তোমায় ছেড়ে যাবো কোথায় পর্ব-১৯

0
948

#তোমায়_ছেড়ে_যাবো_কোথায়।
লেখনী – মুনিরা সুলতানা।
পর্ব – ১৯ ।

————–*
কামরান কথন

” হীবা, তুমি এখানেই ওয়েট কর। আমি গাড়িটা এপাশে নিয়ে আসি।”

হীবাকে মলের সামনে দাঁড় করিয়ে রেখে আমি রাস্তা পার হয়ে এপাশে চলে এলাম। দাঁড় করানো গাড়ির লক খুলে পিছনের সিটে হাতে ধরা শপিং ব্যাগগুলো রেখে দিলাম। ব্যাগগুলোর দেখে মনে পরল হীবার শপিং করার ধরন। আপন মনে হেসে ফেললাম। আনাড়ি ভাবে এবং সংকোচ নিয়ে এতক্ষণ ওর কেনাকাটার সময় ওর সাথে ঘুরে বেড়াতে বেশ ভালো লাগছিল। যত হীবার সাথে কথা বলছি সময় কাটাচ্ছি ততই ভালোলাগা বেড়েই চলেছে। আমার মনের মাঝে আর কোন সংশয় সংকোচ নেই সম্পর্কটাকে পূর্নতা দিতে। কিন্তু হীবার মনটা এখনো ঠিক বুঝতে পারছি না। ওর মধ্যে এখনো সংকোচ জড়তা বুঝতে পারি। অপেক্ষায় আছি কবে ও ভালোবেসে আমার কাছে ধরা দিবে। মনে হচ্ছে অপেক্ষার পালা শেষ হতে চলেছে। গেট বন্ধ করে ঘুরে ড্রাইভিং সিটের গেটের দিকে গিয়ে গেটে হাত দিয়েছি খোলার জন্য তখনই পিছন থেকে আচানক কেউ দুই হাতে আমার চোখ চেপে ধরল। আমি হকচকিয়ে গেলাম। হাত তুলে তার হাত ছুয়ে বুঝলাম নরম কোমল হাত, তার মানে কোন মেয়ের হাত। আমার চোখ চেপে ধরার মত কোন বান্ধবী নেই। তাহলে কে হতে পারে? স্মৃতি হাতরে বেড়িয়ে খেয়াল হল এইদিকেই পিউলিদের বাসা। এব মাঝ রাস্তায় দাঁড়িয়ে এভাবে কারোও চোখ চেপে ধরে এমন ছেলেমানুষি কাজ ঐ মেয়ের দ্বারাই সম্ভব। আন্দাজ করতে পারছি কে হতে পারে। বিরক্তি সহকারে বললাম,

” এসব কি ধরনের ফাইজলামি পিউ? রাস্তার মধ্যে এইসব ড্রামা করার মানে কি?”

পিউলি এবার চোখ ছেড়ে দিয়ে সামনে এসে দাড়িয়ে বললো, ” তুমি এখানে কি করছ? শপিংয়ে আসছ? আমাকে আগে কেন বললেনা? দেখতো আমিও শপিংয়ে আসছি তুমি আসছ জানালে আমিও আগেই চলে আসতাম। এখন দেখা যখন হয়েই গেছে আমার সাথে আবার চল।”

” আমার সময় নেই। এখন সাইটে যেতে হবে। অলরেডি দেড়ি হয়ে গেছে। অযথা মাথা খাইসনা। ”

পিউলি ঠোঁট ফুলিয়ে আহ্লাদী স্বরে বললো, ” তুমি সব সময় আমার সাথে এমন কর কেন? সবসময় কাজের বাহানা। ”

” কাজ থাকতে বাহানা দিব কেন? আমার সময়ের মুল্য আছে। কাজ ফেলে ফালতু সময় নষ্ট করার মত সময় নাই। ”

” তুমি সেদিন রিসোর্ট থেকেও চলে আসছিলা। তোমার সাথে লন্ডন যাইতে চাইলাম সেখানেও মানা করলা। কদিন থেকে দেখছি তুমি আমাকে এড়িয়ে চলছ। এবার কোন ফটোস্যুটেও যেতে মানা করে দিলা। কেন এমন করছ? তুমি আমাকে একটুও ভালোবাসনা। খালি কষ্ট দাও।”

