তোমায় ছেড়ে যাবো কোথায় পর্ব-০৭

0
964

#তোমায়_ছেড়ে_যাবো_কোথায়?
লেখাঃ মুনিরা সুলতানা।
পর্বঃ ৭ ।

——————*
মৃদু খুটখাট আওয়াজে আমার ঘুম ভেঙে গেল। চোখ দুটো প্রথমে পিটপিট করে তারপর মেলে তাকালাম। বোঝার চেষ্টা করছি এখন ঠিক কোন সময়। ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখলাম সন্ধা প্রায় হয় হয় করছে। কামরায় আলো জ্বালানো হয়নি। ডিম লাইট এবং টেবিল ল্যাম্পটা জ্বলছে। যাক এখনো মাগরিবের আজান দেয়নি তাহলে।

” সরি, তোমার ঘুম ভাঙিয়ে দিলাম বোধহয়। ”

কথাটা কানে আসতেই আমি চমকে উঠে ওয়ালকেবিনেটের দিকে তাকালাম। কামরান কাবাডের পাল্লা খুলে তার সামনে দাঁড়িয়ে আছে। কিছু খুজতে ব্যাস্ত। আমি ঝট করে উঠে বসে নিজের ওড়না ঠিক করতে গিয়ে দেখলাম সেটার অর্ধেক অংশ নিচে গড়াচ্ছে বাকিটা আমার গায়ের নিচে চাপা পরে আছে। লজ্জা ও অস্বস্তি জড়িয়ে ধরল আমায়। ছিঃ মানুষটা কখন থেকে ঘরের মধ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে কে জানে আর আমি এভাবে নির্লজ্জের মত এলোমেলো হয়ে ঘুমচ্ছিলাম। তাড়াতাড়ি ওড়না গায়ে দিয়ে কামরানের দিকে তাকালাম। ওর পরনে এখনো বাইরের পোশাক। তার মানে এই মাত্র বাসায় ফিরেছে। নিজেকে ধাতস্থ করে বললাম,

” না না ঠিক আছে। একটু পরেই আজান দেবে। এমনিতেই উঠতাম। আপনি কি কিছু খুঁজছেন? ”

কামরান ততক্ষণে কাঙ্খিত জিনিসটা পেয়ে গেছে। সেটা হাতে নিয়ে আলমারির পাল্লা বন্ধ করে ঘুরে দাঁড়াল। হাতে ধরা একটা ধুসর রঙের টিশার্ট দেখিয়ে বললো,

” পেয়েছি। আমি শাওয়ার নিয়ে আসছি। পাঁচ মিনিটের বেশি লাগবেনা। তারপর অজু করলে তোমার কি দেরি হবে?”

” নাহ। এখনো আজান দেয়নি তো। আপনি সেরে নেন। তারপর চা বা কফি খাবেন? বানিয়ে আনব? ”

” এখন না। সন্ধায় সবার সাথে একসাথে খাব। ”

কথাটা শেষ করে একটা হালকা হাসি দিয়ে বাথরুমে চলে গেল সে। আমি বিছানা ছেড়ে উঠে দাঁড়ালাম। ড্রেসিং টেবিলের সামনে দাঁড়িয়ে চুলগুলো ঝটপট আচরিয়ে একটা হাতখোপা করে নিলাম। তখনই কামরানকে আমার নাম ধরে ডাকতে শুনে আমি থমকে গেলাম। ওয়াশরুমের দরজা দিকে তাকিয়ে দেখলাম কামারান দরজার ফাঁকে কেবল মুখটা বাড়িয়ে দাঁড়িয়ে আছে। আমি ইতস্ততভাবে সেদিকে এগিয়ে যেতেই ও বললো,

” হীবা আমার টাওয়েল নিতে ভুলে গেছি। একটু এনে দিবে প্লিজ।”

এতো বিনয়ের সাথে বলল কথাটা আমি বেশ লজ্জায় পরে গেলাম। ঝটপট বললাম,

” অবশ্যই এনে দিব। এভাবে কেন বলছেন? ”

বলেই বেলকনিতে ছুটলাম। তারে ঝুলানো তোয়ালেটা নিয়ে কামরায় ফিরে এসে সেটা কামরানের হাতে ধরিয়ে দিতেই সে স্মিত হেসে বললো,

” থ্যাংকস।” বলেই দরজা বন্ধ করে দিল কামরান।

আমি আমার সেলফোন হাতে নিয়ে বিছানায় বসলাম। চারিদিকে মাগরিবের আজান ধ্বনিত হচ্ছে শুনে সেলফোনটা রেখে দিলাম। চুপচাপ আজানের জবাব দিলাম। কিছুক্ষণ পরেই কামরান বের হলে আমি ওয়াশরুমে গেলাম অজু করতে। অজু করে এসে দেখি কামরান নামাজ পড়ছে। দেখে মনটা জুড়িয়ে গেল।

নামাজ আদায় করে যখন কামরার বাইরে বের হলাম দেখি পিউলি ওর মা সহ এসেছে। ডাইনিং রুমে আমার শাশুড়ি মা এবং তিয়ানার সাথে জমিয়ে আড্ডা দিচ্ছিল। সেখানে ছোট ফুপু শাশুড়িও আছেন। কামরানকে কোথাও দেখলাম না। আমি সেদিকে এগিয়ে গিয়ে সবার উদ্দেশ্যে বললাম,

” আসসালামু আলাইকুম। কেমন আছেন আপনারা? ”

পিউলির মা সালামের জবাব দিয়ে বললেন, ” ভালো আছি। তুমি কেমন আছ?”

” আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি আন্টি। ”

ফুপু শাশুড়ি বললেন, ” এইতো বৌমা এসে পরেছে। তোমার অপেক্ষাই করছিলাম। এসো, বস আমাদের সাথে।”

আমি স্মিত হেসে এগিয়ে গিয়ে ফুপুর পাশের চেয়ারটায় বসে পরলাম। পিউলি চুপচাপ নিজের সেলফোনে পূর্ণ মনোযোগ দিয়ে ডুবে আছে। আমি একঝলক দেখলাম তাকে। খুব সুন্দর একটা মিষ্টি রঙের টপ এবং এ্যাস রঙের লেডিস্ প্যান্ট পরে আছে। সুন্দর মুখটায় নিখুঁতভাবে মেকআপ করেছে। ঠোঁটে টপের সাথে মিলিয়ে লিপ কালার দিয়েছে। এতো সুন্দর লাগছে চোখ ফেরানো দায়। অবশ্য পিউলিকে খুব কমই মেকআপ বিহীন দেখেছি। সবসময় নিজেকে পরিপাটি করে, একগাদা মেকআপ এবং সুগন্ধির ছোঁয়ায় ভরিয়ে রাখতে পছন্দ করে বোধহয় পিউলি।

একটু পরেই কামরান ডাইনিং রুমে এলো। আমার আরেক পাশেই চেয়ার খালি ছিল। সেখানেই বসলো সে। ইতিমধ্যে আসমা চা নাস্তা দিয়ে গিয়েছে। নাস্তা ও চায়ের কাপ কামরানের সামনে এগিয়ে দিলাম। পিউলির দিকে নজর পরতে দেখলাম কামরান আসতেই এতক্ষণ আড্ডা থেকে বিমুখ হয়ে থাকা পিউলি চটপট সেলফোন রেখে দিয়ে আড্ডায় সরব হয়ে উঠলো। আমার ভ্রু জোড়া কুঁচকে গেল। একটা গোপন দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে এলো আমার বুক চিরে। কামরান একেবারে তৈরি হয়ে এসেছে। মনে হচ্ছে আবার বেরোবে। পিউলি উৎফুল্ল চিত্তে কামরানের সাথে আলাপ জমানোর চেষ্টা করছে। কিন্তু এই মুহূর্তে কামরান পিউলির একটু আগের রুপ ধারন করে সম্পূর্ণ মনোযোগ তার সেলফোনে ডুবিয়ে রেখেছে এবং ফাঁকে ফাঁকে চায়ের কাপে চুমুক দিচ্ছে। এরই মধ্যে আমার বড় ফুপু শাশুড়িও চলে এসেছেন। আমার শাশুড়ি আগামীকাল চট্টগ্রামে যাবে শুনেই উনারা সবাই দেখা করতে এসেছেন। বেশ আনন্দ আড্ডায় মেতে উঠেছিলো সবাই। আমি নিরবে সবার কথা শুনে যাচ্ছি। কেউ কিছু জিজ্ঞেস করলে জবাব দিলাম। বেশ ভালো কাটলো সময়টা। এরইমধ্যে সান্ধকালিন নাস্তা সেরে কামরান বেরিয়ে গেলো। আমিও কিছুক্ষণ পরে আস্তে করে সেখান থেকে উঠে পরলাম। ড্রয়িং রুমের বেলকনিতে গিয়ে দাঁড়ালাম। আসলে সেখানে মুরব্বিদের কথার মাঝে বসে থাকতে আর ভালো লাগছিল না আমার। তিয়ানা তো নাস্তা সেরেই পড়াশোনা আছে বলেই নিজের কামরায় চলে গেছে। আর পিউলি আমার সাথে এখন অব্দি শুধুমাত্র হাই হ্যালো ছাড়া তেমন একটা কথা বলেছে বলে মনে পরেনা।

