তোমার আকাশে হব প্রজাপতি
পর্ব ০৭+৮+৯
Writer Tanishq Sheikh
শান রুমে এসে পান্সিং ব্যাগে পান্স করছিল। সমস্ত গায়ের শক্তি দিয়ে বস্তুটাকে আঘাত করছে।শরীরের শক্তি অপব্যয়ে ঘেমে শরীর চপচপে হয়ে গেছে শানের।
“-আচ্ছা তাহলে ইমাকে পান্সিং ব্যাগ বানিয়ে ফেলেছ?
সানার গলার আওয়াজে শান দাঁতে দাঁত চেপে চোয়াল শক্ত করে আরো জোরে ব্যাগটাকে পান্স করে।সানার দিকে না তাকিয়েই বিছানার উপর থেকে তোয়ালেটা নিয়ে বলে
“- তুই আমার রুমে কেন এসেছিস?আমার রুমে আসার হক তুই হারিয়ে ফেলেছিস।চলে যা রুম থেকে।
সানা শানের কথা উপেক্ষা করে শানের সামনে গিয়ে দাঁড়ালো।
“- কেন মেয়েটার ফিলিংস নিয়ে খেলছ ভাই?
ওর কি দোষ?
শান তোয়ালে বিছানায় ছুড়ে ফেলে সানার দুবাহু চেপে ধরে হুঙ্কার করে ওঠে,
“- ওর কি দোষ? সব ওরই দোষ।এসব মেয়েরাই অন্যের সুখ ছিনিয়ে নেয়।অন্যের সাজানো গুছানো সংসারে ভাঙন লাগায়।সাথে নিজের সংসারও ভাঙে।ভাইয়ের শেষ কথা শুনে ভাইয়ের চোখে চোখ রেখে ভয়ে শিওরে ওঠে।সানা বুঝতে পারে মাকে ইঙ্গিত করেই শান কথাটা বলেছে।কিন্তু সব মেয়ে ওদের মা রুবি আমিনের মতো না।সানার বাহু ব্যথায় টনটন করছে।সানা ব্যথা হজম করে কাঁদো কাঁদো গলায় বলে,
“- ভাই ভুল ভাবছ তুমি।ও তো এসব জানেও না।আবির খুব চালাক ভাই।মেয়েটা নিজেও আবিরে কাঁটাতারে আটকে যাওয়া প্রজাপতি।
শান মুখ আরও কঠিন করে সানার হাত ছেড়ে সানাকে ধাক্কা দিয়ে ঘুরে দাঁড়ায়।কোমরে হাত রেখে জোরে জোরে নিঃশ্বাস নিয়ে আবার ঘুরে দাঁড়ায় সানার দিকে।আঙ্গুল তুলে চোখে আগুন জ্বালিয়ে বলে,
“-ও জানুক না জানুক তবুও দোষ ওরই কেন জানিস? কারন ও আবিরকে ভালোবাসে।আবিরকে আমি মেরে ফেলতে চেয়েছিলাম।কিন্তু তাতে কি হবে?ধোঁকা দেওয়ার শাস্তি তো পাবে না।আবিরকে আমি তিলে তিলে মারবো কঠিন মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করাবো।
সানা ভীতুস্বরে আবার টেনে টেনে বলে
“-তু-মি-ও- তো ধো-কা দিচ্ছ ইমাকে।
শান মুখ ঘুরিয়ে বিছানার উপর বসলো।
“-আমি কাওকে ধোঁকা দেই নাই।
“- তুমি মিথ্যা বলছ। আমি সব দেখেছি ভাই।তুমি ছাঁদে ওর দিকে যেভাবে তাকিয়ে ছিলে।ঐদিন খাবার টেবিলেও তোমাদের দুজনের চাহনিতে কিছু ছিল।
“-সানা তুই এখান যা!শান মুখ মুছতে মুছতে রূঢ় স্বরে বলে। সানার আজ ভয় করলেও ভাইকে সর্বনাশা খেলা বন্ধ করাবে বলে ভাইয়ের মুখের উপর বলে,
“- কেন যাবো? আমার প্রশ্নের জবাব না নিয়ে আমি যাবো না ভাই।
শান তোয়ালে ফ্লোরে ছুড়ে মেরে চোখ মুখ হিংস্র করে তেড়ে যায় সানার দিকে।
“- কি জানতে চাস? হ্যাঁ বলেছি মিথ্যা।করেছি ধোঁকা।কিন্তু এটা ওর প্রাপ্য।ওর জন্য আমার বোন ধোঁকা খেয়েছে।ওর জন্য শান নিহান খান তার কলিজার টুকরার গায়ে হাত তুলেছে।আবির ওকে কেন পছন্দ করলো?কেন তোকে ধোঁকা দিল।আবিরকে শিক্ষা দেওয়ার জন্য ওকে যে হাতিয়ার বানাতেই হবে।আবিরকে আমি বুঝিয়ে দেবো ইনফ্যাক্ট ওদের দুজনকেই বুঝিয়ে দেবো ভালোবাসায় ধোঁকা খেলে কেমন লাগে?এই টুকু শিক্ষা দেওয়ার জন্য ধোঁকা দেওয়াটা, মিথ্যা বলাটা অবসম্ভাবি।আচ্ছা যা তোকে একটা সুযোগ দিলাম ওকে গিয়ে বল এই আবিরের জীবন থেকে সরে দাঁড়াতে।যদি সরে তো ভালো নয়তো আবিরকে শিক্ষা দেওয়ার জন্য ওকে আমি হাতিয়ার বানাবোই।আবিরের মতো ধোঁকাবাজ চরিত্রহীনকে ভালোবাসার জন্য এই টুকু পুরুষ্কার ওকে পেতেই হবে।শুনেছিস এবার যা।
সানা ভাইয়ের কথা শুনে স্থির দৃষ্টিতে চেয়ে রইল।ওর ভাই এমনই একরোখা।একবার যা ভেবে নেবে সেটা করেই ছাড়বে।হোক সেটার পরিনাম ভালো বা খারাপ।কতোবড় অনাসৃষ্টি হতে চলছে ভেবেই গায়ে কাটা দিয়ে উঠলো সানার।অশ্রুসিক্ত নয়নে ভাইকে অনুনয় করে বললো।
“- ভাই ভুল আমি করেছি।তোমার বিশ্বাস ভেঙেছি,তোমাকে কষ্ট দিয়েছি।তার শাস্তি অন্য কাওকে দিও না।আবির যা করেছে ঠিকই করেছে।আমি তোমাকে তোমার বিশ্বাস, ভালোবাসাকে অমর্যাদা করেছিলাম আর ও আমারটা করেছে।আমার পাপের শাস্তি আমি পেয়েছি ভাই।তোমাকে আমি এই পাপ করতে দেবো না।কারো মন ভাঙা মসজিদ ভাঙার সমান।পরকালে এর হিসাব দিতে হয় ভাই।তুমি ইমার মন ভেঙে পাপ করো না।ও বেচারীও মরবে তুমিও জ্বলে পুড়ে মরবে আমার মতো।ওদেরকে ওদের মতো ছেড়ে দাও।
