#তোমায়_ছেড়ে_যাবো_কোথায়?
লেখা – মুনিরা সুলতানা।
পর্ব – ২৩ ।
—————-*
” কোথায় তোমার সেবা করব আপু এসময় তা নয় আমি নিজেই বিছানায় শুয়ে বসে থেকে অন্যের সেবা ভোগ করছি। না নিজে চলতে পারছি না তোমায় কোন সাহায্য করতে পারছি। ব্যাপারটা আমার জন্য খুবই এ্যমব্রেসিং। ”
তাসমিয়া আপু আমার কথা শুনে মাথা নেড়ে বললেন, “ধুরও বোকা মেয়ে এমন কথা বলেনা। এক্সি*ডেন্ট কি বলে কয়ে আসে? বল? তুমি অসুস্থ এখন তাই তোমার যত্ন নেয়া হচ্ছে। আমরা যখন অসুস্থ হব তুমিও তখন আমাদের সেবা যত্ন করবে। আপনজনরাই তো আপনজনদের পাশে থাকে তাই না? আর আমি তো এখন সুস্থ তবেইনা এতদুর জার্নি করে আসতে পেরেছি। সো এসব নিয়ে একদম ভেবোনা। এখন তোমার একটাই কাজ নিজের খেয়াল রাখো এবং দ্রুত সুস্থ হয়ে ওঠো। ভাইয়া কিন্তু যাওয়ার আগে পইপই করে বলে গেছে তোমার যেনো কোন অযত্ন না হয়। বুঝতেই পারছ এখন কি করতে হবে আমাদের। তাই কোন রিস্ক নেওয়া যাবেনা বাবা।”
শেষোক্ত কথাটি বলার সময় আপুর মুখে একটা দুষ্টুমি ভরা মুখ টিপা হাসি খেলে গেল। উনার কথার মানে ধরতে পেরে আমারও চোখে মুখে লাজুক হাসি ছুঁয়ে গেল। কিন্তু সেটা প্রকাশ করতে দেওয়া যাবেনা। মানুষটা সত্যিই এই কয়দিন কিনা করলো। আমি সত্যিই কনফিউজ। আসলে উনার মনে কি চলছে আমি বুঝতেই পারছি না। সেদিনের সেই দৃশ্য এখনও আমার চোখে ভেসে ওঠে। কিছুতেই ভুলতে পারিনা আমি। কোনটা সত্যি? সেদিনের পিউলির সাথে থাকা ঐ কামরান নাকি এই কয়দিনে আমার সাথে থাকা এতো কেয়ারিং কামরান। এইসব ভাবতে গেলে আমার মাথা কাজ করে না। তাই আমি এসব কিছু সময়ের উপর ছেড়ে দিয়েছি। কিন্তু যতক্ষণ আমার প্রশ্নের উত্তর না মিলছে আমি ওর সাথে কিছুতেই স্বাভাবিক হতে পারছি না। এইযে বিদেশে গিয়ে ওখান থেকে ফোন করলেই আমার খবর নিচ্ছে। আমার ফোনটা তো ভেঙে গেছে কারো না কারো ফোনে কল করলেই আমার সাথে কথা বলতে চাইছে। ব্যাপারটা আমার জন্য খুবই অস্বস্তিকর। আমি কিছুতেই স্বাভাবিক ভাবে কামরানের সাথে কথা বলতে পারছিনা। ফোন হাতে নিতে হয় সবার সামনে। কিন্তু কি কথা বলব তাই বেশিরভাগ সময় ও বলে আমি কেবল শুনে যাই। কি আশ্চর্য ব্যাপার তাইনা। কিছুদিন আগেও যখন পরীক্ষা দেয়ার কারণে বাবার বাসায় ছিলাম কামরান একটা দিনের জন্য আমাকে ফোন করেনি। অন্য কেউ ধরিয়ে দিলেও কোনরকম দুয়েকটা না হওয়ার মতোই কথা হয়েছিল। অথচ তখন অবচেতন মনে আমি ওর ফোনকলের জন্য অপেক্ষা করতাম। কিন্তু এখন। কেন অমন করছে ও আমি জানিনা, বুঝতেও