তোমার আঁচলের উঠােনে পর্ব ০৩
— বাবা, আমি ঢাকা গিয়ে পড়াশোনা করতে চাই। এখানে আমার পড়াশোনা হবে না।
কথাটা বলেই বিভাবরী হু হু করে কেঁদে উঠলো। তার বাবা আদনান সাহেব চিন্তিত মুখে মেয়ের দিকে তাকালেন। যে মেয়ে বাড়ি ছেড়ে দুদিনও কোথাও থাকার কথা চিন্তা করতে পারে না, তার আজ এত দূর গিয়ে পড়াশোনা করতে চাওয়ার কারণটা তিনি বুঝতে পারছেন না। বিভাবরী তার বাবাকে জড়িয়ে ধরে বললো,
— বাবা, আমার জন্মদিনে গিফট হিসেবে আমার এটাই চাওয়া। তুমি দিবে না??
আদনান সাহেব কপাল কুঁচকে ফেললেন। প্রথম বারের মত তাঁর মেয়ে জন্মদিনে তাঁর কাছে কিছু চেয়েছে। তিনি কি করে না করতে পারেন! তিনি সঙ্কিত গলায় মেয়েকে জিজ্ঞেস করলেন,
— আচ্ছা মামণি! তোমার এমনটা চাওয়ার কারণ কি??
— আমি পড়াশোনায় সিরিয়াস হতে চাই, বাবা। আমি ওখানে ভালো কোনো ভার্সিটি তে পড়তে চাই।
— সেটা তো আমাদের চট্টগ্রামেও আছে মা!
— বাবা, তুমি কি চাও না আমি ভালো ভাবে পড়াশোনা করি??
— অবশ্যই মামণি।
— তাহলে তুমি ব্যবস্থা করে দাও, বাবা।
বলতে বলতেই বিভাবরী হেঁচকি তুলে ফেলেছে…
বিভাবরীর বাবা একপ্রকার বাধ্য হয়েই তার কথায় রাজী হলেন।
এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
আমাদের গল্পপোকা ফেসবুক গ্রুপের লিংক: https://www.facebook.com/groups/golpopoka/
অবশেষে প্রাণের শহর চট্টগ্রাম ছেড়ে বিভাবরী ঢাকায় চলে আসে। রেজাল্ট ভালো হওয়ায় ভার্সিটিতেও চান্স পায়। তবে সমস্যা হয় অন্য জায়গায়। তার বাবার এক বন্ধুর বাড়িতে সে থাকে। তার বাবার বন্ধু আজমাইন চৌধুরী একজন তুখোড় রাজনীতিবিদ। তাদের বাড়ির সামনে ২৪ ঘন্টা দুজন লোক বন্ধুক হাতে দাঁড়িয়ে থাকেন। বাড়ির কাজের লোকের মধ্যেও রাজনীতি রাজনীতি ভাব। সবাই একটা নির্দিষ্ট গন্ডির মধ্যে থেকে কাজ করে। রোবোটিক টাইপ…
বিভাবরী সবার সাথে মানিয়ে নিতে পারলেও একজনের সাথে কিছুতেই মানিয়ে নেওয়া যাচ্ছে না। আজমাইন চৌধুরীর ছেলে রিশাদ চৌধুরী। সারাক্ষণ কড়া পার্ফিউম গায়ে মেখে, শার্ট বা গেঞ্জির কলার উঁচু করে রাখে। আর বাড়ির মধ্যেও চোখে কালো সানগ্লাস থাকবেই। প্রথম যেদিন সে এই বাড়িতে আসে, সেদিন তার সাথে পরিচয় করিয়ে দিতে আজমাইন চৌধুরীর স্ত্রী নাজনীন তাকে ডেকে বললেন,
— রিশাদ, শোন! ও হলো বিভাবরী! তোর ভার্সিটিতেই চান্স পেয়েছে। আর এখানে থেকেই সে পড়াশোনা করবে। বুঝলি??
রিশাদ নামের ছেলেটা বিভাবরীর আপাদমস্তক তাকিয়ে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখলো। তারপর ভ্রু জোড়া কুঁচকে বললো,
— তোমার নাম বিভাবরী?
— হু!
— কে রেখেছে এই নাম? তোমার বাবা??
— হু!
— থ্যাংক্স গড! তোমার জন্মানোর সময় তোমার মাথায় এখনকার মত চুল ছিল না।
— কেন?
— তাহলে দেখা যেত তোমার বাবা তোমার নাম কেশবতী রেখে দিত। কিংবা ডালিমের মত গায়ের রং থাকলে ডালিমকুমারী রেখে দিত!
কথাটা বলেই সে হো হো করে হেসে উঠলো। এরপর থেকে তার বিভাবরীর সাথে যখনই দেখা হচ্ছে, তাকে থামিয়ে দিয়ে বলে,
— তোমার নাম যেন কি? ডালিমকুমারী? নাকি বি..বি..বিভাবরী?
এই লাইনটা বলেই অট্টহাসিতে ফেটে পড়ে। বিভাবরীর তখন ইচ্ছে হয় এক ঘুষিতে ছেলেটার নাক ফাটিয়ে দিতে। কিন্তু সে চোখ-মুখ শক্ত করে নিজের ঘরের দিকে পা বাড়ায়। তখন রিশাদ ধুপধাপ পা ফেলে পেছনে এসে দাঁড়ায়। আর বিভাবরীর চুল টেনে ধরে বলে,
— কেশবতী! চলে যাচ্ছো যে!
বলেই হ্যাঁচকা টান দেয়। তাল সামলাতে না পেরে সিঁড়ি থেকে পড়ে গিয়ে পা অবদি ভেঙে ফেলেছে বিভাবরী…
সমস্যা শুধু রিশাদ কে নিয়েই নয়, ধ্রুব কে নিয়েও হচ্ছে। বিভাবরী এই শহরে এসেছিল ধ্রুব কে ভুলতে। কিন্তু তা তো হচ্ছেই না বরং উল্টোটা হচ্ছে। বিভাবরী ঘুমোতে পারছে না রাতে। চোখ লেগে আসলেই দেখছে ধ্রুব তার সামনে। কোথা থেকে এসে ঠাস করে বিভাবরীর গালে থাপ্পড় মেরে দিচ্ছে। কান টেনে ধরে বলছে,
— ফাজিল মেয়ে! ঢাকায় এসে পড়াশোনা করতে হবে কেন? বিদ্যাসাগর হবে নাকি? পৃথিবী পাল্টে দেবে পড়াশোনা করে? হুহ্!
এসব আজগুবি স্বপ্নে রাতে ঘুমোতে পারছে না সে। বিছানায় শুতে গেলেই মনে হয় এই বুঝি ধ্রুব এসে তাকে থাপ্পড় মারলো! কান টেনে ধরলো! আর জেগে থাকলে মনে হয় রিশাদ বুঝি তার চুল টেনে ধরে বলছে,
— কেশবতী! তোমার চুলগুলো দেখলেই মনে হয় কেটে ফেলি। আচ্ছা, তোমার চুলে চুইঙ্গাম লাগিয়ে দিলে তুমি কি আমাকে মারবা? অনেক মারবা নাকি একটু…
চলবে…
#তোমার_আঁচলের_উঠোনে
– আবরিয়ার জান্নাত
এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
শুধুমাত্র আপনার লেখা মানসম্মত গল্প/কবিতাগুলোই আমাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হবে। এবং সেই সাথে আপনাদের জন্য থাকছে আকর্ষণীয় পুরষ্কার।
▶ লেখকদের জন্য পুরষ্কার-৪০০৳ থেকে ৫০০৳ মূল্যের একটি বই
▶ পাঠকদের জন্য পুরস্কার -২০০৳ থেকে ৩০০৳ মূল্যের একটি বই
আমাদের গল্পপোকা ফেসবুক গ্রুপের লিংক:
https://www.facebook.com/groups/golpopoka/