#তোমাতে_মত্ত_আমি
#লেখনীতে – #Kazi_Meherin_Nesa
#পর্ব – ১৬
প্রায় মিনিট পাঁচেক ধরে নিশ্চুপ হয়ে আছে আলফা, হামজা বুঝলো ও হয়তো এমনকিছু বলে ফেলেছে যা শুনে আলফা অ’প্র’স্তু’ত হয়ে গেছে। প্রসঙ্গ ঘোরালো হামজা..
“হঠাৎ আমি এমন একটা প্রস্তাব দেওয়ায় আপনি এখনও কনফিউসড, আমি বুঝতে পারছি। আমার পক্ষ থেকে কোনো তাড়াহুড়ো নেই, আপনি ভাবার জন্যে সময় নিন”
“এখানে ভাবনার কিছুই নেই, আমি..আমি আপনাকে বিয়ে করবো না”
“আপনার কি মনে হচ্ছে আমি আপনার উপযুক্ত নই?”
“এমন কিছু নয়, হামজা আপনি কেনো বুঝতে পারছেন না আমি কি বলতে চাইছি। আপনি ভালো একটা মেয়ে ডিসার্ভ করেন আর আমি..”
“আমি জানিনা আপনি নিজেকে কি মনে করছেন তবে আপনিই আমার জন্যে সেরা পছন্দ, আর আমি সেটা জানি”
“হামজা..”
“আলফা, আমার কথাগুলো আপনি সহজভাবে যদি ভেবে দেখেন তাহলেই বুঝবেন আমার কোনো বিশেষ উদ্দেশ্য নেই। যা বলার পরিষ্কার বলেছি, এবার আপনি ভাবুন সময় নিন কিন্তু আমি আশা করবো উত্তরটা হ্যাঁ হবে”
“আপনি নিজের জন্যে স’ম’স্যা কেনো তৈরি করতে চাইছেন? আর আপনি যে এখানে এসব বলছেন আপনার বাড়ির লোক নিশ্চয়ই জানেনা?”
“নিজের সিদ্ধান্ত নিজে দেওয়ার বুদ্ধি ক্ষমতা আর বয়স তিনটাই আমার আছে, আমি কেনো অন্যের কথায় পরোয়া করবো?”
“সবকিছু এতো সহজ হয় না হামজা, আমাদের পরিবার – সমাজ নিয়ে চলতে হয়। আমি জানি সবটা কতো মু’শ’কি’ল। আমার একার জন্যেই সবটা অনেক কঠিন হয়ে পড়েছে, আপনি দয়া করে আর আমার জন্যে সব আরো কঠিন করে তুলবেন না”
“আমি আপনার মু’শ’কি’ল আসান করতে চাই আলফা, আপনি যে কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে যাচ্ছেন সেটা সহজ করার জন্যে সাহায্য করতে চাই”
“আপনি আমার কথা বোঝারই চেষ্টা করছেন না!
“আপনিও তো আমার কথা বুঝতে চাইছেন না”
আলফা যাই বলুক, কিন্তু হামজা ঘুরেফিরে নিজের কথাতেই অটল রয়েছে! আলফাকে রাজি করানো সহজ হবেনা এটা আগেই ধারণা করেছিলো হামজা, আর সেটাই হলো।
“আলফা, মনে হচ্ছে আপনার মন পাওয়ার জন্যে আমাকে আরো অনেক ক’ষ্ট করতে হবে। ফাইন! আমি নিজের পুরোটা দিয়ে চে’ষ্টা করতে থাকবো। হয়তো একদিন আপনি রাজি হবেন”
আলফা ভেবেছিলো হামজাকে হয়তো বুঝিয়ে কাজ হবে কিন্তু কোনো কাজই হয়নি উল্টে হামজা এমনকিছু কথা বলে গেছে যার জন্যে আলফা বাধ্য হচ্ছে ওর কথা ভাবতে। লোকটা কেনো এমন করছে? ভেবে পাচ্ছেনা আলফা। হামজা আজ সকালেই বেরিয়ে গেছিলো বিধায় বাবার সঙ্গে দেখা হয়নি। সন্ধ্যায় অফিস থেকে বাড়ি ফিরতেই ছেলেকে দেখে মিস্টার শাহ্ প্রশ্ন করে বসলেন..