পারছি না। আর তখনই বা কেন ঐরকম করেছিল সেটাও বুঝতে পারিনা এত এত প্রশ্নের কোন উত্তর নাই। কামরানের মনে আসলে কি চলছে কখনো ভুলেও বলেনি আমায়। তাহলে কি করে বুঝবো আমি? মনের ভিতরে এতো দোলাচল, দ্বিধা, দ্বন্দ্ব নিয়ে এভাবে কি ওর সাথে সহজভাবে কথা বলা যায়? সম্ভব সেটা? কেবল আমার মনটা সব সময় চাপা অগ্নুৎপাতে দগ্ধ হতে থাকে এসব কথা ভেবে। জানিনা এর শেষ কোথায়। একটা চাপা দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে আসে আমার বুক চিড়ে।
তাসমিয়া আপু কিছু একটা বলছিল বোধহয়। ভাবনার জাল ছিড়ে সচকিত হয়ে তাকালাম উনার দিকে।
” কি এত ভাবছো বলতো? আমি কথা বলেই যাচ্ছিলাম।আর তুমি শুনছইনা মনে হচ্ছে।”
আমি বিব্রতভাবে হেসে বললাম, ” না তেমন কিছু না। ”
তখন আপুর একটা বাচ্চা কোলে নিয়ে তিয়ানা এসে হাজির হলো। বাচ্চাটা কাঁদছিল। তাকে এগিয়ে দিয়ে তিয়ানা বলল,
” নে বাবা তোর বাচ্চাকে তুই সামলা। কিছুতেই কান্না থামছেনা।”
তাসমিয়া আপু হাত বাড়িয়ে বাবুকে কোলে নিতে নিতে বললো, ” বেশ অনেকক্ষণ হয়েছে খাওয়ানো হয়নি। খিদে লেগেছে বোধহয়। তাশফি কোথায়? ”
” তাশফী আম্মুর কাছে আছে। ঘুমাচ্ছে। তোর ওই বাবুটা সবসময় এত ঘুমায়। আর এটা এতো দুষ্টু কেন ঘুমাতেই চায় না। একই সাথে জন্ম। অথচ দেখ দুজনের স্বভাব একেবারে দুরকম। ”
আমি বললাম, ” টুইনরাতো এমনই হয় একসাথে জন্ম নিলেও দুজনের স্বভাব চরিত্র দুই রকমের হয়। একজন চঞ্চল তো আরেকজন শান্ত, একজন দুষ্টু হলে আরেকজন লক্ষী হয়। তাইনা? দেখনি এর আগে টুইন বেবি?”
তিয়ানা বলল, ” হ্যাঁ শুনেছি তো। তুমি ঠিকই বলেছ। আমার ফ্রেন্ডের ভাইয়ের টুইন বেবি আছে। ওরা দুজনও সম্পূর্ণ দুই রকম স্বভাবের। ”
তাসমিয়া আপু বেবিকে নিয়ে চলে গেল খাওয়াতে হবে বলে। তিয়ানা কিছুক্ষণ বসে গল্প করল আমার সাথে। এভাবে শুয়ে-বসে বেশ কেটে যায় দিনগুলো। এরমধ্যে অনেকটাই সুস্থ হয়ে উঠেছি যদিও এখনো হাঁটতে পারি না ভালো করে ডান হাতটা এখনো নাড়াচাড়া করতে পারি না সাবলীলভাবে। আম্মাই নিজ হাতে আমার দেখা শোনা করেন। এতদিন এখানেই ছিলেন। অন্যরাও করে। তবে এই বাড়ির কেউ আমার জন্য কিছু করতে গেলে আমার ভিষন অস্বস্থি হয়। তবু আর কতদিন থাকবে মেয়ের শশুর বাড়িতে। যেতে তো হবেই একদিন। তাই যাওয়ার তোড়জোড় শুরু করে দিলেন।। আর কদিন পরেই ঈদ এবং ঈদের পরপরই ভাইয়ার বিয়ে। বাড়িতে প্রচুর কাজ। আমার এই এক্সি*ডেন্টয়ের কারনে অনেক কাজে পিছিয়ে গেলেন তারা। এখন তাড়াহুড়ো