#তোমাতে_মত্ত_আমি
#লেখনীতে – #Kazi_Meherin_Nesa
#পর্ব – ১৭
এই মৌসুমের বৃষ্টি, এই ঝু’প করে এলো আবার এই চলে গেলো। প্রায় মিনিট দশেক প্রবল বে’গে ঝড়ার পর বৃষ্টি একদম থেমে গেলো, মেঘের ঘ’ন’ঘ’টা সরে গিয়ে আকাশও আবার ফিরে গেলো পূর্বের অবস্থায়। বৃষ্টি থামতেই হামজা বললো..
“বৃষ্টি তো থেমে গেছে, এবার বলুন আর কোথায় যাবেন?”
“আর কোথাও যাওয়ার নেই তো, এখন সোজা বাড়ি যাবো। এমনিতেও আমার লাইব্রেরী ছাড়া আর কোথাও যাওয়ার প্ল্যান ছিলো না, আপনার জন্যেই একটু বসতে হলো”
ব্যাগটা কাধে তুলে উঠে দাড়ালো আলফা, হামজাও ত’ড়ি’ঘ’ড়ি করে উঠে দাড়ালো। আলফা চলে যেতে চাইছে শুনে কিছুটা মন খা’রা’প হলো তার..
“বাড়ি চলে যাবেন এখনই? এখনও তো সন্ধ্যা হয়নি”
“আপনার ক্লা’ন্ত লাগছেনা?”
“আপনার ক্লা’ন্ত লাগছে?”
“অনেক! এখন বাসায় গিয়ে একটা লম্বা ঘুম দেবো নাহলে কাল আর কলেজ যেতে পারবো না”
“ওহ! আচ্ছা চলুন তবে, আমি আপনাকে বাড়িতে ড্র’প করে দেই”
ব্যাগ থেকে গাড়ির চাবিটা বের করে দেখালো আলফা..
“আমি আমার গাড়ি নিয়ে এসেছি, তবে জিজ্ঞাসা করার জন্যে ধন্যবাদ”
“আপনাকে ছুটির দিনেও গাড়ি নিয়ে কে বেরোতে বলেছে? মাঝেমাঝে তো গাড়ি ছাড়াও বেরোতে পারেন, তাহলে আজ আমি আপনাকে লিফট দিতাম”
“আপনি আমাকে লিফট দেওয়ার জন্যে বেশ তৈরি হয়ে ছিলেন মনে হচ্ছে?”
“হ্যাঁ ছিলাম, তো?”
হামজার কথা শুনে হঠাৎই ফাহাদের কথা মনে পড়ে গেলো আলফার, ফাহাদও তো আগে ওকে লিফট দেওয়ার জন্যে কতো চে’ষ্টা করতো। সে কথা মনে পড়তেই স্মিত হাসলো আলফা, যা হামজার নজর এড়ায়নি!
“হাসলেন যে?”
“ফাহাদের কথা মনে পড়ে গেলো, ফাহাদও আমাকে লিফট দেওয়ার জন্যে ম’রি’য়া হয়ে থাকতো। কিন্তু আমি সবসময় নিজের গাড়ি নিয়ে চলাচল করায় ফাহাদের লিফট নেওয়ার সুযোগ খুবই কম হয়েছে আমার”
“এর মানে আপনি সবসময়ই এমন?”
“এমন বলতে কেমন?”
“কাউকেই সুযোগ দেন না”
“হুমম, ধরে নিন তাই”
“ভালোবাসতেন ফাহাদকে?”
হামজার প্রশ্নের ই’ত’স্ত’তবোধ করলো না আলফা, স্বাভাবিকভাবেই বললো..
“ভালোবেসেছি, কথাটা বলতে পারবো না কারণ ওকে আমি পুরোপুরি ভালোবাসার সুযোগ সময় কোনোটাই পাইনি, সময়টাও তখন জ’টি’ল ছিলো। তবে আস্তে আস্তে ওইভাবেই যদি চলতে থাকতো তাহলে হয়তো সত্যিই অনেক ভালোবেসে ফেলতাম। তবে, ফাহাদ আমার জীবনের সুন্দর একটা অংশ হিসেবে সারাজীবন থাকবে। ওর সঙ্গে কাটানো সুন্দর সময়গুলো কখনোই ভুলবো না”
“তাহলে তো বলতে হবে ফাহাদ বেশ ভা’গ্য’বা’ন”
“সে তো বটেই, তবে আমি হয়তো ভা’গ্য’ব’তী ছিলাম না তাই.. যাই হোক, আমি আসছি আজ”
“আরেকটা কথা, দিনটা ভালো কা’ট’লো তো আপনার?”
