#তোমায়_প্রয়োজন।
#মেঘাদ্রিতা_মেঘা
#প্রথম_পর্ব
বিয়ের রাতে হঠাৎ করেই আমার বর এসে আমাকে ধাক্কা দিয়ে রুম থেকে বের করে দিয়ে দরজা বন্ধ করে দেয়।এক ধাক্কায় আমি গিয়ে পড়ি বেলকনির গ্রিলে।মাথায় প্রচন্ড আঘাত পাই আমি।
আমি বুঝতে পারছিলাম না কি হচ্ছে আমার সাথে এসব।
এমনিতেই মন খারাপ।পরিবারের সবাইকে ছেড়ে এসেছি।তার উপর তার এমন ব্যবহার তো আমি কল্পনায় মেনে নিতে পারছিনা।
সারারাত কেটে যায় আমার বেলকনিতে দাঁড়িয়ে থেকে।
তবুও তিনি দরজা খুলেন নি।এত ক্ষণে কপাল ফুলেও উঠেছে আমার।
সকাল বেলা বাসার লোকজন ডাকাডাকি করায় প্রত্যয় এসে দরজা খুলে দেয়।
আর আমাকে ডেকে বলে,রাতের ঘটনা যেন বাসার কেউ জানতে না পারে।সবাই যেন ভাবে আমাদের মধ্যে সব কিছুই স্বাভাবিক ছিলো।
আমি তার দিকে মাথা তুলে তাকাতেই সে বলে উঠে,
ইশ!কপালে কি হয়েছে?
ওহ হো!
গ্রিলে ব্যথা পেয়েছো?
আই এম সো সরি।
আমি আসলে বুঝে উঠতে পারিনি।তুমি যে এইভাবে আঘাত পাবে।
আমি তার কথার কোন উত্তর না দিয়ে ফ্রেশ হতে ওয়াশ রুমে চলে যাই।ফ্রেশ হয়ে অন্য একটা শাড়ী পরে চলে যাই নিচ তলায়।
বাসার সবাই এসে ভীর জমায় আমাকে দেখে।
আজ আমাদের বউভাতের প্রোগ্রাম।
আমার শাশুড়ী মা এসে বললেন,
বউমা!
তোমার কপালে কি হয়েছে?
কিভাবে মাথায় আঘাত পেলে?
আমি চুপ করে আছি দেখে,প্রত্যয় হাসতে হাসতে এসে বলে,
মা ও কাল খাট থেকে ঘুমের মধ্যে পড়ে গিয়ে কপাল ফুলিয়েছে।
শাশুড়ী মা প্রত্যয়কে ধমক দিয়ে বলেন,
এটা কি কোন হাসির কথা?
আজ থেকে বউমাকে ওই পাশে শুতে দিবি।
আর তুই এ পাশে শুবি।
প্রত্যয়ের মিথ্যে কথা সহজসরল শাশুড়ী মা বিশ্বাস করে নেন।
আমাকে তাড়াতাড়ি নাস্তা এনে দিয়ে বলেন,
এই নাও মা।
তাড়াতাড়ি খেয়ে নাও।
একটু পরেই পার্লারের লোকজন তোমাকে সাজাতে চলে আসবে।
আমি কোন রকম অল্প একটু খেয়ে নিলাম।
একটু পরেই পার্লারের দুই আপু চলে আসেন আমাকে সাজাতে।
আমার সাজ যখন পুরোপুরি কমপ্লিট তখন প্রত্যয় ওর ড্রেস নেয়ার জন্য রুমে আসে।
প্রত্যয় আমার দিকে কিছু ক্ষণ এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে কিছু ক্ষণ পরে বলে উঠে,
এত সেজে কি হবে?
আমার তো এতে কিছু যায় আসেনা।
তুমি সাজলেও যা,না সাজলেও তা ই আমার কাছে।
এ কথা বলেই প্রত্যয় রুম থেকে বেড়িয়ে যায়।
আমি শুধু অবাক হয়ে ভাবতে থাকি,তিনি কেন করছেন এরকম আমার সাথে।
প্রত্যয়ের আত্মীয় স্বজন সবাই খাওয়া দাওয়া করে এসে এসে আমাকে দেখে যাচ্ছেন আর প্রশংসা করে আমার শাশুড়ী মাকে বলে যাচ্ছেন,বউ তো অনেক সুন্দর এনেছো।
এত বড় বাড়ীটা আজ আলোকিত লাগছে।পরিপূর্ণ লাগছে।
আমার শাশুড়ীও অনেক খুশি তাদের প্রশংসায়।
আমার শশুড় এসে হঠাৎ করেই বলে উঠলেন আমার বউ মাকে যে এভাবে বসিয়ে রেখেছো,আমার বউ মা কি খেয়েছে?