করে সেগুলো সারতে হবে। এটা আমার ভীষণ মন খারাপ হয়ে গেল। এই কদিন ওরা আমার কাছে ছিল বলে দিনগুলো বেশ পেরিয়ে যাচ্ছিল। কিন্তু কয়দিনের মধ্যে কামরান ফিরে আসবে। ও আসার আগেই আমি চলে যেতে চাই। তাই আমি কোন কিছু না ভেবেই মা-বাবার সাথে যাওয়ার জন্য জেদ ধরলাম। তাছাড়া এখনো আমি নিজে কোন কিছু করতে পারিনা হাত পা দুটোই অচল বলা যায়। সেখানে বাবারা চলে গেলে আমি কিভাবে চলব। যতই সবাই ভাল মনে আমার জন্য করছে। তবুও শ্বশুরবাড়ি বলে কথা। তাও নতুন বউ আমি। কিভাবে এভাবে শুয়ে-বসে সবার সেবা নিতে পারি। ব্যাপারটা আমার জন্য খুবই লজ্জাজনক। মা-বাবাও ব্যাপারটা বুঝলেন এবং উনাদেরকে বুঝিয়ে রাজিও করে ফেললেন। তাছাড়া কদিন পরেই তো আমাদের যাওয়ার কথা ভাইয়ের বিয়ে উপলক্ষে। তাই দুদিন আগে গেলে সমস্যা নেই। তাই ওনারাও যাওয়ার অনুমতি দিলেন।
—————*
দীর্ঘ এক মাস পবিত্র রমজানের শেষে আজ খুশির ঈদ এর দিন। সারাদেশের মানুষ প্রবল আনন্দে ঈদ উদযাপন করতে ব্যাস্ত। আমাদের বাড়িতেও সবার কত আনন্দ সেই সাথে সামনে ভাইয়ের বিয়ের জন্য ব্যস্ততা। কেবল আনন্দ নেই আমার মনে। কোন কিছুতেই মন বসে না, কিছুই ভালো লাগেনা। মায়ের জোরাজুরিতে একটা নতুন সালোয়ার কামিজ পরেছি। ব্যাস এটুকুই। আজ এটুকু বুঝতে পারি মেয়েদের বিয়ের পরে স্বামী শ্বশুর বাড়িতেই আসল আনন্দ। এইবারের রোজার মাসটা আমার জীবনে স্মরণীয় হয়ে থাকবে। কত কি ঘটলো এই কদিনে। আর এই কদিনেই আমার জীবনটা কেমন মরা মরা হয়ে গেল। এই কয়েকমাস আগেও আমার জীবনটা ছিল সম্পূর্ণ অন্যরকম। অথচ আজ জীবনের মানে, চাওয়া-পাওয়া সব কেমন বদলে গেল। না কিছু খেতে ইচ্ছে করে, না ঘুমাতে ইচ্ছে করে, না কিছু করতে ইচ্ছে করে। কেমন যেন একটা ঘোরের মধ্যে আমার সময়গুলো কেটে যাচ্ছে। হয়তো কোথাও বসে আছি তারপর ঘণ্টাও কেটে যাচ্ছে আমি ঐভাবেই বসে আছি। চারিদিকে কি হচ্ছে না হচ্ছে আমার কোন বিকার নেই। বাড়ির সবাই ভাইয়ের বিয়ের আয়োজন নিয়ে কত ব্যস্ত কি আনন্দিত সেগুলোর কোনো কিছুই আমাকে স্পর্শ করতে পারছে না। বাবার বাড়িতে আসার পর থেকে কামরানের সাথে আমার খুব সামান্যই কথা হয়েছে। আমার সেলফোনটা ভেঙে যাওয়ায় ও যতবারই ফোন করেছে হয় বাবার নয় মায়ের নয়তো ভাইয়ার ফোনে। তাই কামরান স্বাভাবিকভাবে ঘুরে ঘুরে ফোন করতে চাইলেও পারেনাই। বাবা ফোন কিনে দিতে চেয়েছিল। আমি ইচ্ছে করেই নেইনি। বলেছিলাম সুস্থ হয়ে উঠে আমি নিজে পছন্দ করে কিনে নিব। আসলে আমি চাইছিলাম কামরানের থেকে দূরত্ব বজায় রাখতে। যতক্ষণ পর্যন্ত নিজের কনফিউশন দূর করতে না পারছি ততক্ষণ পর্যন্ত কামরানের সাথে সহজ স্বাভাবিক আচরণ করা আমার পক্ষে সম্ভব নয়। তাই এটাই একমাত্র উপায় ওর থেকে দূরে থাকার।