মেয়েটা এসব কি বলছে পাগলের মতো? মাথার স্ক্রু ঢিলা হয়ে গেছে নাকি? একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললাম, ” তোর মাথা ঠিক আছে তো? পাগলের প্রলাপ বকছিস কেন? আমার কাজ বাদ দিয়ে তোর ছবি তুলতে যাবো কেন আমি? আর লাস্ট বার তুই যা করছিলি এরপরে আমাকে আর কখনো তোর কাজে পাবিনা। এখন তোর কাজে তুই যা। আমার লেট হচ্ছে। আমাকে প্লিজ যেতে দে।”

পিউলি হঠাৎ আচমকা আমাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদো কাঁদো গলায় বললো, ” আমি তোমায় খুব ভালোবাসি এটা কেন বোঝনা তুমি? ”

পিউলির কথা শুনে আমি পাথরের মতো জমে গেলাম। এভাবে জড়িয়ে ধরায় আমার সমস্ত শরীর শক্ত কাঠ হয়ে গেল। ওকে ছাড়ানোর চেষ্টা করতে করতে ধমকানো গলায় বললাম,

” বিবেক বুদ্ধি কি বাসায় আলমারিতে তুলে রেখে আসছিস নাকি। এমন ভরা রাস্তার মধ্যে এভাবে একটা পুরুষ মানুষকে জড়িয়ে ধরছিস লজ্জা করেনা তোর? তাও আবার রোজার সময়। ছাড় বলছি। ”

পিউলি ছাড়ার বদলে আরোও শক্ত করে ধরলো। আমার বিরক্ত ও ধৈর্যের সীমা ছাড়িয়ে যাচ্ছে। ওকে আমি বোন ছাড়া অন্য কিছু কখনো ভাবিনি। অথচ সে কি পাগলামো শুরু করেছে। এবার জোর করে পিছনে হাতের বাধন ছাড়িয়ে নিচ্ছি তখনই হঠাৎ বিকট শব্দ শুনে চমকে উঠলাম। পিউলিকে ততক্ষণে ছাড়িয়ে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিয়ে রাস্তার ওপাশে শব্দ অনুসরণ করে তাকলাম। একটা গাড়ি হঠাৎ ব্রেক কষে দাঁড়িয়ে আছে। আশেপাশের মানুষগুলো ছুটে আসছে। গাড়িটার সামনে রাস্তার সাইডে কাউকে পড়ে থাকতে দেখে আমার চোখ দুটো আ*তঙ্কে বিস্ফারিত হয়ে গেল। রুদ্ধশ্বাসে সেদিকে ছুটলাম। কারণ যে রাস্তায় পরে আছে সে আর কেউ নয়, হীবা। কিভাবে যে প্রায় পড়িমরি করে রাস্তা পার হয়ে হীবার কাছে পৌছলাম নিজেও জানিনা। হীবাকে ধরে সামলানোর চেষ্টা করছে ওর বান্ধবী সোমা। ওর চোখ দুটো বুজে আসতে চাইছে। তবু্ও ও জোর করে চেয়ে থাকার চেষ্টা করছিল। হীবার কামিজের উপর লম্বা শ্রাগ ও বড় ওড়না দিয়ে জড়ানো সত্ত্বেও সেগুলো ভেদ করে তাজা র*ক্তের স্রোত বয়ে যাচ্ছে ওর মাথার দিকটায়। এত র*ক্ত দেখে আমার মাথা ঘুরে উঠলো। কোথা থেকে এতো র*ক্ত আসছে। কোথায় এতো কে*টেছে, ভে*ঙেছে কিজানি। আমার হাত পা কাঁপছে। নিজেকে সামলে নিতে চেষ্টা করছি। আমাকে শক্ত হতে হবে। হীবাকে যত দ্রুত সম্ভব হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে। নিজেকে সামলে দ্রুত গতিতে হীবার সামনে হাঁটু গেড়ে বসলাম। বললাম,

” হীবা। একটু সহ্য কর। তোমার কিছু হতে দিবনা আমি। সব ঠিক হয়ে যাবে। ”

