#তোমায়_ছেড়ে_যাব_কোথায়?
লেখা – মুনিরা সুলতানা।
পর্ব – ১৬।
———–*
কামরান আরমান দুজনেই একে একে বাইরে চলে গেল। আমি ও তিয়ানা এখনো ডাইনিং টেবিলে বসে আছি। মাত্র চা নিয়ে বসলাম। মনের কৌতুহল দমাতে না পেরে শেষে তিয়ানাকে জিজ্ঞেস করেই ফেললাম,
” আরমান সবসময় এমন মেজাজ নিয়ে থাকে কেন? যেন সবার উপরেই কোন কারনে যেন রেগে আছে। ”
তিয়ানা একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে চায়ের কাপে চুমুক দিল। আমার দিকে তাকিয়ে বললো, ” আসলে ছোট ভাইয়ের জীবনটাই ট্রাজেডিতে ভরা। অল্প বয়সে বড়ো বড়ো কষ্ট পেয়েছে। স্বপ্ন ভেঙেছে। তাই এখন কেমন যেন খিটখিটে হয়ে গেছে। কিন্তু আগে এরকম ছিলনা। যদিও রাগ একটু বেশি তবে হাসি খুশি ছিল। ”
” মানে বুঝলাম না।”
” ছোট ভাইয়া মেডিক্যালে পড়তে চায়নি। ইংলিশে লিটারেচার নিয়ে পড়তে চেয়েছিলো। ভাইয়া প্রচুর বই পড়ে গান করতে ভালোবাসে। কিন্তু আম্মুর প্রথম থেকেই ঠিক করাই ছিল ভাইয়াদের একজন ডাক্তার হবে আরেকজন ইন্জিনিয়ার হবে। ভাইয়াদের মেধাও আর দশজনের তুলনায় বেশ ভালো। তাই কোন অসুবিধা হয়নি।
” হ্যা আমি তোমার ভাইয়ার কাছে শুনেছি এই ব্যাপারে।”
” ছোট ভাইয়ার মেজাজ ছোট বেলা থেকে একটু বেশি। সে এটা কিছুতেই মানতে চাইছিলনা। এর সাথে যুক্ত হয়েছে হৃদয় ভাঙার কষ্ট। স্কুল লাইফ থেকে একজন গার্লফ্রেন্ড ছিল। নিব্বা নিব্বির প্রেম। কিন্তু সেই প্রেম ইন্টার পাশ পর্যন্ত ছিল। তারপর মেয়েটার বিয়ে ঠিক হয়ে গেল। আপুর ফ্যামিলি ওকে আর পড়াশোনা করাবেনা। ভলো পাত্র পেয়েছে বিয়ে দিবে। তখন ছোট ভাইয়াও এডমিশনের জন্য ধুমিয়ে পড়াশোনা করছিল। কিন্তু আপুর বিয়ের খবর শুনে ভাইয়ার মাথা বিগড়ে যায় যায় অবস্হা। অনেক কষ্টে আপুটার সাথে দেখা হওয়ার সুযোগ পায়। কিন্তু লাভের লাভ কিছুই হলনা। এক বুক কষ্ট নিয়ে প্রত্যাখানের যন্ত্রণা নিয়ে ফিরে আসে। সেদিন থেকেই ভাইয়া কেমন হয়ে যেতে লাগল। কারও সাথে কথা বলতনা। সারাক্ষণ রুমের মধ্যে নিজেকে বন্দি করে রাখত।”
আমি হঠাৎ শুধালাম, ” আচ্ছা ঐ মেয়েটার তাহলে বিয়ে হয়ে গিয়েছিল?”
” নাহ্ তা আর হলো কোথায়। এরপরে ঘটনাতো আরও হৃদয়বিদারক ঘটনা। সেদিন ছোট ভাইয়ের মেডিকেলে এডমিশন টেষ্ট ছিল। জীবন তো আর থেমে থাকেনা। পর্যাপ্ত প্রস্তুতি না থাকলেও আম্মুর জেদাজেদি আর রাগারাগির কারনে শেষ পর্যন্ত সে পরীক্ষা দিতে গিয়েছিল। কিন্তু মেডিকেল কলেজে তো পৌঁছেছিল পরীক্ষাটা আর দেয়া হয়নি। তখনই ওদের দুজনেরই কাছের এক বান্ধবীর কাছে থেকে জানতে পারে ঐ আপুটা সুইসাইড এটেম্প করেছে। মেডিকেলেই আনা হয়েছিলো। ভাইয়া কথাটা শুনেই কোথায় পরীক্ষা আর কোথায় কি সেখানেই ছুটে গিয়েছিল। ”
আমি আগ্রহের সাথে জানতে চাইলাম, ” তারপর।”
” সেদিন আপুকে বাচানো সম্ভব হয়নি।”
আমি চমকে উঠলাম। আমার মুখে আর কোন কথা জোগালো না। তিয়ানাও কিছু সময় নিশ্চুপ রইল। তারপরে আবার বলতে শুরু করল, ” এরপর ছোট ভাইয়া একেবারে ঘরবন্দী হয়ে গেছিলো। কতদিন ভালো করে নাওয়া খাওয়া ছিলনা ঘুম ছিলনা, বাইরেও তেমন একটা যেতনা। ওর ফ্রেন্ডসরা প্রথম দিকে আসতো। কিন্তু ভাইয়া তাদের সাথেও তেমন ভাবে কথা বলতে চাইত না। একসময় সবাই বিভিন্ন ভার্সিটিতে ভর্তি হয়ে পড়াশোনা ক্লাস নিয়ে ব্যাস্ত হয়ে গেলো। আর ভাইয়া কোথাও পরীক্ষাই দিলনা। ঐ সময় আমরা সবাই মিলে ওর পাশে থেকে ওকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনতে চেষ্টা করেছি। বিশেষ করে বড় ভাইয়া আর আপু তো সর্বোচ্চ ভাবে ওর পাশে থেকেছে। পরের বছর এডমিশন টেষ্ট দেয়ার সময় ভাইয়া মেডিকেল এডমিশন টেষ্ট দিতে কিছুতেই রাজি ছিলনা। কিন্তু আম্মুর এক জেদ। শেষে বড় ভাইয়া বোঝায় বিশেষ করে ঐ আপুর মৃত্যুর উদাহরণ দিয়ে বোঝায় যেন আর কোন মেয়েকে ছোট ভাইয়া ডাক্তার হয়ে মরতে না দেয়। তারপর ভাইয়া মেডিক্যালে ভর্তি হয়। কিন্তু আম্মুর সাথে কেন যেন এখনো খিটমিট করতে থাকে। ”
” বুঝতে পারছি আরমানের জীবন এই বয়সেই বেশ ট্রাজেডিময়। ওর এক বছর গ্যাপ গেছে। তারমানে ও আমার ব্যাচেরই তাই না?”
” বোধহয়। এবারে ফাইনাল ইয়ারে। গ্যাপ না গেলে পাশ করে ইন্টার্নি করত এতদিনে। ”
” তোমাদের দুই বোনকে আম্মা নির্দিষ্ট কোন সাব্জেক্টে পড়তে ফোর্স করেননি? ”
” না। এই ব্যাপারে আমরা দুই বোন বেশ লাকি ছিলাম বলতে পারো। যত ঝড় ভাইয়াদের উপর দিয়ে গেছে। ” কথা শেষ করে হেসে ফেললো তিয়ানা। ওর সাথে আমিও হেসে উঠলাম।
————*
রানি এবং আসমাকে ওদের কাজ বুঝিয়ে দিয়ে আমি নিজের কামরায় এলাম। যদিও ওদেরকে কোন কাজ সেভাবে বুঝানোর প্রয়োজন পরেনা। ওরা যথেষ্ট বিশ্বস্ত। কাজেও বেশ পটু। কোথা থেকে ওদের এনেছিল কে জানে? নইলে আজকের যুগে বিশ্বস্ত ও যোগ্য কাজের লোক পাওয়া প্রায় অসম্ভবই বলা যায়। ওরা একদম নিজেদের মত করেই কাজ করে। বেলকনির চেয়ারে বসে আনমনে বাইরের দিকে তাকিয়ে আছি। তখনই হঠাৎ রিংটোনের শব্দে চমকে উঠলাম। উঠে ভিতরে গিয়ে বিছানার উপর রাখা সেলফোন হাতে তুলে নিলাম। এতো সকাল সকাল আম্মা ফোন করেছে। নিশ্চয়ই মামি কিছু বলেছে গতকাল রাতের ব্যাপারে। এটাই বাকি ছিল। আল্লাহই জানে মামি কি কি বলেছেন উনাদের। আবারও বেলকনিতেই ফিরে গিয়ে চেয়ারে বসে কল রিসিভ করতেই মা কোন ভুমিকা ছাড়াই সরাসরিই জিজ্ঞেস করলেন,
” কামরান গতকাল তোদের সাথে ভাইজানদের বাসায় যায় নাই এটা কি সত্যি? ”
মায়ের কথা শুনে আমি এক মুহূর্তের জন্য নিরব থাকলাম।জানতাম মামি ঠিক আম্মাকে ফোন করে সব বলবে। মানুষের জরুরি কাজ থাকতেই পারে। কিন্তু সমস্যা হলো প্রথমবারেই এমন হয়েছে বলে ব্যাপারটা বেশি চোখে লেগেছে। এমনিতেই বিয়ের সময় থেকে কোন কিছুই আর দশজনের বিয়ের মত স্বাভাবিক ভাবে হয়নি। তাই চিন্তাটা সবার একটু বেশিই। একটু এদিক ওদিক হলেই দুশ্চিন্তা শুরু করে দেয়। যাইহোক আমার সমস্যা আমিই মিটিয়ে নিব। অযথা উনাদের দুশ্চিন্তায় ফেলার কি দরকার। এখন মায়ের দুশ্চিন্তা দুর করা দরকার। তাই বললাম,
” তোমার জামাইয়ের কালকের খুব ইম্পর্টেন্ট কাজ ছিল। তাই অনেক চেষ্টার পরে যখন ও এসেছিল তখন আমরা বের হয়ে চলে আসতেছি। তাই ওকে সোজা বাসায় চলে আসতে বলছিলাম। জানোইতো আম্মা বিজনেস ম্যান সে কত ব্যাস্ত থাকে সে। তাও একটু আগেই নাস্তার সময় বারবার ও সরি বলছিল। চিন্তা করনা ও বলেছে সামনেই সময় বের করে আমাকে সাথে নিয়ে সরি বলে আসবে। মামারা হয়তো মাইন্ড করেছে। ও গেলে নিশ্চয়ই আর মনে কিছু রাখবেনা।”
” কি জানি। ছেলেটার কান্ড কারখানা আমার সুবিধার মনে হয়না। এইজন্যই তো তোকে ওখানে পাঠানোর সময় আমার মন কিছুতেই সায় দিচ্ছিল না। এই কয় মাসে সে এখন পর্যন্ত একবারের জন্যও শশুর বাড়িতে আসেনি। তাও মেনে নিলাম দুরে বলে আসার সময় সুযোগ হয়ে উঠেনি। কিন্তু ঢাকায় মাত্র পাশের এলাকায়ও তার যাওয়ার সময় হলনা? জানিনা কেন যে তোর দাদি আর বাবাতোর অনিচ্ছা সত্ত্বেও তোকে ওখানে পাঠিয়ে দিলেন?”
” আম্মা এটা আমার শশুর বাড়ি। আজ হোক কাল হোক আমাকে আসতেই হতো। একটা সম্পর্ক যখন জুড়ে গেছে তখন চেষ্টা তো করতে হবে। আমিই অবুঝের মতো ভয়ে আসতে চাচ্ছিলাম না। কিন্তু পালিয়ে বেড়ালে তো কোন কিছুর সমাধান হয়না। তাইনা?”
” দুদিন আগেও তোর মুখে অন্য কথা ছিল। ঐ বাড়িতে ফেরার বিন্দু মাত্র ইচ্ছে ছিলনা। এই কদিনে তোর এতো পরিবর্তন? যাক তাহলে সবকিছু ঠিকই আছে। ”
” আমিওতো সেটাই বলার চেষ্টা করছি। ”
ওপাশ থেকে দাদির গলা শোনা যাচ্ছে। বোধহয় আমার সাথে কথা বলতে চাইছে। আম্মা বললো,
” শোন কখনও কোন প্রবলেম হলে একদম লুকাবিনা। ঠিক আছে? প্রথমেই সব সামলে না নিলে পরে হাতের বাইরে বেরিয়ে গেলে তখন কেবল কষ্টই পেতে হয়। তাই সবদিকে খেয়াল রাখবি। ”
” আম্মা কিযে বলনা তুমি। সব ঠিক আছে। তুমি একদম চিন্তা করনা। শুধু দোয়া কর। ”
” সেতো সবসময় করি। শোন তোর দাদি কথা বলার জন্য অস্থির হয়ে গেছে। কথা বল।
দাদি ফোন ধরেই উত্তেজিত গলায় বললেন, ” তুই ভালো আছোস তো। তোর মামি কি সব বলতেছে।?”
