#তোমায়_ছেড়ে_যাবো_কোথায়?
লেখা – মুনিরা সুলতানা।
পর্ব – ২৯।
—————*
কামরানের ডাকে আমার ঘুম ভেঙে গেল। কতক্ষণ ঘুমিয়েছি জানিনা। ঘুম ঘুম ঘোর থেকে বেরিয়ে চোখ মেলে দেখি কামরান আমার দিকে ঝুকে আছে। একটু হকচকিয়ে গেলাম ওকে এত কাছে দেখে। আমাকে চোখ মেলে তাকাতে দেখে সরে বসলো সে। চারপাশে নজর বুলিয়ে বোঝার চেষ্টা করলাম ঠিক কোথায় আছি আমরা। বাইরে ঝিরিঝিরি বৃষ্টি ঝরছে। সাথে ঠান্ডা বাতাস বইছে। গাড়ি একটা বিল্ডিংয়ের সামনে দাঁড়িয়ে আছে। বুঝলাম আমরা আমাদের গন্তব্যে পৌঁছে গেছি। কামরান বললো,
” কি ম্যাডাম গাড়িতে বসেই সকাল করবেন নাকি আমাদের রুম পর্যন্ত হেটে যাওয়ার কষ্টটুকু করবেন? অবশ্য প্রবলেম নেই। চাইলে আমি কোলে তুলে নিয়ে যেতে পারি।”
রিসোর্টটা আসলেই ফার্মহাউসের মতোই। চারপাশে প্রচুর গাছগাছালি। রাতের বেলায় ঠিক ভাবে পরিবেশটা বোঝা যাচ্ছে না। তবে নানা রঙের কৃত্রিম আলোর স্ফুরণে ঝলমল করছে চারিদিকে। অবিরত ঝিরিঝিরি বৃষ্টি ঝরে চলেছে। তাই গাড়ি থেকে নেমে ভারি লেহেঙ্গাটা দু’হাতে একটু উচু করে ধরে দ্রুত পদক্ষেপ ফেলে আমরা ভিতরে গেলাম। একজন মাঝারি গঠনের হালকা পাতলা শ্যামলা চেহারার ছেলে আমাদের লাগেজ গুলো নিয়ে গেলো। আমরাও আর সময় নষ্ট না করে লোকটার পিছু নিয়ে এগোলাম। তিনদিন থাকব যখন দিনের আলোয় চারপাশে ঘুরে ফিরে দেখার প্রচুর সুযোগ পাবো। সিড়ি ভেঙে দোতলার একদম কিনারায় আমাদের রুমটা। লোকটা দরজা খুলে চাবি কামরানের হাতে ধরিয়ে দিল। লাগেজট ভিতরে রেখে চলে যেতে নিলে কামরান তাকে থামিয়ে বললো,
” নাম কি আপনার? ”
” শিহাব স্যার। ”
” তো শিহাব চা বা কফির ব্যাবস্থা করা যাবে এখন? ”
লোকটা দাঁত বের করে হেসে বললো, ” কিযে বলেননা স্যার। আপনারা হলেন স্পেশাল গেস্ট। স্যার বলে দিয়েছেন আপনাদের জন্য অলটাইম সেবা নিয়োজিত থাকবে। আপনি শুধু অর্ডার করবেন স্যার। ”
কামরান হেসে বললো, ” সৌরভ একটু বেশিই বলেছে। যাইহোক কিছুক্ষণ পরে দুই কাপ চা পাঠিয়ে দিবেন। ”
” রং চা নাকি দুধ চা?”
