তোমার আকাশে হব প্রজাপতি
পর্ব ০৪ +৫+৬
Writer Tanishq Sheikh
দুপুরে ইমার হলুদের অনুষ্ঠানে মিঞা বাড়ির ছোটরা খুব মজা করেছে।সবার মন খুব ভালো সেজন্য।যে যার মতো আরামে ব্যস্ত। শানের দেওয়া ১০ হাজার টাকা শাহানুর নিজের কাছে রেখে দেয়।পরে ইমাকে ভালো কিছু কিনে দেওয়ার জন্য। ইমা গোসল করে টানা ঘুম দেয় যখন ঘুম থেকে ওঠে মাগরিব মাগরিবের ওয়াক্ত প্রায় শেষ। ইমা বুঝে উঠতে পারছে না আজকাল এতো বেশি অনিয়ম কেন হচ্ছে? হয়তো আবিরের কথা চিন্তা করে।তাই ই হবে।ইমা দৃঢ় সংকল্প করে আর যাই হোক কোনোদিন নামাজ নিয়ে হেলাফেলা করবে না।নামাজ শেষে বিয়ের কেনাকাটা নিয়ে সবার আলাপ শুনছে।পরিবারের কতোরকমের চিন্তা একটা মেয়ে পাড় করতে।ইমার বিয়ের জন্য ইতোমধ্যে ৩ লাখ টাকা খরচ করে ফেলেছে এখনও বিয়ের কেনাকাটা, ক্যাটারিং খরচ তো বাকিই আছে।তার মধ্যে নতুন আবদার করে বসেছে আবিরের মা।তার ছেলে বিদেশ সেটেল হবে সব ঠিকঠাক মাত্র ২০ লাখ টাকায় যা কমতি।কথাটা বলার এক ফাঁকে কৌশলে জামাইকে সাহায্য করার ভঙ্গিতে চেয়ে বসেছে টাকাটা।মিঞা পরিবারের যথেষ্ট সম্পদ আছে তবে ক্যাশ বলতে হাতে ৮/৯ লাখ টাকাই আছে বিয়ের খরচের জন্য। বাদ বাকি জমি জিরাত ৩টা পুকুর বাজারের উপর চারটা দোকান।আবিরকে নগদ টাকা দিতে গেলে জমি বিক্রি করতে হবে।সেটাও সময়সাপেক্ষ।এজন্য বিয়েটা তিনদিন পিছিয়ে দিয়েছে।শাহানুর এক ফাঁকে এসে ইমাকে অনেক কথা শুনিয়ে গেছে এজন্য।পুরুষ বশ করতে পারেনা, অকর্মার ঢেঁকি আরও নানা কথা।
ইমার এখন গা সহা হয়ে গেলেও আবিরের ব্যবহারে প্রচন্ড রাগ উঠছে।আবিরের অনেক রূপই এই কদিনে ইমা দেখেছে।ঘন্টার পর ঘন্টা মোবাইলে ব্যস্ত থাকে কল করলেও পাওয়া যায় না।হুট করেই রেগে যায় তারপর যা মুখে আসে তাই বলে।ইমার কেন যেন মনে হয় আবির এ বিয়েতে খুশি না।ইমাকে খুশির করার জন্য মিথ্যা ভালোবাসার গল্প ফাঁদে। ইমা এতোও বোকা না যে কারও মন বুঝতে পারবে না।বিয়ের আগেই যে এমন করছে বিয়ের পর কি সুখ দেবে তা ইমার আর অজানা নয়।তবুও চুপ থাকে ইমা। কারন কিছু বলার মতো পরিস্থিতি বা সাহস কিছুই ইমার এখন আর নেই।তবে আজ রাতের ডিনারে আবির আসলে তাকে অবশ্যই জিজ্ঞেস করবে এমন আচরণ সে কেন করছে?
ইরা নিজ হাতে ইমাকে মেরুন রংয়ের শাড়ি পড়িয়ে সুন্দর করে হালকা সাজিয়ে খাবার টেবিলে নিয়ে আসে।ইমার দুচোখ আবিরকে খুজতে লাগলো।ঐ তো শিখার সাথে হেসে হেসে গল্প করছে।ইমা মুখটা শক্ত করে সেদিকে হেঁটে গেল।আবিরের পাশের চেয়ারে গিয়ে বসতেই আবির ইমার কানে ফিসফিসিয়ে বললো
“- অনেক সুন্দর লাগছে তোমাকে।কবে সেই শুভক্ষন আসবে।অধৈর্য হয়ে উঠছি আমি।
“- যতো দেরিতে আসে ততই মনে হয় আপনার জন্য ভালো।ইমা অন্যদিকে ফিরে কঠিন গলায় বলে।
ইমার কথা শুনে আবির কিঞ্চিৎ আশ্চর্য হয়।ইমার মুখের দিকে তাকিয়ে ভাব বোঝার চেষ্টা করে হেসে বলে
“- রাগ করেছ জান! আসলে বিজনেস নিয়ে একটু ঝামেলায় আছি।সরি বউটা আমার।
“- একদম বউ বলতে আসবেন না।এখনও বউ হই নি।যখন হই তখনই বরং ডাইকেন।
চেয়ার ছেড়ে উঠে রাগে হনহন করে বাংলোর পেছনে এসে কাঁদো কাদো মুখে দেয়ালে হেলান দিয়ে দাড়িয়ে থাকে।সবাই গল্প আড্ডায় ব্যস্ত থাকাই ইমার চলে যাওয়া কেউ খেয়াল করলো না।শিখা খেয়াল করলেও মুখ ভেংচে আবিরকে নিয়ে আবার গল্পে ব্যস্ত হয়ে পড়লো।আবিরের কিন্তু শিখার গল্পে কোনো ইন্টারেস্ট নেই। মাথায় শুধু ইমার শেষ কথাই ঘুরপাক করছে।আবির উঠতে গেলেই শাহানুর বড় মিঞা এসে সৌজন্য সাক্ষাৎ জুড়ে নিল।
