#তোমায়_প্রয়োজন
#মেঘাদ্রিতা_মেঘা
#পর্ব_৩
আমি প্রত্যয়ের জন্য জুস আনতে চলে যাই।
জুস নিয়ে প্রত্যয়ের কাছে আসতেই
আমার সারা শরীর কাঁপতে থাকে।
হাত থেকে জুসের গ্লাস টা পরে যায়।
আর অস্পষ্ট কন্ঠে আমি বলে উঠি,
_অর্পন…
_জারা,কি হয়েছে তোমার?ঠিক আছো তো তুমি?
_সরি!কিভাবে যেন হাত থেকে পড়ে গেলো গ্লাস টা।
_আচ্ছা সমস্যা নেই,
এই দেখো কে এসেছে,
আরে তাড়াতাড়ি এসো।
এই দেখো,ও হচ্ছে অর্পন।আমার এক মাত্র ভাই।
আমার খালাতো ভাই।
যে কিনা আমার বন্ধু, ভাই সব কিছু।
ও আমাদের বিয়েতে আসতে পারেনি বলে ওকে দেখোনি তুমি।
আজই দেশে এসেছে ও।তাও শুধু মাত্র আমার জন্মদিন বলে।
কত্ত বড় সারপ্রাইজ দিলো আজ ও আমাকে।
_তোকে আর আমি কি সারপ্রাইজ দিলাম।
তুই তো আমাকে তার চেয়েও বড় সারপ্রাইজ দিলি।
_আমি সারপ্রাইজ দিলাম?
কি সারপ্রাইজ দিলাম তোকে আমি আবার?
_না মানে।
এই যে কত সুন্দর একটা বউ এনে সারপ্রাইজ দিলি।
যাইহোক পরিচিত হই আমরা তাহলে,
হাই আমি অর্পন,
প্রত্যয়ের ভাই।
(হাত বাড়িয়ে)
_আসসালামু আলাইকুম আমি জারা।
প্রত্যয়ের স্ত্রী।( হাত না মিলিয়ে)
_তোমাকে আমি তুমি করেই বলবো জারা।
আর নাম ধরেই ডাকবো।
কারণ প্রত্যয় আর আমি সম বয়সী।
কিরে প্রত্যয় তোর কোন আপত্তি আছে নাকি রে?
_আরে নাহ কি বলিস।
তাছাড়া জারা তো আমাদের থেকে অনেক ছোট।
তুই নাম ধরেই ডাকিস।
এত ফরমালিটির দরকার নেই।
এমন সময় শাশুড়ী মা এসে অর্পনকে দেখে জড়িয়ে ধরেন।
_বাবা তুই,
কখন এসেছিস।
কবে এসেছিস দেশে?
জানালিও না একটু।
তোর মাও বল্লোনা কিছু।
তোর মাকে কত করে বললাম,আসলোনা।বলে ওর নাকি কোমড়ের ব্যথাটা বেড়েছে।
_কি যে বলোনা খালামণি,যদি জানিয়ে আসতাম তাহলে কি সারপ্রাইজ দিতে পারতাম?
আজই দেশে এসেছি আমি।
আর এসেই তোমাদের এখানে।
মাকে তোমাদের জানাতে না করেছি।
আর মার ব্যথাটা খুব বেড়েছে।
আমিও বলেছিলাম আসতে।
বল্লো তুই চলে যা।
প্রত্যয়ের বিয়েতে আসতে পারিনি।
জন্মদিনে তো আসাই লাগবে বলো।
তাইতো চলে এলাম।
তবে খালামণি,প্রত্যয়ের বউকে কিন্তু আমার খুব পছন্দ হয়েছে।
_শুধু তোর না আমাদের সবার পছন্দ হয়েছে।মিষ্টি বউমা আমার।
_মা আমি একটু ভেতরে যাচ্ছি।
মাথা টা যেন কেমন করছে।
এই কথা বলে আমি চলে আসি ওখান থেকে।
রুমে গিয়ে বসে থাকি।
কিছুক্ষণ পর প্রত্যয় গিয়ে আমার নাম ধরে ডাকতেই আমি আঁতকে উঠি।
_জারা,কি হয়েছে তোমার?
_না কিছু নাতো।
_তাহলে ওখান থেকে চলে আসলে যে?
আর এখন আবার আমি ডাকতেই কেমন কেঁপে উঠলে।
_না এমনি শরীর টা কেমন যেন লাগছে।
_চলো সবাই অপেক্ষা করছে কেক কাটবো।
তারপর সবাই মিলে কেক কেটে আনন্দ করে পার্টি সমাপ্ত হয়।
অতিথিরা সবাই চলে যায়।
অর্পনের আড় চোখে আমার দিকে তাকানো টা আমার একদমই ভালো লাগছেনা।
অসহ্য লাগছে।
কখন ও যাবে আমি সেই অপেক্ষায় আছি।
পার্টি শেষে অর্পন বলে,আমি আজ তাহলে আসি।
ওহ হো! এই যে তোদের জন্য গিফট।
কাপল রিং এনেছিলাম দুজনের জন্য।
দে দে আমি পরিয়ে দেই।
এই বলে অর্পন প্রত্যয়ের আঙুলে একটা আংটি পরিয়ে দেয়।
ওকে পরিয়েই আমার কাছে আসে আমার আঙুলে অপর আংটিটি পরিয়ে দিতে।
_দেখি জারা এদিকে এসো তো,
_আমার জন্য গিফট এনেছেন,নিতে তো হবেই।না নিলে মা আর আপনার ভাই আবার মন খারাপ করবে।
আমার হাতে দিন।
আমি নিজেই পরে নিবোনে।
অর্পন চেয়েছিলো ও আমাকে আংটিটা পরিয়ে দিবে।
কিন্তু আমি সেই সুযোগ না দিয়ে আংটিটা হাতে নিয়ে নেই।
অর্পনের মুখ টা ফ্যাকাসে হয়ে যায়।
_আচ্ছা খালামণি আমি আজ তাহলে আসি।
খালু আবার কোথায় গেলো,ডাকো খালুকে দেখা করে যাই।
_তুই এসেছিস আর আজ তোকে আমি যেতে দিবো?
আজ তো তোকে থেকেই যেতে হবে।
_না খালামণি,মা অপেক্ষা করছে।
আজ আসি।
দুদিন পর কাপড় চোপর গুছিয়ে চলে আসবো লম্বা ছুটিতে কেমন?
_সত্যি তো?
_হুম একদম সত্যি।
_আচ্ছা তাহলে।
এরপর অর্পন সবার থেকে বিদায় নিয়ে চলে যায়।
আমি রুমে গিয়ে আমার কানের দুল,গলার নেকলেস খুলে ছুড়ে ছুড়ে খাটে ফেলতে থাকি।
তখনই প্রত্যয় রুমে আসে।
ওকে দেখে স্বাভাবিক ভাবে টিকলিটা খুলে রাখি।
_জারা
_জ্বী বলুন।
_থ্যাংক ইউ।
_কিসের জন্য?
আমার জন্য এত সুন্দর করে সব আয়োজন করার জন্য।
_এটা আমার দায়িত্ব ছিলো।
ধন্যবাদ লাগবেনা।
_আচ্ছা বলো,কেমন দেখলে তমাকে?
দারুণ না দেখতে?
কত স্মার্ট বলো?
_হুম সুন্দর।
_আর কিছু বলবেনা?
_কি বলবো,অনেক সুন্দর।
_আমি তা বলিনি,আমি বললাম রাগছোনা যে?
একটু আগেও তো বললে আমি যেন ওর সাথে কোন রকম যোগাযোগ না রাখি।
আর এখন নিজের মুখে সুন্দর ও বলছো।
_কারো মনের উপর তো আর জোর করা যায়না তাইনা?
আপনি নিজে থেকে যোগাযোগ বন্ধ না করলে কি আমি জোর করে বন্ধ করাতে পারবো?
_তাও ঠিক।
_আচ্ছা আপনারা দুজন দুজনকে এতই যখন ভালবাসেন,তাহলে বিয়ে করলেন না কেন?
আমাকে কেন বিয়ে করলেন?
আমার জীবন টা কেন নষ্ট করলেন?
এখন তো ঠিকই আমাকে ডিভোর্স দিয়ে নিজেরা এক হবেন।
আমার কি হবে ভেবে দেখেছেন একবার?
আমি ভেবেছি এত দিনে আপনার আমার প্রতি মায়া জন্মে গেছে।
আপনি আপনার অতীত পেছনে ফেলে আমাকে নিয়ে ভাবছেন।
কিন্তু আমার ধারণা ভুল।
সম্পূর্ণ ভুল।
আজকের পর আমি আর আপনাদের মাঝে কাঁটা হয়ে দাঁড়াবোনা।
আপনি মুক্ত।
কবে ডিভোর্স দিতে চান জানাবেন।
আমি পেপারে সাইন করে দিবো।
কিন্তু আমার এই প্রশ্নটার উত্তর দিয়ে যান,
আপনার যদি বিয়েতে মত ই না থেকে থাকে,তাহলে কেন করলেন আমাকে বিয়ে?
প্রত্যয় কোন উত্তর না দিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে যায়।
আমি খাটের উপর শুয়ে পড়ে কাঁদতে থাকি।
দুদিন কেটে যায়।
প্রত্যয় আজ দুপুরে খিচুড়ি খেতে চেয়েছেন বলে আমি একমনে খিচুড়ি রান্না করছি।
হঠাৎ করে কিচেন রুমে কেউ একজন এসে আমাকে বলে,
_বাহ খিচুড়ি রান্না হচ্ছে।
কত দিন হয় এই মজার খিচুড়ি খাইনা।
আচ্ছা চ্যাপা শুটকির ভর্তাটা বানাবেনা?
_অর্পন,আপনি কেন এখানে এসেছেন?
চলে যান এখান থেকে।
_কেন?আমি থাকলে কি সমস্যা?
_অর্পন আপনি কি যাবেন নাকি আমি চলে যাবো?
_গিয়ে দেখাও পারলে।
এই কথা বলা মাত্র আমি চলে যেতে থাকি।
আর তখনই অর্পন আমার হাত টেনে ধরে কিচেন রুমের দেয়ালের সাথে আমাকে শক্ত করে এটে ধরে।
_কি করছেন আপনি?
_খুব বাড়াবাড়ি হয়ে যাচ্ছে কিন্তু।
আমি কিন্তু সবাইকে ডাকবো।
_ডাকো তো দেখি,চিল্লাও।
জোরে জোরে চিল্লাও।
বাঁচাও বাঁচাও কে কোথায় আছো আমাকে বাঁচাও।
বলো বলো।
_অর্পন তুমি কিন্তু তোমার লিমিট ছাড়িয়ে যাচ্ছো।
_আমি কোথায় ছাড়ালাম?
ছাড়িয়েছো তো তুমি।
দুনিয়ায় আর কোন ছেলে পাওনি?
আমার ভাইকেই কেন বিয়ে করতে হলো?
হুয়াই?
_তোমার ভাইকে জিজ্ঞেস করো,কেন তোমার ভাই আমাকে বিয়ে করেছেন।
অর্পন হাত ছাড়ো আমার।
কেউ দেখে ফেলবে।
_বউমা এই বউমা
_জ্বী মা,
_মা আসছেন,ছাড়ো আমাকে।
_খিচুড়ি হয়েছে বউমা?প্রত্যয় এসে গেছে।
_হ্যাঁ মা এই তো হয়ে গেছে।
_কিরে তুই এখানে কেন?
_খালামণি, খিচুড়ির ঘ্রাণে রান্নাঘরেই চলে এসেছি।
কি সুন্দর ঘ্রাণ বের হয়েছে দেখো দেখো।
_জারার হাতের খিচুড়ি অনেক মজা। খেয়ে দেখিস আজ।
_হ্যাঁ খালামণি অনেক মজা।
_তুই কিভাবে জানলি?
_ইয়ে মানে, এইতো খিচুড়ির ঘ্রাণেই তো বোঝা যাচ্ছে।
_মা আপনারা যান,গিয়ে বসুন।
আমি খিচুড়ি নিয়ে আসছি।
সবাই মিলে দুপুরে এক সাথে খাওয়াদাওয়া হয়।
সেদিন অর্পন থেকে যায় প্রত্যয়দের বাসায়।
কিছু দিন নাকি থাকবে এখানে।
রাতে ছাদে দাঁড়িয়ে আকাশ দেখছি আর ভাবছি।
আগামীকাল আমাকে আমাদের বাসায় যেতে হবে
কিছু একটা বলে।
যেভাবেই হোক।
অর্পন এখানে থাকা মানে প্রতিনিয়ত আমার শ্বাসরুদ্ধকর অবস্থায় থাকা।
ও যেদিন চলে যাবে এখান থেকে, সেদিন আসবো।
আর আমি আসলেই কি না আসলেই কি।
যার জন্য আমার এই বাড়ীতে থাকা তার কাছেই তো আমার কোন দাম নেই।
শুধু পড়ে আছি,আমার পরিবার আর প্রত্যয়ের বাবা মায়ের মুখের দিকে তাকিয়ে।
যাইহোক,সকালে মাকে বলে চলে যাবো।
নয়তো অর্পন কখন কি কান্ড করে বসে তার ঠিক নেই।
.
.
_ওয়াও খিচুড়ি।জারামণি আমার জন্য আজ খিচুড়ি রান্না করেছে.
তাইতো বলি আজ আসতে এত দেরি হচ্ছে কেন।খিচুড়ি রান্না করার জন্যই দেরি হয়েছে না?
_জ্বী জনাব জ্বী।
_উফফ তোমার হাতের খিচুড়ি আর চ্যাপা শুটকি ভর্তা কি যে দারুণ লাগে আমার।
_তাই না?
_হুম তাই।
কোন দিন তোমাকে ভুলে গেলেও তোমার খিচুড়ির আর চ্যাপা শুটকির ভর্তার কথা কোন দিন ভুলবোনা আমি।
_অর্পন (রেগে গিয়ে)
_জ্বীই।
আরে আরে মুখ গোমড়া করে ফেললে যে?
আমি ফান করেছি গাধী।ফান ও বোঝোনা?
তোমাকে ভুলবো কি করে আমি?
জারামণিকে কি ভোলা যায়?
এখন তাড়াতাড়ি লক্ষী মেয়ের মত খাইয়ে দাও তো আমায়।
_নাও হা করো।
_হায়ায়া
হঠাৎ করেই কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে ভাবনায় আমি আমার অতীতে চলে গিয়েছিলাম।
আর তখনই হঠাৎ কে যেন পেছন থেকে আমার হাত টেনে ধরে,
_অর্পন ছাড়ো বলছি,ছাড়ো আমায়।এবার কিন্তু খুব বাড়াবাড়ি হয়ে যাচ্ছে,
পেছনে তাকাতেই আমার বুক কেঁপে উঠে।
_আমি অর্পন না জারা,আমি প্রত্যয়।
চলবে…