“হুমম, ভালোই কে’টে’ছে। একটা ধন্যবাদ আপনার প্রাপ্য, আপনি আজ এখানে না এলে হয়তো বাকি দিনগুলোর মতো আমি শুধু লাইব্রেরী থেকেই বাসায় চলে যেতাম”
হামজার এ কথা শুনে ভালো লাগলো যে আলফার ওর সঙ্গে সময় কা’টি’য়ে কিছুটা হলেও ভালো লেগেছে, যাবার বেলায় আলফা যখন গাড়িতে উঠছিলো তখন হামজা বললো..
“আলফা, সবসময় এভাবেই হাসিখুশি থাকার চে’ষ্টা করবেন। আপনাকে এভাবেই ভালো লাগে”
স্মিত হাসলো আলফা, এরপর হামজাকে বিদায় জানিয়ে চলে এলো। আলফার সঙ্গে সময় কা’টি’য়ে আজ মন মেজাজ বেশ ভালো হামজার। খোশ মেজাজী ছেলেকে বাড়িতে ঢুকতে দেখেই মিস্টার শাহ্ বুঝে গেছেন তার ধারণাই ঠিক। রাতে আলফা আর অহনা দুজন মিলে চা খেতে খেতে আড্ডা দিচ্ছিলো, কলেজের জন্যে সারাদিন আলফা তেমন সময় পায়না। অহনাও বলতে গেলে সারাদিন বাড়িতে একাই রয়ে যায়, এই রাতের বেলাতেই দুজনে মিলে একটু গল্প করার সুযোগ পায়। অহনা জানে হামজা আজ আলফার সঙ্গে দেখা করতে গেছিলো, তবে সে প্রসঙ্গে ও কোনো কথা তোলেনি। আলফা নিজেই বলেছে হামজার কথা, তখন কথার প্রসঙ্গে অহনা প্রশ্ন করে..
“ভাবী, একটা কথা জিজ্ঞাসা করবো? রা’গ করবে না তো?”
“রা’গ কেনো করবো? বলো না”
“তুমি আমার ভাইয়ার ওপর আর রে’গে নেই তো?”
“এটা তোমার ভাইয়া জানতে চেয়েছে নাকি?”
“না না, ভাইয়া কিছু বলেনি। আমারই হঠাৎ জানতে ইচ্ছে হলো। সেদিন ভাইয়া ওভাবে এলো, এরপর তুমিও কিছুটা ডিস্টার্ব ছিলে তাই..”
“অহনা, তুমি আমায় হয়তো ভুল বুঝেছো। আমি কিন্তু কখনো বলিনি যে আমি তোমার ভাইয়ের ওপর রে’গে আছি। আমি শুধু ওনার দেওয়া ওই প্র’স্তা’ব’টা মানতে রাজি নই, ব্যস এইটুকুই”
“যাক! তাও ভালো। আমি ভেবেছিলাম রে’গে আছো”
“ভাইকে খুব ভালোবাসো বুঝি? সবসময়ই দেখছি ভাইয়ের চি’ন্তা করছো!”