ইমা দেয়ালে হেলান দিয়ে নিরবে কাদছিল হঠাৎ কেমন যেন আওয়াজে একটু হেটে বাংলোর অন্ধকার সাইডে উঁকি দিতে গা ঘিনঘিন করে উঠলো।বড় আব্বার বন্ধুর মেয়ে আনিকা শানের ঠোঁট বিচ্ছুর মতো আকড়ে ধরে আছে ঠোঁটে।শান নির্বিকার দাড়িয়ে আছে যেন কোনো ফিলিংস নাই।ফিলিংস নাই ভাবনাটা ভুল করে দিয়ে আনিকাকে দেয়ালে চেঁপে মুখটা শক্ত করে চেঁপে ধরলো হাত দিয়ে।এমন ভাবে চেঁপে ধরলো আনিকার ঠোঁট সরু হয়ে গেল।ইমার এখন আর শানকে ভয় লাগছে কম উল্টো ঘৃণা হচ্ছে বেশি। ২০ভাগ ভয় আর ৮০ ভাগ ঘৃণা।ইমা ছি! বলে চলে এসে আগের জায়গায় দাঁড়ায়। মনে মনে ভাবছে কতো খারাপ এরা।এই ব্যাটা এজন্যই বিয়ে করে না।ছোট ভাই বিয়ে করেছে আর উনি আবিয়াত্তা বসে আছে।মজা যদি বিয়ে না করেই পায় তাহলে আর বিয়ে করে কি হবে?খাটাশ ব্যাটা!
“-হ্যালো মিস ব্রাইড!বর ছেড়ে এখানে একা কি করছ?
শানের গলার আওয়াজে ইমা ভয়ে ভয়ে ঘুরে তাকালো।কালো টিশার্ট পরিহিত শান বাজ পাখির মতো কঠিন চোখে তাকিয়ে ওর দিকেই হেঁটে আসছে।এই লোককে ইমা যতোবার দেখেছে তার মধ্যে একদিনও হাসতে দেখে নি।আজও হাসছে না তবে কথার প্যাঁচে কিছু একটা আন্দাজ করতে পারছে।দুষ্টুমি? না! না! এই লোক আর দুষ্টুমি, আগুন আর জলের মতো মিক্স হবে না।ইমার ভাবনায় ব্যাঘাত ঘটিয়ে রুক্ষ স্বরে বললো,
“- কি হলো!ধরা খেয়ে গেলে তো?আচ্ছা তুমি আমাকে দেখলে হা করে গেলো কেন? ভালো লাগে আমাকে?
“- ছি! ইমা মুখ ঘুরিয়ে চলে যাবে তখনই শান ইমা হাত টেনে ধরে একদম কাছাকাছি নিয়ে আসে।ইমার হৃদপিণ্ড পূর্বের অবস্থায় ফিরে এসেছে।ধাম ধাম করে বাজছে।এখন মনে হচ্ছে ভয়ের আনুপাতিক হার হরহর করে বেড়ে যাচ্ছে।কাপাকাপির মতো অস্বস্তিকর পরিস্থিতি ইমার।
“-ছি কেন বললে? শান চোয়াল ফুলিয়ে ইমার মুখের কাছে মুখ নামিয়ে আনে।ইমা ভয়ে অস্বস্তিতে চোখ বন্ধ করে কাপা স্বরে বলে,
“-শান ভাই হাত ছেড়ে দিন কেউ দেখে ফেলবে।
“- দেখুক। দেখলে কি হবে? আগে বলো এখানে কি করছ তুমি? আমাকে নজরে নজরে রাখছ তাই না?
শানের কথায় ইমা ব্যাঙ্গাত্মক মজার আভাস পায়।ইমার বুক ধড়ফড়ের মাত্রা কয়েকগুন বেড়ে যায় শানের কথায়।চোখ পাকিয়ে বলে,
“- কি সব বলছেন এসব? আমি কেন এমন করবো? আপনি আমার বড় ভাইয়ের মতো।এ ছাড়া অন্য কিছু ভাবি না আপনাকে।
“- ওহ রিয়েলি!তাহলে উঁকি দিয়ে কি দেখছিলে শুনি? আর আমাকে দেখলেই চোরের মতো ভয় পাও কেন?বড় ভাইয়ের প্রতি মেয়েরা বুঝি এমন ফিল করে।
“- দেখুন আপনি ভুল ভাবছেন।আপনি বা আপনার কোনো বিষয় নিয়েই আমার কোনো আগ্রহ নেই। ছাড়ুন আমাকে।ছাড়ুন বলছি।ইমা একপ্রকার কেঁদেই ফেলে শানের এমন রূপ দেখে।হাতের কব্জিতে ব্যথাও পাচ্ছে।
“- ওকে ছেড়ে দিলাম।শান ইমার হাত ছেড়ে দুকদম পিছিয়ে এসে পাশে তাকিয়ে আশ্চর্য হওয়ার ভঙ্গিতে বলে ওঠে”-আরে আবির যে? তোমার হবু বর তাই না মেয়ে?ইমার দিকে চোখ ছোট করে মাথা বাকিয়ে জিজ্ঞেস করে।
ইমা পাশে তাকিয়ে দেখে আবির ওর দিকে রাগে কটমট করে তাকিয়ে আছে।আবির কোনো কথা না বলে স্থান ত্যাগ করলো।ইমা শানের দিকে রেগে তাকিয়ে আবিরকে ডাকতে ডাকতে পিছু নিল।শান এদিক ওদিক তাকিয়ে মুচকি হেঁসে বাড়ির ভেতর এসে চেয়ার টেনে বসলো।
ইমা আড়ালে আবিরের হাত ধরে টেনে একটা রুমে আনলো বোঝানোর জন্য। আবির রাগে গজগজ করতে করতে হাত ছাড়িয়ে নিল,
“-হাত ছাড়ো ইমা! এজন্য বউ ডাকতে নিষেধ করেছিলে তাই না? ছি! এই ছিল তোমার মনে।কেন আমাকে ধোঁকা দিচ্ছ বলো?