শান ঠোঁট একপাশে করে হাত মুঠ করে ঠোঁটের উপর রেখে অবাক হওয়ার ভঙ্গি করে।তারপর ঘারে হাত ম্যাসাজ করতে করতে দাঁতে দাঁত চেপে বলে
“-বাহ! আমার সানার তো সুবুদ্ধি হয়েছে। কিন্তু দেরিতে সানা।অনেক কিছু পরিবর্তন হয়ে গেছে।তোর ভাইয়ের বিশ্বাস টুকরো টুকরো করেছিস তুই।কিছু শাস্তি তো তোরও প্রাপ্য। ওদেরকে ওদের প্রাপ্য শাস্তি দেব আর তুই ওদের শাস্তি চোখের সামনে দেখে শাস্তি পাবি।জীবনে দ্বিতীয়বার আমাকে কষ্ট দেওয়ার কথা ভাববি না।
“- তুমি অনেক নিষ্ঠুর ভাই।অনেক।এতো পাষান হতে নেই ভাই।
“- হ্যাঁ আমি পাষান! অনেক নিষ্ঠুরও এটা নতুন কিছু না।তুই সব জেনেও কেন এই ঘুমন্ত নেকড়েকে জাগালি বল?আমার বিশ্বাস, সম্মান নষ্ট করার দায় তোদের নিতে হবে সানা।অবশ্যই নিতে হবে।শান নিহান খান নিজে শান্তি না পেলে কাওকে শান্তিতে থাকতে দেবে না।কোনোদিন না।সানার চোখের সামনে আঙুল তুলে শাসিয়ে বলে শান।
সানা মুখে হাত চেঁপে কান্নার শব্দ আঁটকে হিচকি তুলে ছুটে বের হতে যায় তখনি পেছন থেকে শান ডেকে ওঠে,
“- আর হ্যা!এসব কথা যদি তৃতীয় কেউ জেনেছে মনে রাখিস তোর ভাই মানুষ কম জানোয়ার বেশি।ভুলে যাবো তুই আমার বোন।যা! শান চিৎকার করে বলে শেষ কথাটা।সানা ছুটে রুমে এসে বালিশ চাপা দিয়ে কাঁদে। চোখের সামনে ১ বছর আগের ভুলটা সূচ হয়ে বিঁধে।একটা ভুলের জন্য আজ দুটো জীবন নষ্ট হওয়ার পথে।আবির ভার্সিটির সিনিয়র ছিল।ভার্সিটিতে আসতে যেতে প্রায় সানার সাথে চোখাচোখি হতো।এতো ছেলে থাকতে আবিরের সাথেই কেন এমন হয় সানা বুঝে উঠতে পারতো না।ক্রমশ দৃষ্টিবিনিময় একসময় মন বিনিময়ে রূপান্তরিত হয়।প্রথম সেমিস্টার শেষের দিনে আবিরই গোপনে ডেকে প্রপোজ করে।সানা নিজের ভাইকে ভালো করে জানতো তাই আবিরের প্রপোজ সেদিন প্রত্যাখ্যান করে।কিন্তু মনে মনে ঠিকই আবিরকে চেয়েছিল সানা।আবির কোথা থেকে সানার মোবাইল নাম্বার এফবি একাউন্ট সব জোগার করে টেক্সট, কল দিয়ে নিজের মনের হালচাল বলতো।আবিরের ভালোবাসার পাগলামীতে সানা ক্ষনিকের জন্য ভাইয়ের হিংস্র রূপের কথা ভুলে গেল।ভেঙে দিল বোনের প্রতি শানের অগাধ বিশ্বাস। যখন সানার হুশ ফিরলো অনেক দেরি হয়ে গেছে।সানা তখন আর নিজের নেই আবিরের হয়ে গেছে।ফিজিক্যালি, মেন্টালি সব দিক দিয়ে।আবিরের মিথ্যা ভালোবাসার মোহে পরে স্বর্বস্ব খুইয়ে পরিনতির কথা চিন্তা করে আবিরকে অনুরোধ করে পালিয়ে কোথাও চলে যাওয়ার জন্যে। আবিরও রাজি হয় প্রথমে।কিন্তু আস্তে আস্তে দূরত্ব তৈরি করে আবির।ভুলে যায় সানাকে।সানার জায়গায় নিয়ে আসে ইমাকে।সানা অনেক চেষ্টা করেও আবিরকে ফেরাতে পারে না।ক্রমেই সানা বুঝতে পারে ছোট বেলায় বলা ভাইয়ের কথাগুলো।”সানা! আমি ছাড়া তোর কেউ আপন নেই।কাওকে বিশ্বাস করবি না তুই।আমি যাকে বলবো তাকেই ভরসা করবি।এই পৃথিবী এই সমাজ তোর মতো সহজ সরল মেয়েদের জন্য শ্বাপদসঙ্কুল।ভাই ছাড়া অন্য কারো উপর ভরসা করবি না কথা দে?
সানা সেদিন দিয়েছিল কথা কিন্তু সে কথা রাখতে পারে নি।বাপ মায়ের আদর ভালোবাসা দিয়ে যে ভাই বুকে আগলে বড় করলো।এতো ভালোবাসলো তাকেই সানা ধোঁকা দিয়েছে কষ্ট দিয়েছে।যার শাস্তি নিজেও স্বর্বস্বান্ত হয়ে পেয়েছে।আজ না ভাইয়ের চোখে ভালোবাসা আছে সানার জন্য, না সম্মান।নিজে শেষ হয়ে গেল ভাইকেও সর্বনাশা খেলায় ঠেলে দিল।সানা ভবিষ্যত বিপদের কথা ভেবে ডুকরে কেঁদে ওঠে।
ইমা বসে বসে উপন্যাস পড়ছিল তখন মৃদুল হুমড়ে এসে ইমার গলা জড়িয়ে ধরলো।
“- ইমা আপু!
“- হুমম! বইয়ে মনোযোগ দিয়েই জবাব দিল ইমা
“-ইরা আপুর শ্বশুরবাড়ির পিছে নীলা নীলা পুষ্কনী আছে।ওরে খোদা! কি যে সুন্দর। মুই তো একসের টাস্কি খাইয়া গেছি।
ইমা বইয়ের পাতা থেকে মুখ উচিয়ে অবাক হওয়ার ভান করে মুচকি হেসে বলে
“- ও মোর আল্লাহ সত্যি?
