করতে গেলে অহন জড়িয়ে ধরে শানকে।শান কোলাকুলিতে অভ্যস্ত না।অস্বস্তি লাগলেও মুখে একচিলতে নিরস হাসি এনে দুজনকে বাড়ির ভেতর নিয়ে যায় কথা বলতে বলতে।ইমার হাসি পায় শানকে লুঙ্গিতে দেখে। ঠোঁট চেপে হাসে ওদের পিছু পিছু যেতে যেতে।শান পেছন ফিরে পুলকিত নয়নে ইমার হাসি দেখে।ইমার দেহাবরণ মুগ্ধ করে শানকে।ফিরোজা রঙের মায়ায় নিজেকে হারিয়ে ফেলে। সানার শরীর এখনও ভালো না বিধায় বসার ঘরের সোফায় শুয়ে ছিল।ইমা,অহনকে দেখে মাথা নত করে উঠে বসলো।অহনের ভেতরটা পুড়ে ছাড়খার হয়ে গেছে ঐদিন সানার কথা শুনে।আজ সে ছাই থেকে আবার আগুন জ্বলছে সানার শুকিয়ে মলিন হওয়া মুখটা দেখে।অযত্নে রাখা মূর্ছা যাওয়া কোন ফুলের মতো নেতিয়ে পড়েছে সানার সর্বাঙ্গ। অহনের নয়নজুড়ে জল ভরে আসে।সানা এদিকে না তাকালে হয়তো অহনের মনে লুকানো সব কথা আজ বেখেয়ালেই প্রকাশ পেয়ে যেত।যা এতোদিনে প্রকাশ পাই নি এখন আর অহন সেটা প্রকাশ করবে না।অন্তরেই দাফন করে ফেলবে।দ্রুত নিজেকে সামলে নিল অহন।অন্য দিকে দৃষ্টি ফিরিয়ে চোয়াল শক্ত করে মনের আক্রোশের জোয়ারের জলে বাঁধ দিল।সানা শুকনো হাসি দিয়ে ইমার দিকে হাত বাড়িয়ে ডাকে।
” এদিক আসো ভাবি।”ইমা যেন এই অনুমতির অপেক্ষায় ছিল এতোদিন।তাইতো ডাকামাত্রই সকল লাজলজ্জা ভুলে সানাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে লাগলো।শান সানাকে ইশারায় শক্ত হতে বলে অহনকে নিয়ে অন্য উপরে চলে গেল।অহনের ইচ্ছা করছিল জিজ্ঞেস করতে, সানা তুমি কেমন আছ? যদিও সে জানে তার সানা ভালো নেই।কিছুতেই ভালো নেই।
” কাঁদছ কেন? আমি ঠিক আছি কেঁদো না তো।ইমার মুখটা দুহাতে ধরে চোখের জল মুছিয়ে দেয়।ইমা নত মাথায় শুধু কেঁপে কেঁপে ওঠে।সানা ইমার থুতনি ধরে দূর্বল গলা বলে,
” আমার লক্ষি ভাবিটা তুমি।তোমাকে কাঁদতে দেখলে আমার ভালো লাগে বলো তো?”
ইমা সানার হাত নিজের হাতের মাঝে নিয়ে বলে
” আচ্ছা আর কাঁদবো না।”
সানা ঠোঁটে একচিলতে মলিন হাসি এনে ইমার হাতটায় চুমু দেয়।ইমার আনন্দের সীমা থাকে না সানার সান্নিধ্যে আসতে পেরে।বুকের উপর থেকে পাহাড় সমান বোঝা নেমে যায়।
” তুমি তো ঘেমে নেয়ে একাকার হয়ে গেছ ভাবি। যাও রুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নাও।খালা! খালা!