“তুই আজ সকাল সকাল কোথায় গেছিলি হামজা? অফিসে তো গেছিস অনেকক্ষণ পর, তার আগে কোথায় ছিলি?”
“একটা দরকারি কাজ ছিলো”
“দরকারি কাজ? তুই কি আলফার সঙ্গে দেখা করতে গেছিলি?”
“তুমি কিভাবে জানলে?”
“আজকাল তো তোর ওই একটাই দরকারি কাজ আছে যার জন্যে তুই ভালোমন্দ বোধ হা’রি’য়ে ফেলেছিস। ওই মেয়েটার পিছু কবে ছাড়বি তুই?”
“ড্যাড, তুমি সব জেনেও একই প্রশ্ন বারবার কেনো করছো? আমি ওকে ছা’ড়া’র কথা কখনোই ভাবিনি আর এখন তো আরো ভাববো না”
“হামজা, পা’গ’ল হয়ে গেছিস তুই। জানিনা ওই মেয়ের মধ্যে কি দেখেছিস যার জন্যে তুই আলফা ছাড়া আর কিছু ভাবতে পারছিস না। এতো ভালো মেয়ে দেখালাম তোকে আর তুই কিনা শেষে..”
“ড্যাড, আমার মনে হয় এই ব্যাপারটা তোমার আমার ওপর ছেড়ে দেওয়া উচিত। এটা আমার ব্যাপার, আমাকেই হ্যা’ন্ডে’ল করতে দাও। তোমার পক্ষ থেকে বাবা হিসেবে শুধু একটু সাপোর্ট আশা করবো। আমার জন্যে তাই যথেষ্ট হবে”
“হামজা, শুনে রাখ আমার কথা। বাবা হিসেবে আমি তোর জন্যে সবসময় বেস্ট জিনিস আশা করি তাই তোর এই সিদ্ধান্তে আমি কোনোদিন সম্মতি জানাবো না। আলফাকে আমি কখনো মানবো না”
“তুমি আমার খুশিটা দেখার চেষ্টা করছো না?”
“তোর কাছে যেটা ভালো মনে হচ্ছে সেটাই ভবিষ্যতে তোর জীবনের স’ম’স্যা’র কারণ হয়ে দাঁড়াবে”
“ড্যাড, একটা সত্যি কথা বলোতো। তুমি আমার কথা নয় বরং নিজের কথা ভাবছো। তুমি ভাবছো আলফাকে বিয়ে করলে হয়তো আমাদের আত্মীয় স্বজন, তোমার বিজনেস পার্টনার, এম্প্লয়দের কাছে কিছু কথা শুনতে হতে পারে। বি’ধ’বা মেয়েকে বিয়ে করলে তোমার বংশের দু’র্না’ম হতে পারে এই ভেবেই তুমি আলফাকে মানতে চাইছো না তাইতো?”
“হামজা, তুই কিন্তু এবার বা’ড়া’বা’ড়ি করছিস। আমি সবকিছুর আগে তোর ভালোর কথা ভাবছি যেটা তুই বুঝতে পারছিস না”
“আমি সবই বুঝতে পারছি ড্যাড, তুমি আমায় নিয়ে চিন্তা করো না। আমি সব সামলে নেবো”
ছেলে যে হাতের বাইরে চলে গেছে তা বেশ বুঝতে পারছে মিস্টার শাহ্ কিন্তু উনি যে কিছুতেই আলফাকে নিজের ছেলের জীবনে মানতে রাজি নন। সারাদিন কে’টে গেছে কিন্তু হামজার ভাবনা মাথা থেকে ঝে’ড়ে ফেলতে পারেনি আলফা, এমনকি সারাদিন কারো সঙ্গে তেমন কথাও বলেনি। রাতের খাবার বানানোর সময় অহনা আসে ওকে সাহায্য করতে, তখন..