“- এক্কালে ১০০%।চলো না মোরা দুইজন এট্টু ডুব দিয়ে আহি।কতো দিন হইতে আছে ডুব মাইরে গোসল করতে পারতে আছি না।পরান ডা কেমন কেমন করে।চলো না।
“- আরে মনু পরের পুষ্কুনীতে যাইতে হইবে না।মাইষে খারাপ কইবে।
“- আরে খারাপ কইবে ক্যা? একটা ফাল দিয়ে ডুব দিয়াই চইলা আমু।চলো না।মৃদুলকে বুঝিয়েও বুঝাতে পারলো না।অবশেষে নিরুপায় হয়ে গেল শানের সুইমিংপুলে।দুপুর টাইম আশেপাশে কেউ নাই।মৃদুল লাফ দিয়ে ডুবাচ্ছে আর খুশিতে বলছে
“- ও মোর সুবহানাল্লাহ! ও ইমাপু একবার ডুব দিয়াই দেহো সেই মজা।নীলা নীলা পানি হাত দেহা যায় পা দেহা যায়।আরে কি মজা রে?ইমা সুইমিংপুলের পাড়ে দাড়িয়ে মুচকি হাসে মৃদুলের কথা শুনে।
“- বাহ! আজকাল তো চোখের আড়ালই হচ্ছ না তুমি।এভাবেই চোখে চোখে থাকো পছন্দ থেকে ভালোবাসা দ্রুতই হয়ে যাবে।
ইমা শানের গলার আওয়াজে মুচকি হেসে পেছন ঘোরে।শান বাজের মতো ক্রুর দৃষ্টিতে ইমাকে দেখতে দেখতে এগোতে থাকে।ইমার ঠোঁটের হাসি দেখে কপালে কিঞ্চিৎ ভাঁজ পড়ে শানের।শান কাছাকাছি আসতেই ইমা মুখ ঘুরিয়ে জলের দিকে তাকায়।শানও ইমার দৃষ্টি ফলো করে ইমার হাসির রহস্য উদঘাটনের জন্য।কিছু বুঝে ওঠার আগেই ইমা হুট করেই শানের পেছনে গিয়ে শরীরের শক্তির দ্বিগুন জোর খাটিয়ে শানকে ধাক্কা দিয়ে সুইমিংপুলের জলে ফেলে দেয়।মৃদুল ভয়ে তাড়াতাড়ি সুইমিংপুল ছেড়ে উঠে যায়।বোনের এমন কাজে সে বিস্ময়ে বিমূঢ় হয়ে দাড়িয়ে থাকে।শান খুব চালাক হলেও শানের সিক্স সেন্স বা সেভেন সেন্স ইমার এমন সাহসী কাজের আগাম সতর্কতা সংকেত দেয় নি।ফলে এই অপমানজনক পরিস্থিতিতে পড়ে স্বভাবতই এটিটিউড হিরোর ইগো দারুন হার্ট হয়।জলে দাড়িয়ে দাঁত চেঁপে ভেতরে ভেতরে রাগে গজগজ করে শান।ইচ্ছা তো করছে ইমাকে এই জলেই চুবিয়ে মারতে।এতো সাহস! এতো সাহস এই মেয়ের।
শানের মুখ চোখের কঠিন অবস্থা দেখে ইমা হি হি হি করে হেসে মুখ ভেংচে কঠিন স্বরে বলে।
“-উৎপাতের কড়ি চিৎপাতে যায়।আপনার ক্ষেত্রে প্রবাদটা একটু ঘষেমেজে বলি। উৎপাতের কর্ম চিৎপাতে যায়।নেক্সট টাইম আমার সামনে ভাব দেখাতে আসবেন না।মনে রাখবেন ইমা বরিশালের মেয়ে।আপনি এক লেভেল করবেন আমি দুইলেভেল করে দিবো। সমানে সমান ফেরত দেই আমরা।সেটা ভালো হোক আর খারাপ।মৃদুল চলে আয়।ইমা রাগে মুখ ঝামটা দিয়ে মৃদুলকে নিয়ে চলে গেলো।শান ইমার যাওয়ার দিকে বাজের দৃষ্টিতে তাকিয়ে কপালে আঙুল ঘষতে ঘষতে চোয়াল শক্ত করে মুচকি হাসে। বলে
“- আই লাভ ইট ব্রাইড! খেলা তো সেয়ানে সেয়ানেই জমে বেশি।অনেষ্টলি!এতোক্ষন মজা পাচ্ছিলাম না খেলাটাই।থ্যাংকস ফর দিস পান্স।এখন জমবে খেলা।বি রেডি বরিশাইল্লা ব্রাইড।
ইমা যেতে যেতে শানের কথা শুনে দাত মুখ পিষে ইইউ বলে মাটিকে পা দিয়ে আঘাত করে বকতে বকতে রুমে চলে আসে।
পর্ব ০৮
Writer Tanishq Sheikh
বড় মিঞা আফতাব ক্লান্ত মলিন মুখে নিজের থাকার রুমটাই বসে আছে।গত দু’রাত ভালো করে ঘুমাতে পারছেন না তিনি।পূর্বপুরুষদের স্মৃতি বিজড়িত কয়েক বিঘে জমি বিক্রি করতে হলো ২০ লাখ টাকার জন্য।গায়ে শত্রুর অভাব নেই।যেই না শুনেছে মিঞা বাড়ির লোক জমি বিকবে।ওমনি পিঠপিছে নিন্দা করা টাকাওয়ালা লোকরা হুমড়ে পড়েছে জমি কেনার জন্য। বিপদের সময় কিছু বিকতে গেলে তার আসল ভাও দর কমে যায়।যে জমির দাম শতকে ৩০/৪০ হাজার তাই ১০/১৫ তে ছাড়তে হলো।মিঞা সাহেব গম্ভীর স্বভাবের সম্মানিত মানুষ।দাম দর করাটা তার সাজে না।আর তাছাড়া সম্মানের সাথে মেয়ে পাড় করতে গেলে কতোকিছুই গলধঃকরন করতে হয়।ইরার বিয়ের সময় যদিও এতো প্যারা নিতে হয় নি।কিন্তু ইমার ক্ষেত্রে খুবই ঝক্কি পোহাতে হচ্ছে মিঞা সাহবকে।মেয়ের হবু শ্বশুরবাড়ির কুটুম বলে তাদের সব আবদার মাথা পেতে মেনে নিচ্ছেন।মিঞা বাড়ির মেয়ে এ যুগের মেয়েদের মতো নয়।একটা একটা ঝিনুকে লুকানো মুক্তার সমান।সেই মুক্তাগুলোকে কি করে যেনে তেনে সঁপে দেবেন? তাই তো বন্ধুর ছেলের হাতেই মেয়েটাকে তুলে দিচ্ছেন।আবিরের বাবা রফিকুল ইসলাম বড় মিঞার ছোটবেলার বন্ধু।একসাথে স্কুলে গেছেন।গলাগলি করে ঘুরেছেন।বন্ধুর উপর তাই অগাধ বিশ্বাস মিঞা সাহেবের।এই বিশ্বাসের জেরেই সযত্নে আগলে রাখা মুক্তাকে নিশ্চিন্তে দিয়ে দিচ্ছেন। বিনিময়ে বাপ দাদার স্মৃতিও বেচতে হলে বেচবেন তবুও পরিবার বংশে কালি লাগতে দেবেন না।বড় মিঞা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে চোখ বন্ধ করলেন।আজকাল নিঃশ্বাস টানলেই বুকের বা’পাশে মোচড় দিয়ে ওঠে।ইমার বিয়ের দায়িত্বটা ভালোই ভালো হয়ে গেলে ডাক্তারের কাছে যাবেন বলে মনস্থির করে বিছানায় গা এলিয়ে দেন।দরজার আড়াল থেকে ভাইয়ের মুখে চিন্তার ছাপ দেখে ইমন মিঞার কলিজা হু হু হু করে।পিতৃসমান ভাইকে এতোটা চিন্তিত পিতারমৃত্যুর পর দেখেন নি।ইমন মুখ নিচু করে ঘরে এসে বসে।আয়শা স্বামীর মুখের মলিনতা দেখে পাশে বসে জিজ্ঞেস করে,
“-কি হয়েছে?