বলেই দু’হাতে ওকে পাঁজা কোল করে তুলে নিয়ে উঠে দাঁড়ালাম। এরই মধ্যে মানুষের ভির জমে গেছে। সেই কারণে গাড়ি গুলো সব যেতে পারছেনা বলে জ্যাম লেগে গেছে। এইসব ক্ষেত্রে মানুষ সাহায্যের হাত না বাড়িয়ে অহেতুক ভির জমিয়ে বিপদগ্রস্ত মানুষটাকে আরও বিপদে ফেলে দেয়। বিবেক, মনুষ্যত্বের এতটাই ঘাটতি এই বর্তমান জামানায়। কোনমতে ভিড় ঠেলে আমার গাড়ির দিকে ছুটতে শুরু করেছি। সেই সময় একজন যুবক পথরোধ করে দাঁড়িয়ে বলল,
” সরি ভাইয়া আমি অনেক চেষ্টা করেও এক্সি*ডেন্টটা আটকাতে পারিনি। উনি হঠাৎ করেই গাড়ির সামনে এসে পড়েছিলেন। আইএম রিয়েলি সরি। প্লিজ উনাকে আমার গাড়িতে আনেন। আমি হসপিটালে পৌঁছে দিব। ”

ছেলেটার দিকে বিরক্তি সহকারে তাকালাম। বুঝতে পারছি এক্সি*ডেন্ট কেউ ইচ্ছে করে করেনা। কিন্তু এখন অযথা প্যাচাল পারার সময়? মেজাজ গরম হলেও নিজেকে শান্ত রেখে বললাম,

” প্লিজ এখন এসব কথার সময় নয়। ধন্যবাদ হেল্প করতে চেয়েছেন। কিন্তু দরকার নেই। আমার সাথে গাড়ি আছে। ”

আর দেরি না করে গাড়ির সামনে এসে দাঁড়ালাম। সোমা এবং পিউলি একসাথে গাড়ির গেট খোলার জন্য হাত বাড়িয়েছে। পিউলিই গেট খুলে দিল। আমি দ্রুত গতিতে হীবাকে সিটে বসিয়ে সিটবেল্ট বেঁধে দিলাম। সোমাও আমাদের সাথে যেতে চাইল। আমি ওদের গাড়িতে উঠতে বলে ড্রাইভিং সিটে উঠে বসলাম। পিউলি উইন্ডোর সামনে দাঁড়িয়ে বলল,

” আমি আমার গাড়ি নিয়ে আসছি। ”

প্রত্যুত্তরে কিছু বললামনা। গাড়ি স্টার্ট দিয়ে এগিয়ে গেলাম।”

——————-*
ভিতরে কি হচ্ছে কে জানে? এত টেনশন আর নেয়া যাচ্ছেনা। একা একা বসে আছি এতক্ষণ ধরে। সময়ও কাটছে না। মনে হচ্ছে ঘড়ির কাঁটা যেন স্থির হয়ে আছে এক জায়গায়। হসপিটালে চারপাশে অসংখ্য মানুষের আনাগোনা লেগে আছে। নানান বয়সের নানান বর্ণের কত ধরনের রোগ নিয়ে এখানে আসে সবাই সুস্থ হয়ে হাসি মুখে বাড়ি ফিরে যাবার আশায়। সবাই কি হাসি মুখে বাড়ি ফিরে? অস্থির হয়ে উঠে দাঁড়ালাম। একটু আগেই কত হাসি খুশি ছিল ও। অথচ চোখের পলকে কি হয়ে গেল। ও ঠিক হবে তো? আমার হঠাৎ ভিষণ করছে। হারানোর ভয়। গলার ভীতর কান্নারা ডেলা পাকিয়ে উঠে আসছে। ঢোক গিলতে গলার ভীতরে কন্ঠনালীতে ব্যাথায় টনটন করছে। নাহ্ হীবার কিছু হবেনা। কিছু হতে পারেনা। ওকে সুস্থ হয়ে উঠতে হবে। আল্লাহর কাছে মনে মনে প্রার্থনা করে যাচ্ছি যেন ওকে সুস্থ করে দেয়। হঠাৎ সেলফোনের রিংটোনের শব্দে চমকে উঠলাম। প্যান্টের পকেট হাতড়ে ফোনটা বের করে দেখি তিয়ানার কল। রিসিভ করে কানে ধরলাম,

” শোন তিয়া তুই আরমানকে নিয়ে আর্জেন্টলি হসপিটালে চলে আয়। তোর ভাবি এক্সি*ডেন্ট করেছে। ”

ওপাশে তিয়ানা একমুহূর্তের জন্য থমকে যায়। তারপর ব্যাকুল কন্ঠে বলল, ” কি বলছ ভাইয়া? কিভাবে কি হলো? ”