আমি ছোট্ট করে শ্বাস ছেড়ে বললাম, ” সব ঠিক আছে দাদি। আমি তোমাদের কিছু বলেছি বল? তাহলো কেন অযথা চিন্তা করছ? তোমার নাতজামাইয়ের খুব জরুরি কাজ ছিল। তাই সময়মত আসতে পারেনি। এখানে এত দুশ্চিন্তা করার কি আছে আমি বুঝতে পারছি না। এটাকি কোন অদ্ভুত ব্যাপার বল?”
দাদি শব্দ করে হেসে উঠলেন। বললেন,” যাক আমার নাতনির মনের মধ্যে তাহলে জামাইয়ের প্রতি ভালোই ভাব-ভালোবাসা আসছে। এইটা জাইনা মনটা ভইরা উঠলো গো বুবু। আমার আর চিন্তা নাই। আমি জানি একবার তোর ওই সংসারে মন বসে গেলে যেকোনো মূল্যে তুই ঐ সংসারটারে আগলাইয়া রাখবি।”
দাদির কথা শুনে আমিও হেসে ফেললাম। বললাম,” আচ্ছা তোমার আমার উপর অনেক ভরসা দেখছি। ”
“তা তো আছেই। তুই হইলি গিয়া শিক্ষিত, বুদ্ধিমতী মাইয়া। যা করবি ভাইবা চিন্তা করবি। এইজন্যই তোরে বলছিলাম একবার ওখানে গিয়া থাইকা নিজের মত কইরা সবকিছু পর্যবেক্ষণ কইরা তারপর সিদ্ধান্ত নিতে। এখন দেখ তুই নিজেই বলতেছিস সব ঠিক আছে। আমি তোরে একটা কথাই বলতে চাই। একটা নতুন পরিবেশের সাথে মানিয়ে গুছিয়ে নিতে একটু সময় লাগে। অচেনা পরিবারে নতুন পরিবেশে অজানা মানুষের মাঝে সবাইকে চিনতে বুঝতে সময়তো লাগবে। সময় হইলো গিয়া সবকিছুর সবচেয়ে বড় সমাধান। দেখবি যত সময় যাবে সম্পর্কও তত বেশি মজবুত হবে। বন্ধনে আরও দৃঢ়তা আসবে। তাই বলি ধৈর্য্য ধরে নিজের দায়িত্ব পালন করবি। ইনশাআল্লাহ আল্লাহ সব ঠিক কইরা দিব। ”
” হ্য দাদি তুমি ঠিক বলেছ। আমার জন্য একটু বেশি বেশি করে দোয়া করতো। তোমার মতো বুজুর্গ ব্যক্তিত্বের দোয়া আল্লাহ নিশ্চয়ই শুনবে। ”
দাদি বললেন, ” আমিতো সবসময় দোয়া করি। কিন্তু তোরেওতো নিজের স্বামীর জন্য সংসারের জন্য পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পইরা নিজেও দোয়া কীতে হইব। যত সমস্যাই হোকনা কেন যা কিছু বলার এবং চাওয়ার সবকিছুর আল্লাহর কাছে চাইবি। দেখবি তিনি কখনো নিরাশ করবোনা। বুঝলি?”
কথা শেষে কল কেটে দিলাম। দাদির সাথে কথা বলার পর সবসময় ভিষন মোটিভেটেড ফিল করি। উনি কখনো কোন কিছুতেই নিরাশাজনক কিছু দেখেননা। যেকোনো পরিস্থিতিকেই সবসময় পজিটিভ ভাবে দেখেন। আমার জীবন যে কয়টা হতাশাজনক মুহূর্ত এসেছে দাদি সবসময় এভাবেই আমার মনোবল বাড়িয়েছেন।
কিন্তু এবারের মতো পরিস্থিতিতে আগে কখনও পরিনাই। তাই কোন কিছুতেই মনের জমিনে জমা উঠা উদ্বেগ দুর হচ্ছেনা। না। কোন দুশ্চিন্তা নয়। এটা এমন একটা অনুভুতি যে কিছুতেই মনকে স্বস্তি দিচ্ছে না। পিউলির সাথে সেই ছবিটা যেটার ক্যাপশনে লেখা ছিল ‘মাই পার্সোনাল ফটোগ্রাফার।’ ছবিটা গলার কাটার মত হৃদযন্ত্রে বিধে আছে। যতবারই ছবিটি চোখের সামনে ভেসে উঠছে ততবারই কেমন একটা সুক্ষ যন্ত্রণা করতে থাকে বক্ষ্য জুড়ে। যেন কোন বিষাক্ত সর্পদংশনে জ্বালাময় বেদনায় কেমন নীল হয়ে যাচ্ছে শরীর ও মন। কেন এমন হচ্ছে? কামরান সময়মতো না আসতে পারায় ক্ষমাও চেয়েছে। তবুও কেন এই যন্ত্রণাদায়ক অশান্তি? কোন কিছুতেই মন বসছে না যে।
হঠাৎ দমকা হাওয়ার গতিবেগে বেলকনিতে তিয়ানার আগমনে আমি বেশ চমকে উঠলাম। এতক্ষণের ভাবনার জ্বাল ছিড়ে বাস্তবে ফিরে এলাম। ও এসেই পাশের মোড়াটা আমার কাছাকাছি আরও টেনে নিয়ে আমার গা ঘেঁষে বসলো। ওর সেলফোনটা আমার সামনে বাড়িয়ে ধরে উৎফুল্ল গলায় বললো,
” দেখতো ভাবি কোনটা তোমার ভালো লাগছে? ”
আমি প্রথমে হকচকিয়ে গেলেও মুহুর্তে নিজেকে সামলে নিয়ে সেলফোনের স্ক্রিনের দিকে তাকালাম। সেখানে কোন অনলাইন পেজে সুন্দর একটা পোশাকের ছবি দেখা যাচ্ছে। বললাম,
” ভালোই তো। তোমার পছন্দ হলে নিয়ে নাও। ”
তিয়ানা হেঁসে বললো, ” না ভাবি এটা আমার জন্য নয়। তোমার জন্য। পছন্দ হয়েছে? ”
আমি বাঁধ সেধে বললাম, ” আমার জন্য আবার কেন? তুমি নাও। কালারটা তোমাকে খুব মানাবে। ”
” ভাবি, ভুলে গেছ আর মাত্র কদিন পরেই রোজা শুরু হবে। তাই আম্মু বলেছে এখনি কাপড় কিনে টেইলরে দিয়ে দিতে। পরে এত চাপ বেড়ে যাবে তখন কিন্তু আর অর্ডার নিবেনা।”
” ও আচ্ছা। আসলে আমি সবসময় নিজের ড্রেস নিজে সেলাই করি। কখনও টেইলরের কাছে সেলাই করি নাই। আর তাছাড়া আমার অনেক জামা আছে। এখন এসবের দরকার নাই। ”
” আলবাত দরকার আছে। তোমাদের যেভাবে বিয়ে হয়েছে তাতে করে সেভাবে শপিং করাও হয়নি। কোন রকমে কয়টা শাড়ি কেনা হয়েছিল। কিন্তু তুমিতো দেখি সালোয়ার কামিজ পরতে কম্ফোর্টেবল। বিয়ের পরে প্রথম ঈদ। শপিং করতে হবেনা এটাও আবার হয় নাকি? আমি যা বলব তোমাকে একদম চুপচাপ মানতে হবে। তুমি কেবল কালার গুলো চয়েজ কর। বাকিটা আমি দেখছি। ”
আমি এবার আবেগে আপ্লূত হয়ে তিয়ানার দিকে তাকিয়ে আছি। ভাগ্য করে একটা ছোট বোন সাদৃশ্য ননদ পেয়েছি। ও আমাকে ঠেলা দিয়ে বললো,
” আরে কি হলো বল। দেখ কাপড় গুলো এলেই আমাদের টেইলরের কাছে যেতে হবে। হাতে একদম সময় নেই। আরও অনেক শপিং করতে হবে। জানতো আম্মুও রোজার মাঝামাঝি সময়ে আসবে আপুকে নিয়ে। তাই বেবিদের জন্যও কতকিছু কিনতে হবে।”
বুঝলাম এই মেয়ের হাত থেকে রক্ষা নেই। একটা লম্বা শ্বাস নিয়ে ওর সাথে আমিও কাজে নেমে পরলাম।
সন্ধায় কামরান ফিরল সাথে পিউলি সহ। মেয়েটাকে দেখেই কেন যেন নেগেটিভ ফিলিং কাজ করে মনের মধ্যে। অদ্ভুত একটা অস্বস্তিকর আবহ ছড়িয়ে থাকে চারপাশে। তাও আবার দুজন একসাথে। একটু পরেই জানা গেল অবশ্য পিউলির কথায়,
” হাই তিয়া কেমন আছ? দেখ চলে এলাম তোমার সাথে দেখা করতে। দেখনা আমি গেটের সামনে নেমেছি ওমনি দেখি কামরানও আসছে। ব্যাস একসাথে ঢুকলাম। ”
কামরান আমাদের বেডরুমের দিকে যাওয়ার আগে বলে গেল, ” কড়া করে কফি করতো হীবা। মাথাটা খুব ধরেছে।”
তিয়ানা পিউলির কথার জবাবে বলছিল, ” বাহ বেশ করেছ। তো শুটিং থেকে কখন ফিরলে? ”
” এইতো বিকেলের দিকে। জানো গতকাল কামরানের হঠাৎ চলে আসায় সবাই কত মন খারাপ করেছে। কামরানের হুট করে এভাবে চলে আসা একদম ঠিক হয়নি। ”
তিয়ানা বললো, ” হুট করে হবে কেন? ভাইয়ার তো থাকার কথা ছিলনা। শুনোনাই গতকাল রাতে আমাদের প্রোগ্রাম ছিল। কিন্তু এসে লাভ হলো কোই। তাও তো মিস করলো।”
পিউলি আমার দিকে তাকিয়ে বললো, ” কিন্তু আমাদের শুটিংয়ের ডেট তো আগেই জানিয়ে দিয়েছিলাম। তাহলে গতকাল হীবার এই ইনভিটিশন এক্সেপ্ট করার কি দরকার ছিল? ডিনাই করতে পারতোনা? ”
আমি ঝট করে বললাম, ” আমি সেটাই করতে চেয়েছিলাম। এইজন্যইতো ওকেই ডিসিশন নিতে বলেছিলাম। কিন্তু তোমার কামরান ভাই বারন করল। ও বললো সন্ধার মধ্যে নাকি কাজ শেষ করে চলে আসবে। তাই না তিয়ানা আমি তোমার ভাইয়ের পারমিশন নিয়েই যাওয়া ঠিক করেছিনা?”
তিয়ানা সায় জানিয়ে মাথা নাড়ল। আমি আবারও বললাম, ” আর তোমার ভাই ভিষণ ব্যাস্ত মানুষ। অথচ সেই মানুষটাকে তোমরা কোথায় যাচ্ছ সেই ব্যাপারে সম্পূর্ণ অন্ধকারে কেন রাখলে? তোমরাতো বেড়াতে যাওনি। কাজে গিয়েছিলে সো প্রফেশনালি কাজ করা উচিত নয়কি? নেহায়েত ফটোগ্রাফিটা ওর কাছে ভালোবাসা ও নেশার জায়গা। তাই বলে তার দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে নেক্সট টাইম ওকে অযথা হয়রানি করবেনা আশাকরি। ” তিয়ানার দিকে চেয়ে বললাম,
” তোমরা কথা বল আমি তোমাদের জন্যে নাস্তা ও কফির ব্যাবস্থা করি।”
বলেই উঠে হতবাক পিউলিকে কোন কথা বলার সুযোগ না দিয়ে সোজা রান্নাঘরে চলে এলাম। দেখি আসমা ইতিমধ্যে চুলায় পানি বসিয়ে দিয়েছে। নাস্তার আয়োজন করতে করতে মাথায় পিউলির কথা ঘুরছে। বাহ্ এখন আমি দোষীও হয়ে গেলাম! বাইরের একটা মেয়ে আমার কাছে কৈফিয়ত চায়? এই ছিল আমার কপালে?
চলবে ইনশাআল্লাহ।