ইমন মিঞা বউয়ের প্রশ্নের জবাবে কিছুই বলে না।শুধু ফ্যালফ্যাল করে চেয়ে থাকে।আয়শা স্বামীকে এভাবে অন্য মনস্ক হতে দেখে স্বামীর হাতে নাড়া দিয়ে উদ্বিগ্ন স্বরে বলে
“- এমন করছেন কেন? বলেন না কি হয়েছে?
“- অহনের মা! আল্লাহ আমাদের ঘরে কন্যা না দিলেও পারতো তাই না?
স্বামীর কথা শুনে আয়শা বিস্মিত হয়ে মুখে আঁচল ঢেকে বলে
“- আসতাগফিরুল্লাহ! এমন কথা কন কেন? আল্লাহ নারাজ হইবে তো? মাইয়্যা আল্লাহর দেওয়া রহমত অহনের আব্বা।
“-এমন রহমত আমার চাই না অহনের মা।যেই মাইয়্যা পাড় করতে আমার স্বর্বস্ব খুয়াতে হইবে।ভাইজানের মুখটা দেখছ? শুকাইয়া এট্টু হইয়ে গেছে।এমন করে কেন মাইনষে? মাইয়্যা রহমত তাইলে সেই রহমত নিতে এতো কিছু চাই ক্যা মাইনষে? কেউ আল্লাহ রাসূলের কথা মানে না অহনের মা।মানলে আজ আমার মতো পিতার, মাইয়্যা থাকার কারনে অপদস্থ হতে হইতো না।আমার ভাইজানের মাথা নিচু হইতো না।
ইমন মিঞা ডুকরে কেঁদে ওঠে বাচ্চা শিশুর মতো।আয়শাও অসহায়ের মতো স্বামীকে স্বান্তনা দিতে দিতে কাঁদে।
ইমা বিছানার উপর বসে পায়ে আঙুল দিয়ে বিছানায় খোঁচাচ্ছে রাগে।মৃদুল ভেজা কাপড় ছেড়ে ইমার পাশে বসে কৌতুহল ধরে রাখতে না পেরে বলেই ফেলে।
“- ও ইমাপু! তুই ঐ ভাইয়ের লগে এমন করলা ক্যা? হে তোমার কি করছে? হেরে পানিতে ধাক্কা মারছো ক্যা?
ইমা রেগে মৃদুলের দিকে তাকাতেই মৃদুল বিছানা ছেড়ে দাড়িয়ে যায়।মুখে বোকা বোকা হাসি এনে বলে
“- আমি কাউরে কমু না তোমার কথা।এহন আমি যাই
ইমা চোখের ইশারায় মৃদুল কে যেতে বলে দরজা লাগিয়ে বিছানায় উপুড় হয়ে পড়ে। ঝুপঝাপ বৃষ্টি আসার পূর্ব মুহুর্তে আকাশের যেমন থমথমে ভাব থাকে। ইমা মুখটাও তেমন হয়ে আছে।শানের উপর চরম বিরক্ত ইমা।এই মুহুর্তে কোনো অলৌকিক শক্তি থাকলে শানকে ঠিক খুন করে গুম করে ফেলতো।মেয়েরা মনে মনে খুশিই হয় যদি কোনো পুরুষ বলে তোমাকে আমার পছন্দ হয়েছে কিন্তু যখন উত্ত্যক্তের পর্যায়ে চলে আসে পছন্দের মাত্রা। তখন সেটা সত্যি অসহ্য এবং কষ্টের কারন হয়ে দাঁড়ায়। শান পুরুষ হিসেবে যে কোনো রুচিশীল নারীর পছন্দসই ছেলে।ইমার মনের এককোনেও তাই ছিল।ইরা আপুর বিয়ের সময় সব মেয়ের মতো ইমারও নজর কেড়েছিল শানের গাম্ভীর্য্যওয়ালা ভাব।সব মেয়েই চাই এমন একটা সুন্দর পুরুষ যে অন্য নারীর দিকে চোখ তুলেও দ্বিতীয়বার তাকাবে না।ইরার বিয়ের সময় শানের আশেপাশে সুযোগ পেলেই ইমা এটা সেটা দেওয়ার নামে যেতো।শান ফিরেও দেখতো না ওদের।ইমার সেজন্য আরও বেশি শানকে ভালো লাগতো।কিন্তু এখানে এসে ইমার সেই ভালোলাগা ঘৃণায় পর্যবসিত হয়েছে।ঘৃণা হয় শানকে দেখে।ইমা নিজেও জানে কেন ঘৃণা করে আদৌও কি ঘৃণা নাকি রাগ? ইমার মন দোটানায় পড়ে শানের আচরণে।একেতো আজ বাদে কাল বিয়ে তারউপর এই লোকের মানসিক অত্যাচারে ইমা হতবুদ্ধি হয়ে পড়েছে।পছন্দের মানুষ অপছন্দের ক্যাটাগরিতে গেলে কি এক বিষম বেদনা জাগে তা ইমা বুঝতে পারছে হাড়ে হাড়ে।
মোবাইলে টাইটেনিক মুভির এভরি নাইট ইন মাই ড্রিম সং টার টিউন বাজতেই ইমা চিন্তা অবমুক্ত করে মোবাইলের স্ক্রিনে চোখ দিতেই উঠে বসে।মোবাইল রিসিভ করতে ইচ্ছা করছে না ইমার আবার কাটতেও ইচ্ছা করছে না।কি এক জ্বালা এই দোটানায় উফ!
কল রিসিভ করে চুপচাপ বসে থাকে ইমা।
“- হ্যাঁলো! ইমা কেমন আছো?
ইমা দাঁত কিড়মিড় করে বলে
“- সালাম দিয়ে কথা বললে কি আপনার জাত চলে যাই আবির?
“- এতো রেগে আছো কেন?ভুলে গেছি।আচ্ছা নেক্সট টাইম দেব।এখন বলো আমার হবু গুলুমুলু বউটা কেমন আছ? ইমা পরমুহূর্তে আবিরের কথায় নিজেকে সংযত রাখে।নিজেই নিজের বলা কথায় লজ্জিত হয়।
“- সরি! আসলে মনটা খারাপ তাই আপনার সাথে রেগে কথা বলে ফেলেছি।মাফ করে দেবেন?
“- ইটস ওকে সোনা বউটা আমার।আচ্ছা শোনো না কি ভাবছিলাম জানো?
ইমা নিরস গলায় জবাব দেয়,
“- কি!
“- ইমা তুমি এতো আনরোমান্টিক কেন বলো তো?
“- আবার কি করলাম? সরি
“- জানোই না কি করেছ? আবার সরিও বলছ?পুরাই আজব তুমি।যা বলছিলাম, আমেরিকা থেকে ভিসা পাঠাচ্ছে। এখন টাকার সংকট একটু, তাই শুধু আমারটায় পাঠাচ্ছে আমি কিছুদিন গিয়ে বসি তারপর তোমাকেও নিয়ে যাবো।জানো আমার ইচ্ছা আমরা সামারে ওখানকার গ্রাম গুলোতে ঘুরবো।দারুন পরিবেশ আমি সিওর তোমার খুবই ভালো লাগবে।তখন শুধু তুমি আর আমি।২০ লাখ টাকাটাও যদিও এরেঞ্জ হয়ে যেত তাহলে দুজন একসাথেই যেতাম।কথাটা বলে আবির একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো।ইমা এতোক্ষনে বুঝতে পারলো আবিরের অসময়ে কল করে এতো গল্পের কারন।এরা মা ছেলে দুটোই এক।গল্পে গল্পে হুট করে আবদার করে বসে।ইমা শান্ত নমনীয় হলেও আবিরের এতো ধূর্ততায় খুবই কষ্ট পায়।আত্মসম্মানে লাগে।আবির আরও অনেক কথা বলে কিন্তু ইমার জ্ঞান হুশ ঐ টাকা চাওয়াতেই সীমাবদ্ধ থাকে।ইমা মনে মনে আবিরের একটা টেস্ট নেওয়ার চিন্তা করে।তারপর বলে
“- আবির একটা কথা জিজ্ঞেস করি?রিয়েক্ট করবেন না কথা দিন।
আবির একগাল হেসে বলে
“- তোমার কথায় কি আমি রাগ করতে পারি বলো? কি বলতে চাও নিঃসংকোচে বলো।
ইমা কিছুটা ইতস্তত হয়ে একসময় মুখ ফুটে বলেই ফেলে।তবে এই বলাটা ইমার মতো মেয়ের জন্য সহজ না।মনের ভয়কে জয় করে বলল
“-আবির বিয়ের একদম পূর্ব মুহুর্তে টাকাটা না চাইলেই কি হতো না?
আবির ইমার কথাটা শেষ না করতে দিয়ে তেজে বলে উঠলো
“- এই ইমা? কি বলতে চাচ্ছ তুমি? তোমাদের কাছে কখন টাকা চেয়েছি আমরা? তোমাদের সাথে আমাদের একটা পারিবারিক সম্পর্ক গড়ে উঠছে সেই প্রেক্ষিতে আম্মু দুখ সুখের আলাপ করতে গিয়ে কথাটা বলেছে।তাই বলে কি টাকা চেয়েছে? ছি! এতো নীচ তোমার ভাবনা।অথচ আমি আমার পরিবার তোমার সম্পর্কে কতো ভালোই না চিন্তা করতাম।
ইমা আবিরের রিয়েক্ট দেখে কিছুটা ভয় পেয়ে যায়।
“- আবির প্লিজ শান্ত হোন। আমরা দুদিন পর স্বামী স্ত্রী হবো।এই টুকু কথা তো শেয়ার করতেই পারি আপনাকে।আমি ভুল বললে আপনি বলেন ইমা এসব মিথ্যা আর বলো না।বুঝান আমাকে? প্লিজ শুধু রিয়েক্ট করবেন না।আমি আপনার টেস্ট নিচ্ছিলাম কিন্তু আপনি তো,,ইমার মনটা খারাপ হয়ে গেল আবির রিয়েক্ট করায়।
আবির আগের চেয়ে দ্বিগুণ রেগে জবাব দিল
“- এতো নাটক করো না তো? স্বামী স্ত্রী হবো তাই বলে তুমি আমাকে আমার পরিবারকে ছোট করতে পারো না।
“- আবির আমি কাওকে ছোট করছি না।আমি শুধু আপনার হবু স্ত্রী হিসেবে নিজের কষ্টের কথাগুলো শেয়ার করতে চাচ্ছিলাম।আপনি ছাড়া আমি আর কার কাছে এসব শেয়ার করবো বলো? বড় আব্বা, আব্বা ২০ লাখ টাকা যোগারের জন্য ঢাকা বরিশাল দৌড়াচ্ছে।এতো কষ্ট করে মেয়ে বড় করে বিয়ের সময় নিজেদের বাপ দাদার পৈতৃক সম্পদ বেঁচে মেয়ে পাড় করতে হচ্ছে তাদের।আমার জন্য কতোটা কষ্টের আবির বোঝেন আপনি?
আবির একটু থেমে নরম গলায় বললো
“- দেখো এসব বড়দের বিষয় আমাকে এর মধ্যে টানবে না।আমি বাবা মায়ের বাধ্য সন্তান। তারা যা বলবে তাই করবো।
“- আচ্ছা! তাহলে তারা যদি আমাকে ছেড়ে দিতে বলে ছেড়ে দেবেন আপনি? বলুন আবির।আমার কঠিন সময়ে আপনি পাশে থাকবেন না।আপনি আপনার স্ত্রীর মনের কষ্ট লাগব করার চেষ্টা করবেন না? আমাকে চিন্তায় দেখতে আপনার ভালো লাগবে।
আবির এবার রেগে যায়।
“- তো কি করবো বলো? বাপ মা সাথে লড়াই করবো।
“- আমি তো তা বলিনি।আপনি শুধু বলেন টাকাটা আপনি ম্যানেজ করবেন।
“- হোয়াট! আমি কেন ম্যানেজ করবো? আর তুমি এসব কি নাটক শুরু করছ? বিয়ে তে বরপক্ষ কে টাকা দিতে হয় এটা কি নূতন তোমার সাথেই হচ্ছে? এটা স্বাভাবিক ব্যাপার! আর তাছাড়া টাকাটা তোমার কাজেই লাগবে আমরা তো খাবো না।
“-আমার ইরা আপুর বেলায় এক টাকাও বরপক্ষকে দিতে হয় নি।আমারও চাই না এই টাকা।আপনি যে হালে রাখবেন আমি সেই হালেই থাকবো শুধু সম্মান আর ভালোবেসে রাইখেন। প্লিজ আবির আপনি টাকা টা নিয়েন না।
“- কি ছোটলোক তোমার পরিবার?টাকা দিতে পারবে না বলে তোমাকে দিয়ে না করাচ্ছে।তুমি জানো তোমার চেয়ে ভালো ফ্যামিলির মেয়ে আমার জন্য বসে আছে।তাদের কাছে ২০ লাখ টাকা হাতের ময়লা।শুধু তোমার বড় আব্বার অনুরোধে তোমাদের সাথে আত্মীয়তা করছি।এই মূল্য দিলে তার।ছোটলোক।
আবিরের কথায় ইমার গলা কান্নার জলে আটকে আসে।ব্যথা হতে লাগে কান্না আটকে রাখায়।
“- আবির! মুখ সামলে কথা বলুন আমি চাই নি আমার স্বামী কারো দেওয়া কিছু নিক।শৌখিন ভাইয়ের মতো সম্মান পাক।কিন্তু আপনাকে ওসব বলে লাভ নেই।আমার বোঝা উচিত ছিল সব এক ধারার না।দিতে গেলে বড় দের ব্যাপার নিতে গেলে বড় দের ব্যাপার।আপনার ব্যাপার কখন? রাতে বিছানায়? আমার এখন সত্যি মনে হচ্ছে আপনি আমার জন্য উপযুক্ত না।
“- তুই অনেক বলেছিস? রাখ ফোন।আর শোন একদম কথা বলবি না আমার সাথে।তোর সাথে বিয়ে ক্যান্সেল আমার।সোজা সরল? তুই ভালোই করেছিস বিয়ের আগেই তোর রং দেখিয়ে দিয়েছিস।মুখে মুখে খই ফোটে তোমার?