” এখন এত কিছু বলতো পারবনা। তোরা আগে আয়। একা একা আমার মাথা কাজ করছেনা। এতো র*ক্ত। আমি সহ্য করতে পারছিনা। ”

তিয়ানা বললো, ” ওকে ওকে ডোন্ট ওরি। আল্লাহর কাছে প্রার্থনা কর। সব ঠিক হবে। কোন হসপিটালে আছ বল। আমরা এখনি আসছি। ”

হসপিটালের নামটা বলে কল কেটে দিলাম। ফোনটা পকেটে ভরে আবারও ধপ করে সারি সারি চেয়ার গুলোর একটায় বসে পরলাম। এই সময় হীবার বান্ধবী সোমা আমার সামনে এসে দাঁড়াল। ইতস্ততভাবে বললো,

” ভাইয়া আমার এখানে থাকাটা খুব দরকার ছিল। কিন্তু আমার ননদ যেতে চাচ্ছে। বাসা থেকেও ফোন আসছে। কিছু মনে করবেননা। হীবার কিচ্ছু হবেনা। সব ঠিক হয়ে যাবে ইনশাল্লাহ। আমি এখন আসি। ওর কি অবস্থা জানতে আমি ফোন করব। আপনার নাম্বারটা যদি দিতেন। ”

আমি বললাম, ” তুমি এই পর্যন্ত এসেছ, এতক্ষণ ছিলে এটাই তো অনেক। হীবার জন্য দোয়া কর।”

সোমা আমার নাম্বার সেভ করে নিল ওর সেলফোনে। তারপর কাল আসবে বলে চলে গেল। আমি আবারও চুপচাপ বসে পরলাম। দুহাতে মাথার পিছনে ধরে সামনের দিকে ঝুঁকে আছি। চোখ দুটো বুজে মনে মনে আল্লাহর দরবারে দোয়া করলাম, ‘ হ্যা আল্লাহ দয়া কর, রহম কর, আমার হীবাকে সুস্থ করে দাও। ওর অনেক কষ্ট হচ্ছে নিশ্চই। প্লিজ ওকে আর কষ্ট দিওনা। ওকে ভালো করে দাও।’
চোখ মেলে তাকাতে মেঝেতে দুটো পা নজরে আসতেই সোজা হয়ে বসলাম। সামনে পিউলি দাঁড়িয়ে আছে। ওকে দেখে আমার মেজাজটা তরতর করে বেড়ে গেল। ঐ সময়ে ওর জড়িয়ে ধরার দৃশ্য মনের পর্দায় ভেসে উঠলো। আমার মনে হচ্ছে ওর সেই কান্ডের জন্যই আজ হীবার এই অবস্থা। হীবা দেখেছে কিনা জানিনা, তবুও এর সাথে তর্ক করতে গিয়ে অযথা দেরি হয়েছে। যেতে দেরি না হলে হয়ত এতো বড় ডিজাস্টার হতনা। পিউকে ভ্রু জোড়া কুঁচকে গেল আমার। তিক্ত স্বরে শুধালাম,

” তুই? তুই এখানে কি করছিস? ”

” কি বলছ কামরান ভাইয়া? তোমার এমন একটা সময় আমি আসবনা? হীবা কেমন আছে? ”

পিউলিকে আমার একদম অসহ্য লাগছে। মানুষ বিপদসংকুল মুহূর্তে সান্ত্বনা পাওয়ার মত বিশ্বাস যোগ্য কাঁধ চায়। সেখানে এই মেয়েটা আজ এই বিপদের মুল হোতা। এটা হসপিটাল। তাই নিজেকে সংযত করে ঝাঁঝাল স্বরে বললাম, ” তোর জন্যই হীবার এই অবস্থা আর তুই আসছিস আমার পাশে দাঁড়াতে? লজ্জা করেনা তোর? ”

পিউলি হতবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো, ” আমার জন্য? কিন্তু আমি কি করলাম? এক্সি*ডেন্ট করল তোমার বউ আর দোষ দিচ্ছ আমাকে? এটা কেমন কথা? ”

” এটাই সত্যি। তোর বেহায়াপনা বিহেভিয়ারের কারনেই সুস্থ-সবল মানুষটা এখন হাসপাতালে পৌঁছে গেছে। আর তুই পিছু পিছু এখানেও চলে এসেছিস। প্লিজ অন্তত এখন আমাদের পিছু ছাড়। এবং আমাদের একলা ছেড়ে দে।”

পিউলি কয়েক মুহুর্ত হতবাক হয়ে তাকিয়ে রইল। যেন আমার কোন কথায় তার কানে প্রবেশ করেনি। অথবা সে বিশ্বাস করতে পারেনি। তারপর ও বললো,

” তুমি এই কথা বলতে পারলে কামরান ভাইয়া? আমি হীবার ক্ষতি করতে চাইবো? আমি এমন করতে পারি তুমি বিশ্বাস করো?”