“অহনা, তুমি জানতে?”
আলফার প্রশ্নে কিছুটা থ’ত’ম’ত খেয়ে ওঠে অহনা..
“স’রি ভাবী, আসলে আমি চাইছিলাম ভাইয়া নিজেই আগে তোমাকে বলুক তাই আমি কিছু বলিনি কিন্তু ভাইয়া যে এভাবে এসে হুট করেই বিয়ের কথা..”
“তার মানে তুমি জানতে, আচ্ছা তোমার ভাই কি বরাবরই এমন? হুট করেই আগে পেছনে না ভেবে এমন কথা বলে দেয় যা মানুষকে হ’ত’ভ’ম্ব করে দেওয়ার জন্যে যথেষ্ট?”
“ভাবী, তুমি ভাইয়াকে ভুল বুঝোনা। আমি জানি ভাইয়ার এভাবে হুট করেই সরাসরি বিয়ের কথা বলাটা ঠিক হয়নি কিন্তু ভাইয়ার কোনো খা’রা’প উদ্দেশ্য নেই”
“হুম, আমি বুঝেছি তোমার ভাইয়ের উদ্দেশ্য খা’রা’প নয় কিন্তু উনি যা চাইছেন সেটা বো’কা’মি ছাড়াও কিছু নয়”
“ভাইয়া তোমাকে সত্যিই অনেক ভালোবাসে”
“অহনা, আমার মনে হয় তোমার উচিত তোমার ভাইকে একটু বোঝানো কারণ সে যা চাইছে তা সম্ভব নয়”
“সব সম্ভব ভাবী, আম্মু আব্বু রাজি হয়ে গেছে। ফারহান বলেছে তুমি রাজি থাকলে ওরও ভাইয়াকে মেনে নিতে সমস্যা নেই। শুধু তুমি রাজি হলেই..”
“অহনা, আমার মনে হয় এসব আলোচনা আমরা যতো দ্রুত বাদ দেবো ততোই আমার আর তোমার ভাইয়ের জন্যে ভালো হবে”
“ভাবী, তুমি ভাইয়াকে একটা সুযোগ দেবে না?”
“আমি চাইনা এই বিষয়টা আরো এগোক, আর কোনো কথা হোক এই নিয়ে”
সকল দিক বিবেচনা করে আলফা হামজার প্রস্তাবে রাজি হবেনা বলেই ঠিক করেছে, কারণ ও জানে এই সমাজের মানুষ একজন অল্পবয়সী ডি’ভো’র্সী এবং বি’ধ’বা মেয়েদের কোন চোখে দেখে, কোনো কথা বলতে তারা দ্বি’ধা’বো’ধ করেনা সেখানে আজ যদি হামজাকে ও বিয়ে করে তবে হতে পারে ভবিষ্যতে হামজাকে ওর আত্মীয় স্বজনের কথা শুনতে হবে। হয়তো ভবিষ্যতে হামজার জীবনে স’ম’স্যা সৃ’ষ্টি হবে যা আলফা চায়না। রাতে মিসেস খান আলফার ঘরে আসেন, আলফা বুঝে গেছে উনি কি বলতে এসেছেন।
“আন্টি, আপনিও কি আমাকে হামজার প্রসঙ্গে বলতে এসেছেন?”
“হুম, ওই ব্যাপারেই। কিন্তু তুমি মনে হচ্ছে এই বিষয়ে কথা বলতে চাইছো না। হামজার সঙ্গে তো আলাদা কথা বললে, কি সিদ্ধান্ত তোমার এই ব্যাপারে?”
“হামজাকে কি তোমার ভালো লাগেনি? ছেলে হিসেবে পছন্দ হয়নি বা ওর কোনো কাজ তোমার পছন্দ হয়নি?”
“আন্টি, বিষয়টা এমন নয় যে আমি হামজাকে পছন্দ করিনা। ছেলে হিসেবে উনি অনেক ভালো কিন্তু আমি ওনার জীবনের সঙ্গে নিজের জীবন জ’ড়া’তে চাইনা”
“কেনো আলফা?”
“আপনি তো অন্তত বুঝুন, আমি কেনো চাইনা”
“আমি জানি তুমি কি ভাবছো, সবটাই বুঝতে পারছি কিন্তু তুমি এখনই এতো নে’গে’টি’ভ’লি কেনো ভাবছো? হতে পারে তোমার ভাবনা ভুল। হয়তো সামনে ভালো কিছুই অপেক্ষা করছে”
“না, আন্টি। আমার মনে হয় না হামজার সঙ্গে সম্পর্ক হলে ভালো কিছু হবে। হতে পারে উ’ল্টে সমস্যা বাড়বে। এর থেকে এটাই ভালো হবে যেভাবে সবটা চলছে সেভাবেই চলুক”
“সময় তো চলবেই, কিন্তু তুমি কি নিজের ভবিষ্যতের কথা ভেবেছো আলফা? তোমার কি হবে ভেবে দেখেছো? এভাবেই কি সারাজীবন কা’টি’য়ে দেবে?”
“দরকার পড়লে তাই..”
“এইযে মুখে যতো সহজে বললে ততো সহজ নয় সব, জীবনটা অনেক বড় আলফা আর এই দীর্ঘ জীবন একা কা’টা’নো কারো পক্ষেই সম্ভব না। আর আমরা চাইনা তুমি একাকী সারাজীবন কা’টা’ও”
নিরব রইলো আলফা..
“জীবনে যে সবসময় মেঘের ঘনঘটা থাকবে তার কিন্তু মানে নেই, হয়তো জীবন তোমায় আরেকবার সুযোগ দিচ্ছে নতুন করে জীবনটা সাজিয়ে তোলার জন্যে। আমার মনে হয় তোমার বিষয়টা নিয়ে একটু ভালোভাবে ভেবে দেখা উচিত। এরপর না হয় সিদ্ধান্ত নাও কি করবে”
আলফার ভবিষ্যতের কথা ভেবেই মিস্টার ও মিসেস খান চাইছেন আলফা হামজার এ প্রস্তাবে রাজি হয়ে যাক, কিন্তু মিসেস খান এটাও বুঝতে পারছেন আলফা কেনো পি’ছি’য়ে যেতে চাইছে তাই উনি আলফা কে বোঝানোর চেষ্টা করছেন। চাইছেন আলফা যেনো দেরিতে হলেও স্বাভাবিকভাবে ভেবে হামজাকে মেনে নেয়। এদিকে আলফা বারবার নিজের মনকে শ’ক্ত রাখার চেষ্টা করছে কিন্তু হাজার চে’ষ্টা সত্ত্বেও বারবার ওর মনে হচ্ছে হামজার সঙ্গে সঙ্গে নিজের জীবনটাকেও কি আরেকটা সুযোগ দিয়ে দেখা দরকার
________________
সারা সপ্তাহের ব্যস্ততা শেষে ছুটির দিনে নিজের জন্যে একটু সময় বের করে নেয় আলফা, আর সময় পেলেই চলে যায় কোনো এক নিরিবিলি জায়গায় যেখানে এই যান্ত্রিক শহরের কোলাহল কম পৌঁছায়। আজ একটা পাবলিক লাইব্রেরীতে এসেছে আলফা, লাইব্রেরির সামনে আসতেই ফোন বেজে উঠলো ওর। ফোন স্ক্রিনে হামজার নাম দেখে রিসিভ করলো না, ফোনটা সাইলেন্ট করে চলে গেলো ভেতরে। প্রায় মিনিট পনেরো পর, আলফা যখন বই পড়তে ব্যস্ত তখনই কোত্থেকে যেনো হুট করে দুটো বই নিয়ে এসে আলফার সামনের চেয়ারে বসলো হামজা। প্রথমে তো আলফা দেখে অ’বা’ক হলো, পরমুহূর্তেই হামজার দিক থেকে নজর ফিরিয়ে নিজের বই পড়ায় মন দিলো। কিন্তু হামজা যে ওর দিকে তাকিয়ে রয়েছে, তা আলফার ষষ্ঠ ইন্দ্রিয় বেশ ভালোভাবেই জানান দিচ্ছে। প্রায় এক ঘন্টা পরে আলফা লাইব্রেরী থেকে বের হয়, হামজা ওর পেছনে। যদিও এখনও সে কিছু বলেনি। কিছুটা হাঁটার পর দাড়িয়ে যায় আলফা, ঘুরে তাকায় হামজার দিকে..
“কল রিসিভ করিনি বলে সোজা এখানে চলে এসেছেন?”
বাঁ’কা হেসে এগিয়ে এলো হামজা..
“ম্যাডাম, আপনার কি মনে হয় আপনার পেছনে ঘোরা ছাড়া আমার আর কোনো কাজ নেই?”
“কিন্তু আমি যেখানে যাই সেখানেই তো আপনি পৌঁছে যান, এই ব্যাপারে কি বলবেন?”
“বই পড়ার শখ কি শুধু আপনার একারই থাকতে পারে নাকি? আমারও ইচ্ছে হয়েছিলো, তাই চলে এসেছি”
“আপনি বই পড়তে এসেছিলেন?”
“আপনার সামনেই তো পড়ছিলাম, দেখলেন না?”
“আমি নিজের বই দেখতে ব্যস্ত ছিলাম, যাই হোক কেমন লাগলো আপনার বই পড়ে?”
“অনেক ভালো, আমি যে বইটা পড়ছিলাম সেটা কিন্তু বেশ ই’ন্টা’রে’স্টিং ছিলো”
“তাই নাকি? তা কোন বই টা আপনি পড়ছিলেন বলুনতো, আমিও তাহলে পরেরবার এসে পড়বো। দেখবো কেমন ই’ন্টা’রে’স্টিং”
আলফার কথার উত্তর দিতে পারলো না হামজা, কারণ বইয়ের জানা নেই ওর। নিজের ওপর রা’গ হলো হামজার, বইটা নেওয়ার সময় নামটা একবার দেখে নেওয়া উচিত ছিলো!
“বইয়ের নামই বলতে পারছেন না, তাহলে কি পড়লেন এতক্ষণ?”
“আমি বইয়ের নাম লক্ষ্য করিনি এটা সত্যি, তবে বইটা ই’ন্টা’রে’স্টিং ছিলো এটা বলতে পারি”
“আপনার তো দেখছি গুণের শেষ নেই হামজা, উ’ল্টো করেও বই পড়তে পারেন আপনি”
“উ’ল্টো করে মানে?”
“কেনো? আপনি তো বইটা উ’ল্টো ধরেছিলেন!”
নিজের এমন বো’কা’মি’র জন্যে হামজার এখন পালিয়ে যেতে ইচ্ছে করছে এখান থেকে, কারণ আলফাকে দেখতে গিয়ে অন্য কিছুই খেয়াল করেনি সে!
“আমি আসলে..”
“থাক! আর বলতে হবেনা কিছু”
“এক মিনিট, এর মানে আপনি আমাকে দেখছিলেন?”
“না তো!”
“এই, আপনি যদি আমাকে নাই দেখতেন তাহলে জানলেন কিভাবে যে আমি বইটা উ’ল্টো ধরেছিলাম? স্বীকার করেই নিন, আপনি আমায় দেখছিলেন”
“আমি আপনাকে দেখছিলাম না”
“সেই একই হলো, বই দেখুন বা আমাকে। দুটোই দেখছিলেন তো”
“স্বীকার করলেই বা কি এসে যায়”
“এর মানে আপনি স্বীকার করছেন! অবশ্য আমার মতো হ্যান্ডসাম একটা ছেলে সামনে বসে থাকলে সহজে চোখ সরানো যায়না, আই ক্যান আন্ডারস্ট্যান্ড দ্যাট”
“এক্সকিউজ মি, আমি মোটেও আপনাকে দেখছিলাম না”
“আপনি আমায় যতো খুশি দেখতে পারেন আলফা, ইউ আর অলয়েজ ওয়েলকাম”
“অদ্ভুত তো, বলছি তো আমি আপনাকে দেখছিলাম না!”
হাঁটতে হাঁটতে দুজনের মাঝে এই নিয়ে বেশ কিছুক্ষণ খু’ন’সু’টি চললো। মাঝ রাস্তায় আলফা ভাবলো কিছু খাওয়া যাক, হামজাকেও অফার করলো। সে তো এক বলাতেই রাজি, এরপর দুজনে একটা হোটেলে বসলো। দুজনেই নিজেদের পছন্দমতো খাবার অর্ডার করার পর আলফা বললো..
“আজ আমি আপনাকে ট্রিট দেবো”
“ট্রিট? আজ আপনার জন্মদিন নাকি?”
“না, তবে আপনি ছুটির দিনে এতদূর এলেন আমার সঙ্গে দেখা করতে তার জন্যে আমার তরফ থেকে ছোট্ট একটা ট্রিট”
“ওহ আই সি, তার মানে আমার এখানে আসায় আপনার ভালো লেগেছে?”
“আমি সেটা বলিনি”
“বলতে হবে না, আমার যা বোঝার বুঝে গেছি”
“কি বুঝলেন?”
“আমার যা বোঝার বুঝেছি, আপনার না বুঝলেও চলবে”
একটু পরে ওয়েটার খাবার দিয়ে যায়, দুজনেই খাওয়া শুরু করে। খাবার এক পর্যায়ে আলফা প্রশ্ন করে..
“আচ্ছা, আপনি কিভাবে জানলেন আমি এখানে আছি?”
“মোটামুটি সব খোঁজই রাখা হচ্ছে আমার আপনার ব্যাপারে, সে হিসেবে এটা তো কিছুই নয়”
“আপনি আমায় স্ট’ক করছেন নাকি?”
“হুম অনেকদিন ধরেই, কেনো জানতেন না নাকি?”
“মনে হচ্ছে আপনার নামে এবার একটা পুলিশ ক’ম’প্লে’ন করতে হবে। নাহলে আপনি শুধরাবেন না”
“আপনি আমাকে শোধরাতে চান? তাহলে এক কাজ করতে পারেন। আমার প্রস্তাবে রাজি হয়ে যান, তবেই আর আমাকে কষ্ট করে আপনাকে স্ট’ক করতে হবেনা”
“আবারো ফ্লা’র্ট করছেন?”
“আপনার সঙ্গে দেখছি ফ্লা’র্ট করেও শান্তি নেই!”
হাসলো আলফা, প্রতিটা সময় হামজার এই কা’ন্ডগুলো বেশ আনন্দ দেয় ওকে। তখন কিছু সময়ের জন্য হলেও যেনো আলফার সব দুঃচি’ন্তা দুর হয়ে যায়, মন আপনাআপনিই ভালো হয়ে যায়। আলফার জানা নেই হামজা কিভাবে এটা করে, ম্যাজিক দিয়ে নাকি অন্যকিছু? লোকটাকে দিনদিন যতো দেখছে ততোই যেনো তার বিষয়ে জানার আগ্রহ বাড়ছে আলফার!
____________________
সকাল গড়িয়ে বিকেল হলেও ছেলেকে বাড়িতে দেখতে পাননি মিস্টার শাহ্, এতক্ষণ ভেবেছিলেন বাড়িতেই আছে কিন্তু এখন বুঝলো ছেলে বাড়িতে নেই। স্ত্রীকে জিজ্ঞাসা করলেন ছেলের কথা..
“হামজা কোথায়?”
“বাইরে গেছে”
“আজকে না ছুটির দিন?”
“তাতে কি? হয়তো বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দিতে গেছে। সারা সপ্তাহ তো কাজে ব্যস্ত থাকে, সময় পায়না”
“ওকে তো ছুটির দিনে বাড়িতে পড়ে পড়ে ঘুমাতে দেখি, এখনও তো কখনো দেখলাম না বন্ধুদের সঙ্গে গিয়ে আড্ডা দিতে। আজ হঠাৎ..”
“ছেলের প্রতি দিনদিন রূঢ় আচরণ বেড়ে যাচ্ছে তোমার, করুক না যা খুশি। এক ছুটির দিনই তো”
“আমি কেনো এমন করছি তুমি বুঝবে না, একটা মেয়ের জন্যে পা’গ’ল হয়ে ছেলে দিনদিন হাতছাড়া হয়ে যাচ্ছে সেটা নজরে পড়ছে না তোমার”
স্বামীর কথার উত্তর দিলেন না মিসেস শাহ্, কারণ নিজের স্বামীর মতো ছেলের খুশির পথে বাঁ’ধা হয়ে দাঁড়াতে চান না তিনি। ছেলে যাকে ভালোবাসবে তাকেই মেনে নেওয়ার জন্যে মনস্থির করে রেখেছেন মিসেস শাহ্। দুপুরের পরই বৃষ্টি শুরু হলো, হামজা আর আলফা তখন রাস্তায় ছিলো। ঝিরিঝিরি বৃষ্টি শুরু হতেই দুজনেই পাশের এক যাত্রী ছাউনিতে গিয়ে বসলো..
“ভালো বৃষ্টি পড়ছে!”
“হুম, দুপুরের পর থেকেই তো আকাশ অ’ন্ধ’কা’র হয়ে আসছিলো। বৃষ্টি হবে বোঝাই যাচ্ছিলো”
“বৃষ্টি আমার মোটেও পছন্দ নয়”
“বৃষ্টির সঙ্গে আপনার কিসের শ’ত্রু’তা?”
“আসলে, ছোটবেলায় স্কুল থেকে ফেরার সময় বৃষ্টি পড়লেই স্কুলের মাঠ কাঁদা হয়ে যেতো আর আমি পা পিছলে আ’ছা’ড় খেতাম তাই বৃষ্টি পছন্দ নয় কারণ বৃষ্টি হলেই কাঁদা হয়”
হামজার কথায় হাসলো আলফা, ভ্রু’কু’টি কুঁচকে হামজা প্রশ্ন করে বসলো..
“হাসছেন কেনো!”
“বাচ্চাদের মতো কথা বললেন, তাই”
“মনে হচ্ছে আপনার বৃষ্টি পছন্দ?”
“হুম, ভীষন! আমার বৃষ্টি ভালো লাগে। বৃষ্টির সময়কার এই মেঘলা আকাশ, ঝিরিঝিরি বৃষ্টির আওয়াজ, বৃষ্টিভেজা রাস্তা সব ভালো লাগে”
আলফা যেনো প্রাণখুলে কথাগুলো বলতে বলতে উপভোগ করছিলো এই বৃ’ষ্টি’স্না’ত পরিবেশটা আর পাশে বসে আলফার প্রতিটা কথা মনোযোগ দিয়ে শুনে মু’গ্ধ হচ্ছিলো হামজা। হয়তো একই মাঝে আরেকবার মেয়েটার প্রে’মে পড়ে গেলো সে…
চলবে…