ইমা কাঁদো কাঁদো স্বরে জবাব দিলো,
“- আবির প্লিজ! আপনি যা ভাবছেন তা নয়।
আবির রেগে ইমার বাহু চাপ দিয়ে খেঁকিয়ে উঠলো,
“- আচ্ছা! তাহলে এতো কাছাকাছি দুজন দাড়িয়ে ছিলে কেন?ও তোমার হাত ধরেছিল আর তুমি কিছুই বলো নি।
ইমা নিজেকে আবিরের কাছ থেকে ছাড়িয়ে দুকদম পিছিয়ে চিন্তিত হয়ে বললো,
“- আবির আমিও জানি না উনি কেন এমন করলো। আমি নিজেও আশ্চর্য হয়েছি উনার আচরণে।
আবিরের গলার স্বর আরও কঠিন হয়ে গেলো,
“-মিথ্যা বলছ তুমি। অভিনয় করছ কেন? সত্যি টা স্বীকার করো।আমি তো শানের মতো কোটিপতি না তাই এখন আর আমাকে ভালো লাগছে না।শানকে ভালোবাসো তুমি? বলো!
আবিরের অপমানজনক কথায় ইমার আত্মসম্মানে আঘাত লাগলো।দূর্বল চিত্তের মেয়ে বলে চোখের জল বিসর্জন দিয়ে বললো,
“- আবির প্লিজ! আমাকে বিশ্বাস করুন।এমন কিছুই না।আপনি তাকেই জিজ্ঞেস করুন না হলে।
আবির রাগী স্বরে যাওয়ার জন্য উদ্যত হয়ে বললো,
“- আমার কোনো প্রয়োজন নেই।যা বোঝার দেখার বুঝে গেছি।
ইমা নিজেকে সামলাতে পারলো না।দুচোখ লাল করে প্রতিবাদ করে করে উঠলো,
“- আবির! এতো ঠুনকো আপনার বিশ্বাস? আমার উপর বিন্দুমাত্র ভরসা নেই আপনার।আপনিই কাল গাড়িতে বলেছিলেন আমার স্বভাবের গুনেই আপনি আমাকে পছন্দ করেন এই নমুনা তার।
আবির কিছু একটা ভেবে নিজেকে সামলে ইমার গালে হাত রেখে চোখের জল মুছিয়ে দেয়।
“- আচ্ছা সরি! তুমি তো জানোই কতোটা ভালোবাসি তোমাকে আমি।অন্য কারো সাথে তোমাকে সহ্যই করতে পারি না।
ইমা নিরপরাধী সুরে কেঁদে বলে,
“- আপনি বিশ্বাস করুন আমার সাথে শান ভাইয়ের কোনো সম্পর্ক নেই।উনি আনিকার আপুর সাথে ঘনিষ্ঠ হয়েছিলেন যেটা আমি দেখে ফেলেছি তাই এভাবে শাসিয়েছে আমাকে।ইমা শানের বলা কথাগুলো আবিরকে জানায় না।জানলে তাতে রাগটা বেড়ে যাবে আবিরের।
আবির ইমার হাত ধরে এনে চেয়ারে বসে খাবার খেতে থাকে।ইমার সোজাসুজি শান বসেছে।ইমা আড়চোখে সেদিকে রেগে তাকাতেই আশ্চর্য হয়।এই লোকের ঠোঁটের কোনে অদ্ভুত হাসির আভা।হাসিটা মোটেও ভালো কিছু ইংগিত করছে না সেটা ইমার বুঝতে বেগ পেতে হচ্ছে না।শান ইমার দিকে তাকিয়ে খাবার চিবুচ্ছে।ইমার কপালে চিন্তার ভাজ পড়েছে। এমন কেন করছে লোকটা।ঢোক গিলো ইমা চোখ সরিয়ে আবিরের সাথে হেসে হেসে গল্প করে শানের দৃষ্টি থেকে মনোযোগ সরাতে চেষ্টা করে। শানের দিকে না তাকানোর কঠিন সংকল্প করে বসে আছে।কিছুতেই তাকাবে না ওদিকে ইমা।কিছুতেই না।শানের দৃষ্টি ইমার সংকল্পের কুঠরে প্রচন্ডভাবে আঘাত করছে।অবশেষে ভেঙে গেল ইমার সংকল্প।শানের শাণিত দৃষ্টির সীমানায় তাকে ফিরতেই হলো।বিজয়ী হাসি শানের ঠোঁটের কোনে।এ হাসির ঢেউই যে,একদিন তারই সমস্ত কিছু এলোমেলো করে দেবে তা শানের কুটকৌশলী ব্রেন উপলব্ধি করতে পারে নি।এই অষ্টাদশীর সংকল্প ভাঙার দোষে প্রকৃতি তাকে শাপগ্রস্ত করবে।ঘৃণার খাচায় বন্দী করা হৃদয় খুইয়েই হবে এই শাপমোচন।নয়তো আজীবন জ্বলবে অন্তরজ্বালায়।
পর্ব ০৫
Writer Tanishq Sheikh
ইমা রাতে বিছানায় শুয়ে শানের তখনকার কথা ভাবছে।এই লোককে যতোটা ভালো ভেবেছিল ততোটাও ভালো নয়।লোকটার মোটিভ কি? কেনইবা হঠাৎ এসব বললো?