” হ্যাঁ আমি বিশ্বাস করি। তোর আজকের কাজ কারবারই আমাকে বিশ্বাস করতে বাধ্য করেছে। না জানি আমার অজান্তে আরো কি করেছিস। নিশ্চয়ই হীবাকেও কিছু না কিছু বলেছিস। তা না হলে ও এতটাই রিয়্যাক্ট করবে কেন? ”

পিউলি তৎক্ষনাৎ বলে উঠলো, ” প্লিজ বিলিভ মি হীবাকে আমি এমন কিছুই বলিনাই। আর আজ তোমার সাথে যে হীবাও আছে তাতো আমি জানতামই না। আমিতো শুধু আমার মনের কথা বলে ফেলেছিলাম। তোমাদের বিয়েটাতো হঠাৎ করেই করতে বাধ্য করা হয়েছিল। তাইনা? তাই আমি ভাবছিলাম তুমি এই বিয়েটা মানোনা। ”

আমি অবাকের চুড়ান্তে পৌঁছে গেলাম পিউলির কথা শুনে। বললাম, ” তোর কল্পনার কোনো সীমা নেই দেখছি। নিজের যা মন চায় তাই ভেবে বসে আছিস। আমি কখনও বলছি আমি এই বিয়ে মানি না? সবকিছু বেশি বেশি ভাবতে তোকে কে বলছে?”

” আমি খেয়াল করে দেখছি তোমাদের দুজনের সম্পর্কটা আর দশটা কাপলদের মত না। কি ঠিক বলি নাই বল?

” পিউলি! নিজের সীমার মধ্যে থাক। ” আমি বেশ জোরেই ধমকে উঠলাম, হাসপাতালে আছি খেয়াল হতে চারপাশে এক নজর বুলিয়ে নিজেকে সামলে নিলাম। চাপা স্বরে বললাম, ” তোর স্পর্ধা তো কম নয়। আমার পার্সোনাল জীবনের উপর নজর রাখিস। এই অধিকার তোকে কে দিয়েছে?

” আমি তোমাকে ভালোবাসি। ভাবছিলাম তুমিও আমাকে ভালোবাসো। তোমাকে চাপে ফেলে যে সম্পর্কে জড়িয়ে ফেলা হয়েছে তুমি হয়তো তা চাওনা। তাইতো… ”

আমি পিউলির কথার মাঝে থামিয়ে দিয়ে বললাম, ” তোকে নিশ্চয়ই ভালোবাসি, কিন্তু তুই যেই ওয়েতে বাসিস সেই নজরে না। আমি তোকে সব সময় বোনের নজরেই দেখে এসেছি। তিয়া তাসমির মত তোকেও বোন মনে করে যখন তখন তোর অনেক আবদার পুরোন করেছি বলে তুই এমন মাথায় উঠে নাচবি ঘুনাক্ষরেও ভাবিনি। আর রইল হীবাকে বিয়ে করা, মানলাম দাদার শেষ ইচ্ছা ছিল, কিন্তু বিয়েটা আমি নিজের দায়িত্বে নিজের ইচ্ছেয় করেছি। সম্পর্কটাকে আমি মন থেকে মানি। ডু ইউ আন্ডারস্ট্যান্ড দ্যাট?”

পিউলি কিছু বলতে চাইল কিন্তু আমি ওকে থামিয়ে দিয়ে বললাম, “ব্যাস অনেক হয়েছে এটা হসপিটাল। আমি আর কোন কথা শুনতে চাই না। তুই এখান থেকে বিদায় হো।”

পিউলি কিছু একটা বলার জন্য মুখ খুলতে গেলে আমি আবারও বাধা দিয়ে বললাম, ” আমি কি বললাম কানে ঢুকেনি? আমার চোখের সামনে থেকে দুর হ, আর হ্যা দোয়া কর হীবা যেন সুস্থ হয়ে উঠে। নইলে তোর কি হাল করবো আমি নিজেও জানিনা। আমার আর হীবার মাঝে থেকেও দুর হয়ে যা। তোর ঐ চেহারা আমার সামনে কখনো আনবিনা। মনে থাকবে?”