শাশুড়ী মা ধীর কন্ঠে বললেন,ইশ ভুল হয়ে গেছে।
পার্লারের সাজের চক্করে তো ওকে খাওয়ানোই হয়নি।
বাবা এবার রেগে গিয়ে বললেন,
প্রত্যয় এই প্রত্যয়,
এবার প্রত্যয় যেন ঝড়ের গতিতে দৌড়ে আসলেন।
_জ্বী বাবা।
_তোমার বিয়ে করা স্ত্রী এখনো খায়নি এই খেয়াল আছে?
স্ত্রীর খবর রাখা শিখো।
এখন থেকে ওর খেয়াল রাখা তোমার দায়িত্ব।
মনে থাকে যেন।
প্রত্যয় মাথা নিচু করে উত্তর দিলেন,
_জ্বী বাবা।
এত ক্ষণে এই টুকু বুঝতে পারলাম,প্রত্যয় এবং শাশুড়ী মা বাবাকে অনেক ভয় পান।
শাশুড়ী মা খাবার এনে আমাকে খাইয়ে দিতে শুরু করলেন।
প্রত্যয় আমার দিকে রাগী চোখে তাকিয়ে রইলেন যেন না জানি কত দিনের শত্রুতা তার সাথে আমার।
সন্ধ্যা প্রায়,আমার বাসার লোকজনও খাওয়াদাওয়া করে নিয়েছেন।
এখন আমাকে আর প্রত্যয়কে নিয়ে যাবেন তাদের সাথে করে আমাদের বাসায়।
শাশুড়ী মা এসে প্রত্যকে তৈরি হতে বলায় প্রত্যয় রেগে বলে উঠেন,
_আমি যাবোনা ওই বাসায়।
যার বাসা তাকে যেতে বলো।
সে যাক।
আমি গিয়ে কি করবো ওখানে?
আর তখনই বাবা এসে বলেন,
_প্রত্যয়,তুমি কি কিছু বললে?
_না বাবা,আমি রেডি হচ্ছি ওই বাসায় নাকি যেতে হবে।
_হ্যাঁ তাড়াতাড়ি রেডি হও তারা অপেক্ষা করছেন।
আর ওখানে গিয়ে সবার সাথে সুন্দর আচরণ করবে।
মনে থাকবে?
_জ্বী আচ্ছা।
এরপর আমরা বাবা মায়ের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে আমাদের বাড়ীর উদ্দেশ্যে রওনা দেই।
আজ আমাদের বাসায় ও আমার রুম টা সুন্দর করে ফুল দিয়ে সাজিয়ে রেখেছে সবাই।
খাট টাও সুন্দর করে ফুল দিয়ে সাজানো।
আমরা বাসায় যেতেই আশেপাশে থেকে অনেকেই আমাদের দেখতে আসেন।
আমার কাজিনরা এসে প্রত্যয়ের সাথে দুষ্টুমি করে।
প্রত্যয় আমাদের বাড়ীর সবার সাথে ভালো ব্যবহার করেন।
এমনকি আমার বাবা মায়ের সাথেও।
শুধু মাত্র আমার সাথে ছাড়া।
আমি এটাই বুঝলাম না,আমি কি করলাম।
রাতে সবার সাথে খাওয়াদাওয়া করে আমরা আমাদের রুমে যাবো।
সেই মুহূর্তে আমার ছোট ভাই বোনেরা প্রত্যয়ের কাছে ৫০০০ টাকা দাবি করে বসে।
তাহলে নাকি রুমে ঢুকতে দিবেনা।
ওরা খুব কষ্ট করে নাকি রুম সাজিয়েছে।
প্রত্যয় ভদ্র ছেলের মত কোন ঝামেলা ছাড়াই হাসতে হাসতে ওদের ৫০০০ টাকা দিয়ে রুমে ঢুকে গেলেন।
আমিতো অবাক।
আমিতো ভেবেছি এই ছেলে এখনই রাগ করে তার বাসার উদ্দেশ্যে রওনা দেন কিনা।
নাহ উনাকে তো বুঝতেই পারছিনা আমি।
আমরা দুজন রুমে ঢুকি আর সবাই চলে যায়।
আমি খাটে গিয়ে বসতেই প্রত্যয় আমাকে বলে,
_এই উঠো খাট থেকে।
আজ এই খাট আমার।
তুমি কেন এই খাটে বসছো?
_মানে?
_মানে আবার কি?
আজ এই খাট আমার।
_এহ বললেই হলো,সারাজীবন থাকলাম আমি।
উড়ে এসে জুড়ে বসতে চাইছে এখন আরেকজন।
রুম আমার খাট আমার সব আমার।
আমি বসবো শুবো যা খুশি তাই করবো।
এই বলে আমি খাটে উঠে বসে পড়লাম।
_তাহলে আমি কই থাকবো?
_আপনি খাটের এক পাশে থাকতে পারেন আমার কোন সমস্যা নেই।
_কিন্তু আমার সমস্যা আছে।
_কি সমস্যা?
_আমি শুবো না তোমার সাথে।
_আমি আপনার বিয়ে করা বউ।ভুলে গেলেন নাকি?
_কিসের বউ?
আমি তো তোমায় বউ বলে মানিনা।
আর না কোন দিন মানবো।
_কি বলছেন এ সব?
_যা শুনেছো ঠিক ই শুনেছো।
আমি তোমায় কোন দিন আমার বউ বলে স্বীকৃতি দিতে পারবোনা।
_আমার অপরাধ?
_তোমার কোন অপরাধ নেই।
_তাহলে?
_এত প্রশ্নের জবাব দিতে আমি বাধ্য নই।
কয়েক টা দিন যাক আমি তোমায় ডিভোর্স দিয়ে দিবো।
কয়টা দিন সময় দাও আমায়।
_আপনার মাথা ঠিক আছে?
কি বলছেন এসব আপনি?
_আমি চাইনা এই বাসায় কোন রকম সিনক্রিয়েট করতে প্লিজ চুপচাপ শুয়ে পড়ো।
আর কয়েক টা দিন একটু আমার বউ এর অভিনয় করে যাও।
আমার বাবা মা যেন বুঝতে না পারেন।
তারপর আমি তোমায় সময় মত মুক্ত করে দিবো।
আমার কাছে এর চেয়ে বেশি কিছু আশা করোনা।
আমি জানি তোমার খুব কষ্ট হচ্ছে,এখন তুমি খাটে শুয়ে মুখ ফিরেয়ে কান্না করবে।
যাও করো,মন টা একটু হালকা হবে।
আসলে তোমার কোন দোষ নেই।
দোষ আমারই।
_এখন আপনি বলবেন, আপনি আরেকটা মেয়েকে ভালবাসেন তাইতো?
আর তাই আমাকে ডিভোর্স দিয়ে ওই মেয়েকে আপনি বিয়ে করবেন তাইনা?
আর আমিও কাঁদতে কাঁদতে তার হাতে আমার স্বামীকে তুলে দিবো।
এই যে মিঃকান খুলে শুনুন।
আমি ওই সব মেয়ের মত না ঠিক আছে?
যে ন্যাকা কান্না কেঁদে নিজের স্বামীকে অন্যের হাতে তুলে দিবো।
আমি আমিই।
আমি আমার কোন কিছুর ভাগ অন্য কাউকে দেইনা।
আর স্বামীর ভাগ দিবো?
অসম্ভব।
প্রেম ভালবাসা যা ছিলো,সব বিয়ের আগে ছিলো।
এখন থেকে আমি আপনার বর্তমান আর ভবিষ্যৎ।
খবরদার আর যদি ওই মেয়ের সাথে কোন রকম যোগাযোগ রাখেন।
আমার চেয়ে ভয়ংকর আর কেউ হবেনা।
_কি করবে তুমি?
ভয় দেখাও আমাকে?
আমার এক কথা।
তোমাকে আমি ডিভোর্স দিবো কয়দিন পর।
এটাই আমার শেষ কথা।
_আর আমারো শেষ কথা শুনে রাখুন আমার আর আপনার মাঝে যে আসবে তাকে আমি…
_কি?
_পরের টা পরেই দেখতে পাবেন।
সেই মুহূর্তে প্রত্যয়ের ফোনে একটা কল চলে আসে,
ফোন টা রিসিভ করেই প্রত্যয় বলে,
_হ্যাঁ আমি এক্ষুনি আসছি।
আর তখনই…
চলবে..