“- হ্যা সেটাই ভালো হবে।আজীবন কুমারী থাকাও ভালো আপনার মতো ছোট মন মানসিকতার মানুষকে স্বামী হিসেবে গ্রহণ করার চেয়ে।আমি খারাপ হুম তাই হয়তো।সঠিক কথা বললে খারাপ হতে হলে একশবার হবো।
“- তাই! ঠিক আছে দেখবি কি হয়? তোকে তো? আবির অশ্রাব্য ভাষায় কয়েকটা শব্দ বলে মোবাইলের লাইন কেটে দেয়।
ইমা ব্যালকনির এককোনে দাড়িয়ে দূর আকাশের শূন্যে তাকিয়ে নিঃশব্দে কাঁদে।আবিরের বলা অশ্রাব্য ভাষা হৃদয়বিদীর্ণ করছে। আবিরের সাথে এমন ভাবে কথা বলে কষ্ট লাগলেও মনটা হালকা লাগছে ইমার।ইমা ভালো করেই জানে এসব কথা বলার জন্য একটু পরই ওর উপর নেমে আসবে মাইর, বকার ঝড়।শান ভিজে কাপড় ছেড়ে ব্যালকনিতে আসতেই যাচ্ছিল কি অদূরে ইমাকে অশ্রু বিসর্জন দিতে দেখে এককোনে দাড়িয়ে দেখতে থাকে।শানের কেন যেন হঠাৎ এই মেয়েটার কষ্ট দেখে খারাপ লাগতে শুরু করছে।তা না হলে এভাবে লুকিয়ে দেখার মানুষ তো শান নয়।শান আজ দুচোখ ভরে ইমাকে দেখলো।শানের মনে হলো আসলেই মেয়েটা অনন্যা।মেয়েটার টানা টানা বড় বড় ভেজা চোখ দুটো কখন যে শানের বুকের বা পাশের বহুদিনের জং ধরা বন্ধ দরজায় নাড়া দিল শান টেরও পেলো না।দৃষ্টি মুগ্ধতায় ডুবে আছে দূরের অষ্টাদশী রূপবতী নারীর ক্রন্দনরত মুখশ্রী অবলোকনে।
পর্ব ০৯
Writer Tanishq Sheikh
ইমা মুখ নিচু করে মুরুব্বীদের সামনে বসে আছে।এতোটা লজ্জার মুখোমুখি ইমাকে কোনদিনই হতে হয় নি।নিজের কাছে মনে হচ্ছে মহা পাপ করে ফেলেছে সে যার জন্য তাকে গ্রাম শালিসিতে ডাকা হয়েছে।অপমান, লজ্জায় মাথা নত করে বসে আছে এতোগুলো মানুষের সামনে। ডান পাশের কোনার সোফাটায় আবিরের বাবা,মা আর সামনে বসা ইমার বড় আব্বা,আব্বা,ফুপু,বাম পাশের সোফায় বসা শান আর শৌখিন।সবার মুখই গম্ভীর।শান আড়চোখে ইমার ছোট হওয়া মুখটা দেখে অপলক তাকিয়ে আছে।আজকাল এই মেয়েটার উপর থেকে দৃষ্টি সরানোই দায় হয়ে পড়েছে শানের।নিজেকে সামলে নিল শান।বড় মিঞার শরীর আজও খারাপ।বুকের সাথে সাথে পিঠেও চাপ অনুভব করছেন থেকে থেকে।দূর্বল শরীরে ভাতিজিকে বকবেন না ধমকাবেন বুঝতে পারছেন না।যদিও তিনি কখনোই বাড়ির মেয়েদেরকে বকাবকি করেন না হ্যাঁ রেগে গেলে উচ্চস্বরে ধমক দেন এতোটুকুই। ইমাকে তিনি বরাবরই মাতৃতুল্য স্নেহ করেন।মিঞা সাহেবের মায়ের সাথে ইমার চেহারার অদ্ভুত সামঞ্জস্য আছে।আর সেজন্য ইমাকে তিনি সবার থেকে বেশিই সমাদর করেন।সোফায় ঢুলুঢুলু ঝাপসা দৃষ্টিতে ইমার শুকনো মুখটা দেখে মিঞা সাহেব আস্তে করে বলেন
” যাও আম্মা! ভেতরে যাও।
ইমা যাওয়ার জন্য পেছন ঘুরতেই ইমন চড়া গলায় বলে ওঠে,
” এই থাম! কই যাস?আগে বলে যা জ্বামাইকে ওসব বলেছিস কেন? এতো বড় চাপা কবে থেকে হইছে তোর?
ছোট ভাইকে চিৎকার করতে দেখে মিঞা সাহেব বাঁধা দিয়ে বলেন
” আহ! ইমু থাম। বড় মিয়া পান্ডুর মুখে আবিরের মায়ের দিকে তাকিয়ে বললেন
“বেয়াইন মনে কষ্ট নিয়েন না।বাচ্চা মেয়ে বাপ চাচাকে কষ্টে দেখে বেফাঁস কথা বলে ফেলেছে। ওর হয়ে আমি ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি।
শৌখিন সহ উপস্থিত সবাই বড় মিঞা কথা শুনে মর্মাহত হলেন।ইমা শব্দ করেই কেঁদে উঠলো। শানের ইচ্ছা করছে দৌড়ে গিয়ে মেয়েটার চোখের জল মুছে দিতে। কাঁদছে এই মেয়ে আর কষ্ট হচ্ছে শানের। কেন এমন হচ্ছে?সংযত চোখে শান ইমার কেঁদে লাল হওয়া মুখটা দেখে যাচ্ছে।
শাহানুর ভাইয়ের হাত ধরে থামিয়ে রেগে ওঠে
” কি করছিস বড় ভাই? দোষ করেছে যখন ও ক্ষমাও ও চাইবে।এই ইমা পা ধরে ক্ষমা চা তোর শ্বশুর শ্বাশুড়ির।
ইমা ধীর পায়ে এগোতেই যাচ্ছিল কি বড় মিঞা থামিয়ে দিল।
“শাহানা!আমি কথা বলছি তো নাকি?আম্মা তুমি যাও।
ইমন নিজের রাগের উপর কন্ট্রোল রাখতে পারলো না।ইমার বিয়ে নিয়ে এমনিতেই ভাইকে কষ্টের ভেতর যেতে হচ্ছে তারউপর আজ ছোট হতে হলো।ইমন উঠে গিয়ে ইমার গালে সজোরে দুটো চড় বসিয়ে দিল।ইমা হতবুদ্ধি হয়ে ফ্যালফ্যাল করে চেয়ে ছিল।সামনে তাকিয়ে থাকা মানুষগুলোর দিকে চেয়ে লজ্জায় জড়োসড়ো হয়ে গেল।ইমন আরও মারার জন্য উদ্যত হলে শান, শৌখিন গিয়ে থামিয়ে দেয়।শান ইমাকে রুমের বাইরে পাঠিয়ে দরজা লাগিয়ে দেয়।রাগে কপালের রগ ভেসে উঠেছে শানের।এমন বিশ্রী পরিস্থিতিতে পড়ে বড় মিঞা নির্বিকার বসে রইলেন।শাহানুরের মোটেও এসব ভালো লাগছে না।মুখটা মলিন করে সেও চুপচাপ বসে আছে।ইমন রাগে ক্ষোভে কাঁপছে।
এতোক্ষন পর আবিরের মা জবাব দিলো।মুখে কষ্ট পাওয়া ভাব ফুটিয়ে বললো
” ভাইসাহেব মেয়েটার গায়ে হাত না তুললেও পারতেন।আমরা কি পর নাকি? ও ভুল করে ফেলেছে তাই বুঝাতে এসেছিলাম।আবির তো আসতেই দেবে না।খুবই রেগে আছে।কাল তো বিয়ে আর আজ রাগারাগি করে থাকলে কেমন দেখায় তাই মিলমিশ করে দিতে আসলাম।”
আবিরের বাবার পেটে আড়ালে গুতা দিয়ে ইশারায় কিছু বলতে বললে তিনিও নিরস হেসে বলেন
“হ্যাঁ সেটাই।দুজনই বাচ্চা মানুষ।ভুল করতেই পারে।আমরা তো বিচার দিতে আসিনি।”
শান এদের অভিনয় দেখে বিস্মিত হয়।কপালে আঙুল ঘষতে ঘষতে বিরবির করে বলে
” আমার সামর্থ্য থাকলে সেরা অভিনেতা অভিনেত্রীর অস্কার এদেরকেই দিয়ে দিতাম।উফ! গড।শৌখিন কে ইশারায় এদিকটা দেখতে বলে শান চুপচাপ বেরিয়ে যায়।
আবিরের মা অবস্থা বেগতিক দেখে নিজেই বলে” যা হয়েছে বাদ দিন।আমরা কিছু মনে করি নি।আমাদের বউকেও আর কিছু বলেন না।আমি বুঝিয়ে যাবো যাওয়ার সময়।”
ইমা রুমে এসে তখন থেকেই কাঁদছে।মা চাচীরা মাথায় হাত বুলিয়ে স্বান্তনা দিচ্ছে। ইমার অপমান কম কষ্ট বেশি লাগছে বড় আব্বার মুখটা ছোট হয়ে যাওয়ায়।আবিরের উপর রাগটা আরও বেড়ে গেছে ইমার।যাওয়ার আগে আবিরের মামা বাবা বুঝিয়ে গেছে।”যা ভুল ত্রুটি হয়েছে ভুলে যাও।আবিরকে নাকি বুঝিয়ে বলবে।”হয়তো বুঝেও গেছে আবির তাই বিকেলে গড়াতেই মোবাইল করেছে।ইমার কান্না দেখে বিরক্ত হলেও প্রকাশ করে নি।ক্ষমা চেয়ে নিয়েছে তখনকার ব্যবহারের জন্য।ইমা কিছুই বলে নি কারন আবিরের উপর ইমার আর কোনো ভরসা ভালোবাসা নেই।যা ছিল বাবার দেওয়া থাপ্পড় খেয়েই ভুলে গেছে। বয়স যতোই হোক লজ্জা শরম বাচ্চারও থাকে।অথচ এতোগুলো মানুষের সামনে আজ লজ্জিত হতে হলো।দোষ কি? উচিত কথা বলা।ইমা মনে মনে পণ ই করে জেদের বশে মরে গেলেও আর উচিত কথা বলবে না তাতে যা হয় হোক। এমন লজ্জা তো পেতে হবে না।
আব্বার উপর ইমার অভিমান জন্মে।এই অভিমানের ক্ষেদেই কান্নার নোনাজল আরও গড়াচ্ছে।
শান রুমে বসে অফিসিয়াল কাজ দেখছিল।দরজায় ধুপধাপ আওয়াজ ও ইরার ভীতস্বর গলায় ডাকে শান দরজা খুলতেই ইরা কান্নাজুড়ে দিল।শান কপালে ভাঁজ ফেলে জিজ্ঞেস করলো
“কি হয়েছে ইরা?
ইরা কান্নাভেজা গলায় আড়ষ্ট স্বরে বললো
” ভাই সানা সুইসাইড এটেম্ট করেছে।”
শান হকচকিয়ে উঠলো।দৌড়ে সানার রুমে গিয়ে দেখলো চাচীর কোলে নিথর শরীরটা এলিয়ে পড়ে আছে সানার।হাতটা কাপড়ে বাঁধা। তার মধ্যে দিয়েই রক্ত বের হয়ে আসছে।শান আর এগোতে পারে না।পা দুটো মনে হচ্ছে সিমেন্ট দিয়ে কেউ ফ্লোরে আটকে দিয়েছে।নড়ছেই না কোনোমতে।শান কাঁদে না।চোখের জল যে বহুবছর আগেই শুকিয়ে গেছে নিষ্ঠুর পৃথিবীর নিষ্ঠুর আচরনে।
শৌখিন তড়িঘড়ি করে দরজা দিয়ে ঢুকে শানকে হতভম্বের মতো দাড়াতে দেখে নাড়া দেয়
“ভাই এম্বুলেন্স এসে গেছে।চল!
শান বাচ্চা শিশুর মতো অসহায় মুখ করে সানার দিকে হাত ইশারায় করে বলে
” শৌখিন আমার সানা!
শৌখিন বাহুতে চোখের জল মুছে ভাইকে স্বান্তনা দেয়
“ভাই কিছুই হবে না সানার।চল তুই।
শৌখিন সানাকে কোলে নিয়ে ছুটে বেরিয়ে আসে।শানও সাথে সাথে আসে শানের কোনো হুশ জ্ঞান নেই।শৌখিন যা বলছে তাই করছে।ভাইকে এতো ভেঙে পড়তে দেখে শৌখিন অনেক চিৎকার করে।অবশেষে শান স্বাভাবিক হয়।সানাকে হসপিটালাইজড করা হয়।সারারাত সবাই নির্ঘুম কাটাই।ইরাদের বাড়ির সবাই ইরার পাশে এসে সাহস দেয়।বড় মিঞা,ইমন ও চলে আসে হসপিটালে।অহন হলে গিয়েছিল। সানার সংবাদ শুনে রাতেই রওনা হয়।সানাকে অহন খুবই পছন্দ করে তবে বলার সাহস পায় না।সেই পছন্দের মানুষটার এমন মুমূর্ষু অবস্থা অহনের পাঁজর ভাঙে।নিদারুণ ব্যথা হয় বুকে।
মধ্য রাতে সানার জ্ঞান ফেরে।কিছু টেস্ট করিয়েছে সকালে রিপোর্ট দেবে।শান সানার হাত ধরে বসে আছে।সানা ভাইকে দেখে উউউ করে কেঁদে ওঠে।মৃত্যুর দুয়ার থেকে বেঁচে ফেরার আশাই ছেড়ে দিয়েছিল।তবুও বেঁচে গেছে।কতোবড় ভুল করেছিল মৃত্যুর দুয়ারে গিয়ে উপলব্ধি করে সানা।কাঁদতে কাঁদতে বলে,
” ভাই! আমি ভেবেছিলাম আর দেখা হবে না তোমার সাথে।”
শান কোনো জবাব দেয় না। চোয়াল শক্ত করে বোনের হাতটা নিজের হাতের মুঠোয় ভরে বেডের কোনে মাথা রাখে।সানা ভাইয়ের স্থির অপলক মুখটা দেখে কান্নায় ভেঙে পড়ে।
সকালে নার্স সহ সানাকে বাসায় নিয়ে আসা হয়।ইরা সারাক্ষণ সানার শিওরে বসে আছে।একচুলও নড়ছে না।তা দেখে সানা মলিন হেসে বলে
“ভেবো না!মরতে যাবো না এখন।দেখছোই তো নড়াচড়া করার অবস্থায় নেই তেমন।
ইরা ঠোঁট উল্টে অভিমানি সুরে বলে
” তুমি এমন কেন করলে সানা? তোমাকে ছাড়া আমরা কী নিয়ে বাঁচতাম বলো? একটিবার শান ভাইয়ের কথা ভাববে না।
সানা বিরবির করে বলে,
“তার জন্যই তো মরতে চেয়েছিলাম।ভেবেছিলাম ভাই সর্বনাশা খেলা থেকে নিজেকে সরিয়ে নেবে।
ইরা দৃষ্টি সরু করে সানার বিরবির বোঝার চেষ্টা করছিল তখনই শান বিধ্বস্ত চেহারায় ভেতরে ঢুকলো।এসেই ইরাকে লক্ষ্য করে শান্ত গলায় বললো,
” তোমার বোনের বিয়ে সন্ধ্যায়। তুমি ওখানে যাও।ওদের প্রয়োজন তোমাকে।”
“না ভাই! ওরা ঠিক ম্যানেজ করে নেবে।”
“আচ্ছা ঠিক আছে।এখন একটু ফ্রেশ হয়ে আসো। সকালে তো ব্রেকফাস্টও করো নি।
ছলছল চোখে শানের দিকে ফিরে ইরা জবাব দিল।
” লাগবে না ভাই।”
শান জোর করেই বললো,
“যাও! আমি ততক্ষণ এখানে আছি।যাও”
ইরা অনিচ্ছা স্বত্বেও ভাসুরের কথায় রাজি হয়।চলে আসে বাইরে।শান দরজা লাগিয়ে সানার পাশে বসে।সানার মাথায় হাত বুলিয়ে জিজ্ঞেস করে
” বেশি খারাপ লাগছে?”
সানা কাঁদো কাঁদো স্বরে বলে
“না!”
শান নার্সের কাছ থেকে মেডিসিন নিয়ে সানাকে কিছু খাইয়ে মেডিসিন খাইয়ে দেয়।
শান উঠতেই যাচ্ছিল সানা শানের হাত ধরে শব্দ করে কাঁদে।
” ভাই ওদেরকে ছেড়ে দে।”
শান সানার হাতের দিকে তাকিয়ে আবার সানার মুখের দিকে তাকায়।ঝুঁকে সানার চোখের জল মুছে দিয়ে বলে
” ঠিক আছে ছেড়ে দিলাম ওদের।নিলাম না প্রতিশোধ।”সানার চোখে মুখে খুশি উছলে পড়ে।শান সানার কপালে চুমু দিয়ে উঠে দাড়িয়ে বোনের মুখের দিকে তাকিয়ে বলে
” তুই বাবার মতো হয়েছিস সানা।অন্যের সুখের জন্য নিজের জীবনটাও দিতে যাচ্ছিলি।আমি বাবাকে হারিয়ে তোকে আঁকড়ে বেঁচে আছি রে।আমার বাঁচার অবলম্বনটা কেড়ে নিস না অন্যের জন্য। ”
শান কালক্ষেপন না করে রুম থেকে বেরিয়ে আসে।ভেতরটা দুমড়ে মুচড়ে যাচ্ছে বোনকে মুমূর্ষু অবস্থায় দেখে।চোখটা পাথরের হয়ে গেছে মনের মতোই তাইতো আজও জল গড়ায় না।গড়াতে দেয় না শান।দূর্বলতা কাউকে দেখাবে না সে।নিজের কষ্ট কাউকে বুঝতে দেবে না।
ভাই চলে যেতে সানা বিরবির করে বলে,
” আমি আমার ছোট্ট শান ভাইয়ের মতো হয়েছি ভাই।যার মন ছিল কাঁদার মতো নরম,দরদী,ভালোবাসায় পূর্ণ। ”
শানের অনুরোধেই ইমার বিয়ের তোড়জোড় চলছে।ইমাকে গোসলের জন্য নিয়ে যাবে তখনই শান একজন কে দিয়ে গোপনে ইমাকে ছাঁদে ডেকে আনে।ইমা ছাঁদে এসে দেখে শান দাঁড়ানো। রাগ লাগলেও সানার বিষয়টা ভেবে ঠাণ্ডা গলায় জিজ্ঞেস করলো,
” ডেকেছেন কেন?”
শান পেছন ঘুরে স্বভাবসুলভ কঠিন দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো
” ও তুমি এসেছ? বসো।
ইমা মুখটা বেজার ভাব করে বললো।
” আমি বসতে আসি নি।আপনি ডেকেছেন জানলে আসতামও না।”
শান চেয়ারে বসে অন্য দিকে দৃষ্টি রাখে।বলে
” এসেই যখন পড়েছ শুনে যাও তাহলে।”
ইমা মহাব্যস্ত ভাব দেখিয়ে আশেপাশে দৃষ্টি রেখে বলে,
” তাড়াতাড়ি বলুন।আর শুনুন একদম উল্টো পাল্টা কিছু বলতে আসবেন না।”
শান এবার দৃষ্টি ইমার মুখে অনড় রেখে বলে
” হুমম। তোমার সাথে ইদানিং যা করেছি সেজন্য আন্তরিক ভাবে দুঃখিত আমি।আজকের পর থেকে এমন ব্যবহার আর হবে না।আশা করি আগের মতোই সব নরমাল হয়ে যাবে।এতোটুকুই বলার জন্য ডেকেছিলাম।এখন যেতে পারো তুমি।”
ইমা এদিক ওদিক থেকে দৃষ্টি সরিয়ে শানের চোখে চোখ রাখলো।বোঝার চেষ্টা করলো এসব কথার মানে।ইমার ইচ্ছা করছিল বলতে “কেন করেছিলেন এসব? কেনইবা এখন এসব বলছেন।” কিন্তু ইমা শানের সাথে আর কথার বলার অবস্থায় নেই।কেমন যেন লাগছে মনের ভেতর।ভালো! না খারাপ!ইমা নিজেকেই বুঝতে পারছে না।চুপচাপ মুখ ঘুরিয়ে ছাঁদের দরজার কাছে যেতেই শান আবার পিছু ডাকলো,
” শুভ কামনা তোমার নতুন জীবনের জন্য। আশা করি তোমার ভবিষ্যত সুন্দর হবে।”
ইমা পিছু তাকালো না শানের কথা শেষ হতেই সিড়ি বেয়ে দ্রুত নেমে আসলো।
ইমা যেতেই হসপিটাল থেকে কল আসলো শানের মোবাইলে। রিপোর্ট গুলো নিতে যেতে বলেছে।শান তাড়াতাড়ি নিচে এসে গাড়িতে উঠে রওনা হয় হসপিটালের উদ্দেশ্যে।
চলবে,,,
চলবে,,,