হাতের কব্জিতে অনেক ব্যথা করছে ইমার।ফর্সা কব্জি লাল হয়ে আছে।আবিরকে অনেক কিছুই বলার ছিল কিন্তু ঐ শানের নাটকে বলা হলো না ইমার।
শান বিছানায় আধশুয়া হয়ে ল্যাপটপে মনোযোগ সহকারে কাজ করছিল এমন সময় কল আসলো।কলটা রিসিভ করেই কপালে ভাঁজ পড়লো।প্রচন্ড রেগে মোবাইল বিছানার একপাশে ছুঁড়ে মারল।রাগে হিংস্র রূপ ধারণ করেছে শান।কালকের সকালের সূর্যের প্রতিক্ষা করতে থাকলো অধীর আগ্রহে।
সকাল সকাল নাস্তা করে ইমা শরৎচন্দ্রের দত্তা উপন্যাসটা নিয়ে বসেছে।উপন্যাসের ভেতর পুরোপুরি ডুবে গেছে এমন সময় ইরা টেনেটুনে জোর করে খান প্যালেসে নিয়ে যায়।ইমার মাথায় এখনও উপন্যাস ঘুরপাক খাচ্ছে। অন্য কিছু ভাবনায় আসছে না।ইরা রান্না করছে আর নিজের মতো নিজেই বকবক করছে।এরমধ্যে একটা মেড এসে বলে গেলো শান কফি পাঠাতে বলেছে।শানের নাম শুনেই ইমার কেমন যেন লাগে।মুখটা পানসে করে ইরাকে বলে,
“- আপা দুপুরে আসবো এখন যাই?
ইরা বেশ বিরক্ত হয়েই জবাব দিলো
“- এতো যাই যাই করছিস কেন রে? উপন্যাসের ভূতে ধরেছে।রাতে পড়িস।এখন যা এ কফিটা আমার ভাসুরকে দিয়ে আয়।
ইমা বিস্ফোরিত চোখে তাকিয়ে শব্দ করে বলে ওঠে,
“- পাগল হয়েছিস আপা?তোর ভাসুরকে আমি কেন কফি দিতে যাবো? তোর ভাসুর তুই যা।
ইরা চোখ ছোট করে মুখ মলিন করে বলে
“- এমন ভাবে রিয়েক্ট করার কি আছে? একটা কফিই তো দিতে বলেছি।আর তোর ভাসুর তোর ভাসুর করছি কেন? তোর বড় না শান ভাই বলতে পারিস না?
ইমা মুখ ভেংচে রেগে বলে
“- শান আবার ভাই।হয়ছে আপা আর বলিস না।তোর ভাসুর কতোবড় ক্যারেক্টারলেস তুই জানিস না।কাল আনিকা আপুর সাথে চুম্মাচাটি করতেছিল।আমি দেখে ফেলেছি বলে কি সব বললো?খাটাশ একটা।এজন্যই মনে হয় বিয়ের জন্য বউ পায় না।
ইরা মৃদু হেসে ইমার পিঠ চাপড়ে বলে
“-আন্দাজে বকিস না।বউ পাই না, বিয়ের জন্য মেয়েরা লাইন দিয়ে দাড়ানো আছে।খোঁজ নিয়ে দেখ গিয়ে তোর আনিকা আপাই জোর করে আমার ভাসুরের সাথে চুম্মাচাটি করছে।আমার ভাসুর মেয়েদের সাথে সম্পর্ক করে এটা ঠিক তবে চয়েস বুঝে।তোর আনিকা আপার সে যোগ্যতাই নাই।
“- তার মানে তুই স্বীকার করছিস তোর ভাসুরের চরিত্রে দোষ আছে।
“- আমি তা বলি নাই।আর বলবোও না।
“-কেন বলবি না?এই মাত্র তো বললি তোর ভাসুর মেয়েদের সাথে সম্পর্ক করে।বিবাহবহির্ভূত সম্পর্ক নাজায়েজ।আর যারা এসব করে তাদের যে চরিত্রহীন বলে সেটা তুইও জানিস আপা।
“-অবশ্যই জানি তবে শান ভাইকে আমি ঐ ক্যাটাগরিতে ফেলতে চাই না।সে কারো সাথে জোরপূর্বক কিছু করে না।প্রেমিকরূপী মেয়েদের তিনি ঘৃনা করেন।কেন করেন জানি না?আর এজন্যই তাদের সাথে শারীরিক সম্পর্ক ছাড়া আর কোনো আবেগ রাখেন না।তার অতীত আমাদের মতো না ইমা।জন্মগত কেউ চরিত্রহীন হয় না।পরিস্থিতি মানুষকে বাধ্য করে খারাপ চরিত্রের হতে।পরিস্থিতির বেড়াজালে পড়ে মানুষ এমন অনেক কিছুই করতে বাধ্য হয় কিংবা অভ্যাসগ্রস্ত হয় যা তার করার ইচ্ছা নাই।কিন্তু তবুও সে করে। সকল অন্যায় অনৈতিক কাজ তার কাছে জায়েজ হয়ে যায়।কে জানে শান ভাইয়ের জীবনেও এমন কিছু আছে। তাকে হয়তো কেউ শেখায় নি শান এটা মন্দ এটা অনুচিত। ছোটবেলা থেকেই অন্যায় অনাচারে থেকে কেউ কি ন্যায় শিষ্টাচার শেখে?তিনিও শেখেন নি।মানুষটা মানুষের মতো হাসে না, অনুভূতি জাহির করে না।কেমন ভেতরে ভেতরে গুমড়ে মরে।যারা কাছের লোক তারাই বোঝে।দূরের লোকের কাছে তো শুধু তার দোষই ধরা পড়ে।জীবনকে কতোটা ঘৃণা করলে একটা মানুষ পাপের দহনে জ্বলে তিলে নিজেকে শেষ করে দেয় ইমা বল? ইরার গলা ধড়ে এসেছে।ইমা ইরার কাঁধে হাত রেখে গম্ভীরমুখে বলে,
“- তুই যাই বলিস আপা! আমি কিন্তু এসব অনৈতিকতাকে সাপোর্ট করি না।তার জন্য বিয়ে ফরজ। সে বিয়ে করে যা খুশি করুক।পাপ করে জাহান্নামী হচ্ছে কেন?
