#তোমায়_প্রয়োজন
#মেঘাদ্রিতা_মেঘা
#২য়_পর্ব
তোমাকে আমি ডিভোর্স দিবো কয়দিন পর।
এটাই আমার শেষ কথা।
_আর আমারো শেষ কথা শুনে রাখুন আমার আর আপনার মাঝে যে আসবে তাকে আমি…
_কি?
_পরের টা পরেই দেখতে পাবেন।
সেই মুহূর্তে প্রত্যয়ের ফোনে একটা কল চলে আসে,
ফোন টা রিসিভ করেই প্রত্যয় বলে,
_হ্যাঁ আমি এক্ষুনি আসছি।
আর তখনই আমি প্রত্যয়ের ফোন টা ওর হাত থেকে নিয়ে নেই।
আর বলি,কোথাও যাবেন না আপনি।
আপনাকে আমি কোথাও যেতে দিবোনা।
প্রত্যয় রেগে গিয়ে বলেন ফোন টা দাও আমায়।
আমি ফোন টা ওর হাতে দেইনা বলে ও আমার হাত থেকে ফোন টা কেড়ে নিয়ে চলে যায়।
আমি ভাবতে থাকি কি করবো আমি এখন।
আমার পরিবারে যদি জানাই তাহলে তারা কষ্ট পাবেন।
আর তার পরিবারে জানাতে তিনি নিষেধ করলেন।
আমি নিজেও তো তাকে আটকাতে পারলাম না।
কি করবো এখন আমি।
ঘন্টা খানেক পর প্রত্যয় আবার চলে আসেন।
_ফিরে আসলেন যে?
_আমার কোন বিষয়ে কথা বলবেনা কখনো তুমি।
_কে বলবোনা?আমি আপনার স্ত্রী।আমার অধিকার আছে।
_আমি তোমায় সেই অধিকার দেইনি।
তাই আমার কোন ব্যাপারে কোন রকম নাক গলাবেনা।
প্রত্যয় এই কথা বলেই খাটের এক পাশে মুখ ফিরিয়ে শুয়ে পড়লো।
আমিও শুয়ে পরলাম অন্য পাশে।
সকাল হলো,
আমি উঠে ফ্রেশ হবার আগেই দেখি প্রত্যয় আম্মুর সাথে গিয়ে গল্প করছে।
আমি বুঝতেই পারিনা এই প্রত্যয়কে।
আমার সাথে কুস্তি,আমার পরিবারের সাথে কি সুন্দর দোস্তি।
আমার পরিবারের সবাই তো প্রত্যয়ের ব্যবহারে মুগ্ধ।
ফ্রেশ হয়ে আমরা সবাই সকালের নাস্তা করে নেই।
নাস্তা করে বেলকনিতে এসে দাঁড়াই আমি।
পেছন থেকে প্রত্যয় এসে বলে,
_জানো,তুমি অনেক লাকী।
এমন একটা পরিবার পেয়েছো।
এমন পরিবার পাওয়া ভাগ্যের ব্যাপার।
তোমার বাবা মা কত্ত মিশুক।তোমার মায়ের সাথে তোমার বাবা কি সুন্দর আচরণ করেন।
দুজনের কি সুন্দর ভাব।
আর অন্য দিকে আমার বাবা মা।
তাদের এক সাথে হাসতেও দেখিনি কোন দিন আমি।
কত লাকী তুমি।
আজ আপনি যা বলছেন,কোন একদিন আমাদের সন্তানও ঠিক একই কথা কাউকে বললে আপনি খুশি হবেন?
প্রত্যয় কোন কথা না বলে চলে যায়।
দুপুরের খাওয়াদাওয়া সেরে প্রত্যয় আমাকে রেডি হতে বলে ওদের বাসায় যাবার জন্য।
_কি হলো এখনো রেডি হওনি তুমি?
_আমি যাবোনা।
_মানে কি?
_মানে আপনি বুঝেন না?
যেখানে আপনি আমাকে স্ত্রীর মর্যাদাই দিবেন না।
সেখানে গিয়ে আমি কি করবো?
_তোমাকে তো বলেছি এখন না।
কয়েক দিন পর এক বারে চলে এসো।
এখন কোন রকম ঝামেলা করোনা।
নইলে বাবা কি যে করবেন তা তোমার ধারণার বাইরে।
_আপনি চান আমি আপনার বাড়ীর বউ হবার অভিনয় করে যাই নাহ?
_হ্যাঁ অল্প কিছু দিন।
তারপর আমিই তোমায় মুক্তি দিয়ে দিবো।
_আমি যদি আজ আপনার বাসায় প্রবেশ করি,তাহলে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত আপনার জীবন থেকে সরবোনা।
মাথায় রাখবেন কথা টা।
এই বলে আমি রেডি হয়ে নিলাম।
আর সবাইকে বিদায় জানিয়ে চলে গেলাম প্রত্যয়ের বাসায়।
পরের দিন থেকে শাশুড়ী মা সংসার আমার হাতে তুলে দিলেন।
আর বললেন,আজ থেকে এ পরিবার এবং সংসারের দায়িত্ব তোমার।
বাবাও আমাকে বেশ ভালবাসেন।
বাইরে গেলেই কিছু না কিছু নিয়ে আসেন আমার জন্য।
কিন্তু তিনি যে খুব রাগী তা প্রত্যয় আর মাকে দেখলেই বোঝা যায়।
তাকে দেখলেই তারা দুজন যেন ভয়ে নিশ্চুপ হয়ে যান।
প্রত্যয় বাসায় থাকাকালীন প্রায়ই ফোনে কথা বলেন আমার আড়ালে গিয়ে।
আমি না করলেও আমার কোন কথা শুনেন না তিনি।
এর মধ্যে আমি তাকে ইম্প্রেস করার জন্য মায়ের কাছ থেকে জেনে তার পছন্দের খাবার রান্না করি প্রতিদিন।
তার জন্য সাজগোজ করে বসে থাকি।
কিন্তু তিনি আমার দিকে ফিরেও তাকান না।
দেখতে দেখতে প্রায় এক মাস কেটে যায়।
আমি আমার চেষ্টায় বিফল হই।
তাই সিদ্ধান্ত নেই আমি এ বাড়ী ছেড়ে চলে যাবো।
প্রত্যয় তাকে নিয়েই ভালো থাকুক যাকে সে ভালবাসে।
তাই একদিন সকালে আমি বেডের পাশে এক টুকরো কাগজে কয়েক টা লাইন লিখে বাড়ী ছেড়ে চলে যাই।
কিন্তু রাস্তায় যেতেই আমার এক্সিডেন্ট হয়।
আমি অজ্ঞান হয়ে যাই।
আর আমার মোবাইল থেকে কেউ একজন প্রত্যয়ের কাছে ফোন দেয়।
প্রত্যয় তখনই চলে আসেন হসপিটালে যেই হসপিটালে আমাকে নিয়ে যাওয়া হয়।
এক্সিডেন্টে আমার তেমন কোন ক্ষতি না হলেও ডান পা টা মচকে যায়।
কিছু টা সুস্থ অনুভব করলে ডাক্তার আমাকে বাসায় পাঠিয়ে দেন।
আর বেড রেস্ট দিয়ে দেন।বলেন কিছু দিন রেস্টে থাকতে হবে।
পায়ে ভর দেয়া যাবেনা।
প্রত্যয় আর প্রত্যয়ের পরিবার তাদের বাসায় নিয়ে যান আমায়।
আমার পরিবার সেবা যত্ন করার জন্য আমাকে তাদের সাথে নিয়ে যেতে চাইলেও প্রত্যয় আমাকে নিতে দেন না।
প্রত্যয় নিজেই আমার খেয়াল রাখতে শুরু করেন।
আমাকে ধরে ধরে ওয়াশ রুমে নিয়ে যাওয়া থেকে শুরু করে।
আমার চুল বেধে দেয়া,আমাকে খাইয়ে দেয়া,সময় মত ওষুধ খাওয়ানো।সব ই করেন তিনি।
আর সব শেষে প্রতি রাতেই এই বলে ঘুমান,
এগুলো কিন্তু আমি মানবতার খাতিরে করছি।
অন্য কিছু ভেবোনা যেন।
আর আমি তাকে বলি,
আমি সুস্থ হলেই চলে যাবো চিন্তার কোন কারণ নেই।
কয়েক দিনের মধ্যেই আমি সুস্থ হয়ে যাই।
কেন যেন মনে হচ্ছে প্রত্যয়ের মনে এ কয়দিনে আমার জন্য মায়া জন্মে গেছে।
তার চোখে মুখে আমি আমার জন্য মায়া দেখতে পাই।
এর মধ্যেই প্রত্যয়ের জন্মদিন।
মা আর আমি মিলে সব কিছু প্ল্যান করে তার জন্মদিনের আয়োজন করি।
তার পছন্দের কেক আনি।
তার পছন্দ মত সব কিছু সাজাই।
রান্না করি।
ছোট খাটো একটা পার্টির আয়োজন করা হয়।
তিনি তার কয়েক জন বন্ধু বান্ধবীকেও দাওয়াত করেন।
এর মধ্যে একজন হচ্ছে তমা।
যে কিনা খুব বেশিই স্মার্ট।
জন্মদিনের প্রোগ্রামে এই মেয়েই খুব কাছে কাছে থাকছে প্রত্যয়ের।
তার মানে এই মেয়েই হচ্ছে তার প্রেমিকা।
যখনই এই দুজন একত্র হয় আমি গিয়ে তাদের মধ্যে দাঁড়িয়ে পরি।
কাছাকাছি এসে কথা বলার সুযোগ দেইনা।
আমার কেমন যেন অস্বস্তি লাগছে এদের পাশাপাশি দেখে।
একটা পর্যায়ে তো এই মেয়ে আমাকে বলেই ফেল্লো,এই মেয়ে তুমি আমার আর প্রত্যয়ের মাঝখানে এসে দাঁড়াচ্ছো কেন বার বার?
আমি তো রেগেমেগে আগুন,
_আমার বরের কাছে আমি আসবোনা তো কে আসবে?
_সবাই ওখানে এক সাথে মজা করছে।
আর আপনি আমার বরের সাথে এখানে
ওকে নিয়ে এসে চিপকে আছেন।
কেমন মেয়ে আপনি?অন্যের স্বামীর গা ঘেসাঘেসি করতে লজ্জা করেনা?
_তুমি জানো আমি কে?
_না জানিনা,আর জানার ইচ্ছেও নেই।
শুধু জানি এই মুহূর্তে আপনি আমার বরের থেকে চার হাত দূরে দূরে থাকবেন।
আর খাওয়াদাওয়া করে চুপচাপ করে চলে যাবেন।
_তোমার সাহস তো কম না।
আমি তমা,প্রত্যয়ের ভালবাসার মানুষ।
তোমার সাহস কি করে হয় আমার সাথে এমন ব্যবহার করার?
প্রত্যয় তুমি কিছু বলবেনা?
_জারা,তুমি কিন্তু অতিরিক্ত করছো।
যাও এখন এখান থেকে।
_দাঁড়ান আমি বাবাকে ডেকে আনি।
আর বলি আপনার এই কর্মের কথা।
আর আজ আমি সব কিছু বলে দিবো তাদের।
যাচ্ছি।
_এই শোনো শোনো,
আমার আজকের এই দিন টা নষ্ট করে দিবে?
আমি তমার থেকে দূরে সরতেছি।
তুমি যাও আমার জন্য এক গ্লাস জুস নিয়ে এসো।
আমি তমার সাথে একটু কথা বলে আসছি।
প্লিজ আমার আজকের দিন টা মাটি করে দিও না।
_আচ্ছা ঠিক আছে।
শুধু আজ আপনার জন্মদিন বলে আমি কাউকে কিছু জানালাম না।
কিন্তু ওকে আপনার থেকে দূরে যেতে বলুন।
আর আপনিও ওর সাথে কোন রকম আর যোগাযোগ করবেন না।
নইলে আমি বাসায় সবাইকে সব জানিয়ে দিবো।
এই বলে আমি প্রত্যয়ের জন্য জুস আনতে চলে যাই।
জুস নিয়ে প্রত্যয়ের কাছে আসতেই
আমার সারা শরীর কাঁপতে থাকে।
হাত থেকে জুসের গ্লাস টা পরে যায়।
আর অস্পষ্ট কন্ঠে আমি বলে উঠি,
_অর্পন…
চলবে…