“হুমম, অনেক ভালোবাসি! যদিও ভাইয়াকে সেভাবে কখনো বলিনি, আমার তো ওর সঙ্গে কথায় কথায় ঝ’গ’ড়া লেগে যেতো”
“এটা সকল ভাইবোনের মধ্যেই ক’ম’ন ব্যাপার, আমার অবশ্য ভাইবোন না থাকায় এই সুযোগটা হয়ে ওঠেনি”
“ভালোই হয়েছে ভাবী, শান্তিতে ছোটবেলা পার করেছো। ভাইবোন থাকলে অনেক ঝা’মে’লা, তার ওপর সে যদি বড় হয় তাহলে তো আরো ঝা’মে’লা। সবসময় হুকুম করার অভ্যাস থাকে তার আর আম্মু আব্বুও বড় জনকেই মাথায় তুলে না’চে”
অহনার এই এক গাদা অ’ভি’যো’গ মাখা কথা শুনে আলফার মোটেও বুঝতে সমস্যা হয়নি যে হামজা ছোটো থেকেই তার মা বাবার অতি আদরের ছেলে। সময় পেরিয়ে যাচ্ছে, তার সঙ্গে যেনো একটু একটু করে আলফার মনে ঝেঁ’কে বসতে শুরু করেছে হামজা। আলফার প্রতিটা ছোটো ছোটো দরকারে হামজা সবার প্রথমে এগিয়ে আসে, আবার কখনো ছুটির দিনে হুটহাটই আলফার পিছু পিছু চলে আসে লাইব্রেরীতে। হামজার এই কা’ন্ডগুলো শুরুতে নেহাত ছেলেমানুষী মনে হলেও এখন কেনো যেনো ভালো লাগে আলফার। হয়তো এভাবেই একটু একটু করে আলফার মনে জায়গা করে নিতে শুরু করেছে হামজা। আজ কলেজ শেষে বেরোতেই একজন কুরিয়ার বয় এসে আলফাকে এক গোছা ফুল ও একটা গিফট বক্স দিয়ে গেলো, হঠাৎ কুরিয়ারে কে গিফট্ পাঠালো ভেবে পেলো না আলফা। কুরিয়ার বয়কে জিজ্ঞাসা করেও উত্তর পায়নি। অগত্যা, সেগুলো সঙ্গে নিয়েই বাড়ি ফেরে আলফা। পরেরদিন সকালে কলেজে যাওয়ার জন্যে যেই বেরোতে যাবে অমনি ফারহান আর অহনা এসে হুট করে এসে বার্থডে উইশ করে আলফাকে, আলফা অবাক হয়ে যায়!
“হ্যাপি বার্থডে ভাবী”
“থ্যাংক ইউ! কিন্তু আজ আমার জন্মদিন তোমরা কিভাবে জানলে?”
“তুমি এর আগে বলেছিলে একবার”
“সে তো অনেক আগে বলেছিলাম হয়তো, এখনও মনে আছে তোমার অহনা?”
“কি ভেবেছিলে ভুলে যাবো? কখনোই না! এই দেখো আমরা দুজনে আগেই উপহার এনে রেখেছিলাম”
অহনা একটা সুন্দর গিফট্ আলফার হাতে দিলো..
“আরে ফারহান অহনা, এসবের কি প্রয়োজন ছিলো!”
“ভাবী, আজ তোমার জন্মদিন আর আমরা কিছু দেবো না সেটা হতে পারে? তুমি শুধু দেখে নিও গিফট্ পছন্দ হয়েছে কিনা”
“অহনা কিনেছে বুঝি? তাহলে তো আমার পছন্দ হবেই”
“ভাবী! এভাবে বলতে পারলে? তুমি তো দেখছি শুধু অহনাকেই ভালোবাসো, আমার প্রতি কোনো ভালোবাসা বাকি নেই তোমার”
“আহা, ফারহান। তোমাকে বলা আর অহনাকে বলা তো একই কথাই হলো তাইনা? এনিওয়ে, অনেক ধন্যবাদ তোমাদের”
মিস্টার ও মিসেস খান ও আলফাকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানায়, বাড়ির সবার থেকে এমন সা’র’প্রা’ই’জ বার্থডে উইশ পেয়ে আলফা তো ভীষন খুশি।
“আলফা, আজ যেহেতু তোমার জন্মদিন তাই ভাবছি আজ আমরা রাতের ডিনার বাইরে করবো”
“আঙ্কেল! ডাক্তার আপনাকে কিন্তু বাইরের খাবার খেতে মানা করেছে, ভুলে গেছেন?”
“আরে একদিন খেলে কিছু হবেনা, তাছাড়া অনেকদিন হলো আমরা পুরো পরিবার ডিনার করতে বাইরে যাইনা। আজ তোমার জন্মদিন উপলক্ষে না হয় যাওয়া যাবে?”
“উম্ম! আন্টি যদি রাজি থাকেন তাহলে আমার কোনো আ’প’ত্তি নেই। আন্টির কি অভিমত?”
“আজ আমার কোনো মত নেই, তুমি বার্থডে গার্ল তাই তোমার ওপরই সব ছেড়ে দিলাম”
“ভাবী, প্লিজ প্লিজ! একদিনই তো। চলো, অনেক মজা হবে”
“আচ্ছা বেশ, যাবো!”
রাতে পুরো পরিবার সমেত ডিনারে যায় আলফা, সবাই মিলে একসঙ্গে সময় কাটিয়ে ভালোই লেগেছে আলফার। আলফার মা ও বাড়ি যেতে বলেছিলো কিন্তু আলফা সময় করে উঠতে পারেনি বলে ঠিক করেছে আজ যাবে। কলেজে আজ পরীক্ষা, সকালের শিফটের গার্ড পড়েছে আলফার। গার্ড দিতে যাওয়ার আগে হালকা কিছু খেয়ে নিলো ও, তখনই ফোন বেজে উঠলো। খেতে খেতেই কল রিসিভ করলো আলফা..
“জলদি জলদি বলুন, আমার হাতে সময় কম”
“খুব ব্যস্ত মনে হচ্ছে?”
“হ্যাঁ, একটু পর গার্ড আছে আমার। কিন্তু আপনি হঠাৎ এই অসময়ে ফোন দিলেন যে? কাজকর্ম নেই?”
“আছে, তবে অফিসের কাজ শুরু করার আগেও একটা দরকারি কাজ আছে ভাবলাম সেটা আগে সেরে নেই”
“আমার সঙ্গে?”
“হ্যাপি বার্থডে আলফা, আপনার ভবিষ্যৎ জীবন সুন্দর হোক”
“আপনিও জানেন?”
“অবশ্যই, বলেছিলাম না আপনার ব্যাপারে মোটামুটি সবই জানি। আর আজ আপনার জন্মদিন, এতো বিশেষ একটা দিনের কথা ভুলে যাবো?”
“অনেক ধন্যবাদ!”
“হুমম! তা আমার গিফট্ কেমন লেগেছে?”
“গিফট্?”
“কেনো! আপনি গিফট্ রিসিভ করেননি?”
“ওহ! এক মিনিট, তারমানে গতকাল ওই ফুল আর গিফট্ আপনি পাঠিয়েছিলেন?”
“মনে হচ্ছে আপনি গিফট্ বক্সটা খুলে দেখেননি, নাহলে হয়তো এই প্রশ্ন করতেন না”
“কোথাও কোনো নাম লিখা ছিলো না, তাই আর খুলে দেখিনি। বে’ও’য়া’রি’শ ভেবে রেখে দিয়েছিলাম কিন্তু আপনি যে ওগুলো পাঠাবেন এক্সপেক্ট করিনি”
“অদ্ভুত মেয়ে আপনি, আপনার জায়গায় অন্য কোনো মেয়ে হলে ওই গিফট্ বক্স খুলতে পাঁচ মিনিটও সময় নিতো না”
“হতে পারে, তবে আমি তেমন নই”
“হুমম, জানা আছে। যাই হোক, খুলে দেখে জানাবেন আমায় পছন্দ হলো কিনা। একটা টেক্সট করে দেবেন”
“যদি পছন্দ না হয়?”
“আগে খুলে তো দেখুন কি আছে”
“জাস্ট ইন কেস, যদি পছন্দ না হয় তাহলে কি করবেন?”
“আবার গিফট্ পাঠাবো, যতক্ষণ না আপনার গিফট্ পছন্দ হবে ততোবারই ভিন্ন ভিন্ন গিফট্ পাঠাবো। একটা না একটা আশা করি পছন্দ হয়েই যাবে”
আলফা উত্তর দেবে তার আগেই দেওয়াল ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখলো যাওয়ার সময় হয়ে এসেছে..
“গার্ডের সময় হয়ে গেছে, আমি রাখছি এখন”
“আমার গিফট্ কিন্তু..”
পুরো কথা শেষ করতে পারলো না হামজা, তার আগেই কে’টে দিয়েছে আলফা। ফোন রাখতেই একটু হাসলো হামজা, তখনই ছেলের কেবিনে এলেন মিস্টার শাহ্। ছেলের মুখ দেখে গম্ভীর স্বরে প্রশ্ন করলেন..
“কি ব্যাপার?”
“কিছুনা ড্যাড”
“আমার মনে হয় কাজের সময় শুধু কাজের দিকেই মন দেওয়া উচিত, অন্য দিকে নয়”
“আমার মন কাজের দিকেই আছে ড্যাড, কিন্তু তুমি হঠাৎ এখানে যে? কিছু বলবে?”
“আজ আমাদের একটা লাঞ্চ অ্যাটেন্ড করতে হবে, সেটাই বলতে এসেছিলাম। দুইটার সময় বেরোবো”
“হঠাৎ লাঞ্চ? কাদের সঙ্গে?”
“গেলেই দেখতে পাবে”
“কিন্তু দুপুরে আমার কিছু কাজ আছে”
“ওসব পরে করে নিও, নাহলে ইমরানকে বলে দাও। ও করে দেবে। কিন্তু আমাদের আজকের লাঞ্চ অ্যাটেন্ড করতে হবে ওকে?”
হামজা রাজি হলো ঠিকই কিন্তু কাদের সঙ্গে লাঞ্চ অ্যাটেন্ড করবে বুঝতে পারলো না, কারণ ওর জানামতে, এমন কোনো ক্লায়েন্ট আপাতত নেই ওদের যারা লাঞ্চে ইনভাইট করবে। যথারীতি দুপুরে বাবার সঙ্গে লাঞ্চে যায় হামজা, ও ভেবেছিলো কোনো বিজনেস বিষয়ক লাঞ্চ কিন্তু সেখানে যাওয়ার পর ভুল ভাঙলো হামজার। লিজা আর ওর বাবা এসেছে, সেখানেই হামজার বাবা ওকে নিয়ে এসেছে। তবুও হামজা চুপ ছিলো, কিন্তু এরপর যখন বিয়ে প্রসঙ্গে কথা উঠলো তখন আর চুপ থাকতে পারলো না হামজা। কাজের বাহানা দিয়ে ওখান থেকে উঠে বাইরে আসতেই ওর বাবাও পিছু পিছু এসে ওকে বাঁধা দিলো..
“কোথায় যাচ্ছিস তুই?”
“তুমি আমাকে এইসবের জন্যে এখানে এনেছো? এর থেকে দরকারি কাজ পরে আছে আমার”
“তুই এখন এখান থেকে এভাবে চলে গেলে সেটা খারাপ দেখাবে হামজা”
“কিছুই হবেনা ড্যাড, তুমি তাদের সঙ্গে লাঞ্চ অ্যাটেন্ড করে বিষয়টা শর্ট আউট করে দাও। আমার কি দরকার এখানে?”
“এখানে জে’দ করিস না হামজা”
“জে’দ তুমি করছো, জীবনটা আমার আর আমি কাকে আমার জীবনে আনবো সেটাও আমিই ঠিক করবো। তুমি নও”
“হামজা, তুই শুধু নিজের কথাটাই ভাবছিস কিন্তু আমি যা চাইছি তাতে তোমার এবং আমাদের বিজনেসের উভয়েরই উন্নতি হবে”
“ড্যাড, তুমি তোমার বিজনেসের প্রফিটের জন্যে আমাকে বলছো একজনকে বিয়ে করে নিতে? তাও আবার এটা জেনে যে আমি একজনকে পছন্দ করি”
“জানি আমি কি করছো তুমি, অনেকদিন ধরেই দেখছি কিন্তু আর না। তুই ওই মেয়েটার কথা ভেবে ভেবে কি হয়ে গেছিস নিজের দিকে তাকিয়ে দেখেছিস? কি লাভ হচ্ছে তোর? মেয়েটা তো তোকে চায়না”
“বাট আই ওয়ান্ট হার ড্যাড, আর আমি এতো সহজে হা’র মানবো না। আলফার কাছে আমাকে অপছন্দ করার যদি একটা কারণ থাকে আমার কাছে ওকে পছন্দ করার অনেক কারণ আছে”
“ফাইন, ধরেই যদি নেই আলফা তোকে পছন্দ করে তোকে বিয়ে করতে রাজি হয় তাহলে? কি লাভ হবে তোর?”
“আমি ওকে ভালোবাসি ড্যাড, আর ও যদি আমার ভালোবাসায় সাড়া দেয় সেটা আমার জন্যে অনেককিছু”
“আমি এসব শুনতে চাইনি হামজা, তোর কি লাভ হবে সেটা জানতে চেয়েছি। আলফাকে পেলে কি লাভ হবে তোর?”
“তুমি কিসের লাভ চাইছো?”
“এখানেও তুমি লাভ ল’স গুনছো ড্যাড? প্লিজ, স্ট’প ইট”
“আচ্ছা শোন, আমাদের আলফা সম্পর্কিত যা আলোচনা আছে সেগুলো বাড়ি গিয়েও করতে পারবো কিন্তু এখন না। এখন তুই চল..”
“হামজা..!”
“সরি, ড্যাড। কিন্তু আমার এখানে কোনো কাজ নেই, আর কাজ যেহেতু নেই তাই আমার এখানে থাকারও কোনো মানে নেই”
মিস্টার শাহ্ ছেলেকে আটকাতে পারলেন না, হামজা চলে গেলো। উনি ভেবেছিলেন আজ এখানে বসে কোনোভাবে হামজাকে রাজি করাবেন লিজার সঙ্গে বিয়ের জন্যে কিন্তু সেটা আর হলো না। হামজা এভাবে চলে যাওয়ায় মিস্টার শাহ্ লিজার বাবার সামনে বেশ অ’প’মা’নি’ত বোধ করলেন, দিনদিন ছেলের জে’দ বেড়ে যেতে দেখে এবার আর চুপ থাকতে পারছেন না উনি। ঠিক করলেন এই বিষয়ে এবার ওনাকেই কিছু একটা করতে হবে। ওদিকে আলফা কলেজ শেষে মায়ের সঙ্গে দেখা করতে গেছে, মেয়ে আজ অনেকদিন পর এসেছে। তাই আলফার মা মেয়ের পছন্দের অনেককিছু রান্না করে খাইয়েছেন। কথার ফাঁকে এরপর আলফার মা হামজার প্রসঙ্গ তুললেন, মেয়ের মনের কথা জানায় চেষ্টা করলেন..
“তা, হামজার সঙ্গে এখনও কথা হয় তোর?”
“হুমম, মাঝে মাঝে”
“তারমানে ছেলেটা এখনও তোর সঙ্গে যোগাযোগ রেখেছে”
“হ্যাঁ, মাঝে মাঝে আমাদের কথা হয় আবার বাইরেও দেখা হয়ে যায়। হি ইজ অ্যা নাইস পারসন”
“তারমানে তোর ওকে ভালোই লাগে”
“হ্যাঁ, ভালোই তো”
“তাহলে কেনো তুই মেনে নিচ্ছিস না? ছেলেটা তো তোকে পছন্দ করে আর এতোদিনে তোরও নিশ্চয়ই ভালো লাগতে শুরু হয়েছে ওকে তাহলে সমস্যা কোথায়?”
“আম্মু, সমস্যা কোথায় সেটা তোমায় আমি অনেকবার বলেছি। আমাদের মধ্যে কখনো কিছু সম্ভব না”
“তুই চাইলেই সব সম্ভব, ছেলেটা হুট করেই তোকে বিয়ের প্রস্তাব দিয়ে বসেছিলো। ওই অবস্থায় কেউই সঙ্গে সঙ্গে রাজি হবেনা বুঝলাম, তাই আমিও আর কিছু বলিনি। কিন্তু এতোদিনে তো তুই তাকে দেখলি চিনলি এবার একটু ভেবে দেখ”
“কিন্তু আম্মু..”
“নিজের ভবিষ্যতের কথা একটু ভেবে দেখ আলফা, এভাবে একা তুই সারাজীবন পার করতে পারবি না। আমরা সবাই তোর সাথে আছি, শুধু তুই বিষয়টা নিয়ে আরেকটু ভেবে দেখ”
আলফা নিজেও জানে হামজার প্রতি ওর একটা দু’র্ব’ল’তা সৃষ্টি হচ্ছে তবুও ও নিজের মনকে শ’ক্ত রেখেছে। এতোদিন ও ঠিকই করে রেখেছিল কি করবে কিন্তু এখন বুঝতে পারছে না কি করবে। হামজার দিক থেকে সরে আসবে বাকি হামজার প্রস্তাবে রাজি হয়ে যাবে! দারুন এক দো’টা’না’য় পড়ে গেছে আলফা। রাতে হামজার দেওয়া গিফট বক্সটা খোলার জন্যে বসলো, তখন অহনা দু কাপ কফি নিয়ে এসেছে। গিফট্ বক্স দেখেই অহনা উচ্ছাসিত হয়ে বললো..
“বাহ, আরো বার্থডে গিফট পেয়েছো দেখছি। কি আছে এতে?”
“এখনও খুলে দেখিনি, এখন খুলবো। তুমিও বসো এখানে, দুজনে একসঙ্গে দেখি”
“কিন্তু এগুলো কে দিলো কে ভাবী? তোমার কোনো কলিগ দিয়েছে?”
“নাহ!”
“তাহলে?”
“উম্ম! তোমার ভাই পাঠিয়েছে”
“সত্যি? ভাইয়া এসেছিলো তোমায় গিফট্ দিতে?”
“নাহ, কুরিয়ার বয় দিয়ে গেছে। আমার কলেজের ঠিকানায় পাঠিয়েছিলো”
“মানে কি! ভাইয়া যায়নি?”
“ইটস ওকে, আমি তোমার ভাইয়ের থেকে গিফট্ এ’ক্স’পে’ক্ট ও করিনি। কিন্তু সে আমার জন্মদিনের কথা জানে এটাই অনেক”
“এটা তো মোটেও ঠিক না। আমার ভাইয়ের জ্ঞা’ন বুদ্ধি আর হলো না, বার্থডে গিফট বার্থডে গার্লের হাতে না দিয়ে কিনা কুরিয়ার করে পাঠিয়েছে? অ’দ্ভু’ত ছেলে একটা! যাই হোক, কি আছে দেখি”
বক্স খুলতেই দেখলো একটা সুন্দর ডাইরি, দুটো দামী ফাউন্টেড পেন ও দুটো উপন্যাসের বই। খুবই সাদামাটা হলেও উপহারগুলো বেশ পছন্দ হয়েছে আলফার, সে সঙ্গে সঙ্গে হামজাকে মেসেজ করে। কিন্তু অন্যদিনের মতো আজ হামজা রিপ্লাই দেয়নি। আলফা ভাবলো সে হয়তো ব্যস্ত আছে তাই আর ফোন করেনি, ওদিকে দুপুরের ঘটনার পর থেকেই আজ সারাদিন ধরে হামজার মেজাজ আজ খা’রা’প হয়ে আছে। বাবাকে এসব করা থেকে কিভাবে আটকাবে বুঝে উঠতে পারছে না হামজা। পরেরদিন কলেজে ক্লাস চলাকালীন সময়ে একজন স্টাফ এসে আলফা জানায় কেউ একজন দেখা করতে এসেছে ওর সঙ্গে, সে টিচার্স কমন রুমে অপেক্ষা করছে। আলফা কমন রুমে গিয়ে মিস্টার শাহ্কে দেখে চ’ম’কে ওঠে, পরে নিজেকে স্বাভাবিক করে স্টাফকে এক কাপ চা নিয়ে আসতে বলে চেয়ার টেনে বসে..
“আসসালামু আলাইকুম”
“ওয়ালাইকুম আসসালাম”
মিস্টার শাহ্ হঠাৎ এখানে কি কারণে এসেছেন সেই ভাবনাতেই মশগুল ছিলো আলফা, তখনই গম্ভীর স্বরে মিস্টার শাহ্ বললেন..
“আমাকে দেখে নিশ্চয়ই ধারণা করতে পারছো কেনো আমি এখানে এসেছি?”
“ক্ষমা করবেন কিন্তু, আমি ঠিক বুঝতে পারছি না আপনি হঠাৎ আমার সঙ্গে দেখা করতে কেনো এসেছেন?”
“তুমি কি আমার ছেলেকে পছন্দ করো?”
মিস্টার শাহের এহেন আ’ক’স্মি’ক প্রশ্নে থ’ত’ম’ত খেয়ে যায় আলফা..
“জ্বি..?”
“আমার ছেলের উত্তরটা আমার জানা, কিন্তু তোমারটা জানা নেই তাই তোমার থেকেই জানতে চাইছি। তোমার উত্তরের ওপর অনেককিছু নির্ভর করছে”
“আপনি কি বলতে চাইছেন?”
“তোমার জন্য আমার ছেলের মধ্যে এমন কিছু পরিবর্তন এসেছে যাতে ওর সঙ্গে আমার সম্পর্ক ন’ষ্ট হচ্ছে এমনকি প্রফেশনাল জায়গায়ও ও নিজের পার্সোনাল লাইফকে ই’স্যু করছে। সবকিছু হচ্ছে তোমার জন্য”
“এ ব্যাপারে আমি কি করতে পারি?”
“আমি চাই তুমি হামজার জীবন থেকে স’রে যাও। যদিও তুমি নিজে ইচ্ছে করে ওর জীবনে আসোনি তাই তোমাকে দো’ষ দেওয়া যায়না। দো’ষ আমার ছেলেরই কিন্তু তুমি পি’ছি’য়ে গেলে আমার ছেলেও আপনাআপনিই পিছিয়ে আসবে”
চলবে…