“- সে তো চাই ই তার জীবন শেষ হয়ে যাক।মরে পড়ে থাকুক রাস্তায়। আর বিয়ের কথা বলছিস?এটা কোনোদিন সম্ভব নয়।তার জীবনে না কোনো মেয়ে এসেছে না আসবে।
“- এতো বিতৃষ্ণা কেন জীবনের উপর তার?জোর করে বিয়ে করিয়ে দে। দেখবি বউ ঘরে আসলে সব ঠিক হয়ে যাবে।
ইমার কথা শুনে ইরা নির্বিকার তাকিয়ে মৃদু হেসে বলে,
“- ঐ মেয়ে তো একদিনও টিকবে না।শান ভাইয়ের রাগ তো জানিস না।আর যে তার কোনোজিনিস কাউকে স্পর্শ করতে দেয় না সহজে, সে বউকে কি করে ঘরে রাখবে।বউকে শোয়াবে কই?
“- কেন বান্ধবীদের শোয়াই কোথাই?
“-ওসব বান্ধবীদের কোনোদিন বাড়ি আনেন না শান ভাই।তবে এলা আপু মাঝে মধ্যে আসে।শান ভাইয়ের দুজন বেস্ট ফ্রেন্ড এলা আপু আর রিফাত ভাইয়া।এলা আপুর সাথে শান ভাইয়ের অনৈতিক কোনো সম্পর্ক নেই।
“- তুই কি করে জানলি?
“- জানি রে জানি এখন সর। নিজেও গেলি না আমাকেও দেরি করিয়ে দিলি।ইরা সিড়ি বেয়ে উপরে উঠে শানের দরজায় কড়া নাড়লো
“- ভেতরে আসো ইরা।ইরা রুমে ঢুকে দেখলো কালো গেঞ্জি থ্রি কোয়াটার প্যান্ট পড়ে হাটু গোল করে ভাজ করে ফ্লোরময় বই ছড়িয়ে বসে বুকসেলফ পরিস্কার করছে।কফির কাপটা কাছে নিয়ে বললো,
“- ভাই আপনার কফি।
“-পাশে রাখো। বই মুছতে মুছতেই জবাব দিল।
“- ভাই আমি পরিষ্কার করে দেই?
“- থ্যাংকস ইরা।আমি করে নেবো তুমি যাও।
ইরা যাওয়ার জন্য পা বাড়াতেই শান কফি হাতে পেছন ফিরে বসে বললো
“-ইরা! তোমার পরিবারের কোনো সমস্যা হচ্ছে না তো?
“- না ভাই!
“- ওকে!কোনো সমস্যা হলে আমাকে কিন্তু জানাবা।সংকোচ করবে না একদমই।
ইরা হেসে জবাব দিল,
“- জ্বী আচ্ছা ভাই।
শান কফি নিয়ে ব্যালকনির দিকে এগোতে এগোতে বললো,
“- আচ্ছা যাও।
“- জ্বী ভাই।ইরা শানের রুম থেকে বেরিয়ে এসে ইমার উপর খুব রাগ হলো মনে মনে।এমন একটা মানুষকে খারাপ বলছে।শান ভাই খারাপ হলে সবাই খারাপ।ইরার মধ্যে শানকে নিয়ে গর্বিত ভাব জাগলো।
ইমা ইরার আড্ডা আজ আর জমলো না শানের বিষয়ে আলাপ করায়।ইমা বেশ বুঝতে পেরেছে ইরা ভাসুরের সমালোচনা সহ্য করতে পারে নি।আরও কিছুক্ষণ এটা সেটা আলাপ করে ইমা বাংলোতে ফিরে আসলো।ওকে দেখে অহন দৌড়ে আসলো।
“- কি রে কই ছিলি?
ইমা পানসে মুখে জবাব দিল
“- ইরা আপার বাসায়।কেন?
অহন খুশিতে গদগদ হয়ে বললো,
“-আবির কল করেছিল। তোকে নিয়ে যেতে বলেছে বিকেলে।
ইমার মনের মধ্যে খুশির আমেজ চলে আসে কথাটা শুনে।কিন্তু প্রকাশ করে না।
“- কেন? কোনো দরকার নেই। ফুপু জানলে বকবে।
অহন জোর গলায় বললো
“- কেন বকবে? দুদিন পর তো তোরা স্বামী স্ত্রী হবিই।
দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বিছানায় পা এলিয়ে বসে ইমা,
“- এখনও তো হই নি রে ভাই।কে জানে কাল কি হয়? নিঃশ্বাসেরই বিশ্বাস নাই। আর ভবিষ্যতের উপর ভরসা করতে বলছিস?
“- তুই খুব বেশি বাস্তবিক। এতোও ভালো না।কল্পনাও থাকা উচিত।মানুষ আশায় বাঁচে। কল্পনার রঙ জীবনকে আরও বেশি সুন্দর করে বুঝলি?
“- বুঝলাম।এখন বল কোথাই যেতে হবে।এদিকটা কি করে ম্যানেজ করবি?
“- ও আমি দেখে নিবো।তুই বিকেলে রেডি থাকিস শুধু।
ইমা কাপড় হাতে নিয়ে ওয়াশরুমে ঢুকতে ঢুকতে বললো,
“- ঠিক আছে।
অহন উঠে ব্যালকনিতে দাঁড়ালো।সামনে ব্যালকনিতে শানকে দাড়িয়ে থাকতে দেখে গল্প জুড়ে বসলো।শান হু! হা দিয়েই জবাব দিলো।কিছুক্ষণ বাদে দু’জনই যার যার রুমে ফিরে গেলো।
বিকেলে বড় ফুপুর কাছ প্রয়োজনীয় জিনিস কেনার কথা বলে অহন ইমাকে নিয়ে বনানীর চিলেকোঠা রেস্টুরেন্টের উদ্দেশ্যে বের হলো।ইমা আজ নীল রঙের একটা জামদানি পড়েছে।মাথায় নীল সোনালী ছাপার হিজাব বাঁধা। রেস্টুরেন্টের সামনে অহন, ইমা নেমে ভেতরে ঢুকবে তখনই পাশ দিয়ে শান বডিগার্ড সহ বেরুচ্ছিল।শানকে দেখে অহন হ্যান্ডশেক করলো।অহনের দারুন পছন্দ শানের স্টাইল, এটিটিউড, বাচনভঙ্গি। অহনের সুযোগ হলে অহন সারাটা দিনই শানের সাথে সাথে থাকতো।শান ইমা দিকে তাকিয়ে অহনের কথার জবাব দিচ্ছে। ইমার অস্বস্তি লাগছে এভাবে শানের সামনে দাড়িয়ে থাকতে।কালকের ঘটনার পর ভয় আরও বেশি বেড়েছে।কপালে, মুখে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমতে শুরু করেছে।ইমা কাঁপা হাতে টিস্যু দিয়ে সেটা মুছতে লাগলো।ইমার ভাইয়ের উপর এখন রাগ হচ্ছে।অহন বকবক করার এক ফাঁকে সৌজন্য রাখতে বলে ফেললো
“- ভাই আপনিও চলুন আমাদের সাথে জয়েন করবেন।
“- আরে না! তোমরা ভাই বোন এসেছ আমি কি করবো?
“- আরে ভাই আপনাকে দুপুরে তো বললামই আবিরের সাথে দেখা করতে এসেছি।ওরা আলাপ করবে আমিও আপনার সাথে কিছু প্রয়োজনীয় কথা বলবো।
ইমা চমকে ভাইয়ের মুখের দিকে কটমট করে তাকাই।এতো বলদ ওর ভাইটা! ইমার ইচ্ছা করছে অহনের চুল টেনে ছিড়ে দিতে।শান ইমার মুখের ভাব বুঝে জবাব দিল,
“- আচ্ছা ঠিক আছে।মেহমানকে নারাজ করে আর পাপ বাড়ানো উচিত হবে না কি বলেন মিস?বাই দ্যা ওয়ে ব্রাইডের নাম জানা হলো না এখনও।
“- ভাই ভেতরে চলুন ওখানেই গিয়ে কথা হবে।এই ইমা আয়।অহন আগে আগে যেতে লাগলো।ইমার শাড়ি ক্যারি করে চলতে একটু কষ্টই হচ্ছে। তাই ধীরে ধীরে হাঁটছে।শান ওর পেছনে আসছে এতে আরও বেশি আনইজি লাগছে ইমার।শাড়ির আঁচল টেনে সামনে আনলো।একটা টেবিল বুক করে বসলো তিনজন।অহন কফি অর্ডার করে হেসে শানকে বললো,
“- ভাই আবির আসলে আরেকটা বুক করবো।আপাতত একটাই থাক।ও হ্যাঁ ইমার নাম জানেন না আপনি।এই ইমা শান ভাইকে বল তোর নাম।
ইমা ভাইয়ের দিকে চোখ ছোট করে ক্রুব্ধ দৃষ্টিতে তাকায়।অহন এতোক্ষনে বুঝতে পারে ইমা শানের উপস্থিতি পছন্দ করছে না।কিন্তু অহনের তো পছন্দ। তাছাড়া আবির আসলে ওরা আলাদা বসবে।সমস্যা কই? অহন বোনের দিকে ইশারায় সরি বলে শানকে নাম বলার জন্য রিকুয়েস্ট করে।ইমা অনিচ্ছা স্বত্বে অন্যদিকে তাকিয়ে জবাব দেয়,
“-হুমায়রা জেবিন ইমা।
শান মুখটা চুইংগাম চাবানোর মতো করে বলে
“- নাইস নেম।বাট আমি ব্রাইড ই ডাকবো।নতুন বউকে ব্রাইড ডাকার আলাদা ফিলিংস কি বলো অহন?