” কিন্তু… ”

” গেট আউট। ” কঠোর গলায় বললাম। পিউলি কয়েক মুহূর্ত আহত দৃষ্টি মেলে পাথরের মত দাঁড়িয়ে রইল। তারপর উল্টো পথে বাইরের দিকে চলে গেল। আমি মাথার ওপর দু’হাতের আঙুল চালাতে চালাতে ধপ করে বসে পরলাম। কতক্ষণ সময় গেল জানিনা। হঠাৎ মেয়েলি কন্ঠে ” স্কিউজমি ” শুনে মুখ তুলে তাকালাম। একজন নার্স দাঁড়িয়ে আছে সামনে। আমি ঝট করে উঠে দাঁড়িয়ে শুধালাম,

” আমার ওয়াইফের কি অবস্থা সিস্টার? ”

নার্স বললো, ” এখনো কিছু বলা যাচ্ছে না। আপনার ওয়াইফের জন্য ব্লা*ড লাগবে। আমাদের কাছে যা ছিল অলরেডি দেয়া হচ্ছে। কিন্তু আরও ব্লা*ড দিতে হবে। আপনি আর্জেন্টলি ব্লা*ড জোগাড় করুন। ”

আমি শুধালাম, ” আচ্ছা, ব্লা*ড গ্রুপ কি বলেন। ”

নার্স আমার দিকে অদ্ভুত দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। যেন আমি বোকার মত কোন কথা বলেছি। অবশ্য স্ত্রীর ব্লা*ড গ্রুপ না জানাটাই তো অদ্ভুত ব্যাপার। তাই বললাম,

” আসলে আমাদের রিসেন্টলি বিয়ে হয়েছে। তাই আমার স্ত্রীর ব্লা*ড গ্রুপ জানার সুযোগ এখনো হয়ে ওঠেনি। ”

” ওহ আচ্ছা। আপনার ওয়াইফের ব্লা*ড গ্রুপ ও পজিটিভ। আমাদের এখানে যা ছিল পর্যাপ্ত নয়। আপনি একটি দেখেন প্লিজ।”

” কোন দরকার নেই। আমি ব্লা*ড দিব।”

পিছনে থেকে কারোর কণ্ঠধ্বনি শুনে দুজনেই সেদিকে ফিরলাম। তিয়ানা ও আরমান দাঁড়িয়ে আছে। আমার খেয়াল হল আরমানের ব্লা*ড গ্রুপ ও পজিটিভ। ওকে দেখে আমি হাফ ছেড়ে বাঁচলাম। নার্স আরমানের উদ্দেশ্যে বললো,

” ঠিক আছে আপনি আমাদের সাথে আসুন।”

বলেই একটা কামরার দিকে এগোলো। আরমান আমার কাছে এসে বললো, ” ডোন্ট ওরি ভাইয়া সব ঠিক হয়ে যাবে। ভাবি খুব দ্রুত সুস্থ্য হয়ে যাবে। দেখ।”

আমি মথা নেড়ে সায় জানালাম। আরমান সেই কামরার দিকে গেল। আমি আবারো চেয়ারে বসে পরলাম। ততক্ষণে তিয়ানা এগিয়ে এসে আমার পাশে বসল। আপনজনদের পাশে পেয়ে মনে একটু সাহস এলো। তিয়ানা বললো,

” আমি আম্মাকে এবং ভাবির বড়িতেও ফোনে জানিয়ে দিয়েছি। ভাবির আব্বা আম্মা বোধহয় একটু পরেই রওনা দিচ্ছে। আর ওর মামারা কিছুক্ষণের মধ্যেই চলে আসবে। চিন্তা করোনা। আল্লাহর উপর ভরসা রাখো। ভাবী ভিষণ ভালো মানুষ। আল্লাহ উনাকে নিশ্চিত ভাবেই সাহায্য করবেন। শুধু বেশি করে দোওয়া করতে থাকো। সব ঠিক হয়ে যাবে ইনশাল্লাহ। ”

চলবে ইনশাআল্লাহ।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে