#তোমায়_ছেড়ে_যাবো_কোথায়?
পর্বঃ – ১৪ ।
লেখা – মুনিরা সুলতানা।
——————–*
আজ শুক্রবার। কামরান সেই সকালে ব্রেকফাস্ট সেরে বেড়িয়ে গেছে। সাধারণত ও শুক্রবার কোন কাজ রাখেনা। কিন্তু পিউলির জন্য আজ বাসায় থেকে বিশ্রাম নেয়া হলনা। সারাদিন কোন খবর নেই। অবশ্য ঘন্টায় ঘন্টায় আমাদের মধ্যে ফোনালাপ করার মত সম্পর্ক তৈরি হয়নি। আসলেই কি হয়নি? সুন্দর একটা বন্ধুত্বপূর্ন সম্পর্ক তো হয়েছে। তাহলে একটা ফোন করলেও তো পারে। আমি অন্তত আশা করেছিলাম একটা কলের। কিন্তু সে আশায় গুড়ে বালি। তাই জড়তা সংকোচ, লজ্জাকে দুরে সরিয়ে রেখে আজ আমিই ওকে দুপুরের পরে একবার ফোন করেছিলাম। তখন ও খুব ব্যাস্ত সমেত ভাবে কথা বলছিল। বুঝতে পারছি ওর ব্যাস্ততা। ও বলেছে আর একটু কাজ বাকি আছে। টানা কাজ করছে। সেটা সেরেই রওনা দিবে। খেয়েছে কিনা জানতে চাইলে বলে তখন অব্দি খায়নি। আমি ওকে খাওয়া দাওয়া করে নিতে এবং তাড়াতাড়ি রওনা দিতে বলে ফোন রেখেছিলাম।
এখন সন্ধ্যা। মাগরিবের নামজ আদায় করেই রেডি হতে শুরু করেছি। বিয়ের পর এই প্রথম মামার বাড়ি যাচ্ছি। তাই শাড়ি পরাটাই ঠিক মনে হলো। আলমারি থেকে বেছে বিয়েতে পাওয়া ভাজ না খোলা নতুন একটা হলদেটে কমলা রঙের কাতান শাড়ি বের করে রাখলাম। কামরান এখনও আসেনি। খুব চিন্তা হচ্ছিল। তাই নামাজের পরে তিয়ানাকে দিয়ে আরেকবার ফোন করিয়েছিলাম। কামরান আমাদের চলে যেতে বলেছে। ও নাকি সরাসরি ওখানে পৌঁছে যাবে। আমার কেমন যেন অস্থির লাগছে। সবকিছু ঠিক থাকবেতো? বিয়ের পরে এই প্রথম মামার বাড়ি যাচ্ছি। খুব আশায় ছিলাম দুজন একসাথে যাবো। কিন্তু সেটা আর হলোনা। মনটা খারাপ হয়ে আছে তাই। যেতেই মন চাইছে না আর। আস্তে ধীরে তৈরি হচ্ছি। তখন তিয়ানা আমার কামরায় এলো। ওর হাতে কিছু জামা ধরা। সেগুলো আমাকে দেখিয়ে ও শুধালো,
” দেখতো ভাবি কোন ড্রেসটা পরব? ”
আমি চুল আচরাচ্ছিলাম। ওর দিকে ফিরে বললাম, ” সেকি আমি কি বলব বলতো, তোমার ড্রেসিং সেন্স তো খুবই ভালো আমি খেয়াল করেছি। তাহলে আমাকে জিজ্ঞেস করছ কেন?”
” তোমার মামার বাড়ি যাচ্ছি। তাও প্রথম। তাই একটু কনফিউজড। প্লিজ বলনা কোনটা ভালো হবে? ”
আমি এবার না হেসে পারলামনা। বললাম, ” তোমার কনফিউশান দেখে মনে হচ্ছে বয়ফ্রেন্ডের সাথে দেখা করতে যাচ্ছ। আর ও বাড়িতে প্রথম যাচ্ছনা। আগেও গেছ আমাদের বিয়র সময়। ”
” সেতো বিয়ের দিন। সেদিনটা আলাদা ছিল। আর আজ তোমার সাথে যাবো। দেখ দেরি হয়ে যাচ্ছে কিন্তু। জলদি বলনা ভাবি।”
” আচ্ছা ঠিক আছে। দেখি দেখাও তো। ” আমি আর কথা না বাড়িয়ে ওর আনা জামাগুলো থেকে নেভিব্লু রঙের জামাটা দেখিয়ে বললাম, ” এটা পড়, তোমার ফর্সা ত্বকে এই কালারটা খুব মানাবে। ”
তিয়ানা ড্রেসটা কয়েক মুহূর্ত পরোখ করে উচ্ছ্বসিত হয়ে বললো, ” থ্যান্কিউ ভাবি। আমি আজ এটাই পরব। ” তারপর আমার দিকে এক পলক দেখে বললো, ” সেকি তুমি এখনো রেডি হতে শুরু করনি? কি পরবে? শাড়ি নিশ্চয়? ”
ইশারায় বিছানার উপর রাখা শাড়িটা দেখিয়ে বললাম, ” ঐ শাড়িটা পরব বলে বের করেছি । ঠিক আছে না? ”
শাড়িটা হাতে নিয়ে দেখল সে। আমার দিকে তাকাল, আবার শাড়ির দিকে ফিরে বললো, ” পারফেক্ট। ”
আমি একটু ইতস্তত করে বললাম, ” আমার স্কিন তো একটু চাপা তাই টেনশনে ছিলাম এই কালারটা আমাকে মানাবে কিনা।বিয়ের সময় কিন্তু তোমাদের দেয়া শাড়ি গুলো বেশির ভাগই এমন ব্রাইট কালারের। সত্যি বলতে চাপা রঙ বলে এই ধরনের কারল গুলো সবসময় এড়িয়ে চলেছি। ”
তিয়ানা শাড়িটা আবার বিছানায় রেখে আমার কাছে এগিয়ে এলো। আমার কাঁধের উপর দু’হাতের ভর রেখে বলল,
” তোমার স্কিন কালার হচ্ছে উজ্জ্বল শ্যামলা। কালো নয় কিন্তু। আর স্কিনটাও খুব সুন্দর। যেকোনো ব্রাইট কালার তোমাকে খুব সুন্দর মানাবে। আর তোমার যে হাইট, শাড়িতে তোমাকে কিযে মনায়না। শাড়িটা আগে পর। নিজেই বুঝতে পারবে। আমিতো ভাবছি ভাইয়ার কথা। সে বেচারা তো আজ তোমার থেকে চোখ ফেরাতেই পারবেনা। ”
কথাটা বলেই ওর মুখ জুড়ে দুষ্টু হাসি খেলে গেল। আমি একটু লাজুক হাসলাম। বললাম, ” হয়েছে আর পাকনামো করতে হবেনা। দেরি হয়ে যাচ্ছে। যাও ঝটপট রেডি হও।”
” আমি তো ঝটপট রেডি হয়ে যাব। দেরি হলে তোমারই হবে দেখ। ” কথাটা বলেই হাসতে হাসতে কামরা থেকে বেরিয়ে গেল তিয়ানা। আমিও আপন মনে হেসে উঠলাম। তারপর শাড়িটা হাতে তুলে নিলাম। সময় যাচ্ছে। জলদি রেডি হতে হবে এখন।
————*
অবশেষে আমরা তিনজনই মানে আমি তিয়ানা, আরমান মামার বাসায় পৌছালাম। আরমান এর মধ্যে একটু আগে বেড়িয়ে দই মিষ্টি এবং কিছু ফলমূল কিনে এনেছ। কাজটা জামাইয়ের করার কথা। অথচ করছে আরমান। কামরানকে না দেখে মামা মামির মুখে একটু হতাশা ভাব লক্ষ করলাম। মামি তো জিজ্ঞাসাই করল,
” জামাই এলোনা যে? ”
আমি এক পলক তিয়ানার দিকো তাকালাম। ওর চোখে মুখেও বিব্রত ভাব। আমি বিব্রতভঙ্গীতে বললাম, ” ও একটা কাজে আটকে গেছে। আপনারা চিন্তা করবেন না। ও সরাসরি এখানে চলে আসবে বলেছে। ”
আমার কথা শুনে আস্বস্ত হলেন উনারা। ওদের দুই ভাই বোনকে নিয়ে গিয়ে বসালেন। তামান্না আমাকে দেখে আনন্দে জড়িয়ে ধরল। অনেকদিন ধরে এখানে এসে নিজের পরিবারের কাছে আসার অনুভব হচ্ছে। ঢাকায় এসেছি বেশ কিছুদিন হয়ে গেছে। কিন্তু এখানে আসা হল এতদিন পরে। অথচ বিয়ের আগে যখনই ঢাকায় এসেছি সবসময় এই বাড়িতেই থেকেছি। সত্যি ভাবতে অবাক লাগে জীবনের গতিপথ বদলাতে সময় লাগেনা। বিশেষ করে মেয়েদের জীবনটায় কতরকমের যে বাঁক আসে। চোখের নিমিষেই সবকিছু কেমন বদলে গিয়ে সম্পূর্ণ অন্য রকম হয়ে যায়। অথচ মেয়েরা কি সাবলীন ভাবে সবরকম পরিস্থিতি সাথে দিব্বি মানিয়ে গুছিয়ে নেয়। অবশ্য সবাই যে মানিয়েই নেয় বলা মুসকিল। অনেককে অনেক কঠিন ও বৈরী পরিবেশে বাধ্য হয়ে মানিয়ে নেয়ার ভান করতেও হয় বৈকি।
মামা মামি তো পারলে কি করবেন আর কি করবেনা বোধহয় তালগোল পাকিয়ে ফেলছেন। আতিথেয়তায় কোন কার্পণ্য রাখেননি। প্রথমে শরবত দিয়েছেন। কারন বেশ গরম পরেছে। এরপর হরেক রকম নাস্তার আয়োজন। এতসব নাস্তা দেখে আারমান বেশ হৈহৈ করে উঠলো।,
” আরে মামা আপনারা করেছেন টা কি? এতো খাবার কে খাবে? ”
মামা হেসে বলেছেন, ” যেটুকু পারো আস্তে ধীরে খাও। তবে পেটে জায়গা রেখো কিন্তু। এতো কেবল সান্ধ্য স্ন্যাক্স। রাতের খাবার কামরান এলে একসাথে খেতে বসবে কেমন।”
” এগুলো খাওয়ার পরও পেটে জায়গা থাকবে বলছেন? ”
” তোমাদের বয়সী ছেলেদের লোহা খেয়েও হজম করে ফেলার কথা। আমরা কিন্তু তোমাদের মত বয়সে খাওয়ার ব্যাপারে কোন লাজ লজ্জা ছিলোনা। যেখানে খাওয়া পেতাম সোজা বসে পরতাম। বুজলে? ”
কথাটা বলেই মামা বেশ উচ্চ শব্দে হেসে উঠলেন। সাথে আমরাও যোগ দিলাম। কিন্তু আরমানের মুখে লাজুক হাসি। মামি মামাকে ঝাড়ি দিয়ে বললেন,
” তোমার এই নির্লজ্জের মত খাওয়ার গল্প আর করতে হবেনা। সুযোগ পেলাই কেবল খাওয়া নিয়ে গল্প শুরু করে দেয়। এতো বয়স হলো তাও খাওয়ার লোভ এখনো সামলাতে পারেনা। সেটা আবার বড় মুখ করে বলে বেড়ায়। ”
মামীর কথা শুনে মামার মুখ আমশি হয়ে গেল। আমি মামির উদ্দেশ্যে বললাম,
” থাকনা মামি। এভাবে বলেননা। মামা নাহয় খেতে একটু ভালোবাসে। তাই গল্প করে আনন্দ পায়। ”
” থাক তোকে আর ওর পক্ষ নিয়ে কথা বলতে হবে না।”
কথা শেষে মামি রান্নাঘরে গেলেন বাকি কাজগুলো সেরে ফেলতে। আমিও মামির সাথে কথা বলতে বলতে টুকটাক সাহায্য করলাম কতক্ষণ। কিন্তু আমার অস্থিরতা কিছুতেই কমছে না বরং সময় যত গড়িয়ে যাচ্ছে মনের অস্থিরতা ততই বাড়ছে। মামির কাজ প্রায় শেষ। এখন কেবল কামরান আসলেই খাবার দেয়া হবে। আমি রান্নাঘর ছেড়ে বেরিয়ে এলাম। ড্রয়িং রুমের দরজায় দাঁড়িয়ে চুপচাপ সবার আনন্দঘন পরিবেশে আড্ডা দিতে দেখে ভালো লাগছে। তামান্না ও তিয়ানা প্রায় সমবয়সী। ওদের মধ্যে বেশ সুন্দর বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক তৈরি হয়েছে। ঐদিকে আরমানের সাথে মামার ছোট ছেলে তাহসানের বেশ জমে উঠেছে দেখছি। অথচ তাহসান মাত্র ইন্টারে পরে। আসলে দুটো মানুষের মাঝে সুন্দর একটা সম্পর্ক গড়ে উঠতে বয়স কোন ব্যাপার নয়। দু’জনের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ মনোভাব থাকাটাই বড় কথা। কিন্তু আমি আজ কোন কিছুতেই মন বসাতে পারছিনা। সবকিছু কেমন বিষাদময় লাগছে। মনের ভিতর কেবলই অশান্তির ঘনঘটা। যদি কামরান না আসে? লজ্জার শেষ থাকবেনা আজ। তাহলে এই কদিনে ওর প্রতি আমার মনোভাব যেটুকু বদলেছিল আবারও সেটা নেতিবাচক মনোভাবে পরিবর্তিত হয়ে যাবে। মানুষটাকে কি আমি আদৌও এতটুকু চিনতে পেরেছি? অবশ্য মাত্র এই কয়দিনে কি সঠিক ভাবে কাউকে চেনা যায়? যতক্ষণ না মানুষটা নিজের ভেতরের আসল রুপটা প্রকাশ করছে। ততক্ষণ পর্যন্ত আমাদের কি সাধ্যি তাকে চেনার? আমার অজান্তেই একটা দীর্ঘশ্বাস বুক চিড়ে বেরিয়ে এল। আমি সন্তর্পণে ঝুল বারান্দায় চলে এলাম। মামার বাড়ির এই বাড়ান্দাটা আমার ভিষণ পছন্দের একটা জায়গা। এখানে এলে আমার বেশির ভাগ সময় এই বারান্দায় বই হাতে বসেই কেটে যেত। বারান্দাটা অনেক বড়। মামিও সেটার পূর্ণ সদ্ব্যাবহার করেছেন। সারি সারি টবে নানা জাতের ইনডোর প্লান্ট লাগিয়েছেন। এই বারান্দায় পর্যাপ্ত রোদ আসে। তাই বেশ কিছু ফুল গাছও আছে। গাছগুলো কি সুন্দর লকলকিয়ে বেড়ে উঠেছে। গ্রিলেও অনেক গাছ ঝুলানো আছে। বসার জন্য চারটি চেয়ার একটা ছোট টেবিল সাজানো আছে। মামারা প্রায় ছুটির দিনে এখানে বসে বিকেলের চা নাস্তা খেতে খেতে আড্ডা দেয়।
আমি গ্রিলটা দু’হাতে আকড়ে ধরে আকাশের দিকে মুখ তুলে চাইলাম। আজ বোধহয় পূর্নিমা। ধরনীতে উজ্জ্বল আলো ছড়িয়ে দিয়ে আকাশের বুকে মস্ত বড়ো চাঁদ যেন গর্ব সহকারে ঝুলে রয়েছে। কিছু সময় সেদিকেই আনমনে তাকিয়ে রইলাম। কত রাত হলো মনে হতে সেলফোনে নজর বুলালাম। সারে নয়টা পেরিয়ে গেছে ইতিমধ্যে। জনাবের এখনো আসার কোন খবর নেই। একটা ফোন অব্দি করার প্রয়োজন মনে করেনি। আদৌও আসবেতো? আমিও আর ফোন করে দেখিনি। না এলে না আসবে। আসলে আমার আশা করাটাই ভুল হয়েছিল। বিয়ের পরে এখন অব্দি শশুর বাড়ির দিকে কারও বাড়িতেই যায়নি সে। গলার কাছে দলা পাকানো কান্নারা ঠেলে আসতে চাইছে। জোর করে নিজেকে সামলে নিতে গিয়ে গলাটা ব্যাথায় টনটন করে উঠলো। মনোযোগ অন্যদিকে ঘুরাতে একটা চেয়ারে বসে সেলফোনে চোখ রাখলাম। ফেসবুক খুলে বসে আছি। সমানে স্ক্রোল করে যাচ্ছি। কিন্তু কোন কিছুতেই মন বসাতে পারছিনা। আনমনে স্ক্রিনে তাকিয়ে আছি। হঠাৎ একটা ছবিতে চোখ দুটো আটকে গেল। একটা নয় অনেকগুলো ছবি। পিউলির পেজে। ও যখন আমাদের বাসায় ছিল তখন ওর অফিসিয়াল পেজে এড করে দিয়েছিল যেন আমিও ওর বিভিন্ন ড্রেস কিংবা প্রডাক্টের জন্য করা লাইভগুলো দেখতে পারি। সেই পেজেই একটু আগে ছবিগুলো আপলোড করা হয়েছে। এর মধ্যে কয়েকটা ছবিতে কামরানও আছে। কোনটা দিনের কোনটা সন্ধায় তোলা। অর্থাৎ সারাদিনের ঘুরে ফিরে ছবিগুলো তোলা হয়েছে। আমি জানি আজ পিউলির ফোট শ্যুট করতেই কোথাও গিয়েছে ওরা। কিন্তু কোথায় তা বলেনি কামরান। ছবিগুলো দেখে মনে হচ্ছে কোন রিসোর্ট। কিন্তু সন্ধ্যার পরের ছবি দেখে বোঝা যাচ্ছে কামরান সন্ধার পরও রওনা দেয়নি। এই রাতে ঢাকার রাস্তায় যে পরিমাণ জ্যাম হয় তাহলে সময়মত গাজীপুর থেকে আসাটা কিভাবে সম্ভব? তীক্ষ্ণ কষ্টে আমার বুকের ভিতর মোচড় দিয়ে উঠলো। আসবেনা যখন বলে দিলেই পারত। মিথ্যে বলার দরকার ছিল কি? ছবিগুলোর মধ্যে দুটো ছবি দেখে আমার মেজাজের পারদ তরতর করে বেড়ে যাচ্ছে। একটা ছবিতে পিউলির চুলগুলো বাতাসে বোধহয় উড়ছে। কামরানের এক হাতে ওর ক্যামেরা, আরেক হাত দিয়ে উড়ন্ত চুলগুলো কানের পিছনে গুঁজে দিচ্ছে। পিউলির মুখে তখন উজ্জ্বল লাজুক হাসি ছুঁয়ে আছে। সূর্যের মিইয়ে যাওয়া হলদে-সোনালি রোদের ঝিলিক দেখে মনে হচ্ছে সময়টা সম্ভবত বিকেলের দিকের। ছবিটার ক্যাপশনে লেখা আছে ‘ মাই পার্সোনাল ক্যামেরাম্যান’। আরেকটা ছবিতে দলবেঁধে সবাই গোল হয়ে ঘাসের উপর বসে খাবার খাচ্ছে। প্লেটে বারবিকিউ সহ নানাবিধ খাবারের আয়োজন। কৃত্রিম আলোয় ঝলমল করছিল যদিও পিছনে রহস্যময় আধার ঝুলে রয়েছে। কামরান ও পিউলি পাশাপাশি বসেছে। পিউলি কামরানের বেশ ঘনিষ্ঠ ভাবে ঝুকে কিছু একটা বলছে। আর কামরান পিউলির মুখের দিকে হাসি মুখে চেয়ে ওর কথা শুনছে। একজোড়া কাপলের জন্য এই ধরনের ছবি কাঙ্খিত হতে পারে। কিন্তু ওরা তো কাপল নয়। নাকি…। আমি আর ভাবতে পারছিনা। নিশ্চয়ই ওরা রাতের খাবার খাচ্ছিল। আমার বুক ফেটে কান্না আসছে। অনেক কষ্টে নিজেকে সামলাতে চেষ্টা করছি। সেই সময় মামির ডাকে আমি ভিষন ভাবে চমকে উঠলাম। রাত হয়েছে বেশ। খেতে দিবে বলে ডাকছেন। আমি নিজেকে শক্ত করে সামলে নিয়ে ভিতরে গেলাম। আমিও অযথা অপেক্ষায় না থেকে ওদের বললাম কামরান আসবেনা। সবাইকে খেয়ে নিতে বললাম। শুনে মামা মামির মুখটা মলিন হয়ে গেল। কিন্তু দুজনেই আর কিছু বললেন না। খাবার বাড়তে চলে গেলেন। তিয়ানা ও আরমানের মুখেও দেখলাম বিব্রতভাব। আমার গলা দিয়ে যদিও খাবার নামবেনা তবু্ও সৌজন্য বজায় রাখতে সবার সাথে খেতে বসলাম।
চলবে ইনশাআল্লাহ।