“- হ্যাঁ ভাই হ্যাঁ। দাঁত কেলিয়ে হাসতেই ইমা মুখটা কঠিন করে অহনের দিকে তাকায়।অহন পানসে হাসি দিয়ে কফির অর্ডার চেক করার জন্য উঠে দাঁড়ায়। ইমা ভাইকে থামাতে গিয়েও শানের দৃষ্টির ব্যাঙ্গ দেখে সাহস পায় না।
পর্ব ০৬
Writer Tanishq Sheikh
ইমা অস্থিরচিত্তে চোখ নামিয়ে চুপচাপ বসে থাকলেও ঠিক বুঝতে পারছে শান অপলক ওর দিকেই চেয়ে আছে।ইমা বেশিক্ষণ নজর সামলে রাখতে পারলো না কৌতূহল দমাতে চোখের পাতা তুলে তাকাতেই শানের চোখে চোখ পড়ে যায়।কি মারাত্মক চাহনী! ইমা কিছুক্ষনের জন্য হলেও নিজেকে হারিয়ে ফেলে ও চোখের চাহনীর মায়াজালে।শানের শান্ত গলার আওয়াজে নিজেকে সামলে অন্যদিকে তাকিয়ে নিজের উপর রাগ হয়।এই মানুষটার উপস্থিত মনে ভয় ই সঞ্চার করে না উদ্বিগ্নতাও বাড়িয়ে তোলে।সব কিছু এলোমেলো করে দেয়।
“-হাতে কি বেশি ব্যথা পেয়েছ? কথাটা বলে টেবিলের নিচে রাখা ইমার হাতটা নিজের হাতে নেয়।কব্জির লাল হয়ে যাওয়া চামড়ার উপর আলতো করে বৃদ্ধাঙ্গুল বুলায়।ইমার তনুমন মুহুর্তে শিহরিত হয়।হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করে।কিন্তু ছাড়াতে পাড়ে না।কি এক অদ্ভুদ অনুভূতি জাগিয়ে দিচ্ছে?অসহায় চোখে শানের হাতের দিকে চেয়ে বলে,
“- আপনি এমন কেন করছেন আমার সাথে? সত্যি করে বলুন তো এখানে আপনি আমার জন্য আসেন নি?
ইমার কথা শুনে শানের রুক্ষ কঠিন মুখটায় হাসির আভা খেলা করলো।হাতটা আরও শক্ত করে ধরে বললো
“-তোমার তাই মনে হয়? তাহলে তাই।শানের চোখে সাহস করে আরেকবার তাকায় ইমা।বোঝার চেষ্টা করে শানের মনের ভাব।কিন্তু এই লোককে বুঝে ওঠা সম্ভব না ইমার জন্য।ইমা এবার রেগে কর্কশ গলায় বলে উঠলো,
“-হাত ছাড়ুন! আপনি যা করতে চাচ্ছেন আমি ভালোই আন্দাজ করতে পারছি।কেন এমন করছে জানি না তবে জেনে রাখুন যে উদ্দেশ্যেই করছেন সে উদ্দেশ্য কোনোদিন সফল হবে না।আবির আর আমাকে কোনোদিন আলাদা করতে পারবেন না।
ইমার চোখে চোখ রেখে ঠোঁট বাকিয়ে ভ্রু উচু করে বল
“- লেটস সি!
শানের এমন এটিটিউডে ইমা গায়ে জ্বালা ধরে যায়।হাত জোর করে ছাড়িয়ে মুখ শক্ত করে বলে
“- আবির আমাকে ভালোবাসে আমিও আবিরকে ভালোবাসি।আপনি পারবেন না আমাদের আলাদা করতে।
শান আচমকা টেবিলের নিচ থেকে ইমার হাত এমন ভাবে টান দেয় ইমা ভয়ে শিওরে ওঠে।ইমার দিকে ভালো করে পর্যবেক্ষণ করে কঠিন চোখের চাহনিতে ঠোঁটে ব্যাঙ্গাত্মক হাসির আভা তুলে শান্ত ও গাম্ভীর্য্য গলায় বলে।
“-তোমাকে আজ খুব সুন্দর লাগছে।তুমি লাকি তোমাকে শান কমপ্লিমেন্ট দিয়েছে।কেন দিয়েছে জানো কারন তুমি শানের কাছে স্পেশাল। আচ্ছা চলি! ইমার হাত ছেড়ে উঠে দাঁড়ায় তারপর পকেটে হাত রেখে ইমার দিকে ঝুকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে দুচোখ ভরে দেখতে থাকে।
“-তোমাকে পছন্দ করে ফেলেছি আমি ব্রাইড।দুআ করো যেন এই পছন্দ ভালোবাসাতে রূপান্তরিত না হয়।যদি হয় তাহলে তো তোমাদের আলাদা হওয়াটা শতভাগ অনিবার্য হয়ে পরবে।তখন যথার্থই আমারই ব্রাইড হবে তুমি।বেস্ট অফ লাক ব্রাইড!
শান চোখে গোল ফ্রেমের কালো চশমা পরে এক পকেটে হাত রেখে সোজা বেরিয়ে যায়।আশেপাশে মেয়েরা লুকিয়ে মোবাইলে ছবি তুলতে লাগলো ব্লাকে মোড়ানো এই হ্যান্ডসামের।ইমার মাথা ভনভন করে শানের কথা শুনে।নির্বিকার স্থির দৃষ্টিতে বোকা বনে বসে থাকে।শানের বলা কথাগুলো সিসার মতো কানে লাগলো।
কিছুক্ষণ বাদে আবির আসে।কিন্তু ইমা আবিরের কোনো কথায় মনোযোগ দিতে পারে না।এদিকে অহন আপসেট হয়ে বসে আছে শান না বলে চলে গেছে দেখে।আবির আজ ইমার উপর সামান্য বিরক্ত হয়।এতো নিরস এই মেয়ে।কোনো রোমান্টিক প্রেমালাপ বোঝে না। আবিরের ধারনা ইমা আবিরের সঙ্গ পছন্দ করছে না।পুরোটা সময়ই মুখটা ভার করে বসে আছে।ইমা রাতে বাসায় এসে শানের কথা ভাবতে থাকে।মাথায় কিছুই আাছে না।এমন কথা কি করে বলতে পারে শান যখন জানে ইমা অন্য কারো বাগদত্তা।ইমার ভাবনারা ক্রমশ বিক্ষিপ্ত হতে লাগলো।বাসার ছোটরা খান প্যালেসের ছাঁদে ডিজে পার্টি রেখেছে।অহন হচ্ছে মূল উদ্যোক্তা। ইরা ইমার মুখে হলুদ,চন্দনের ফেসপ্যাক লাগিয়ে দিয়েছে।অহন সে অবস্থায় একপ্রকার টেনে ইমাকে ছাঁদে নিয়ে আসে।সবাই বায়না ধরেছে ইমার নাচ দেখবে।সানাও এসেছে।সেও অনুরোধ করছে।অবশেষে বাধ্য হয়েই ইমা কোমরে ওড়না বেঁধে নাচের জন দাঁড়ায়। সবাই সিটি বাজিয়ে হাতে তালি দিয়ে পার্টির আমেজ বাড়ায়।
বাজিরাও মাস্তানি মুভির মাস্তানি সং টা প্লে করা হয়।ইমা গানের তালে তাল মিলিয়ে নাচতে থাকে।গানের তালে নিজেকে এতোটাই মগ্ন করে ফেলেছে যে এটাই খেয়ালে নাই কেউ একজন পেছনে ঠাঁই দাড়িয়ে ওকে পর্যবেক্ষণ করছে।শুধু চোখ দিয়ে নয় মন দিয়েও।শান মোবাইলে কথা বলতে বলতে ছাদের দরজায় এসে ইমার নাচ দেখে থেমে যায়।এগিয়ে এসে দাঁড়িয়ে আছে।সানা ভাইকে এভাবে দাঁড়াতে দেখে কপাল কুঁচকায়।
ইমা নাচের মুদ্রায় তাল মেলাতে থাকে,,,
Zakham aisa tune lagaya
Deewani, deewani, deewani, deewani ho gayi
Marham aisa tune lagaya
Ruhaani, ruhaani, ruhaani, ruhaani ho gayi
Pehchaan mere ishq ki ab toh
Pehchaan mere ishq ki ab toh
Rawaani, rawaani, rawaani, rawaani ho gayi
Ho.. mash’hoor mere ishq ki kahani ho gayi
Kehte hai yeh deewani, mastani ho gayi
Haan deewani, haan deewani, deewani ho gayi
Mash’hoor mere ishq ki kahani ho gayi
Jo jag ne na maani toh maine bhi thaani
Kahaan thi main dekho kahaan chali aayi
Kehte hain ye deewani, Mastani ho gayi
Deewani haan deewani, deewani ho gayi
ইমা গোল গোল ঘুরতে গিয়ে শানের বুকে ধাক্কা খেয়ে থেমে যায়।সবাই আহ! করে হতাশ শব্দ করে ওঠে।
শান একচোখের উপরের ভ্রু উচু করে করে ইমার চোখে মুখে ভালো করে দৃষ্টি ঘুরিয়ে জিহ্বার কোনা মাড়ির দাঁতে লাগিয়ে ঠোঁট আলগা করে মুচকি হেসে বলে
“- থ্যাংকস।
ইমা ভড়কে যায় শানের থ্যাংকস বলার ভাব ভঙ্গি দেখে। দুকদম সরে এসে মুখটা কঠিন করে ঢোক গিলে টেনে বলে
“- কি-সে-র থ্যাং-কস?
“- আমার দিওয়ানী হওয়ার জন্য। সবার দিকে তাকিয়ে চোয়ালে আঙ্গুল বুলাতে বুলাতে নিচে নেমে যায় শান।
ইমা ইচ্ছা করছে গলা ছেড়ে কাঁদতে।হাত মুঠ করে দাঁতে দাঁত চেপে ইইইইই করে উঠলো।মনে মনে ভাবছে কি ভাবটাই না এ বদ শান মেরে গেলো।দিওয়ানী না ঠ্যাঙ্গা হবো তোর।খালি একবার বাগে পায় ভাব কাকে বলে সুদে আসলে শিখিয়ে দেবো।বদ,খাটাশ! পেছন ঘুরে সবার দিকে রেগে ফোসফোস করে সিঁড়ি বেয়ে দ্রুত বাংলোতে চলে আসে ইমা।বালিশের উপর ইচ্ছা মতো কিল ঘুষি মেরে রাগ নিবারণের চেষ্টা করে নিজের চুল নিজেই টেনে হাঁটু মুড়ে বসে।বার বার ঐ চোখের চাহনি ভাসছে।রাগে গা জ্বলছে ইমার।তোয়ালে নিয়ে ওয়াশরুমে ঢুকে শাওয়ার ছেড়ে দাড়িয়ে রইল চোখ বন্ধ করে।বন্ধ করতেই শানের থ্যাংকস বলার মুখ ভঙ্গিটা ভেসে উঠছে।ইমা রাগে ফুসতে ফুসতে বলে,
“- কাল থেকে আমিও দেখে নেবো আপনাকে।মেয়েমানুষকে অবলা পেয়ে পুতুল নাচ নাচাচ্ছেন?ভয় পাই তো কি হয়েছে? ভয়কে জয় করেই আপনাকে শিক্ষা দেবো।চরম শিক্ষা।ভুলেও তখন আর আমার সাথে নাটক করতে আসবেন না।ইমা ঠোঁট ফুলিয়ে প্লান কষতে থাকে।
চলবে,,,