সানার ডাকে রান্নাঘর থেকে একজন মাঝবয়সী মহিলা ছুটে আসে।
” জ্বে মা জননী।”সানার পাশে অচেনা মেয়েকে দেখে সালাম দেয়।ইমাও জবাব দেয় তার সালামের।
” এটা কে জানো খালা?” মহিলা কৌতূহলি চোখে ঘার নাড়িয়ে “না” বলে।
সানা সহাস্যে বলে
” আমার মিষ্টি ভাবি।তোমার শান বাবার বউ।”
কথাটা শোনামাত্র মহিলা খুশিতে উৎফুল্ল হয়ে উঠলো
” ও মা তাই নাকি? আমি ভাবলাম কে না কে আসছে তাই নাস্তা তৈরি করতেছিলাম।মাশাল্লাহ!” ইমার মুখে হাত দিয়ে সেই হাতটা ঠোঁট ছুইয়ে বললো।
” যাও তোমার বউ মাকে তার রুমে নিয়ে যাও।এই ব্যাগ গুলোও সাথে নাও।”
” আচ্ছা! চলো বউ মা।” বসার ঘর থেকে বেরিয়েই সোজা সিঁড়ি তার বা’পাশে একটা রুম আর হয়তো রান্নাঘর।ইমা সিড়ি দিয়ে দোতলা উঠে আসে।এখানে তিনটা বেডরুম।ডান পাশে একটা আর বা’পাশে দুটো বেডরুম।খালা ইমাকে ডান পাশের রুমে নিয়ে দিয়ে আসলো।খালা বের হয়ে গেলে ইমা তাড়াতাড়ি আঁচল বুকের উপর থেকে ফেলে লম্বা শ্বাস নেয়।নতুন শাড়ি পড়ে গায়ে গরম ধরে গেছে ইমার।এসি হয়তো বন্ধ। খালা পাখাটা চালিয়েই গেছে।ইমা হিজাবটা খুলে চুল কাঁধে একপাশে এনে রাখলো।জানালা দিয়ে দখিনা বাতাস ঢুকছে।ইমার উন্মুক্ত পেটে, গলায় এসে লাগছে সে বাতাস।শাড়িটা খুলে সবেমাত্র বিছানার উপর রেখেছে অমনি দরজা খুলে শান মোবাইলে কথা বলতে বলতে প্রবেশ করলো।দু’জন দুজনকে দেখে হা করে তাকিয়ে আছে।শান মোবাইলের লাইন কেটে চোখ নামিয়ে নিল।ইমার নিজের ভাগ্যের উপর রাগ লাগতে লাগলো।তার সামনেই বার বার এমন অবস্থা কেন পড়তে হয় ধ্যাৎ!ইমা পড়ে থাকা শাড়িটা জড়োসড়ো করে লজ্জা ঢাকার চেষ্টা করলো।
” দরজায় যে লক নামক কোনো বস্তু আছে এটা কি ভুলে যাও?” শান রাগী গলায় পেছন ফিরে সেলফের উপরে ফাইল নাড়তে নাড়তে বললো।
” ইশশ! আমি না হয় ভুলে গেছি।আর আপনি?”
শান কপালে ভাঁজ ফেলে ইমার দিকে ঘুরে দাঁড়াল।
” আমি কি?”
” আপনি কেন ভুলে যান কোথাও প্রবেশ করতে হলে নক করে ঢুকতে হয়।”
” এক্সকিউজ মি! রুমটা আমার।আপনি যে রুমে ঢুকে এই হালে থাকবেন সেটা তো আমার জানার কথা না তাই না?”
ইমা কপট রাগ দেখিয়ে বলে
” দেখুন ভালো হচ্ছে না কিন্তু। এই হালে মানে কি? আপনার রুম আপনার রুম করেন কেন শুধু?বিয়ে পরে আমার বলে কিছু থাকে না।তখন বহুবচন হয়ে যায়। বলতে হয় আমাদের। অর্থাৎ আমার ও আপনার। তাই এতে আমারও হক আছে।সেই হকে রুমে আমি যেভাবে ইচ্ছা থাকতে পারি।আপনার উচিত নক করে ঢোকা।”
” ও গড!ওকে ফাইন দোষ আমার হয়েছে। হ্যাপি নাও!
” আপনি বাইরে যান তারপর হ্যাপি হব।”
” ওকেএএ! শান কিছুটা সামনে গিয়ে মনে মনে দুষ্টুমি নিয়ে আবার ঘুরে দাড়িয়ে চিন্তিত ভঙ্গিতে বলে
“এই মাত্রই তো হকের কথা শুনালে। তো আমারও কিছু হক আছে যেটা তো পূরণ করতে হবে তাই না?”শান ইমার দিকে এগিয়ে আসতেই ইমা ঢোক গিলে পিছুপা হতে হতে দেয়ালে গিয়ে সিটে দাঁড়ায়।শান এক হাত ইমার কাঁধ বরাবর দেয়ালে রেখে ঝুঁকে দাঁড়ায়।ইমার কাঁপা স্বরে বলে,
” দেখুন ভালো হচ্ছে না কিন্তু।আমি চলে যাবো কিন্তু এখান থেকে।”
” আচ্ছা! তো যাও।বাঁধা কে দিয়েছে?”