আমি চট করে বললাম, ” আমার জন্য দুধ চা।”
কামরান বললো, ” হ্যা দুই কাপ দুধ চা। ”
লোকটা চলে গেলে আমরা রুমের ভিতরে প্রবেশ করলাম। ঢুকেই আমাদের দু’জনের চক্ষু চড়কগাছ হয়ে গেল। বিছানাটা সম্পূর্ণ ফুল দিয়ে সাজানো। নানা রকমের তাজা ফুলের সুঘ্রাণে রুমটা ম-ম করছে। সারা রুমেও ফুল মোমবাতি দিয়ে সাজানো। কামরান এসি অন করতে করতে বললো,
” সৌরভের কাজ। সারপ্রাইজ দিতে ওর জুড়ি নেই। এইজন্য ফ্রেন্ডদের থেকে প্রফেশনালি কিছু দেয়া-নেয়া করা মুসকিল। এইযে এই রুমটার ভাড়াও সে নিবে না। বলে কিনা এটা ওর তরফ থেকে গিফট। ”
আমি আর কি বলবো। কাছের বন্ধুরা যে এমন করবে সেটাই স্বাভাবিক। তাই কামরানে কথার জবাবে কেবল মুচকি হাসলাম। বিছানার দিকে তাকিয়ে দেখছি। চাদরের উপরে হার্ট শেপ করা লাল গোলাপের পাপড়ি দিয়ে। তার মাঝে পাঁচ মিশালি ফুলের পাপড়ি দিয়ে আমাদের দুজনের নাম লেখা। আমি মুগ্ধ নজরে চারপাশে নজর বুলালাম। কামরান আচানক আমার পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে কাঁধের উপর থুঁতনি রেখে বললো,
” তোমার পছন্দ হয়েছে এসব কিছু? ”
” খুউব। এতো সুন্দর আয়োজন কেন পছন্দ হবেনা? আমার তো মনে হচ্ছে আমি স্বপ্ন দেখছি।”
” এইজন্যই তো এখানে এসেছি। যেহেতু আমাদের বিয়েটা চার মাসের তাই বাড়িতে এইযে এমন পরিবেশ তৈরি করতে গেলে লজ্জায় পরতে হতো তাইনা? কিন্তু তারা তো আর জানেনা সত্যিকার অর্থে এখন আমাদের বিয়েটা পরিপূর্ণতা পেয়েছে। এন্ড আজ আমাদের বাসর রাত। তাই আপাতত এটাই আমাদের ছোট খাটো হানিমুন ট্রিপ। পরে তুমি সুস্থ হয়ে গেলে একটু গুছিয়ে নিয়ে দূরে কোথাও যাওয়া যাবে। আমি কিন্তু ট্রাভেলিং করতে ভিষণ ভালোবাসি। এতোদিন একাই যেতাম এখন থেকে তুমি হবে আমার ভ্রমণের সঙ্গী। ”
ভ্রমণের নেশা আমারও আছে। কিন্তু সময় সুযোগের অভাবে খুব কমই বেড়ানো হয়েছে। স্বপ্ন ছিল যদি এমন একজন জীবনসঙ্গি জুটে যায় তবে তার সাথে পৃথিবী জুড়ে চষে বেড়াবো। বিধাতা কি এতটাই ভরিয়ে দেয় কাউকে? সত্যি সবকিছু এতো স্বপ্নের মতো সুন্দর লাগছে কেন? আল্লাহ তায়ালার কাছে শতকোটি শুকরিয়া এমন একজন জীবন সাথি জুটিয়ে দেয়ার জন্য। নিজের আবেগকে সংযত করে বললাম,
” আচ্ছা সময় হলে সব হবে ইনশাআল্লাহ। এখন আপাতত ফ্রেশ হওয়া দরকার। ”
কামরান হঠাৎ মনে পরল এমন ভাবে সরে দাঁড়িয়ে বললো, “হ্যা এই ভারি সাজপোশাকে নিশ্চয়ই তোমার খুব অস্বস্তি লাগছে। যাও আগে চেঞ্জ করে ফ্রেশ হয়ে নাও। ”
আমি লাগেজ থেকে আমাদের দু’জনের কাপড় বের করে সোফার উপর রাখলাম। একটা কাঁচা হলুদ রঙের জমিনে কালচে সবুজ পাড়ের মনিপুরী সুতির শাড়ি ও গামছা নিয়ে ওয়াশরুমে গেলাম। মনের মাঝে আনন্দময় ভাবনা গুলো প্রজাপতির মতো ডানা মেলে উড়ে বেড়াচ্ছে। সত্যিই এখনো বারবার সবকিছু কেমন স্বপ্ন মনে হচ্ছে। এই কয়মাসের অভিজ্ঞতার আলোকে জীবনটা বড্ড হতাশাজনক হয়ে উঠেছিল। সুখের পরে দুঃখ আবার দুঃখের পরে সুখ আসে কথাটা আসলেই সত্যি। অন্তুত আমার জীবনে তো তেমনই ঘটেছে। আল্লাহ তায়ালা কত ভাবে যে পরীক্ষা নেন আমাদের। ধৈর্য্য ধারণ করতে পারলে অবশ্যই সেই পরীক্ষায় পাশ করিয়ে সব মুসকিল ঠিকই আহসান করে দেন।
কাপড় পাল্টে ফ্রেশ হয়ে অজু করে বের হয়ে এলাম। এশার নামাজ আদায় করা হয়নি। কামরানকে রুমে না পেয়ে ওর গলার আওয়াজ অনুসরণ করে বুঝলাম ও বারান্দায় কারো সাথে ফোনে কথা বলছে হয়তো। আমি বারান্দায় গিয়ে গামছাটা তারে মেলে দিলাম। এখনো বৃষ্টি হচ্ছে। খুব জোরেও নয়। এই বৃষ্টি সারারাত অবিশ্রান্তভাবে ঝরে পরা বৃষ্টি। কামরান আমাকে দেখে কথা শেষ করে কল কেটে দিল। আমার দিকে ফিরে বললো,
” আম্মা খোঁজ নিতে ফোন দিয়েছিল। ওরা একটু আগেই বাসায় ফিরেছে।”
” আচ্ছা সব ঠিকঠাক মিটে গেছে? ”
” হুম। আমি চেঞ্জ করে ফ্রেশ হয়ে আসি।”
আমি বললাম, ” অজু করে আসবেন। ”
” অজু? ওহ্যা এশার নামাজ পরা হয়নি। আচ্ছা ঠিক আছে।”
” এশার নামাজ তো আছে সেই সাথে আমরা দুজন মিলে নফল নামাজ পরবো। দাম্পত্য জীবন শুরু করার আগে হাসবেন্ড ওয়াইফ মিলে এই নামাজ পড়তে হয়। নিয়ম মত বিয়ের প্রথম রাতেই পরতে হয়। কিন্তু আমাদের বিয়ের সময় পরিস্থিতি অন্য রকম ছিল। তাই আজও বলতে গেলে নতুনভাবে শুরু করাই তাই না?”
” বুঝতে পারছি। আামদের বাসর রাততো আজকের। তাই আজ নফল নামাজ পরেই আমাদের নতুন বিবাহিত জীবনের পথচলা শুরু হোক। কি বল? ”
আমি লাজুক হেসে মাথা নত করে নিলাম। কামরান ওর কাপড় গুলো নিয়ে ওয়াশরুমে প্রবেশ করলো। আমি লাগেজ থেকে জায়নামাজ বের করে নামাজ আদায় করতে বসলাম। আমার নামাজ প্রায় শেষের দিকে তখন কামরান চেঞ্জ করে বেরিয়ে এলো। অজু করে এসেছে। আমার নামাজ হয়ে গেলে জায়নামাজ ছেড়ে সেলফোন হাতে নিয়ে বারান্দায় চলে গেলাম। ততক্ষণ আম্মা আব্বার সাথে কথা বলে নিলাম। ওরা মামাদের বাসায় আছে। দুইতিনদিন থাকার ইচ্ছে আছে। কামরানের নামাজ আদায় হয়ে গেলে আমরা দুজন মিলে নফল নামাজ আদায় করলাম। নামাজ শেষে দুজন মিলে আমাদের ভবিষ্যৎ দাম্পত্য জীবনের জন্য দোয়া করলাম। প্রার্থনা করলাম আল্লাহর বরকত ও রহমতের সহিত আমাদের সংসার জীবনে আমরা এগিয়ে যেতে পারি।
এরই মধ্যে চা এবং সাথে কিছু নাস্তাও দিয়ে গেছে। ফ্লাক্স কেতলিতে করে চা দিয়েছে। নাস্তা দেখে বললাম,
” এতো খাবারও দিতে বলেছিলে?
কামরান খাবারের ট্রেতে নজর বুলিয়ে বললো, ” নাহ্। তোমার সামনেই তো চা দিতে বললাম। এগুলো সৌরভের কাজ। সেই কখন খেয়েছো সত্যি করে বলোতো খিদে পাইনি তোমার? একটু কিছু খেয়ে নাও। এতো জলদি ঘুমাতে দিচ্ছি না আজ। সো রাতে স্বাভাবিক ভাবে খিদে পাবে। বুঝলে? সৌরভ ম্যারিড ম্যান। এক্সপেরিয়েন্স আছে যে।”
কথা শেষে ইঙ্গিত পূর্ণ হাসি ফুটে উঠল কামরানের ঠোঁটে।লজ্জায় কোন রকমে আমার মুখে একটাই শব্দ জুগালো,
” অসভ্য। ”
আমার কথা কর্ণগোচর হতেই কামরানের নিশ্বব্দ হাসি শব্দমুখর হাসিতে রুপান্তরিত হলো। আমি ওর দিকে পাত্তা না দিয়ে খাওয়াতে মনোযোগ দিলাম। সত্যিই খিদে পেয়েছিল। মনে মনে সৌরভ ভাইয়াকে ধন্যবাদ জানালাম। দুটো পিরিচে পুডিং তুলে একটা ওকে দিয়ে নিজে খেতে শুরু করলাম। খাওয়া শেষে দুটো কাপে দুজনের জন্য চা ঢেলে নিলাম। কাপ হাতে আমরা বারান্দায় গেলাম। বৃষ্টির ঝাপটায় বেশ ঠান্ডা হাওয়া বইছে। বারান্দাটায় অর্ধেক রেলিঙ দেয়া।উপরের দিকে খোলা। ছাদ আছে বলে বৃষ্টির পানি ভিতরে আসছেনা। আমি রেলিঙের ধারে দাঁড়িয়ে সামনের গুচ্ছ গুচ্ছ জমাট বাঁধা অন্ধকারের দিকে তাকিয়ে চায়ের কাপে চুমুক দিলাম। দূরদূরান্তরে ফাকে ফাকে টিমটিমে দুয়েকটা আলোর ফুলকির মত দেখা যাচ্ছে। আশে পাশে তেমন বাড়িঘর আছে বলে মনে হচ্ছে না। ঝিঝিপোকারা তারস্বরে একঘেয়ে ভাবে ডেকে চলেছে। হঠাৎ নিচের দিকে চোখ পরতে খেয়াল করলাম বারান্দার নিচের লাইটের আলো পরে নিকষকৃষ্ণ টলটলে পানি চিকচিক করছে। তারমানে সামনে নদী বা পুকুর আছে। যতদূর চোখ যায় কেবল আঁধারে নিমজ্জিত চারপাশে। ঢাকা শহরে এতো অন্ধকার কোথায়? বোধহয় গ্রাম সাইড তাই জনসমাবেশ বাড়িঘর কম। আমি কামরানের দিকে ফিরে রেলিঙে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে শুধালাম,
” সামনে পানি দেখা যাচ্ছে…। ”
কামরান বারান্দায় রাখা দুটো চেয়ারের একটাতে বসে আমার দিকেই চেয়ে আছে। চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে বললো, ” হুম নদী ওটা। দিনের বেলায় এখানে দাঁড়িয়ে অন্যরকম ভিউ দেখতে পাবে। এই রুমের সৌন্দর্যই এই বারান্দাটা। চাঁদের আলো থাকলেও দারুণ রোমান্টিক পরিবেশ হতে পারতো। তবে বৃষ্টির কারনে আজ চাঁদ মেঘের আড়ালে লুকিয়ে আছে। নো প্রবলেম। বৃষ্টিও কিন্তু রোমান্সের জন্য আদর্শ নিঃসন্দেহে। কি বল বউ?”
কামরান ভ্রু নাচিয়ে দুষ্টুমি হাসি চোখে মুখে মেখে আমার দিকে দৃষ্টি নিবদ্ধ করে রেখেছে। আমি লাজুক হাসলাম কেবল। চায়ে শেষ চুমুক দিয়ে কামরানের হাত থেকে ওর কাপটাও নিয়ে বললাম,
” এগুলো রেখে আসি। ”
বলেই আমি দ্রুতগতিতে রুমের ভিতরে গিয়ে কাপগুলো রেখে দিলাম। আজ কেন এতো লজ্জা লাগছে মানুষটার সামনে যেতে? বুকের ভিতরে ধুকপুকানি থামছেইনা। বিচলিত অনুভূতি সর্বাঙ্গে শিহরণ জাগিয়ে তুলছে। আর লজ্জা তো আছেই। আক যেন উথাল-পাথাল লজ্জার ঢেউয়ের দোলায় দুলতে দুলতে কখন যেন ডুবেই না যাই। নিজেকে সামলে নিতে ব্যাস্ত যখন ঠিক তখনই আমাকে আরও আপাদমস্তক লজ্জার সাগরে ডুবিয়ে দিতে পিছন থেকে কামরান আমায় জড়িয়ে ধরেছে। কানের পাশে গভীর ভাবে ঠোঁট জোড়া ছুয়ে দিয়ে বললো,
” কি ব্যাপার আর গেলে না যে বারান্দায়?”
আমার নিশ্বাসের গতি ঘন হয়ে উঠেছে। চোখ বুঁজে চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছি। কোন জবাব না পেয়ে আমাকে নিজের দিকে ঘুড়িয়ে নিল কামরান। আমার মুখের দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে বুঝতে পারছি না দেখেই। আমার গালদুটোয় বোধহয় লালচে হয়ে গেছে। কামরান বললো,
” এতো লজ্জা? এখুনি? এই দেখ তোমার গাল দুটো কেমন টোম্যাটোর মত লাল হয়ে গেছে। আমার মুখ দিয়ে কথা বের হচ্ছে না। ওভাবেই দাঁড়িয়ে রইলাম। কামরান আমার কপালে আলতো ঠোঁট ছুয়ে চুমু দিল। তারপর কাঁধের উপর দিয়ে আমাকে একপাশে থেকে জড়িয়ে ধরে বিছানায় এনে বসালো। আমি মুখ তুলে ওর দিকে তাকালাম এক পলকের জন্য। ও এখনো আমার মুখের দিকে আবিষ্টমনে দৃষ্টি বাণে বিদ্ধ করে রেখেছে। আমি তৎক্ষনাৎ চোখ সরিয়ে নিলাম। অস্থির চিত্তে দৃষ্টি কামরার এদিক সেদিক ঘুরতে লাগলো। তবুও ওর চোখের দিকে তাকিয়ে দেখার সাহস করলাম না। কামরান আমার থুতনিতে দুই আঙুলের সাহায্যে মুখটা তুলে ধরে বললো,
” উহু চোখ সরাবে না একদম। ”
আমি এবার কৌতুহলী চোখে ওর দিকে চেয়ে দেখলাম। কামরানের হাতে একটা ছোট্ট মত ভেলভেটের কাপড়ে মোড়ানো বক্স। আংটির বক্সের মত। বক্সের কভার খুলতেই খুব সুন্দর একটা ডায়মন্ড রিং লাইটের আলো পরে ঝিলিক দিয়ে উঠলো। আমি বিস্মিত দৃষ্টিতে তাকিয়ে দেখছি। কামরান রিংটা তুলে নিয়ে বক্সটা টেবিলের উপর রেখে দিল। আমার বাম হাত তুলে নিয়ে অনামিকায় রিংটা পরিয়ে দিয়ে বললো,
” বিয়ের সময় বউকে কোন রিং দেয়া হয়নি। লন্ডন থেকে ব্রেসলেটের সাথে এটাও কিনেছিলাম। বাসর রাতে বউকে গিফট দিতে হয় বলে। তাই আজকের রাতে তোমার আঙুলে পরিয়ে দিব বলে রেখে দিয়েছিলাম। তোমার পছন্দ হয়েছে?”
” হুম। এতো সুন্দর রিং পছন্দ হবেনা কি বল? খুউব পছন্দ হয়েছে। থ্যান্কিউ সো মাচ।”
” শুধু শুকনো মুখে থ্যাংকস? উহু চলবে না। আমার অন্য কিছু চাই। ”
আমি চিন্তিত মুখে কামরানের দিকে তাকালাম। ওর ঠোঁট জুড়ে দুষ্টু হাসি। কি চাই ওর? শুধালাম,
” কি চাই তোমার? ”
কামরান আমার দিকে ঝুকে কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিস করে বললো, ” তুমি শুরু করবে আজ।”
আমি ভ্রুকুটি করে তাকালাম, ” মানে? ”
সে একই রকম দুষ্টু হাসি ছুঁয়ে বললো, ” বাসর রাতের শুরুটা…। ”
আমি কামরানের মুখে হাত দিয়ে চেপে ধরে থামিয়ে দিলাম। তারপর ওর বুকের মধ্যে মুখ গুজে জড়িয়ে ধরলাম। কামরানও আমাকে জড়িয়ে ধরে আগলে নিল। কানের কাছে আবারও মুখ নিয়ে ফিসফিসিয়ে বললো,
” তোমার নিজে থেকে আজ প্রথম আমাকে জড়িয়ে ধরাকেই আমি শুরু বলে ধরে নিলাম কিন্তু। ”
ওর ওভাবে কানের কাছে ফিসফিস করে কথা বলায় কি ছিল জানিনা। কিন্তু এতেই আমার পায়ের তলা থেকে সর্বাঙ্গ জুড়ে শিরশির করে উঠলো। কান গাল থেকে যেনো আগুন বের হবে এতটাই গরম হয়ে উঠেছে। আমি ওকে আরও নিবিড় ভাবে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলাম। কামরান এবার আমাকে পাঁজা কোলে তুলে নিয়ে তাজা ফুলের সুঘ্রাণে ভরা বিছানায় গিয়ে শুইয়ে দিয়ে নিজেও আমাকে জড়িয়ে শুয়ে পরল। তারপর আমার অধর পল্লব নিজের অধরের দখলে নিয়ে উন্মত্ত চুম্বনে আবদ্ধ করল। বাইরে এখনো অবিরাম অন্তহীন মধুময় ছন্দ তুলে বৃষ্টি ঝরছে। রাতটাকে আরও মধুময় সিক্তকরণে প্রকৃতির যেন কোন ক্লান্তি নেই। ঝিঝি পোকার ক্লান্তিহীন ভাবে ডেকে চলেছে। দুরে কোথাও শেয়ালের ডাকও শোনা গেলো।
———-*
আজ আমাদের সকালটা শুরু হলো একটু দেরি করে। ফজরের নামাজ পড়ে আবার ঘুমিয়ে পরেছিলাম। কামরান অবশ্য এখনো উঠেনি। সে আরও খানিকটা সময় ঘুৃমাবে। আমি বারান্দায় বসেই বেশ কিছু সময় কাটিয়েছি একা একা। ভোরের দিকে বৃষ্টি থেমে গেছে। এমন নিরিবিলি প্রাকৃতিক পরিবেশ। বৃষ্টিতে ভিজে আরো সতেজতা বেড়েছে। দূরদূরান্ত পর্যন্ত বাড়িঘর কিছুই দেখা যায়না। যতদুর দৃষ্টি পৌছায় সবুজ ঘাস ও বনাঞ্চল দেখা যায় কেবল। জনবসতি থেকে দূরে হওয়ায় হওয়ায় চারিদিকে বেশ নিরিবিলি ও নির্জনতায় একটা আলাদা উদাসীন পরিবেশ তৈরি করেছে। বেসামাল হাওয়া খেতে খেতে একান্ত নিজের মত সময় কাটানোর জন্য একদম পারফেক্ট পরিবেশে।
কামরান উঠার পর রুমেই সকালের নাস্তা আনিয়ে খেয়ে নিলাম। দুপুর পর্যন্ত আমরা বাইরে কোথাও আর গেলামনা।কামরানের ইচ্ছে অনুযায়ী বিকাল পর্যন্ত রেস্ট নিলাম আমারা। কারমান কিছু সময়ের জন্য বাইরে গেছে। এর মধ্যে দাদির সাথে কথা হলো। এদিকে আম্মা আব্বা ভাইয়া সবার সাথে কথা হলো। ভাইয়ারা কাল হানিমুনের উদ্দেশ্যে সাজেক যাচ্ছে। রাজশাহীতে দাদি বড় ফুফুর সাথে আছে। বড় ফুপুর শরীর খুব একটা ভালো না তাই আর আসেনি ঢাকায়। দাদি ফোনে যখন আমার সাথে কথা বলছিলেন তখন হঠাৎ আবদার ধরলেন ভিডিও কলে কথা বলবেন। ভিডিও কল দিতেই দাদি কতক্ষণ আমার মুখের দিকে তীক্ষ্ণ চোখে তাকিয়ে রইলেন। আমি অস্বস্তি নিয়ে বোঝার চেষ্টা করছি এত খুটে খুটে কি দেখছে দাদী। অবশেষে মুখ খুললেন দাদি,
” আজ তোর চেহারায় যে অন্যরকম রওনক দেখতে পাইতেছি বুবু। সুখী সুখী ভাব চোখে মুখে আলাদাই জেল্লা ও জৌলুশ ফুটে উঠছে এতদিন তো এই রঙ খুঁজে পাইনি তোর চেহারায়। আমার সন্দেহই তবে ঠিক ছিল। জামাইয়ের সাথে তোর সম্পর্ক এতদিন যা বলতিস মিথ্যা বলছিস তাই না? ”
আমি লজ্জায় রাঙা হয়ে গেলাম। কি বলছে এসব দাদি। চেহারা দেখে কেমনে কি বোঝা যায়? আমি তো মাথায় আঁচল দিয়ে রেখেছি। অস্বস্তিজনক কিছু দেখা যাওয়ার কথা নয়। তবে। নিজেকে স্বাভাবিক রেখে কপট রাগ নিয়ে বললাম,
” কি বলছো দাদি, মিথ্যে কেন বলব তোমাকে? তুমি একটু বেশিই বোঝো। ”
দাদি হেসে বললেন, ” আমার এত বছরের অভিজ্ঞ চোখ ভুল কিছু দেখতেই পারেনা। চুল তো আর এমনেই পাকে নাই। এতদিন এই রওনক তোর চোখে মুখে দেখিনাই। এইযে কথায় কথাশ লজ্জায় লাল হয়ে যাইতেছিস, শরম তোর সারা অঙ্গে ফুইটা আছে, তোর চোখ মুখ উজ্জ্বল করে রাখছে কই এর আগে তো এমন দেখি নাই। এইটা একমাত্র স্বামীর সোহাগ পাইলেই নারীর অঙ্গে ফুটে ওঠে।
আমি হতবিহবল হয়ে গেছি। লজ্জায় বিবশ হয়ে পরছি। কোথায় লুকাই নিজেকে? চোখ পাকিয়ে বললাম,
” দাদি তুমি যদি এইসব আছে বাজে কথা বল তাহলে ফোন রাখো। এখনি ফোন রাখো বলছি।”
” আজে বাজে কথা নয় রে বুবু, তোর জন্য এতদিন চিন্তা হইতোরে। ছেলেমেয়েদের বিয়ে দেওয়ার পর তোকে এতদিন এতো খুশি দেখি নাই। এই সুখ, এই খুশি কারও পক্ষে অভিনয় করে চোখে মুখে ফুটিয়ে তোলা যায়না। এই সুখ ভিতর থেইক্কা ফুইটা ওঠে। আজ তোর চেহারায় সেই খুশি দেইখা সত্যিই আমি নিশ্চিন্ত হইলাম। তোর জীবনে তুই সুখ খুঁইজা পাইছিস, জীবনটারে গুছাইয়া নিছিস। এখন আল্লাহর কাছে একটাই দোয়া করি সারা জীবন যেন এই সুখ তোদের ছুঁয়ে থাকে এভাবেই তোরা খুশি থাকিস। আর সারা জীবন আল্লাহ তায়ালা যেন এভাবেইনতোদের দুজনকে বেঁধে রাখেন। তোদের জন্য যেন একত্রে দোয়া করতে পারি। ”
” কিসের দোয়ার কথা হচ্ছে দাদি আমাকে বাদ দিয়ে ” হঠাৎ পিছন থেকে কামরানের কলা শুনে আমি লজ্জায় জড়োসড়ো হয়ে গেলাম। ওকি আমাদের কথা শুনেন ফেলল।
ওপাশ থেকে দাবি বললেন, ” তোমাদের জন্য দোয়া করি সারা জীবন যেন তোমরা একসাথে থাইকো আর আমরা একসাথে তোমাদের জন্য দোয়া করতে পারি এটাই বলতেছিলাম বুবুরে।”
কামরান এসে আমার পাশে বসে বললো,” বাহ বেশ বলেছেন তো দাদি দুজনের জন্য একসাথে দোয়া। ঠিক বলেছেন হাজবেন্ড ওয়াইফ এর জন্য সব সময় একসাথেই প্রার্থনা করা উচিত। হাসবেন্ড ওয়াইফ মিলে আমরা তো একজনই। আপনি মুরুব্বী মানুষ আমাদের জন্য দোয়া করবেন আমরা পরস্পরের সাথে এভাবেই সারা জীবন চলতে পারি একে অপরের হাত ধরে।
দাদি বললেন,” সে তো সবসময়ই দোয়া করি গো নাতজামাই। তুমি শুধু আমার বুবুরে একটু বুইঝা নিও ওরে সুখে রাইখো তোমার কাছে আমার এইটাই চাওয়া। ”
” অবশ্যই দাদি। এটা আবার বলতে হয়? হীবা সুখে থাকলে তবেইনা আমিও ভালো থাকব। নিজের ভালো থাকা কেনা চায় বলেন? ”
আমি ছলছল চোখে একবার স্ক্রীনে ভেসে থাকা দাদির দিকে তাকালাম আবার কামরানের দিকে তাকালাম। এরা সত্যিই আমাকে কত ভালবাসে। জীবনে আর কি চাই? আল্লাহর কাছে একটাই প্রার্থনা এই মুহুর্তটা যেন আজীবনের জন্য আমার ভাগ্যের সাথে জুড়ে দেন। কামরান আমার দিকে তাকিয়ে আস্বস্ত হেসে পাশ থেকে একহাতে আমাকে নিজের সাথে জড়িয়ে নিল।
কথা শেষ করে আরো কিছুক্ষণ আমরা বারান্দায় বসে রইলাম, পরস্পরের সান্নিধ্যে কিছু সময় কাটালাম। দুপুরে খাওয়ার জন্য আমরা নিচে নামলাম। ডাইনিং এ গিয়ে দেখলাম আরেকটা পরিবার আছে দুটো আট ও দশ বছরের ছেলে মেয়ে আর মা-বাবা সহ ছোট একটা ফ্যামিলি। বাচ্চা দুটোর খুনসুটি দেখতে ভালই লাগছিল। ওদের সাথে পরিচয় হলো ওরা দুদিন ধরে আছে এখানে। দুপুরে দুজনে কিছুক্ষণ রেস্ট নিয়ে বিকেলে বেরোলাম বাইরে।
এই জায়গাটা প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের ক্ষেত্রে খুব বিশেষ কিছু নয়। দেখার মত যেটা হল নদীর সাইডে প্রচুর বাতাসে হাঁটতে বেশ ভালো লাগে। আর সবুজ ঘাস গাছগাছালিতে ছাওয়া একদম প্রাকৃতিক পরিবেশ এবং গ্রামীণ গন্ধ ভেসে আছে বাতাসে। নদীতে বোটিং করার সুবিধা আছে। নদীটা খুব চওড়া নয়। অথচ দুই পাশে কতগুলো জাহাজ দাঁড়িয়ে আছে। কিছু জাহাজ এবং ইঞ্জিন চালিত চলাচল করছে। দেখতে ভালই লাগে। অন্যান্য জায়গা থেকে এই জায়গাটা একটু আলাদা। সবজায়গায় প্রাকৃতিক সৌন্দর্য একেবারে নষ্ট করে দেয় অতিরিক্ত মানুষের ভীরে। আজকাল কোথাও এই মানুষের জোয়ারের কারণে যেকোনো জায়গার সৌন্দর্য ঢাকা পরে যায়। নিজেদের একান্তে সময় কাটানোর সুযোগই থাকে না। এখানে প্রাইভেট ফার্ম হাউসের মতো হওয়ার কারণে কোলাহল কম। তাই আমরা নিজেদের মতো ঘুরে বেড়াতে পারছি। আশপাশে ঘুরে বেড়ালাম কিছুক্ষণ। নদীর পাশ দিয়ে অনেকটা সময় পাশাপাশি ধীরে ধীরে হাঁটলাম পরস্পরের হাতে হাত রেখে। প্রচুর বাতাসের কারনে কাপড়-চোপড় সামলে রাখা মুশকিল। বাতাসের তোড়ে কাপড় রীতিমতো উড়ে যেতে চাচ্ছে। সন্ধ্যা পর্যন্ত নৌকায় বসে পানির উপরে ভেসে বেড়ালাম। বেশ লাগছিল। একসময় এই দিনগুলোর স্বপ্ন দেখতাম। স্বামীর হাতে হাত রেখে এভাবে হাঁটবো। আজ স্বপ্ন পূরণ হলো। নৌকা থেকে ন যখন নেমে এলাম তখন গোধূলি লগ্ন। দূর আকাশে রক্তিম আলোকচ্ছটা ছড়িয়ে দিয়ে সূর্যটা নদীর ওপারের দূর আকাশের কোল ঘেঁষে একটু একটু করে দিগন্তের মাঝে ডুবে যাচ্ছে । এই সময়টা বেশ মনোমুগ্ধকর লাগে। প্রকৃতি কেমন রঙিন হয়ে ওঠে। আমি কামরানে একটা বাহু ধরে ওর কাঁধের উপর মাথা রাখলাম। কামরান একহাতে আমাকে জড়িয়ে আগলে নিল। কিছু সময় এভাবেই কেটে গেল। তারপর আমরা আবারও নদীর পাড় ধরে হাঁটতে হাঁটতে একটা নিরিবিলি জায়গায় এসে পাশাপাশি বসলাম। কামরান একই ভাবে একহাতে আমাকে জড়িয়ে ধরে রেখেছে। আমি ওর কাঁধে মাথা এলিয়ে দিয়েছি। একান্তে কিছু সময় নীরবতায় কেটে গেল। নিশ্চুপ শুধু উপভোগ করছি প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও নদীর পানিতে ছুঁয়ে আসা ঠান্ডা বাতাস। হঠাৎ কামরান বলল,
” তুমি ওভাবে রাজশাহীতে চলে গিয়েছিলে আমার উপর রাগ করে তাই না? সত্যি করে বলবে কিন্তু। ”
জবাব দিতে একটু ইতস্তত বোধ করলাম। সত্যি তো তাই করেছিলাম। কিন্তু এই মুহূর্তে সেটা বলতেও কেমন বাঁধছে। তখন রাগের মাথায় ভুল বুঝে কত সহজে চলে গিয়েছিলাম। তবুও সত্যিটাই বললাম,
” হ্যাঁ রাগ করেই চলে গিয়েছিলাম তবে সাময়িক ভাবে। ওই মুহূর্তে আমি খুব কনফিউশনে ছিলাম কি করা উচিত, বলা উচিত মাথায় আসছিল না কিছুই। তাই তোমার থেকে দূরে গিয়ে ভাবনা চিন্তা করতে চেয়েছিলাম। ঐ সময় সেটাই ঠিক মনে হয়েছিল। কিন্তু কতটা ভুল বুঝেছিলাম তোমাকে। সরি।”
কামরান প্রথমে আহত দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে রইলো। পরক্ষণে আবার নিজেকে স্বাভাবিক করে নিয়ে বলল,
” সত্যিই কতটা কষ্ট দিয়ে ফেলেছিলাম নিজের অজান্তে তাই তুমি আমাকে ছেড়েও চলে গিয়েছিলে। তুমি জানো, তোমারে যে চাহিয়াছে একদিন, সে জানে তোমারে ভোলা যে কি কঠিন। ‘ খুব অল্প সময় আমাদের এই সম্পর্কের। কিন্তু এই অল্প কয়েকদিনে তুমি আমার হৃদয়ের এত গভিরে পৌঁছে গেছো সেখান থেকে তোমাকে দূর করা যেমন সম্ভব নয় তেমন তোমায় হারিয়ে ফেলাটাও আমি সহ্য করতে পারবো না। যতদিন বেঁচে আছি এই বাকি জীবনটায় তুমি আমার থেকে আর মুক্তি পাবে না। শুধু মাত্র আমার হয়েই কাটিয়ে দিতে হবে তোমার এ জীবন। এই জীবনে আমরা পরস্পরের নিয়তি বুঝলে। ভালোবেসে আজীবন এভাবেই পরস্পরকে জড়িয়ে পথ চলাটাই আমাদের ভবিতব্য। কথাটা মাথায় পাকাপোক্ত ভাবে ঢুকিয়ে নাও।”
আমি মুখ তুলে কামরানের মুখের দিকে চাইলাম। মিষ্টি হেসে আবেগ তাড়িত গলায় বললাম,
” তোমায় ছেড়ে যাব কোথায়? আমার যে সাধ্যি নেই তোমায় ছেড়ে কোথাও যাওয়ার সেটা যাওয়ার পরেই হাড়ে হাড়ে বুঝেছিলাম। আর সেই ভুল করি? কখনো না। ”
কামরান আমার দিকে ঝুঁকে আমার কপালে আলতো ঠোঁট ছুয়ে চুমু একে দিল। দূর আকাশে একঝাঁক পাখি দলবেঁধে ডানা ঝাপটে তাদের নীড়ে ফিরে যাচ্ছে। আকাশের শেষ সীমানায় প্রকৃতিতে আঁধারে ডুবিয়ে সূর্যের শেষ টুকরোটা টুপ করে মিলিয়ে গেল।
সমাপ্ত।
গল্পটা কিন্তু ভালোই ছিলো,,,,,,,, গোছানো একটা গল্প,,,,, লেখাগুলি নির্ভুল,,,,, ভালো লাগছে,,,,, all the best
গল্পটা আসলেই অনেক গোছালো আর সুন্দর ছিলো
Best 💖💖💖💖💖💝