একটু আগে সবার সাথে কথা হয়েছে তিয়ানার ফোনের মাধ্যমে। কামরানের সাথেও ঈদ শুভেচ্ছা বিনিময় ও টুকটাক কথা হয়েছে। আমি এখন অনেকটাই সুস্থ শুধু হাতে একটু ব্যাথা আছে। বুঝতে পারছি হাতটা অনেক দিনই ভোগাবে। আসলে একবার নজর পড়লে বা ভেঙে গেলে সেটা সেই আগের মত স্বাভাবিক হতে সময় লাগে কিংবা সেরকম স্বাভাবিক আদৌও হয় কি? তবুও হেঁটে চলে বেড়াতে পারছি এটাই সৌভাগ্য। নিজের কাজ তো করতে পারছি। কাল হলুদ এবং পরশু বিয়ে। যতটুকু সম্ভব চেষ্টা করছি সবার সাথে হাতে হাত লাগিয়ে কাজ করার।
————-*
আজ ভাইয়ার হলুদ। প্রচণ্ড ব্যস্ততার মধ্যে সকলের সময় কাটছে। ভাইয়াকে দুপুরে হলুদ লাগানো হবে। এরপর মেয়ের বাড়িতে সন্ধ্যাবেলায় হলুদ অনুষ্ঠান হবে। তাই ভাইয়াকে হলুদ লাগিয়ে ও বাড়িতে পাঠিয়ে দেয়া হবে। আমার খুব শখ ছিল মেয়ের বাড়িতে হলুদ তত্ত্ব নিয়ে যাব। এত দৌড়ঝাঁপ করার মত সুস্থ এখনো হয়ে উঠিনি বলে কেউ যেতে দিবেনা। ছেলের হলুদ বলে এত বড়সড় করে হলুদ লাগানোর আয়োজন করা হয়নি। আমরাই ঘরোয়াভাবে আত্মীয়-স্বজনরা মিলেই ছোট পরিসরে হলুদ লাগাবো। সেই প্রস্তুতি চলছে। ঠিক সে সময় সবাইকে অবাক করে নাকি শুধু আমাকেই অবাক করে দিয়ে কামরান এসে হাজির হলো। সাথে তিয়ানা ও আরমানও আছে। আমিতো যারপরনাই অবাক। সত্যিই অবাক হয়েছি ভিষণ ভাবে। তবে সবার রিয়াকশন দেখে বুঝতে পারছি সবাই জানতো যে ও আজ আসছে। কেবল আমাকেই জানায়নি সারপ্রাইজ দিবে বলে। কামরানকে দেখেই আমার কেমন অদ্ভুত এক অনুভূতি হতে লাগলো। লজ্জা, সংকোচ, অস্বস্তি, হতবিহ্বলতা, অস্থিরতা সব অনুভব একসাথে আমাকে জড়িয়ে ধরেছে। বুকের ভিতর ধুকপুক করতে শুরু করেছে। ওকে দেখলেই কেন এমন হয় আমার জানিনা। কিন্তু সবকিছু ছাপিয়ে আমার ভীষণ ভালো লাগছে। মনে হচ্ছে কতদিন পর ওকে দেখলাম। অথচ মাত্র কয়েকদিন হলো। এমন কেন হয়? ভালোবাসার মানুষ চোখের আড়াল হলেই এক একটা দিনকেই মনে হয় এক-এক বছর। সবার সাথে সৌজন্য বিনিময় শেষে আম্মা ওকে আমার রুমে নিয়ে যেতে বললেন।আর তিয়ানা ও আরমানকে চাচীর সাথে গেস্ট রুমে পাঠিয়ে দিলেন। যাওয়ার আগে আমি নিচু স্বরে তিয়ানার উদ্দেশ্য বললাম,
” এটা কি ছিল? আমাকে একবার জানালেও না?”
ও রহস্যময় হেসে বললো, ” সারপ্রাইজ!”