ইমা যাওয়ার জন্য সরতেই শান অন্য হাত দেয়ালে রেখে বাঁধা দেয়।ইমার সামনে শান দুহাত দেয়ালে রেখে মাঝখানে ইমাকে আটকে ফেলেছে।ইমা ভয়ে ভয়ে কাঁপা চোখে শানের মুখের দিকে তাকাতেই শান আচমকাই ইমার ঠোঁট ছুঁইয়ে দেয় ঠোঁটে।ইমার হাত থেকে কাপড় পড়ে যায় শরীরে দ্রুত বেগে কাঁপন লাগায়।কলিজা শুকিয়ে একটুখানি হয়ে গেছে।শান মৃদু হেসে কাপড় গুলো তুলে ইমার গায়ে জড়িয়ে দরজার কাছে চলে আসে।
” পরের বার হকের কথা বললে হিসাব করে বলবা বুঝছ?” দরজা খুলে বাইরে চলে গেলে ইমা সেদিকে কাপড় ছুড়ে মারে।ঠোঁট মুছতে মুছতে রাগে গজগজ করে বলে
” হিটলার! তোকে তো আমি দেখে নেব।আমার কলিজার পানি শুকিয়ে কি মজা পাস তুই?তোর হিটলারি আমি,,, উু” দুহাত মুঠ করে মাথার কাছে এনে রাগে দাঁত কামড়ে ফোসফাস করে।

তোমার আকাশে হব প্রজাপতি
পর্ব ১৮
Writer Tanishq Sheikh

” বউ মা তুমি গিয়ে আরাম করো। আমি খাবার গরম করে টেবিলে দিচ্ছি। ”
” খালা! সমস্যা নাই।আমিও হেল্প করি।মা সানা আপার জন্য কবুতর,দেশি মুরগির বাচ্চা রান্না করে পাঠিয়েছে আমি জানিই না।ভাগ্যিস আপা গরম করে ফিজ আপ করে দিয়েছিল।নয়তো সব নষ্ট হয়ে যেত।” ইমার করুন গলার স্বরে খালা হেসেই বললো
” ও এ বয়সে এমন ভুল হয়।ও নিয়ে তুমি চিন্তা করো না।নাও এটা খাও।শান বাবা নিজে দুপুরে মা জননীর জন্য রান্না করছিল।”
” কি এটা খালা?”
” খেয়েই দেখো।লাজানিয়া না কি যেন? তোমার স্বামী সব কাজে সিদ্ধহস্ত। সে ব্যবসায় বলো আর রান্না। ”
ইমা বাটি টা থেকে চামচ দিয়ে খাবার টা উঠাতে গেলে চিজ গুলো চুইংগামের মতো মতো টেনে আসে।
মুখটা বাংলার পাঁচের মতো করে মুখে দিতেই মুখের ভঙ্গি চেঞ্জ হয়ে যায়।
” খালা সত্যি মজাদার খাবারটা।”
” মজাদার তো হতেই হবে।শান বানিয়েছে না? কি বলো খালা?” শান রান্নাঘরে ঢুকে খালার গরম করা কবুতরের মাংস থেকে একটা রান নিয়ে খেতে থাকে।
ইমা ভেংচে বাটিটা সরিয়ে রাখে।শান সেটা দেখে ভ্রু নাড়ায়। ইমা না দেখার ভান ধরে প্লেট ধুতে থাকে বেসিনে।ইমার এমন আচরণ শানের মেজাজ খারাপ করে দেয়।মুখের হাড্ডি টা ফেলে ইমার দিকে ক্রুদ্ধ দৃষ্টি তাকিয়ে থাকে।সেদিকে তাকিয়েই খালাকে উদ্দেশ্যে করে বলে,
“মরিয়ম খালা সানার ওষুধ টা দিয়ে আসো তো।আর তোমার বউ মার আম্মু ওর জন্য যে শুকনো খাবার পাঠিয়েছেন সেগুলো রেখে আসো ওর ঘরে। আমি খাবার টেবিলে সার্ভ করছি।”
” আচ্ছা বাবা!” খালা রান্নাঘর থেকে বেরিয়ে যাওয়ার জন্য পা বাড়ায় সাথে ইমাও হাত ধুয়ে বেরুনোর প্রস্তুতি নেয়।শানের এই বাজের মতো দৃষ্টির উপর ওর একবিন্দু বিশ্বাস নেই।একটু আগে যা করেছে সেটা মনে পড়তেই রাগ হয় আরও।
খালা বেরুতেই শান একটা বাটি নিচে ফেলে দেয়।ইমার পা আর চলে না।পিছন ফিরে তাকিয়ে দেখে একটু আগে যে চামুচে লাজানিয়া খাচ্ছিল সে চামচ শান মুখ দিয়ে ক্রোধিত চোখে আছে।ইমা সামনে ঘুরে এক পা আগাতে যাবে তখনই শান রাগী স্বরে বলে ওঠে
” খবরদার! এক পা আগাবে না।ওখানে স্ট্যাচু হয়ে দাড়িয়ে থাকবে।নড়েছ তো খবর আছে।”
ইমা চোখ বন্ধ করে রাগে ফুঁসতে থাকে।ভয়ে সামনেও এগোচ্ছে না।
” ঘুরে দাঁড়াও। ”
ইমা ঘুরে দাড়িয়ে বলে
“দেখুন!বেশি বেশি করছেন আপনি?”
শান ওখানে দাড়িয়েই চোখ রাঙিয়ে বলে
” হুশশ! শুধু শুনবে।বলবে না।নাও কাম হিয়ার।”
ইমা মুখ, হাত রাগে শক্ত করে শানের সামনে দাঁড়ায়।
” আমার দিকে তাকাও। আই সে লুক এট মি!”
ইমা চমকে ওঠে শানের উচ্চ স্বরের আওয়াজে।ভিতু চোখে শানের রক্ত লাল চোখে তাকাতেই শান ইমার কোমর জরিয়ে ধরে কাছে টেনে আনে।ইমা হাফ ফাস করতে থাকে ছুটার জন্য।
“কি সমস্যা আপনার হুমম?কথায় কথায় শুধু কোমর টেনে ধরেন ফালতু লোকের মতো।ছাড়েন।”
” স্বামী হিসেবে আমার হক আছে তোমাকে স্পর্শ করার।তুমি কেন এমন করো আমার সাথে সেটা বলো?”
“আপনাকে স্বামী হিসেবে আমার পছন্দ না।আপনি,,,, ”
” আমি কি বলো?”
শান ইমা মুখের দিকে তৃষ্ণিত চাতকের মতো চেয়ে থাকে।
“আপনি খারাপ।অনেক খারাপ।মেয়েবাজ লোক আপনি।ঘৃণা হয় আপনার স্পর্শে আমার।”
ইমার এমনতর কথায় শানের হৃদয় ভেঙে চুরমার হয়ে যায়।ইমার প্রেমে পড়ে নিজের অন্ধকার অতীত ভুলে গেলেও তা আবার ইমার তিরস্কারে দর্পণের মতো শানের সামনে ভেসে ওঠে।নিঃশ্বাস ভারি হয়ে আসে শানের।আস্তে আস্তে ঘোর কাটে।ইমাকে ছেড়ে হাত দুটো নিজের কাঁধ বরাবর তুলে বলে,
” সরি! এক্সট্রিমলি সরি ফর দ্যাট।এ্যান্ড থ্যাংকস আমার জায়গা দেখিয়ে দেওয়ার জন্য।”শান রোবটের মতো শক্ত হয়ে হনহনিয়ে রান্নাঘর থেকে বেরিয়ে যায়।ইমা মাথা নিচু করে দাড়িয়ে ওভাবেই কাঁদতে থাকে।

সানা ওষুধ খেয়ে শুয়ে পড়ে।সে রাতে স্যুপ ছাড়া কিছুই খাবে না।ইমার মায়ের পাঠানো খাবার ব্রেকফাস্টে খাবে।সানার ইদানিং কিছুই ভালো লাগে না।আজকাল রাতে দুঃস্বপ্ন দেখে।একটা বাচ্চা রক্তে ডুবে আর্তচিৎকার করতে করতে বলে।
” মা আমাকে বাঁচতে দিলে না কেন মা।” সানা জানে বাচ্চাটা কে? পেটে হাত রেখে নিঃশব্দে কাঁদে।ওর অনাগত সন্তান কে ও এ পৃথিবীর মুখ দেখাতে চাই নি।নাজায়েজের দাগ নিয়ে বড় হয়ে মানুষের অপমান ছাড়া যে কিছুই পাবে না।প্রতি রাতে সানার বালিশ ভেজে।আজও ভিজল।লাইট অন করে বিছানায় শুয়ে আছে জানালার অন্ধকারে তাকিয়ে।অহন সানার পাশের ঘরটাতেই থাকবে।রুমে যাওয়ার জন্য আগে সানার রুমটা পড়ে। অহন সানার দরজায় এসে থেমে গেল।দরজাটা একটু ফাঁক করা আছে।অহন নিজেকে হাজার বারন করেও দমিয়ে রাখতে পারলো না।দরজায় চোরের মতো দাড়িয়ে ফাঁকাটুকুতে চোখ রাখলো।সানার অশ্রুসজল মুখটা দেখে নিদারুণ চাপা কষ্ট অনুভব করে।বেশিক্ষণ সেখানে দাড়াতে পারলো না।দ্রুত পায়ে রুমে ফিরে আসলো।সজোরে দেয়ালে ঘুষি মারতে লাগলো।দেয়ালে লেগে আঙুল ছিলে যায়।কান্নায় ভেঙে পড়লো দেয়ালে পিঠ ঠেকিয়ে অহন,
” কেন তুমি আমার হলে না সানা?কেন তোমার ভালোবাসার মানুষ আমি হলাম না।”
রাতে অহন, সানা কেউ খায় নি।ইমা খাবার নিয়ে ভাইয়ের ঘরের দরজায় গেলে অহন দরজা খোলে নি।ইমা ভাইয়ের আচরনে চিন্তিত হয়ে ফিরে আসে।অল্প কিছু খেয়ে রুমে আসতেই শানের কথা মনে পড়ে।শান খেল কি না সেটা তো ইমার জানা হলো না? খালার কাছে জানার জন্য বের হবে তখনই মেঘাচ্ছন্ন আকাশের ন্যায় মুখটা গম্ভীর কালো করে রুমে প্রবেশ করে শান।একটিবার শুধু ইমার মুখের দিকে তাকিয়েছিল। ঐ চোখে কি যেন ছিল? ইমা ধরতে গিয়ে ধরতে পারে নি শান দৃষ্টি সরিয়ে ফেলায়।শান আলমারি থেকে কাপড় নিয়ে ওয়াশরুমে যায়। কাপড় চেঞ্জ করে এসে বিছানায় শুয়ে মোবাইলে ব্যস্ত হওয়ার ভান ধরে।ইমা ঘুরে শানের মুখের দিকে তাকিয়ে থাকে।ফ্রেশ হয়ে চেয়ারে বসে কিছুক্ষণ চুপচাপ থেকে অবশেষে বিছানার পাশে এসে দাড়িয়ে নিরুপায় হয়ে বলে,
” আপনি বিছানায় ঘুমালে আমি কোথায় ঘুমাবো?”
শান এমন ভাবে বসে আছে যেন ইমার কথা সে শুনতেই পায় নি।ইমা শানকে নিরুত্তর বসে থাকতে দেখে রাগে জোর গলায় বলে
” এই যে শুনছেন? আপনাকেই বলছি।আমি কোথায় ঘুমাবো?”
” আমি কি জানি? তোমার ব্যবস্থা তুমি করে নাও।ফ্লোরে জায়গা আছে বিছানা পেতে শুয়ে পড়ো।”
শানের কথা শুনে যতোটা না রাগ হয়েছে ইমা তারচেয়ে দ্বিগুন রাগ হয় শান ইমার দিকে না তাকিয়ে জবাব দেওয়ায়। ইমা বিছানার পাশে দাড়িয়ে বলে
” ওসব নাটক আমি পারবো না।আমি বিছানায় ঘুমাবো।আপনি অন্য কোথাও যান।”
” সে কি কথা? আমার সাথে ঘুমালে তোমার পাপ হয়ে যাবে না?আমাকে তো ঘৃণা করো তাই না? আর তাছাড়া আমিও কারো সাথে বেড শেয়ার করবো না।স্পেশালি তোমার সাথে তো নাই ই।”
শান ইমার চোখে চোখ রেখে চড়া গলায় কথাটা বলে।যদিও মন শানের অন্য কিছু বলছে।
“তা শেয়ার করবেন কেন? আপনার বেড শেয়ার করার মেয়ের অভাব আছে নাকি? হ্যাঁ করি ঘৃণা আপনাকে।এ দুনিয়ায় সবচেয়ে বেশি ঘৃণা আপনাকেই করি।” ইমা কথাটা বলতে বলতে রাগে কাঁপতে থাকে।
“এক্স্যাক্টলি।” শান ইমার চোখের দিকে তাকিয়েই জবাব দেয়।শান তাকিয়ে থাকলেও ইমা ও চোখে তাকিয়ে থাকতে পারে না।মনের ভেতরটায় ভাঙচুর হচ্ছে।অজানা কষ্টে ভারি হয়ে উঠছে হৃদয় টা।মনে মনে জেদ চেপে যায় শানের এক্সাক্টলি শুনে।
” ঠিক আছে! যা খুশি করেন আমার কি? আমি বিছানায় ঘুমাবো।সরে আপনি?”
” না তুমি ঘুমাবে না এখানে।”
” একশ বার ঘুমাবো।দেখি আপনি কি করেন?”
” আমি কি করতে পারি সে সম্পর্কে তুমি পূর্বেই অবগত আছ, তা নয় কি?
ইমা ঢোক গিলে বলে,
” ভয় দেখাবেন না বলে দিলাম।আর শুনে রাখেন।একদম আমার ধারের কাছে আসার চেষ্টা করবেন না।”ইমা ছুটে গিয়ে বসার ঘর থেকে অনেকগুলো কুশন নিয়ে এসে বিছানার মাঝ বরাবর লম্বালম্বি রাখে।শান কপাল কুঁচকে সেদিকে তাকিয়ে বলে
” এটা কি হচ্ছে? ”
” বর্ডার দেওয়া হচ্ছে। ইন্ডিয়া পাকিস্তানের বর্ডার।আপনি আপনার বর্ডার ক্রস করবেন না।আমিও আমার বর্ডার ক্রস করবো না।”
” পাগল তুমি? ভর্তি ছিলে পাবনা আগে?”
“কেন কি করছি?”
” এসব কোথা থেকে শিখেছ?ফালতু বুদ্ধি।সরাও। ”
” নাটক দেখে শিখেছি।আপনার সমস্যা কি? আমার বুদ্ধি ফালতু হোক যা হোক আমার কাজে লাগলেই চলবে।ঘুমান আপনি।”
” তুমি কিন্তু রীতিমত ঝাড়ি দেওয়া শুরু করেছ আমার উপর।মেরে তক্তা বানিয়ে ফেলবো কিন্তু আমার সাথে উচ্চস্বরে কথা বললে।”
শানের হুমকিতে ইমার ভয় লাগলেও সেটা সে দেখায় না।মুখ ঘুরিয়ে উল্টো হয়ে শুয়ে পড়ে।ইমার এই অবজ্ঞার ভাব শানের রাগটা তরতরিয়ে বাড়িয়ে দেয়।এমন ঘাড় ত্যাড়া মেয়ে কপালে জুটবে জানলে আগে এই মেয়ের ধারের কাছেও ঘেষতো না।কিন্তু এখন এসব বলে কি লাভ হবে? এখন তো এই ঘাড় ত্যাড়া মেয়ের প্রেমের জলে আবক্ষ নেমে গেছে। না পারছে ডুবতে না পারছে উঠতে।হায় রে কপাল!
” আগে যদি জানতাম বিয়ে করলে এসব সহ্য করতে হয় শালার বিয়েই করতাম না।অসহ্য। এই মেয়ে কথার মাঝখানে মুখ ঘুরিয়ে নাও কেন? মেজাজ খারাপ হয়ে যায় আমার।”
ইমা নাক ডাকার শব্দ করে থম মেরে বিছানায় পড়ে থাকে।শান অগ্নিশর্মা হয়ে ইমার দিকে তাকিয়ে মোবাইল হাতে নিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে যায়।
” ব্যাটা বলেছিলাম না তোর জোর করে বিয়ে করার স্বাদ মিটিয়ে দেব।এবার লুতুপুতু করাও ছুটিয়ে দেব দেখিস? বউয়ের হক অন্য কে দিয়ে রেখেছিস?আমার কেমন লাগে বুঝিস তুই?বুঝিস না।সহ্য হয় না!তোর সহ্য কত প্রকার ও কী কী সব শিখিয়ে ছাড়বো। এমন নাকানিচুবানি খাওয়াবো বাপের জন্মেও ভুলবি না।ইমা কাঁদো কাঁদো গলায় বির বির করে বলে।

চলবে,,,,
চলবে,,,,

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে