তোমার আকাশে হব প্রজাপতি
পর্ব ১০+১১+১২
Writer Tanishq Sheikh
শান ডক্টর এলিনার চেম্বারে বসে আছে।শানের হাত পা স্থিরই হচ্ছে না।অসহিষ্ণু হয়ে উঠেছে রিপোর্টে কি এসেছে জানার জন্য।এলিনা অনেকক্ষণ ধরে শানের বিচলিত ভাব দেখে বিরক্ত হয়েই বললো
“শান প্লিজ! কাম ডাউন।বাচ্চাদের মতো বিহেইভিয়ার বন্ধ কর।”
শান এলিনার বিরক্তি ভাবকে উপেক্ষা করে রাগী স্বরে বললো
“কি ফালতু হসপিটালে জব করিস তুই।সামান্য একটা রিপোর্ট আনতে এতো দেরি।অথচ মোবাইল করে বলেছে রিপোর্ট রেডি।ডিজগাস্টিং পিপলস।”
এলিনা চাপা স্বরে বললো।”দেখ তুই কিন্তু বেশি বলছিস।তোর একার জন্য তো হসপিটাল না। সবকিছুর একটা নিয়ম আছে।”
এলিনার কথা শেষ হওয়ার আগেই একজন নার্স রিপোর্ট নিয়ে আসলো।রিপোর্ট গুলো এলিনার টেবিলে রেখে চলে গেল।এলিনা রিপোর্টগুলোর উপর চোখ বুলাতেই চেহারার রঙ পাল্টে ফেললো।শান ভ্রুকুটি করে দেখে ছো মেরে রিপোর্ট টা নিজ হাতে নিয়ে নিল।
রিপোর্টে সানার প্রেগন্যান্সি পজেটিভ এসেছে।৩মাসের গর্ভবতী সানা।শানের শরীর অসাড় হয়ে আসছে।দুঃস্বপ্ন দেখছে না তো?এলিনার দিকে তাকিয়ে দেখলো এলিনা মাথা নিচু করে বসে আছে।শান রিপোর্ট এলিনার সামনে ছুঁড়ে মারলো।
“এসব কি এলিনা?তোদের কি মাথা খারাপ হয়ে গেছে।”
এলিনা আতঙ্কিত স্বরে বলো
“শান রিলাক্স! এখন মাথা গরম করে ভাবার সময় নয়।”
শান এলিনার চোয়াল চেপে ধরলো।
“এলি ও বাচ্চা মেয়ে!এমন রিপোর্টের মানে কি? আমার বোনকে জীবন্ত মারতে চাচ্ছিস কেন তোরা? দেখ ও ছাড়া কেউ নেই আমার।” শান এলিনার চোয়াল ছেড়ে দেয়ালে ঘুষি দিতে থাকে।
এলিনা শানের কাঁধে হাত রাখে।
“শান এসময় ভেঙে পড়ার নয়।ও বাচ্চা মেয়ে ভুল করতেই পারে।আমাদের ঠাণ্ডা মাথায় কাজ করতে হবে।”
” আমাকে ঠাণ্ডা হতে বলছিস? তুই আমার স্থানে নিজেকে ভাব একবার।”
শান চিৎকার করে ওঠে।এলিনা চোখ বন্ধ করে দূরে সরে যায়।রিফাত কে কল করে দ্রুত এখানে আসার জন্য।শান ভেঙে পড়ে। রাগে হসপিটাল থেকে বেরিয়ে আসে।দ্রুত ড্রাইভ করে বাড়ি ফিরে সিড়ি বেয়ে সানার রুমের সামনে আসে।।বাড়িতে নার্স আর সানা ছাড়া সবাই বাংলোতে বিয়ের ফাংশনে গিয়েছে।শান সানার দরজায় লাথি মেরে ভেতরে ঢোকে।সানা শুয়ে ছিল।ভাইয়ের রাগে রণমুর্তি রূপ দেখে উঠে বসতে যাবে তার আগেই শান সানার চুলের মুঠি ধরে দাঁড় করাই।সানার হাত থেকে স্যালাইনের সিরিঞ্জ ছুটে রক্ত বের হতে থাকে।নার্স ভয়ার্ত মুখে এগিয়ে আসলে শান থাপ্পড় দিয়ে ফেলে দেয় নার্সকে।বেচারি নার্স এমন অভিজ্ঞতা মুখোমুখি হয়তো কোনোদিন হন নি।ভয়ে কেঁদেই ফেলেছে।
শান একহাতে সানার চুল মুঠ করে অন্য হাতে সানার চোয়াল শক্ত করে ধরে চেচিয়ে বলে
” কার সন্তান?
সানা ভাইয়ের কথা শুনে হকচকিয়ে যায়।ভাইয়ের রক্তবর্ণ ভেজা চোখ দুটো দেখে বুঝতে বাকি থাকে না রিপোর্টে ওর সকল অপকর্ম ধরা পড়েছে।সানা মৃত্যুকে বার বার দোষে ছেড়ে যাওয়ার জন্য। এমন ঘটনার মুখোমুখি হওয়ার চেয়ে মরাও যে ভালো ছিল।কলঙ্কিত মুখে কি জবাব দেবে সানা এখন?
শান সানাকে চুপ দেখে রাগে হিতাহিতশূন্য হয়ে পড়ে। থাপ্পড় দিয়ে বিছানায় ফেলে দেয়।বাহু শক্ত করে ধরে দাঁড় করিয়ে বলে
” পাপ করে চুপ আছিস কেন? বল! কার পাপ তোর গর্ভে।বলিস না কেন সানা?কেন এমন করলি তুই? আমাকে মেরে ফেললি না কেন এমন কিছু করার আগে।বল সানা বল?
সানার শরীর ঝাকুনি দিয়ে শান আরও দুচারটা চড় মারে এলোপাথাড়ি সানার গায়ে।সানা দূর্বল শরীরে স্থির চাহনীতে সব মুখ বুঝে সয়ে যায় মূর্তির মতো।শান চোখ ভেজিয়ে গড়ানো জল মুছে নিজেকে শান্ত করে সানার মুখোমুখি দাঁড়ায়।
” আবির তাই না?
সানা এবার শানের চোখে চোখ রাখে।এতোক্ষনের পাথুরে মূর্তির চোখ বেয়ে জল গড়ায়।ভাই বলে চিৎকার দিয়ে জ্ঞান হারিয়ে পড়ে যায় সানা।শান হাত মুঠ করে বেড়িয়ে আসে।শান চলে যেতেই নার্স তাড়াতাড়ি সানাকে বিছানায় উঠিয়ে চোখেমুখে পানি দেয়। কাউকে ডাকার জন্য উঠতে গেলে সানা দূর্বল স্বরে নার্সকে না যাওয়ার জন্য মিনতি করে।
|
|
সন্ধ্যার পূর্বমুহূর্তে ইমা বধূ সেজে পার্লারে বসে আছে।শিখা সেই কখন গেছে এখনও আসার নাম নেই।ইমার গরমে দম আটকে আসছে এই ভারী লেহেঙ্গা আর গহনা পড়ে।ইমার অবস্থা বুঝে পার্লারের মহিলাটা ইমাকে একগ্লাস ঠাণ্ডা স্পাইট খেতে দেয়।ইমার কলিজাটাও মনে হয় শীতল হয়ে যায় স্পাইটটা খেয়ে।এখন বেশ ভালো লাগছে।নিজের হাত ভর্তি চুড়ি দেখছে।আয়নার বধূ বেশে নিজেকে দেখে লজ্জায় লাল নীল হচ্ছে।কিছুক্ষণ যেতেই ইমার চোখ ঝাপসা হতে লাগে।চোখের সামনে সব অস্পষ্ট হতে থাকে।শরীর এলিয়ে সোফায় জ্ঞান হারায় ইমা।
ইমা মাথাটা ধরে ঢুলুঢুলু চোখে আশপাশটা দেখে উঠে বসে।নিজেকেই নিজে প্রশ্ন করে
” কি হয়েছিল আমার? কোথায় আমি? শিখা,ইরাপু,বড় মা,মা।
না কারোর কোনো সাড়াশব্দ নেই।ইমা ভালোকরে এদিক সেদিক তাকাতেই দেখলো একটা ফুলদিয়ে সাজানো বিছানায় বসে আছে ও।ইমা কপাল কুচকে ভাবলো
“তাহলে কি বিয়ে হয়ে গেছে আবিরের সাথে? কিন্তু কখন হলো? ”
“ও আমাদের ব্রাইড তো উঠে পড়েছে।”
ইমা এগিয়ে আসা মেয়েটার দিকে তাকায় আরে হ্যাঁ এই মেয়েটাকে পার্লারে ঢোকার সময় দেখেছিল ইমা।
ইমা কথা বলার জন্য মুখ খুলবে তখনই কাজী সহ দুজন ছেলে ঢোকে।যাদের কাউকে ইমা আগে দেখেনি।ইমার কেন যেন সব গোলমেলে লাগছে।ইমা ঢোক গিলে মেয়েটাকে আস্তে করে বললো
” আপু আমার বড় আপুকে একটু ডেকে দিন না।”
এলিনা হেসে ইমার থুতনি ধরে বললো
” তোমার বড় আপুকে এখন কই পাবো ব্রাইড?”
ইমা ঘাড় বাকা করে বললো
“- কই পাবেন মানে? আমি বাসায় না?
এলিনা মুচকি হেসে ইমার কানে কানে বললো
” কথা বলার কতো সময় পাবে।এখন তাড়াতাড়ি কবুল বলার জন্য তৈরি হও তো।
ইমার এই মেয়ের কথার ভাব ভঙ্গি সন্দেহের লাগছে।কিন্তু কি বলবে?এই মেয়ে যদি আবিরের কেউ হয় তখন তো কিছু বললে দোষ খুঁজে বেড়াবে।তার চেয়ে চুপচাপ থাকায় বাঞ্ছনীয়।
কাজী বিয়ের কাবিন পড়া শুরু করলো।বরের নাম শুনে ইমা চমকে উঠলো।আবির আহমেদের জায়গায় শান নিহান খান বলেছে!ইমার কি শান কে নিয়ে অতিরিক্ত ভাবায় হ্যালুসিনেশন হচ্ছে? তাই ই হবে।শানের নাম বরের নাম কি করে হয়? ইমা কিছুক্ষণ ইতস্তত হয়ে তিন কবুল বলেই ফেললো।কাজী সাইনের জন্য খাতাটা এগিয়ে দিতেই ইমা বরের নামটা আরেকবার দেখতেই চক্ষু চড়কগাছ। হ্যালুসিনেশন ছিল না ইমার।সত্যি তো শান নিহান খান লেখা।ইমা কলমটা ফেলে চেচিয়ে উঠলো
“ইয়া আল্লাহ! এসব কি? আপনারা কারা? আমার বড় আব্বা কই? ও বড় আব্বা।
এলিনা ইমাকে শান্ত করার চেষ্টা করেও পারলো না।ইমার চিৎকার আরও বেড়ে গেল।ইমা খাতাটা ফেলে দিয়ে রুম থেকে বের হওয়ার জন্য এগোতেই শান দরজা খুলে ভেতরে ঢোকে।কালো পাঞ্জাবি আর চোখ মুখ মলিন শুকনো করে ইমার সামনে দাঁড়ায়।
“- কি সমস্যা? চিৎকার করছ কেন?
ইমা শানের দিকে ঘৃণা ভরা চোখে তাকিয়ে বলে
” আপনি না বলেছিলেন আর আমার পথে আসবেন না।তাহলে এসব কি?এতো নীচ কাজ কী করে করতে পারলেন বলুন?
শান ঘার ম্যাসাজ করতে করতে রুক্ষ গলায় বললো
” দেখো মেয়ে তোমার নাটক দেখার সময় বা ধৈর্য কোনোটাই আমার নেই।কবুল তো বলেই ফেলেছ এখন সাইনটা করে দাও কাহিনি শেষ।”
ইমা তেজে বলে,
“কাহিনি শেষ! আমার জীবনটা কি সস্তা নাকি যা ইচ্ছা তাই করবেন?আমি এই কবুল মানি না।ভালোই ভালোই যেতে দিন আমাকে।”
শান তেড়ে যেতেই ইমা দুকদম সরে ভয়ে হাঁফাতে থাকে।এলিনা রিফাত শানকে বাঁধা দেয়।এলিনা ইমার মাথায় হাত রেখে বলে
” দেখো যা হচ্ছে তোমার ভালোর জন্য হচ্ছে। তুমি অমত করো না।আমরা সব খুলে বলবো একটু সময় দাও।”
ইমা চেচিয়ে এলিনাকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দেয়।
” কিছুই শুনবো না আমি।ধোঁকা দিয়েছেন আপনারা আমাকে।কোনো কথা নেই আপনাদের সাথে।আমাকে যেতে দিন।”
ইমা কান্নায় ভেঙে পড়ে।শান রিফাতের হাত ঝটক দিয়ে সরিয়ে ইমাকে টেনে দাঁড় করায়।
” তুমি মোটেও এককথার মেয়ে নও।ভালো করে বলছি সাইন করো।আমার মেজাজ খারাপ হলে খেসারত দিতে হবে তোমাকে।”
ইমা শানে কাছ থেকে নিজেকে ছাড়ানোর বৃথা চেষ্টা করে বলে
” আমাকে যেতে দিন।আমি কি করেছি? কেন এমন করছেন? যেতে দিন আমাকে প্লিজ।”
ইমার কথার তোয়াক্কা না করে শান রিফাতকে বলে
” কাবিননামা নিয়ে আয়।”
রিফাত কাবিন নামা এনে দিতেই শান বিছানার উপর রেখে ইমাকে কলম ধরতে বলে।ইমা ঘাড় নাড়িয়ে না করে।শান চোয়াল শক্ত করে ইমার হাতে জোর করে কলম ধরিয়ে দেয়।
” সাইন ইট।কাম অন।”
ইমা রাগে কলম ছুড়ে মারে দূরে।শান নিজেকে আর শান্ত রাখতে পারে না।ইমার চোয়াল চেপে ধরে বলে
” অনেক অনুরোধ করেছি শুনিস নি।এলিনাও বলেছে সব বলবো আমরা।তবুও কথা শুনছিস না কেন? কারন তুই তো আবিরকে ছাড়া আর কাউকেই বিয়ে করবি না তাই না?
ইমা শানের বুকে কিল ঘুষি মেরে অস্পষ্ট স্বরে বলে
” হ্যাঁ তাই।ছাড় আমাকে।”
শান ঘরে উপস্থিত বাকিদের উদ্দেশ্যে বলে
” তোমরা বাইরে যাও।ম্যাডাম বাসর করে তবেই সাইন করবে।” যাও যাও।শান ইমাকে বিছানার উপর ছুড়ে ফেলে। সবাই রুম থেকে বের হতেই শান দরজা বন্ধ করে দেয়। ইমা ভয়ে ভয়ে খাটের এককোনে গুটিশুটি বসে কাঁপতে থাকে।
শান ধীরে পায়ে এগিয়ে বিছানায় বসে।ইমার পা ধরে টেনে নিজের কাছে এনে বিছানার সাথে চেপে ধরে।শানের মুখটা ক্রমশ ইমার ঠোঁটের দিকে এগোতে থাকে।ইমা চোখ বন্ধ করে চিৎকার করে কেঁদে ওঠে,
” আমি সাইন করবো।আমি সাইন করবো।”
” গুড ব্রাইড!
ইমা চোখ খুলতেই দেখে শান দরজায় দাড়িয়ে লক খুলছে।ইমা ফুপাতে ফুপাতে বিছানা ছেড়ে উঠে বসে।
কাজী সহ বাকিরা আবার রুমে ঢোকে।ইমা কাঁদতে কাঁদতে সাইন করে দেয়।
এলিনা কিছু বলতে চাই কিন্তু ইমা কিছুই শুনতে চাই না।মুখ ঘুরিয়ে কান হাত দিয়ে বসে কাঁদে।রুমে এখন ইমা একা। এই সুযোগে ইমা বিছানা ছেড়ে উঠে পালানোর রাস্তা খুঁজতে লাগলো।কিন্তু দুর্ভাগ্য কোনো রাস্তায় পেল না।হতাশ হয়ে দেয়ালে হেলান দিয়ে বসে কাঁদতে লাগলো।কাঁদতে কাঁদতে চোখ দেয়াল রাখা ঘড়িটার গিয়ে আটকায়।রাত ২ টো ২০ বাজে।তার মানে এতোক্ষন এখানে বন্দি।বাড়িতে কি হচ্ছে ভাবতেই ইমার কান্না পায়। দরজা খোলার শব্দ পেয়ে ইমা জড়োসড়ো হয়ে বসে।শান কালো নাইট সুট পড়ে ড্রিঙ্ক করতে করতে বিছানায় হেলান দিয়ে পা মেলে বসে।ইমার দিকে চোখ পড়তেই বলে
” এদিকে আসো।
ইমা শানের কথার জবাব দেয় না দেখে শান ধমকে বলে
” কথা কানে যাচ্ছে না? এদিকে আসো।আমার এতোদিনে বোঝা উচিত তুমি ভালো কথার মেয়ে নও।ধমক ছাড়া উপায় নেই।”
ইমা ধীর পায়ে শানের পায়ের কাছে এসে মাথা নিচু করে দাঁড়ায়।
শান ইমার দিকে চেয়ে গলায় ওয়াইন ঢালতে ঢালতে বলে
” গহনা খুলে এদিকে আসো।স্বামীর হক আদায় করতে হবে না?”
ইমা ভয়ে ভয়ে বলে,
” প্লিজ এমন করবেন না।”
শান চোখ রাঙিয়ে বলে,
” বিয়ে হয়েছে স্বামীর হক আদায় করবে না সেটা কি ভালো দেখায়।তাছাড়া আজ তো স্পেশাল রাত তোমার জন্য। কি করে কিছু না করি বলো?স্বামী হিসেবে আমারও তো কিছু দায়িত্ব আছে। আসো আসো”
ইমা ঘার নাড়িয়ে অসম্মতি জানালে শান রেগে উঠতে যায়।ইমা ভয়ে পিছিয়ে যেতেই শান বিছানায় সোজা হয়ে বসে ধমকের সুরে কাছে ডাকে।
ধমক ভয় পেয়ে ইমা ধীরে ধীরে নিজের শরীর থেকে অলংকার খুলে ফেলে চুপচাপ দাড়িয়ে থাকে।ইমাকে দাড়িয়ে থাকতে দেখে শান ইমাকে এক টানে বুকে উপর ফেলে।
ইমা যতো সরতে চাই শান ততই শক্ত করে জড়িয়ে ধরে।ইমার নড়াচড়া বন্ধ হয়ে যায় কাঁধে শানের ঠোঁটের ছোঁয়ার স্পর্শে। ইমা অচেনা অনুভূতিতে হাত পা শক্ত করে ফেলে।
শানের হাত, ঠোঁট দ্রুতই ইমার সকল শক্তির উপর ভর করে ইমার দেহে নিজের সুবাসে ভরিয়ে তোলে।সূচনা হয় দুটি ভিন্ন ধারার মানুষের এক হওয়ার সকাল।
পর্ব ১১
Writer Tanishq Sheikh
থাই গ্লাসের জানালা দিয়ে সকালের আলো বিছানার উপর পড়ছে।বিছানার উপর ইমা ফর্সা পা দুটো তাতে আরও উজ্জ্বল লাগছে।ইমার চোখে এ উজ্জ্বলতা ধূসর বিবর্ণ। আকাশে ভেসে বেড়ানো সাদা মেঘের মতো সেও যদিও ভেসে দূর বহুদূর এই অসম্মান, আসন্ন অপমানের মুখোমুখি হতে পালাতে পারতো।কিন্তু তা কী করে সম্ভব একজন বেচারী নারীর জন্য।
শান বিছানায় উপুড় হয়ে অন্য দিকে মুখ ফিরিয়ে পড়ে আছে।চোখ বন্ধ হয়তো গভীর ঘুমে নয়তো ঘুমের ভান ধরে পড়ে আছে।ইমা এলোমেলো লেহেঙ্গা গায়ে জড়িয়ে সেই কখন থেকে খাটের এককোনে বসে কেঁদে যাচ্ছে। শান শরীর না নাড়িয়ে ঘাড় ঘুরিয়ে ইমার মুখের দিকে ঘুম জড়ানো চোখে চেয়ে থেকে আদেশের সুরে বলে
” সকাল সকাল নাটক করো না। যাও কফি তৈরি করে নিয়ে আসো।”কথাটা বলে আবার ঘাড় ঘুরিয়ে চুপ হয়ে গেল শান।হয়তো ঘুমিয়ে গেছে।
ইমা আরও কিছুক্ষণ কেঁদে শানের দিকে কপট রাগে চেয়ে বিছানা ছেড়ে তাড়াতাড়ি করে নামতে গিয়ে খুব ব্যথা পেল পেটে।পেটটা কোনোমতে এক হাতে চেপে দোতলার কড়িডোর ধরে নিচে নামা সিড়ি বেয়ে নিচে নেমে এলো।মাঝারি হলরুমের এককোনে লিভিং রুম আর অন্য পাশে ডাইনিং পাতা।ইমা সামনে হাঁটতেই কিচেন পেয়ে গেল।কিচেনে ঢুকে পাতিলে পানি চড়িয়ে ফুপিয়ে কেঁদে উঠলো।অশ্রুসিক্ত চোখেই কফির পট খুঁজে বের করলো।কফি তৈরি হয়ে গেলে সেটা মগে ঢেলে রান্না ঘর থেকে বের হতেই ধূপধাপ দরজায় কড়া পড়লো।বাইরে থেকে আবির আর অহনের চিৎকারের আওয়াজ শুনতে পেয়ে ইমার হাত থেকে কফির মগ পড়ে গেল। ভয়ে থরথর করে হাত কাঁপতে লাগলো।দরজার দিকে একবার তাকায় আরেকবার উপরের দিকে।কী হতে চলছে ইমা জানে না?”ভাই “বলে গুমড়ে কেঁদে ওঠে দরজায় মুখ করে ইমা।
“স্বামী স্ত্রীকে বিরক্ত করতে এসে পড়েছে দেখছি। যাও খুলে দাও দরজা।” শান গায়ে কালো টিশার্ট জড়িয়ে সিড়ি দিয়ে নামতে নামতে ইমাকে উদ্দেশ্যে করে বলে।
ইমা কান্নাসজল চোখে ঘাড় নাড়িয়ে “না বলে।
“তুমি মোটেও ভালো স্ত্রী নও ব্রাইড।স্বামীর একটা কথাও শোনো না।” শান বিরক্তভরা মুখে কথাটা বলতে বলতে সদর দরজা খুলে দিতেই অহন, আবির তিনচারজন পুলিশসহ বাড়ির ভেতর প্রবেশ করে।ইমাকে অদূরে এলোমেলো চুল আর লেহেঙ্গায় দেখে অহন ছুটে বোনকে জড়িয়ে ধরে কাঁদো কাঁদো স্বরে বলে
” ঠিক আছিস তুই।”
ইমা ভাইয়ের বুকে মুখ লুকিয়ে চিৎকার করে কেঁদে ওঠে।অহন ইমার মাথায় হাত বুলিয়ে স্বান্তনা দেয়। শান কোমরে হাত রেখে কপাল ঘষতে থাকে আর আড়চোখে ভাইবোনকে দেখে।শানের দিকে অহন ক্রুর দৃষ্টিতে তাকায়।আবির ইমার অবস্থা দেখে সব হারিয়ে উন্মাদ হয়ে শানকে ঘুষি মারে।ঘুষি নাকে লাগায় সেখান দিয়ে গলগল করে রক্ত বের হয়।আবির তবুও থামে না।আরও দুটো দেয় মুখে।চোখে দিতে গেলেই শান আবিরের মুঠো ধরে ফেলে।
” যথেষ্ট হয়েছে।তোর সাহস দেখে আমি অবাক হই আবির।কিপ ইট আপ বাস্টার্ড। সময় ঘনিয়ে আসলে পিপড়া এভাবেই কামড়াতে আসে।এই শান তার খায়েশ মিটিয়ে পিঁপড়াকে পায়ের তলে পিষে মারে।” ভ্রু নাড়িয়ে নাকে রক্ত হাত দিয়ে মুছতে মুছতে কঠিন স্বরে বলে শান।আবির শানের কথায় ঘাবড়ে যায়। শানের রাগী চোখের দৃষ্টি দেখে ভয়ে কথা বন্ধ হয়ে যায় ওর।অহন ইমাকে একহাতে জড়িয়ে শানের সামনে এসে বলে
” আপনার দ্বারা এমন কাজ আমি আশা করি নি ভাই।আপনাকে আমি আইডল মানতাম।আমার বোনের জীবনটা কেন নষ্ট করলেন ভাই।”অহনের চোখের অশ্রু দেখে শান চোখ নামিয়ে নেয়।অহন রেগে পাশে দাঁড়ানো পুলিশের এসপিকে বলে
” নিয়ে যান এই কালপিটকে।আমার বোনকে কিডন্যাপ করার দায়ে তাকে আমি দোষারোপ করলাম।”
পুলিশ শানের দিকে আসতে ভয় পাচ্ছিল।শহরের টপ বিজনেসম্যান এবং প্রভাবশালীও বটে শান।তাকে গ্রেফতার করা মানে শহরজুড়ে তোলপাড় হওয়া।মিডিয়ায় নতুন খবর। শান ইমার দিকে তাকিয়ে হাত দুটো বাড়িয়ে দেয় পুলিশদের উদ্দেশ্যে।পুলিশ শানকে নিয়ে জিপে বসে।ইমা একটিবার শানের মুখের দিকে তাকায় নি।তাকালে হয়তো বুঝতো শান ইমার কাছে স্বামীর অধিকার চাইছে।
শান গ্রেফতার হওয়ার মিনিট দুয়েক পরই মিডিয়ায় বিদ্যুৎ বেগে টপ বিজনেসম্যানের নারী কেলেঙ্কারির শিরোনামে খবর প্রচারিত হলো।ক্রমশ শানের শত্রু পক্ষ মিথ্যার আরও বড় পাহাড় তৈরি করলো শানের বিরুদ্ধে। শান জীবনে যা না করেছে সেগুলোও তুলে ধরা হলো তার অপকর্ম হিসেবে।তিল তিল করে জমানো সম্মান সব মাটিতে মিশে গেল শানের।শৌখিন নামকরা ব্যারিস্টার পাঠিয়েছে শানের জামিনের জন্য। কিন্তু শান তাতে নারাজ।সে নির্বিকার পা তুলে শুয়ে আসে জেলখানার ভেতর।শৌখিন শানের এমন আচরণে বেশ অবাক হয়।ছোটবেলা থেকেই ভাইয়ের ছায়ায় বড় তাই ভাইয়ের সকল কাজে অগাধ বিশ্বাস শৌখিনের।সেই বিশ্বাসেই চুপ রইল শৌখিন।তবে শানের এই দুরবস্থা দেখে তার চোখে জল চলে আসলো।শানের বদনামে এলাকায় ঝড় উঠেছে।মিডিয়া বাড়ির সামনে হুমড়ে পড়ছে।শানে পয়সায় যারা স্বাবলম্বী সেসব আত্মীয় স্বজন একসময় বাহবা দিত আজ তাদের ছি! ছি! তে খান মঞ্জিলে বিষাদের ছায়া নেমেছে।শ্রদ্ধার আসনে বসানো ভাসুরের এহেন কাজে ইরা বেশ ভড়কে যায়।কী করবে ভেবে কূল পায় না। মামী তখন থেকে যা মুখে আসছে তাই বলে যাচ্ছে ইরাকে।ইরার এবার প্রচন্ড রাগ হলো।জবাব দেওয়ার জন্য উঠে দাঁড়াতেই সানাকে দূর্বল শরীরে নিচে নামতে দেখে এগিয়ে যায়।
” সানা নিচে নেমেছ কেন? তোমার কন্ডিশন এখনও ভালো না।”
সানা কিছু বলবে তার আগেই জহুরা মামী মুখ বেঁকিয়ে বলে
” এহন আর কি কইবো?আকাম কইরা ভাইটারেও রসাতলে পাডাইছে।”
মামীর কড়া কথা শুনে সানা শব্দ করে কাঁদে। ইরা সানাকে সোফায় বসিয়ে মামীকে লক্ষ্য করে বলে
” আপনার সমস্যা কি বুঝি না।কোথায় অবস্থা বুঝে ব্যবস্থা নেবেন তা না।আরও গিরিঙ্গি লাগানোর ধান্দায় আছেন।”
জহুরা রাগে ছ্যাঁত ছ্যাঁত করে উঠে বলে
” কি আমি গিরিঙ্গি লাগায়? ও শৌখিনের মা তোমার বউকে কিছু বলো না কেন?”
শৌখিনের মা শায়লা বেগম চোখ মুছে রুমে চলে যায় এদের ঝগড়া দেখে।ওযু করে নামাজ পড়ে শানের বিপদ মুক্তির প্রার্থনা করতে হবে তাকে।
শায়লাকে চুপচাপ ঘরে যেতে দেখে জহুরা মুখ ঝামটা মেরে বকবক করতে করতে নিজের ঘরে চলে যায়।ইরা সানার হাতটা হাতে নিয়ে স্বান্তনা দেয়।সানা চোখ মুছে ভাবিকে বলে
” ভাবি আমাকে ধরে একটু বাংলো বাড়ি নিয়ে যাবা।”
ইরা বিস্মিত হয়ে বলে
” ওখানে কি কাজ তোমার।না এখন যাওয়া লাগবে না।ও বাড়ির লোক এমনিতেও রেগে আছে।”
সানা কাতর কন্ঠে অনুনয় করে।
” ভাবি প্লিজ! আমাকে যা খুশি বলুক তবুও তুমি নিয়ে চলো।আমার ভাইটা আজ আমার জন্য সব বিসর্জন দিয়েছে।আমার উপর অভিমান করে নিজের ক্ষতি করেছে। ”
ইরা ভ্রুকুটি করে সানার কথার অর্থ বুঝতে চাই।সানা সেটা বুঝতে পেরে বলে
” তুমি নিয়ে চলো আমি সব খুলে বলছি।”
ইরা উপায়ন্তর না দেখে সানাকে ধরে বাংলো বাড়ি নিয়ে আসে।শাহানুর সানা আর ইরাকে দেখে রাগে চেচাঁমেচি শুরু করে।ইমা গোসল করে বিছানায় গুটিশুটি মেরে শুয়ে কাঁদছিল। ইরা এসেছে শুনে উঠে বসে।
বসার ঘরে বড় মিঞা,ইমন,অহন বিধ্বস্ত চেহারায় বসে আছে চুপচাপ। শাহানুর শুধু বুক চাপড়ে ” এ কি সর্বনাশ” হলো বলে মাতম করছে।
সানা ইরার কাছ থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে বড় মিঞার পায়ের কাছে গিয়ে হাটুমুড়ে বসে।সানাকে এভাবে বসতে দেখে শাহানুর সহ বাড়ির সবাই চুপ হয়ে যায়।ইমা বিছানায় বসে হাঁটুতে কপাল ঠেকিয়ে বসে কাঁদে।
ইমার মা চাচী,ফুপুরা দরজার আড়ালে ঘোমটা দিয়ে সানাকে বিস্মিত চোখে দেখে যাচ্ছে।
সানা ইমন অহনের দিকে তাকাতে তারা সানার দিক থেকে মুখ ঘুরিয়ে নেয়।সানার চোখে শুধু জলের অবিরাম স্রোত বয়।
সানা নিজেকে সামলে দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বড় মিঞা হাতটা ধরে বলে
” আঙ্কেল! আমার ভাইকে আপনি ক্ষমা করে দিন।” সানার এ কথা শুনে অহন চিৎকার করে ওঠে
” ক্ষমা! কোন মুখে এ কথা বলতে এসেছেন আপনি।চলে যান এখান থেকে।”
ইরা অহনকে থামিয়ে বলে
” অহন আস্তে কথা বল।”
অহন সামনে থাকা ফুলদানি আছড়ে ভেঙে রাগ দেখিয়ে বলে।
” তোর ননদ কে নিয়ে তুই যা ইরাপু।আমরা আজই এ বাড়ি থেকে চলে যাবো।তারপর তোর ভাসুরের কি হাল করি দেখবি।”
সানা কেঁদে বলে
” দোহায় আপনাদের আমার কথাটা শুনুন।আঙ্কেল ইমার সাথে যার বিয়ে হতে যাচ্ছিল সেই আবির চরিত্রহীন, লম্পট।”
অহন তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বলে
” আরে বাহ! নিজের ভাইকে ভালো প্রমাণ করতে গিয়ে নিরপরাধ মানুষের চরিত্রে দাগ লাগাতে আপনাদের আটকায় না? ”
” আপনি ভুল ভাবছেন অহন ভাই।সত্যি বলছি আমি।আঙ্কেল আবির ভালো ছেলে নয়।শান ভাই সেটা জানতো।আপনাকে তো বলেছিল আঙ্কেল। আপনি বিশ্বাস করেন নি।”
সানার কথা শুনে সবাই বড় মিঞার মুখের দিকে অবাক হয়ে তাকায়।বড় মিঞা নিরবতা ভেঙে সানার দিকে তাকিয়ে বলে,
” তোমার ভাই আমার বন্ধুর ছেলের নামে মিথ্যাচার করেছে।আমার বন্ধুকে আমি ভালোমতো চিনি।তার ছেলে এমন হলে সে কোনোদিন আমাদের মেয়ের জীবন নষ্ট করতো না।”
সানা দৃঢ়স্বরে বলে
” আমার ভাই মিথ্যাচার করে না আঙ্কেল।আপনাদের সম্মান বাঁচাতে সে ইমাকে জোড় করে বিয়ে করেছে।অবশ্য এর আরেকটা কারন ছিল।আর তা হলো আবিরের সম্মান নষ্ট করা।বিয়ের আসরে বউ গায়েব এতে বরপক্ষের সম্মান নষ্ট হবে জেনেই ভাই এই নাটক করেছে।আপনি সেদিন ভাইকে বিশ্বাস করলে ভাই এমন কাজ করতো না আঙ্কেল।”
” চুপ করো।তোমার কাছে কি প্রমাণ আছে আবির খারাপ।”
বড় মিঞা রেগে বলা কথায় সানা দাড়িয়ে লজ্জায় মাথা নুইয়ে চোখের জলে বুক ভাসিয়ে বলে
” আমি নিজে তার প্রমাণ আঙ্কেল। আবিরের পাপ আমার গর্ভে।”সানার এ কথা শুনে এ বাড়ির লোকেরা হতভম্ব হয়ে যায়।ইরা মুখে হাত দিয়ে কান্না করে দেবে ভাব।অহনের তো দুনিয়া ঘুরে গেছে সানার কথা শুনে।ধপ করে সোফায় বসে পড়ে সানার মুখের দিকে তাকিয়ে।ইমা ও ঘর থেকে কথাটা শুনে বিষ্ময়ে মূর্তির মতো ঠাঁই বসে থাকে।
ইরা সানাকে নিজের দিকে ঘুরিয়ে বলে
” সানা এসব কি বলছ?”
” সত্যি বলছি ভাবি।ভাই কাল এটা জেনে যায়।উন্মাদ হয়ে ওঠে। আবিরকে মারার জন্য বাড়ি থেকে গেলেও না মেরে ইমাকে উঠিয়ে বিয়ে করে। আঙ্কেল আমার ভাই রাগের মাথায় ভুল করে ফেলেছে।আমি কথা দিচ্ছি ইমাকে আমি আমাদের বাড়ির বউয়ের মর্যাদা দেওয়াবো।আপনি আমার ভাইকে ক্ষমা করে দিন আঙ্কেল।”
বড় মিঞা সানার কথা শুনে কিছুক্ষণ নিরব হয়ে বসে থাকেন।ইমন রেগে ওঠে
” সব দোষ ইমার কপালের।ওকে মেরে ফেলো।আমার বংশের মান সম্মান সব শেষ হয়ে গেল ওর জন্য। ”
বড় মিঞা অনেক ভেবে অবশেষে বললো,
” ঠিক আছে তোমার কথা আমি বিশ্বাস করলাম।কিন্তু শোনো মেয়ে এ কথা একচুল মিথ্যা প্রমাণিত হলে আমি কাওকে ছাড়বো না।”
“আঙ্কেল আপনি খোঁজ নিন।আপনার সব কথায় আমি রাজি।শুধু আমার ভাইকে জামাতা হিসেবে মেনে নিন।”
সানার কন্ঠে কাতরতা ফুটে ওঠে।
” ঠিক আছে।অহন শানের জামিনের ব্যবস্থা করো।”
বড় মিঞার কোনো কথার জবাব অহন দেয় না।সে শুধু সানার মুখে দিকে ফ্যালফ্যাল করে চেয়ে থাকে।ভেতরটা তার দুমড়ে মুচড়ে যাচ্ছে।সানা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বড় মিঞার হাতটা কপালে রেখে।বড় মিঞা সানার কাছ থেকে হাত ছাড়িয়ে ঘরের ভেতর যাওয়ার জন্য কিছুদূর যেতেই ফ্লোরে লুটিয়ে পড়েন।
পর্ব ১২
Writer Tanishq Sheikh
বেদনার রঙ কেমন হয়?হয়তো বিষের মতো নীল বর্ণ।স্বর্বস্ব হারিয়ে একটা মেয়ের জীবনও বোধহয় এমনই হয়।যেদিকে তাকায় সেদিকেই শুধু অসম্মানের চাহনী। সম্ভ্রমনষ্টা নারী এ সমাজের চোখে কলঙ্কিত।একটা মেয়ের সম্মানই যে সব।সানা চোখ তুলে তাকানোর সাহস পায় না।বাড়ির সবাই বড় মিঞাকে ধরাধরি করে রুমে নিয়ে গেছে।বসার ঘরটায় সানা নিঃসঙ্গ দাড়িয়ে আছে।শরীরে একরত্তি শক্তি পাচ্ছে না এই মুহুর্তে।আচ্ছা যদি কোনো অলৌকিকত্বের সন্ধান মিলতো?সানা নিজের দেহ মন থেকে ঐ লম্পটটার স্পর্শ চিহ্ন মুছে দিতে পারতো?কিন্তু এ তো বাস্তবতা।সময়ের গতি ফিরিয়ে আনা যায় না।যায় না কঠিন ভুল শুধরানো।যৌবনের উম্মত্ততার বশে যে পাপ করেছে তার দাগ যে কলঙ্কের কালি হয়ে ললাটে বসে গেছে।কোনো জলে এ কালি মুছবে না।আজ ভাইয়ের বলা প্রতিটি কথায় সানার কানে গরম সীসার মতো গলে পড়ছে।ঘৃণায় বিষিয়ে উঠছে সমস্ত শরীর।সানা এলোমেলো পায়ে বাংলো থেকে বের হয়ে রুমের উদ্দেশ্যে পা বাড়ায়।সিঁড়ি ধরে উপরে উঠতেই আর নিজেকে শক্ত রাখতে পারে না।পা বেঁধে ধপাস করে উপুড় হয়ে পড়ে।নার্স এগিয়ে এসে সানাকে উঠাতে যায়।সানা নার্সকে সরিয়ে সর্বোচ্চ শক্তি খাটিয়ে উঠে দাঁড়ায়। দেয়াল ধরে ঘরের বিছানা এসে লুটিয়ে পড়ে।নার্স এতোটুকু সময়ে এই নিশ্চুপ থাকা মেয়েটাকে কিছুটা হলেও বুঝতে পেরেছে। নার্সের চোখে জল গড়ায় মেয়েটার চাপা কষ্ট দেখে।
বড় মিঞাকে দেখতে ডক্টর আনা হয়েছে। ছোটখাট একটা অ্যাটাক হয়ে গেছে বড় মিঞার।ডাক্তার ওষুধ লিখে দিয়েছে এবং স্ট্রেস ফ্রি রাখার পরামর্শ দিয়েছেন। তাছাড়া অহনকে সাথে নিয়ে গিয়েছেন রুটিনমাফিক কিভাবে চলবে সেটার চার্ট বেঁধে তৈরি করে দেওয়ার জন্য।আয়শা ছেলের মুখের দিকে তাকিয়ে আৎকে উঠেছে। শুকিয়ে সাদা হয়ে গেছে অহনের মুখটা।হ্যাঁ না ছাড়া কোনো কথায় বলছেন না।ইমাকে নিয়ে আসার পরও এতোটা বিধ্বস্ত হতে দেখেন নি তিনি।ছেলে মেয়ের চিন্তায় তারও বিপি হাই হওয়ার উপক্রম। মেয়েটা সেই কখন থেকে একনাগাড়ে কেঁদেই চলছে।বাড়ির পরিবেশটা খুবই অস্বস্তিকর হয়ে দাড়িয়েছে।একটা দমবন্ধ গুমোট ভাব চারপাশটা জুড়ে।
বাবার অ্যাটাকে ইরার কান্নায় থামছে না।ইমন সহ সবারই অবস্থা করুন পরিবারের ভিত সমান ভাইয়ের অসুস্থতায়।
সন্ধ্যার আগ দিয়ে বড় মিঞা কথা বলার মতো পরিস্থিতি আসে।কিন্তু তার শরীরের কন্ডিশন ততটা ভালো না বিধায় তাকে ডাক্তারের পরামর্শে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।ইমাকে পাওয়ার পরপরই মিঞা বাড়ির অন্যান্য আত্মীয় স্বজন যারা বিয়ে উপলক্ষে এসেছিল গ্রাম থেকে তারা গ্রামে ফিরে যায়।অহনের দু ফুপাও জরুরী কাজে বাড়ি চলে যায়।এজন্য এদিকটা একা অহনকেই সামলাতে হচ্ছে। শৌখিন আসলেও অহন তার সাথে একটা কথাও বলে নি।
আয়শা তখন দেখে দেখছে ইমন ঘরে বসে গভীর দুঃশ্চিন্তায় মগ্ন।স্বামীর রাগী চেহারা দেখে সাহস করে কিছু জিজ্ঞেসও করতে পারছেন না।দূরে দাড়িয়ে ভাঁজ করা কাপড় আবার ভাজ করছেন মলিন মুখে।হঠাৎ মৃদুল দৌড়ে এসে বললো
” ও ছোট মামানী।ইমাপু ভাত খাইতাছে না।
আয়শা মৃদুলকে চোখ গরম দিয়ে ইশারায় চুপ করতে বলবে তার আগেই ইমন রাগে অগ্নিমূর্তি ধারন করে বলে,
” ও ভাত খাইবো কেন? ওরে বিষ খাওয়াবো।কুত্তার বাচ্চা আমার জীবনে অভিশাপ হয়ে আসছে।” কথাটা বলতে বলতে ইমন বেল্ট হাতে রাগে হনহন করে ইমার রুমের দিকে এগিয়ে গেল।আয়শাও থামেন! শুনেন বলতে বলতে পিছু নিল।
ইমা খাটে হেলান দিয়ে নিরবে কাঁদছিল। আচমকাই ইমন ইমার চুল টেনে ধরে ফ্লোরে ফেলে দিয়ে বেল্ট দিয়ে পিটাতে লাগলো।ইরা,শাহানুর, আয়শাও এসে থামাতে পারছে না ইমনকে।অসুরের শক্তি এসে ভর করে ইমনের উপর।ইমা ফ্লোরে শুয়ে আর্তচিৎকার করে বাবার হাত থেকে বাচার চেষ্টা করছে।
ইমন হাঁফাতে হাঁফাতে ইমাকে টেনে তুলে বিছানায় ফেলে বাহু ধরে বললো
” চল আমার সাথে।তোর স্বামীর জামিন করিয়ে আনবি।”
ইমা ইমনের দিকে তাকিয়ে করুন চোখে ভাঙা স্বরে বলে,
” আব্বা না! আমি ঐ লোকের সাথে সংসার করবো না।আমি পারবো না আব্বা। ”
ইমন দাঁত মুখ খিচে ইমার গালে চড় বসিয়ে বললো
” ক্যা করবি না কেন? আর কারে খাবি।তোর কারনে বড় ভাই মরতে বইছে,ইরার সংসার নষ্ট হয়ে যাবে ওর ভাসুরের কিছু হইলে।ছেলেটার মানসম্মান তো সব শেষ তোর কারনে।তুই ওরই সংসার করবি।আর যদি না করিস তাইলে তোরে আমি খুন করে ফেলবো।”
ইমা চিৎকার করে বলে
” মেরে ফেলো আমাকে।এভাবে বাঁচার চেয়ে মরে যাওয়াও ভালো। আব্বা মেরে ফেলো আমাকে।”
” তুই এহনও ত্যাজ দেহাস।তোরে তো।”ইমন রাগের মাথায় ইমার গলায় বেল্ট পেঁচিয়ে ধরে।ইমার মুখ নীল হয়ে যায় দমবন্ধ হওয়ায়।শাহানুর ইমনকে খামচে ধাক্কে দূরে সরিয়ে দেয়।ইমা সাথে সাথে চোখ উল্টে জ্ঞান হারায়।ইমন তখনও কাঁপতে থাকে রাগে ক্ষোভে।আয়শা মেয়েকে বুকে নিয়ে হাও মাও করে কাদে।শাহানুর, শিখা,ইরা ইমার হাত পা মালিশ করতে থাকে।শাহানুরের ধৈর্য্যের বাঁধ ভেঙে যায়।ইমনকে অসুর, পিশাচ বলতে বলতে গিয়ে চড় মারে।ইমনের এতোক্ষনে হুশ ফেরে।মেয়ের নিথর দেহ দেখে “ও মা! ও মা আমি কি করছি বলে মাথায় হাত দিয়ে কেঁদে ওঠে।”
মেয়েকে বুকে নিতে যায় কিন্তু আয়শা ক্রুদ্ধ হয়ে ইমনের দিকে চেয়ে ইমাকে ধরতেই দেয় না।
দু বাড়ির অবস্থা মরা বাড়ির মতো শোকে আচ্ছন্ন।বড় মিঞার আদেশ রক্ষার্থে অহন মামলা তুলে নেয়।শানের সামনে মিডিয়ার ঢল নামে।শানের শেয়ার ব্যবসায় বড় রকমের লোকসানের আশঙ্কা করা হয়।এছাড়া বাকি আইটি সহ আদার্স বিজনেসও বড় রকমের প্রভাব পড়ে এই ঘটনার জেরে।এতোকিছুর পরও শান নিজের ভগ্নহৃদয় কারো সামনে উন্মোচন করে না।আগের মতোই ভাব নিয়ে বাড়িতে আসে।নিজের রুমে ঢুকে গোসল সাড়ে।সারাটা রাত নির্ঘুম কাটায়।পরদিন সকালে খাবার টেবিলে প্রতিদিনকার মতো স্বাভাবিক ভাব বজায় রেখে খেতে থাকে।খাবার টেবিলে সানার শূন্যতা শানের কলিজা ছিদ্র করে তবুও সেটা প্রকাশ করে না।জিজ্ঞেসও করে না সানার কথা।বাড়ির লোক তাতে বিস্মিত হলেও প্রকাশ করার সাহস পায় না।খাওয়া দাওয়া শেষ পর্যায়ে এমন সময় শাহানুর অসুস্থ ইমাকে নিয়ে খান মঞ্জিলে প্রবেশ করে।চাদরে মোড়া ইমা তখনও শীতে কাঁপছিল।শাহানুর,ইমাকে আসতে দেখে শৌখিন ইরা দাড়িয়ে পড়ে।সাথে শানের কাকা -কাকী,মামীও। শুধু শান নির্বিকার ভঙ্গিতে বসে খাবার চিবুচ্ছে সম্মুখে দৃষ্টি অনড় রেখে।
শাহানুর কিছু বলতে যাবে তার আগেই শান হাত উঁচিয়ে থামিয়ে দেয়।টিস্যু দিয়ে মুখ মুছতে মুছতে বলে
” ইরা ওকে আমার রুমে রেখে আসো।”কথাটা শুনে ইমা শানের দিকে তাকিয়ে থাকে।শান একটিবারও এদিক ফিরে তাকায় না।শানের মামী ছাড়া শানের এ কথায় সবার মুখে হাসি ফোটে।ইরা অশ্রুসিক্ত চোখে ইমাকে নিয়ে সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠতে থাকে।ইমনের মারের রিয়াকশনে ইমার কাল রাত থেকেই গা কাঁপানো জ্বর।কিছুই খেতে পারছে না ঠিকমতো।একদিনেই শরীটা জীর্ণশীর্ণ মলিন হয়ে গেছে।
শাহানুর কিছু বলতে চেয়েও শানের ভাব দেখে না বলেই চলে যায়।
সানা গত দুদিন রুম থেকে বের হয়নি।স্থির দৃষ্টিতে শুয়ে বসে কাটিয়েছে।
বড় মিঞার শারীরিক অবস্থা কিছুটা উন্নতি হলে সব গুছিয়ে শৌখিন সহ বাড়ির সবার কাছ থেকে বিদায় নেয়।তবে শানকে বাড়িতে বা মোবাইলে পাওয়া যায় না।অবশেষে শানের দেখা না পেয়ে ইমার পরিবার গ্রামে চলে গেছে আজ।ইমার মা, ফুপু,চাচী এসেছিল দেখা করে গেছে।ইমাকে বুঝিয়ে ইরার হাত ধরে ওকে দেখে রাখার জন্য বলে গেছে।ইরার মাথার উপর আজ বিশাল দায়িত্ব। একদিকের বোনের কষ্ট অন্যদিকে এ বাড়ির মানুষের নিরবতা।
ইমার জ্বর গতকালকের চেয়ে আজ একটু কম।তবে শরীরে প্রচুর ব্যথা রয়েছে।ডাক্তার এসে দেখে ওষুধ লিখে দিয়ে গেছে।সানাকে নিয়ে ইরার সমস্যা বেশি হচ্ছে। মেয়েটা খাচ্ছেই না কিছু।অনেক বলে দুধ খাবে বলে রাজি করেছে ইরা।ইরা রান্নাঘরে সানার জন্য দুধ গরম করছিল।সমস্ত টেনশনে এতোই বেখেয়ালি হয়ে পড়েছিল যে দুধ উপচে পড়ে গেলেও টের পায়নি।শৌখিন রান্নাঘরের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় এ অবস্থা দেখে ছুটে এসে চুলা বন্ধ করে।
” ইরা!
ইরা হকচকিয়ে ওঠে।
শৌখিন ইরার গালে হাত রেখে বলে
” এতো চিন্তা করো না তো।সব ঠিক হয়ে যাবে”
” শৌখিন! আমার মাথায় কাজ করছে না।শান ভাই কাল সকালে যে বের হলো আর ফিরলো না।সানা কথা বলে না, খায় না।ইমা কেঁদেই যাচ্ছে।মেয়েটার শরীর ভালো না। ”
” সব ঠিক যাবে। সময় সবার কষ্ট কম করে দেয়।একটু সময় দাও ওদের।”
ইরা শৌখিনের বুকে মাথা রেখে বলে
” তাই যেন হয়।সব আগের মতো হাসি খুশি।”
আজ তিনদিন গত হলো শান এ বাড়ি আসে না।সাভারের বাংলো বাড়িতেই থাকে।সাভারের এই বাংলোতেই শান ইমার বিয়ে হয়েছিল।সেখান বসেই নিজের সকল কাজ করছে শান।ইমা এখন অনেকটা সুস্থ।শরীর ম্যাজম্যাজ করায় বিছানা ছেড়ে উঠে ওয়াশরুমে যায়।ওয়াশরুমটা ইমার একদম পছন্দ না।শক্ত কাঁচের দরজা দিয়ে ভেতরের সব অস্পষ্ট হলেও দেখা যায়।গোসল, বাথরুম করলেও লজ্জা লাগে।তারপর আবার কমোড সিস্টেম বাথরুম যা কিনা ইমা কোনোদিন ব্যবহার করে নি।বাংলোতেও ছিল কিন্তু ইমা ওটা ইউস করতো না।নরমালটাই ইউস করতো।ইমার এই নতুন পরিবেশে এডজাস্ট হতে বেগ পেতে হচ্ছে। কিন্তু কি আর করার? মেয়ে মানুষ হলেই এডজাস্ট করাটা তার জন্য বাধ্যমূলক।বাপের বাড়িই কতোকিছু এডজাস্ট করেছে আর এটাতো পরের বাড়ি।ইমা গোসল শেষে তোয়ালে জড়িয়ে বের হতেই জমে মূর্তি হয়ে যায় লজ্জায়। সামনে বিছানার উপর খালি গায়ে শুধু থ্রি কোয়াটার প্যান্টে বসে আছে শান। জানালার দিকে হাত মুঠ করে।
ইমা কি করবে এখন? না পারছে দৌড়াতে না পারছে লুকাতে।এই মানুষটা কখন আসলো? ইমা নিজের মনে নিজেই আবোল তাবোল বকতে থাকে মাথা নিচু করে।
লজ্জায় আঙুলে আঙুল ঠেসে মাথা নিচু বুকের উপর হাত রেখে দাড়িয়ে আছে ইমা।শান একপলক ইমার দিকে তাকিয়ে এগিয়ে আসলো।ইমার শ্বাসরুদ্ধ হওয়ার উপক্রম শানকে এগোতে দেখে।চোখ খিচে বন্ধ করে আছে।ওয়াশরুমের দরজা টানার শব্দ পেয়ে ইমা চোখ খুলতেই সামনে পেছনে শানকে দেখে না।উঁকি দিয়ে শানকে ওয়াশরুমে গোসল করতে দেখে বুকে থু থু দিয়ে আয়াতুল কুরসী পড়তে থাকে।আলমারি থেকে কাপড় বের করে তাড়াতাড়ি পড়ে নেয়।ইমার হাত পা থরথর করে কাঁপছে শানকে দেখে।এক রুমে কী করে থাকবে এই হিটলারের সাথে সেটা ভেবে জ্বরটা মনে হয় আরও বেড়ে যাচ্ছে। বিছানার এককোনে চুপচাপ মাথা নুইয়ে বসে আছে ইমা।বেশ কিছুক্ষন পর শান ভিজে চুল নাড়াতে নাড়াতে খালি গায়ে তোয়ালে পেচিয়ে বের হয়ে আসে।আলমিরা খুলে এক তাকে ইমার কাপড় দেখে চিৎকার করে ইরাকে ডাকতে থাকে।শানের আচমকা চিৎকারে ইমা সটান হয়ে বিছানা ছেড়ে দাঁড়ায়।ঢোক গিলে আতঙ্কিত চোখে সেদিক তাকায়।শান ইমার দিকে কঠিন দৃষ্টিতে তাকিয়ে আরও জোর গলায় ডাকে।
একজন গৃহপরিচারিকা এসে দরজায় দাড়িয়ে জানায় ইরা শৌখিনের সাথে বাইরে গেছে।
শান রেগে বলে
” এই মুহূর্তে আমার সব কাপড় নিয়ে ওয়াশিং মেশিনে দাও। আর এক ঘন্টার মধ্যে নতুন আলমিরা আর সোফার ব্যবস্থা করো।বিছানার সব চেঞ্জ করে নতুন বেডশিট পারো।ইরা কেন বলে নি আমার জিনিস ব্যবহার করা আমি পছন্দ করি না।”শান সবার উপরের তাক থেকে একটা কালো টিশার্ট আর প্যান্ট নিয়ে দরজা ধাম করে লাগিয়ে বের হয়ে যায়।
ইমা এবার বেশ বুঝতে পারলো শানের চিৎকারের রহস্য। রাগে দাঁত কিড়মিড় করে বলে,
” হারামি হিটলার! বিয়ে কইরা নাটক করো।তোর জোর করে বিয়ে করার স্বাদ আমি যদি মিটাই না দিছি আমিও বরিশালের মেয়ে না।হু!”
চলবে,,,,