কামরানের উদ্দেশ্যে বললেন আম্মা, ” যাও বাবা হীবার সাথে ওর রুমে যাও। ফ্রেশ হয়ে একেবারে রেডি হয়ে আসো। একটু পরেই হলুদ অনুষ্ঠান শুরু হবে। ”
কামরান হাসি মুখে সায় জানিয়ে আমার পিছু পিছু চললো। আমার কামরায় এসে দেখি কেউ ইতিমধ্যেই ওর লাগেজ রেখে গেছে। কামরানের দিকে ফিরে দেখি ও ঘুরে ফিরে কামরার চারিদিকে দেখছে। আমাকে তাকাতে দেখে সে বললো,
” তোমাদের বাড়িটা খুব সুন্দর। একদম ইউনিক। ঢাকায় এই ধরনের বাড়ি এখন দেখাই যায়না আর।”
আমি বললাম, ” কিভাবে দেখা যাবে? আপনাদের মত ডেভেলপাররা যে প্রফেশনাল কাজ করেন। পুরনো বড়-বড় সুন্দর সুন্দর বাড়িগুলো ভেঙে ঘুপচির মতো ছোট ছোট রুমের বাড়ি তৈরি করছেন। কিন্তু এই শহরে এখনো আপনাদের মত ডেভলপারদের দাপটের ডালপালা খুব বেশি মেলে উঠতে পারেনি তো তাই এই ধরনের বাড়িগুলো এখনো টিকে আছে। তবে শুরু হয়ে গেছে। দেখবেন আগামী কয়েক বছরের মধ্যে এই বাড়িগুলো ভেঙেচুরে বড়ো বড়ো বিল্ডিং উঠে যাবে, অবশ্যই আপনাদের কল্যানে। ” কথা শেষে আমি হেসে উঠলাম।
কামরান বললো, ” সেদিন এখনো বহুদূর। কেন জানো তো?”
” হ্যাঁ জানি তো। যে হারে ঢাকা শহরে মানুষ ঢুকছে প্রতিদিন সেই অনুপাতে জায়গা তো আর বাড়ছেনা। তাই বাধ্য হয়ে বিল্ডিংগুলোর পরিধি দিনদিন উপরের দিকে বেড়েই চলেছে। আর এদিকে অন্য শহর গুলো খালি হয়ে যাচ্ছে। তাইতো? কিন্তু কতদিন? কয়েক বছর পরে ঢাকা শহরে যখন আর তিল পরিমাণ জায়গা পাওয়া যাবেনা তখন বাধ্য হয়েই অন্য শহর এমনকি গ্রাম গুলোরও চেহারা পাল্টে একই রকম হয়ে যাবে। তাই না?”
এতদিন পরে দেখা হলো অথচ কিসব হাবিজাবি নিয়ে কথা বলছি আমরা। মানুষটা আসলে কি চায়? আর এখানেই বা কেন এসেছে? শুধু মাত্র লোক দেখানো সম্পর্ক দেখানোর জন্য? মানুষটা কি আসলেই এই বিয়েটাকে মানে? নাকি মানুষটাই কাঠখোট্টা বেরসিক টাইপের। কিছুইতো বুঝিনা। আল্লাহ এই ছিল আমার কপালে? ” গোপনে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললাম।
কামরান মাথা দুলিয়ে একটু ভেবে বলল, ” হুম, সেইরকম হওয়ার সম্ভাবনাই তো দেখছি। সো তোমার হাতের কি অবস্থা? শরীর এখন সুস্থ তো? টৈ টৈ করে বেশ ঘুরে বেড়াচ্ছ দেখি।”
আমি একটু জোর গলায় বললাম, ” জি হ্যা, আমি একদম ঠিক আছি এখন। আপনি এবার প্লিজ জলদি ফ্রেশ হয়ে নিন। গোসল করবেন তো নাকি? ”
” হ্যা শাওয়ার নিতে হবে। জার্নির পর গোসল না করে থাকা যায় নাকি? গরমে ঘেমে সাথে ধুলোবালিতে মেখে গা কিটকিট করছে। ”
” তাহলে আর দেরি না করে এখুনি ওয়াশরুমে ঢুকে পরেন। আর হ্যা পাঞ্জাবি এনেছেন তো?”
” হ্যা এনেছি। ”
“আপনার লাগেজ এখানে আছে। তোয়ালে লাগবে?”
” আমি এনেছি। লাগবেনা। ”
” তাহলে আপনি শাওয়ার নিন। আমার ঐদিকে কাজ আছে আমি আসছি। ”
আমি কথা শেষ করে কামরানকে পাশ কাটিয়ে দরজার দিকে পা বাড়াতেই হাতে টান পারতেই থমকে দাঁড়ালাম। পিছনে ফিরতে না ফিরতেই ও এমন ভাবে হ্যাচকা টান দিল যে আমি তাল সামলাতে না পেরে ওর বুকের উপরে গিয়ে পরলাম। ঘঠনার আকস্মিকতায় হতভম্ব হয়ে গেছি। বুকের ভিতর ধুকপুক করছে। হঠাৎ কি হলো লোকটার? এমন আচরণ তো এর আগে সে কখনও করেনি। ভিষণ লজ্জাও লাগছে। কোনরকমে চোখ দুটো তুলে কামরানের মুখের দিকে চাইলাম। ও আমার মুখের ওপর দৃষ্টি মেলে কেমন একধ্যানে তাকিয়ে আছে। আমি চাইতেই আমাদের চার চোখের মিলন হলো। আমার সমস্ত শরীরে কেমন অদ্ভুত একটা শিহরণ বয়ে গেল। ও শুধু আমায় কাছেই টেনে নেয়নি। দু’হাতের বাঁধনে আমার কোমর জড়িয়ে ধরে রেখেছে। এই প্রথম ওর এতো কাছে এসেছি। আমার কাছে এটা স্বপ্ন মনে হচ্ছে। আসলেও কি স্বপ্ন? নাহ স্বপ্ন নয়, সত্যি। আমার হাত পা মৃদুভাবে কাঁপছে। গলা কেমন শুকিয়ে কাঠ হয়ে যাচ্ছে। কান মাথা কেমন গরম হয়ে উঠেছে। ওর দৃষ্টি বাণে বিদ্ধ হয়ে আমার হৃদয়ের অন্তস্তল পর্যন্ত অসম্ভব ভাবে তোলপাড় চলছে। ওর দৃষ্টি এতটাই তীব্র মনে হচ্ছে যেন আমার ভিতরটা এফোড় ওফোড় করে দেখতে পাচ্ছে। আমি দুর্বল হাতে নিজেকে ছাড়াতে চাইলে এবার ও মুখ খুললো,
” আমার সাথে সেই এক্সি*ডেন্টের পর থেকে ভালো করে কথাই বলছনা। ফোনেও এড়িয়ে গেছ। কেন এমন করছ? ”
কোনরকমে একটা শুকনো ঢোক গিলে বললাম, ” এখন এসব কথা বলার সময় নয়। পরে এই নিয়ে কথা হবে। সবাই অপেক্ষা করছে। প্লিজ আপনি আগে রেডি হয়ে নিন।”
” ঠিক আছে। পরে কথা হবে। মনে থাকে যেন। ”
কথটা শেষ করেই চোখের পলকে ঝুঁকেই আমার অধরে আলতোভাবে চুমু দিল। আকস্মিক ঘটনায় আমি জমে গেলাম। ও তৎক্ষনাৎ আমায় ছেড়ে দিয়ে একটু সরে দাঁড়ালো। আমার সমস্ত শরীর অসম্ভব ভাবে কাঁপছে। গলা দিয়ে কোন কথা বের হচ্ছে না। ওর দিকে তাকিয়ে দেখার সাহসটুকু হচ্ছে না। তবুও আড়ষ্ট ভঙিতে মুখ তুলে দেখি ওর মুখে মিটিমিটি দুষ্টুমি হাসি। আমার নিশ্বাস পরছে দ্রুত বেগে। নিজেকে সামলে নিয়ে কোনরকমে বললাম,
” আপনি রেডি হন। আমি আসছি।”
বলেই প্রায় টলমলে পায়ে পড়িমরি করে রুমের বাইরে বেড়িয়ে এসে একটা স্বস্তির লম্বা নিশ্বাস নিলাম।
চলবে ইনশাআল্লাহ।