আমি রেলিঙের উপর দুই হাতের কনুই ভর দিয়ে দাঁড়ালাম। আনমনে দাদির বলা কিছু উপদেশের কথা ভাবছি। এখানে আসার আগে দাদি আমাকে একগাদা উপদেশ ও পরামর্শ দিয়েছিলেন। সেগুলো আমল করে চলতে বলিছিলেন আমাকে। কিন্তু আমার তো সেই সব পরামর্শ মনে পরলেই লজ্জা করে। তাহলে সেসব কিভাবে বাস্তবে আমল করব। নানা আমার দ্বারা এসব সম্ভব নয়। কামরান আমার সাথে খুবই স্বাভাবিক এবং অমায়িক আচরণ করে। যেন কোন হোস্টেলে থাকা নতুন রুমমেট আমরা। একসঙ্গে থাকলে প্রয়োজনে টুকটাক কথা যেগুলো না বললেই নয়। তাহলে কিভাবে সম্ভব দাদির কথাগুলো মেনে চলা? দাদি বলেছিলেন মেয়েরা পারেনা এমন কিছু নেই। মেয়েরা সর্ব জয়া। ছলাকলা দিয়ে একটা ছেলের মনোযোগ আকর্ষণ করার গুণ প্রত্যেক মেয়ের সহজাত প্রবৃত্তির মধ্যে পরে। কিন্তু সেটা তো স্বামী স্ত্রী স্বাভাবিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে কার্যকর। তাই না? তাহলে আমি কিভাবে নির্লজ্জের মতো আচরণ করব? যেখানে কামরান পুরুষ মানুষ হয়ে একটা নির্দিষ্ট দুরত্ব বজায় রেখেছে সেখানে আমি কি গায়ে পরে নির্লজ্জের মতো ওর কাছে ঘেঁষবো? সট আমার দ্বারা কখনোই সম্ভব নয়। দাদিযে কি বলেনা তার কোন মাথা মুণ্ড নেই। দাদির শেখানো কথাগুলো মনে পরতেই আমি নিজের অজান্তেই আপনমনে লাজুকভাবে হেসে ফেললাম।

” একা একা দাঁড়িয়ে এতো হাসির মতো কি ঘটলো? ”

কথাটা কর্ণকুহরে প্রবেশ করতেই আমি চমকে উঠে পিছনে ফিরে তাকালাম। কখন যেন পিউলি আমার পিছনে এসে দাঁড়িয়েছে আমি টেরই পাইনি। আমি স্মিত হেসে বললাম,

” তেমন কিছু না। আমার দাদির একটা কথা মনে পরল তাই আরকি? ”

” ওহ আচ্ছা। ”

পিউলিও এগিয়ে এসে রেলিঙে দু’হাতের ভর দিয়ে দাঁড়াল। আমিও আবার আগের ভঙ্গিতে দাঁড়িয়ে বাইরের দিকে তাকালাম। কিছু সময়ের জন্য দুজনেই নিরব রইলাম। আসলে মেয়েটাকে দেখলে কেন জানিনা আমার অদ্ভুত ধরনের অস্বস্তি হয়। তাই ঠিক কি বিষয়ে কথা বলা যায় সেটাই খুঁজে পাচ্ছি না। একটু পরে পিউলিই কথা বলল,

” আচ্ছা, এইযে হঠাৎ করে তোমাদের ওভাবে বিয়ে হয়ে গেল। তোমার কোন আপত্তি ছিলোনা? তুমিই বল এভাবে এমন হুট করে কি বিয়ে হয়? ”

আমি মৃদু হেসে বললাম, ” হয়তো হয়, হয়তো হয়না। কিজানি? এই দুনিয়ার সবকিছুর নিয়ন্ত্রণ যার হাতে তিনি চাইলে সবই সম্ভব হতে পারে। আসলে আমাদের ভাগ্যে যা আছে সেটা আমরা খণ্ডাতে পারিনা। আল্লাহ তায়ালা যা করেন আমাদের ভালোর জন্যই করেন। তাই সেটা খুশি মনে মেনে নেয়াই উত্তম। এন্ড আমিও তাই করেছি। সিম্পল। ”

আমি কথা শেষ করে কাধ উঁচিয়ে হেসে উঠলাম। কিন্তু পিউলির চোখ মুখ কেমন কঠিন হয়ে গেল আমার কথা শুনে। আমি ঠিক বুঝলাম না আমার বলা কথায় এমন কিছু ছিল কি যা ওকে অসন্তুষ্ট করতে পারে? পিউলি কয়েক মুহূর্ত আমার মুখের দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল। তারপর হঠাৎ বেশ শক্ত গলায় বলল,

” কিন্তু কি জানো? আমি ভাগ্যে একদম বিশ্বাস করি না। আমি নিজের ভাগ্য তৈরি করে নেয়াতে বিশ্বাসি। এন্ড আই মিন ইট।”

আমি ওর বলার ধরন দেখে ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে আছি। ও কথা শেষ করে একমুহূর্তের জন্য দাঁড়াল না। গটগট করে ঘরের ভিতরে চলে গেল। ওকি আমাকে কিছু বোঝাতে চাইল? কিন্তু কি?

রাতে খাওয়া দাওয়া শেষে আমার দুই ফুপু শাশুড়ি বিদায় নিয়ে চলে গেলেন। পিউলিরাও যাবে এখন। ডাইনিং টেবিলে তিয়ানা আমি খালা শাশুড়ি বসে কথা বলছি। কামরান স্টাডি রুমে গেছে আর আরমান নিজের কামরায়। বেশির ভাগ তাই থাকে। আমার শাশুড়ি মা তার কামরায় গেছেন তার সাথে পিউলিও আছে। খালা উসখুস করে আমার উদ্দেশ্যে বললেন,

“অনেক রাত হয়ে যাচ্ছে। আমাদের যেতে হবে। ওরা ভিতরে কি করছে? যাওতো পিউকে ডেকে আনো। ”

” জি খালা, এখুনি আনছি। ”

পিউলিকে ডাকতে আমার শাশুড়ি মায়ের কামরার সামনে গিয়ে দাঁড়ালাম। ভিতরে প্রবেশ করতে যাব ঠিক সেই সময় পিউলির একটা কথা কানে আসতেই আমি থমকে দাঁড়ালাম। পিউলি বেশ উত্তেজিত কন্ঠে বলছে,

” তুমি এমন করতে পারনা খালা মনি। তুমিই আমার মনে আশা জাগিয়েছিলে ভুলে গেছ? এখন আমি কামরান ভাইকে ভালোবেসে ফেলেছি। আর তুমি আমাকে বলছ ভুলে যেতে। সবকিছু কি এতো সহজ? ”

আমার শাশুড়ীর গলা শোনা গেল, ” আমি জানি সহজ নয়। কিন্তু তোকে পারতে হবে নইলে তোরই কষ্ট বাড়বে। আমরা যখন তোর সাথে কামরানের বিয়ের কথা বলেছিলাম তখন আব্বা বলেছিল কামরানের সাথে হীবার বিয়ে সেই ছোট বেলায় পাকা করে রেখেছিলেন। এর আগে উনি এই নিয়ে কখনও কিছুই বলেননি। তাই আমি না জেনেই তোর সাথে কামরানের বিয়ে নিয়ে আগ্রহ দেখিয়েছিলাম। কিন্তু এখন যা হওয়ার তা হয়ে গেছে। সেটা মেনে নিতে হবে। কেন বুঝতে পারছিসনা? ”

পিউলি বললো, ” আমি বুঝতে পারলেই বা কি হবে?মেনে নিতে বললেই কি মেনে নেয়া যায়? ভুলে যেতে বললেই কি ভোলা যায়? তুমি আমাকে বলেছিলে আমিই এই বাড়ির বউ হব। অথচ দেখ সেই জায়গায় এখন কে দাঁড়িয়ে আছে? আমি জাস্ট মানতে পারছি না খালামনি। ইটস ইম্পসিবল। কেন বুঝতে পারছনা?”

শাশুড়ি মা অসহায় সুরে বললেন, ” আমি তোর মনের অবস্থা বুঝতে পারছি মা। কিন্তু আমাদের কারোরই কিছু করারও তো নেই। ভাগ্যকে মেনে নিতে হয় মা। নিয়তির কাছে আমরা সবাই অসহায়।”

” ইম্পসিবল! ” প্রায় চেচিয়ে উঠলো পিউলি। তারপর একটু থেমে শান্ত গলায় বললো, ” আমি ভাগ্যে বিশ্বাস করিনা খালামনি এবং আমি নিজের ভাগ্যও নিজেই গড়ে নিব। তোমাদের কারোর কিছু করতে হবে না। ”

কথাটা শেষ করেই প্রায় ঝড়ের বেগে পিউলি কামরার বাইরে বেরিয়ে এলো। আমি একমুহূর্তের মতো মনে হয় ওখানেই জমে যাচ্ছিলাম। আমার হুঁশ হলো আমি এতক্ষণ আড়ি পেতে কারও কথা শোনার মত জঘন্য কাজ করছিলাম। আমি ঝট করে একপাশে সরে গিয়ে দেয়ালে পিঠ ঠেকিয়ে দাঁড়ালাম। আমার হৃদপিণ্ডটা প্রবল বেগে স্পন্দিত হচ্ছে। আমার শ্বাস প্রশ্বাসের গতিও বেড়ে গেছে। পিউলির পিছু পিছু শাশুড়ি মাও ডাকতে ডাকতে বেরিয়ে এলেন। ওরা ওদিকে চলে গেলে আমি হাফ ছেড়ে বাঁচলাম। নিজেকে ধিক্কার দিতে ইচ্ছে করছে। কামরানকে ভালোবাসে কথাটা শুনে আমি কি করছিলাম সেই বোধটাই বোধহয় হারিয়ে ফেলেছিলাম। ছিঃ আমি এটা করতে পারলাম? কিন্তু পিউলির কথাটাও আমার গলায় কাঁটার মত আঁটকে গেছে। এখন আমি বুঝতে পারছি তখন কি বোঝাতে চাইছিল সে।

আজ বিছানায় শুয়ে এপাশ ওপাশ করেই যাচ্ছি। কিছুতেই ঘুম বাবাজি আমার দুচোখে ধরা দিচ্ছে না। মাথাটা একদম ঘেটে আছে। ভিতরে ভিতরে প্রচন্ড অস্থিরতা আমাকে কিছুতেই শান্তি দিচ্ছেনা। এখনো পর্যন্ত কামরানের সাথে আমার সম্পর্কটা আর দশটা দম্পত্তির মত স্বাভাবিকই হলোনা। এর মধ্যে পিউলি চলে এসেছে। নাকি আমি ওদের মাঝে চলে এসেছি? কামরানও কি তবে পিউলিকে…? আমি এরপর আর ভাবতেই পারছিনা। এইজন্যই কি কামরানের আচরণ এমন ঠান্ডা আমার প্রতি?

” কি ব্যাপার তুমি এখনো ঘুমাওনি? ”

প্রশ্নটা কানে আসতেই আমি চমকে তাকালাম সামনে। কামরান বিছানার পাশে দাঁড়িয়ে আছে। ও কখন কামরায় এসেছে আমি টেরই পাইনি। এতোটাই ভাবনার মাঝে ডুবে ছিলাম! আমি আমতাআমতা করে বললাম,

” না.. মানে.. হ্যা এইতো ঘুমাবো। ”

” আচ্ছা ঘুমাও। আমি ওয়াশরুম থেকে আসছি। ”

ও ওয়াশরুমের ভিতর ঢুকে গেল। আজ মনে হচ্ছে রাতটা জেগেই কাটাতে হবে। আমার এই এক সমস্যা। যখন কোন দুশ্চিন্তার পোকা মাথার ভিতরে কিলবিল করতে থাকে তখন আমার দুচোখের ঘুম একেবারে উধাও হয়ে যায়। কামরান কখন বাথরুম থেকে বেড়িয়ে এলো আমি টের পাইনি। তাই সে যখন হঠাৎ বিছানায় এসে পাশে শুয়ে পরল আমি আবারো একটু চমকে উঠলাম। কামরান ঠিক ঠাক হয়ে শুয়ে আমাকে জেগে থাকতে দেখে শুধালো,

” ঘুম আসছে না বুঝি? ”

আমি ইতস্তত করে বললাম, ” হুম। বিকেলে বেশ অনেক্ক্ষণ ঘুমিয়েছিলাম। আসলে বিকেলে ঘুমানোর অভ্যাস নেই তো। আজ কেন যেন ঘুমিয়ে পরেছিলাম। ব্যাস এখন তার ফল ভোগ করছি। ”

” নো প্রবলেম। চল আজ নাহয় আমরা গল্প করে কাটালাম।”

কামরানের প্রস্তাব শুনে আমার চোখ দুটো বিস্ময়ে কপালে উঠে যাওয়ার যোগাড়। ও কিনা গল্প করবে, তাও আমার সাথে। আমি কি সত্যিই শুনেছি নাকি স্বপ্ন দেখছি!

চলবে ইনশাআল্লাহ।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে